#পর্ব১৫
#অপূর্নতার_সংসার
#লেখিকাঃতানজিনা_মেহরিন_মিশু
কেটে যায় সময় তার নির্দিষ্ট গতিতে! কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময়ের স্রোত বহমান কারো জন্য অপেক্ষা করে না! ঠিক তেমনি ভাবে তখন কার ঘটনা রোজা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে মেয়েদের বাড়িতে নিয়ে এসেছে!
মেয়েরা রওশনের ঘরে এসে দেখতে পেলো সবকিছু সুন্দর করে সাজানো রয়েছে! সাজানোর ফলে ঘরটিকে অনেক সুন্দর লাগছে। ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো সবকিছু! এক পর্যায়ে রওশনের সেই ফুচকার ঝুড়িটি দেখতে পেলো! দুজনেই বায়না করলো ফুচকা খাবে।
রোজাও মেয়েদের কে প্লেটে ফুচকা দিয়ে দিলো খাওয়ার জন্য। রোজা ভাবতে লাগলো রওশনকে ফিরিয়ে দিয়ে সে কোনো ভুল করলো নাতো? আদৌ কি ঠিক করলো রওশনকে ফিরিয়ে দিয়ে? আদিল তো সুখে আছে রিনিকে নিয়ে। তাহলে রোজার আর পিছুটান কিসের? সে কেনো পারবে না তাহলে রওশনকে মেনে নিতে! রওশন তো কতো ভাবে ওদের নিয়ে। আমার মেয়েদের কে নিজের মেয়ে মনে করে। রওশন আলো আর মিষ্টির সাথে যেভাবে মিশে গেছে মনে হয় না যে রওশন অন্য কেউ।
এসব ভাবতে ভাবতে মেয়েরা রোজাকে হঠাৎই বলে ওঠলো,
“আম্মু আংকেল তো ফুচকা টা খুব ভালো বানিয়েছে। আব্বু তো কখনো আমাদের কিছু বানিয়ে খাওয়ায়নি কখনো! আর আব্বু তো আমাদের রওশন আংকেল এর মতন এতো আদর ও করেনি কখনো”!
শেষমেষ মিষ্টি বলে ওঠলো,
“রওশন আংকেলই আমাদের আব্বু হলে ভালো হতো! আলোও মিষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে একই কথা বলতে লাগলো”!
রোজা কি বলবে বুঝতে না পেরে ওদেরকে পড়তে বসতে পাঠিয়ে দিলো।
________________________
রাএেবেলা সকলে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। রোজা ওয়েট করছে করিম সাহেব, আর রওশন এর জন্য। করিম সাহেব ফোন করে রোজাকে বলে দিলেন যে তার অপারেশন আছে রাএে তাই তিনি আসতে পারবেন না। কিন্তু রওশন সে তো কিছুই বললো না!
রোজার আস্তে আস্তে ভয় পেতে লাগলো, সে কোনোভাবে রওশনের বাড়ি না ফেরার কারন হিসাবে নিজেকে দায়ী করছে। কিন্তু রোজার ওতো আজকে রওশন কে কিছু বলার ছিলো! ভাবতে ভাবতে সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়ে রোজা!
সকালবেলা………………….
রওশন বাড়িতে এসে দেখতে পেলো রোজা ওভাবে সোফাতে শুয়ে রয়েছে! সে কালবিলম্ব না করে রোজাকে ডেকে ওঠালো। রোজা যেনো রওশন কে আনন্দের ঝিলিক ফুুটে ওঠলো চেহারায়! যেনো তাহারই অপেক্ষায় ছিলো এতোক্ষন সে! !সঙ্গে সঙ্গে বলতে লাগলো,
রোজাঃ আপনি কোথায় ছিলেন সারারাত? কি হয়েছিলো? বাড়িতে ফিরেন নি কেনো? ফোন ও দেননি! কিছু বলবেন কি?
