#অদ্ভুত_প্রণয়নামা
#পর্ব_(৩৩ ও ৩৪)
#তাশরিন_মোহেরা
‘আপনি অনেক মিষ্টি, মিস.তিথিয়া!’
মুখরের কথাটাতে আমি শিউরে উঠলাম। ঠিক আগের মতোই লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। শরীরে গরম অনুভূত হলো। আজ বেশ কয়েকদিন পরই আবারো এমন লাগলো আমার!
মুখরের পানে দেখলাম, ছেলেটা মুচকি হাসছে! হাসলে মুখরের চোখের দু’পাশে ভাঁজ পড়ে। এতে তাকে খুবই সুদর্শন দেখায়। মুখরের চেহারায় চোখে পড়ার মতো তেমন কিছু নেই! অন্যেরা সহজেই আকৃষ্ট হবে না এমন এক ভঙ্গি নিয়ে প্রতিনিয়ত চলাফেরা করে সে! কিন্তু, বারবার আমায় কেন আকৃষ্ট করে যাচ্ছে ছেলেটা? তার হাসি, তার কথা বলা, তার সবকিছুতেই কেন আমার হৃদয়টা বিস্ফোরিত হওয়ার উপক্রম হয় বারংবার? আমি তাকে অন্যদের চাইতে আলাদা চোখে দেখি বলেই কি এমন হচ্ছে? না স্বয়ং মুখরই আমায় আকৃষ্ট করছে?
চারপাশ হতে মাগরিবের আজান ধ্বনিত হচ্ছে উচ্চশব্দে। আজানের সুরে ভাবনার তার ছিঁড়ে গেল আমার। তৎক্ষণাৎ নিজেকে সামলে নিতেই খেয়াল করলাম শরীরে কাটা দেওয়া শুরু হয়েছে আমার। ঠান্ডা লাগছে ভীষণ! শীতের সন্ধ্যেটায় হাড় কাঁপানো হাওয়া বয় চারপাশ থেকে। আমি খানিকটা শিউরে দু’হাতে বাহু মালিশ করে নিজেকে গরম করার চেষ্টা করছি। মুখরের দিকে করুণা নিয়ে চাইলাম। গায়ে একটা সোয়েটার জড়াইনি বলে নিজেকে অনেক বকলাম। মুখর হুডির উপর জ্যাকেট পড়েছে বলে তার ঠান্ডা লাগার কথা না! তাই আমার চাহনিতেই সে বুঝলো তার জ্যাকেটটা এই মুহুর্তে আমার লাগবে। জ্যাকেটটা তড়িৎ খুলে আমার গায়ে জড়িয়ে দিতে দিতে সে কিছুটা শক্ত কণ্ঠে বললো,
‘কষ্ট দেখছি মাথা খেয়েছে আপনার। এই ঠান্ডায় কেউ সোয়েটার ছাড়া বেরোয় নাকি, হ্যাঁ?’
আমি কাঁচুমাচু হয়ে তার জ্যাকেটটা আরো ভালোভাবে পড়ে নিলাম। যদিও জ্যাকেটটা বড় হয়েছে আমার। মুখর আমার চাইতে লম্বা হওয়ায় তার জ্যাকেটের হাতাটা আমার পুরো হাতটাই ঢেকে দিয়েছে! অদ্ভুত দেখাচ্ছে আমায়! তবে তা থেকে মুখরের ঘ্রাণ পেলাম বহুদিন পর, সে চিরচেনা ঘ্রাণটা! অসাড় মনটা কিছুটা ভালো হলো আমার।
মুখরের পাশাপাশি হাঁটছি চুপচাপ। তখনই আমায় একপাশে দাঁড় করিয়ে একটা মলে ঢুকলো মুখর। খানিক বাদে ফিরে এসে আমার সামনে দাঁড়ালো। দেখলাম তার হাতে একটা লালরঙা মাফলার। আমি প্রশ্নবোধক চাহনিতে চাইতেই মাফলারটা হঠাৎ আমার গলায় জড়িয়ে দিয়ে মুখর বললো,
‘সবসময় সাথে রাখবেন এটা, কেমন? ঠান্ডা যেন না লাগে, মিস.তিথিয়া!’
