অদ্ভুত_নেশা পর্ব ১৩+১৪

#অদ্ভুত_নেশা
#পর্ব_১৩
#অধির_রায়

৩০.
ছোঁয়া অধিরের সাথে পাহাড় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার কোন খোয়াল নেই সে কোথায় আছে। অধিরও ছোঁয়াকে পরম পরশে জড়িয়ে ধরে আছে।

কিছু পড়ার শব্দে ছোঁয়ার মা বাবার ঘুম ভেঙে যায়৷ তারা ভেবেছে বাসায় চোর প্রবেশ করেছে। তাকে ধরার জন্য তারা ছোঁয়ার রুমের পাশ দিয়েই যাচ্ছিল।ছোঁয়ার রুমের দ্বারের নিচ দিয়ে রক্তের জোয়ার বয়ে আসছে।

ছোঁয়ার মা রক্ত দেখে সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সিদ্ধার্থ তারাতাড়ি করে রুমের ডবলিকেট চাবি নিয়ে এনে রুম খোলে৷ রুমে প্রবেশ করে ছোঁয়াকে দেখতে পায় না৷

ছোঁয়ার বাবা রুমের লাইট অন করে দেখতে পায় নিচে তপেস পড়ে আছে৷ মাথায় ব্যান্ডেজ হাতে ছুরি দ্বারা আঘাত৷ সিদ্ধার্থ ভয়ে নিজেকে একটু একটু করে সামনে এনে তপেসের পাশে বসে৷ তপেসের কাছে এসে দেখে তপেসের অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ হওয়ার জন্য জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।

— বাবা তপেসদা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। তাঁকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে৷

— কিন্তু এই সময় কিভাবে নিয়ে যাব? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ এখন নিশিরাত। রাতের শেষ প্রহর শুরু হয়ে গেছে। কিছু সময় পর আরতি আর শঙ্কের ধ্বনি শুনতে পারবে৷

— বাবা আমি সবই বুঝলাম৷ কিন্তু এভাবে আমরা তপেসদাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারি না। তপেসদাকে বাঁচানো দরকার৷ আর ছোঁয়া কোথায় আমরা জানি না৷ তপেস ছোঁয়ার খোঁজ দিতে পারে৷

ছোঁয়ার নাম নিতেই ছোঁয়া রুমে প্রবেশ করে। ছোঁয়া তপেসকে এই অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ঘাবড়ে যায়৷ তপেস কিভাবে এখানে আসল?

[ছোঁয়ার নাম নিতেই অধির ছোঁয়াকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়৷ ছোঁয়া অধিরের কথামতো দ্বার দিয়ে প্রবেশ করছে৷ অধির ছোঁয়াকে বলে দিয়েছে তার কোন দরকার পড়লে চোখ বন্ধ করে ২ বার অধির স্মরণ করতে। দুই বার অধির স্মরণ করলেই অধির ছোঁয়ার সামনে হাজির হবে৷ ]

— ছোঁয়াকে সুস্থ দেখতে পেয়ে ছোঁয়ার বাবা ছোঁয়াকে পরম আবেশে জড়িয়ে ধরে তোমার কিছু হয়নি? তুমি ঠিক আছো এটাই আমার কাছে বড় পাওয়া৷

— বাবা তপেসদাকে সাহায্য কর? (সিদ্ধার্থ)

— দাদা তপেসের কি হয়েছে? আর তপেস এখানে কি করছে? তাও আবার আমার রুমে। (ছোঁয়া)

— এখন কথা বলার সময় নেই৷ তপেসদাকে বাঁচাতে হবে৷ পরে তোকে সব বলছি৷

সিদ্ধার্থ আর তার বাবা তপেসকে নিয়ে হসপিটালে নিয়ে আসে৷ তার বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দেয় রাস্তায় এভাবে পড়েছিল। তারও কিছু প্রমাণ রেখে দিয়ে যায় ছোঁয়ার পরিবারের লোক।

— বাবা এভাবে ফেলে যাওয়া ঠিক হবে না।

— তপেস আমার মেয়ের সাথে যা করেছে। তার জন্য তাকে বাঁচানো আমাদের কোন প্রশ্নই উঠে না৷

