অপেক্ষার শেষে পর্ব -১১+১২

#অপেক্ষার_শেষে
#পর্ব_১১
#লেখিকা_কে_এ_শিমলা

আরিশা ঈশিকা খানম এবং ঈশিতা খানমে’র সাথে কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে। ইরিন রুমে বসে আছে, কিছুক্ষণ পর ওকে সাজাতে আসবে পার্লারে’র দু’টো মেয়ে।” আরিয়া ওর বিয়ের সাজ-গোজে’র জিনিস, শাড়ি, জুতো, সবকিছু দেখছে ঠিক আছে কী না। তখন সেখানে প্রবেশ করে আরিয়ান।”

আরিয়ান কে দেখে ইরিন এবং আরিয়া দু’জন প্রশ্ন করলো- কিছু বলবে ভাইয়া?”
আরিয়ান বললো- নাহ! এমনি ইরিন কে দেখতে আসলাম।” আমাদের ছোট্ট ইরু বড় হয়ে গেলো না! ইরিন ল’জ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে মুচকি হাসলো।”
আরিয়া বললো- হুম! ভাইয়া ঠিক বলছো।
তারপর বললো- ভাইয়া তোমার সাথে আরিশা’র দেখা হয়েছে কিন্তু ওতো তোমাকে চিনতে পারলো না।” কাল আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল তুমি কে?”
তবে আমি বলতে পারিনি আরাফ ভাইয়া আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন।”
আরিয়ান বললো- হ্যাঁ আরিয়া ও আমাকে চিনতে পারেনি। আরিশা ওর কথা রেখেছে সত্যি। আমি যেদিন ওকে বলবো ভালোবাসি, যেদিন আমি ওর সামনে যাবো সেদিন ও আমাকে দেখবে। আর সেদিনে’র অপেক্ষায় থাকবে আরিশা।”
ও তো বলেছিল আমাকে মনে রাখবে, দূর থেকে না দেখেও ভালোবাসবে। এগুলো ওর আবেগে’র কথা ছিল, এখন তো ও আমাকে চিনতেই পারেনি।” হয়তো ভু’লেও গেছে!” কথা গুলো বলা’র সময় আরিয়ানে’র চোখ গুলো ছল’ছল করে উঠে।” আরিয়া এবং ইরিন আরিয়ানে’র কথায় অবাক হলো।’

আরিয়া বললো- ভাইয়া তুমি ভু’ল বুঝছো! আরিশা এখনো তোমাকে ভালোবাসে। তোমার জন্যই অপেক্ষার প্রহর গুনে।” অপেক্ষার শেষে তার সেই তোমাকেই চাই।”
জানো ভাইয়া যেদিন তুমি চলে গিয়েছিল, আরিশা খুব কান্না করেছিল। ও বলেছিল তুমি নাকি ওর এসব কথাবার্তা’র জন্যই তুমি নাকি ঢাকায় চলে গিয়েছো।” তারপর যখন ও তোমার সাথে ফোনে কথা বলতে চাইলো! তুমি বললে না।” তোমার নাম্বার পরিবর্তন করে ফেললে!” সেদিন ও স্কুলে পা’গ’লে’র মতো কান্না করেছিল , ওই কদম গাছে’র নিচে।”
ঘরব’ন্দি করে রেখেছিল সে নিজেকে। আরিশা বলেছিল তোমাকে একটি বার দেখতে চায়। একটা ফটো দাও নাহলে একবার ভিডিও কলে অন্তত কথা বলো! তুমি কলও দাওনি, ফটোও দাওনি।”
ইরিন বলেছিল ইরফান ভাইয়া’র ফোন থেকে পিক নিয়ে ওকে দেবে। কিন্তু না বলে দেয়! তাই সেদিন ও বলেছিল তুমি যেদিন দেখা দেবে সেদিন ও তোমাকে দেখবে। তার আগে এই নতুন তুমি কে ও দেখবে না।”

