#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-৩
#লেখিকা-মেহরুমা নূর
★সন্ধ্যার রক্তিম আভা ঢেকে গিয়ে রাতের অন্ধকার নেমেছে মাত্রই। শীতের লেশ এখোনও আছে। সন্ধ্যা হতেই শীতল বাতাসে শরীর ঠান্ডায় শিরশিরিয়ে ওঠে। গাড়ি থেকে নামতেই শীত শীত অনুভব হলো প্রহরের। প্রহর দ্রুত গিয়ে দরজা নক করলো। খানিক বাদেই জিদান সাহেব এসে দরজা খুলে দিল। দরজা খুলেই কেমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো প্রহরের পানে। যেন সে অনেক বড়ো আকারের কোন অন্যায় করে এসেছে। জিদান সাহেবের এই চাহুনির অর্থ বুঝতে পারছে প্রহর। এই চাহুনি যে তার পূর্ব পরিচিত। তাই সে স্বাভাবিক সুরে বলে উঠলো।
–বাবা ভেতরে আসতে দাও।
জিদান সাহেব দৃঢ় কন্ঠে বললো।
–কেন আসতে দিবো? আজ ঘরে নো এন্ট্রি তোর। তোকে না কতবার বলেছি এতো সকাল সকাল বাসায় ফিরবি না। আরে আজকাল কার ছেলেমেয়েদের মতো একটু নরমাল হতে পারিস না? একটু আড্ডা দিবি,ডিসকো শিসকো যাবি, মেয়ে পটাবি। তানা সন্ধ্যা হতেই ছোট বাচ্চাদের মতো ঘরে চলে আসিস। এসব কি?
প্রহর ভাবলেশহীন ভাবে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে উঠলো।
–ওয়াও বাবা,ইউ আর রিয়েলি গ্রেট। মানে মানুষের বাবারা বাচ্চাদের ভালো হওয়ার উপদেশ দেয়, আর তুমি সবসময় আমাকে বিগ্রে যাওয়ার উপদেশ দাও। দ্যাটস ইউনিক।
জিদান সাহেব সোফায় বসতে বসতে বলে উঠলো।
–আমি নরমাল হওয়ার উপদেশ দেই। দিনে দিনে যে যন্ত্র মানবে পরিণত হচ্ছিস সে খেয়াল আছে তোর? পঁচিশ প্লাস চলছে। দুমাস পর মাস্টার্স টাও কমপ্লিট করে ফেলবি। অথচ এখনো পর্যন্ত একটা গার্লফ্রেন্ডের মুখ দেখাতে পারলিনা। ধিক্কার তোর ওপর। এখন তো আমার তোর ওপর সন্দেহ হয়। তোর মাঝে কোন ফিজিক্যাল সমস্যা নেই তো? থাকলে বলতে পারিস।লজ্জার কিছু নেই। আমি ভালো ডাক্তার কে চিনি। চিকিৎসা করালে সব ঠিক হয়ে যাবে।
প্রহর ডাইনিং টেবিলের ওপর থেকে গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে খুব স্বাভাবিক সুরেই বলে উঠলো।
–এসব উসকানি মূলক কথা বলে কোন লাভ নেই বাবা। আমার ওপর কোন প্রভাব ফেলবে না। তোমার এই অপদার্থ ছেলেকে দিয়েই কাজ চালাতে হবে। ইউ হ্যাভ নো আদার অপশন।
জিদান সাহেব হতাশার সুরে বলে উঠলেন।
–হ্যাঁ তা যা বলেছিস। অপশন নেই বলেই তো তোকে সইতে হচ্ছে। সবার ছেলে মেয়ে রা তার বাবা মাকে এই বয়সে নাতি নাতনীর সুখ দেয়। অথচ আমার অপদার্থ ছেলে আমাকে একাকিত্ব ছাড়া আর কিছুই দিচ্ছে না। কি কপাল করে যে এসেছিলাম।
–আমিতো তোমাকে অনেক আগেই বলেছি তুমি আরেক টা বিয়ে করে নাও। তাহলেই তো তোমার আরও অপশন চলে আসে। আর এতো মেলোড্রামাও করতে হতো না তোমার। জানিনা সব মেলোড্রামা আমার কপালেই কেন জোটে?
জিদান সাহেব ভ্রু কুঁচকে বললেন।
–সব মেলোড্রামা মানে? আমি ছাড়া আবার কে এলো তোর জীবনে মেলোড্রামা করতে? এই সত্যি করে বলতো কাহিনি কি?
প্রহর এক মুহূর্তের জন্য খুশির কথা টা মনে করলো। তবে পরমুহূর্তেই তা ঝেড়ে ফেলে বলে উঠলো।
–কিছুই না বাবা। এতো উৎসুক হওয়ার কিছুই নেই।
কথা বলতে বলতে প্রহর টেবিলের ওপর রাখা খাবারের ঢাকনা উঠালো। খাবার দেখে নাক মুখ কুঁচকে বললো।
–আবারও ঢেঁড়স?
জিদান সাহেব দায় সারা ভাবে বললেন।
–হ্যাঁ তো? আমি কি তোর চাকর লেগেছি নাকি, যে রোজ রোজ তোর জন্য নতুন পাকোয়ান বানাবো? ঢেঁড়স যে পাচ্ছিস এটাই তোর সৌভাগ্য। নিত্য নতুন প্রণালী চাইলে বিয়ে করে বৌ নিয়ে আয়।
প্রহর আর কিছু না বলে কিচেনের দিকে এগুলো। ও জানে বাবার সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। তাই নিজের কাজেই মনোনিবেশ করলো সে।শার্টের হাতা বটিয়ে, ডিনারের জন্য খাবার তৈরি করতে লাগলো।বাসায় কাজের বুয়া থাকলেও, বুয়ার হাতের রান্না পছন্দ না প্রহরের। তাই সে নিজেই নিজের আর ওর বাবার জন্য রান্না করে। ওর বাবাও মাঝে মধ্যে রান্না করে। এই বাসায় সদস্য বলতে শুধু ওরা দুজনই।
ডিনার শেষ করে এসে প্রহর কফি হাতে বেলকনিতে বসে আছে। প্রহর একা থাকতেই পছন্দ করে। তাইতো ওর তেমন কোন বন্ধু বান্ধব হয়ে ওঠেনি। ছোট বেলা থেকেই এক ফাহিমই ওর বন্ধু। আর ফাহিমের কিছু বন্ধুর সাথে হালকা পরিচিতি আছে। বাস এতটুকুই। প্রহর নিজেকে নিজের মাঝেই সামিল রাখতে পছন্দ করে। ওর মতে নিজেকে যতো অন্যের সামনে যতো কম প্রচার করা যায় ততই ভালো। এতে করে হোঁচট খাওয়ার ভয় থাকে না।
কাঁধে কারো স্পর্শ অনুভব করে পাশে তাকালো প্রহর। ওর বাবাকে দেখে বললো।
–বাবা তুমি? বসনা।
জিদান সাহেব ছেলের পাশে বসে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন।
–জানিস তোকে এভাবে দেখে আমার নিজের ওপর অনেক অপরাধ বোধ হয়। মনে হয় আমার জন্যই বোধহয় তোর জীবন টা এমন হয়ে গেছে।
–এভাবে বলছ কেন বাবা? তোমার কোন দোষ নেই।
–আমারই তো দোষ। আমার বিবাহিত জীবনের ব্যার্থতা তোর ওপরে প্রভাব ফেলেছে। আমি জানি তোর মায়ের ওভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়া টা তোর ওপরে অনেক খারাপ প্রভাব ফেলেছে। যার দরুন তুই এখন কাওকে বিশ্বাস করতে পারিস না। নতুন কোন সম্পর্কে জড়াতে ভয় পাস। ভাবিস হয়তো সবাই তোর মায়ের মতোই তোকে ধোঁকা দিবে।
প্রহর চোখ মুখ শক্ত করে বললো।
