অদ্ভুত_নেশা পর্ব ১১+১২

#অদ্ভুত_নেশা
#পর্ব_১১
#অধির_রায়
২৫.
ছোঁয়া কলেজে প্রবেশ করতে তার উপরের গোলাপের পাপড়ি পড়তে শুরু করে। ছোঁয়া নিজেকে এখানকার বিএইপি লোক ভাবতে শুরু করে। দু হাত দিয়ে কিছু ফুল নিজের হাতে নিয়ে নেয়৷

কিন্তু প্রশ্ন হলো এই কাজ কে করতে পারে?ছোঁয়া কি ভুল করে ঢুকে পড়েছে৷ সেটা ভেবে পা পিছিয়ে নিতে নিলেই সকলে বলে উঠে এই ব্যবস্থা ছোঁয়ার জন্য।সাথে সাথে কিছু লোক সামান থেকে সরে দাঁড়ায় সেখানে গাধা ফুল দিয়ে লেখা আছে পাপড়ির তৈরি রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসো।

ছোঁয়া দ্বিধায় পড়ে যায়।সে যাবে কি না যাবে না? কিন্তু কিসের রহস্য এটা জানার জন্য ছোঁয়া গোলাপের পাপড়ি দিয়ে তৈরি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। সকলে ছোঁয়াকে হাত তালি দিয়ে ভাহবা জানাচ্ছে।

ছোঁয়া গোলাপের পাপড়ি দিয়ে তৈরি রাস্তা দিয়ে কলেজের ভিতরে বট তলায় দিয়ে গিয়ে পৌঁছে। সেখানে দুজন ছেলে সাদা সিল্কের কাপড় দিয়ে রাস্তার পথ আটকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছোঁয়া সেখানে যেতেই সাদা সিল্কের পর্দা সরিয়ে ফেলে।

সাদা সিল্কের পর্দা সরিয়ে ফেলার সাথে সাথে প্রার্থ হাঁটু গেরে বসে পড়ে ছোঁয়ার সামনে৷ হাতে একটা হলুদ গোলাপ নিয়ে

— Do you merry me?

ছোঁয়া কিছু না বলে দাঁড়িয়ে আছে৷ সে ভাবছে সে এই সব স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু এসব স্বপ্ন নয়।

— কি হলো ছোঁয়া এক্সেপ্ট কর?(চারিদিক থেকে বলে উঠল)

ছোঁয়া প্রার্থের হাত থেকে গোলাপ নেওয়ার সাথে সাথে সকলে খুব ভাহবা দিতে লাগল।কিন্তু সব ভাহবা ছোঁয়ার গায়ে কাটার মতো লাগে৷ ছোঁয়া প্রার্থের হাত ধরে দাঁড় করিয়ে গোলাপ ফুল পায়ে পিশে ফেলে।

এই ঘটনা দেখে সবাই অভাগ। এত সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলেকে কেউ রিজেক্ট করেছে এটা দেখে। প্রার্থের চোখ থেকে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে মাটিতে।

ছোঁয়া প্রার্থের গালে দুই টা থাপ্পড় দিয়ে

— তোর কি মনে হয় গতকাল তোর সাথে ভালোভাবে কথা বলেছি বলে তোকে ভালোবাসে ফেলেছি৷

— ছোঁয়া আমি তোমাকে প্রথম দেখায় ভালোবাসে ফেলেছি৷

— তাহলে এটা বল আমি কত নাম্বার সিরিয়ালে আছি৷ এই কথা তুই কত জনকে বলেছিস প্লে বয়।

প্লে বয় কথাটা শুনে প্রার্থ কিছুটা ঘাবড়ে যায়। তবে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে

— কি বলছো ছোঁয়া এসব?

— আমি তোর বিষয়ে আরও ২ মাস আগে জেনেছি৷ তুই যেদিন মিরা রিজেক্ট করে দিয়েছি তখনই সব জানি।

–কোন মিরা? আমি মিরা নামে কাউকে চিনি না৷

— মিরা আর কেউ না৷ মিরা আমারই মামুর মেয়ে ছিল৷ যাকে তুই তোর ভালোবাসার মায়াজালে ফাঁসিয়ে তার সর্বত্র কেড়ে নিয়ে তাকে তুই অস্বীকার করেছিলি৷

— ছোঁয়া আমাকে বিশ্বাস কর?

