নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব-০১

— যেভাবেই হোক আমার ওই মেয়েকে চাই। ডু ইউ গেট দ্যাট। যে কোন মূল্যেই আমার ওই মেয়েকে চাই হয়তো জীবিত নয়তো মৃত।

মাত্রাতিরিক্ত ক্ষোভ আর রাগ নিয়ে ফোনের ওপর পাশে থাকা ব্যাক্তিকে উপরিউক্ত কথাটা বলে উঠলো আব্রাহাম। মাত্রার বাইরে চলে গিয়েছে রাগ। তবে কথা টা শেষ হতে না হতেই তীব্র বেগে কেউ একজন ছুটে এসে আব্রাহাম কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে একদম আষ্টেপৃষ্টে। হুট করে এমন হওয়াতে আব্রাহাম বেশ অবাকই হয়। সে কোন রকমে ঘুড়ে দেখে একটা মেয়ে একেবারে ভয়ে শেষ। তার সামনে ঘুড়তেই এবার যেনো মেয়েটা আব্রাহামের বুকে ঝাপিয়ে পরে। দুইহাতে আব্রাহামের জেকেট টা খামছে ধরে। আব্রাহাম বুঝলো যে সে রীতিমতো কাপাকাপি শুরু করে দিয়েছে। আব্রাহাম তার হাত দুটো খানিক ওপরে তুলে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। আর মেয়েটা তার চোখ-মুখ খিচে বন্ধ করে আছে।

— প প্ল প্লিজ আম আমাকে বাঁচান। একটু সাহায্য করুন প্লিজ নয়তো, নয়তো ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। প্লিজ আ আমাকে এ একটু হ হেল্প করুন।