–বাবা প্লিজ, তোমাকে না আমি কতবার বলেছি ওই মহিলার কথা বলবে না। আর ওই মহিলা আমার মা না। যে মহিলা তার স্বামী আর পাঁচ বছরের বাচ্চাকে রেখে অন্য পুরুষের সাথে চলে যেতে পারে সে কখনো কারো মা হতে পারে না। আমার জন্য তুমিই আমার বাবা মা দুটোই। সো প্লিজ ডোন্ট মেনশন হার। আর হ্যাঁ আমি যেমন আছি অনেক ভালো আছি বাবা। প্লিজ আমাকে নিয়ে অযথা চিন্তা করোনা।
জিদান সাহেব আর কিছু বললেন না। জানে সে ছেলের যুক্তির সামনে পরাজিত হয়ে যাবেন। তাই এখন আল্লাহর কাছে চাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তার শুধু একটাই আশা। তার ছেলের বেরঙ জীবনে যেন কেউ এসে রঙিন করে দেয়।
___
♬ পোলা তো নয় একখান আগুনেরই গোলা রে
♬ পোলা তো নয় একখান আগুনেরই গোলা
গান গাইতে গাইতে ফ্রিজের কাছে এসে আইসক্রিম বক্সটা বের করলো খুশি। আজ ড্রিম ম্যানকে খুঁজে পাওয়ার খুশিতে মিষ্টি মুখ তো করতেই হয়। হায় আমার ড্রিম ম্যান। এক্কেরে স্টবেরি আইসক্রিমের মতো। সোফায় এসে আরাম করে বসে এক চামচ আইসক্রিম মুখের কাছে নিতেই পাশে তাকিয়ে দেখলো নিভান বুকে দুই হাত ভাজ করে গাল ফুলিয়ে বসে আছে। খুশি মুচকি হেসে বললো।
–আরে রাগ করছিস কেন? আমিতো তোকেই প্রথমে দিতে যাচ্ছিলাম। এই নে।
খুশি নিভানের মুখের সামনে এক চামচ ধরলো। নিভান বলে উঠলো।
–আমি আইসক্রিমের জন্য রাগ করিনি। তুমি যখন কোন বিষয়ে অনেক খুশি হও তখনি আইসক্রিম খাও। কিন্তু তুমি আমাকে বললেই না তোমার খুশির কারণ টা কি?
–ওও এই বিষয়। আরে আগে আইসক্রিম তো খা তারপর বলছি। তোকেই তো সবার আগে বলবো।
নিভান এবার হাসিমুখে আইসক্রিম মুখে নিল। আইসক্রিম খেয়ে বললো।
–এখন বলো কি হয়েছে?
খুশি উৎসাহী কন্ঠে বললো।
–জানিস আজকে না আমি আমার ড্রিম ম্যানকে পেয়ে গেছি।
নিভান চমকিত কন্ঠে বললো।
–সত্যিই? কোথায়? কখন?
খুশি নিভানকে সবটা খুলে বললো। নিভান খুশিমনে বললো।
–ওয়াও আপু ইউ আর সো লাকী। অ্যাম হ্যাপি ফর ইউ।
–থ্যাংক ইউ বাবু। আচ্ছা বলতো তোর নতুন স্কুলে কোন বন্ধু হয়েছে?
নিভান হতাশার সুরে বললো।
–না আপু। তুমিতো জানোই আমি অনেক শায় স্বভাবের। তাই কারোর সাথে সহজে ফ্রী হতে পারি না। তবে একটা মেয়েকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। ওর সাথে একটু বন্ধুত্ব করতে চাই। কিন্তু মেয়েটা আমাকে বন্ধু বানাবে কিনা কে জানে?
–কেন বানাবে না? আমার ভাইয়ের মতো কিউট আর একটাও আছে নাকি? তুই একবার বলে দেখ। দেখবি হাজার টা মেয়ে তোর বন্ধু হতে চাইবে।
–সত্যি আপু?
–আমার কথায় সন্দেহ আছে তোর?
–না না আপু একদমই না। তোমার কথা তো আমার জন্য চরম সত্য। তুমি যখন বলছ তখন অবশ্যই আমি কিউট। আর আমার বন্ধুও হবে।
–দ্যাটস লাইক মাই বয়।
কথাটা বলে খুশি নিভানকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমু দিয়ে দিল।
___
পরদিন খুশি আর দিয়া আবারও একই স্থানে একইভাবে এসে হাজির হলো। আর প্রহর তার স্বভাবগতভাবেই বইয়ে মুখ গুঁজে বসে আছে। ফাহিম খুশিকে দেখে অত্যাধিক আদিখ্যেতা দেখিয়ে বললো।
–আরে আরে ভাবিজী যে। বসেন বসেন ভাবিজী।
খুশিও গদগদ হয়ে প্রহরের পাশের চেয়ার টা টেনে বসলো। তারপর প্রহরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।
–কেমন আছো ডারলিং?
ফাহিমের আবারও কাশি উঠে গেল। এদের মাঝে কিছু হোক না হোক। তবে এদের জন্য বেচারা ফাহিমের যক্ষা হওয়া কনফার্ম। প্রহর দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো।
–শাট আপ ইউ শেমলেস গার্ল। তোমার সাহস কি করে হলো আবারও এখানে আসার?
খুশি স্বাভাবিক ভাবে বলে উঠলো।
–ওমা এখানে আসতে কি সাহস লাগে নাকি? আসতে তো পা লাগে। পা দিয়ে হেঁটে হেটেই না আসতে হয়। এতটুকু কমনসেন্সেও নেই দেখছি তোমার? তাহলে আর এতো পড়াশোনা করে কি লাভ হলো?
–জাস্ট শাট আপ। আর লজ্জা করে না তোমার নিজের থেকে এতবড় একজন মানুষকে তুমি করে সম্বোধন করতে? জানো আমি কতো বড় তোমার?
–হ্যাঁ তো কি হয়েছে? বয়ফ্রেন্ড বা হাসব্যান্ড সবসময় বয়সে বড়োই থাকে। তাই বলে কি তাদের আপনি করে বলতে হবে নাকি? আপনি তে না তেমন ফিলিংস আসে না। কেমন মুরুব্বি মুরুব্বি ফিলিং আসে। তাই তুমি করেই বললাম। আগে পরে একসময় তো বলতেই হতো তাইনা? তাই আজ থেকেই শুরু করলাম। আমি জানি তুমি একটু লাজুক এসব বিষয়ে। মনে মনে ইচ্ছে হলেও, উপরে সেটা বলতে পারো না।তাই আমি নিজের পক্ষ থেকেই আরম্ভ করছি।
ফাহিম আবারও খুশিকে মহান বানিয়ে দিয়ে বলে উঠলো।
–একদম ঠিক বলেছেন ভাবিজী। এতদিন কোথায় ছিলেন আপনি? আপনার মতো একজনেরই তো খোঁজ ছিল প্রহরের। সে সত্যিই ধন্য হয়ে গেল আপনাকে পেয়ে।
প্রহরের রাগের মাত্রা বেড়েই চলেছে।প্রহর একবার ফাহিমের দিকে চোখ গরম করে তাকালো। তারপর খুশির দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো।
–কি বয়ফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড লাগিয়ে রেখেছ? দেখ অনেক হয়েছে। এখুনি এখান থেকে চলে যাও। নাহলে কিন্তু পরিণাম ভালো হবে না। আমার রাগ সম্বন্ধে কোন ধারণা নেই তোমার।
–হ্যাঁ তো ধারণা দাও না? আরে আমিতো চাই তোমার সম্বন্ধে সবকিছু জানতে। তাইতো এসেছি। আজ আমাদের প্রথম কফি ডেট হবে। কফি খেতে খেতে মনের কথা হবে। অনুভূতির আদান প্রদান হবে। আহা, কি মধুর সময় কাটবে তাইনা?