ছোঁয়া প্রার্থের কথা না শুনে প্রার্থকে আরও একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷

— তোর অপবিত্র মুখে তুই আমার নাম নিবি না৷

— বিশ্বাস কর এরপর থেকে আমি কোন খারাপ কাজ করব না। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি।

— তুই জানিস তোকে কেন মানুষ ভালোবাসতে চায়৷ তোর টাকা দেখে। তোর মতো হুনুমান খাটো ছেলেকে ছোঁয়া কোনদিন ভালোবাসবে না৷ যা এখান থেকে৷ আর এটা মনে রাখিস মিরার মৃত্যুর শাস্তি তোকে আমি দিব৷

ছোঁয়া কিছু না বলে ক্লাসে চলে যায়।ক্লাস শেষ করে ছোঁয়া আর রিয়া মনের সুখে ফোসকা খাচ্ছে। সাধারণ ভারতবর্ষে সকল মেয়েদের ফোসকা সব চেয়ে প্রিয় খাবার৷

ছোঁয়া ফোসকা খাওয়া শেষ হতেই প্রার্থ ছোঁয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে কলেজের বাহিরে৷

— তোর সাহস কম নয়। তুই আমাকে টার্চ করিস?

— তোকে আবার বলছি ভালোই ভালোই আমার প্রপোজাল এক্সেপ্ট কর?

— তোর মতো প্লে বয়কে কোন দিন না৷

— এখনও বলছি আমার কথা মেনে নে৷

ছোঁয়া আবারও প্রার্থের গালে ঠাস ঠাস করে বসিয়ে দিল।

— তোর এই সুন্দর চেহারা নিয়ে খুব অহংকার তাই তো?

— তুই যদি আর এক বার আমার সামনে আসিস তোকে মেরে ফেলতে আমার হাত দ্বিধা বোধ করবে না।

প্রার্থ একটা অ্যাসিডের বোতল নিয়ে এসে এটা হলো এসিড৷ আজ তোর এই সৌন্দর্য হারাতে হবে৷

ছোঁয়া এই সময়ও ধৈর্য হারিয়ে ফেলেনি৷ ছোঁয়া খুব বুদ্ধি খাটিয়ে এসিডের বোতলে লাথি দেয়৷ যার ফলে এসিড প্রার্থের মুখে ছিঁড়ে যায়।

— তোদের মতো ছেলেদের এমনই হওয়া উচিত।

প্রার্থ নিজের মুখে হাত দিয়ে চিৎকার করতে করতে রাস্তায় ভিতরে চলে আসে৷ রাস্তা দিয়ে বার বার বয়ে যাচ্ছে বড় বড় গাড়ি৷ প্রার্থ রাস্তার ভিতরে আসার সাথে সাথে মালবাহী ট্রাকের সাথে ধাক্কা খায়। যার ফলে প্রার্থের সমস্ত দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। প্রার্থ সেখানেই তার কর্মের শাস্তি পায়।

২৬.
বর্তমান।
— এটা প্রার্থের ছবি৷(ছোঁয়া)

— হ্যা এটা প্রার্থ। (তপেস)

— এর মতো লোক দুনিয়াতে নেই বলে আজ আজ অনেক মেয়ে দুনিয়াতে ঠিক ভাবে বেঁচে আছে৷ এটা বললে ভুল হবে। এখন তো তুই আছিস সেই প্রার্থের মতো।

— প্রার্থকে তুই মেরে ফেলেছিলি। জানিস প্রার্থ আমার কি হয়৷

— মুখ সামলে কথা বলবি। তোর প্রার্থকে আমি কেন মারতে যাব? প্রার্থের মতো লোকদের বেঁচে থাকার কোন রাইট নেই।

তপেস ছোঁয়ার গাল চেপে ধরে প্রার্থ আর কেউ না আমার দাদা হয়৷ তুই আমার দাদাকে মেরে ফেলেছিস। তোকে আমি ছাড়বো না৷

ছোঁয়ার শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। গলা চেপে ধরায় মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছে না৷ ছোঁয়ার চোখ পড়ে হাতের কাছে ট্রি টেবিলে রাখা ফুলের টপের উপর৷ ছোঁয়া ফুলের টপটা খুব কষ্ট নেয়।

