#অপেক্ষার_শেষে
#পর্ব_১৩
#লেখিকা_কে_এ_শিমলা
আরু জিজ্ঞেস করলো- এই দুইদিন তুমি স্কুলে আসলে না কেন আরিয়ান ভাই?”
আরিয়ান প্রতিউত্তরে বললো- আমার ভালো লাগেনি তাই আসিনি!” আর…
আরু:আর কী?’
আরিয়ান উত্তর না দিয়ে বললো- তুমি কেমন আছো আরু?”
আরু: ভালো আছি। তুমি বলো আর কী?”
আরিয়ান আরে কিছু না!”
আরু এবার আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো- আরিয়ান ভাই আমি তোমাকে ভালোবাসি!”
ওর কথা শুনে আরিয়ান ওর দিকে এক পলক তাকালো! তবে কিছু বললো না।”
আরু আরিয়ানে’র এক হাত ওর হাতের মুঠোয় নিয়ে ঝাঁকিয়ে বললো- বলো তুমিও আমাকে ভালোবাসো।”
আরিয়ান বললো- হাত ছাড়ো আরু! আর তোমাকে না বলেছি এসব কথা বলবে না।”
আরু: কিন্তু আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি আরিয়ান ভাই।”
আরিয়ান: তুমি এসব কথা যদি আর কখনো আমাকে বলো তাহলে আমি আর স্কুলে আসবো না।”
আরিয়ানের কথা শুনে আরিশা হাত ছেড়ে দেয়।”
আরিয়ান এক পলক আরিশার দিকে তাকালো। খুব ইচ্ছে হল একবার আরিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে!
কিন্তু পারলো না।
কেন যেন স্কুল থেকে বাসায় যেতে মন চাচ্ছিল না আরিয়ানের।’ তবুও নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে আরিশাকে বিদায় জানিয়ে স্কুল থেকে চলে গেল। আরিশা টল’মল দৃষ্টিতে আরিয়ানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে ছিল।”
বাসায় ফিরে আসবেন এমন কিছু শুনবে ভাবতে পারেনি। জানতো তাকে মাতৃভূমি ছাড়তে হবে, পরিবারকে ছেড়ে থাকতে হবে ! কিন্তু এত তাড়াতাড়ি যে সময় চলে আসবে সে জানতো না।”
আরিয়ান বাসায় এসে জানতে পারল তার লন্ডন চলে যাবার সময় এসেছে গিয়েছে। শেষ করেই পাড়ি জমাবে ওখানে।
তারপর আরিফ আহমেদ (আরিয়ান এর বাবা)বললেন- আমি চাই তুমি একটা ভালো কলেজে ইন্টার কমপ্লিট করো! আরিয়ান।”
তাই ঢাকায় ভালো একটা কলেজে তোমার ভর্তি’র ব্যবস্থা করেছি। ওখানে হোস্টেল! আছে হোস্টেল থেকে কয়েকদিন কলেজে যেতে হবে তোমাকে।আর কয়েকদিন পর আমরা সবাই যাব ঢাকায় আফরা’র পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে।”
বাবার কথায় কিছু বলতে পারলো না আরিয়ান। তেমন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিল সে। এজন্যই স্কুল থেকে বাসায় আসতে চাচ্ছিল না আরিয়ানের মন।”
পরের দিন সকালেই আরিয়ান পাড়ি জমায় ঢাকায়। বিনা বাক্য ব্যয়ে সে বাবার কথা মতো চলে গিয়েছিল। গাড়িতে বসে ওর মন বলছিল, খুব করে একবার আরিশা কে দেখতে কিন্তু দেখা হলো না! সে জানতো না, কালকের দেখাটাই ছিল ওর আর আরিশার শেষ দেখা।”
আরিয়ান ঢাকায় যাওয়ার একদিন পর ইরিনের কাছ থেকে আরিশা জানতে পারে । সব কিছু শুনে খুব কান্না করেছিল! আর বলছিল আমার জন্যই আরিয়ান ভাই চলে গেছে ঢাকায়।