প্রহরের ধৈর্যের সীমা ছেড়ে যাচ্ছে। জাস্ট নিতে পারছে না আর। খুশি মেয়ে না হলে হয়তো এতক্ষণে সে কথা বলার অবস্থায় থাকতো না। আর লোকজনের সামনে কোন সিনক্রিয়েট করতে চায়না সে। তাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার যথাযথ চেষ্টা করে বলে উঠলো।
–দেখ অনেক হয়েছে। এনাফ ইজ এনাফ নাও। তুমি পিচ্চি মানুষ দেখে এখনো বরদাস্ত করছি তোমাকে। জানি তোমরা ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ডে থাকতে পছন্দ করো। তাই হয়তো এসব অনেক মজাদার লাগছে তোমার কাছে। কিন্তু আর না। এখুনি এইমুহূর্তে এখান থেকে চলে যাবে তুমি।
খুশি হালকা রাগ দেখিয়ে বললো।
–কি চলে যাও চলে যাও লাগিয়ে রেখছ? আর আমি ছোট হতে পারি। তবে আমার ভালোবাসা একদম পিওর। জানো তোমার জন্য আমি কতো যতনে আমার ভালোবাসা আগলে রেখেছি। কারোর নজর পড়তে দেইনি। আমি নিজেও কারোর ওপর কখনো কুনজর দেইনি। জানো কতো কষ্ট করে নিজেকে সামলে রেখেছি। চোখের সামনে কতো হ্যান্ডসাম পোলাপাইন ঘুরে বেড়ায়। কত কষ্টে যে তাদের এড়িয়ে যাই সেটা তুমি কি করে বুঝবে?
খুশি দিয়াকে দেখিয়ে একটু মেলোড্রামা করে বললো।
–এইযে এই মেয়েটাকে দেখছ। সে দিনে এতবার খাবারও খায় না যতবার ক্রাশ খায়। অথচ এই আমি আজ পর্যন্ত কারোর সাথে আইসক্রিমও খাইনি। শুধু তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। আমি জানতাম একদিন না একদিন আমি আমার ড্রিম ম্যান কে পেয়ে যাবো। তাইতো তার জন্য সব ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছিলাম।দেখেছ কতটা অনুগত আমি তোমার প্রতি? তাই এখন যখন পেয়ে গেছি আর ছাড়াছাড়ি নাই।তুমি যতই না নোকর করেন কোন লাভ নেই। এই খুশি যখন একবার তোমার লাইফে এন্ট্রি করে ফেলেছে। এখন এক্সিট নেওয়ার রাস্তা নেই।
প্রহর অতিষ্ট হয়ে নিজেই ওখান থেকে উঠে যেতে লাগলো। তবে তার আগেই খুশি প্রহর হাত ধরে ওকে আটকে দিল। প্রহর এবার আরও রেগে গিয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো খুশির দিকে। কিন্তু খুশি সেটা একদমই পাত্তা না দিয়ে বলে উঠলো।
–আরে কোথায় যাচ্ছ? আমাদের কফি ডেট এখন শেষ হয়নি তো?
–টু হেল উইথ ইউ, এন্ড ইউর কফি ডেট।
কথাটা বলেই প্রহর হাত ঝাড়া দিয়ে আবারও চলে যেতে উদ্যোত হলো। তবে এক কদম বাড়াতেই হঠাৎ খুশি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে উঠলো। খুশির এই আচমকা রিয়্যাকশনের জন্য প্রহর মোটেও প্রস্তুত ছিল না। হড়বড়িয়ে গেল সে। আশেপাশের লোকজনও তাকিয়ে রইলো ওদের দিকে। সবাই বিনা টিকেটে তামশা দেখতে লাগলো। মহা বিড়ম্বনায় পড়ে গেল প্রহর। সে দ্রুত চেয়ারে বসে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
–হোয়াট আর ইউ ডুয়িং? সিনক্রিয়েট করছ কেন ড্যাম ইট? স্টপ ক্রায়িং আই সেড।
খুশির কান্না থামার নাম নেই। সে নেকি কান্না করতে করতে বললো।
–আমি সিন ক্রিয়েট করছি? আমি? আর তুমি যে এক নাম্বারের কিপ্টুস। তার বেলায় কি হ্যাঁ? এই অবলা নারী এক কাপ কফিইতো খেতে চেয়েছে। তাও তুমি খাওয়াচ্ছো না। কিপ্টার বাপ চিপ্টা একটা।
ফাহিম বলে উঠলো।
–আরে ইয়ার কফিই খেতে চাচ্ছে বেচারি। এমন করছিস কেন? খাওয়া না?
প্রহরের শরীর জ্বলে যাচ্ছে। মনে তো চাচ্ছে উঠিয়ে একটা আছাড় মারি মেয়েটাকে। জানিনা কোথা থেকে এই আপদ এসে জুটলো। প্রহর হাতের বাঁধন শক্ত করে চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলো। লোকজনের সামনে সিনক্রিয়েট করা যাবে না। আজকাল কার পোলাপানের বিশ্বাস নেই। দেখা যাবে এসব নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় ট্রোল বানিয়ে দিবে। তাই অগত্যা খুশির কথা মেনে নিয়ে বললো।
–ওকে ফাইন খাও তোমার কফি।
সাথে সাথে বিদ্যুৎ এর সুইচের মতো ফট করে খুশির মরা কান্না বন্ধ হয়ে গেল।প্রহর ওয়েটারকে ডেকে কফির অর্ডার দিল। অর্ডার দিয়ে বললো।
–তোমার কফির অর্ডার দিয়ে দিয়েছি। যত খুশি খাও। দরকার হলে সারাদিন বসে খাও।
কথাটা বলে প্রহর আবারও উঠে যেতে লাগলো। তখন খুশি বলে উঠলো।
–আঁহা, এভাবে না। কফি তো তোমারও খেতে আমার সাথে। তাহলেই না কফি ডেট সম্পূর্ণ হবে।
প্রহর উপয়ান্তর না পেয়ে বসে পড়লো। এই মেয়ের ভরসা নেই। আবারও না সিনক্রিয়েট করে বসে। আর কোন রিস্ক নেওয়া যাবে না। তাই আপাতত ওর কথা মানাটাই শ্রেয় মনে করলো সে। একটু পরেই ওয়েটার চার কাপ কফি নিয়ে এলো। সবাই যার যার টা নিয়ে নিল। খুশি কফি খাচ্ছে কম প্রহরকেই বেশি দেখছে। খুশি এবার ফাহিমের দিকে একটু কাত হয়ে ফিসফিস করে বললো।
–দেবর জী আপনার মনে হচ্ছে না যে, আপনারা দুজন লাভ বার্ডের মাঝে কাবাবে হাড্ডি হচ্ছেন? এই টাইমে বন্ধুদের কি করা উচিত ভুলে গেছেন নাকি? মনে হয় না আমাদের একটু স্পেচ দেওয়া উচিত আপনার? জলদি জলদি বন্ধুধর্ম পালন করুন। নাহলে কিন্তু বন্ধু নামের কলঙ্কে আখ্যায়িত হবেন।
খুশির ইশারা বুঝতে পেরে ফাহিম দুষ্টু হেসে বললো।
–জ্বি জ্বি ভাবিজী অবশ্যই বুঝতে পেরেছি। আমি এক্ষুনি কেটে পড়ছি। বন্ধু নামের কলঙ্ক হওয়ার মোটও ইচ্ছে নেই আমার।
ফাহিম উঠে দাঁড়িয়ে প্রহরের উদ্দেশ্যে বললো।
–শোন আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি।
ফাহিম যেতে লাগলে খুশি আবার বলে উঠলো।
–দেবর জী আমার ফ্রেন্ড দিয়াকেও নিয়ে যান না? ও ওয়াশরুমে যাবে। কিন্তু ও চিনে না। ওকে একটু দেখিয়ে দিবেন?
–হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই।
দিয়া ভ্রু কুঁচকে বেকুবের মতো বললো।
–আমি যাবো ওয়াশরুমে?
খুশি দাঁতে দাঁত চেপে দিয়ার পায়ে একটা খোঁচা মেরে চোখের ইশারায় সবটা বুঝালো। দিয়া বিষয় টা বুঝতে পেরে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ আমি যাবো, আমি যাবো।
দিয়া তড়িঘড়ি করে উঠে ফাহিমের সাথে চলে গেল।
ব্যাপার টা প্রহরের কাছে লাগলেও কিছু বললো না সে। আপাতত এই প্যারা থেকে বের হতে পারলেই বাঁচে সে। খুশি পাঁচ মিনিট পর পর এক সিপ করে কফি খাচ্ছে আর আনন্দিত নয়নে প্রহরকে দেখছে। যেন চোখের পলকই পড়ছে না। প্রহর অন্য দিকে তাকিয়ে থাকলেও সে ঠিকই বুঝতে পারছে খুশি তার দিকে চোখ গেড়ে তাকিয়ে আছে।প্রহর একবার আরচোখে তাকিয়ে দেখলো খুশি সত্যিই ওর দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে স্ক্যান করে যাচ্ছে ওকে। ব্যাপার টা খুব আনকম্ফোর্টেবল লাগছে ওর কাছে। মনে হচ্ছে কেউ ওর ইজ্জতের ওপর নজর দিচ্ছে। কোনরকমে দ্রুত কফি শেষ করে উঠে চলে গেল প্রহর। আর খুশি হাতের ওপর গাল ঠেকিয়ে প্রহরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে মনে মনে বললো।
–যেতে চাও তুমি যাও যত দূরে,
ঘুরেফিরে আসবে তুমি এ মনের ঘরে।
বাহ খুশি তুইতো কবি হয়ে গেলি। এতো ট্যালেন্ট কই রাখবি তুই?
#অন্তঃকরণে_তোরই_পদচারণ
#পর্ব-৪
#লেখিকা-মেহরুমা নূর
★বহমান কালাতিক্রমের পালাবদলে অতিবাহিত দিনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই সপ্তাহ। দুই সপ্তাহে চৌদ্দ দিন, তিনশত ছত্রিশ ঘন্টা, বিশ হাজার একশত ষাট মিনিট, এক কোটি বিশ লক্ষ নয় হাজার ছয়শত সেকেন্ড থাকে। তবে এর থেকে হাজার গুণ বেশি অতিষ্টতায় ক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে প্রহরের মন মেজাজ। তার কারণ শুধু একটাই। খুশি, হ্যাঁ তার মতে এই খুশি নামক আপদটা তার সুশৃঙ্খল জীবনী টাকে অশৃঙ্খলতায় পরিপূর্ণ করে দিচ্ছে। সে এই মেয়েটাকে নিয়ে মহা বিড়ম্বনায় পড়ে গেছে। কোনক্রমেই তাকে দূরে সরাতে পারছে না। নিজের এই ব্যার্থতার ওপর নিজেরই চরম রাগ লাগছে। শেষমেশ কিনা এমন পুঁচকে মেয়ের সাথে পেরে উঠছে না সে? দিস ইস রিডিউক্লুয়াস।
তবে এতে খুশির কি যায় আসে। সেতো তারমতো প্রফুল্লচিত্তে রোজই প্রহরের সামনে এসে হাজির হয়। প্রহর বিরক্ত হয়ে কতবার বকা দেয় তবুও তাতে খুশির কোন হেলদোল নেই। তার মতো সে মাস্ত। রোজ আসে, আর প্রহরকে নানান ভাবে হরেক রকম দলিলপত্র পেশ করে নিজের ভালোবাসার ওপর বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করে। প্রহরকে ইমপ্রেস করার নানান পরিকল্পনায় লেগে থাকে। যদিও তার প্রচেষ্টার খুব একটা প্রভাব পড়ে না প্রহরের ওপর। উল্টো প্রহর রেগে গিয়ে আরও বকা দেয়।মাঝে মধ্যে তো অনেক কঠিন বাক্যও বলে দেয়। তবুও খুশির দৃঢ় সংকল্পের খুটি নাড়াতে পারে না। তাই প্রহর যখন অতিরিক্ত বিরক্ত হয়ে যায়, তখন নিজেই সেখান থেকে চলে যায়। সামনে এক্সাম নাহলে প্রহর হয়তো ভার্সিটিতেই আসতো না। তাহলে এই জঞ্জাল থেকে একটু রেহাই পেত। তবে এক্সামের জন্য সেটাও পারছে না।
কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে এইসব ভাবনায় ঘুরপাক খাচ্ছে প্রহরের মস্তিষ্কে। সামনে থেকে ফাহিম দুষ্টু হেসে বলে উঠলো।
–ভাবিজী কে মিস করছিস বুঝি?
প্রহর তীক্ষ্ণ দৃষ্টির তীর নিক্ষেপ করে, দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
–তোর মনে হচ্ছে না তুই একটু বেশি বেশি করছিস? তুই কি হসপিটালের বেড মিস করছিস খুব? তাহলে তোকে ওখানেই পাঠিয়ে দেই কি বলিস?
–আরে রাগছিস কেন? আচ্ছা জোক্স অ্যা পার্ট, বাট মেয়েটা কিন্তু সত্যিই কিউট। ওর মাঝে কোন ভেজাল নেই।মনে যা আছে সেটাই মুখে বলে। একেবারে সরল মনের। তুই একবার ওকে একটা চাঞ্চ দিয়ে দেখতে পারিস। আই থিংক সি রিয়েলি লাভস ইউ।
–আর ইউ আউট অফ ইউর মাইন্ড? আমি আর ওই মেয়ে? নট ইভেন থিংক।
–কেন কি সমস্যা আমার মাঝে?
ওদের কথার মাঝেই খুশি এসে কথাটি বলে উঠলো। খুশির কন্ঠ কর্ণপাত হতেই মেজাজ বিগড়ে গেল প্রহরের। চোখ বন্ধ করে রাগ হজম করার চেষ্টা করছে। খুশি তার মতো করে আবারও বলে উঠলো।
–কি হলো বলো, কি সমস্যা আমার মাঝে? কিসের কমতি আছে? টেল মি? না আজকে তো তোমাকে বলতেই হবে হোয়াট ইজ দ্যা সমস্যা?
