গল্পঃ #অস্পষ্ট_সে(৫ম+৬ষ্ঠ পর্ব)
লেখায়ঃ #তাজরীন_খন্দকার
চিত্রার হঠাৎ এমন রূপ দেখে প্রথমে দ্বীপ লাফিয়ে উঠে বুকের উপর থুঁ থুঁ দিয়ে লা হাওলা পড়তে শুরু করে দিলো।
চিত্রা দ্বীপকে সাইড করে সেখান থেকে সরে গেলো।
তখনি দ্বীপ বলে উঠলো..
___ভয় পাইছি, বাবারে এভাবে কেউ বলে?
এএ খোদা আমার এই বউ নাকি আমার মাথা দুভাগ করে ফেলবে, শুনছো তুমি?
এটা শুনে চিত্রা চোখ ঘুরিয়ে দ্বীপের দিকে ফিরে তাকালো। চিত্রা তাকানোর সাথে সাথে দ্বীপ তার চোখ নামিয়ে ফেললো। চিত্রা একটু এগিয়ে এসে রাগী স্বরে আঙুল নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলতে লাগলো..
___ এইযে, আপনি আমাকে সহজ সরল ভোলাভালা মনে করে থাকলে ভুল ভেবেছেন। আপনি কি ভেবেছেন এই যুগে এমন স্ত্রীও হতে পারে যে কিনা স্বামীর প্রতি ভক্তিশ্রদ্ধায় তার স্বামীর সব দোষ অনায়াসে ভুল যাবে?!
আচ্ছা আর অন্য কারো বাদ দিলাম আমার কথাই বলি, আমি এতো বেশি ভালো না ওকে?
দ্বীপ হাত বাড়িয়ে চিত্রার আঙুলে খপ করে ধরে বললো..
___জ্বী মিসেস দ্বীপ, আপনাকে নিয়ে একটু আগের ভাবনাও এই কিছুক্ষণ আগে বদলে গেছে। আপনি মারাত্মক লেভেলের মানুষ।
রাগে চিত্রার নাক কাঁপছে, চোখ লাল হয়ে গেছে হাতের দিকে একবার তাকাচ্ছে আর দ্বীপের দিকে একবার তাকাচ্ছে। দ্বীপ মুচকি মুচকি হাসছে। চিত্রা বালিশের দিকে খেয়াল করে দেখলো যেটা দিয়ে ভয় দেখিয়েছিলো ওইটা সেখানেই রেখে আসছে৷ এদিকে অনেক চেষ্টায়ও একটা আঙুল দ্বীপের থেকে ছাড়াতে পারছেনা৷
চিত্রা রাগে ফোসফাস করতে করতে বললো.
___ আঙুল ছাড়েন। আপনার অধিকার নেই আমাকে স্পর্শ করার! একজনকে স্বপ্ন দেখিয়ে আরেকজনের সাথে এমন ব্যবহারের মানে হয়না।
___ ওমা আজকেই না চুক্তিবদ্ধ হয়ে আমাদের বিয়ে হলো। অধিকার তো সর্বোচ্চ আমাদেরই। ওই মেয়েকে তো বিয়ে করিনি, সে পরনারী!
চিত্রা কথা না বাড়িয়ে সোজা কামড় বসিয়ে দিলো দ্বীপের হাতে৷ দ্বীপ মাগো বলতে বলতে চিত্রার হাত ছেড়ে নিজের হাত ঝাড়তে লাগলো৷
চিত্রা টেবিল থেকে ছুড়ি বালিশের উপর থেকে টর্চটা,আর ব্যাগ থেকে পিন বের করে দ্বীপের সামনে ধরে বললো..
___কাছাকাছি আসার চেষ্টা করলে একদম মেরে ফেলবো, লুচ্চা কোথাকার।
বলেই চিত্রা কাঁথা মুড়ি দিয়ে মুখসুদ্ধ ঢেকে শুয়ে পড়লো। আর তার হাতের কাছে এইসব অস্ত্র। কাঁথা উঠানোর চেষ্টা করলেই দ্বীপ আজকে শেষ! তবে তার নিজের এসব কান্ডে নিজেরই ভীষণ হাসি পাচ্ছে। দ্বীপকে সে এখনো বুঝতে না পারলেও নিজের এমন অদ্ভুত কাজকর্ম আজীবনেও হয়তো ভুলবেনা। বাসরঘরে জামাইয়ের জন্য নাকি কোনো মেয়ে এসব নিয়ে ঘুমায়!