— বাবা সে পাষাণ হতে পারে আমরা না৷ আমরা বরং তার মা বাবাকে খবর দিয়ে যায়।

— ওঁকে। তোমার যেমনটা মনে হয়৷

সিদ্ধার্থ তপেসের মা বাবাকে ফোন করে হসপিটালে আসতে বলে৷ তারা তপেসের ফোন পেয়ে খুব তারাতাড়ি হসপিটালে এসে পড়ে৷

— কি হয়েছে তপেসের? (তপেসের বাবা)

— আপনার ছেলে এক্সিডেন করেছে৷ আমরা তাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছি৷ এখন আমরা যেতে পারি৷

সিদ্ধার্থ আর তারা বাবা হসপিটাল থেকে চলে যেতে নিলেই একটা নার্স এসে সিদ্ধার্থকে বলে রোগীর জ্ঞান ফিরেছে।আপনাদের সাথে কিছু কথা বলতে চায়।

— আমাদের সাথে কি কথা আছে? তার মা বাবা এখানে আছে। যা বলার তাদের সাথে বলতে পারে। (ছোঁয়ার বাবা)

–সরি স্যার৷ কিন্তু রোগী আপনার নাম বলেছে। সে আপনার সাথে কথা বলতে চায়৷ (নার্স)

— চল বাবা কি বলতে চায়? জেনে নেওয়া ভালো। আমরা তো আর খুনি পরিবারের সদস্য না৷

(সিদ্ধার্থ কথাটা খোঁচা দিয়ে বলে তপেসের পরিবারের সামনে। সিদ্ধার্থের কথা শুনে তপেসের মা বাবা মুখ কালো করে মাথা নিচু করে ফেলে)

— হ্যাঁ। ঠিক বলছ তুমি। চল দেখা করে আসি৷

ছোঁয়ার বাবা আর সিদ্ধার্থ তপেসের কেবিনে ঢুকে৷ তপেস চোখে জল নিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

৩১.
তপেস শুধু তাদের দিকে চেয়ে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে। কিভাবে তাদের কাছে ক্ষমা চাইবে তার কোন ধারণা তার কাছে নেই।

— চোখের জল ফেলে লাভ নেই৷ কি বলবে? তা বলে দাও,আমাদের হাতে তেমন সময় নেই৷ (সিদ্ধার্থ)

— আঙ্কেল আমাকে একটা সুযোগ দেওয়া যায় না।

— কিসের সুযোগ?(ছোঁয়ার বাবা)

— আঙ্কেল বিশ্বাস করেন আমি ছোঁয়ার সাথে এসব কাজ ইচ্ছা করে করি নি৷ আর ছোঁয়াকে আমি ইচ্ছা করে সিঁড়ি থেকে ফেলে দেয় নি৷ একটা এক্সিডেন।

— তোমার বাজে কথা শোনার মতো আমাদের সময় নেই৷ তোমার কাছে আমি কিছুতেই আমার মেয়ে ছোঁয়াকে বিয়ে দিব না৷

— আঙ্কেল আমি ছোঁয়াকে বিষণ ভালোবাসি। তাঁকে ছাড়া বাঁচতে পারব না৷

— তুমি বাঁচা মরা আমাদের কিছু যায় আসে না৷ তোমার লাইফে আমরা কোন ভাবেই ইন্টারফেয়ার করতে চায় না৷ বুঝতে পেরেছ।

— তাহলে কেন বাঁচালেন? মরতে কেন দিলেন না৷

— মানবতার খাতিরে তোমাকে বাঁচিয়েছি৷ তোমার মাঝে মানবতা না থাকতে পারে কিন্তু আমাদের কাছে মানবতাহীম নয়৷ তোমার জায়গায় একটা ফকির হলে আমরা সেই কাজ করতাম৷

— আমাকে যত পারেন অপমান করেন৷ ফকিরের সাথে তুলনা করলেন শেষে৷ তবুও আমি আপনার উপর একটুও ক্ষেপে নেই।প্লিজ আঙ্কেল আমাদের সম্পর্কটা মেনে নেন৷