আমি যদি ঐসব কথা না বলতাম তাহলে আরিয়ান চলে যেত না।”
তারপর আরিশার এভাবে দিন কাটে! আরিয়ানও পড়ালেখায় মনোযোগ দেয়। কেটে যায় অনেক গুলো দিন। একদিন হঠাৎ করে আরিয়ানের ফোনে একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসে। তিনবার রিং হওয়ার পর আরিয়ান কল রিসিভ করে। ওপাশ থেকে মিষ্টি গলায় কেউ সালাম দেয়।”
গলার সুর শুনে আরিয়ানের বুঝতে বাকি রইলো না মানুষটা কে !”আরিশা আরিয়ানের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলল।” আরিয়ানের মন বলছিল কিছুক্ষণ কথা বলি। আরিশা বলেছিল এটা ওর মায়ের ফোন। ওকে আরিয়ানের নাম্বার দিয়েছে ইরিন! ইরফানে’র ফোন থেকে লুকিয়ে নিয়েছে।”
আরিয়ান শুধু হেসেছিল আরিশা’র কথা শুনে।”
এইভাবেই কিছু দিন যায় ওরা নিয়মিত ফোনে, মেসেজ কলের মাধ্যমে কথা বলতো। আরিয়ানে’রও মন চাইতো কথা বলতে আরিশা’র সাথে যখন তখন। কিন্তু কল করতে পারতো না। যদি আরিশার আম্মু কল রিসিভ করেন! আরিশা সুযোগ বুঝে লুকিয়ে কল করে কথা বলে আবার নাম্বার ডি’লি’ট করে দেয়।”
কিছুদিন পর আরিয়ানের মনে হলো এইভাবে কথা বলে ওদের ঠিক হচ্ছে না। আরিয়ান আরিশা কে না বলেই ওর মায়ের নাম্বার ব্ল’ক করে দেয়। বিকেলে আরিশা আরিয়ার আম্মু র ফোন দিয়ে কল করে। আরিয়ান তখন সোজাসাপ্টা বলে দেয়- আমি তোমার সাথে আর কথা বলতে পারবো না আরিশা। তুমি আমাকে আর কখনো কল করবে না। যদি করো তাহলে তোমার আম্মুর কাছে নালিশ করতে আমি বাধ্য হবো।”
আরিশা বললো- কিন্তু কেন আরিয়ান ভাই?” আমিতো এখন আর এসব কথা তোমাকে বলি না! তাহলে কেন কথা বলবে না?”
আরিয়ান বললো-এমনি! তোমার সাথে কথা বলতে আমার ভালো লাগে না। শুধু শুধু আমার সময় ন’ষ্ট হয়।”
আরিয়ানের এমন কথা শুনে আরিশা খুব কান্না করেছিল। কিন্তু তাতে আরিয়ানের মন গলেনি। সে কল কেটে নাম্বার ব্ল’ক লিস্টে ফেলে দেয়। আরিশা ও আর কল করেনি! আর কী দিয়েই বা করবে।”
আরিয়ানের ও ভালো লাগতো না আরিশার সাথে কথা না বলে। কিন্তু কী করবে হৃদয়ে যে সৃষ্টিকর্তার ভয় খুব। একটা মেয়েকে পছন্দ হতেই পারে কিন্তু তাকে নিয়ে হারাম সম্পর্কে না গিয়ে হালাল সম্পর্কে যেতে হবে। এক্ষেত্রে পরস্পর দু’জন মানুষ যদি একে অপরকে পছন্দ করে একত্রেও তাদের হারাম সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া অনুচিত। আরিয়ান ও চায় না হারাম সম্পর্কে যেতে, এতে তাদের দু’জনেরই ক্ষ’তি। আবার দু’জনে যে হালাল সম্পর্ক গড়বে সেটাও তো স’ম্ভ’ব নয়। তাই অপেক্ষা করাই সব থেকে ভালো উপায়।”
কিছু দিন পর আরিয়ান নিজকে স্বাভাবিক করে নেয়। একটা ছেলের সাথে কেন অহেতুক একটা কিশোরী মেয়ে কথা বলবে। ভালোলাগা ভালোবাসা হয়তো বয়স, সময় দেখে না। কিন্তু কিছু কিছু মানুষকে দেখতে হয়। ভু’ল পথে যাওয়া’র আগেই আরিয়ান এমনটা করলো।”