রওশনঃ আস্তে আস্তে রোজা এতো প্রশ্ন করলে উওর দিবো কি করে? কালকে শরীর ভালো ছিলো না একটা বন্ধুর বাড়ি গেছিলাম ওখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আর ফোনেও চার্জ নেই।
রোজা রওশনকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজে বলতে লাগলো,
“আপনি নিচের বাথরুমে ফ্রেশ হয়ে আপনার রুমে আসুন আমার আপনার সাথে কিছু কথা আছে”।
রওশন ও ফ্রেশ হয়ে উপরে চললো রোজার কথা শুনতে, রুমে গিয়ে দেখতে পেলো যেরম করে সাজিয়েছিলো ঠিক তেমন করেই সাজানো আছে রুমটি।
রওশন কে দেখে রোজা বলতে লাগলো
“আজ আর মনে পড়ে না আদিলের ওই কথা”!
” আজ জীবনে খুশি আছি, ভুলে পুরোনো সব ব্যাথা আর কোনো দিন ফিরে যাবো না পুরোনো সেই জীবনে” “নতুন করে চিনতে পেরেছি আজ আমি নিজেকে”।
“দুঃখ-কষ্ট নিয়েই মানুষের জীবন, কিন্তু দুঃখের পর সুখ আসবে, এটাই ধ্রুব সত্য”
“তেমনি আপনিও আমার জিবনে এমন সুখের ছোয়া নিয়ে এসেছেন। হ্যাঁ আমি আপনাকে ভালোবাসি কিনা এ কথাটি এখনি বলতে পারবো না। তবে আপনাকে যতোটুকু চিনেছি তাতে নির্ভয়ে আপনার সাথে বাকি পথ কাটাতে পারবো। এবার আপনি আপনি কি হবেন আমার বাকি জীবনের সাথী? সাথে আমার মেয়েদের বাবা হতে”?
রওশনের চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক ফুটে ওঠলো! সে যা চেয়েছিলো এখন তাইই পাচ্ছে।
রওশনঃ যদি তুমি সত্যি বলে থাকো তাহলে রোজা, হ্যাঁ আমিও পারবো তোমার সাথে থাকতে আর তোমার মেয়েদের বাবা হয়ে উঠতে।
রোজাঃ তাহলে অতী শ্রীঘই বিয়ের ব্যবস্থা করুন রওশন। আমিও চাই দিনশেষে এখন একটু সুখে থাকতে।
__________________________________
আজকে রিনিকে নিয়ে আদিল হাসপাতালে এসেছে চেক-আপ করাতে। কারন রিনির ডেলিভারির ডেট চলে এসেছে প্রায়!
ডক্টরঃ চেক-আপ করে যা বুঝলাম সব ঠিকঠাক আছে। আপনি আর বিশ দিন পরে এসে কিছু পরীক্ষা করাবেন। তারপরেই হয়ে যাবে। আর একটা দিন রোগীকে একটু সাবধানে রাখবেন।
আদিলঃ ঠিক আছে ডক্টর আমি এখন যাই।
রিনিঃ শুনলে তো আদিল ডক্টর কি বললো? একদম আমার কথার অন্যথা করবে না। আমি যা বলবো তাইই শুনতে হবে তোমায়।
আদিল নিশ্চুপ হয়ে রয়েছে। তার এখন মনে হচ্ছে রিনির থেকে ঢের গুনে ভালো ছিলো রোজা!