সেই হাঁসি-খুশি, চ’ঞ্চ’ল আরু কেমন নিরব হয়ে গেলো ভাইয়া। ভী’র পছন্দ করে না। সব সময় একা থাকে, চোখে’র পলকে! কয়েকদিনে’র ব্যবধানে ও গ’ম্ভী’র রুপে’র হয়ে উঠলো।”
তারপর আমরা ঢাকায় চলে আসলাম। এবার যেনো আরু আরো বেশিই ভেঙ্গে পড়লো নতুন জায়গায় গিয়ে। এরপর কেটে যায় অনেক গুলো দিন। একদিন আরু’র জন্য একটা বিয়ে’র প্রস্তাব আসে। বড় আম্মু,বড় আব্বু চেয়েছিলেন বিয়ে ঠিক করে রাখতে। এই কথা শুনে আরু নিজেকে দু’দিন ঘর ব’ন্দি করে রাখে।” আমি ওকে বলতাম তোমাকে যেন ভুলে যায়! ও বলতো- আমি কোনো দিন আরিয়ান ভাই কে ভুলতে পারবোনা আরিয়া কোনোদিন না।” আমাকে জড়িয়ে এই আরিশা হা’উ’মা’উ করে কাঁদতো ওই ব’দ্ধ ঘরে।”

তোমার একটা ছোটবেলা’র ফটো ছিল আরিশা’র কাছে। ও সেটা আজো যত্ন করে রেখেছে নিজের কাছে। একদিন আমি এই ফটো না বুঝে ময়লা’র ঝুড়িতে ফেলে দিয়েছিলাম। সেজন্য আরিশা প্রথম আমাকে রে’গে একটা থা’প্প’র দিয়েছিল, দু’দিন আমার সাথে কথা বলেনি‌।”
আরিশা ওর প্রতিটা মোনাজাতে এখনো তোমাকেই চায়। আমি ওর চোখে এখনো কোনো জল আসতে দেখিনি কোনোকিছু’র জন্য, আবার হাসতেও দেখিনি।
কিন্তু ওর আঁধার রাতে’র চোখে অশ্রু ঝরা’র কারণ তুমি। নিরবে যে এক চিলতে মুচকি হাঁসি ওর ঠোঁটে’র কোণে জ’ড়ো হয়, সেই নিরব মুচকি হাঁসি’র কারণও তুমি।”
আজো ওর কোনো ছেলে বন্ধু নেই। আমার মনে আমি ওকে শেষ কবে ছেলেদে’র সাথে কথা বলতে দেখেছি।”
আমি ইরিন অনেক বার বলেছিলাম- তোমার নাম্বার ওকে দেবো। ও যেন একটু কথা বলে! কিন্তু ও সাফ জানিয়ে দেয় ও আর কথা বলবে না কোনোভাবেই তোমার সাথে। ও চায় না কোনো ধরনে’র যোগাযোগ তোমার সাথে থাকুক।”
আমি ওকে অনেকবার বলেছিলাম- এইবার তুই আরিয়ান ভাইয়া’র সাথে কথা বলে দেখ! তোকে ফিরিয়ে দিবে না ভাইয়া। হয়তো রিলেশন ও করতে পারেন।”
বার বারই আরিশা জবাব দিয়েছিল: আমি কোনো হা’রা’ম সম্পর্কে যেতে চাই না তাকে নিয়ে। হয়তো ভালোবাসাটা গোপন রাখতে পারিনি! কিন্তু আরিয়ান ভাই তো বলেছেন এসব আমি আবেগে বলেছি। এখন আরিয়ান ভাই যদি আমার ভাগ্যে থাকেন তাহলে আমি তাকে হালাল সম্পর্কের মাধ্যমে পাবো।নয়তো আরিয়ান ভাই যে বলেছিলেন আবেগে বলছি! উনি সেটাই ধরে নিবেন আর আমি আড়াল থেকেই ভালোবাসবো। প্রয়োজনে শেষ অব্দি অপেক্ষা করবো যেদিন উনি নিজ থেকে আমার কাছে আসবেন! আমি সানন্দে গ্রহণ করবো উনাকে।”

এতো কিছু’র পরেও কী বলবে ও তোমাকে ভালোবাসে না! মনে রাখেনি।”
আরিশা এখনো তোমাকে এক পলক দেখে লুকিয়ে লুকিয়ে! কিন্তু এই তোমাকে নয় আমাদের সেই ছোট্ট আরিয়ান ভাই কে।”

কথা গুলো বলে একটা বড় শ্বা’স নেয় আরিয়া। আর কেউ কিছু বলার আগেই আরিয়ান চোখ মুছে বের হয়ে যায় রুম থেকে। ইরিন, আরিয়া দু’জনেও চোখে’র কোণে জ’ড়ো হওয়া জল গুলো মুছে নেয় সন্তর্পণে।”

