#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২৫
প্রায় মিনিটদশেক পর ধীর গতিতে মায়ার গলা থেকে মুখ উঠালো আরিয়ান।চাঁদের স্নিগ্ধ শীতল আলো এসে পরেছে ব্যালকনিতে।আবছা আবেগি আলোর ছোঁয়ায় মায়ার লজ্জারাঙা চেহারার সৌন্দর্য্য যেন হুড়মুড় করে বেড়ে যাচ্ছে।আরিয়ান ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে।চোখ বন্ধ করে মাথা নুইয়ে রেখেছে মায়া।একহাতে আরিয়ানের পিঠে ক্রমাগত নখের আচঁর দিয়ে যাচ্ছিল সে।এখন কিছুটা শিথিল হয়েছে।অবাধ্য খোলা চুলগুলো আবারো ছড়িয়ে পরেছে তার সারামুখে।আরিয়ান কোমড় থেকে একহাত সরিয়ে চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দেয়।ধীরে ধীরে তাকায় মায়া।তবে চোখ তুলে না।পিটপিট করে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে।
ঘনঘন নি:শ্বাস নিচ্ছে সে।পরিবেশ উষ্ম হয়ে উঠছে।আরিয়ান তার ঠোঁটে হাল্কাভাবে আঙ্গুল স্লাইড করে।
মায়া কাঁপছে।আচ্ছা,লজ্জা পেলে কি সবাই কাঁপে?নাকি শুধু মায়াই কাঁপছে?
আরিয়ান ঠোঁট থেকে হাত সরিয়ে মায়ার থুতনি ধরে মুখ তুলে বলে,
—“তাকাবেনা আমার দিকে?রাগ করলে?…আমার ছোয়াঁ তোমার পছন্দ নয় মায়াবতী?”
মায়া চমকায়।আরিয়ান কি তাকে ভুল বুঝলো?সে তড়িঘড়ি করে আরিয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
—“না না তেমনটা না।আমি আসলে…”
—“তুমি আসলে…?”
—“আমার লজ্জা লাগছে”।
আরিয়ান শব্দ করে হেসে উঠে।মায়ার এই সরলমনে বলা সোজা কথাগুলো তার বেশ লাগে!এই কথাগুলোর প্রতি প্রচন্ড ভালোলাগা কাজ করে তার!
হুট করেই মায়াকে কোলে তুলে নেয় আরিয়ান।ঘরে যেয়ে বিছানায় সুইয়ে দেয়।ঘরের লাইট নিভিয়ে গিয়েছিলো মায়া।আরিয়ান যেয়ে তা আবার জ্বেলে দেয়।গায়ের টি-শার্টটা একটানে খুলে ফেলে।মায়া অনুসন্ধানি কন্ঠে বলে,
—“কি করছেন?”
—“আমি কি করছি সেটা বাদ দাও।বরং তুমি কি করেছো তা দেখো।বলেই মায়ার দিকে পিঠ দিয়ে দাড়ালো আরিয়ান।
মায়ার চোখগুলো বড় বড় হয়ে যায়।ফর্সা পিঠ লাল হয়ে গেঁছে।খামছিতে একজায়গায় কেটে পর্যন্ত গেছে।আর বাকি জায়গায় আঁচরে লাল হয়ে আছে শুধু।মায়া কাঁচুমাচু করে তাকিয়ে বলে,
—“সরি”।
আরিয়ান হেসে বলে,
—“আরে অদ্ভুত!সরি বলছো কেন?প্রেয়সীর নখের আঁচরে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার সৌভাগ্য সবার থাকেনা।সেদিক দিয়ে বলতে গেলে তুমি আমার সেই সৌভাগ্য করে দিলে।বুঝলে?
মায়া উওর দেয়না।অগোছালো ভাবে একটু হাসে।
আরিয়ান কখনোই তাকে কোন কিছুর জন্য দোষারূপ করে না।মানে তার কোন ভুল আরিয়ানের চোখেই পরেনা কখনো।সে কাউকে মেরে ফেললেও মনেহয় আরিয়ান বলবে,”নিশ্চয় লোকটার দোষ ছিলো।একদম
ঠি ক করেছো মেরে”
____________
সকালবেলা রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে আরিয়ান।আজ অফিসে যাবেনা সে।মায়াকে নিয়ে এগারোটার দিকে হসপিটালে যেতে হবে।ব্যান্ডেজ খুলে দিবে তাই সে নিজেই যাবে সাথে।
মায়া বিছানায় হেলান দিয়ে বই পরছে।কদিন পর পরীক্ষা তার।এতদিন পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলো তাই এখন একটু চাপ নিয়েই পড়ছে।
হঠাৎ আরিয়ানের ফোন বেজে উঠে।মায়া একবার তাকিয়ে আবারো পড়ায় মনোযোগ দেয়।
আরিয়ান ফোন রিসিভ করে।মামা ফোন দিয়েছে।নিশ্চিত বাসায় যাওয়ার কথা বলবে।
—“হ্যালো,আরিয়ান?”