তার আদেশটা মাথা পেতে নিলাম। হালকা হেসে আবারো পাশাপাশি হাঁটা ধরলাম। খেয়াল হলো, চারপাশ আচমকা-ই রঙিন লাগছে আমার! এই হাওয়া, এই পরিবেশ, এই আবহাওয়া সবই ভালো লাগছে! মুখরের দিকে আড়চোখে চেয়ে মনে মনে বললাম,
‘ধন্যবাদ সৃষ্টিকর্তা! মানুষটাকে আমার জীবনে একটা আশীর্বাদ হিসেবে নিয়ে আনার জন্যে!’
.
আজ একটু সকালবেলা-ই উঠলাম। কেননা ভার্সিটিতে প্রোগ্রাম আছে! মুখরের পরিবারের সবাই-ই বেশ তাড়াতাড়ি উঠে। মুগ্ধের স্কুল, মুখরের কাজ এসব নিয়েই সকালটা চলে যায় এদের।
চটজলদি নাস্তা করে আমি চলে এলাম রুমে। মায়ের শাড়ি তিনটেই বিছানায় পাশাপাশি রেখে ভাবতে লাগলাম কোনটা পড়া যায়। যদিও প্রোগ্রামটাতে যাওয়ার ইচ্ছে আমার মোটেও নেই। খুব কষ্টে ডিপার্টমেন্টের সবাইকে রাজি করিয়েছি, যাতে বেশিক্ষণ সেথায় থাকতে না হয়! আপাতত শোকে আছি বলে কালো শাড়িটাই বেছে নিলাম। স্বভাবতই, আজ এই প্রোগ্রামের উদ্দেশ্যে অনেকেই তাদের মায়ের হাতে শাড়ি পড়ে আসবে। আমার তো মা নেই, কখনো ছিলই না! মেয়েলি সব কাজই আমি একা হাতে করেছি ছোট থেকেই! বেশ কয়েকবার হোঁচট খেয়েছি, তবে এসবে অভ্যস্ত হয়ে একসময় সবকিছুতেই পাকাপোক্ত হয়ে গেছি। তাই অন্যদের মতো আমি মায়ের হাতে নয়, নিজের হাতেই শাড়ি পড়ছি। যদিও কুচি ধরতে গিয়ে কিছুটা এদিক সেদিক হয়ে যায় মাঝেমধ্যে!
এক দলা পাউডার মেখে নিয়েছি মুখে। শাড়ির সাথে আমার এমন মনমরা চেহারা মোটেও ভালো লাগবে না। ঠোঁটে হালকা গোলাপি একটা লিপস্টিক লাগিয়েছি! মানসিক ভাবে কষ্টে আছি বলে এর বাইরে বেশি কিছুই দিলাম না। ঝটপট বাদামী রঙের একটা হিজাব পড়ে নিলাম। ব্যাগটা নিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়েছি ওমনি কুচিটা বিরক্ত করা শুরু করলো। মুগ্ধ স্কুলের জন্য বেরোচ্ছে দেখে তাকে ক্ষীণ স্বরে ডাকলাম,
‘মুগ্ধ! মুগ্ধওও!’
সে এক দৌঁড়ে আমার কাছে এলো। তাকে কুচির দিকে ইশারা করে বললাম,
‘কুচিটা একটু ধরো তো, বাবা।’
সে ‘আচ্ছা, ম্যাম!’ বলে নিচে বসে কুচি ঠিক করতে লাগলো। কিন্তু এতে কুচিটা আরো বিগড়ে গেছে। মুখর সবে কোটটা গায়ে দিয়ে রুম ছেড়েছে! হঠাৎই আমার সামনে এসে বললো,
‘কুচি ধরার আর মানুষ পেলেন না, মিস.তিথিয়া! এই মিনি ডেভিল, উঠ দেখি। তোর মতো আকাইম্মাকে দিয়ে কিছুই হবে না।’
মুগ্ধ রাগ নিয়ে বলে উঠলো,
‘ভাইয়া, ম্যামের সামনে আমার প্রেসটিজ নষ্ট করছো কেন তুমি? আর আমাকে আকাইম্মা বলবে না তো একদম।’
মুখর বাঁকা হেসে বললো,
‘সরবি তুই? আকইম্মার ঘরের আকাইম্মা!’