বিয়ে বাড়ি মানুষে’র আ’না’গো’না প্রচুর। বর আসে যথা সময়ে। বিয়ের কার্যক্র’ম শুরু হয়! এবং সুন্দর ভাবেই শেষ হয়। খাওয়া দাওয়া সম্পন্ন হয়। বিয়ের আসর, মানুষে’র সমাগম ধীরে ধীরে হালকা হতে থাকে। ইরিনে’র বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে সুন্দর ভাবেই। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। আরিশা, আরিয়া রুমে চলে আসে। চারিদিক থেকে আজানে’র ধ্বনি ভে’সে আসছে। ওরা নামাজ আদায় করে নেয়। বিয়ের সাজসজ্জা আসরে’র নামাজে’র সময়টাতেই চেহারা থেকে তুলে ফেলেছে দু’জন। সবকিছু একপাশে নামাজ অন্য পাশে! সবকিছু’র প্রথমে নামাজ ওদের আসল কাজ।”
দু’জন নামাজ আদায় করে আবার উপস্থিত হয় বিয়ের আসরে।’ ইরিনে’র বিদায়ে’র সময় চলে এসেছে। ধীরে ধীরে ইরিন কে বাহিরে নিয়ে আসা হলো। বর কনে’র গাড়ি সামনে দাঁড় করানো।”

ইরিন মা বাবা সবাই কে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। ইরফান তো এই দিকেই আসছে না। কীভাবে ওর ক’লি’জা’র টু’ক’রা বোন কে বিদায় জানাবে। এই ছোট্ট পরি টা এখন অন্যে’র বউ।”
অন্য বাড়ি’র মানুষ গুলো কে সে আপন করতে ব্যস্ত থাকবে।আর নিজের বাড়িতে অতিথি হয়ে আসবে। এই বাসায় আর ট’ই’ট’ই করে ঘুরে বেড়াবে না। মা বাবা ভাইয়ে’র কাছে আর এটা সেটা আবদার করবে না প্রতিনিয়ত।”
মেয়েদে’র জীবনটা এমনই! নিজের বাড়ি শূন্য করে অন্যের বাড়ি পূর্ণ করবে। নিজের বাড়ি বলে স’ম্বো’ধন করবে। নিজের পরিবার বলবে অন্য একটা পরিবার কে। বাবা’র বাড়ি’র অতিথি হয়ে আসবে তিন’ চার দিন! উর্ধ্বে একটা সপ্তাহ।”

ইরফান ফু’লে উঠা চোখ নিয়ে ধী’র পায়ে এগিয়ে আসে বোনে’র কাছে। গাড়ি’র পাশে দাঁড়িয়ে একেঅপরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে। উপস্থিত প্রত্যেকটা সদস্যে’র চোখেই জল।
ইরফান বোন কে গাড়ি তে তুলে দেয়। নিহান ইরফান সহ ওর মা বাবা কে কথা দেয়। যেরকম কথা দিয়ে ইরিন কে নিয়ে যাচ্ছে সেভাবেই রাখবে তাকে। নিহানে’র মা বাবা, নিলয় সিকদার এবং নীলিমা এহসান! উনারা ও কথা দিলেন একমাত্র ছেলে’র বউ কে মেয়ে’র আদরেই আগলে রাখবেন।”

ইরিনে’র গাড়ি ধীরে ধীরে চলতে থাকে। ইরফান ধ’প করে সেখানে বসে পরে। সবাই ঈশিকা খানম এবং ঈশিতা খানম কে নিয়ে ভেতরে চলে যায়। আরিয়ান, আরাফ, দিয়ান, মাহিন এসে দাঁড় করায় ইরফান কে। তারপর তাকে নিয়ে ওরা ও ভেতরে চলে যায়।

কনে বিদায় করা’র পর অনেকেই চলে গিয়েছেন। সোহা ও চলে গিয়েছে! কাল রাতে’র সেই ঘটনা’র পর ও অনেক ভ’য়ে এই বিয়ে’র দিন টা পার করেছে। এখন সু্যোগ পেতেই বাবা মা’র সাথে তার বাসায় চলে যায়।”