ব্যাস আর নিতে পারলোনা প্রহর। ঝট করে উঠে দাঁড়িয়ে খুশির পানে দৃষ্টি রেখে বলে উঠলো।
–এনাফ নাউ।হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট?
খুশি অতিশয় নির্বিঘ্নে বলে উঠলো।
–তোমাকে। আমার তো ধ্যান, জ্ঞান,মনে, প্রাণে কলিজা, ফোঁপরায় একটাই চাওয়া, শুধু তুমি।
♬ তোমাকে চাই শুধু তোমাকে চাই
♬ আর কিছু জীবনে পাবনা পাই।
পাশ থেকে দিয়া বলে উঠলো।
–আরে ইয়ার পাবনা না,পাই বা না পাই হবে।
–কস কি? ঠিক আছে আবার প্রথম থেকে গাই।
খুশি আবারও গান গাইতে নিলে প্রহর ধমক দিয়ে বলে উঠলো।
–দেখ আমি জানি এসব তুমি টাকার জন্য করছ। তো বলো কত টাকা চাই তোমার? কত টাকা হলে আমার পিছু ছাড়বে তুমি? জাস্ট টেল মি ইউর অ্যামাউন্ট।
প্রহরের কথায় খুশি হঠাৎ চোখ মুখ বিকৃত করে বলে উঠলো।
–ইউউউ,ইয়াকক, ছিঃ ছিঃ ছিঃ। ভেরি ব্যাড।লাইক সিরিয়াসলি? এতো পুরাণ ডায়লগ? আমার বয়ফ্রেন্ড হয়ে এতো পুরাণ ডায়লগ বলছ? আরে এই ডায়লগ তো বাটন ওয়ালা মোবাইলের থেকেও পুরাণ। তোমার থেকে এটা আশা করিনি। ইউ আর ভেরি ডিসিপয়েন্ট মি।
প্রহর যেন তাজ্জব বনে গেল। সাথে ফ্রীতে ফাহিমও। প্রহর ভেবেছিল টাকার কথা বললে মেয়েটা হয়তো অপমানিত বোধ করে চলে যাবে। নাহলে টাকার অফারে রাজি হয়ে যাবে। কিন্তু এখানে এর কাহিনিই উল্টো। সে কিনা ডায়লগ বাজি নিয়ে পড়ে আছে?
ওদের আশ্চর্য আরও বাড়িয়ে দিয়ে খুশি বলতে লাগলো।
–আর এটা কোন অফার হলো? অফারই দিতে হলে কোন লোভনীয়, আকর্ষণীয় অফার দাওনা? যা শোনার সাথে সাথে হ্যাঁ বলে দেই। যেমন, তুমি কয়টা চুম্মা চাও? কয়টা চুম্মা নিলে তুমি খুশি হবে? এমন কিছু।
ফাহিম হাতে তালি বাজাতে বাজাতে প্রভাবিত কন্ঠে বলে উঠলো।
–বাহ্ ভাবিজী জিও জিও। কি অফার দিলেন। হায় কেউ আমাদেরও যদি এমন অফার দিতো।
খুশিও গদগদ হয়ে বললো।
–থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ।
প্রহর এবার অতিষ্টতার শিখরে। কপালের রগ ফুলিয়ে খুশির দিকে আঙুল তুলে বললো।
–জাস্ট শাট আপ ইউ চিপ গার্ল।
ব্যাস এবার খুশির মনোদেবি হাজির হলো এতক্ষণে। উপর থেকে বলতে লাগলো।
–এই খুশি কি বললো শুনছস? চিপ। সস্তা বলছে তোকে।
খুশি উপর দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বিরবির করে বললো।
–এই তুই সবসময় আগুনে ঘি ঢালতে কেন চলে আছিস রে? আমার কানপুরে কোন হরতাল নেই। আমি ঠিকঠাক শুনতে পাই। তুই যাতো এখান থেকে।
খুশি এবার প্রহরের দিকে তাকিয়ে তেজী কন্ঠে।
–চিপ? ইউ মিন সস্তা? তুমি আমার ভালোবাসা কে সস্তা বলছ? মোটেও না। আমার ভালোবাসা কোন সস্তা মূলা না। আমার হলো দামি সোয়াবিন তেল। যার দাম দিনদিন শুধু বাড়তেই থাকে। একদম নাম্বার ওয়ান শাকিব খান ওয়ালা ভালোবাসা আমার। ওইযে গান আছে না?
♬যে প্রেম হাঁচি থেকে এসে ফুসফুসে করোনা হয়ে যায়
♬ সেই প্রেম আমাকে দিও
♬জেনে নিও তুমি আমার অক্সিজেনের চেয়েও প্রিয়
♬ তুমি আমার অক্সিজেনের চেয়েও প্রিয়
খুশির সুরেলা ফাটা বাঁশের মতো গান শুনে প্রহরের কান থেকে যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে। প্রহর টেবিলে বাড়ি মেরে বলে উঠলো।
–স্টপ দিস ননসেন্স। এন্ড লিসেন্ট টু মি। আমি ভালো করেই জানি তুমি এসব টাকার জন্য করছ। তাই হেয়ালি না করে সোজাসুজি বলো কতো টাকা চাই তোমার? আমি তোমাকে ব্ল্যাঙ্ক চেক দিচ্ছি। নিজের খুশিমতো এমাউন্ট বসিয়ে নাও। আর আমার পিছা ছাড়ো।
খুশি কৌতুহলী কন্ঠে বলে উঠলো।
–আপনার অনেক টাকা আছে বুঝি?
প্রহর একটা তিরস্কার স্বরূপ হাসি দিয়ে বললো।
–ভাবতো এমন করছ যেন কিছুই জানো না। এসব ট্রিকস আমার ওপর কার্যকর হবে না। তোমাদের মতো মেয়েদের ভালো করেই চেনা আছে আমার। যেই কোন রিচ ছেলেকে দেখেছ ওমনি চলে এসেছ তাদের ফাঁসাতে। নিজের মাসুম আর ভোলাভালা রুপ দেখিয়ে তাদের মন জয় করতে চাও। তবে আমার সাথে এসব চলবে না। তাই টাকা নাও আর আমাকে জ্বালানো বন্ধ করো।
খুশি একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো।
–হুমম তারমানে আপনার অনেক টাকা আছে। আর আমি যা চাইবো তাই আপনি দিবেন তাইতে?
–অপকর্স।
–ওকে ফাইন। তাহলে চলুন আমার সাথে।
প্রহর ভ্রু কুঁচকে বললো।
–কোথায়?