ছোঁয়া ফুলের টপ নেওয়ার পর নিজেকে তপেসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তপেসের মাথায় খুব জোরে বারি মারে। যার ফলে তপেস ছোয়ার গলা ছেড়ে দিয়ে নিজের নাথায় হাত দেয়৷ ছোঁয়া এই সুযোগে তপেসের মাথায় আরও একটা বারি মারে যার ফলে তপেস ফ্লোরে পড়ে যায়।

— তোর কি মনে হয় প্রার্থ কোন অন্যায় করেনি৷ প্রার্থের জন্য আজ আমার মামুর চোখে জল আসে৷ আজও মাঝ রাতে মিরা মিরা বলে কেঁদে উঠে। তোদের দুই ভাইয়ের মাঝে কারো বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই৷

তপেস ঝাপসা চোখে শুধু ছোঁয়াকে দেখে যাচ্ছে। ছোঁয়া কোব কথা তপেসের কর্ণধারে পৌঁছে না৷ ধীরে ধীরে তপেস জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

ছোঁয়া তপেসকে সেখানে রেখেই চলে আসে। ছোঁয়া রুমে এসেই ফ্রেস হতে চলে যায়।প্রায় এক ঘন্টা সময় নিয়ে শাওয়ার নেয়। তার মাথায় কিছু ঢুকতে পারছে না। অতীত তার চোখের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে৷ যাকে সে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসত সেই আজ তার বড় শত্রুর ভাই৷

তপেসের দাদা প্রার্থ আমার বনুর জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে। আর তপেস এতদিন আমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করে আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। কিছুতেই আমি তপেসকে ছাড়বো না৷

পরিবারের কেউ যেন কিছু জানতে না পারে সেজন্য ছোঁয়া রাতে সবার সাথে বসে ডিনার করে। কিছু খেতে মন চাচ্ছে না। সব কিছু ছোঁয়া নষ্ট করছে। এমন ভাব করলে সবাই বুঝে ফেলতে পারে সে জন্য ছোঁয়া হালকা কিছু খেয়ে চলে আসে৷

রাতে ছোঁয়া কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। চোখের নোনা জলের কুনিশ লেগে আছে কপোলযা দেখে অধিরে খুব কষ্ট হচ্ছে। কেন হচ্ছে জানা নেই৷ অধির ছোঁয়াকে ছড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে।

ছোঁয়া মাঝ রাতে জেগে উঠে। তার গা জ্বরের কারণে পুরে যাচ্ছে। সে আজ নিজে থেকে অধিরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।

অধির ছোঁয়াকে ছড়িয়ে ধরে।কিন্তু কিছুতেই ছোঁয়ার জ্বর কমছে না৷ অধির নিজের গায়ের পোশাক খোলে ছোঁয়াকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়৷

ছোঁয়া অধিরের লোমযুক্ত মুখে মুখ লুকিয়ে রয়েছে। তার কাছে আজ অধিরের বুকটা সব চেয়ে নিরাপদ মনে হচ্ছে।

কিছুতেই ছোঁয়ার গা থেকে জ্বর নামছে না৷ জ্বর কমানোর জন্য অধির ছোঁয়ার সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়৷ ঘুমের ঘোরে থাকার জন্য ছোঁয়াও অধিরের সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়।

সারা শরীর ব্যথার জন্য কিছুতেই ছোঁয়া উঠতে পারছে না৷ ছোঁয়া নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে সে আজও শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছে। কিন্তু আজ তার শরীর প্রচন্ড ব্যথা করছে।

ছোঁয়া কষ্ট করে নিজেকে কন্ট্রোল করে শাওয়ার নিয়ে রোমে আসে৷

আবার আগের মতো চিরকুট। চিরকুট খোলে দেখে

প্রিয়❤
ট্রি টেবিলের উপর দুধ রাখা আছে। সব টুকু দুধ খেয়ে নিবে৷ তোমার পড়ার টেবিলে মেডিসিন রাখা আছে সে গুলো খেয়ে নাও ব্যাটার ফিল করবে৷ হ্যাঁ আমার কথার এপিট ওপিট করার চেষ্টা করবে না৷ যা বলছি তাই কর সুইটহার্ট।
ইতি
তোমার
অধির🖤

ছোঁয়া রেগে সেই চিরকুটটা পুরিয়ে ফেলে। মেডিসিন গুলো ফেলে দেয়৷

তোর কি মনে হয়৷ আমি তোর কথাতে হাঁটবো। তুই আমার দেহের উপর তোর চাহিদা মেটানো৷ দেখ আমি তোর কি অবস্থা করি।

ছোঁয়ার রাগ আরও বেড়ে যায় অধীরের উপর৷ ছোঁয়া অধীরকে আরও ঘৃণা করতে শুরু করে।

চলবে….#অদ্ভুত_নেশা
#পর্ব_১২
#অধির_রায়

২৭.
ছোঁয়া কিছুক্ষণ অধিরকে বকে ভার্সিটিতে চলে যায়।ছোঁয়া কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছে না৷ কি করবে ভেবে পাচ্ছে না?