— তোমাদের না৷ বল তোমার সম্পর্ক ছোঁয়া কোনদিনও তোমাকে মেনে নিবে না৷

তপেসের মা এসে ছোঁয়ার বাবার সামনে হাত জোর করে বলে৷

— প্লিজ আমাদের একটা সুযোগ দেন৷ ছোঁয়াকে না পেলে আমাদের ছেলে মারা যাবে৷

— আর তেপেসের সাথে বিয়ে হলে আমার মেয়ে ছোঁয়া প্রতিটি মুহুর্তে মুহুর্তে মারা যাবে৷

— প্লিজ আমার ছেলের বিষয়টা বুঝার চেষ্টা করেন। আমি কথা দিচ্ছি ছোঁয়ার কোন অসম্মান হলে আমি আপনার বাসার কাজের লোক হয়ে থাকব শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত।

ছোঁয়ার বাবা অনেক ভেবে দেখে ছোঁয়াও তপেসকে পাগলের মতো ভালোবাসে৷ এই এক মাস তপেসের বিরহে ছোঁয়া প্রায় মৃত হয়ে বেঁচে ছিল।

— আমি কিছু বলতে পারব না৷ আপনার যদি ছোঁয়াকে রাজি করাতে পারেন তাহলে আমার কোন দ্বিমত থাকবে না৷

— ওঁকে আমরা ছোঁয়ার কাছেও ক্ষমা চাইবো৷

— তাহলে আজ সন্ধ্যায় আপনারা আমাদের বাড়িতে আসেন।

— বাবা তুমি কি পাগল হলে শত্রু পরীতে ছোঁয়াকে পাঠাতে চাইছো।

— বড়দের মাঝে কথা বল না৷ আমি জানি ছোঁয়া এখনও তপেসকে খুব ভালোবেসে।

ভালোবাসার কথা শুনে তপেসের মুখে এবার হাসির রেখা ফুটে উঠে৷ তার খুশির কারণ সে বলে প্রকাশ করতে পারছে না। মনে মনে সে মহান খুশি৷ যদি এটা প্রকাশ করে তাহলে এর বিপরীত হবে৷


🍁
সন্ধ্যায় তপেসের মা বাবা মাথা নিচু করে বসে আছে ছোঁয়াদের পরিবারের সামনে। কি করে তারা বলবে? বুঝতে পারছে না৷
তেপেস হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে৷ ছোঁয়া তাদের দেখে দেখে জ্বলছে আর রুচির মতো ফুলছে।

— তোমার কাছে কিভাবে ক্ষমা চাইব আমাদের কাছে জানা নেই৷ জানি তপেস তোমার সাথে অন্যায় করেছে আমরা মেনে নিচ্ছি। প্লিজ এবার তপেসকে ক্ষমা করে দাও৷(তপেসের বাবা)

— তাদের আলাদা করে কথা বলতে দেওয়া হক। তাদের সমস্যা তারাই মিটিয়ে নেক৷ এতে তাদের লাইফ কোন আচ আসবে না৷ (ছোঁয়ার বাবা)

— ঠিক বলছেন।

ছোঁয়া তপেসকে নিজের রুমে নিয়ে যায়৷ ছোঁয়ার কোন কথা বলার ইচ্ছা নেই৷ তবুও মানবতা খাতিরে কথা বলতে হবে৷ কিভাবে কথা বলবে?

এয়ারকন্ডিশনের নিচেও ঘেঁমে একাকার হয়ে যাচ্ছে তপেস।মুখ থেকে কোন বুলি বের হচ্ছে না৷

৩২.
তপেস হুট করেই ছোঁয়ার হাত ধরে ফেলে।ছোঁয়া হাত ধরায় কিছুটা অপ্রস্তুত ছিল। নিজেকে ছাড়ানোর জন্য একটু চেষ্টা করতেই তপেস

–“আউচ”

— কি হলো আপনার?

— তেমন কিছু না৷ হাতে একটু ব্যথা পেয়েছি৷ কিন্তু সেড়ে যাবে৷

— কিভাবে পেলেন?