—“হ্যাঁ,বলো মামা।”
—“তোরা তো আসলিনা?জানি তোর এই বাসায় আসা পছন্দ না।তবুও মেয়েটাকে নিয়ে একটু আসা উচিত না?”
—“আসবো মামা।আজ বিকেলেই আসবো।”
—“তাহলে দুপুরে আয়।দুপুরে রাতে এখানে খেয়ে যাবি।
আরিয়ান কিছু একটা ভেবে বলে,
—“আচ্ছা,ঠিকাছে।”
—“সত্যি আসবি তো?”
—“আমি কখনো তোমাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছি?”
—“আচ্ছা ঠিকাছে।দেরি করিস না।”
আরিয়ান “হুম” বলে ফোন কেটে দেয়।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দশটা বাজে।চোখ নামিয়ে আবারো কাজে ধ্যান দেয় সে।মায়া কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠে,
—“আপনার মামার ছেলের সাথে কাল ওমন করলেন কেন?মামার সাথে তো ভালো করেই কথা বললেন”
—“ওর সাথে আমার একটু ঝামেলা আছে”
—“কি ঝামেলা?”
—“অনেক প্যাঁচানো বিষয়।তোমার মাথায় ঢুকবেনা।”
—“বলুননা প্লিজ।
আরিয়ান ল্যাপটপটা বন্ধ করে।মায়ার খাবারের প্লেট পাশের টেবিলে রেখে গিয়েছে ইতি।মায়া এখন খাবেনা তাই বলেছে যখন খাবে তাকে যেন ডাক দেয়।আরিয়ান উঠে প্লেটটা হাতে নিয়ে মায়ার পাশে বসে।
মুখের সামনে খাবার তুলে বলে,
—“শুনতে চাচ্ছো,তাই অল্প করে বলছি।
মায়া অকপটে মাথা নাড়ায়।মুখে খাবার নিয়ে বলে,”বলুন।”
আরিয়ান একটা ছোট্ট শ্বাস নিয়ে বলে,
—“He is such a characterless person.ওর এই স্বভাবের জন্য কখনোই ওর সাথে আমার মিলতো
না।কথা বার্তাও বেশি বলতামনা আমরা।আর ও শুধু শুধুই আমার সাথে ঝামেলা বাঁধাতো।কারণ ও একপ্রকার হিংসা করে আমার সাথে।কেন আমার কম্পানি এত সফল হলো?কেন ওর ক্যারিয়ার আমি সেট করে দেই না?আমার থেকে দুই বছরের ছোট।কিন্তু নিজের স্টাডি নিয়ে একেবারেই সিরিয়াস না।আসলে মামার টাকা আছে তো।তাই এসব বিষয়ে ওর অনেকটা গা ছাড়া ভাব।”
আরিয়ান থামে।মায়া মনোযোগ দিয়ে শুনছে।আরিয়ান আবারো মায়াকে খাইয়ে দিয়ে বলে,
—“এসব নিয়ে ঝামেলা চললেও আসল সমস্যা হয় একবছর আগে।প্রায়ই লেট নাইট পার্টি করতো ও।রাতে ফিরতোনা।তেমনই এক পার্টিতে একটা মেয়েকে ও হ্যারেস করে।মূলত ফিজিক্যালি এ্যাবিউস করে।খুব বাজে ভাবে।
তো মেয়েটা সেইদিন কোনরকম নিজেকে বাঁচিয়ে পুলিশে কেস করতে চাচ্ছিল।সিসি ক্যামেরায় প্রমান থাকা সত্তেও ইউ নো টাকার প্রভাবে আর মামা যেহেতু পুলিশ অফিসার তাই খুব সহজেই রাহাত কে ছাড়িয়ে নেয়।সেসময় আমি মেয়েটাকে সাহায্য করেছিলাম।মামা মামির অনুরোধ করা সত্তেও আমি কেস করি এ্যান্ড ফলস্বরুপ তিনমাস জেল খাটতে হয় রাহাতকে।
।আমার যেটা ঠি ক মনে হয়েছিলো আমি সেটাই করেছি।মামা মামি কষ্ট পেলেও এ নিয়ে আমাকে কড়া কিছু বলেনি।কিন্তু এরপর থেকে রাহাতের সাথে আমার সম্পর্কটা খুব বেশি খারাপ হয়ে যায়।
কথা শেষে জোরে একটা শ্বাস ছাড়ে আরিয়ান।মায়ার খাবারের প্লেট খালি হয়ে গিয়েছে ততক্ষনে।মায়াকে পানি খাইয়ে দিয়ে উঠে যায় সে।মায়া অন্যমনস্ক হয়ে বলে,
—“আপনি এতো ভালো কেন?”
আরিয়ান হাসে।ঝুঁকে গিয়ে মায়ার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে বলে,
—“উঠে পরো।হসপিটালে যেতে হবে।সেখান থেকে আবার মামার বাসায়।”
_____________
হাতের ব্যান্ডেজ খুলে দেয়া হয়েছে মায়ার।হাত নাড়াতেও কোন সমস্যা হচ্ছেনা।তবে কপালের কাঁটাটা এখনো
ঠি ক হয়নি তাই সেখানে নতুন করে ব্যান্ডেজ করে দেয়া হয়েছে।
বর্তমানে গাড়িতে বসে আছে তারা।গাড়ি থামে সুন্দর একটা বাসার সামনে।আরিয়ানের মামার বাসা এটা।
গাড়ি থেকে বের হতেই একজন মধ্যবয়স্ক ধাঁচের লোক এগিয়ে আসে।আরিয়ান হাসিমুখে বলে,
—“কেমন আছো মামা?”
প্রতিউওরে লোকটা আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে।পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলে,
—“ভালো আছি বাবা।”
এটাই আরিয়ানের মামা বুঝতে পেরে মায়া দ্রুত সালাম দেয় উনাকে।সজীব খান সালামের উওর দিয়ে মায়ার মাথায় হাত রেখে বলে,
—“আসো মা ভেতরে আসো।”
মায়া খুবই মুগ্ধ হয় তার ব্যবহারে।ভেতরে যেতেই একজন মহিলা উপর থেকে নিচে নামে।মায়া বুঝে এটা আরিয়ানের মামি।মায়া সালাম দিতেই সে এসে মায়াকে জড়িয়ে ধরে সজীব খান কে উদ্দেশ্য করে বলে,
—“দেখেছো,মেয়েটা কতো সুন্দরী।কি মায়াবী চেহারা।বলেছিলাম না আরিয়ানের পছন্দ আছে।”
মায়া একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরে।রুপের প্রশংসা শুনতে তার কেমন যেন অদ্ভুত লাগে।যেটার উপর মানুষের কোন হাতই নেই সেটা নিয়ে এতো প্রশংসা কিসের?
______________
দিনটা ভালোই কাটে মায়ার।আরিয়ানের মামা-মামি খুবই আন্তরিক।তবে একটা জিনিস খুবই অবাক লাগে ।সারাদিনে একবারও রাহাতের ছায়া পর্যন্ত দেখেনি সে।এমনকি খাওয়ার সময়ও সে ছিলোনা।সে তো নিশ্চয় এই বাসায়ই থাকে।মামা-মামি একবার তার কথা বললোনা পর্যন্ত।
তবুও মুখে কিছু বলেনা সে।পাছে আরিয়ান রেগে যায়।
সন্ধ্যাবেলা বাসার বাইরেটা তাকে ঘুরে দেখাচ্ছিলো আরিয়ান।হঠাৎ তার ফোন আসায় সে মায়াকে দাড়া করিয়ে একটু দূরে সরে যায়।মায়া চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে।ওপাশের দিকটা অন্ধকার।লাইট জ্বালানো নেই।
হঠাৎ একটা হাত তাকে হেঁচকা টানে ওপাশে নিয়ে যায়….
#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২৬
মায়া চিৎকার দেয়ার আগেই একটা শক্ত হাত তার মুখ চেপে ধরলো।মুখ দিয়ে কোনরকম আওয়াজ করতে পারলোনা সে।ছেলেটা তার পিছে দাড়িয়ে আছে তার উপর চারিদিকে অন্ধকার।হৃদপিন্ডটা তুমুল গতিতে লাফাচ্ছে তার।গলা শুকিয়ে আসছে।ছেলেটা তাকে ওই অবস্থায় ধরেই বাগানের আরো ভেতরে নিয়ে যায়।আরিয়ানের কন্ঠও আর শোনা যাচ্ছেনা।
ছেলেটা তার মুখটা কানের সামনে এনে অনেকটা শীতল কন্ঠে বলে,
—“দেখেন,আপনার মুখ চেপে রাখতে আমার একটুও ভালো লাগছেনা।তাই বলছি যে,আমি হাতটা সরাচ্ছি,কিন্তু আপনি একদম চিৎকার করবেন না।ওকে?”
মায়া উপর নিচে মাথা নাড়ায়।তার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে নোনাজল।কন্ঠটা শুনে সে বুঝতে পেরেছে এটা রাহাত।
মুখ থেকে হাত সরাতেই জোরে জোরে শ্বাস নেয় মায়া।রাহাত তার হাত ছেড়ে দিতেই সে দৌড় দিতে চায় কিন্তু পারেনা।রাহাত তাকে কাছে টেনে নিয়ে একহাতে কোমড় পেচিয়ে ধরে।অসহ্য লাগে মায়ার,রাহাতের স্পর্শ তার সহ্য হচ্ছেনা।সকালে তার সম্পর্কে ওসব শোনার পর এখনতো গা গুলিয়ে যাচ্ছে।
—“যেতে দেন বলছি।এখানে কেন এনেছেন?”
—“আমি জানি আরিয়ান হয়তো আপনাকে আমার সম্পর্কে অনেক কিছুই বলেছে।এবং আপনি হয়তো একদমই সেফ ফিল করছেন না আমার সাথে।বাট আই প্রমিস,আমি খারাপ কিছু করবোনা আপনার সাথে।আরিয়ান হয়তো চলে আসবে একটু পরেই।আপনাকে শুধু একটা জিনিস দেখানোর জন্য এনেছি।বলেই নিজের ফোন বের করে রাহাত।কিছু একটা খুঁজে বের করে বলে,আপনি জাস্ট এটা একটু দেখুন।”
মায়া তার বাহুতে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করে।না পেরে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে,
—“আমি কিছু দেখবোনা।আপনি প্লিজ আপনার হাতটা সরান।যেতে দিন আমাকে।”
রাহাত হাত সরায়না।বরং আরেকটু নিজের সাথে লেপ্টে নিয়ে বলে,
—“কাঁদবেননা প্লিজ।একদম সময় নেই।এটা দেখুন।বলে একটা ভিডিও প্লে করে রাহাত।জার্নালিস্ট জীবনকে মারার ভিডিও।মায়া জলভরা দৃষ্টিতে সেদিকে তাকায়।এটা না দেখা ছাড়া উপায় নাই তার।
স্ক্রীনে আরিয়ানকে দেখে অবাক হয় মায়া।আরিয়ানের সামনে আরেকটা লোক।এরপর ভিডিও চলতে থাকে।
আরিয়ানের হাতে ছুড়ি নিয়েছে মাত্র তখনই ফোনটা পরে যায় রাহাতের হাত থেকে।মায়া চমকে পেছনে তাকায়।আরিয়ানকে দেখে কলিজায় পানি আসে তার।এতক্ষন ভিডিওতে দেখা সবকিছু মাথা থেকে ঝড়ে যায়।রাহাতকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় আরিয়ান।মায়াকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।পকেট থেকে বন্দুক বের করে রাহাতের দিকে তাক করে রেখে মায়াকে বলে,
—“এই অসভ্যটা কিছু করেছে তোমাকে?”
মায়া উওর দেয়না।সে আরিয়ানকে জাপটে ধরে কাঁদছে।
আরিয়ান তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।চুলের ভাঁজে ঠোঁট ছুইয়ে দেয়।রাহাত মাটিতে পরে আছে।
—“কি করেছিস তুই ওর সাথে?এতো স্পর্ধা তোর?তোকে আমি সাবধান করেছিলাম রাহাত,ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট।কিন্তু তুই শুনলিনা।মায়াকে….
—“উনার সাথে কিছু করিনি আমি।শুধু তোমার আসল চেহারাটা উনাকে দেখাতে চেয়েছিলাম।এ্যান্ড আই এম অলমোস্ট সাকসেসফুল।যদিও পুরোটা দেখেননি।তবুও”
আরিয়ান তার বাহুতে শুট করে।কঁকিয়ে উঠে রাহাত।
—“জাস্ট শাট আপ!কার আসল চেহারা?..কি দেখাচ্ছিলি তুই ওকে?তোর ওসব মিথ্যা কথা অন্তত মায়া বিশ্বাস করবেনা।আসল কথা হলো,তোর নষ্ট নজর পরেছে মায়ার উপর”
রাহাত হাত চেপে ধরে উঠে দাড়ায়।গড়গড় করে রক্ত পরছে তার হাত থেকে।দাঁতে দাঁত চেপে সে বলে উঠে,
—“মায়া,আমি আপত্তিকর কিছু করেছি আপনার সাথে?বলুন!”
মায়া দু’পাশে মাথা নাড়ায়।রাহাত তাকে ধরেছিলো ঠি ক কিন্তু তার কথায়ই সে বুঝতে পেরেছে তার কোন খারাপ উদ্দেশ্য ছিলনা।।রাহাতের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে।মায়ার দৃষ্টি নিচের দিকে।রাহাতের হাত থেকে রক্ত গড়াচ্ছে।রক্তে ভয় লাগে তার।
চারপাশে লাইট জ্বলে উঠে।আরিয়ানের মামা-মামি দৌড়ে আসে।রাহাতের হাতের রক্ত দেখে মামি দ্রুত তাকে ধরে।কাঁদতে কাঁদতে আরিয়ানকে বলে,
—“ও কি করেছে বাবা?”
—“সেটা তোমার ছেলেকেই জিজ্ঞেস করো মামি।”
রাহাত হাসতে হাসতে মায়াকে দেখিয়ে বলে,
—“উনাকে তোমার ভাগ্নের সত্যিটা দেখাতে চেয়েছিলাম মা।উনি যাকে এতটা বিশ্বাস করে সে যে কতটা ভয়ংকর তাই দেখাচ্ছিলাম।কিন্তু পারলামনা।তবে একদিন দেখাবো অবশ্যই।”
আরিয়ান আবার তার দিকে বন্দুক তাঁক করে।আরিয়ানের মামা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে,
—“ওকে ছেড়ে দাও আরিয়ান।আর কখনো এমন কিছু হবেনা।আমি কথা দিচ্ছি তোমাকে।”
আরিয়ান বন্দুক নামায়।রাহাত ঠোঁটে তখনো হাসি।
আরিয়ান জোরে একটা শ্বাস নিয়ে রাগ সংবরণ করে।আর একমুহূর্তও সেখানে না থেকে মায়াকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
____________
গাড়ি চলছে নিজস্ব গতিতে।রাস্তা ফাঁকা।তবুও জোরে ড্রাইভ করছেনা আরিয়ান।গাড়ির জানালা খোলা।শীতল বাতাস ঢুকছে।মায়া বাইরে তাকিয়ে আছে।একটা কথাও বলেনি সে।বাইরের অন্ধকারেই সে কিছু একটা
খুঁজে বেরাচ্ছে সে।হঠাৎই সে নিরবতা ভেঙে বলে,
—“একটু শুনবেন?”
আরিয়ান একবার তার দিকে তাকায়।তারপর আবারো ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিয়ে বলে,
—“বলো”।
—“আপনি কি করেছিলেন ওই সাংবাদিকটার সাথে?”
আরিয়ান চমকায় না।সে জানে এমন কিছুই হতো।একটু আগেই রাহাত তাকে সেই ভিডিওটা পাঠিয়েছে।সাথে মেসেজে লেখা ছিল,ভিডিওটা কেমন হলো ভাইয়া?”তখনই সে বুঝতে পেরেছিলো রাহাত এটাই দেখিয়েছে মায়াকে।সে চলে আসায় হয়তো পুরোটা দেখাতে পারেনি।
আরিয়ান শান্ত কন্ঠে বলে,
—“তুমি পুরো ভিডিওটা দেখেছিলে?”
—“না”।
আরিয়ান গাড়ি থামায়।পকেট থেকে ফোন বের করে মায়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
—“নাও দেখো।”
মায়া কাঁপা হাতে ফোনটা ধরে।আরিয়ান যখনই ছেলেটার গালে ছুড়ি ঢুকায় তখনই চিৎকার করে উঠে মায়া।
হাত থেকে ফোনটা ফেলে দেয় সে।ভয়ে হাত পা কাঁপছে।মাথা ঘোরাচ্ছে।
আরিয়ান সিটে মাথা এলিয়ে বসে ছিলো।ফোন পরার শব্দে সে তাকায়।মায়া দুহাতে মুখ চেপে রেখেছে।
ক্রমাগত কাঁপছে ।চোখে মুখে ভয় স্পষ্ট।আরিয়ান কখনো মায়ার চোখে নিজের প্রতি কোন ভয় দেখেনি।আজ দেখছে।সে ধীরগতিতে ফোনটা উঠায়।পকেট রেখে বলে,
—“তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছো মায়াবতী?”
~চলবে~
~চলবে~