— কি হয়েছে ছোঁয়া? তুই এভাবে ক্ষেপে আছিস কেন?(রিয়া)

— এখন তোর কথাতে দিলওয়ালী গানে নাচবো৷

— তুই কোনদিন সোজা হবি না।

— আরে সা* তুই নিজেকে আগে সোজা করে দেখা৷ তার পর বলতে আছিস পেট মোটা৷ পেট নিয়ে নড়তে পারিস না।

— ছোঁয়া তুই আমাকে পেট মোটা ডাকবি না৷ এর পর ডাকলে খারাপ কিছু হয়ে যাবে৷

— তুই কি সারাদিনই খাস?

— হু তোর কি?

— এই জন্য তোর পেট মোটা৷

— ছোঁয়া 😡খুব রেগে রিয়া কথাটা বলে৷

— চল আমরা ক্যাফেতে যায়।

— তোর মতো কিপ্টার সাথে আমি কোনদিন ক্যাফেতে যাব না৷

— প্লিজ চলনা৷

ছোঁয় এমন ভাবে কথা বলে রিয়া ছোঁয়ার কথা কিছুতেই ফেলতে পারল না৷ রিয়া বাংলা প্যাচার মতো মুখ করে ছোঁয়ার সাথে চলে যায়।

রিয়া ক্যাফে ঢুকার আগে ছোঁয়া রিয়ার চোখ বেঁধে দেয়৷ যা রিয়ার রহস্য জনক মনে হয়৷ চোখ বাঁধার কারণ কি? জানতে চাইলেও ছোঁয়া কিছু বলেনি৷ ছোঁয়ার একটাই কথা সে যা করছে রিয়ার ভালোর জন্যই করছে৷

রিয়া চোখ বাঁধা নিয়ে অনেকক্ষণ থেকে বসে আছে৷ এভার খুব বিরক্ত নিয়ে রিয়া চোখ খুলেই ফেলে।রিয়া চোখ খোলে সামনে ছোঁয়া নয় সিদ্ধার্থ। রিয়া উঠতে নিলেই সিদ্ধার্থ রিয়ার পা নিজের পা দিয়ে আটকিয়ে নেয়৷

–আপনি এখানে কেন? ছোঁয়া কোথায়? আমতা আমতা করে বলে

— ব্রু নাচিতে কেন আমাকে দেখে খুশি হও নি৷ ওকে চলে যাচ্ছে।

— এই না না আপনি চলে যাবেন কেন? আমি তো,,,

— তুমি কি?

— তেমন কিছু না৷ আমার কিছু খেতে মন চাচ্ছে না। আমি বাড়িতে যাব৷

— আমি দিয়ে আসব।

— তার কোন দরকার পড়বে না।

— আমার কথায় শেষ কথা আমি দিয়ে আসব।

কঠিন স্বরে বলে। যার ফলে রিয়া কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। রিয়ার ভয় পাওয়া লজ্জা জনিত চেহারা দেখে সিদ্ধার্থ আরও এক ধাপ প্রেমে পড়ে যায়।

— ওঁকে।

— কফি পুরোটা শেষ কর তার পর দিয়ে আসব।

রিয়া কফি শেষ করতে লেট হয়েছে৷ কিন্তু সে দৌড়ে ক্যাফের বাহিরে আসতে লেট করেনি৷ রিয়ার এমন বাচ্চা সূলভ আচরণ দেখে মুচকি হেঁসে বিল প্রেমেন্ট করে রিয়ার কাছে আসে৷

রিয়া সিদ্ধার্থের বাহিকের পাশে দাঁড়িয়ে দাঁত দিয়ে নিজের নক কাটছে৷ কাটছে বললে ভুল হবে৷ রিয়া খুব চিন্তায় মগ্ন। তাঁকে বাইক দিয়ে যেতে হবে৷ আর ছোঁয়াকে হাজার টা গালি দিয়ে যাচ্ছে।