— নিজেকে দেখে রাখতে পারেন না৷

— কার জন্য দেখে রাখব? যার জন্য দেখে রাখতাম সেই তো আমাকে ভুলে গেছে।

— আমি আপনাকে ভুলে যায়নি। আপনিই তো আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছেন।

— আমি আসল ঘটনা জানতাম না৷ আমি শুধু দাদার বন্ধুদের কাছে শুনেছিলাম তুমি আমার দাদাকে তুমিই নিজ হাতে হত্যা করেছ।

— আপনার দাদাকে আমি মারতে যাব।আপনার দাদা নিজেই আমার উপর এসিড নিক্ষেপ করতে এসেছিল৷ উপস্থিতি বুদ্ধির জন্য বেঁচে যায়।

— হুম আমি জানি৷ আর সেই এসিড পড়ে আমার দাদার মুখে৷ সেই এসিডের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে দাদা গাড়ির নিচে চাপা পড়ে। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে৷

— হুম। এবার সত্য ঘটনা জানতে পেরেছেন।

— আমাকে একটা সুযোগ দাও। আমি তোমাকে আর কোন কষ্ট দিব না৷ কথা দিচ্ছি সারাজীবন আমি তোমার পাশে থাকব।

— যে কাচ ভেঙে যায় সে কাচ জোড়া লাগে না৷ আমি আর এই সম্পর্কে এগিয়ে যেতে চায় না৷

— ভাঙা কাচকে তে আমার জোড়া লাগানো যায়৷

— হ্যাঁ জোড়া লাগানো যায়।কিন্তু সেই ক্ষতগুলো পুরোপুরি মুছে যায় না৷

–ভালোবাসার চাদর দিয়ে আমি সেই ক্ষতগুলো ঢেকে দিব৷ কোনদিন সেই ক্ষত সামনে আসতে দিব না।

— কুয়াশার চাঁদরে মেঘের সন্ন্যাসীতে ভালোবাসার চাঁদর হার মানতে বাদ্য হয়৷

— কুয়াশার চাঁদর ঢেকে রাখতে পারে না সারাজীবনের ভালোবাসা। বসন্তের ফাগুনের কাছে কুয়াশার চাঁদর হার মানতে বাদ্য৷ আমার ভালোবাসা সব সময় ফাগুনের বসন্তের মতো তোমার হৃদয়ে বয়ে যাবে।

— উত্তরী ঘন কুয়াশার আড়ালে লুকিয়ে যাওয়া ভালোবাসাকে আর জাগিয়ে তুলতে চায় না আমি৷ প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেন।

–উত্তরী হয়ে হিমালয়ের চূড়ায় তুমি লুকিয়ে থাকলে সেখানেই তোমাকে ভালোবাসবো৷ প্লিজ আমার ভালোবাসা এক্সেপ্ট কর?

— আমি আপনার ভালোবাসা স্বীকার করতে পারব না৷

— ওঁকে স্বীকার করতে হবে না৷ আমি আমার নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিব৷

তপেস ফল কাটার ছুরি নিয়ে নিজের হাত কাটতে নিলেই ছোঁয়া বাঁধা দেয়।।

— কেন বাঁধা দিচ্ছ।তোমার ভালোবাসা ছাড়া আমার জীবন অচল।

— আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি।

ছোঁয়া আজ নিজ থেকে তপেসকে জড়িয়ে ধরে৷ তপেসও নিজের বাহুতে ছোঁয়াকে লুকিয়ে রাখে।



আবার নতুন করে শুরু হচ্ছে বিয়ের অনুষ্ঠান৷ কিন্তু তপেস বিয়ে বাড়িতে এখন পৌঁছে নি৷ বিয়ের লগ্ন পেরিয়ে যাচ্ছে। ছোঁয়াকে লগ্নবষ্টা হওয়া থেকে কে বাঁচাবে?

চলবে..#অদ্ভুদ_নেশা
#পর্ব_১৪
#অধির_রায়
৩৩.
ছোঁয়ার বিয়ের লগ্ন পেরিয়ে যাচ্ছে। অথচও তপেসের কোন খবর নেই৷ পরিবারের সবাই চিন্তিত ছোঁয়ার বিয়ের লগ্ন পেরিয়ে না যায়। ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না তপেসকে। তপেসের খোঁজে অনেকে বেরিয়ে পড়েছে৷ কেউ দিতে পারছে না তপেসের খোঁজ।