কিছুটা সময় পূর্বেও এতো বড় বাসার কোনায় কোনায় মানুষে’র আনাগোনা ছিল। সাথে ছিল প্রচুর জম’জ’মা’ট পরিবেশ। এখন নিরবতায় ছে’য়ে গিয়েছে বাসাটা। রাত প্রায় দশটা’র কাছাকাছি। অনেকেই ড্রয়িংরুমে বসে আলাপ আলোচনা করছেন। আবার অনেকেই নিজেদে’র রুমে ফ্রেশ হচ্ছেন। আরাফ, আরিয়ান বাহিরে’র সবকিছু দেখছে! সাথে অন্যান্য রাও আছে। তবে ইরফান ওর রুমে! সবাই বুঝতে পারছে ইরফানে’র মনে’র অবস্থা”।

চলবে!#অপেক্ষার_শেষে
#পর্ব_১২
#লেখিকা_কে_এ_শিমলা

আরিয়ান সহ বাকিরা বুঝতে পারছে ইরফানে’র মনে’র অবস্থা। তাই ওরা-ই সব কিছু দেখছে।’

আরো কিছু টা সময় অতিবাহিত হয়। ধীরে ধীরে সবাই নিজেদের কক্ষ ত্যাগ করে নিচে আসেন। নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন সবাই। সব কিছু’র মধ্যে আরো একটা ঘটনা দেখা গেল ড্রয়িংরুমে।”

আযাফে’র মা বাবা,চাচা-চাচী, ইরফানে’র খালা-খালু,ফুপা-ফুপি, এবং লাবিবে’র মা অনেকেই আছেন। উনারা কথা শুরু করবেন তখন সেখানে উপস্থিত হোন! ইরফান রহমান এবং ঈশিকা খানম। উনারা আসতেই লাবিবে’র মা বলে উঠলেন যাক ভালোই হলো ভাই ভাবী ও আসলেন।”
তারপর আরিয়া’র বাবা আরমান চৌধুরী এবং আরাফে’র বাবা আশরাফ চৌধুরী’র উদ্দেশ্যে বলে উঠেন- আচ্ছা ভাই দেখুন আমি সরাসরি একটা বলে দেই। আর এরকম কথাবার্তা বলতেই আমার ভালো লাগে। যা বলা দরকার সোজাসাপ্টা বলা।
তো কথা টা হলো- আপনাদের মেয়েদের কে তো আমরা দেখেছি। আমার ছেলে আপনাদের এক মেয়েকে পছন্দ করেছে! মেয়েটা’র নাম টা যেন কী?” লাবিব বললো- আরিয়া।”
লাইলি জামান বললেন- ও হ্যাঁ আরিয়া! আশাকরি ভাই প্রস্তাব টা ফিরিয়ে দিবেন না। আপনাদের মেয়ে আমার বাড়িতে রাজ রাণী হয়েই থাকবে! তাছাড়া ছেলে আমার লাখে একটা। আপনার মেয়ে’র তো ভাগ্য ভালো আমার ছেলে তাকে পছন্দ করেছে।” বলে হেঁসে উঠেন লাইলি জামান।’
আরমান চৌধুরী আরিফা আফরোজ, এবং আশরাফ চৌধুরী, আর আয়শা সিদ্দিকা’র দিকে একপলক তাকালেন। উনারা ও তাকিয়ে আছেন আরমান চৌধুরী’র দিকে। আরমান চৌধুরী আবার দৃষ্টি ঘুরিয়ে আরাফে’র দিকে তাকান! সে নিচে’র দিকে তাকিয়ে আছে।”
আরমান চৌধুরী একটা শ্বাস ত্যাগ করে লাইলি জামানে’র উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন- দুঃখিত আপা। আমরা আপনার এই প্রস্তাব-টা রাখতে পারলাম না। মেয়ে’র বিয়ে আমরা ঠিক করে রেখেছি,সেখানে আপনার প্রস্তাব গ্রহণ করি কীভাবে!”
আরিফা আফরোজ, আশরাফ চৌধুরী,আয়শা সিদ্দিকা একটা স্বস্তি’র নিঃশ্বাস ছাড়লেন।’

লাবিব এবং ওর মায়ের মুখটা কা’লো হয়ে গেলো। লাইলি জামান একবার তাকান দেবর অর্থাৎ ইরিনে’র ফুপা’র দিকে।
এইবার তিনি বলে উঠেন- এরকমটা তো প্রায়ই হয়! তারপর দেখা যায় পাত্র রাজী হয় না। আমার ভাতিজা আপনার মেয়েকে সুখেই রাখবে! আরো একবার ভেবে দেখুন।”
লাইলি জামান বলেন- উনাদে’র মেয়ে’র তো কপাল ভালো আমার ছেলে তাকে পছন্দ করেছে। আমার ছেলে’র মতো আর দু’টো ছেলে পাওয়া যায় না। এইভাবে কত মেয়ে’র বিয়ে ঠিক করে রাখা হয় কিন্তু পরে তা সম্পূর্ণ হয় না। দেখা গেলো এখন আপনারা বিয়ে দিচ্ছেন না। অপরদিকে ওই ছেলে যদি অন্য কোথাও বিয়ে করে নেয়?” আর মেয়ে’র বয়স তো কম নয় মনে হচ্ছে। যদি ঠিক করে রাখাই আছে বিয়ে’র কাজ সম্পন্ন করেন।” পরে দেখা যাবে কোনো অ’ঘটন ঘটিয়ে ফেলেছে, মেয়ের বয়স তো মনে হচ্ছে বিশ বছর পার হয়ে যাচ্ছে! কথা গুলো বলেই লাইলি জামান মুখ বাঁকিয়ে হাসেন।”
উনার এসব কথা শুনে আরাফে’র হাত মুষ্টিব’দ্ধ হয়ে আসলো। মোটামুটি সবাই প্রায় বিরক্ত মা, ছেলে’র এসব কাজে।”
ইরফানে’র ফুপি ইমরানা রহমান ও বিরক্তি চোখে তাকান ভাইয়ের দিকে। ইমরান রহমান বুঝতে পারলেন এসব কথা এখানেই থা’মিয়ে দিতে হবে। উনি কিছু বলবেন তার আগেই লাবিব উঠে দাঁড়ায়।”
সে লাবিবে’র দিকে তাকিয়ে তাঁর মায়ের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো- আপনার সোনার মনি, হিরা’র খনি ছেলেকে তার মতো লাখে একটা মেয়ে দেখেই বিয়ে করান। আপনি ভাবলেন কী করে আপনার ছেলে’র সাথে আমাদের বাড়ি’র মেয়ে’র বিয়ে দেবো। যেই না চরি’ত্র সে নাকি আবার লাখে একটা ছেলে।
আর আপনি কাল সকালে কী করেছেন মনে আছে আপনার!” আমার বোনদের কে বাসাভর্তি মানুষের সামনে যা নয় তাই বলে অ’প’মা’ন করেছেন।’ আর এখন আসছেন ছেলের বউ করে নিয়ে যেতে।’
আরিয়া’র বয়স বিশ না পঞ্চাশ বছর হলেও সে আমাদের বাড়িতেই থাকবে। ওর বয়স যতই হোক ওকে বিয়ে দেবো কী দেবো না। তা নিয়ে ভাবার জন্য ওর পরিবার আছে! আপনি কে যত্তোসব। নেক্সটাইম আমার বোনদে’র দিকে তাকিয়ে দেখবেন কী হয় আপনাদের।”

আরাফে’র কথা শুনে ওর মা এবং ওর রাগ উঠে যায়। লাইলি জামান বললেন-এই ছেলে মুখ সামলে কথা বলো!” বোনদে’র মতো দেখছি ভাইয়ের মধ্যেও ভদ্রতা বলতে কিছু নেই।’ আমি তোমার সাথে কথা বলিনি তোমার মা বাবা’র সাথে কথা বলেছি। তুমি কথা বলছো কেন বে’য়া’দ’ব ছেলে!”
আরাফ বললো- আপনার মধ্যে ভদ্রতা আছে!” আর আপনার মতো দা’জ্জা’ল মহিলা’র ছেলে’র সাথে আমার বোনে’র বিয়ে দেবো ভাবলেন কী করে।”
লাইলি জামান ইমরানা রহমানে’র দিকে তাকিয়ে বললেন- ইমরানা এইভাবে তোমার ভাইয়ের বাসায় নিয়ে এসে আমাদের অপমান করা দেখছো বসে বসে। কোথা’কার ছেলে এসে আমাকে যা ইচ্ছা তাই বলছে! তুমি কিছু বলছো না কেন?”

ইমরানা রহমান জ্বা’য়ে’র কথায় বিরক্ত। ইমরান রহমান বললেন- ভাবী দেখুন উনারা যেহেতু বলছেন উনাদের মেয়ে দিবেন না ছেলের কাছে। আর তাছাড়া মেয়ের অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক করে রাখা। যদি আপনার ছেলের সাথে বিয়ে দেন তাহলে সেখানে কী জবাব দিবেন?”
উনাদের লজ্জা’য় পড়তে হবে! তাই দয়া করে এই সব কথাবার্তা এখানেই বন্ধ করুন। অন্য জায়গায় মেয়ে দেখেন ছেলের জন্য।
লাইলি জানান: কিন্তু ভাই এই মেয়েকে তো আমার ছেলে….
বলতে পারলেন না ইরফান উনাকে থামিয়ে বলে উঠে ব্যাস আন্টি অনেক বলেছেন। আপনাদের দাওয়াত দেওয়াটাই ভু’ল হয়েছে আমাদের জন্য। নেহাৎ আপনি আমার ফুপি’র বাড়ি’র লোক। না হলে আপনি আর আপনার ছেলেকে আমাদের বাড়ির চৌকা’ঠে পা রাখতে দিতাম না।”
মিসেস লাইলি জামান ক্রো’ধে ফে’টে পড়লেন।” ছেলে’র হাত ধরে উঠে দাঁড়ালেন। এবং বললেন এই বাড়িতে আর এক মূহুর্ত নয়। ইমরানা আমাদের এখানে এনে এইভাবে অ’প’মা’ন না করালেও পারতে।”

সব কিছু নিয়ে এবং ছেলে মেয়ে সহকারে এই রাত্রিবেলা বেড়িয়ে পড়লেন বাসার উদ্দেশ্যে। এতো অ’প’মা’ন বোধহয় এর আগে কখনো হননি এই বাসায়। লাবিবা একবার আরাফে’র দিকে তাকায়। নাহ দেখতে এতটাও কঠিন নয়! তাহলে ওর মা কে এতো কথা। মাথা নিচু করে মা, ভাইয়ে’র সাথে চলে গেলো।”
মা ভাইয়ে’র এহেন কর্মকান্ডে সে অতি’ষ্ঠ। মিসেস লাইলি জামান যেন একজন স্বাধীন নারী। স্বামীর বাড়িতেও উনার রাজত্ব বাবার বাড়িতেও উনার রাজত্ব। মা বাবার একমাত্র সন্তান হওয়ায় বাবা’র সব সহায়- সম্পত্তি উত্তরাধিকারী তিনি।’
শশুড় বাড়ি’র বড় বউ হওয়ায় যেরকম ইচ্ছা সেরকম চলাচল করেন। শশুড় শাশুড়ি বেঁচে না থাকায় তিনিই বাড়ির প্রধান হয়ে উঠেছেন। কিছুদিন বাবার বাড়ি! কিছুদিন স্বামীর বাড়িতে কা’টা’ন।”
আর ছেলে সে তো টাকায় যেন সবকিছু কিনে নিবে এমন অবস্থা।”

লাইলি জামান চলে গেলেন কেউ উনাকে আটকানোর চেষ্টা করেননি। অতিথি অতিথি’র মতো হলে যথাযথ সম্মান দিতেও ভালো লাগে। কিন্তু লাইলি জানান তো বরাবরই এমন।”

রাতে তেমন কেউ খেলেন না। কিছু কিছু বাচ্চা এবং কয়েকজন বৃদ্ধ মানুষই খেলেন। কাল ইরিন এবং নিহানে’র রিসিপশন, নিহানে’র বাসায় যেতে হবে।”

আরিয়ান শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো সেদিনের পরে’র ঘটনা গুলো। সেদিন আরিয়ান একপ্রকার রা’গ করেই বাসায় ফিরেছিলো। কী করবে কিছুই যেন ওর বোধগম্য হচ্ছিল না। দু’দিন সে স্কুলে যায়নি। দু’দিন পর স্কুলে যায় আরিয়ান। প্রতিদিনের মতোই ল্যাব থেকে বের হয়ে সে মাঠে’র দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়ায় আরু। আরিয়ানে’র হাত ধরে সাইডে অর্থাৎ কদম গাছের নিচে নিয়ে যায়। আরিয়ান গভীর দৃষ্টিতে একবার দেখলো আরিশা কে। ওর কেনো যেন মনে হচ্ছে দূরে চলে যাবে আর চাইলেও দেখা হবে না। ওর ভাবনা’র মধ্যেই আরিশা জিজ্ঞেস করলো- এই দু’দিন তুমি স্কুলে আসলে না কেন আরিয়ান ভাই?”…

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here