সিদ্ধার্থ রিয়ার কানের কাছাকাছি গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে নেল কাটার প্রো ম্যাক্স দিয়ে নক কাটা হচ্ছে।

রিয়া এমন অদ্ভুত কথা শুনে পিছনে ঘুরতে নিলেই সিদ্ধার্থ সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলে সিদ্ধার্থ রিয়াকে টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়৷

রিয়া সিদ্ধার্থ বুকে চুপটি মেরে আছে। হৃদপিণ্ডের শব্দ শুনতে পাচ্ছে রিয়া। যা রিয়াকে নেশায় উম্মুক্ত করে তুলছে। রিয়া কিছুটা নিজেকে সংযত করে নিয়ে সিদ্ধার্থের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়৷

–যাওয়া যাক।

রিয়া বাইকে অনেকটা দূরত্ব রেখে বসে আছে৷ যা সিদ্ধার্থের সহ্য হলো না৷ প্রথমেই খুব জোরে বাইকের স্পাইসার ঘুরায়৷ যার ফলে বাইক হুট করেই জোরে চলতে নিলেই রিয়া সিদ্ধার্থকে জড়িয়ে ধরে।

২৮.
সিদ্ধার্থ রিয়াকে তাদের বাড়িতে না নিয়ে নদীর তীরে নিয়ে যায়৷ কারণ রিয়া নদী খুব ভালোবাসে। সিদ্ধার্থ তার বোন ছোঁয়ার কাছ থেকে সব কিছু জেনে নিয়েছে। রিয়া কি কি পছন্দ করে।

— আপনি আমাকে এখানে নিয়ে আসলেন কেন?

— তোমাকে মেরে ফেলে দিব৷ এটা হলো বেস্ট জায়গা। নেই কোন কোলাহল, নেই কোন লোকজন। মেরে ফেলে দিলে কাক পক্ষিরাও বুঝতে পারবে না৷

রিয়া সিদ্ধার্থের কথা শুনে ভিষম খেয়ে যায়। সত্যি আমাকে মেরে ফেলার জন্য এখানে নিয়ে এসেছে৷ প্লিজ আমাকে কেউ বাঁচাও৷ আমি এত তারাতাড়ি মরতে চায় না৷ আমি ভেবেছিলাম সিদ্ধার্থ আমাকে ভালোবাসে। ভালোবাসার প্রতিদান এভাবে পেতে হবে আমি কোন দিন কল্পনা করিনি।(মনে মনে)

রিয়ার ভাবনার মাঝে সিদ্ধার্থ রিয়ার সামনে হাঁটু গেরে বসে পড়ে৷ রিয়াকে একটা কাঁচা গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করে।

— I Love you 🥰

রিয়া তার ভাবনার মাঝে গোলাপ ফুলকে ছুরি নিজের আঁখি বন্ধ করে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকে৷

সিদ্ধার্থ তারাতাড়ি করে রিয়াকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। মাথায় হাত দিয়প সান্ত্বনা নিতে থাকে। কিছু সময় পর রিয়া শান্ত হয়৷

— প্লিজ আমাকে মারবেন না৷ আপনি যা বলবেন আমি তাই করব?

— আরে পাগলি তুমি আমার কলিজা। আমার বুকের বা পাশের হৃদপিণ্ড।

— হৃদপিণ্ড না ছায়৷ তাহলে আমাকে মারতে চেয়েছিলেন কেন?

— কোথায় তোমাকে মারতে চেয়েছি৷

— ওই তো হাতে আপনার ছুরি৷

— এটা ছুরি না৷ এটা তো গোলাপ৷ ভেবেছিলাম তোমাকে আজ প্রপোজ করব।দিলে তো আমার ১২ টা বাজিয়ে৷

— আসলে,,

সিদ্ধার্থ রিয়াকে ছেড়ে দিয়ে অভিমান করে নদীর তীরের উল্টো দিকে হাঁটতে শুরু করে দেয়৷

রিয়া পাথরের মূর্তির মতো সেখানে দাঁড়িয়ে আছে৷ কি থেকে কি হয়ে গেল তার জানা নেই? আমিও তো সিদ্ধার্থকে খুব ভালোবাসি। তাকে ছাড়া আমার জীবন অচল। কিভাবে তার মান ভাঙাবো। হঠাৎ করে তার মাথায় বুদ্ধি চলে আসে। যদি আমি তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চায় তাহলে সে আমাকে নিশ্চয় ক্ষমা করে দিবে।