ছোঁয়ার বাবা ভীষণ ক্ষেপে আছে তপেসের উপর৷ তার এক কথা সে এখন কিছুতেই ছোঁয়াকে তপেসের হাতে তুলে দিব না৷ এখন ভালো কোন পাত্র পেলে ছোঁয়াকে তার হাতে তুলে দিবে৷ ঠিক তখনই অধির দেখা দেয় ছোঁয়ার বাবার সামনে৷ অধিরকে দেখে ছোঁয়ার বাবার মনে একটু আশা সঞ্চয় হয়। ছোঁয়ার বাবা কিছু বলার আগেই অধির ছোঁয়ার বাবাকে বলে উঠে,,

— আঙ্কেল একটা কথা বলতে পারি।

— হুম বল।তেমার কাছে ভালো কোন পরামর্শ থাকলে দিতে পার।

— আঙ্কেল আপনি যদি রাজি থাকেন ছোঁয়াকে আমি বিয়ে করব? আমি ছোঁয়াকে ভীষণ ভালোবাসি৷ কিন্তু ছোঁয়া তপেসকে ভালোবাসত সে জন্য তাদের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় নি৷

— সিদ্ধার্থ রুমে প্রবেশ করতে করতে কিন্তু আমরা জানি তুমি মারা গিয়েছিলে৷ তোমার সৎকারও আমরা করেছি৷

— দেখ সিদ্ধার্থ তোমরা আমার সৎকার করেছো ভালো কথা৷ কিন্তু আমি মারা যায়নি৷ মারা যদি যেতাম তাহলে তোমাদের সামনে দাঁড়িয়ে কিভাবে থাকতাম?

— এসব কথা পরে হবে। তুমি অধিরকে বিয়ের পিরিতে নিয়ে আসো।(সিদ্ধার্থকে উদ্দেশ্য করে বলে)

— ওঁকে বাবা।

ছোঁয়ার বাবা সোজা ছোঁয়ার রুমে চলে যায়। সেখান থেকে সবাইকে চলে যেতে বলা হয়৷ রুমে এখন শুধু ছোঁয়া আর ছোঁয়ার বাবা রয়েছে।

— বাবা কিছু বলবে?

— তুমি আমাকে কতটুকু বিশ্বাস কর?

— নিজের থেকেও বেশি৷

— তাহলে শুনে রাখ। তুমি যাকে বিশ্বাস করে বিয়ে করতে চেয়েছিলে সেই তপেস তোমাকে লগ্নভ্রষ্টা করতে চেয়েছিল।কিন্তু আমি তোমার এত বড় ক্ষতি হতে দিব না৷

— কি বলছ বাবা? অবাক হয়ে ছোঁয়া বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে।

— মা আমি তোমার কাছে একটা অনুরোধ করছি?

— কি অনুরোধ?

— কোন বাবা মা চায় না তার ছেলে মেয়ে লগ্নভ্রষ্টা হক। আমি তোমার পছন্দকে মেনে নিয়েছি৷ এখন তোমার কাছে আমার একটাই চাওয়া তুমি এখন আমাদের পছন্দটা মেনে নাও৷

— বাবা তুমি যাকে পছন্দ করবে আমি তাঁকেই বিয়ে করব? আমি তোমার কথার কখনো অবাদ্য হব না৷

–তুমি আমার মান রেখেছ।তোমার ঋণ শোধ করতে পারব না৷

— বাবা তুমি কেন আমার কাছে ঋণী থাকবে? আমি তোমার কাছে ঋণী।

ছোঁয়ার বাবা মেয়ের কপালে আলতো করে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে চলে যায়।

ছোঁয়া আজ তার ভুল বুঝতে পারে৷ সে আজ অধিরকে বিয়ে করতে কোন অসুবিধা নেই৷ কিন্তু অধির তার উপর অভিমান করে চলে গেছে৷ অধির তাকে কথা দিয়েছে সে কোনদিন তার সামনে আসবে না৷ ছোঁয়ার শেষ ইচ্ছা ছিল অধিরের মুখ দেখা কিন্তু তার পরিবর্তে ছোঁয়া এমনভাবে অধিরকে হার্ট করে ফেলে যা জন্য আজ ছোঁয়া একা।



শুভ দৃষ্টির সময় ছোঁয়া এক পলক অধিরের দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু সে জানে না এই সেই অধির সে এখন যাকে মন থেকে ভালোবাসে৷ তার কাছে যেতে তার কোন দ্বিধা নেই৷