ভাবতে ভাবতে আর হাসতে হাসতে কখনো ঘুমালো এবং এর মধ্যে সকাল হয়ে গেছে চিত্রা বুঝতেই পারেনি।
ঘুম থেকে উঠেই দেখে দ্বীপ তার পাশেই শুয়ে আছে, তবে অনেকটাই দূরে আছে সে। মাঝে একটা কোলবালিশ। শীতকাল শুরু হওয়ার মূহুর্ত, পাখা অন থাকলে অনেকটাই শীত করে, অথচ দ্বীপ খালি গায়ে শুয়ে আছে।
দ্বীপের চুলগুলো এসে চোখেমুখে পড়ে আছে।
চোখগুলো দেখা যাচ্ছেনা, চিত্রা আস্তে আস্তে চুলগুলো সরিয়ে দিলো।
চিত্রা দ্বীপের দিকে তাকিয়ে আছে, কে বলবে এই ছেলেটা এতো ছলচাতুরী জানে! চিত্রার মনে হচ্ছে বিয়ের আগে এমন একটা সকালের জন্য সে কতো কিই না ভেবে রেখেছিলো!
দ্বীপের এসব কথা জানার আগে দ্বীপকে নিয়েও তো কতো স্বপ্ন দেখে ফেলেছিল!
কে জানে তাকে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হবে!
চিত্রা কাঁথাটা টেনে দ্বীপের শরীরে দিয়ে নামার জন্য ফিরতে যাবে তখনি তার চুলের উপর টান পড়লো,সে ফিরে তাকিয়ে দেখলো দ্বীপ তার চুল ধরে মিটমিট করে তাকিয়ে আছে।
চিত্রা টেনে ছাড়িয়ে চলে যাওয়ার উদ্যত হয়েছে, তখনি দ্বীপ বললো..
___ তোমার অস্ত্রগুলো কোথায় চিত্রা?
চিত্রা চমকে উঠে তাকিয়ে দেখলো তাইতো, সে যে এগুলোকে বালিশের কাছে রেখেছিল সেখানে তো এগুলো নেই! তার মানে দ্বীপ সরিয়ে ফেলেছে!
কিন্তু কিভাবে নিলো, ঘুম থেকে উঠেও দেখলো সে যেভাবে মুখ ঢেকে ঘুমিয়েছিল সেভাবেই আছে। এই কাজ দ্বীপ কখন করলো?
চিত্রা অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বললো..
___কখন নিলেন? তাহলে আমি জাগিনি কেন?
___তুমি ঘুমে এতো ভারী হয়ে আমার জন্য কিনা এই আয়োজন করেছিলে! আরো কতো কিছু করা যেতো! ওহহ মিস হয়ে গেছে!
বলেই দ্বীপ কাঁথা দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো!চিত্রা মাথায় হাত দিয়ে রুমের মধ্যে ঘুরতে লাগলো।
কেন একটা মানুষ দুটো জীবন নিয়ে খেলতে চাচ্ছে?
হয় সে যেকোনো একজনকে বেছে নিতো৷ চিত্রা না হয় ভাগ্যকে দোষ দিয়ে সংসার করার স্বপ্নকে চাপা দিয়ে বিদায় জানাতো। কিন্তু সে দুদিকে চাচ্ছে মানে কি?
চিত্রার রাতের কথা মনে হচ্ছে, দ্বীপ বলেছিল সে চাপে পড়ে ওই মেয়ের সাথে সব সম্পর্ক বাদ দিতে পারছেনা। তাহলে কি তার কথা সত্যি ছিল?
আবার মিথ্যাও তো হতে পারে।
এতদিন সম্পর্কের মধ্যে যদি তার প্রেমিকাকে মিথ্যে বলতে পারে,,সে একদিনের পরিচয়ে তার সাথে কিসের সত্যি বলবে?
নাহহ এত ভাবলে চিত্রা পাগল হয়ে যাবে।
সে ফ্রেশ হয়ে তার শাশুড়ীর কাছে গেলো। একটু টুকটাক কাজ করতে চাইলো,কিন্তু তার শাশুড়ী তার হাতে এককাপ চা ধরিয়ে বললো দ্বীপকে জাগিয়ে দিতে। তাকে বাজারে যেতে হবে।
চিত্রা আর কি করবে, কাপ হাতে রুমে এসে দেখে দ্বীপ ফোনে কথা বলছে। সে শুনতে পেলো দ্বীপ বলছে..