__________________________
দিন যায়, সময় যায়, সময়ের সাথে সাথে সবকিছুই তাল মিলিয়ে আগাতে থাকে। রোজা আর রওশনের বিয়েতে করিম সাহেব কোনো বাঁধা দেন নি! রোজাকে বিয়ে করলে রওশন যেমন সুখী ও হবে তেমনি রওশন দু’টো বাচ্চাকেও পাবে। যাদের মুখ থেকে বাবা ডাক শুনে রওশনের অক্ষমতা টা একটু হলেও ঘুচবে।
রোজা চায়নি ধুমধাম করে তাদের বিয়ে হউক। ঘরোয়া ভাবেই তাদের বিয়ে সম্পন্ন হলো আজকে।
মেয়েদেরকে আজকে করিম সাহেব তার নিজের রুমে নিয়ে রেখেছে করিম সাহেব শুধু একবার বলেছে ওদের যে রওশন কে আর ওদের আংকেল বলে ডাকতে হবে না। কারন তাদের আম্মুর আর আংকেল এর বিয়ে হয়ে গেছে! এখন রওশনই ওদের আব্বু। মেয়েদুটো করিম সাহেবের কথা শুনে খুশি হলো! তারা তো এমনিতেও এটাই চাচ্ছিলো! এক সময় গল্প করতে করতে দু’জনে ঘুমিয়ে পড়েছে।
রোজা অপেক্ষা করছে রওশন এর জন্য। রওশন এখনো রুমে আসেননি! হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে রোজা ঘুরে তাকালো,
রওশন এসেছে ঘরে! রোজা তক্ষুনি গিয়ে রওশন কে সালাম করলো!
রওশনঃ বরাবরের মতনই তোমার জায়গা কখনোই আমার পায়ে হবে না রোজা। আমার হৃদয়ে থাকবে তুমি সবসময়। শুধু মাথা থেকে বাদ দিয়ে ফেলো যে আদিল বলে কেউ ছিলো তোমার জীবনে। ওসব তিক্ত অতীত বাদ দিয়ে এখন বর্তমান নিয়ে বাচো।
রোজাঃ কষ্টের পর সুখ আসবে এটাই প্রকৃতির নিয়ম। তেমনি করে আপনিও এসেছেন আমার জিবনে। আমি এখন চাই আপনার সাথে সুখে শান্তিতে মেয়েদের নিয়ে জিবন কাটাতে। চলুন ছাদে যাই? ছাদে গিয়ে আমাদের নতুন জীবনের সূচনা পথে ওই আকাশের চাঁদ টাকে সাক্ষী রেখে শুরু করা যাক?
রওশনঃ হ্যাঁ চলো যাওয়া যাক। এখন থেকে শুধু তুমি আমি আর আমাদের মেয়েদের নিয়েই বাকিটা জীবন কেটে যাবে। তোমার অপুর্ন সংসারে পূর্নতা আসবে।
চন্দ্রবিলাশ করতে লাগলো দু’জন মিলে ছাদে গিয়ে। এখান থেকেই শুরু হবে তাদের জীবনের নতুন অধ্যায়।
এক মাস পর…………………….
আদিল রিনিকে নিয়ে হাসপাতালর উদ্দেশ্য রওনা দিচ্ছে, কিন্তু রিনির অসহ্য পেটে ব্যাথা শুরু হয়েছে। আদিল দ্রুত স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে যাতে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে পৌঁছতে পারে, ঠিক তখনি অপর দিক দিয়ে একটি ট্রাক এসে……….
#পর্ব১৬_সমাপ্ত।
#অপূর্নতার_সংসার
#লেখিকাঃতানজিনা_মেহরিন_মিশু
কেটে গেলো সময় সময়ের গতিতে। দেখতে দেখতে অনেক বছর কেটে গেলো, রোজার চুলে এখন পাক ধরেছে। চশমা ছাড়াও যেনো স্পষ্ট দেখতে পায় না কোনোকিছুই! আর রওশন তো রোজার উপর নির্ভর করে চলেছে। তাদের রেস্টুরেন্ট এখন অনেক সুনাম হয়েছে। বেস সুখেই কাটছে ওদের জিবন।
দুপুরের কড়কড়ে রোদ উঁকি মেরে সবাইকে নাজেহাল করে দিচ্ছে! যেনো সূর্য্যি মামা মাথার উপর ওঠে নাচছে! এর মাঝে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমে পরিবেশ টাকে শীতল করে তুললো। এরই মাঝে রওশন রোজাকে ডাকতে লাগলো,
রোজা এবার কিন্তু সত্যি ই খুব দেরি হয়ে যাচ্ছে! তুমি কি আদৌও আসবে আমার সাথে?