মুগ্ধ এবার রেগে তার পিঠে কয়েকটা কিল বসালো। তবে কিলটা মুখরকে এক ইঞ্চিও আহত করলো না। এতোটাই নড়বড়ে ছিলো! মুগ্ধ এবার রান্নাঘরে গিয়ে আন্টিকে অভিযোগ করলো। বেশ বড় অভিযোগ!
আমি ফিক করে হাসলাম দুই ভাইয়ের মিষ্টি খুনশুটি দেখে। ঠিক তখনই মুখর আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো। কুচিগুলো একেক করে ঠিক করতে লাগলো সে। আর আমি! আমি হা করে তার কান্ড দেখছি! কেমন একটা ভদ্রলোক ভদ্রলোক ভাব আসছে তার আচরণে! মনে মনে আবারো বললাম, ‘ইশ! মুখর কি কখনো অভদ্র ছিল নাকি? আমিও না!’
কুচিগুলো বেশ মনোযোগ দিয়ে একেক করে ঠিক করছে সে! যেন কুচি ঠিক করাটাও একটা শিল্প, যে শিল্পকার্যে বেশ দক্ষ মুখর! চিকচিক করা চোখ আর ধ্বক ধ্বক করা মন নিয়ে আরো একবার প্রেমে পড়লাম হাঁটু গেড়ে বসে থাকা ভদ্রলোকটার উপর!
তরাক করে উপরে তাকালো মুখর। তখনই আমার দৃষ্টির সাথে তার দৃষ্টি মিলে গেল! আমি তড়িৎ চোখ সরিয়ে নিলাম। লজ্জায় হাত-পা কাঁপছে আমার! মুখর উপরে তাকিয়েই বললো,
‘ঠিক আছে নাকি দেখুন তো একবার, মিস.তিথিয়া!’
আমি কুচিতে নজর বুলালাম। প্রত্যেকটা কুচিই বেশ ভালোভাবে বসেছে। আমার ভীষণ ভালো লাগলো। উৎসুক দৃষ্টিতে বললাম,
‘একদম ঠিক আছে। আপনি তো দেখছি কুচি ধরাতে বেশ এক্সপার্ট, মুখর সাহেব!’
মুখর উঠে তার কাঁধে হাত রেখে হালকা লাজুক হাসলো। আমি হাস্যজ্বল ভাব নিয়ে তাকে বললাম,
‘খুব ধন্যবাদ, মুখর সাহেব।’
মুখরের হঠাৎ কি হলো কে জানে! সে আমার কপালে আচমকা টোকা মেরে বললো,
‘মিস.তিথিয়া, আপনাকে না বলেছি এভাবে হাসবেন না।’
এটুকু বলেই মুখর দ্রুতপায়ে বেরিয়ে গেল। আমার খুব কষ্ট হলো! আমি কি এতোটাই বাজে হাসি, যা ছেলেটাকে বারবার বিরক্ত করে? এমনটা নিষ্ঠুরভাবে বারবার আঘাত করে কেন মুখর? সে কি জানে না, মেয়েরা তাদের হাসির ব্যাপারে কতোটা সংবেদনশীল!
.
ভার্সিটিতে এসে একা একা বসে আছি। ডিপার্টমেন্টের সবাই একেকটা ইভেন্টে কাজ করছে! রূপক ভাইও দেখলাম বেশ ব্যস্ত! আমিই শুধু বেকার বসে আছি। মজা করার ইচ্ছেটাও মরে গেছে। মনটা ভীষণ খারাপ করে দিয়েছে মুখর। তার উপর আব্বার কথা প্রচণ্ড মনে পড়ছে। আজ তাকে হাসপাতালে দেখতে যাইনি। তাই বোধহয় একটু বেশিই মনে পড়ছে আব্বার কথা। বসে বসে পুরোনো ছবি দেখছি। ফোনের ‘আব্বা’ এলবামটাতে সবই আব্বার ছবি। সেখানে তার চা খাওয়া থেকে শুরু করে ঘুমানো সব ছবিই আছে! কারণে অকারণে আব্বার ছবি তুলতে ভালো লাগতো আমার। এদিকে আব্বা ছবি তুলতে বিন্দুমাত্র পছন্দ করতেন না। হায়! তখনও কি জানতাম যে আব্বার এমন একটা পরিণতি দেখতে হবে আমায়!