অধিরের চোখ দুটো মায়ায় ভরা। লম্বা ৫’৮”। দেখতে অনেকটা ফর্সা। মুখে ডেবিল হাসি।কোন মেয়ে প্রথম দেখায় তাকে ভালোবাসে ফেলবে৷ [বাস্তবে অধির বাকহীন।] এত সুন্দর চেহারা তার দিকে কোন খেয়াল নেই ছোঁয়ার৷ ছোঁয়া এখন শুধু তার স্বপ্নের অধিরকে নিয়ে ভাবছে৷ তার সাথে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তপেসের প্রতারণা। তপেস কি করে পারল এমনটা করতে আমার সাথে।

দেখতে দেখতে হয়ে যায় তাদের বিয়ে৷ বিদায়ের পালা। ছোঁয়ার মা বাবা চোখে অনেক অশ্রু। বাট ছোঁয়ার চোখে কোন অশ্রু নেই৷ সে শোকে পাথর হয়ে গেছে৷ সমস্ত রাস্তায় তার পাশে অধির বসে থাকাতেও সে কোন কিছু অনুভব করতে পারেনি। সে জানে না যে তার স্বপ্নের অধিরের সাথেই তার বিয়ে হয়েছে৷

সে তার অধিরের জন্য অনেক কাতর হয়ে আছে৷ মনে মনে শুধু তার ভালোবাসার কথা গুলো স্মরণ করে যাচ্ছে। আবার এটাও বলে যাচ্ছে আজ রাতে অধির তার কাছে না আসলে সে নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিবে। তাহলে তার অধিরের সাথে পরলোকে দেখা হবে৷



৩৪.
কাঁচা ফুলে দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ঘরটা৷ ঠিক রুপকথা গল্পের মতো। ছোঁয়া কারু কাজ করা একটা বিছানায় বসে আছে৷ বিছানায় চাদর সেই আদিম রেশমি সুতা দিয়ে গাঁথা। যেমন কোমল তেমন মখমলে। ছোঁয়া সব কিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে৷ তারই মাঝে এখন নিজের মন অশান্ত।

সে কিছুতেই নিজের মন থেকে অধিরকে সরাতে পারছে না৷ নিজের মনের সাথে অনেক যুদ্ধ করে যাচ্ছে।

না এখানে বসে থাকলে চলবে না৷ আমি বাবার কথামতো বিয়ে করেছি৷ এখান থেকে এখন পালিয়ে যাব৷ ঠিক মহাদেব আমাকে অধিরের কাছে পৌঁছে দিবে৷ (মনে মনে)

ছোঁয়া খুব ধীরে ধীরে দ্বার খোলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু যেদিকে যায় শুধু ঘুরে ঘরে এক জায়গায় ফিরে আসে৷ এটা কিভাবে সম্ভব কিছুই বুঝতে পারছে না৷ হঠাৎ করে ছোঁয়া একটা জানালা দেখতে পায়৷ জানালা দিয়ে ঝাঁপ দিতে যাবে। কিন্তু জানালা সাদা চাঁদর দিয়ে মুরানো। সে কিছুতেই চাঁদর সরাতে পারছে না৷

ছোঁয়া চোখের জল ফেলে নিজের বাসর রুমে চলে আসে৷ বিছানায় বসে বসে অধিরের নাম নিয়ে যাচ্ছে আর চোখের জল ফেলে যাচ্ছে। [ বাঙালীরা দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দেয় না]

— প্লিজ অধির ফিরে আসো। আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও৷ আমি তোমার বিরহে মরে যাব৷ আমি তোমাকে কখন ভালোবেসে ফেলেছি জানা নেই৷ প্লিজ অধির ফিরে আসো।কান্না করতে করতে বলে যাচ্ছে ছোঁয়া।

দ্বার খোলার শব্দে ছোঁয়া নিজেকে সংযত করে বসে আছে। অধির ধীরে ধীরে ছোঁয়ার কাছে এসে বসে৷ ছোঁয়ার হাত ধরাতেই ছোঁয়া এক ঝাঁকি দিয়ে দূরে সরে যায়।

— আমি আপনাকে বিয়ে করেছি শুধু বাবার কথাতে। প্লিজ আমাকে টার্চ করার চেষ্টা করবেন না৷

— আমাকে তোমার পছন্দ হয়নি বুঝি।

— আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারব না৷ আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।

— যে তোমাকে বিয়ের মন্ডবে রেখে পালিয়ে গেছে তাকে তুমি ভালোবাস?