এভাবেই আরিয়ানের ইন্টার প্রথম বর্ষ শেষ হয়ে যায় আরিশা’রও অষ্টম শ্রেণী শেষ হয়ে যায়। আরিশার পরিবার সহ ঢাকায় চলে আসে নবম শ্রেণী থেকে ঢাকায় পড়ালেখা করে আরিশা এবং আরিয়া।”
আরিয়ানের ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষ শেষ! খুব ভালো রেজাল্ট হয় তার। লন্ডনে যাওয়ার দিন ঘনিয়ে আসে আরিয়ানের।”
ইরিনে’র থেকে আরিশা জানতে পারে কাল আরিয়ান লন্ডন চলে যাবে। আরিশা আবার ওর বাবার ফোন দিয়ে লুকিয়ে কল করে আকুঁতি মিনতি করে একটা বার দেখা করার জন্য। নয়তো একটা ফটো দিক একবার শুধু দেখবে। আরিয়ান বলেছিলো দেখা করবে যেহেতু আরিশাও ঢাকায়।”
কিন্তু ওরা দেখা করতে পারেনি আরিয়ানের এক বন্ধু এ’ক্সি’ডে’ন্ট করে অবস্থা বেগতিক হওয়ার কারণে ও হসপিটাল থেকে যায়। আরিশা কল করে কেঁদে কেঁদে বলেছিল! আর কখনো তোমাকে দেখতে চাইবো না আরিয়ান ভাই! আর কখনো ফোন করবো না। যেদিন তুমি নিজ থেকে এসে দেখা দিবে সেদিন মন ভরে তোমাকে দেখবো। আমার বিশ্বাস তুমিও আমাকে ভালোবাসবে! আমি তোমার জন্য সবসময় অপেক্ষা করবো। যদি ভাগ্যে থাকো তাহলে তোমাকে আমার কাছে ফিরতেই হবে। অপেক্ষা শেষে না হয় তোমাকে পাবো। কিন্তু জেনে রেখো আমার ভালোবাসা টা সত্যি কোনো আবেগ নয়! আর সেটাও আমি প্রমাণ করবো।”
আরিশা’র কথা আর কান্না ভেঁজা সুর শুনে আরিয়ানে’র চোখ থেকেও দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। পা’গ’লি’টা জানতেই পারলো না আরিয়ানও তাকে ভালোবাসে। ওর ভালো’র জন্যই তো ওসব করলো আরিয়ান। তারপর পাড়ি জমায় সুদূর লন্ডনে আরিয়ান। আর মনে মনে ভাবে আমার “মায়াপ’রী তার কথা রাখবে। আমার জন্য অপেক্ষা করবে! #অপেক্ষার_শেষেই আমরা একে অপরকে পাবো যদি ভাগ্যে থাকি।”
এভাবে আরিশার দিন কাটতে লাগলো। নিজে থেকে কীভাবে বদলে যেতে লাগে। নীরবতায় ঘিরে ধরে ওকে একা থাকি সব সময় সবার থেকে গুছিয়ে নেয় নিজেকে ইরিন আরিয়া ওকে অনেকবার বলেছিল আরিয়ানের সাথে কথা বল। দেখবি ভাইয়া হয়তো এখন তোর সাথে কথা বলবে! আর এখন তো আমরা অনেক বড় হয়ে গেছি হয়তো তোর সাথে রিলেশনও করতে পারে। তখন ওরা দশম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছিল সবে। ওদের কথা শুনে আরিশা সাফ জানিয়ে দেয় আমি একবার বলেছি ওনার সাথে আর কথা বলবো না তো বলবোই না। ইরিন বললো- তুই না আরিয়ান ভাই কে দেখতে চেয়েছিলি! ফটো দেই? ” তাও আরিশা বলেছিল না আমি দেখতে চাই না। যে যেদিন তিনি নিজে এসে দেখা দিবেন সেদিন দেখব। এভাবেই জে’দে’র বসে অভিমানে কখনো দেখেনি আরিয়ানকে আরিশা। তবে ওর মন চাই তো খুব কথা বলার জন্য রাতে আরিয়ানে’র কথা মনে পড়লে অস্ত্র গড়িয়ে পড়তো ওর গাল বেয়ে। হাজারো ভালোবাসা ! অভিমান মিশ্রিত অভিযোগ গুলো লিখে রাখতো আরিয়ানের নামে ডায়েরির পাতায় । নিজেও কথা বলতো না যোগাযোগে’র সুযোগ থাকা সত্ত্বেও, আবার আরিয়ান ও কথা বলতো না।”