চোখ দুটো ছলছল করছে। পানিতে টইটম্বুর চোখখানা। কান্নাদের যথাসম্ভব থামানোর চেষ্টা করেও লাভ হলো না। তবে অশ্রু গাল বেয়ে পড়ার আগেই তা মুছে নিলাম টিস্যু দিয়ে। এলবামটা থেকে বেরিয়ে আসতেই হঠাৎ চোখ গেল আমার একটা ভিডিওতে। এই ভিডিওটা সেটাই যা একসময় ভুল করে মুখরের ফোনে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। ভিডিওটা আবারো দেখতেই হেসে দিলাম। চোখে ভেসে উঠলো মুখরের মুখশ্রী, যেখানে সে আমার মতো করে বলছে, ‘আমি দেখতে খুব মিষ্টি, তাই না?’
একা বসে থাকাটা চরম বিরক্তের। তাই উঠে কিছুক্ষণ এদিক সেদিক হাঁটলাম। তাতেও কেন যেন বিরক্তিটা কমলো না। আমার থেকে কিছুটা দূরত্বে বেশ বড় করে গান চলছে। তার তালে নাচছে আমাদের ডিপার্টমেন্টের অনেকেই। তাদেরকে চিৎকার করে উৎসাহ দিচ্ছে সামনে সমাবেশের অনেকে! কিন্তু এতো কোলাহল আমার এই মুহুর্তে ভালো লাগছে না। আগের তিথিয়াটা হলে বোধহয় এই কোলাহলটা সবচেয়ে বেশি উপভোগ করতো! এমন চিল্লাচিল্লি সহ্য হচ্ছে না বলেই কিছুটা দূরে গিয়ে বসেছিলাম আমি।
হাঁটাহাঁটির মাঝপথে দেখলাম মুখরের ফোন। এই অসময়ে মুখর সচারাচর ফোন দেয় না। তাই এমন হুট করে তার ফোন আসায় ভয় পেয়ে গেলাম আমি। তড়িৎ কল ধরে বললাম,
‘কিছু হয়েছে, মুখর সাহেব? ফোন দিয়েছেন যে?’
মুখর প্রত্যুত্তরে বললো,
‘কেন? কিছু না হওয়া ছাড়া কি আপনাকে ফোন দেওয়া যায় না?’
আমি নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে বললাম,
‘না, এমন হবে কেন!’
‘তাহলে? আচ্ছা যাই হোক, আমি আপনার ভার্সিটির সামনে অপেক্ষা করছি। চলে আসুন, জলদি!’
‘হঠাৎ? কেন বলুন তো?’
‘কেন আবার?’
‘কিন্তু প্রোগ্রাম তো এখনো শেষ হয়নি।’
‘আপনি কি আসলেই প্রোগ্রামটা উপভোগ করছেন, মিস.তিথিয়া?’
তার এমন প্রশ্নে কি উত্তর দেবো বুঝলাম না। ইতস্তত করে বললাম,
‘হ্যাঁ, অনেকটাই।’
‘অনেকটাই নয়, ১০০% শিউর হয়ে বলুন।’
আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। ১০০% শিউর হয়ে বলার কিছু নেই। আমি ১০০০% শিউর যে, এখানে আমার বিন্দু পরিমাণও ভালো লাগছে না।
মুখর হেসে বললো,
‘আমি কিন্তু অপেক্ষা করছি, মিস.তিথিয়া। অপেক্ষা করা আমার একদম পছন্দ নয়।’
কার মুখে কি শুনছি আমি! এই ছেলেটাই কিছুদিন আগে আমায় বলেছিলো, অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়। আর এখন? ভাব নিয়ে বলছে, অপেক্ষা করা তার পছন্দ নয়। আমি জানালাম,
‘আসছি!’
ভার্সিটির সামনে আসতেই মুখরকে ওপারে একটা দোকানের পাশে দেখলাম। শাড়ি পড়ে হাঁটাটা বেশ মুশকিল হয়ে পড়ছে। তাও কোনোরকম রাস্তা পার হলাম। মুখরের কাছে এসেই বললাম,
‘চলুন, বাসায় ফিরে যাই।’
মুখর আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
‘কি বলছেন? এতো কষ্ট করে সকালবেলা রেডি হয়েছেন, শাড়ি ধরে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছেন। একটু না ঘুরলে কি হয়?’
আমি আড়চোখে তাকিয়ে বললাম,
‘উপহাস করছেন, তাই না?’
মুখর হো হো করে হেসে উঠে বললো,
‘আহহা! রাগছেন কেন?’
বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটার প্রস্তুতি নিতেই সে থামালো। বললো,
‘কই যাচ্ছেন? চলুন না, একটু ঘুরে আসি।’
‘কোথায়?’
‘চলুন, দেখাচ্ছি।’
এই বলে মুখর আমার ডান হাতটা ধরলো। আমি আঁতকে উঠলাম। কিছুটা ছিটকে যেতেই মুখর আমার অস্বস্তি বুঝে হাতটা চট করে ছেড়ে দিলো। সেও দ্বিগুণ অস্বস্তি নিয়ে বললো,
‘দুঃখিত, খুবই দুঃখিত! আপনি শাড়ি পড়ে হাঁটতে পারছেন না বলে আমি হাতটা ধরেছি। কিছু মনে করবেন না।’
আমি হালকা মাথা নেড়ে বোঝালাম তেমন কিছুই মনে করিনি আমি। তবে আমার হৃদপিণ্ডটা বন্ধ হয়ে গেছে অতিরিক্ত উত্তেজনায়! এই প্রথম মুখর আমার হাত ধরেছে। এর চাইতে বড় বিস্ময় আমার জন্য আর কি হতে পারে? লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম। মুখর আমায় ইশারায় বললো তার পিছু নিতে। কিন্তু এতেও বিপত্তি বাঁধলো। শাড়িটা নিচের দিকে জুতোর সাথে পেঁচিয়ে আমার হাঁটায় বিঘ্ন ঘটালো। হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে যাবো এমন সময় মুখরের হাতটা আঁকড়ে ধরলাম। সে পেছন ফিরতে ফিরতেই আমি তার হাত ধরে তাকে নিয়েই রাস্তায় চিৎপটাং হয়ে পড়ে গেলাম। মুখ তুলে তাকাতেই দেখি মুখর বেচারাও রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর আশেপাশের সবাই অদ্ভুতভাবে আমাদের দিকে চেয়ে আছে। ছিঃ কি একটা লজ্জায় পড়তে হলো! মুখরের চোখের দিকে তাকালাম না। কেননা আমি জানি ছেলেটা এখন আমার উপর রাগ করবে, চরম রাগ! তখন তার হাতটা ধরে এগোলে কিই বা ক্ষতি হতো আমার? যেখানে যাই সেখানেই বিপদ বাঁধিয়ে আসি আমি!
নিচের দিকে তাকিয়ে অনুশোচনায় ভুগছি। তখনই মুখর আমার হাত দ্বিতীয়বার আঁকড়ে ধরে ফিসফিসিয়ে বললো,
‘এই হাত যেন আলাদা না হয়, মিস.তিথিয়া! ছাড়বেন তো আপনার-ই বিপদ।’
আমি অবাক হয়ে তাকে দেখলাম। ছেলেটা এসব কি বলছে? ঠোঁটে রহস্যময় হাসিটা এঁটে রেখেছে সে। আর কিছু ভাববার আগেই সে আমার হাত ধরে রাস্তায় হাঁটা ধরলো।
তবে আমাদের ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যানটা বেশিক্ষণ ঠাঁই হলো না! আমার ফোনে রিং হওয়ায় দেখলাম আন্টি ফোন দিয়েছে। ফোন পেয়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যাওয়ায় মুখর বিড়বিড় করলো,
‘বারবার কিছু না কিছু হবেই!’
এই বলে ‘চ’ কারান্ত শব্দ করলো সে। তবে তার বিরক্তিকে পাত্তা না দিয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে ফোন রিসিভ করলাম। ওপাশ থেকে ব্যস্ত কণ্ঠে আন্টি বলে উঠলো,
‘তিথিয়া মা, তোমার আব্বার জ্ঞান ফিরেছে। তিনি কোমা থেকে ফিরে এসেছেন!’
(চলবে)