সিদ্ধার্থ মন খারাপ করে হেঁটে যাচ্ছে।মনে মনে বলে যাচ্ছে যাকে মন থেকে ভালোবেসে ফেলেছি তাকে কিভাবে হার্ট করলাম? মহারানী ও তো কম নয়৷ আমার ফিলিংস টা বুঝার একটুও চেষ্টা করল না৷ কিছুতেই তাকে আমি ক্ষমা করব না৷

রিয়া দৌড়ে সিদ্ধার্থকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু সিদ্ধার্থ স্টং হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। রিয়াকে তাকে জড়িয়ে ধরেছে তার দিকে কোন খেয়াল নেই৷ নিজের ইগু পোষণ করেই রয়েছে সিদ্ধার্থ।

রিয়া সিদ্ধার্থকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়৷ কান্না করার জন্য রিয়ার মুখ থেকে কোন বুলি বের হচ্ছে না৷ শুধু চোখের অশ্রু কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে৷ সিদ্ধার্থ আর সহ্য করতে পারল না রিয়ার চোখের জল।

সিদ্ধার্থ রিয়াকে সামনে দিকে নিয়ে এনে তার কপোল(গাল) থেকে জল মুছে দেয়৷ কাঁধে হাত রেখে বলতে শুরু করে নেয়৷

— কাঁদার কি হলো? আমি তোমাকে আর হার্ট করব না৷ পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও৷ তোমাকে আর কোনদিন বিরক্ত করবো না।

— আমি আমি,,,কান্নার কথা আটকে পড়ছে৷

— তুমি বাড়িতে ফিরে যেতে চাও। চল তোমাকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে আসি৷

সিদ্ধার্থ রিয়ার হাত ধরে নিয়ে যেতে নিলেই রিয়া সিদ্ধার্থের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়৷ এতে কিছুটা সিদ্ধার্থ অবাক।

— কি হলো দাঁড়িয়ে পড়লে কেন?

রিয়া সিদ্ধার্থের কপোল সজোরে একটা থাপ্পড় দিয়ে।

— আমাকে কি মনে করেন? আমি খেলার পুতুল। যখন খুশি নাচাবেন।যখন খুশি ছুঁড়ে ফেলে দিবেন। আমি তা হতে দিব না৷ আপনার ফিলিংসের দাম আছে আমার ফিলিংসের কোন দাম নেই৷ আপনি একটা স্বার্থপর। আপনি শুধু নিজের ফিলিংস টাই বুঝলেন৷ আমার ফিলিংসটা বুঝতে পারলেন না৷

আমি আপনাকে ঠিক ততটাই ভালোবাসি যতটা আপনি আমাকে ভালবাসেন। আমিও আপনাকে ছাড়া বেঁচে থাকার কথা চিন্তা করতেও পারি না৷

সিদ্ধার্থ রিয়ার মুখে ভালোবাসার কথা শুনে রিয়াকে দুই বাহুতে খুব শক্ত করে জড়িয়ে নিল।মনে হয় ছেড়ে দিলেই দূরে কোথায়ও হারিয়ে যাবে৷ অবশেষে তাদের ভালোবাসার সঠিক স্থান পেল।

[রেমন্ড ডিক্সে তাদের পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। সকলকে ইনবাইট করলাম]

২৯.
ছোঁয়া কিছুতেই ঘুম আসবে না। সে আজ সারা রাত অধিরের সাথে বসে বসে গল্প করবে। রাত ১ টা বেজে যাচ্ছে তবুও অধির আজ আসছে না৷ ছোঁয়া আর অপেক্ষা করতে পারছে না৷ ছোঁয়া নিজে থেকে অধির বলে ডাক দিল।

ডাক দেওয়ার কিছু সময় পরই অধির ছোঁয়ার সামনে হাজির হয়৷ আজও সশরীরে। কিন্তু মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা৷ যা দেখে ছোঁয়ার রাগ আরও বেড়ে গেল।

— কুত্তা তোকে বলছি না তুই আমার সামনে আসলে এখন থেকে আর মুখ লুকিয়ে আসবি না৷

— সুইটহার্ট তুমি এত সুন্দর বকা দিত পার তা জানা ছিল না আমার৷ তোমাকে কথা দিচ্ছি সঠিক সময়ে আমি তোমার সামনে আসব।