বেশ আকুতির স্বরেই মেয়েটা আব্রাহাম কে এই কথা টা বলে ওঠে। মেয়েটার গরম নিঃশ্বাস সব আব্রাহামের বুকের ওপর আছড়ে পরছে। আব্রাহাম এবার খেয়াল করে দেখে যে মেয়েটা পরণে একটা সাদা গোল জামা রয়েছে, যাতে ছোপ ছোপ রক্ত লেগে আছে। হাতের বেশ অংশ কেটেছে। এটা ব্যাসিক্যালি একটা হাইওয়ে রোড আর বেশ নীরব-শুনশান। এখানে এতো রাতে কারো থাকার কথা না। কিন্তু এখানে একটা মেয়ে এই অবস্থায়। ব্যাপার টা বেশি একটা সুবিধের না অবশ্যই। আব্রাহাম কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই বেশকিছু লোক দ্রুত পায়ে দৌড়িয়ে এদিকে এগিয়ে আসে। হাতে তাদের ছুরি। আব্রাহাম তাদের দেখে, তার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে আসলে কি হয়েছে। লোকগুলো হন্নে হয়ে আশেপাশে মেয়েটাকে খুঁজে যাচ্ছে। তাদের দেখতেই আব্রাহাম মেয়েটাকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে দ্রুত ওপর পাশে ঘুড়ে যায়। এমনভাবে মেয়েটাকে নিজের বুকে ধরে রাখে যেনো বুঝায় যাচ্ছে না। যদিও লোকগুলো আরো একটু সামনে এগোলে তাদের দেখতে পায়। লোকগুলো ভেবেছে যে তারা কাপল তাই সেদিকে আর যায় না। সেখানে আরো কিছুক্ষন খোঁজাখুঁজি করে তারপর তারা সেখান থেকে চলে যায়। তাদের চলে যেতেই আব্রাহাম মেয়েটাকে নিজের বুক থেকে কিছুটা আলগা করে ধরে। কোন নড়াচড়া নেই তার এখন। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। আব্রাহাম তার হাত দিয়ে মেয়েটির মুখের ওপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে দেয়। এখন মেয়েটার মুখটা একেবারে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মেইন রোডের ল্যাম্পপোস্টের আলো সম্পূর্ণই যেনো তার মুখে ছড়িয়ে পরেছে। মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে পরেছে। কপালের পাশেও ক্ষত রয়েছে। কাধে রয়েছে একটা ছোট্ট ব্যাগ। আব্রাহাম এতো রাতে আর কোন উপায় না পেয়ে মেয়েটাকে পাজাকোলে তুলে নিলো। তারপর নিজের গাড়িতে বসিয়ে দেয়। আব্রাহাম নিজের জেকেট টা খুলে পেছনের সীটে রেখে দেয়। তারপর নিজেও গাড়িয়ে ওঠে বসে। গাড়ি স্টার্ট দেয়। দেখতে দেখতে একটা সময় গাড়ি এসে থামে আলিশান এক বাড়ির সামনে। চারিপাশে অনেক গার্ড”স। আব্রাহামের গাড়ি আসতে দেখেই গার্ড রা দুই পাশ থেকে মেইন গেট খুলে দেয়। আব্রাহাম গাড়ি নিয়ে সোজা ভেতরে ঢুকে পরে। গাড়ি থেকে প্রথমে নিজে নামে। তারপর ওপর পাশে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে সেই মেয়েটাকে আবার পাজাকোলে তুলে নেয়। গাড়ির ভেতর থেকে মেয়েকে বের করতে দেখে একজন গার্ড হা করে তাকিয়ে থাকে। কেননা আব্রাহাম আজ অব্দি তার সাথে কোন মেয়েকে এই বাড়িতে নিয়ে আসে নি। আব্রাহাম তা খেয়াল করে গার্ড টার দিকে নিজের অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। গার্ড মাথা নামিয়ে চলে যায়। আর আব্রাহাম মেয়েটাকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে এসে পরে। বাড়ির ভেতরে যেতেই হলরুমে আব্রাহামের দাদি ইলা বেগম সহ আরো স্টাফ রা ছিলো। তাদের সবাইকেই এড়িয়ে আব্রাহাম মেয়েটাকে নিয়ে সোজা নিজের বেডরুমে চলে যায়। আর সবাই চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম গিয়ে মেয়েটাকে আলতো করে শুইয়ে দেয়। তার পায়ের দিকে চোখ যেতেই আব্রাহাম দেখে যে পায়ের ওপরেও বেশ কিছু অংশ কেটে গেছে। তা দেখে আব্রাহাম মুখ কুচকায়। অর্থাৎ যে কিনা একটা মানুষ কে নির্মমভাবে খুন করতেও দ্বিতীয় বার ভাবে না সে কিনা এখন এই সামান্য ক্ষত দেখে এখন মুখ কুচকাচ্ছে। আব্রাহাম দাঁড়িয়ে ছিলো তখনই রুমে তার দাদি ইলা আসে।

ইলা;; আব্রাহাম!

আব্রাহাম;; হুমমম

ইলা;; মেয়েটা কে রে?

আব্রাহাম;; জানি না।

ইলা;; জানিস না মানে? চিনিস না জানিস না একটা মেয়েকে এভাবে বাসায় নিয়ে এলি?

আব্রাহাম;; দাদি তুমি…….