— আমি তাকে ভালোবাসি না৷ আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।

— তাহলে তপেসকে ভালোবাসতে রাজি হয়েছিলে কেন?

— আমি আপনাকে কেন বলতে যাব? আপনি রুম থেকে বের হয়ে যান৷ আপনার সাথে আমার কোন মিল নেই৷

— আমাকে বন্ধু হিসেবে তোমার সমস্যার কথা বলতে পার। আমি তোমাকে সাহায্য করব?

— যদি সাহায্য করেন তাহলে আমাকে এই বাড়ির বাহিরে নিয়ে যান৷

— বাহিরে কেন যাবে সেটা বলা যাবে কি?

— আমি এই বাড়ি থেকে পালিয়ে যাব.।আমি অনেক চেষ্টা করেছি পালানোর জন্য।

— আমি সব জানি৷

— কিভাবে?

— এটা আমার বাড়ি৷ আমার হুকুম ছাড়া কেউ বাড়ির বাহিরে যেতে পারে না৷ সেজন্য তুমি পালাতে পারনি৷

— ভালোই ভালোই বলছি আমাকে যেতে দেন। না হলে প্রচুর খারাপ হয়ে যাবে৷

— তুমি তপেসকে ভালোবাসো না৷ তাহলে কাকে ভালোবাসো৷ তোমাকে কার কাছে যেতে দিব৷

— আমার ভালোবাসা শুধু আমিই জানি। আমি কাউকে বলতে পারব না।

— কেন? কাউকে হিংসা কর কি?

— বললে বিশ্বাস করবেন না৷

— তুমি যার জন্য এমন করছ সে তোমার সামনে বসে আছে সুইটহার্ট। আজ তোমার সামনে সম্পূর্ণ দেহ নিয়ে বসে আছি। (মনে মনে)

— আপনাকে বললে যদি আমার বাবা মা,, দাদার কোন ক্ষতি করে দেয়৷

— কোন ক্ষতি করবে না৷ আমি কথা দিচ্ছি।

— আপনি সিউর কিভাবে? তাছাড়া আপনি তাঁকে চিনেন না৷

— তাকে ডাক দাও৷ যদি তোমার সামনে আসে তাহলে তোমার কথা সে শুনতে পারবে৷ আর যদি না আসে তাহলে সে কোন ক্ষতি করতে পারবে না৷

ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে এক টানা অধিরকে ঢেকে যাচ্ছে। কিন্তু সে কোন সাড়া দিচ্ছে না৷

— আমাকে ঢেকে লাভ নেই সুইটহার্ট। আমি তোমার সামনে৷ তুমি আমাকে ভালোবাসো আজ নিজের মুখে আমাকে বলবে। (মনে মনে) কি হলো সাড়া পাচ্ছো কিছু?

— না৷ চোখ খোলে বলে।।

–তাহলে তোমার সমস্যার কথা আমাকে বলতে পার। এই বাড়িতে আমার অনুমতি ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না৷ যেতেও পারবে না।

— আমি অধির নামে একজন অদ্ভুত লোককে ভালোবাসি।

— অদ্ভুত লোক মানে কি?

— কারণ আমি তাকে কোনদিন চোখে দেখি নাই।

— না দেখেই ভালোবাসে ফেলছো।

— হুম৷ এখন আমাকে এই বাড়ি থেকে বের হতে সাহায্য করেন৷ অধির এই বাড়িতে আসতে পারছে না৷

— আমাকে ভালো করে দেখ কিছু মনে পড়ে নাকি?

— আপনাকে দেখার কোন সময় নেই আমার৷ প্লিজ আমাকে অধিরের কাছে যেতে দেন৷

— তাহলে আমার দিকে তাকাও।

ছোঁয়া অধিরের দিকে তাকাতেই অধির নিজের মুখ মায়াজালে লুকিয়ে ফেলে। যা দেখে ভিষম খায় ছোঁয়া।

— আমতা আমতা করে কে আপনি?