–কেন আপনিই তো বললেন আমি যা চাইবো তাই দিবেন। তাহলে চলুন। আমি যেখানে নিয়ে যাবো আমার সাথে যেতে হবে।
প্রহর মনে মনে এক তাচ্ছিল্যের হাসি দিল। সেইতো আসল রুপটা বেড়িয়েই পড়লো। দুনিয়াতে প্রেম ভালোবাসা বলতে কিছুই নেই। সবই হলো প্রতারণা।সবাই এক।সবাই শুধু স্বার্থের পেছনে ঘুরে।আজ তুমিও সেটা আরও একবার প্রমাণ করে দিলে। এতদিন কতো ভালোবাসা ভালোবাসা করছিল। আর আজ টাকার কথা বলতেই সব ভালোবাসা উড়ে গেল। যাক তাতে আমার কি? টাকা নিয়েও আপদ টা বিদায় হলেই বাঁচি। তাই না চাইতেও এই মেয়ের কথা মেনে নিতে হবে। একবার মেয়েটা পিছু ছাড়লে বাঁচি। সেই মনোভাব নিয়ে প্রহর বলে উঠলো।
–ঠিক আছে চলো।
খুশি উৎসাহ নিয়ে প্রহরের সাথে রওয়ানা হলো। সাথে ফাহিম আর দিয়াও চললো। খুশি যেতে যেতে কাওকে ফোন করে অতি উৎসাহী কন্ঠে বললো।
–এই লাবু শোন,সব বিচ্ছু বাহিনী নিয়ে দ্রুত ***গার্ডেনে চলে আয়। আজকে জমিয়ে পার্টি করবো। ধরে নে আমার লটারি লেগে গেছে বুঝেছিস।
প্রহর ফাহিমের দিকে ঝুঁকে বললো।
–খুব তো বলছিলি মেয়েটা খুব ভালো, ব্লা ব্লা ব্লা। একদম প্রসংশায় পঞ্চমুখ হয়ে যাচ্ছিলি। এখন দেখলিতো আসল রুপ। টাকা পেয়েই কেমন বন্ধুদের নিয়ে পার্টি করার প্ল্যান করছে। এই হলো তোর সরল মনের মেয়ে।
–যতই বলিস ইয়ার। আমার এখনো মনে হচ্ছে খুশি এমন না।মেয়েটা একটু অন্যরকম। ওর মাঝে একটা ইউনেক নেস আছে। মেবি তুই দেখতে পাচ্ছিস না।
–আমি সঠিক টাই দেখতে পেয়েছি। এবং সেটা ধরে ফেলে তার সমাধানও করে ফেলেছি। এখন শুধু আর কিছু সময়ই একে সহ্য করতে হবে।
___
টিচার ক্লাস শেষ করে বেড়িয়ে যেতেই সব বাচ্চা কাচ্চারা হৈহৈ করতে করতে বাইরে চলে এলো। এখন টিফিন টাইম। তাই বাচ্চারা বাইরে এসে হৈচৈ করতে লাগলো। তবে নিভান এসব থেকে আলাদা। ও নিজের মতো বটগাছের নিচে বসে ওর স্কেচ খাতাটা বের করে পেন্সিল দিয়ে স্কেচ করা শুরু করলো। সামনের গোলাপ ফুল গাছে একটা ফুটন্ত গোলাপ আর একটা কলি গোলাপ আছে। নিভান সেটারই আর্ট করছে।ক্লাস সেভেনে পড়ে সে। নিভান তেমন কারোর সাথে সহজে মিশতে পারে না। তাই একা নিজের মতোই থাকে। চুপচাপ শায় প্রকৃতির সে। তবে অনেক বুদ্ধিমান । নিজের বয়সের তুলনায় অনেক বেশি মেচিউর সে।
স্কেচ প্রায় শেষের দিকে। তখনই পাশ থেকে কোমল কন্ঠে কেউ বলে উঠলো।
–ওয়াও,, কত্তো সুন্দর হয়েছে।
নিভান পাশে তাকিয়ে দেখলো সেই মেয়েটা। যার কথা ও সেদিন ওর আপুকে বলেছিল। মেয়েটাকে ওর ভালোই লাগে। একদম বারবি ডলের মতো দেখতে। ভ্যানিলা আইসক্রিমের মতো স্কিন। হাসলে গালে টোল পড়ে। মাঝে মধ্যে আরচোখে দেখে ও। ওর আপুর পড়ে এই প্রথম কোন মেয়েকে ওর কাছে ভালো লেগেছে। তবে নিজের শায় স্বভাবের জন্য নিজে থেকে কখনো কথা বলতে যায় নি। এখন হঠাৎ করে সামনে আসায় একটু নার্ভাস হয়ে গেল নিভান। মেয়েটি আবারও বলে উঠলো।
–তুমি সত্যিই খুব সুন্দর আর্ট করতে পারো।
নিভান সৌজন্যেমূলক হাসি দিয়ে বললো।
–ধন্যবাদ।
মেয়েটি বলে উঠলো।
–হায়, আমার নাম স্পৃহা। তোমার নাম কি?
–আমার নাম নিভান।
–আচ্ছা নিভান তুমি কিছু মনে না করলে আমাকে একটু তোমার স্কেচ খাতার বাকি আর্ট গুলো দেখাবে? আসলে আমার না এগুলো দেখতে অনেক ভালো লাগে।
নিভান হাসিমুখে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ দেখনা।
নিভান খাতার পৃষ্ঠা উল্টিয়ে স্পৃহাকে দেখাতে লাগলো। স্পৃহাও মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলো। দেখতে দেখতে স্পৃহা কৌতুহলী কন্ঠে বলে উঠলো।
–আচ্ছা এগুলো কি? প্রতি পেজের কোথাও চুলের ছবি,কোথাও হাতের, কোথাও শুধু চোখ। এমন একটু একটু বডিপার্টের আর্ট কেন?
নিভান মুচকি হেসে বললো।
–আসলে এগুলো সব আমার আপুর বডিপার্ট। আমি এখনো পুরো মানুষের স্কেচ করা ভালো করে পারিনা। তাই একেক সময় আপুর একেক অংশের ছবি আঁকি।
নিভান খাতার পৃষ্ঠায় দেখিয়ে বললো।
–যেমন এইযে এটা আমার আপুর চুল। এই চুলের ক্লিপটা আমি আমার পকেট মানি থেকে বাঁচিয়ে আপুর জন্য কিনেছিলাম। আপু অনেক খুশি হয়ে মাথায় লাগিয়েছিল। অনেক সুন্দর লাগছিল আপুকে। তখনই আমি আপুর এই স্কেচ টা করি।
তারপর আরেক টা পেজ দেখিয়ে বললো।
–এইযে হাতের ছবিটা দেখছ। এটাও সেদিন আমি আপুর জন্য কাচের চুড়ি কিনে নিয়ে গিয়েছিলাম। আর আপু সেটা হাতে দিয়ে সবাইকে দেখাচ্ছিল। আমি তখনই এটা আঁকায়। এভাবে একটা একটা আঁকতে আঁকতে যখন আপুর সব অংশ আঁকতে শিখে যাবো। সেদিন আপুর বড়ো একটা ফুল স্কেচ বানাবো।তবে আপুকে দেখাবোনা। একটা স্পেশাল দিনে আপুকে গিফট করবো। আপু সেদিন অনেক খুশি হয়ে যাবে।