___ সারারাত বারান্দায় ছিলাম বুঝছো, কখন জানি সেখানেই ঘুমিয়ে গেলাম, আমার ঘাড়ে, পিঠে ব্যথা করছে। শুধু তোমার জন্য এতো কষ্ট করেছি বাবু৷
লাভ ইউ! আচ্ছা পরে কথা বলি হ্যাঁ?
ফোন কেটেই দ্বীপ চিত্রাকে দেখে একটু আৎকে উঠলো। চিত্রা এগিয়ে এসে ধিড়িম করে কাপটা টেবিলে রেখে বললো…
___সারারাত বারান্দায় ছিলেন তাইনা? বাবুর জন্য এতো কষ্ট করেছেন?! ওই মিথ্যাবাদী, মিথ্যুক সারারাত যে আমার সাথে ভাব করতে চেয়েছেন বললেন না কেন? আমি তো উনাকে পাইলে সব বলে দিবো!
___তুমি কি তাকে চিনবে নাকি?
চিত্রা একটা সফলতার হাসি হাসলো, কারণ দ্বীপ তো জানেনা বিয়ের আগেই সে ওই মেয়েকে রেস্টুরেন্টে দেখেছে। কিন্তু এইটা এই মূহুর্তে বললো না,চায়ের দিকে চোখ রেখে বললো..
___ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে,
___ ওহহ এক মিনিট, এক মিনিট।
বলেই দ্বীপ তারাতাড়ি করে বাথরুমে চলে গেলো।
তখনি টুং করে দ্বীপের মোবাইলে একটা ম্যসেজ আসলো। চিত্রা সেটাকে দেখতে একটু উঁকি দিয়ে দুইটা ব্যপারে পুরো বোকা হয়ে গেলো, প্রথমটা হলো দ্বীপের ফোনের ওয়ালপেপার চিত্রার৷ আর এই মূহুর্তে দ্বীপের স্ক্রিনে যে ম্যসেজটা ভেসে বেড়াচ্ছে সেটা হলো..
___এভাবে কেটে দিলে কেন? আর আমার সাথে দেখা করার চেয়ে তোমার কাছে শশুড় বাড়ির মেহমান বড় হয়ে গেলো তাইনা?
বাকিটা দেখা যাচ্ছেনা।
তখনি দ্বীপ আসলো এবং টেবিল থেকে কাপটা হাতে নিয়ে চিত্রার দিকে তাকালো!
চিত্রা ভ্রু ভাজ করে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে দ্বীপের দিকে তাকালো!
দ্বীপ চায়ের কাপে এক চুমুক দিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞাসা করলো
___কি হয়েছে?
চিত্রা বললো
___আপনার ভবিষ্যতে দুইটা বিয়ে করার প্ল্যান আছে তাইনা?
___ তুমি চাইলে করবো সমস্যা কি?
তখন চিত্রা একটানে কাপটা হাত থেকে ছিনিয়ে বললো..
___আমি তো চাই ১০০ টা করেন, এরপর সবার চিপায় পড়ে একদম চেপ্টা হয়ে যান, যত্তসব!
চলবে….
গল্পঃ #অস্পষ্ট_সে ( ৬ষ্ঠ পর্ব)
লেখায়ঃ #তাজরীন_খন্দকার
___আমি তো চাই আপনি ১০০ টা বিয়ে করেন এবং সবার চিপায় পড়ে একদম চেপ্টা হয়ে যান,যত্তসব!
বলেই চিত্রা কাপ হাতে হনহন করে বেড়িয়ে গেলো। এদিকে চিত্রার এমন কথায় দ্বীপ হাসতে হাসতে অস্থির প্রায় অবস্থা। সে নিজেও জানে চিত্রার কথার মানে কি!