— সুইটহার্ট আমাকে চিনতে পারলে না৷

— আপনি কে? এখানে কিভাবে আসলেন? আপনি কোন জাদুকর। প্লিজ আমাকে আমার অধিরের কাছে ফিরিয়ে দেন৷

৩৫.
— সুইটহার্ট আমার কন্ঠও শুনে বুঝতে পারলে না৷ রাতে পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানো। নদীর তীরে পানিতে অল্প পা ঢুবিয়ে হাঁটা।

ছোঁয়া এবার অধিরকে চিনতে পেয়ে জোরে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়। কান্নার কারণে ছোঁয়া কিছু বলতে পারছে না৷ নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে ছোঁয়া অধিরকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।

— সুইটহার্ট এভাবে জড়িয়ে ধরে থাকবে নাকি।

— হুম আমার যখন ইচ্ছা হবে তখন আমি ছেড়ে দিব৷ একটুও নড়াচড়া করবেন না৷ নড়াচড়া করলে খুন করে ফেলব।

— এত ভালোবাসাে আমায়। তাহলে তপেসকে কেন বিয়ে করতে চেয়েছিলে?

— বেশ করেছি৷ কি করব? আপনি তো আমার সামনে আসেন না।

— তোমার সামনে ইচ্ছা করেই আসি নাই।

— কেন?

–আমার ভালোবাসা যেন তুমি উপলব্ধি করতে পার।

— আসলেই আপনি একটা পঁচা।

ছোঁয়া অধিরকে ছেড়ে দিয়ে অধিরের বুকে কিল বসিয়ে দিতে লাগে।

— আমাকে মেরে ফেলবে সুইটহার্ট।

— হুম আপনাকে মেরেই ফেলব? আপনি এখনো মুখ লুকিয়ে আছেন কেন?

অধির আবার নিজেকে ছোঁয়ার সামনে নিয়ে আসে। ছোঁয়া অপলক দৃষ্টিতে অধিরের দিকে চেয়ে আছে৷ অধিরও ছোঁয়ার মায়াভরা চোখে তাকিয়ে আছে।

ছোঁয়া অধিরকে পরম আবেশে জড়িয়ে ধরে অধিরের বুকে মুখ লুকাই। অধির ছোঁয়াকে দুই বাহুর মাঝখানে আগলে রাখে।

— কথা দেন আমাকে ছেড়ে কোনদিন যাবেন না৷

— কথা দিচ্ছি তোমাকে ছেড়ে কোনদিন আমি যাব না৷ আমাদের ভালোবাসার বন্ধন জন্ম জন্মান্তরের৷ কেউ আলাদা করতে পারবে না।

— হুম আমরা এই জন্মে না। আমরা পরের জন্মেরও এক সাথে থাকব। আমাদের বন্ধন কেউ ছিন্ন করতে পারবে না।

— না পরবে তপেস না পরবে তপেসের দাদা প্রার্থ।

— আপনি প্রার্থকেও চিনেন?

— আমি তোমার সব বিষয়ে খেয়াল রেখেছি। প্রার্থকে চিনব না এটা কোন কথা নয়৷ কিন্তু আমার একটা আর্জি আছে৷

— কিসের আর্জি?

— আমার পিচ্চি একটা ছোঁয়া চায়।

ছোঁয়া লজ্জায় লাল হয়ে যায়। এর আগে কখন এমন লজ্জা পায়নি৷ ছোঁয়াকে আরও লজ্জা দেওয়ার জন্য অধির বলে উঠে।

— তুমি লজ্জা পেলে তোমাকে স্টবেরির মতো খেয়ে ফেলতে মন চায়৷

অধিরের কথা শুনে ছোঁয়া আরও অধিরের বুকে মুখ লুকায়৷ পারলে বুকের ভিতর ঢুকে যাবে।

ছোঁয়া সম্মতি নিয়ে আজ অধির ছোঁয়াকে নিজের করে নেয়। এতদিন যা করেছে তাতে ছোঁয়ার কোন সম্মতি ছিল না৷ অধির❤ছোঁয়া ঢুব দেয় ভালোবাসার অসীম সাগরে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here