উফফ রওশন এতো ডাকার কি আছে বলোতো? আমি আসছি তো নাকি! আর একটু অপেক্ষা করো আমার প্রায় হয়ে যাচ্ছে। বাবা, রহিমা খালা আর ড্রাইভার কাকু তৈরী হয়েছে?
হ্যাঁ সবাই তৈরী নিচে অপেক্ষা করছে তোমার জন্য। এবার তুমি আসলেই আমরা বেড়িয়ে পড়বো সবাই মিলে।
পুরো পরিবার সবাই মিলে রওশন এর মায়ের কবর জিয়ারত করতে যাচ্ছে। আর তারই উদ্দেশ্য এতিমখানায় কিছু লোকদের খাওয়ানোর আয়োজন করেছে।
কবর জিয়ারত শেষে রোজা নিজের হাতে পরিবেশন করে লোকদের খাওয়াচ্ছে তখনি দেখতে পেলো একজন লোক বসে আছে!
পরনে তার ময়লা একটি পাঞ্জাবী যার বুকপকেটের দিকে অর্ধেকটা প্রায় ছিড়ে গেছে। মাথার চুলগুলো জট পাকিয়ে এক দলা হয়ে গেছে, মুখ ভর্তি দাড়ি লোকটার তবুও রোজার এই বয়সে এসেও এরকম মানুষটিকে চিনতে একটুও অসুবিধা হলো না!
অস্ফুট স্বরে রোজার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো,
আদিল তুমি! এখানে, এরকম পাগলের মতন অবস্থায় কি করছো?
রোজার কথা শুনে রওশন ও চলে আসলো সাথে সাথে, করিম সাহবে আর রহিমা বাচ্চাদের সাথে কথা বলছে বিধায় এদিক টা তেমন নজর কাড়েনি ওদের। তাই জানতেও পারছে না কি হচ্ছে এখানে!
আদিলকে এরকম অবস্থায় দেখে রোজার যেনো কেমন খারাপ লাগতে শুরু করলো। তক্ষনি রওশন এসে জিগেস করলো,
রোজা এমন করছো কেনো? কি হয়েছ?
রোজা বলে উঠলো,
রওশন এটা আদিল! আদিল বসে আছে এখানে।
সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পেলো শিলা এগিয়ে আসছে ওদের দিকে!
রোজার শিলাকে চিনতে একটুও কষ্ট হলো না। শিলা এসেই আগে আদিলকে বলতে লাগলো,
ভাইয়া তুই আবার এই এতিমখানায় এসে বসে রয়েছিস? আমি কতো চিন্তা করছিলাম তোকে নিয়ে আর তুই এখানে এভাবে বসে আছিস!
শিলার চোখ গেলো রোজার দিকে,
সঙ্গে সঙ্গে শিলা গিয়ে পরম আবেশে জড়িয়ে ধরলো!
ভাবি তুমি এখানে? কেমন আছো? কতোদিন পরে দেখলাম তোমাকে। ওইদিন কি হয়েছিলো তোমার? একটা ফোন ওতো করলে না আমায়? আমি অনেক খোঁজ নিয়েছিলাম তোমাদের কিন্তু কোনো খোঁজই পাই নি। কি হয়েছিলো তোমাদের?
একে একে শুরু থেকে ড্রাইভারের কথা থেকে সব কথা রোজা শিলাকে গুছিয়ে বলতে লাগলো। আর বলতে লগলো যে রওশন কে পেয়ে ও আদিল এর কথা ভুলেই গেছে। রওশন ওর জিবনে সবটুকু দিয়ে ওকে সুখি রেখেছে।
তারপর রোজা প্রশ্ন করলো, কিন্তু শিলা আদিল এর পাগলের মতন অবস্থা কেনো? আর রিনিই বা কোথায়? কি হয়েছে আমাকে একটু খুলে বলো?
শিলা বলতে লাগলো, আজ থেকে ঠিক ২০ বছর আগের কথাঃ——
সেদিন আদিল আর রিনির গাড়ির সাথে একটি ট্রাক এক্সিডেন্ট হয়। রিনি অজ্ঞান হলেও আদিল পুরোপুরি অজ্ঞান হয়ে যায়নি সে তক্ষুনি এ্যাম্বুলেন্সে ফোন করে।
ডাক্তার আদিল আর রিনিকে আলাদা রুমে শিফট করে। আদিল এর মাথায় ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ করে দেয়। আর রিনির ও তেমন ক্ষতি হয়নি। আদিল এর জ্ঞান ফিরে আসলে নার্স তাকে খবর দেয় রিনির নাকি জমজ মেয়ে সন্তান হয়েছে।
এ কথা শুনে আদিল কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইলো কিছুই বললো না। তারপর তড়িৎ গতিতে সে বাড়ি চলে গেলো। বাড়িতে গিয়েই মা আর আমাকে রিনির মেয়েদের কথা বলেই ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বসে রইলো। এক সপ্তাহ পর হাসপাতাল থেকে যখন রিনি বাড়িতে আসলে পরের দিনই বাড়িতে আবার পুলিশ আসে। পুলিশের বক্তব্য রিনি নাকি ভাইয়ার আগে আরো অধিক ছেলের সাথে সম্পর্ক করেছে এবং তাদের টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে গেছে এবং ভাইয়ার সাথে বিয়ে করে এখানে পালিয়ে রয়েছে।
পুলিশের এই কথা শুনে মা বলতে লাগলো ভাবিকে,
ইদারা বেগমঃ ছিহঃ অলুক্ষুনে মেয়ে, লজ্জা শরম নেই বেহায়া কোথাকারের! এতো ছেলেদের সাথে তুই মেলামেশা করে আমার ছেলেটার মাথা চিবিয়ে এখানে এসে রাজরানী হয়ে বসেছিলি! তোর জন্য আমার ফুলের মতন বউমা কোথায় গেছে কিচ্ছু জানি না। দূর হ তুই! তুই জেলে গিয়ে পঁচে মর!
এই বলে ঠাস ঠাস করে কতোগুলো চড় মেরে দিলেন ইদারা বেগম। রিনি আক্রোশে বলতে লাগলো
হ্যাঁ আমি আদিলকে কোনোদিনই ভালোবাসিনি! ভালোবেসেছি শুধু ওর টাকাকে! বেশ করেছি এসব কিছু করে। আপনার ছেলেও তো ধোয়া তুলসি পাতা নয়! আমি না টাকার লোভে এসব করেছি, আপনারা কি করেছেন রোজার সাথে মনে নেই? এখন রোজার জন্য দরদ উতলে পড়ছে বুঝি? তাহলে যান না রোজার পা ধরে গিয়ে ক্ষমা চান। এখন আমার মেয়ে হয়েছে বলে বুঝি আর ভালো লাগছে না তাই না? শুনুন আপনার ওই ছেলের থেকে ঢেরগুন ভালো ছেলে আমি পটাতে পারি।
সঙ্গে সঙ্গে রিনির গালে কতোগুলো থাপ্পড় মারলো আদিল! টাল সামলাতে না পেরে রিনি ফ্লোরে পড়ে গেলো! তাও আদিল রিনিকে ওঠিয়ে পরপর চড় মেরেই যাচ্ছে। অবশেষে পুলিশ তাকে থামালো।
সত্যি আমি তোর মতো মানুষকে ঘরে এনে নিজের পায়ে নিজেই কুড়োল মেরেছি। অন্ধ হয়ে গেছিলাম আমি ছেলের আশায়! এতে অবশ্য আমার মায়েরও অবদান কিছু কম নয়।
ছেলের কথা শুনে ইদারা বেগম লজ্জায় মাথা নুইয়ে রেখেছে! সত্যি এতে তারও অবদান কিছু কম নয়।
তোর জন্য আমি রোজাকে ছেড়ে দিয়েছি। তুই তো রোজার নখেরও যোগ্য নস! রোজাকে তো আমি খুঁজে বের করবো। যদি খুঁজে নাও পাই তাহলে আমার এই মেয়েদেরকে আমি মানুষ করবো রোজার মতন করে, কোনোদিনও ওদের জানতে দেবো না যে তুই ওর মা! তোর এই মুখোস যদি আগে জানতাম কোনোদিনও ফিরেও তাকাতাম না তোর দিকে। তুই কোনেদিনও এ বাড়ির এিসীমানায় ও আসবি না ।
রিনিকে নিয়ে পুলিশ চলে গেলো। ইদারা বেগম মাটিতে বসে কাঁদছে! তার নিজের ভুলে তার ছেলের সংসার টা এমন হয়ে গেলো।
অপরদিকে আদিল রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে রইলো। পরপর চারদিন ভাইয়া রুম থেকে বেরোয়নি! মাঝে মাঝে রোজা আর মেয়েদের নাম ধরে চিৎকার করতো। কখনো ও বা আলোর খেলনা নিয়ে বসে থাকতো। কিছু মাস পরে ডাক্তার বললো ভাইয়া মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে! তাকে মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু মায়ের কথায় ভাইয়া আমাদের এখানে বাড়িতেই ছিলো।
আস্তে আস্তে ভাইয়ার পাগলামি বাড়তে থাকে। ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। রাএেবেলা বাচ্চাদের রুমে গিয়ে বসে থাকতো। ভাইয়ার এ অবস্থা মা সহ্য করতে না পেরে একদিন মরেই গেলো! মারা যাবার আগের দিন শুধু বলেছিলো কোনোদিন যদি তোমার দেখা পাই যাতে মায়ের হয়ে আমি ক্ষমাটুকু চেয়ে নিই তোমার কাছে।
______________________________________
ব্যস এভাবেই চলতে লাগলো আজ ২০ বছর। রিনির মেয়েদেরকে আমি যতোটা পেরেছি মানুষ করার চেষ্টা করেছি। ভাইয়া তো বুঝতেই পারে না যে তার আরো দুটো মেয়ে রয়েছে। আজকে দুপুরে ভাইয়াকে রুমে দিয়ে এসে দেখি ভাইয়া নেই। খুঁজতে খুঁজতে এখানে এসে পেয়ে গেলাম।
রোজা শিলাকে বলতে লাগলো,
আমার মায়ের উপর কোনো রাগ নেই। আর আদিলের উপর ও না। আদিল এর জন্যই তো আমি রওশন এর মতো একটা ভালো জিবন সঙ্গিকে পেয়েছি। তবে হ্যাঁ করুনা হচ্ছে খুব আদিল এর এই অবস্থা দেখে।
যাই হোক ভাবি তুমি বলো আলো আর মিষ্টি কোথায়? ওদের খবর কি?
আলো পড়াশোনায় ভালো রেজাল্ট করে বিদেশে গিয়েছিলো পড়াশোনা করতে ব্যস ওখানে জব পেয়ে যায়। আর ওখানেই রওশন এর বন্ধুর ছেলের সাথে বিয়ে করে সেটেল সেটেল্ড হয়ে যায়। এখন আর দু বছর পর একেবারে চলে আসবে। আর মিষ্টি তো পড়াশোনা শেষ করে কলেজে চাকরি করছে আলো ফিরলে তখন মিষ্টির বিয়ে দিবো। আমার দু মেয়েই আমি যেমন চেয়েছি ঠিক তেমন করেই মানুষ হয়েছে।
শিলাঃ- হ্যাঁ ভাবি আমিও চাই ওরা সুখে থাকুক। শুধুমাএ ভাইয়া আর মায়ের মুর্খামির জন্য ওরা আজ আমাদের থেকে দূরে।
রোজাঃ- তা শিলা তুমি বলো তোমার খোঁজ খবর কি?
শিলাঃ- ভাবি মায়ের মৃত্যুর পর আমার বিয়ে হয়। হাজবেন্ড সরকারি জব করে আর আমার একটা ছেলেই আছে। ছেলে আর ভাইয়াকে দেখেই আমার সারাদিন কেটে যায়।
রোজাঃ- সুখে থাকো শিলা। জীবন যেখানে যেমন। আদিল এর ভুলের জন্যই ওর এই অবস্থা। আমিও চায়নি আদিলকে ছেড়ে থাকতে। সবটাই হয়েছে আদিল এর কারনে। এখন তুমি আদিলকে একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দাও এভাবে তুমি আর কতোদিন দেখবে বলো? এর চেয়ে ভালো হাসপাতালে ওর চিকিৎসা চলবে। আর রিনি কি ফিরে আসে নি?
শিলাঃ- ফিরে এসেছিলো, তবে যখনি দেখলো ভাইয়ার এই অবস্থা তখনি কোথায় চলে গেলো ক জানে? আর ফিরে আসেনি। তবে তুমি যাও এবার আমাকে আলো আর মিষ্টির নাম্বার দিও আমি ওদের সাথে কথা বলে নিবো। তুমি ভালো থেকো। আজ আসছি ভাইয়াকে নিয়ে।
রোজাঃ- ঠিকআছে ভালো থেকো তুমিও । আর একটু দাড়াও আমি আদিল এর সাথে একটু বলি!
রোজার একটু হলেও কষ্ট লাগছে কারন আদিল এর সাথে বারোটা বছর সংসার করেছে। রোজা গিয়ে আদিল এর সামনে দাড়াতেই আদিল বললো,
রোজা, রোজা, রোজা, তুমি রোজা না? আমি চিনেছি তোমাকে। কি মজা, কি মজা রোজা ফিরে এসেছে।
এই বলে আদিল হাততালি দিতে লাগলো। আবার বললো,
রোজা আমার মেয়েরা কই?
আদিল তোমার বড়ো মেয়ে বিদেশে চাকরি করছে ওখানেই বিয়ে করেছে। আর তোমার ছোটো মেয়ে কলেজে চাকরি করছে। দেখেছো আমার মেয়েরাই আমার ছেলে হয়ে ওঠেছে।
আদিল আবারো হাততালি দিতে লাগলো। এবার কেঁদে ওঠলো! রোজার পায় ধরে ক্ষমা চাইলো। আমার মেয়েদরকে একটু দেখাবে রোজা। আমি ভুল করেছি ওদের বলো একটু ক্ষমা করে দিতে আমায়।
এই বলে আদিল আবারো কাঁদতে লাগলো।
আদিলকে কাঁদতে দেখে রোজারও খারাপ লাগলো। রোজা বললো মেয়েরা আসবে তোমার সাথে দেখা করতে আদিল। ততক্ষণে তুমি সুস্থ হয়ে ওঠো। আর সুস্থ হয়ে ওঠতে হলে তো তোমাকে হাসপাতালে যেতে হবে তাই তুমি আগে হাসপাতালে গিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠবে তারপর আলো আর মিষ্টি আসবে তোমার কাছে।
কি মজা! তুমি যখন বলেছো তখন আমি হাস্পাতালে যাবো। তাহলেই তো আমার মেয়েরা আসবে। এই শিলা তাড়াতাড়ি চল? নাহলে ওরা আর আসবে না!
এই বলে আদিল শিলার সাথে চলে গেলো। ওদিকে রোজা তাকিয়ে দেখছে আদিল এর নিষ্ঠুর পরিনতি! আদিল তার কর্মফল ভোগ করছে।
রওশন এসে রোজাকে বাড়িতে নিয়ে গেলো। আবার আগের মতন সে তার রোজাকে নিয়ে সুখে জিবন কাটাতে লাগলো।
#সমাপ্ত।