ইলা;; এমা একি অবস্থা রে মেয়েটা তো অনেক ব্যাথা পেয়েছে। আচ্ছা আমি সব দেখছি।

এই বলেই ইলা চলে গেলো। আর আব্রাহাম সেখানেই থেকে যায়। দুইহাত ভাজ করে একমনে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। মুখটা মলিন হয়ে আছে কিন্তু তবুও যেনো তাতে একরাশ মায়াভরা। কালো ঘন চুল গুলো ছড়িয়ে রয়েছে,, স্নিগ্ধ মুখ। চোখের বড়ো বড়ো পাপড়ি। কপালের ক্ষত স্থান টা কেটে জমাট বেধে এখন খয়েরী বর্ণ ধারণ করেছে। ঠোঁট জোড়া লাল+কালোর সংমিশ্রণ হয়ে আছে। আব্রাহাম খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো মেয়েটাকে। এর আগে সে কখনো কোন মেয়েকে এতো টা লক্ষ্য করে নি। কিন্তু মেয়েটা এতো রাতে হাইওয়ে রোডে কি করছিলো? আর ওই লোকগুলোই বা কেনো তাকে ধাওয়া করছিলো? এই প্রশ্নই এখন মাথায় এসে বারি খাচ্ছে। আব্রাহাম এগুলোই ভাবছিলো তখনই ইলা আসে তার সাথে এখন একটা মেয়ে স্টাফও রয়েছে। ইলার হাতে ড্রেসিং এর সব জিনিসপত্র। আব্রাহাম সেখান থেকে চলে আসতে নিবে তখনই মেয়েটার ব্যাগের দিকে তার চোখ যায়। আব্রাহাম ব্যাগ টা হাতে করে নিয়ে অন্য রুমে চলে যায়। আর ইলা এদিক টা সামলায়। আব্রাহাম অন্য পাশের রুমে চলে যায়, আজ হয়তো তাকে এখানেই থাকতে হবে। হাত থেকে মেয়েটার ব্যাগটা রাখতে যাবে তখনই ব্যাগের ভেতর থেকে কিছু একটা নিচে পরে যায়। সে তা তুলে হাতে নিয়ে দেখে, আর তার সাথে বেশ অবাকও হয়। এটা একটা আইডি কার্ড। আইডি কার্ডে ওই মেয়েটার সব ডিটেইলস দেওয়া।এটা কি করে সম্ভব! মেয়েটার নাম “নুজাইফা বিনতে আইরাত” প্রফেশন “রিপোর্টার”। আব্রাহাম তা দেখে কপাল কুচকায়। এটাকে সে শুধু মাত্রই একটা কাকতালীয় ব্যাপার ধরবে নাকি অন্য কিছু তা বুঝে না। কারণ আব্রাহাম পাগলের মতো করে যেই মেয়েটাকে খুঁজে যাচ্ছিলো সে আর কেউ না এই মেয়েটাই আইরাত। তবে আব্রাহাম তার নাম শুনেছে এর আগে কখনো তাকে দেখি নি। আর এখন সবটা যখন নিজের সামনে এলো তখন আব্রাহাম সত্যি বেশ অবাক। আব্রাহাম সিঙ্গেল একটা সোফাতে বসে পরে। শার্টের ওপরের কয়েক বোতাম খুলে দেয়। হাতে এখনো রয়েছে আইরাতের আইডি কার্ড। তাই দেখছে আব্রাহাম। যাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলো না সে কিনা আজ নিজে থেকেই এসে ধরা দিলো। তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে আব্রাহাম। পাশে থেকে এলকোহলের গ্লাস টা নিয়ে কয়েক পেগ মেরে দেয়। এভাবেই বেশ কিছুক্ষণ সময় পার হয়ে যায়। হঠাৎ ইলা এসে আব্রাহাম কে ডাক দেয়।

ইলা;; আব্রাহাম!

আব্রাহাম;; হ্যাঁ দাদি

আব্রাহাম উঠে এগিয়ে যায় তার দিকে।

ইলা;; আচ্ছা মেয়েটা কে তা কি এখন বলবি তুই?

আব্রাহাম;; আসলে দাদি আমারই পরিচিত একজন।

ইলা;; সত্যি?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ।

ইলা;; মেয়েটা হাতে-পায়ে বেশ ব্যাথা পেয়েছে। আমি নিজেই সব করে দিলাম। বড্ড মায়া হলো আমার। জানিস মেয়েটা পুরোই হীরের টুকরো। অনেক সুন্দর।

আব্রাহাম;; হুম।

ইলা;; মেয়েটা তোর রুমেই রয়েছে বুঝলি। আমি যাই এখন কিছু লাগলে আমাকে বলিস।

আব্রাহাম;; আচ্ছা বুঝলাম এখন তুমি যাও।

ইলা চলে গেলে আব্রাহাম রুমের দরজার সাথে কিছুটা হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। আব্রাহাম এখন যেই রুমে আছে সেই রুম থেকে তার বেডরুম টা দেখা যায়। সেদিকেই তাকিয়ে আছে আব্রাহাম। সেখানেই আইরাত রয়েছে। কিছুক্ষন সেদিকে তাকিয়ে থেকে আব্রাহাম এসে পরে।