চলবে!#অপেক্ষার_শেষে
#পর্ব_১৪
#লেখিকা_কে_এ_শিমলা
আরিশা নিজেও কথা বলতো না যোগাযোগে’র সুযোগ থাকা সত্ত্বেও। আবার আরিয়ানও কথা বলতো না।”
আরিশা আরিয়ান কে দেখবে না! ওর সাথে কথা বলবে না।”
সবকিছুই আরিয়ান শুনতো! লন্ডনে বসেও তাঁর মায়াপ’রি” কে একপলক দেখতো। আর তা দেখা’র মাধ্যম ছিল ইরিন।”
একবার ইরিন ইরফানে’র ফোন থেকে লুকিয়ে আরিয়ানে’র নাম্বার নিয়েছিল, সাথে কয়েকটা ফটো! আরিশা কে দেওয়ার জন্য।”
কিন্তু আরিশা না ফটো নিয়েছিল! আর না নাম্বার নিয়েছিল।”
তাই ইরিন নিজেই একবার বলেছিল আরিয়ান কে- ভাইয়া তুমিই না হয় একটু কথা বলো ওর সাথে। তাহলে হয়তো আরিশা’র জে’দ কমবে,কথা বলবে।”
কিন্তু আরিয়ানও বলে দেয়- না ইরিন এভাবে কথা বলবো না। এতে পড়ালেখা’র ক্ষ’তি হবে! ওর আব্বু, আম্মু জানতে পারলে ক’ষ্ট পাবেন।”
আমি ওর জন্য নিজেকে যোগ্য জীবন সঙ্গী হিসেবে গড়ে তুলবো।হালাল আর সম্মানের সহিত ওকে নিজের করে নেবো।”
আমাদের অপেক্ষার ফল মিষ্টি হবে ইরিন দেখে নিও।”
হালালের জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে যদি চোখে’র দু’ফোঁটা জল ঝরে তাহলে তা অধিক উত্তম! হারামে ঝড়িয়ে প্রশান্তি খোঁজার চেয়ে।”
আরিয়ানে’র এসব কথা শুনে ইরিন আর দ্বিতীয় বার কিছু বলার সাহস পায়নি।”
তবে আরিয়ান কয়েকবার ইনিয়ে বিনিময়ে বলেছিল আরিশা কে দেখতে চায় সেও। ইরিন তা বুঝতে পেরে আরিশা’র কয়েকটা ফটো আরিয়ান কে দেয়! তবে তা আরিশা, আরিয়া কেউ জানতো না। আর আরিয়ানও বারণ করেছিল না বলা’র জন্য।”
তাই আরিশা কে এতো বছর পর দেখেও সেদিন আরিয়ান চিনতে পেরেছিল। ”
আরিশা আরিয়ানের কোনো ফটো দেখেনি তবে ছোটবেলার একটা ফটো ছিল ওর কাছে। একবার আরিয়ানের ব্যাগে’র মধ্যে দেখেছিল। আরিয়ান কে বলতেই সে তা দিয়েছিল। এই ফটো টাই দেখতো যখন হঠাৎ করেই আরিয়ানে’র কথা মনে পড়তো। কান্না করতো তখন চোখে’র দেখা দেখতো কয়েক পলক।”
_______________
মুখের উপর পানি’র ছি’টা পড়তেই আরিয়ানে’র চোখ মুখ কুঁচ’কে যায়। সে পিঠ পিঠ করে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো! পানির গ্লাস হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরাফ। আরিয়ান মুখটাকে এতোটুকু বানিয়ে বললো- আরাফে’র বাচ্চা এই শীতে’র মধ্যে তুই আমার গায়ে পানি ঢে’লে দিলি।”
আরাফ হেঁসে বললো- প্রথমত আমি আরাফই আরাফে’র বাচ্চা না চোখ ঠিক কর। আর দ্বিতীয়ত আমি তোর পুরো গায়ে পানি দেইনি শুধু মুখে একটু দিয়েছি। এখন যদি মুখে দেওয়ার সাথে অল্প স্বল্প এদিক ওদিকে পড়ে যায় তাতে কী আমার দো’ষ!”