অন্যদিকে চিত্রা সবার সাথে সবকিছু হাস্যউজ্জ্বল চেহেরায় ম্যনেজ করতে থাকলেও ভেতরে ভেতরে দ্বীপের উপর প্রচন্ডরকম রাগে সে ফেটে যাচ্ছিলো।
দ্বীপ যদি তার প্রেমিকার জন্য তার থেকে দূরে থাকতো,তাহলেও সে বিষয়টা মেনে নিতে পারতো। কিন্তু দুজনের সাথে এরকম মিথ্যে অভিনয়, আর নিখুঁত ছলচাতুরী করা তো জগণ্য একটা বিষয়।
এমন মানুষ নিঃসন্দেহে ঠকবাজ প্রকৃতির হয়।
এটা নিয়ে তার সাথে যথাসম্ভব আলোচনা করা উচিত।
তারপর সকালের খাবারের পর মেহমানদের ভীড়ে এবং এতো ব্যস্ততায় চিত্রা দ্বীপকে আর দেখেনি। দুপুরের দিকে চিত্রাদের বাড়ি থেকে মানুষ আসলো।
এবং বিকেলের দিকে তারা এই যাত্রার যানজট শেষে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো। সকালের পরে দ্বীপকে এই মূহুর্তে কাছে পেয়েছে চিত্রা।
দ্বীপকে ভালো করে সবকিছু জিজ্ঞাসা করে বিষয়গুলো ক্লেয়ার হওয়াটা খুব দরকার। কিন্তু সেই সুযোগটা চিত্রা পাচ্ছেনা।
আর দ্বীপ গাড়ীতে উঠেই চিত্রার দিকে না তাকিয়ে নিজের মতো করে মোবাইলের স্ক্রিনে ডুবে আছে।
আর চিত্রা একপাশে বসে রাগে দাঁত খিঁচ খিঁচ করছে। নিজে থেকে কোনো কথাও বলতে পারছেনা।
পুরো রাস্তায় দ্বীপও চিত্রার সাথে কথা বলেনি আর চিত্রাও নিজে থেকে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যায়নি।
অতঃপর এভাবেই তারা পৌঁছালো গন্তব্যে, বাড়ির সামনে গাড়ী থামার সাথে সাথে সবাই যখন তাদেরকে বরণ করার জন্য এগিয়ে আসছে তখনি দ্বীপ হুট করে গিয়ে চিত্রার হাত চেপে ধরে হেসে হেসে বললো..
___ বউ চলো ভেতরে যাই।
চিত্রা অবাক হয়ে একবার নিচে তাকাচ্ছে আরেকবার দ্বীপের দিকে তাকাচ্ছে। তারপর সামনে তাকিয়ে দেখে চিত্রার দুঃসম্পর্কের দুই ভাবী এবং তার যত কাজিন সবাই তাদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করতে দাঁড়িয়ে আছে। চিত্রা ব্যপারটা বুঝতে পেরে দ্বীপের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে সেও দ্বীপের হাতের ভাজে হাতটা শক্ত করে ধরে আস্তে আস্তে বাসার ভেতর প্রবেশ করলো। ভেতরে গিয়ে মুরব্বিদেরকে সালাম দেওয়া, ছোটদের আবদারে এটা খাওয়া ওটা খাওয়া, এবং তাদেরকে বকশিস দেওয়া সবগুলো কার্যক্রমে দ্বীপ চিত্রার হাত ছাড়েনি। চিত্রা অনেকবার জোর করেছে হাত ছাড়িয়ে নিতে কিন্তু দ্বীপ ছাড়বেনা। মানুষের সামনে চিত্রা জবরদস্তিও করতে পারছেনা। কি আর করা,বাধ্য মেয়ের মতো এখান থেকে ওখানে এভাবেই হেঁটে বেড়াচ্ছে। আর এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে তার ভাবীরা ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে। এসব দেখে লজ্জায় চিত্রার ইচ্ছে করছিলো এই মূহুর্তে মাটিতে গর্ত করে নিজেকে লুকিয়ে ফেলে।
অবশেষে প্রায় আধঘন্টা পরে চিত্রাকে বলা হলো জামাইকে নিয়ে রুমে যেতে। এটা শুনে যেন চিত্রা স্বস্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারলো। তারাতাড়ি করে রুমের দিকে পা বাড়ালো।
চিত্রা নিজের রুমের সামনে গিয়ে দেখলো দরজা বন্ধ। দরজায় টুকা দিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো। নাহহ দরজা খুলছেনা। আবারো টুকা দিলো, কিন্তু এবারও সাড়া নেই। এবার চিত্রা ডাকতে শুরু করলো দরজা খোলার জন্য।
চিত্রা বিরক্ত হয়ে শেষবার দরজার উপর জোরে আওয়াজ করতে যাবে তখনি দরজা খোলে গেলো, আর তার সাথে সাথে দ্বীপ চিত্রার হাত ছেড়ে হাতটা নিয়ে চিত্রার কাঁধে রাখলো। এটা দেখে চিত্রা রেগে দ্বীপকে কিছু বলতে যাবে তখনি দেখলো সামনে তার বান্ধবী রাহি আর একজন ফুফাতো বোন দাঁড়িয়ে আছে। চিত্রা ভেতরে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারলো তারা আসলে এতক্ষণ রুমটাকে সাজাচ্ছিল। রাহি বিয়েরদিন এসেছিল কিন্তু থাকতে পারেনি, এবং কনেপক্ষ থেকে জামাইয়ের বাড়িতে যাওয়ার অনুমতিও পরিবার থেকে পায়নি।
কিন্তু তার সন্ধ্যার দিকে আসার পেছনে কারণ আছে তাদের মধ্যে একটা চুক্তি হয়েছিল, দ্বিতীয়দিন এখানের সাজসজ্জা রাহিকেই করতে হবে। রাহি কথা রেখেছে ভেবেই চিত্রা খুব খুশি হলো।
তারপর সবার সাথে দ্বীপের পরিচয় হলো,রাহি দ্বীপের সাথে দুষ্টামী করার এক পর্যায়ে বলেই ফেললো..