{উনি আর কেউ না “আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী”। তবে তার এই নামের আগে একটা ট্যাইটেল না যুক্ত করলেই নয় ‘মাফিয়া-গ্যাংস্টার’। আব্রাহাম কে মাফিয়ার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে ধরা হয়। এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে যারা আব্রাহাম চৌধুরী কে চিনে-জানে না। আমেরিকা কে বিশ্বে সবথেকে প্রভাবশালী রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর এই আমেরিকান আন্ডারগ্রাউন্ড বর্তমানে তার আন্ডারেই। সবাই বলে আব্রাহাম বেশ ইগোস্টিক & এটিটিউড ওয়ালা। আপন বলতে শুধু নিজের দাদি রয়েছে। যাকে নিয়েই আব্রাহামের পুরো দুনিয়া। তবে ফরেইন কান্ট্রি তে আব্রাহামের থাকা টা তেমন পছন্দের না। নিজের দেশেই থাকতে তার ভালো লাগে। আর এছাড়াও দেশে নিজের বয়স্ক দাদিকে রেখে বাইরে একা থাকা তো আর সম্ভব না তাই। তবে আব্রাহাম দেশে নিজের যোগ্যতা-দক্ষতায় বিজন্যাস গড়ে তোলেছে। আর আব্রাহামের বিজন্যাসের সাইড টা এতোটাই স্ট্রোং যে প্রতি বছর বিজন্যাস টাইকুন নিঃসন্দেহে আব্রাহামই হয়। সৌন্দর্যের নিয়মের বাইরে রয়েছে আব্রাহাম। ছেলেরাও যে এত্তো পরিমাণে সুদর্শন হয় তা আব্রাহাম কে না দেখলে হয়তো বোঝার কোন উপায়ই ছিলো না। আব্রাহামের পারসোনালিটি এক কথায় অসাধারণ। যে কেউ প্রেমে পরতে বাধ্য। অত্যাধিক স্মার্ট হওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত নানা ধরনের অফার এসেই থাকে তার কাছে কিন্তু সেগুলোতে দেওয়ার মতো আর সময় কই তার। তবে যে যেমন তার সাথে আব্রাহাম তেমন। জেদ-রাগ নাকের ডগায় বাস করে}


{আর ওই মেয়েটা হচ্ছে “নুজাইফা বিনতে আইরাত”। সে পেশায় রিপোর্টার। নিত্যনতুন রিপোর্ট করাই তার কাজ। বাসায় নিজের মা রয়েছে। মায়ের আদরের দুলালি সে৷ বাবা ছিলেন, তবে অনেক বছর আগেই গত হয়েছেন। তিনি পুলিশ অফিসার ছিলেন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। আইরাত মেয়ে হিসেবে মাশআল্লাহ। খুব মিষ্টি একটা মেয়ে। মুখভরা মায়া রয়েছে। সে কারো চোখে পরলে আবার তার নজর তুলে আইরাতের দিকে দ্বিতীয় বার তাকাতে বাধ্য। মনে যেনো আচড় কাটে এমন। আইরাত স্বভাবতই চঞ্চল মেয়ে। এক জায়গায় চুপ করে বসে থাকার মতো মেয়ে সে মোটেও না। এতো বর্ণনা না করে আইরাত কে এক কথায় বলা যায় সুন্দরী ❤️}