আরিয়ান অ’স’হা’য় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো- পানি দিলি কেন ডাক দিলেই তো পারতি ভাই!”
আরাফ: এই একটা না গুনে গুনে পাঁচ টা ডাক দিয়েছি। হাত দিয়েও ধা’ক্কা দিয়েছি কই উটেছিস?” রাতে কই ছিলি চুরি করতে নাকি? যে এখন ঘুম ভা’ঙ্গ’ছে না ।
তুই জানিস না আজ ইরিনে’র রিসিপশন! নয়টা বেজে গেছে অলরেডি।”
আরিয়ান আড়’মোড়া ভে’ঙে উঠে বসে বললো- আচ্ছা ভালো করছিস কিন্তু পানি না দিলেও পারতি।”
আরাফ বললো- হো পানি দেওয়া ভু’ল হইছে কানে’র কাছে মাইক নিয়ে আইসা ডাক দেওয়া উচিত ছিল।” ভালো মানুষের দাম নেই তো। এসব বলতে বলতে আরাফ আরিয়ানে’র কক্ষ ত্যাগ করে।”
আরিয়ান ঠোঁট উল্টে আরাফে’র যাওয়া’র পানে একবার তাকিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
সবাই নাস্তা সেরে নিজ নিজ রুমে চলে গেলেন। এখন তৈরি হতে হবে নিহানে’র বাসায় যাওয়ার জন্য।”
সবাই তৈরি হতে শুরু করলো। ইমরান রহমান গাড়ি ভাড়া করে আনিয়েছেন অনেক গুলো।
এগারোটা’র দিকে গাড়ি বেড়িয়ে যেতে লাগলো ইরফান’দে’র বাসা থেকে। সাতটা গাড়ি প্রথমে এবং চারটা গাড়ি পেছনে যেতে লাগলো।”
সাড়ে বারোটা’র দিকে সবাই পৌঁছে গেল সিকদার বাড়িতে। অনেক বড় বাড়ি, সামনের একপাশে খোলা মাঠ। অন্য পাশের অনেকটা অংশ জুড়ে বাগান আছে! ফুল এবং বিভিন্ন প্রজাতে’র গাছ। আর কিছু অংশ খালি সেখানে সবার জন্য কয়েকটা চেয়ার এবং দুটো বেঞ্চ রাখা।”
নিহানে’র বাবা নিলয় সিকদার বেশ শৌখিন মানুষ! যেখানেই অন্য জাতে’র গাছে’র চারা দেখবেন সেটা এনেই বাড়িতে রোপণ করেন। অন্য দিকে নীলিমা এহসানে’র ফুল বাগানে’র শখ। উনার ফুল বাগানে অনেক ধরনের ফুল রয়েছে। দু’জনেই দিনে’র বেশ খানিকটা সময় এই বাগানে কা’টা’ন।”
বিয়ের মতো ইরিন-নিহানে’র রিসিপশনও ভালো ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ইরিন কে দেখেই বুঝা যাচ্ছে খুব সুখে থাকবে সে। ইরিনে’র ফুফু শাশুড়িও অনেক ভালো! সেটা উনার কথায় বুঝা গেল। উনি এই বাড়িতেই থাকেন! ভাই ভাবীর সাথে। উনার এক ছেলে এক মেয়ে, ছেলে মেয়ে’র বিয়ে’র কাজ ও তিনি সম্পন্ন করেছেন। উনার শশুড় বাড়িও যথেষ্ট ভালো তবে একা থাকা’র কারণে মাঝে মধ্যে সেখানে গিয়ে দু-একদিন থেকে আসেন।”
ইমরান রহমান এবং ঈশিকা খানম বুঝতে পারলেন মেয়ের পছন্দ খা’রা’প ছিল না। যদিও উনারা সব রকম খোঁজ খবর নিয়েছিলেন। পছন্দ টা ছিল ইরিনের! ও মা, বাবা, ভাই কে তার পছন্দে’র কথা বলেছিল। ওর কথায় উনারা রাজি হোন! মেয়ের পছন্দ কে গুরুত্ব দিয়ে সবকিছু দেখে শুনে পাকা কথা বলেন বিয়ের জন্য।”