— তোর আসা লাগবে না৷ চলে যা এখান থেকে। অভিমান স্বরে কথাটি বলে।

অধির রুমের সমস্ত লাইট নিবিয়ে দিল।শুরু একটা ক্যান্ডেল অন করে রেখেছে। ক্যান্ডের আলোতে ঝাপসা দেখা যাচ্ছে ছোঁয়াকে। অধির পিছন থেকে ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে৷

— আমার সুইটহার্ট আমার সাথে রাগ করেছে বুঝি।কিভাবে তোমার রাগ ভাঙাবো? তুমি তো নদী দেখতে খুব পছন্দ কর৷ চল তোমাকে নদীর তীরে নিয়ে যায়।

— না না আমি এত রাতে নদীর তীরে যাব না। আমি পাহাড়ে যাব৷

— তাহলে তোমার কথায় সত্য হবে৷

অধির ছোঁয়াকে কোলে তুলে নিল। অধির মায়াজালের সাহায্যে ছোঁয়াকে আকাশ পথে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ছোঁয়া পরম শান্তিতে অধিরের বুকে মাথা রেখে রয়েছে। অধিরের বুকের হৃদপিণ্ডের শব্দ শুনতে পারছে ছোঁয়া।ছোঁয়ার মনে একটা প্রশ্ন আসে৷ ভুতের আবার হৃদপিণ্ড আছে। নিজের প্রশ্নটা নেটে সার্চ দিয়ে জেনে নিবে পরে৷ এখন কিছু বললে তার বিপরীত হবে৷

অধির ছোঁয়াকে নিয়ে পাহাড়ের সবচেয়ে উঁচু চূড়ায় উঠে। ছোঁয়া নিচের দিকে তাকিয়ে অধিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

— আপনি আমাকে এখানে কেন এনেছেন৷ আমাকে মেরে ফেলতে চান৷ আমি শুনেছি ভুতেরা মানুষকে বড় বড় পাহাড়ে নিয়ে মাটিতে ছুঁড়ে মারে৷

— আরে পাগলী আমি তোমাকে মারতে যাব কেন? তুমি আমার হৃদয়ের রানী৷ তোমাকে ছাড়া আমি অচল।

— অচল না ছায়। সালা হুনুমান এখনো তুই আমার সামনে আসলি না।তোকে একদিন ভাগে পাই৷ তোর বাপের নাম বুলিয়ে দিব৷ (মনে মনে)

— মনে মনে আমাকে গালি না দিয়ে সরাসরি আমাকে গালি দাও৷

— আপনাকে গালি দিতে যাব কেন?আমি তো ভাবছি আপনি আমাকে এই সমস্ত পাহাড় আপনার সাথে করে নিয়ে দেখাবেন৷




কিছু পড়ার শব্দে ছোঁয়ার মা বাবা জেগে উঠে। তারা ভাবে চোর প্রবেশ করেছে৷ চোরকে খোঁজার জন্য বের হতেই তারা দেখতে পায় ছোঁয়ার রুম থেকে রক্তের বন্যা বয়ে আসছে। তারা তারাতাড়ি নিজের মেয়ের রুমে প্রবেশ করতেই..

চলবে,,

কাল না দেওয়ার জন্য দুঃখিত। গতকাল আমার বন্ধু স্বার্থদের বাসায় গিয়েছিলাম৷ কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এটা যে আমি ফোনের পরিবর্তে ক্যালকুলেট নিয়ে যায়।যার জন্য আপনাদের জানিয়েও দিতে পারি নি৷ বানান ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

বানান ভুল হলে নিজ দায়িত্বে ক্ষমা করে দিবেন৷ সানডে তে ছোট করে দিব এটা আমি আগেই বলছি।

আর হ্যাঁ ছোঁয়াকে নিয়ে যাদের ভুল ধারণা ছিল তাদের ভুল ধারণা এখন নিশ্চিত ভেঙে যাবে৷ আমি গল্পের মোড ঘুরিয়ে ফেলি নি৷ তপেসকে তার জীবন থেকে সরানোর জন্যই এমন করেছি।

যাদের জন্ম ২৯ ফেব্রুয়ারী তাদের জন্য এক হাঁড়ি সমবেদনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here