আর আব্রাহামের এতো হন্ন হয়ে আইরাত কে খোঁজার কারণ হচ্ছে একটা ভুয়া খবর। আইরাত যেহেতু রিপোর্টার তাই নানাবিধ নিউজই সে করে। আর এক্ষেত্রে আইরাত আব্রাহাম কে নিয়ে নিউজ করেছে যে আব্রাহাম মেয়ে পাচারকারী দের সাথে জড়িত আছে। দেশে বেশ কয়েকদিন যাবতই গার্ল”স & চাইল্ড ট্রাফিকিং এর কেস চলছে। বড়ো বড়ো অফিসার রাও যেনো নাকানি চোবানি খাচ্ছে তাদের ধরার জন্য। আর দিন কে দিন এই নিউজ টাই যেনো নিউজপেপারের তুঙ্গে রয়েছে। তাই সেই জন্যই রিপোর্ট করা। এক্ষেত্রে আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরীর নাম আসে। আইরাত অনেক নাম-ডাক শুনেছে এই ব্যাক্তির। আর যেহেতু সে একজন মাফিয়া তাই তার জন্য এই সব ট্রাফিকিং এর কাজ কোন বড়ো ব্যাপার না। আর ভেজাল টা তখন হয় যখন আইরাত কে একজন আব্রাহামের ব্যাপারে ভুল ইনফরমেশন দেয়। আর তখন সবদিকের প্রেসার এতো টাই বেশি ছিলো যে আইরাত কি করবে আর কি করবে না তা বুঝে আসে না। আর আব্রাহামের প্রতি তার সন্দেহ’র কাটা টা কিছুটা ঘুড়ে যায় বিধায় আইরাত এইসব মেয়ে পাচারকারী দের খাতায় আব্রাহামের নাম উল্লেখ করে। অর্থাৎ তার নামে ভুয়া রিপোর্ট। আব্রাহাম এইসব খবর টিভি আর ম্যাগাজিন থেকে জানতে পারে। আর এগুলো শুনেই তো আব্রাহামের মাথায় ধুপ করে আগুন জ্বলে ওঠে। যার দরুন আব্রাহামের সাথে বেশ কিছু হাই স্ট্যান্ডার্ড মানুষের রেশারেশিও হয়। আব্রাহাম রিপোর্টারের নামের জায়গায় আইরাতের নাম দেখে তবে সেখানে তার কোন ছবি ছিলো না। ব্যাস সেদিন থেকেই আব্রাহাম আইরাত কে খোঁজা শুরু করে দেয়। আব্রাহাম জীবনে কোন মেয়ের দিকে আঙুল তুলে নি। কিন্তু এইবার ব্যাপার টা এতো টাই বেশি সিরিয়াস যে সে সোজা আইরাত কে মেরে ফেলার কথাই ভেবেছিলো। ফোনে নিজের গার্ড রাশেদ কেই আব্রাহাম ওই কথাটা বলেছিলো। আর তারপরে এইসব কাহীনি হয়।


পরেরদিন সকালে⛅~

সূর্যের তীর্যক রোদ চোখের ওপর আছড়ে পরলে চোখ-মুখ সব কুচকে ফেলে আইরাত। আলতো ভাবে নিজের চোখ দুটো মেলে। মাথা টা বেশ ভারি ভারি লাগছে। মাথার এক পাশে হাত দিয়ে কপাল কুচকে উঠে বসে। এবার সম্পূর্ণ চোখ মেলে নিজের আশেপাশে তাকায়। খেয়াল করে বিশাল একটা রুমে বড়ো এক বেডে বসে আছে সে। সারাটা রুম ধবধবে সাদা। এক পাশে বড়ো থাই গ্লাস আরেক পাশে অনেক বড়ো করিডর। রুমের সবকিছু সাদার মাঝে কিছু কিছু জিনিস কালো আর ধূসর বর্ণের, যা বেশ ফুটে ওঠেছে। বুঝলো যে এখানে থাকে সে বেশ শৌখিন প্রকৃতির একজন মানুষ। আইরাত দেখে তার পায়ে হালকাভাবে ব্যান্ডেজ করা। মাথাতেও ব্যান্ডেজ রয়েছে এক পাশে। আস্তে করে উঠে পরে আইরাত। উঠে গিয়ে থাই গ্লাস টা সরিয়ে দেয়। বাইরে থেকে পাখিদের কিচিরমিচির কিছু শব্দ আসছে। আইরাত বড়ো বড়ো পর্দা গুলো মেলে দাঁড়ায়। মৃদু বাতাস বইছে। আইরাতের বেশ ভালো লাগলো আবহাওয়া টা। মুখে তার ফুটে ওঠে এক চিলতে হাসি। আইরাত এভাবেই বাইরের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো তখনই নিজের পেছন থেকে কারো ডাকে চমকে ওঠে….

আব্রাহাম;; নুজাইফা বিনতে আইরাত!