নিহানও তার মা বাবা কে ইরিনে’র কথা বলে। ইরিন কে দেখে তাদের ও বেশ পছন্দ হয়। এমন মিষ্টি! পুতুলে’র মতো একটা মেয়ে কে পছন্দ না করে কী উনারা থাকতে পারেন। দু-পরিবারই ছেলে মেয়ে’র পছন্দ কে গুরুত্ব দিয়ে তাদের কে এক সাথে করে দিয়েছেন।”
অনুষ্ঠান শেষ করে সবাই ইরফান’দে’র বাসায় ফিরে আসলো। সাথে ইরিন এবং নিহানও এসেছে। সবাই রাত আটটা’র দিকে বাসায় এসে পৌঁছাল। নিজেদের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হতে লাগলো সবাই। অতিথি’দে’র মধ্যে অনেকেই চলে যাবেন তাই- ঈশিকা খানম হালকা নাস্তা’র আয়োজন করলেন। এখন আর অন্য কিছু খাবে না কেউ! নাস্তা অল্প খেলেও খেতে পারে।”
ইরিন রুমে চলে গেলো তার! সাথে নিহান। আরিশা, আরিয়া,ওদের রুমে চলে গেলো সাথে দিশা হৃদি। সোহা সেদিনই চলে গিয়েছিল। আজ মাহিন-মিতু দু’ভাই বোন চলে গিয়েছে। বর্তমানে শুধু আরিয়া, আরিশা ,হৃদি ,দিশা এই বাসায় আছে! আরো অনেকেই।”
সবকিছু শেষে অনেকেই বিদায় নিতে থাকেন বাসা থেকে। সাথে আরিশা’র মা ,বাবা, চাচা, চাচি উনারা চেয়েছিলেন আরিশা, আরিয়া,আরাফ কে ও নিয়ে যেতে। কিন্তু ” ইরফান, ঈশিকা খানম, ইরিন কেউ দেননি।”
ঈশিকা খানম বললেন এতো- দিনে মেয়ে দু’টো এসেছে। আর এই দু-তিন দিন থেকেই চলে যাবে! না এভাবে তিনি যেতে দিবেন না।”
উনারা ও না পেরে ওদের কে রেখেই চলে যান ঢাকায়।”
রাত সাড়ে দশ’টা ছাদে বসে আছে সবাই। আরিয়ান, আরাফ, ইরফান, নিহান দিয়ান। আরিয়া ,আরিশা ,ইরিন ,হৃদি, দিশা।
হঠাৎ দিয়ান বলে উঠলো- মাহিন ভাইকে মিস করছি ভাই!”
আরাফ বললো- কী আর করবেও বোন কে নিয়ে তো যেতেই হবে। মাহিন মিতু’র ভাই এবং সোহা’র চাচাতো ভাই।”
ওরা কথা বলা’র এক পর্যায়ে ঠিক করলো- আগামীকাল সবাই আশে পাশে একটু ঘুরাঘুরি করবে।”
কথা শেষ করে সবাই নিজেদে’র রুমে চলে আসলো।”
আরিশা শুধু একটা বিষয়ে ভাবছিল!” সে আর কিছু নয় আরিয়ান কে নিয়েই ভাবছিল। এতো অতিথি চলে গেলো কিন্তু আরিয়ান কেন গেলো না। আবার লজ্জা’য় কাউকে কিছু বলতেও পারছেনা।”
আবার ভাবলো- আচ্ছা সবাই বলেছিল আরিয়ান ভাই আসবে কিন্তু, কোথায় আসলো না তো!” না হলে তো একবার দেখা করতো আরিয়ান ভাই আমার সাথে। আচ্ছা তাহলে কী সত্যিই আরিয়ান ভাই আমাকে ভালোবাসেননি!”
আরিশা আবার মনে মনে বললো- আচ্ছা কাল একবার ইরিন কে জিজ্ঞেস করবো। এই ছেলেটা কে? আর আরিয়ান ভাই এসেছিলেন, নাকি আসেননি?”
এসব ভাবনা’র মধ্যেই আরিশা পাড়ি জমায় ঘুমে’র রাজ্যে।”
চলবে!