এতক্ষণ নিভানের কথাগুলো শুনে স্পৃহা গালে হাত ঠেকিয়ে বললো।
–অওওওও…হাউ সুইট। তুমি তোমার আপুকে এতো ভালোবাসো? তোমার আপু সত্যিই অনেক লাকী।
নিভান হালকা হেঁসে বললো।
–উহুম। আপু না। বরং আপুকে পেয়ে আমি লাকী। আপু আমার সবকিছু। আমি মা বাবার চেয়েও বেশি আপুকে ভালোবসি। আমার আপুটা মানুষই এমন। তাকে কেউ না ভালোবেসে থাকতেই পারে না। জানো আমার আপু যখন হাসে তখন আমার সবচেয়ে খুশি লাগে। আপুর হাসিতে ম্যাজিক আছে। সবকিছু আলোকিত করে দেয়।
নিভানের ওর বোনের প্রতি এমন ভালোবাসা দেখে স্পৃহা মুগ্ধ হয়ে গেল। হাসিমুখে বলে উঠলো।
–তুমি আসলে অনেক কিউট।
নিভান হালকা লজ্জা পেলেও সেটা চেহারায় আসতে না দিয়ে বললো।
–জানি। আপু বলেছে আমাকে।
–আচ্ছা নিভান,আমাকে আর্ট শেখাবে প্লিজ? আমার না আর্ট করার খুব শখ। কিন্তু আমি তোমার মতো এতো সুন্দর করে পারি না। তাই আমাকে একটু হেল্প করোনা প্লিজ? তুমি চাইলে আমি তোমাকে এরজন্য ফি দেবো। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
নিভান মনে মনে ভাবলো।
–ব্যাপার টা মন্দ না। ফিস এর টাকা জমিয়ে আপুর বার্থডে তে ভালো একটা গিফট দিতে পারবো।
সেই মনস্তাপ করে নিভান স্পৃহার কথায় রাজি হয়ে গেল। স্পৃহা খুশি হয়ে বললো।
–থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ সো মাচ।
তারপর নিভানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো।
–ওকে দেন তাহলে আজ থেকে আমরা বন্ধু।
নিভান মুচকি হেসে হাত মিলিয়ে বললো।
–ওকে।
__
শপিং মলের ক্যাশ কাউন্টারের কাছে বিরক্তি ভরা মেজাজে দাঁড়িয়ে আছে প্রহর। পাশেই ফাহিমও দাঁড়িয়ে আছে। খুশি দিয়াকে নিয়ে সেই দুই ঘন্টা যাবৎ শপিং করছে। শেষ হওয়ার কোন নাম নেই। প্রহরের মেজাজ হায় হয়ে যাচ্ছে। প্রহর ভেবে পাচ্ছে এখানে ওকে নিয়ে আসার কি মানে হলো? টাকা নিয়ে নিজের ইচ্ছে মতো শপিং করলেই তো পারতো। এখানে ওকে নিয়ে আসার কোন প্রয়োজনই উপলব্ধি করছে না সে।মেয়েটা জাস্ট হেডেক। কাম ডাউন প্রহর। শুধু আর কিছু সময়। তারপরই এই মেয়েটার থেকে ছাড় পেয়ে যাবে।
প্রহর ফাহিমের দিকে তাকিয়ে বললো।
–এই তুই একটু গিয়ে দেখতো হলো নাকি ওদের?
ফাহিম দ্বায় সারা ভাবে বললো।
–হোয়াই শুড আই গো ম্যান? ভেজাল তোর তুই যা।
প্রহর দাঁত কিড়মিড় করে তাকালো ফাহিমের দিকে। ফাহিম সেটার ভ্রূক্ষেপ না করে বলে উঠলো।
–আচ্ছা ভাবিজী, আই মিন খুশি কিডস সেকশনে কি করছে?
প্রহর বিরক্তি ভরা কন্ঠে বললো।
–হাউ উড আই নো?হবে হয়তো নিজের ভাই বোনের জন্য কাপড়চোপড় কিনছে। এতো বড় লটারি হাত লেগেছে। পুরো চৌদ্দ গুষ্ঠির জন্য কেনাকাটা করছে হয়তো।
ওদের কথার মাঝেই খুশিরা চলে এলো। খুশির দুই হাত ভর্তি শপিং ব্যাগের পাহাড় জমেছে। বেচারি ব্যাগের ভীড়ে ডুবে যাচ্ছে। ওরা প্রহরদের কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ কিছুর সাথে পা বেজে পড়ে যেতে লাগলো। পড়তে পড়তে বেচারি একেবারে প্রহরের ওপর এসে পড়লো। আচমকা এমন হওয়ায় প্রহর নিজেও পড়ে যেতে লাগলো। নিজেকে বাঁচাতে পেছনের ক্যাশ কাউন্টারে হাত ঠেকালো প্রহর। খুশি যেয়ে পড়লো প্রহরের বুকের ওপর। হাতের ব্যাগগুলো এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে পড়লো। খুশি নিজের ব্যালেন্স রাখতে প্রহরের দুই কাঁধে ওপর দিয়ে নিজের হাত রাখলো। নাক যেয়ে লাগলো প্রহরের বুকের সাথে।
এক মনোমুগ্ধকর ঘ্রাণ এসে লাগলো খুশির নাকে। কেমন নেশালো একটা ঘ্রাণ। খুশি আবেশে চোখ বন্ধ করে ঘ্রাণ টা টেনে নিল নিজের মাঝে। তারপর মাথা তুলে তাকালো প্রহরের দিকে। প্রহরের চোখে চোখ পড়ে গেল। খুশির চোখের দিকে এই প্রথম সরাসরি তাকালো প্রহর। স্বচ্ছ ওই চোখের ভাষায় কিছু একটা আছে। সে চোখের গভীরতায় কেমন হারিয়ে যাচ্ছে প্রহর। প্রহরকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে খুশি দুষ্টু হেসে ফট করে বলে উঠলো।
–ইরাদা কেয়া হে? কিস করতে চাচ্ছো নাকি? চাইলে করতে পারো। আই ওন্ট মাইন্ড।
খুশির এমন খাপছাড়া কথা শুনে প্রহরের সব ঘোর মুহূর্তেই ছু মন্তর হয়ে গেল। দুই হাতে খুশিকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
–জাস্ট শাট আপ ইডিয়ট। এন্ড স্টে অ্যাওয়ে ফ্রম মি। তোমার এসব কারসাজি শেষ হলে কি আমি যেতে পারি?