___ কি ব্যপার বউকে এক মিনিটের জন্যও ছাড়তে মন চায়না? ওই বাড়ির ভাবী বলে গেলো আপনি নাকি নেমেই বউয়ের হাত যে ধরেছেন আর ছাড়েননি। কি বান্ধবী আপনাকে একদিনেই এতো বশ করে ফেলছে, বাহহ বান্ধবী আমার তাহলে কাজের আছে।
রাহির কথায় সবাই হাসতে লাগলো, দ্বীপও হাসছে কিন্তু চিত্রা আরো রেগে যাচ্ছে। চিত্রা মনে মনে দ্বীপের চৌদ্দগোষ্ঠীকে বকে উদ্দার করে ফেলতেছে।
চিত্রা না পারছে সরে যেতে আর না পারছে দ্বীপকে ছাড়াতে।
এদিকে দ্বীপ সুযোগের ব্যবহারটা দিব্যি করে চলছে।
দ্বীপ জানে চিত্রা রেগে রেগে আগুণ হচ্ছে। তাও আরো রাগিয়ে যাচ্ছে।
কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর পরই রাহির ছোট ভাই এসে খবর দিয়ে গেলো রাহিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার বাবা এসেছে। এখনি চলে যেতে হবে।
রাহির বিদায় নিয়ে রুম থেকে বের হলো, সাথে চিত্রার ফুফাতো বোনও বেরিয়ে গেলো।
তারা বেরুনোর সাথে সাথে চিত্রা জোরে হাতটা ছিটকে ছাড়িয়ে চোখ রাঙাতে রাঙাতে দরজা লক করে বলতে শুরু দিলো …
____ এই সমস্যাটা কি আপনার? মানুষের সামনে আমি কিছু বলতে পারবোনা বলে খুব সুযোগ নেওয়া হচ্ছিলো তাইনা? কি বুঝাতে চাইছেন সবাইকে? আপনি আপনার বউকে খুব ভালোবাসেন? আমাদের মধ্যে খুব ভালো বুঝাপড়া হয়ে গেছে?
___চিত্রা চিত্রা শুনো প্লিজ। দেখো অনেককিছুই আছে যা আমরা জানিনা, কিংবা বুঝতে পারিনা আবার যেটুকু জানি সেটুকুর অনেককিছুই সঠিক না। এসব নাহয় আমরা পরে বুঝে নেবো।
আজকে এখানে সবার নজর আমার দিকে, পরবর্তী আমরা কেমন আছি সেটার খোঁজ করে কেউ দেখবেনা। অথচ আজকে কতো কতো মানুষ আছে এখানে যারা আমাদের দুজনকে খেয়াল করবে এবং আমাদের নিয়ে ভিন্ন জায়গায় কথাও বলবে। তুমি চাওনা সবাই আমাদের দুজনকে নিয়ে পজিটিভ কথা বলুক?
চিত্রা দ্বীপের দিকে তাকিয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো। কথাগুলো কেন জানি তার ভালো লাগলো। সে চোখ মুখ বাঁকিয়ে বললো..
___ওকে ওকে বুঝলাম। আচ্ছা থাকেন আপনি, আমি আসছি একটু।
দরজা খোলে চিত্রা তার মায়ের কাছে গেলো। সেখানে গিয়ে দেখে অনেক আত্নীয়রা বসে আছে। চিত্রাকে দেখেই তারা শশুড়-শাশুড়ী এবং সেখানকার পরিবেশ কেমন লাগলো এসব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করতে লাগলো। চিত্রাও মিলিয়ে মিলিয়ে সবকিছুর ঠিকঠাক জবাব দিতে লাগলো।
অনেক্ষণ সেখানে গল্প করার পরে চিত্রার মা বললো..