আইরাত পেছনে তাকিয়ে দেখে বেশ লম্বাচওড়া বডিবিল্ডার ওয়ালা একজন দাঁড়িয়ে আছে। সে আর কেউ না আব্রাহাম। একে নিয়েই তো আইরাত নিউজ লিখেছিলো। আব্রাহাম কে খেয়াল করে সে। সাদা রঙের টাওজার আর এশ কালারের একটা টি-শার্ট পরে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বাইরের থেকে আসা হালকা বাতাসে তার মাথার চুলগুলো ঢেউ খাচ্ছে। গাল ভর্তি চাপদাড়ি। এক হাত পকেটে গুজে দিয়ে আরেক হাতে আইরাতের ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাতের তার ব্যাগ টা চোখে পরে। তাতে তার ফোন, আইডিসহ আরো নানা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আছে। আর কাল রাতের সব ঘটনা গুলো এক এক করে মনে পরে আইরাতের। তবে আবার আব্রাহামের দিকে তাকাতেই চুপসে যায়। আব্রাহাম হুট করেই কয়েক কদম আইরাতের দিকে এগিয়ে আসে। আইরাত কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। আব্রাহাম এবার তার হাতে থাকা ব্যাগ টা ওপরে তুলে। আর আইরাত কিছুটা কেড়েই নিয়ে নেয় ব্যাগটা। নিয়ে ভেতরে এক এক করে সব জিনিস চেক করতে লাগে। সব ঠিকঠাক আছে কিনা তা দেখছে। আব্রাহাম সোফাতে বসে পরে। আইরাতকেই সে দেখছে। সব ঠিক আছে দেখে আইরাত এক স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।

আব্রাহাম;; কাল রাতে কি হয়েছিলো তোমার? আর এতো ক্ষত হলো কীভাবে?

আইরাত;; ________________________

আব্রাহাম;; বলো..

আইরাত;; না মানে..

আব্রাহাম;; আমাকে চেনো?

আইরাত তার মাথা ওপর-নিচ করে অর্থাৎ হ্যাঁ সে চিনে।

আব্রাহাম;; এখন ঠিক আছো?

আইরাত;; হুমম।

আব্রাহাম;; কাল রাতে….

আইরাত;; আসলে আমি রিপোর্টার, আর এখনকার মেইন টপিক কি তা তো জানেনই। এক এক জনের মুখে এক এক ধরনের কথা। তাই ভাবলাম নিজের সব বের করবো খুঁজে। এরজন্য গিয়েছিলাম কিন্তু হঠাৎ করেই ট্রাফিকিং এর লোকগুলোর মাঝখান থেকে একজন আমাকে দেখে ফেলে। আর আপনি তো ভালোই জানেন যে তাদের এইসব কুকীর্তি কেউ একবার দেখে ফেললে তারা আর তাকে বাঁচিয়ে রাখে না। তাই আমাকেও মারার জন্য ধাওয়া করেছে।

আব্রাহাম;; বুঝলাম, তবে একজন রিপোর্টারের এটাও কাজ যে কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা তা খুঁজে বের করা।

আইরাত এবার তার ফর্মে আসে। চঞ্চলমূখর স্বরে বলে ওঠে….

আইরাত;; হ্যাঁ জানি, কিন্তু সিচুয়েশন টাই এমন ছিলো। আর র‍্যালি ভেরি সরি আমি বুঝতে পেরেছি যে আপনি এসবকিছুর মাঝে নেই। ইন ফ্যাক্ট ধারে কাছেও নেই আপনি। আমি অযথা আপনাকে এর মাঝে টেনে এনেছি। তবে চিন্তা করবেন না আপনার নামের ওপর থেকে এই নিউজ টা আই মিন এই ফেইক নিউজ টা একদম মুছে যাবে।

আব্রাহাম;; অবশ্যই মুছাতে তো তোমাকেই হবে। কারণ তুমিই সব রটিয়েছো।

আইরাত;; হুমমমম।

আব্রাহাম;; আচ্ছা আমি ভাবছি যে তোমার নিউজ টা সত্যি করে দেই!

আইরাত;; মানে?

আব্রাহাম তার হাতে একটা গ্লোব ঘোড়াতে ঘোড়াতে বলে….

আব্রাহাম;; মানে এই যে আমার ওপর তো দোষারোপ আছে যে মেয়েপাচার করি আমি। তো এখন ঠিক পাচার না করলেও আটকে রাখতে বড্ড মন চাইছে।

আব্রাহামের কথায় আইরাতের টনক নড়ে। আব্রাহাম গ্লোব ঘোড়ানো হুট করেই বন্ধ করে দিয়ে আইরাতের দিকে এক ভ্রু উঁচু করে তাকায়।

আব্রাহাম;; ভাবছি যে যেই রিপোর্টার আমার নামে এতো বড়ো একটা নিউজ ছড়ালো তাকেই বন্দী করে নিজের কাছে রেখে দেই অর্থাৎ তুমি।

আইরাত কপাল কুচকে ফেলে। আব্রাহাম সোজা হয়ে বসে বলে…

আব্রাহাম;; বাই দি ওয়ে আমিও কিন্তু তোমাকে মেরে ফেলার জন্যই খুঁজছিলাম।

আইরাত;; কি?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ, রাগ এতো টাই আউট অফ কোন্ট্রল চলে গিয়েছিলো যে তোমাকে আমি খুন করার জন্যই খুঁজছিলাম।

আইরাত;; সত্যিই আ”ম সরি। আর হ্যাঁ সাথে অনেক গুলো থাংকু, কাল আপনি না থাকলে এতোক্ষণে আমি শেষ। কাল রাতে আমাকে বাঁচানোর জন্য থাংকু আর আ………

আব্রাহাম;; কাল রাতে জড়িয়ে ধরেছিলে তুমি আমায়।

আব্রাহামের এমন কথায় আইরাত থতমত খেয়ে যায়। কি বলবে বুঝে না।

আইরাত;; সরি, আসলে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তো তাই (আমতা আমতা করে)

আইরাত মাথা নিচু করে ছিলো। আব্রাহাম হুট করেই উঠে এসে আইরাতের কাছে চলে যায়। আইরাত মাথা তুলে তাকায়। নিজের সামনে আব্রাহাম কে এতোটা কাছে দেখে আইরাত চমকে গিয়ে পেছনে কিছুটা হেলে পরে। আব্রাহাম আইরাতের দুপাশে বেডের ওপর নিজের হাত রেখে দেয়। দুহাতের ওপর ভর দিয়ে আইরাতের দিকে বেশ ঝুকে পরে। এই মূহুর্তে সে আইরাতের বেশ কাছে রয়েছে। এক ঘোর লাগা নয়নে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আর আইরাত আব্রাহামের চোকের দিকে তাকিয়ে থাকতে না পেরে চোখজোড়া দ্রুত নামিয়ে ফেলে। কিছুক্ষন পর আব্রাহাম বলে ওঠে…….

আব্রাহাম;; এই ভয়টা তোমার মুখে বড্ড বেশিই মানায়।

আইরাত চোখ তুলে তাকায়। এই বলেই আব্রাহাম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পরে। আর আইরাত বুক ভরে দম ছাড়ে।

আইরাত;; কি অসভ্য রে বাবা, এখানে কি হীরের খনি বের হয়েছে নাকি এভাবে দেখার কি আছে! (ফিসফিস করে)

আব্রাহাম;; হ্যাঁ তাই, আমার দাদি তোমাকে কাল হীরের টুকরো বলেই সম্মোধন করেছে।

আইরাত;; এই রে শুনে ফেলেছে।

আইরাত বসে থাকে তার সামনে আব্রাহাম বসে আছে। আব্রাহামের এই নজর যেনো তাকে প্রতিনিয়ত অস্বস্তি তে ফেলছে। হঠাৎ আইরাত তার ব্যাগ টা নিয়ে নিজের ফোন চেক করে। বাড়ি যাওয়া হয় নি, তার মাকে ফোন করেও বলা হয় নি। না জানি চিন্তা করতে করতে তার কি হাল। আইরাত তার ফোন টা অন করে আর অন করতেই দেখে ১০০+ মিস”ড কল আর ৭৫+ মেসেজ। যা দেখে আইরাতের চোখ কপালে। সব তার মা করেছে। আইরাতকে এমন দেখে আব্রাহাম বলে….

আব্রাহাম;; Hay girl, is everything ok?

আইরাত;; না, আমার মা অনেক ফোন করেছে কিন্তু আমি ধরি নি। এখন নিশ্চয়ই অনেক চিন্তা করছে।

ইলা;; তো চিন্তা করবে না, এত্তো একটা মিষ্টি মেয়ে রাতের বেলা বাইরে থাকলে এমন কোন মা আছে যে চিন্তা না করে থাকতে পারে!!

আইরাত তাকিয়ে দেখে দরজার সামনে হাতে খাবারের ট্রে নিয়ে একজন বয়স্ক মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত বুঝলো যে এই হয়তো আব্রাহামের দাদি। ইলা রুমের ভেতরে এগিয়ে আসে। হাত থেকে ট্রে টা টেবিলের ওপর রেখে আইরাতের পাশে গিয়ে বসে।

ইলা;; নাম কি গো তোমার?

আইরাত;; জ্বি আইরাত।

ইলা;; বাহ, তোমার মতো তোমার নাম টাও বেশ মিষ্টি তো।

বিনিময়ে আইরাত মুচকি হাসে।

ইলা;; আচ্ছা এতো ব্যাথা পেলে কি করে?

আইরাত;; না মানে ইয়ে আসলে আমি….

ইলা;; আচ্ছা যাজ্ঞে, আব্রাহাম নিয়ে এসেছে কাল রাতে এখানে তোমাকে। আর তোমার সব আমিই করে দিয়েছি। আর তুমি তো আব্রাহামের বেশ চেনা পরিচিত একজন তাই এখন থেকে প্রায়ই এখানে এসো কিন্ত।

ইলার কথায় আইরাত এক নজর আব্রাহামের দিকে তাকায়। চেনা পরিচিত তাও আবার আব্রাহামের!

ইলা;; আচ্ছা ওসব বাদ এবার নাস্তা করে নাও।

আইরাত;; না না দাদু, আসলে এখন আমায় বাসায় যেতে হবে। বাড়ি যায় নি তো কাল তাই। মা চিন্তায় হয়তো পাগলই হলো। এখন আমাকে যত দ্রুত সম্ভব বাসায় যেতে হবে।

ইলা;; হ্যাঁ আমিও ব্যাপার টা বুঝলাম। কি আর করার আচ্ছা যাও তাহলে, আমিও আর জোর করবো না। তবে সাবধানে যেও, আর ভালো থেকো। এসো কিন্তু আবার।

ইলা আইরাতের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসে পরে। আইরাত এবার উঠে দাঁড়ায়।

আব্রাহাম;; আমার ড্রাইভার আছে সে তোমাকে দিয়ে আসবে।

আইরাত;; না না থাক আমি একাই……..

আব্রাহাম;; বেশি কথা আমি মোটেও পছন্দ করি না।

আব্রাহাম এমন ভাবে আইরাতের দিকে তাকিয়ে কথা টা বললো যে আইরাতের বলতি বান্ধ। আব্রাহামের শীতল চাহনিতেও কেমন যেনো একটা ভয় ছিলো। আব্রাহাম আর আইরাত নিচে চলে যায়। আইরাত গাড়িতে উঠে পরে। গাড়ির উইন্ড-এর দিকে হালকা ঝুলে আব্রাহাম বলে ওঠে….

আব্রাহাম;; এই চেহারা টা চেনা থাকলো, এখন তো সহজে আর ভুলাই যাবে না।

আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে থাকে। আব্রাহামের কথায় কেমন একটা নেশা কাজ করে। যেনো কন্ঠস্বরে নেশা মিশিয়ে আছে। তারা একে ওপরের দিকে তাকিয়ে ছিলো তার মাঝেই ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়। আইরাত চলে যায়। আব্রাহাম আইরাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর এসেও পরে। আর আইরাত নখ খামড়াচ্ছে টেনশনে না জানি বাসায় গেলে কি হয়!





চলবে~~

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#সূচনা পর্ব

{

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here