খুশি হাসিমুখে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ এখানকার কাজ শেষ। এখন আমরা আরেক জায়গায় যাবো চলুন।
–হোয়াট? দেখ আমি আর কোথাও যেতে পারবোনা। তোমার টাকা লাগে নিয়ে যাও।
–দেখুন আপনি বলেছেন আমি যা বলবো তাই শুনবেন। এখন না করতে পারবেন না। যেতে তো আপনাকে হবেই।
কথাটা বলে খুশি প্রহরের হাত ধরে একপ্রকার টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। প্রহরের রাগ লাগলেও আপাতত এই মেয়ের কথা মানা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তাই অগত্যা ওর কথায় মেনে চললো।
___
খুশি প্রহরদের একটা উন্মুক্ত পার্কে নিয়ে এলো। পার্কে এসে দেখলো অনেক গুলো বাচ্চা এক জায়গায় জড়ো হয়ে আছে। তাদের পোশাক আশাক দেখে বোঝা যাচ্ছে এরা সব পথশিশু। খুশি সেদিকে এগিয়ে যেতেই সবগুলো বাচ্চারা হাসিমুখে উচ্ছসিত হয়ে খুশির দিকে দৌড়ে এলো। খুশিও হাসিমুখে তাদের দুইহাতে জড়িয়ে নিল। খুশির সেই শপিং মল থেকে কিনে আনা প্যাকেট গুলো ওদের সবার হাতে একটা একটা করে দিচ্ছে। বাচ্চারা সেগুলো পেয়ে খুবই খুশি। তাদের মাছুম হাসিগুলোতে যেন এক অনাবিল আনন্দের ঢেউ খেলছে। যেটা হয়তো এই সামান্য টাকার চেয়ে অনেক বহুমূল্যবান।
এসব দেখে প্রহর খুবই অবাক হয়ে গেল। খুশি যে এদের জন্য তখন শপিং করছিল তা ভাবতেই পারেনি সে। এমন ইমম্যাচিওর উড়নচণ্ডী মেয়ের যে এমন চিন্তাধারাও থাকতে পারে সেটা অকল্পনীয় ছিল প্রহরের কাছে। ব্যাপার টা ভাবিয়ে তুললো ওকে। খুশির বৈচিত্র্যময় এই চরিত্রটা কেন যেন না চাইতেও মুগ্ধ করলো প্রহরকে। অবাক বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে রইলো সে। খুশি কেমন অমায়িক ভাবে এই বাচ্চাগুলোর সাথে মিলেমিশে এক হয়ে গেছে। যেন কত আপন কেউ।
প্রহরকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফাহিম হাসিমুখে বলে উঠলো।
–দেখেছিস আমি বলেছিলাম না, মেয়েটা ইউনিক। নট লাইক এভরিওয়ান।
খুশি এবার প্রহরের গাড়ির ভেতর থেকে বাচ্চাদের জন্য আনা খাবারের বক্সগুলো বের করছে। অনেক গুলো বক্স হওয়ায় খুশি একা পারছে না। তাই খুশি প্রহরদের দিকে তাকিয়ে বললো।
–কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্টাইল মারছো। একটু হেল্প করলেও তো পারো। আজকাল স্বহৃদয়বান মানুষ পৃথিবী থেকে উঠেই গেছে মনে হচ্ছে।
খুশির কথায় এবার আর রাগ হলো না প্রহরের। ওরা এগিয়ে গিয়ে বাকি খাবারের বক্সগুলো বের করে আনলো। সব বাচ্চাদের গোল করে বসিয়ে সবার হাতে একটা করে বক্স দিল। বাচ্চারা খুবই আনন্দচিত্তে খাবার খাচ্ছে। এই দৃশ্যটা সত্যিই অসামান্য এক সন্তুষ্টি এনে দিচ্ছে প্রহরের মনে। খুশি একটা বাচ্চার দিকে তাকিয়ে বললো।
–কিরে লাবু তোর পড়ালেখা কেমন চলছে?
লাবু খেতে খেতে বললো।
–ভালা চলতাছে আফা। আপনে যে টেহা দিছিলেন ওইডা দিয়া ইশকুলের সব ফিস দিয়া দিছি। এহন আর কোন সমস্যা নাই।
–গুড। ভালো করে পড়াশোনা করবি। আর কোন কিছু লাগলে আমাকে বলবি কেমন?
–আইচ্ছা।
ফাহিম বলে উঠলো।
–ভাবিজী, আপনি কি ওদের আগে থেকেই চিনেন।
–হ্যাঁ চিনি। এদের সবাইকে চিনি আমি। এদের সাথে সময় কাটাতে অনেক ভালো লাগে আমার।
–বাহ্ ভাবিজী আপনি কিন্তু অনেক ভালো কাজ করছেন।
–ধন্যবাদ দেবরজী। আসলে আমি এটাই মানি নেকি করো ফলের আশা করো না। কারণ ফল তো বাজারেও পাওয়া যায়।
কথাটা বলেই খুশি খিলখিল করে হেঁসে উঠলো।সাথে ফাহিমও। হাসতে হাসতে ফাহিমের হাতের সাথে হাই ফাই দিল।
খাওয়া শেষে বাচ্চারা বললো।
–অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু। এতো সুন্দর খাওন আর কাপড়চোপড়ের লাইগ্যা।
খুশি বললো।
–উহুম। আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে লাভ নেই। আজকের সবকিছু তোমাদের এই ভাইয়ার তরফ থেকে। উনার টাকাতেই এসব আনা হয়েছে। তাই তাকেই ধন্যবাদ দাও।
বাচ্চারা এবার প্রহরকে ধন্যবাদ জানালো। প্রহর সৌজন্যমূলক হাসি দিল। খুশির কাজে আজকে প্রচুর অবাক হচ্ছে প্রহর।
খাওয়া দাওয়া শেষে বাচ্চারা কানামাছি খেলার জেদ ধরলো। সবাই মিলে খুশির চোখে কাপড় বেঁধে দিল।তারপর খুশি হাতড়িয়ে সবাইকে ধরার চেষ্টা করছে। খুশি চালাকি করে কাপড়ের ফাঁকে প্রহরকে দেখে নিল। তারপরে ফট করে গিয়ে প্রহরকে জড়িয়ে ধরে বললো।
–ইয়েএএএ ধরে ফেলেছি, ধরে ফেলেছি।
খুশি চোখের কাপড় খুলে প্রহরের দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে একটা চোখ মেরে দিল । প্রহর যথারীতি রেগে গিয়ে খুশিকে ছাড়িয়ে ওখান থেকে চলে যেতে নিলে,খুশি পেছন থেকে হাত ধরে ফেললো। প্রহরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে গেয়ে উঠলো।
♬ ইস দিওয়ানে ল্যাড়কে কো কোয়ি সামঝায়ে
♬পিয়ার মোহাব্বাত সে না জানে কিউ এ ঘাবড়ায়ে
♬ দাড়দে দিল জানে না
♬পাস মে জিতনা আয়ু উতনি হি দূর এ যায়ে হা যায়ে
(প্রহর খুশির হাত ছাড়িয়ে চলে যেতে লাগলে বাচ্চারা এসে ঘিরে ধরে। খুশি প্রহরের চারিদিকে ঘুরে ঘুরে নানান অঙ্গভঙ্গি করতে করতে গাইতে লাগলো)
♬ রাঙ না দেখে রুপ না দেখে
♬ এ জওয়ানি কে ধুপ না দেখে
♬ ইস্ক মে ইস কি বাবরি হু মে
♬ এ ভালা হে তো কেয়া বুরি হু মে
♬ এ ল্যাড়কা হে ফিরবি জানে কিউ শারমায়ে
♬ হা শারমায়ে
♬ ইস দিওয়ানে ল্যাড়কে কো কোয়ি সামঝায়ে
♬ পিয়ার মোহাব্বাত সে না জানে কিউ এ ঘাবড়ায়ে
প্রহর ওখান থেকে সরে এসে একটা ব্রেঞ্চে এসে বসে। খুশিও যথাযথ ওখানে এসে বসে পড়ে। প্রহর এবার একটু শান্ত সুরে বলে উঠলো।
–দেখ তুমি মেয়ে খারাপ না। তবে আমার পিছে ঘুরে নিজের জীবন নষ্ট করোনা। তোমার চাওয়া কখনোই পুরন হবে না। আমি তোমাকে কখনোই ভালোবাসবতে পারবোনা। ইনফ্যাক্ট আমি কোন মেয়েকেই কখনো ভালোবাসতে পারবোনা। তাই আমার পিছু ছেড়ে দাও প্লিজ।
কথাটা বলেই প্রহর উঠে চলে গেল। আর তখনই জনাবা মনোদেবি এসে হাজির হলেন। উপর থেকে খুশিকে বলে উঠলো।
–কি বললো শুনেছিস? কোন মেয়েকেই নাকি ভালোবাসতে পারবে না। এর অর্থ কি বুঝতে পারছিস?
খুশি ভীতু স্বরে বললো।
–তুইও কি তাই ভাবছিস যা আমি ভাবছি? তারমানে কি প্রহর একটা “গে”?
খুশি দুই কানে হাত রেখে চিৎকার দিয়ে বললো।
–নেহিইইইইইইইই🙉
চলবে…….