___এরে বাচ্চাগুলোরে বলছিলাম দ্বীপকে নাস্তা দিয়ে আসতে, ওরা তো এখনো এলো না। তুই গিয়ে দেখে আয় তো।
চিত্রা হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে উঠে চলে গেলো। রুমের কাছে গিয়ে দেখে দ্বীপ বাচ্চাদের সাথে কি যেন একটা খেলা খেলছে। খেলাটা এমন, দ্বীপ চার আঙুল বিছানার উপর ভর করে ধরে রেখেছে আর একেকজন নিচে থেকে তার হাতে ছুঁতে চাচ্ছে কিন্তু পারছেনা, কারণ দ্বীপ তার আগেই হাত সরিয়ে ফেলে। চিত্রা সেখানে গিয়ে বসার সাথে সাথে সবাই রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
চিত্রা জিজ্ঞাসা করলো..
___কি খেলা এটা?
___ চিত্রা তুমি খেলবা এটা? নাহহ থাক তুমি পারবা না। উল্টো হাতে থাপ্পড় খাবা। খেলাটাই থাপ্পড়ের।
___ আমি পারবোনা মনে হচ্ছে? ওকে আমি খেলবো।
বলেই চিত্রা হাত পেতে বললো,
__দেন দেখি।
দ্বীপ বলল..
___ শুনো শর্ত আছে, তোমাকে আমি ছুঁতে না পারলে তোমার এক পয়েন্ট, কিন্তু ছুঁতে পারলে খেলার ১০ ধাপ ওভার হলে যতবার ছুঁতে পেরেছি ঠিক ততবার হাত পেতে দিতে হবে, তখন গুনে গুনে ততবার থাপ্পড় খেতে হবে। পারবা তো? আর ধরো আমি গেইমে আছি তাই যতবার ইচ্ছে হাত উপরে উঠাতে পারবে কিন্তু তুমি যে ছুঁতে চাইবে সেটা মাত্র তিনবার হাত বাড়ালেই এক ধাপ শেষ হবে, আর তখন আমার এক পয়েন্ট হবে। এভাবে ১০ ধাপ পার হলে তোমার পালা আসবে,বুঝছো?
চিত্রা ভাবসাব নিয়ে বললো
___ অবশ্যই আপনি আমাকে ছুঁতে পারবেন না। শুরু করা যাক।
___ আচ্ছা তাহলে আমি আগে হাত দিচ্ছি, তুমি আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করো।
বলেই দ্বীপ আঙুল ভর করে হাত রাখলো। চিত্রাও নিচু হয়ে নিচ থেকে হাত প্রস্তুত করেছে ছোঁয়ার জন্য।
চিত্রা ছুঁতে যায় কিন্তু দ্বীপ হাত সরিয়ে ফেলে এভাবে ছয় ধাপেও চিত্রা দ্বীপকে একবার ছুঁতে পারেনি।
সপ্তম পর্যায়ে গিয়ে একবার ছুঁতে পেরেছে। এরপর বাকি তিনটাও মিস। চিত্রা ভেবেছিল দ্বীপের অনেকগুলো মিস হবে এবং সে দ্বীপের হাতে থাপ্পড় বসাতে পারবে। কিন্তু বেচারি হতাশ। শুধুমাত্র একটা থাপ্পড় দিলো, যেটা দিয়ে উল্টো নিজের হাতেই ব্যাথা পেলো।
তারপর আসলো চিত্রার পালা, চিত্রাও আঙুল ভর হাত রাখলো। দ্বীপ ছুঁয়ে ফেলে এমন ভাব,চিত্রা হাত উঠিয়ে নেয়, কিন্তু দ্বীপ ছুঁতে আসেনা। আবার ভাবভঙ্গি ছাড়াই হুট করে ছুঁয়ে ফেলে চিত্রা বুঝতেই পারেনা। এভাবে নবম ধাপে এসে চিত্রা দেখলো তার মাত্র দুই পয়েন্ট, ভয়ে তার গলা শুকিয়ে গেলো। শেষটাতে দ্বীপ ছুঁতে না পারলেও হাতের উপর ৭ টা থাপ্পড় খেতে হবে ভেবেই কপালে ঘাম ভেসে উঠছে তার বুক ধুকধুক করছে।কিভাবে এখান থেকে পালাবে এবার?!
চিত্রা নিজের মাথায় হাত দিয়ে নিজেকেই বকতে লাগলো, কেন যে পাকামো করতে গেলো সে!
চলবে…..
গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি!