আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️ পর্ব ২৯

#আঁধার_ভিড়ে_সন্ধ্যাতারা❤️
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
#পর্ব-২৯

স্বভাবতই ব্রেক কষলো আরিয়ান।গাড়ি থেমে গেলো।আজকাল এই অভ্যাসটা হয়েছে তার।রাগ উঠলে আগে গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিত এখন আর তা করেনা।মায়া থাকে সাথে।যদি আ্যক্সিডেন্ট হয়ে যায়,এই ভয়ে গাড়ি থামিয়ে দেয়।
একটা শুকনো ফাঁকা ঢোক গিললো মায়া।কিন্তু আরিয়ানের বাহু থেকে মাথা উঠালো না।
আরিয়ান গম্ভীর কন্ঠে বললো,
—“আগে বলোনি কেন?”

—“আপনি বলেছিলেন আপনি রাগ করবেন না।”

আরিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থাকে।গলার স্বর নামিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে,
—“রাগ করিনি,বলো।কি করেছে ও?”

—“রাগ করেননি তো গাড়ি থামালেন কেন?স্টার্ট দেন।যেতে যেতে বলি।”

আরিয়ান ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে গাড়ি স্টার্ট দেয়।মায়া মুচকি হেসে বলে,
—“আস্তে চালিয়েন হ্যাঁ?জোরে চালালে আমার ভয় করে।”

আরিয়ান সামনের দিকে তাকিয়েই বলে,
—“জানি আমি।,,,বলো এখন।”

মায়া সবটাই খুলে বলে আরিয়ানকে।রাহাত যা যা বলেছিলো সবকিছু।আরিয়ানের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।ফর্সা চেহারা লাল হয়ে যায়।দাঁতে দাঁত চেপে ড্রাইভিং করতে থাকে।
মায়াও কিছু একটা বলতে যেয়েও বলেনা।চুপচাপ আরিয়ানের একহাত জড়িয়ে ধরে বাহুতে মুখ লুকিয়ে রাখে।
ভেবেছিলো আরিয়ানকে বলবেনা কথাগুলো।কিন্তু না বলেও থাকতে পারলোনা।কেন জানি কথাগুলো লুকাতে ইচ্ছা করছিলোনা।যাক!এখন বলেছে তবেই শান্তি লাগছে।

গাড়ি থামে অপরিচিত একটা জায়গায়।মায়া মাথা উঠিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়।অনেকটা পার্কের মতো জায়গা।গাছপালা আছে।তবে নির্জন,পার্কে তো মানুষ জন থাকে।ভ্রু কুচকে সে বলে,
—“এটা কোথায়?”

আরিয়ান জবাব না দিয়ে বেরিয়ে যায়।মায়ার পাশের দরজা খুলে হাত বাড়িয়ে বলে,
—“বের হও।”

আরিয়ানের হাত ধরে বেরিয়ে আসে মায়া।গাড়ির দরজা আটকে দিয়ে সামনে হাঁটা ধরে আরিয়ান।
মায়া চারিদিকে তাকিয়ে বলে,
––”কোথায় যাচ্ছি?”

আরিয়ান উওর না দিলেও সামনে তাকাতেই উওর পেয়ে যায় মায়া।সামনে রাহাত দাড়িয়ে আছে।তার পাশে আরো দুইজন ছেলে।সবার হাতেই সিগারেট।মায়া আরিয়ানের কাছে ঘেঁষে যায়।আরিয়ান কে দেখে বাকি দুইজন ছেলে হাত থেকে সিগারেট ফেলে দিলেও রাহাত ফেলেনা।আরিয়ান সামনে গিয়ে তাদের ইশারা করতেই প্রায় দৌড়ে পালিয়ে যায় ছেলে দুটো।রাহাত তখনো ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছে।
মায়া হাল্কা কেঁশে উঠতেই সিগারেটটা নিচে ফেলে পা দিয়ে পিঁশে ফেলে রাহাত।আচমকাই আরিয়ান তার গলা চেপে ধরে।গাছের সাথে হেলান দিয়ে ছিলো রাহাত।সেখানেই ঠেষে ধরায় ছুটতে পারে না সে।

—“মায়াকে ভালোবাসিস তাইনা?”

রাহাত উওর দিতে পারেনা।শ্বাস আটকে আসছে তার।চোখ বড় বড় করে ছাড়তে ইশারা করে সে।আরিয়ান গাছের থেকে আলগা করে আবারো পিছে ঠেকিয়ে সজোরে বাড়ি দিয়ে গলা ছাড়ে।কাঁশতে থাকে রাহাত।কাশির থেকে মনে হয় হাল্কা রক্তও বেরিয়ে আসে।আরিয়ান তার গালে ঘুষি মারে।শুকনো পাতার উপর পরে যায় রাহাত।মায়া খিঁচে চোখ বন্ধ করে।রাহাত জড়ানো কন্ঠে বলে,
—“হ্যাঁ,ভালোবাসি।অনেক ভালোবাসি।কি করবে তুমি?”

আরিয়ান পাশ থেকে একটা বড় পাথর হাতে তুলে।মায়ার হাত ছাড়িয়ে রাহাতের সামনে ঝুঁকে পাথরটা মুখ বরাবর ধরে বলে,
—“ওর দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস করেছিস তুই।তাই তোর এই মুখটাই রাখবোনা।পাথরের আঘাতে বিভৎস করে দিব।”বলে পাথরটা দিয়ে মুখে বাড়ি দিতে নিলেই মায়া তার বাহু ধরে ফেলে।অস্থির কন্ঠে বলে,

—“আপনি আমাকে প্রমিস করেছিলেন।”

থেমে যায় আরিয়ান।মনে পরে,মায়াকে সে প্রমিস করেছিলো আর কখনো হিংস্র হবেনা।আর পাথর দিয়ে কারো মুখ থেতলে দেয়া হিংস্রতার ই পরিচয়।উঠে দাড়ায় সে।পাথরটা ছুড়ে ফেলে রাহাতের বুকের উপর পা রেখে বলে,

—“শুধু ওর জন্য বেঁচে গেলি আজকে।নয়তো তোকে কথা বলার অবস্থায় রাখতামনা।মাইন্ড ইট্।”

মায়া তার বাহুর শার্ট টেনে বলে,
—“চলুন বাসায় যাই।”

আরিয়ান পা দিয়ে একটা বুকে বাড়ি মেরে মায়ার হাত ধরে উল্টোদিকে ঘুরতেই রাহাত বলে,
—“আমার অনুভূতিগুলো আপনার কাছে একেবারই মূল্যহীন মায়া?”

মায়া দাড়ায়।ঘাড় ঘুরিয়ে বলে,
—“আপনার অনুভূতি গুলো আমার কাছে কখনোই মূল্যবান ছিলোনা তাই মূল্য অমূল্য হিসাবে না যাওয়ার শ্রেয়।,,,এসব অহেতুক অনুভূতি সামলানো শিখা উচিত আপনার।দয়া করে আর বিরক্ত করবেননা প্লিজ।”

বলেই মায়া ঘাড় ঘুড়িয়ে নেয়।রাহাত ম্লান হেসে বলে,
—“আপনি যখন বলেছেন তখন আর কখনোই কিছু করবোনা।কথা দিচ্ছি।”

মায়া কোনো অভিব্যক্তি প্রকাশ করেনা।আরিয়ানের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়।
_________________
বাসায় ফিরেই শাওয়ার নিতে ঢুকেছে মায়া।আরিয়ান খালি গায়ে বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে আছে।একহাত কপালে ঠেকানো।
এর মধ্যই বাধলো বিপত্তি।মাত্র তোয়ালে পেচিয়ে গা ভিজিয়েছে মায়া তখনই আর গরম পানির বের হচ্ছেনা।কয়েকবার সুইচটা চালু-বন্ধ করলো।কিন্তু কোনো লাভ হলোনা।তার উপর সে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে পারেনা।শীত লাগে।কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায়।পানিতে হাত দিয়ে দেখে বরফ ঠান্ডা।এভাবে কতক্ষন ভেজা শরীরে দাড়িয়ে থাকা যায়।উপায় না পেয়ে।হাল্কা করে দরজা খুলে মায়া।মুখ বের করে আরিয়ানকে শুয়ে থাকতে দেখে গলা বাড়িয়ে ডাকে,
—“একটু এদিকে আসেননা।”

কপাল থেকে হাত সরায় আরিয়ান।মায়াকে এভাবে দেখে মুখ বের করতে দেখে উঠে বসে বলে,
—“কি হয়েছে?”
—“গরম পানি বের হচ্ছেনা।গিজারে সমস্যা মনে হয়।ঠিক করে দিয়ে যান।”

আরিয়ান ভ্রু কুচকে এগিয়ে যায়।দরজার সামনে দাড়িয়ে বলে,
—“দরজা না খুললে ঢুকবো কিভাবে?”

মায়া বোকা হেসে পিছে দাড়িয়েই খুলে দেয়।দরজা দিয়ে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে।লজ্জায় লাল হয়ে গেছে গালদুটো।আরিয়ান ভেতরে ঢুকে।সারা ওয়াশরুম জুড়ে মিষ্টি গন্ধ।তীব্রভাবে মায়ার শরীরের মোহনীয় ঘ্রানটা নাকে লাগছে।মায়ার দিকে তাকিয়ে একটা ফাঁকা ঢোক গিলে আরিয়ান।মায়ার চোখে মুখে পানি লাগা।ভেজা চুলগুলো লেপটে আছে।চুল দিয়ে গড়িয়ে পরছে পানি।দরজার পিছে দাড়ানো তবুও সে বুঝতে পারছে মায়ার শরীরে শুধু তোয়ালে পেঁচানো,ফর্সা কাঁধ বেরিয়ে আছে।আরিয়ান দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।গিজারে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ কিছু একটা করে।তারপর মেইন সুইচ বন্ধ করে আবার চালু করে।গিজারের লাইট জ্বলে উঠে।
মায়া ঠোঁট এলিয়ে বলে,
—“ঠিক হয়ে গেছে মনে হয়।”

আরিয়ান তার দিকে তাকায়।এগিয়ে গিয়ে দরজায় হাত রেখে দুষ্টু হেসে বলে,”ঠি ক তো হয়েছেই কিন্তু তুমিতো আমার মাথা নষ্ট করে দিলে মায়াবতী।”বলে মায়ার হাত ছাড়িয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় আরিয়ান।
লজ্জায় দুহাতে টাওয়াল আকড়ে ধরে মায়া।তার টাওয়ালটা হাঁটু অবধিও যায়নি।তার উপর ভেজা শরীর।
আরিয়ানের গায়ে জামা নেই।লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে মায়া।
আরিয়ান তার কোমড়ে হাত রাখতেই কেঁপে উঠে চাপা স্বরে বলে,
—“কি করছেন?বাইরে যান”

আরিয়ান তাকে কোমড় টেনে কাছে আনে।কাঁধ থেকে ভেজা চুল সরিয়ে দিয়ে চার আঙ্গুল দিয়ে গলার সাইডে স্লাইড করে।ঠোঁট কামড়ে ধরে মায়া।আরিয়ান তাকে কোণা থেকে সরিয়ে ঝর্ণার নিচে দাড়া করায়।একহাত দেয়ালে রেখে ঝর্ণা ছেড়ে দেয়।মুহূর্তেই ভিজে যেতে থাকে দুজনে।আরিয়ানের খালি বুকে হাত রাখে মায়া।একহাত কাঁধে আর একহাত বুকে।
চোখের উপর পানি পরায় ঠি কমতো তাকাতে পারছেনা।পিটপিট করে তাকিয়ে বলে,
—“আ..আপনি…

আরিয়ান তার ঠোঁটে হাত রাখে।আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে বলে,
—“তোমার শরীরের গন্ধটায় কেমন যেন একটা মাদকতা আছে মায়াবতী।নিজেকে একদমই আটকাতে পারছিনা।”
বলে মায়ার গালে চুমু খায় আরিয়ান।মুখ নামিয়ে কাঁধে ঠোঁট ডুবায়।মায়া কোনরকম বারণ করেনা।আরিয়ান কাছে আসায় তার ঠোঁট আরিয়ানের খালি বুক স্পর্শ করেছে কয়েকবার।অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যাচ্ছে শরীরে।গরম
পানি পরছে তবুও কেমন একটা কাঁপুনি দিচ্ছে শরীরে।খানিক পরে আরিয়ান মুখ উঠায়।গালে নাক ঘষে ঠোঁটের কোঁণায় ছোট্ট করে চুমু দিয়ে বলে,
—“জলদি শাওয়ার নিয়ে নাও।বেশিক্ষন ভেজা শরীরে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে।”

—“আপনিও তো ভিজে গেছেন।”

—“সমস্যা নেই।রুমে চেন্জ করে নিচ্ছি।”

বলে তাকে ছেড়ে দাড়ায় আরিয়ান।আপাদমস্তক একবার মায়ার সারা শরীরে চোখ বুলায়।মায়া টাওয়াল আকড়ে ধরে দেয়ালের সাথে লেপটে থাকে।আরিয়ানের এভাবে তাকানোয় আরো বেশি লজ্জা লাগে।
আরিয়ান ধরা গলায় বলে,
—“তুমি অনেক সুন্দর মায়াবতী।অনেক বেশি সুন্দর।”বলে এগিয়ে এসে তার গালে হাত রেখে কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে যায়।

মায়া সেভাবেই কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকে।আরিয়ান সুন্দর বলতে কেমন সুন্দর বুঝিয়েছে সেটা বুঝতে অসুবিধা হয়নি তার।
এগিয়ে গিয়ে দরজাটা আটকে দেয় সে।আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেই হেসে ফেলে।গালের লাল আভাটা মনে হয় আজ সারাদিনেও সরবেনা।

~চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here