মুখপুড়ি নিজের বড় বোনের সংসারটা খোয়াতে বসে আছিস?তোর লজ্জা করলোনা বড় বোনের স্বামীর সাথে সম্পর্কে জড়াতে।তুই বেঁচে আছিস কেন?এসব করার আগে মরতে পারলিনা?
মা বিশ্বাস করো আমি কিছু করিনি।
তুই কিছু না করলে শোভন রাত একটায় তোর ঘরে কি করছিলো।
আমি ডাকিনি মা।উনি নিজেই এসেছেন।
শোভন চট করে উত্তর দিলো,তুমিই তো আমাকে জরুরী কাজের কথা বলে ডেকেছিলে।আমি যেতে চাইছিলাম না বলে তুমি বললে খুব আর্জেন্ট তুমি নাকি বিপদে আছো।তাইতো আমি গিয়েছিলাম।কিন্তু তুমি যে আমাকে এমন প্রস্তাব দেবে আমি ভাবতেও পারিনি ছিঃ বলেই সবার অগোচরে রুপ্সিতার দিকে তাকিয়ে একটা কুটিল হাসি দেয়।
রুপ্সিতার বাবা এতক্ষণ সব শুনছিলেন এবার উঠে এসে সজোরে একটা চড় বসিয়ে দিলেন রুপ্সিতার গালে।এরকম মেয়ে আমার দরকার নেই।
রুপ্সিতা গালে হাত দিয়ে অশ্রুভেজা চোখে বাবার দিকে তাকায়।খুব কষ্ট হচ্ছে ওর।যে বাবা কোনো দিন একটা ধমক দিয়ে কথা বলেনি সেই বাবা আজ তার গায়ে হাত তুলেছে।
রুপ্সিতা ছলছলে চোখে বড়বোন রিতার দিকে তাকাতেই।রিতা মুখ ঘুরিয়ে নেয়।রুপ্সিতা কাকুতি মিনতি করে বলে
বিশ্বাস কর আপু আমি এরকম কিছু করিনি।দুলাভাই মিথ্যে বলছে।
রিতা আরেকটা চড় বসিয়ে দিয়ে বলে
তোকে আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতাম।আর তুই কি করলি?আমার সংসার ভেঙে দিতে চাইছিস বলেই হু হু করে কেঁদে দিলো।
রুপ্সিতা চিৎকার করে বলছে,তোমরা কেন বিশ্বাস করছো না আমি কিছু করি নি।
রুপ্সিতার মা ওকে রুমে টেনে নিয়ে মারতে লাগলো।রুপ্সিতার আর্তনাদ তাদের কারো কানে যাচ্ছে না।
শোভন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছে।
রুপ্সিতার মা মারতে মারতে যখন ক্লান্ত তখন হাতের লাঠিটা ফেলে দরজা আটকে দিয়ে বললেন,আজ থেকে তুই এখানেই পঁচে গলে মরবি।তোর বাইরে যাওয়া বন্ধ।
শরীরের ব্যাথায় নড়তে কষ্ট হচ্ছে।তবুও উঠে দুহাতে দরজা ধাক্কাতে লাগলো রুপ্সিতা।মা প্লিজ দরজা খোলো।মা আমি কিছু করিনি আমি নির্দোষ।
কেউ দরজার আশেপাশে ও নেই।
রুপ্সিতার বাবা ভেঙে পড়েছেন।তিনি ভাবতে ও পারেন নি উনার ছোট মেয়ে এরকম কিছু করতে পারে।
রুপ্সিতার মা ও মুখে আঁচল চেঁপে কাঁদছেন।আজ সমস্ত রাগ মেয়েটার উপর দিয়ে ঝেড়েছেন।
নিজের ঘরে বসে মুখে হাত চেপে ধরে কেঁদে যাচ্ছে রুপ্সিতা।চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে।কিন্তু এই চিৎকার সবার কানে গেলেও কারো হৃদয় স্পর্শ করতে পারছে না।শরীরে অসহ্য ব্যথা তারচেয়েও বেশি ব্যথা হচ্ছে মনের আঘাতে।নিজের পরিবার যখন বিশ্বাস করেনা তখন কতটা কষ্ট হয় সেটা এই মুহূর্তে রুপ্সিতা বুঝতে পারছে।
রুপ্সিতা আর রিতা দুই বোন একে অপরের প্রাণ।আর সেই প্রাণের সুখে কিভাবে হাত বাড়াবে রুপ্সিতা।
ছোটবেলা থেকেই রুপ্সিতা বা রিতা কেউই দরজা লক করে ঘুমায় না।হালকা একটু চাপিয়ে রাখে।বলতে গেলে দরজা লক করার প্রয়োজন পড়ে না।রিতার যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে স্বামী আছে তাই এখন তাদের দরজা লক করাটা স্বাভাবিক।
গতকাল রাতে রুপ্সিতা নিজের পড়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ে।হালকা ঘুম ভারী হয়ে আসার পর নিজের শরীরে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখের ঘুম ছুটে যায় রুপ্সিতার।লাফ দিয়ে উঠে বসে রুমের লাইট জালিয়ে শোভনকে দেখে চমকে উঠে।
নিজের গায়ে ওড়না চাপিয়ে অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,একি দুলাভাই?এতরাতে আপনি আমার ঘরে কি করছেন??
শোভন হালকা হেসে রুপ্সিতার পাশে বসে বলে
দেখতে এলাম তুমি ঠিক করে ঘুমিয়েছো কিনা?
রুপ্সিতা শক্ত কন্ঠে বলে,এতরাতে আপনি একটা মেয়ের ঘরে কেন আসবেন?আমি ঘুমিয়েছি কিনা সেটা আপনার নিশ্চয়ই দেখার প্রয়োজন নেই।কেউ ঘুমিয়েছে কিনা দেখতে এসে তার শরীর স্পর্শ করা কোন ধরনের নিয়ম??
শোভন নিজের হাতটা এগিয়ে রুপ্সিতার হাত ধরতে গেলেই রুপ্সিতা হাত সরিয়ে নেয়।
আপনি এখনই বের হবেন আমার ঘর থেকে।বের হন বলছি।
এবার শোভন রুপ্সিতার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থেকে বলল,আমি তোমাকে ভালোবাসি রুপা।তোমাকে আমি চাই।দেখো আমাদের সম্পর্কের কথা কেউ জানবেনা।কাউকে আমি জানতে দেবো না।
রুপ্সিতার পিলে চমকে উঠে।কি বলছে কি উনি?
আপনি এখনই আমার ঘর থেকে বের হবেন।তা নাহলে আমি এখন সবাইকে ডাকবো।
সবাইকে ডাকার কথা শুনে শোভন বাড়াবাড়ি না করে উঠে দাঁড়িয়ে বলে এটা তুমি ঠিক করলেনা।তোমাকে আমি ভালোয় ভালোয় বললাম আর তুমি আমাকে অপমান করছো?এর ফল তোমাকে ভোগ করতে হবে।বলেই শোভন বেরিয়ে যায়।
রুপ্সিতা দরজাটা লক করে দিয়ে বিছানায় এসে বসে।ওর পুরো শরীর কাঁপছে।কপালে চিকন ঘাম দিয়েছে।এতরাতে ও একটা মেয়ে তাছাড়া ওর বোন যখন এসব জানবে তখন খুব কষ্ট পাবে।রুপ্সিতা আর ঘুমালো না।মনের মাঝে চিন্তা নিয়ে এখন আর ঘুম আসবে ও না।
আস্তে আস্তে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেলো।
হঠাৎ হাতড়ে শোভনকে পাশে না পেয়ে উঠে বসে রিতা।বাথরুম,বারান্দায় চেইক করে রুমের বাইরে বেরিয়ে দেখে শোভন রুপ্সিতার ঘর থেকে বের হচ্ছে।
রিতা চমকে উঠে।এতরাতে শোভন রুপ্সিতার ঘরে কি করছিলো?
শোভন রুমে ঢুকতে গিয়ে রিতাকে দেখে ভয় পেয়ে যায়।রিতার থেকে দৃষ্টি লুকানোর চেষ্টা করছে।
রিতা চট করে প্রশ্ন করে উঠে,রুপার ঘরে কি করছিলে তুমি?
শোভন চুপ থেকে কিছু একটা ভাবলো।রিতা এবার কন্ঠে জোর বাড়িয়ে বলল,কি হলো?উত্তর দিচ্ছো না কেন?
শোভন মুখটাকে ইনোসেন্ট করে বলল,আমি এখন যা বলবো তা শোনার জন্য তুমি প্রস্তুত নও।তুমি আমার কথাগুলো বিশ্বাস করবে না হয়তো?
রিতা রাগ আর কৌতুহল মিশ্রিত চাহনি দিয়ে বলে,কি এমন কথা?আমি শুনতে চাই।
শোভন একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলে
আগে রুমে চলো,আমি তোমায় সব কিছু বলছি।রিতাকে শোভন রুমে নিয়ে এসে নিজের মনগড়ামতো সব কিছু বলতে লাগলো।
রাতে কল আসায় আমার ঘুম ভেঙে যায়।মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি রুপার কল।আমার ভ্রু কুচকে আসে এতোরাতে রুপা আমাকে কেন কল দিবে?ভাবতে ভাবতে কল কেটে গিয়ে আবার কল আসে আমি আর কিছু না ভেবে রিসিভ করি।
কল রিসিভ করতেই রুপা বলল,দুলাভাই একটু আমার রুমে আসেনতো?আমি অবাক হলাম এতোরাতে রুপা আমায় কেন রুমে ডাকছে।আমি ওকে জিজ্ঞেস করতেই ও বলল,ওর নাকি জরুরী কি কথা আছে অনেক রিকোয়েস্ট করছিল।তাই আমি বাধ্য হয়ে গেলাম।কিন্তু
রিতা কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করলো
কিন্তু কি?
শোভন আবার বলা শুরু করলো,আমি ভাবিনি রুপা আমাকে এরকম প্রস্তাব দিবে।ও চায় আমি ওর সাথে রাত কাটাই আর এই ব্যপারে তুমি কোনদিনও জানতে পারবেনা।তুমি যাতে না জানো সেই ব্যবস্থা ও করবে।আমি….
শোভনের কথা শেষ হওয়ার আগেই রিতা সজোরে শোভনের গালে থাপ্পড় মারে।
আমার বোনের নামে আর একটা বাজে কথা বললে আমি তোমার জিব টেনে ছিড়ে ফেলবো।আমি জানি আমার বোন কেমন তাই বলবো তোমার মিথ্যা তোমার কাছে রেখে সত্যিটা বলো।কেন গিয়েছিলে আমার বোনের রুমে?কোন মতলবে গেছো?
শোভন একটু রাগ দেখানোর ভান করে বলল,আমার যদি কোনো মতলব থেকে থাকে তাহলে তোমার বোনের তো এতক্ষনে চিৎকার চেঁচামেচি করার কথা ছিলো।একটা কথা মনে রেখো সবসময় আপন মানুষগুলোই পিঠে পেছন থেকে আঘাত করে।তারপর শুয়ে পড়ে।
ব্যস এটুকু কথাই যথেষ্ট ছিলো রিতাকে বিষয়টা নিয়ে ভাবিয়ে তুলতে।ওই রাতে আর ঘুম হয়নি রিতার।এখন ওর মনে হচ্ছে শোভন সত্যি কথা বলছে।যদি শোভন অসভ্যতামি করে থাকে তাহলেতো রুপার চিৎকার চেঁচামেচি করার কথা ছিলো।কিন্তু ও তো চুপ ছিলো তাহলে কি শোভনের কথাই ঠিক।
এসব ভেবে ঘুম হয়নি রিতার সকাল হতে না হতেই মায়ের কাছে চলে গেলো ব্যাপারটা বলার জন্য।
রিতার মা নামায শেষ করেছেন মাত্র।এসময় বড় মেয়েকে নিজের ঘরে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,কিরে তুই এতসকাল এই ঘরে।কিছু বলবি নাকি?
রিতা বলল,বাবা কোথায়?
তোর বাবা মসজিদে গেছে কেন কি হয়েছে?
রিতা দুহাত সমানে কচলে যাচ্ছে।
মেয়েকে এভাবে দাঁড়িয়ে হাত কচলাতে দেখে রিতার মা ওকে হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে বলে,কি হয়েছে মাকে খুলে বল?না বললে বুঝবো কি করে?
রিতা ঢুকরে কেঁদে ওঠে।রিতার মা মেয়েকে কাঁদতে দেখে চমকে উঠলেন।রিতা একে একে কাল রাতে শোভনকে পাশে না পেয়ে খোজা,শোভনের বলা বানোয়াট কথাগুলো সব মাকে খুলে বলে।
রিতার মা বিষ্ময় নিয়ে বললেন,তোর কি মনে হয় রুপা এসব করেছে?রুপা এসব জীবনেও করবেনা রিতা।তোর কোথাও ভুল হচ্ছে।
রিতা কাঁদতে কাঁদতে বলল,মা আমিও প্রথমে বিশ্বাস করিনি।সারারাত আমি ভেবে দেখেছে শোভনের কথাগুলো।যদি সত্যি শোভনের দোষ থেকে থাকে তাহলে রুপা আমাদের কেন ডাকলোনা?মা আমার সংসারটা নষ্ট হয়ে গেলে আমি কি ভাবে বাঁচবো?
মেয়ের আকুতি-মিনতি শুনে রিতার মাও ভাবতে লাগলেন শোভনের কথাগুলো।এতক্ষনে রিতার বাবা মসজিদ থেকে এসে সব শুনেছে দরজায় দাঁড়িয়ে।
রাতে ঘুম না হওয়ায় সকালের দিকে চোখটা হালকা একটু লেগে এসেছিল তখনই দরজায় কড়াঘাতের শব্দ শুনতে পায় রুপ্সিতা।ওর মা জোরে জোরে ডাকছে,
রুপা!রুপা!
রুপ্সিতা দরজা খুলে দিতেই ওর মা ওকে ড্রইংরুমে টেনে নিয়ে আসে।
বাকি ঘটনা প্রথমে উল্লেখ আছে।
সকাল ঘড়িয়ে বিকাল হতে চললো।কেউ একটিবারের জন্যেও রুপ্সিতার ঘরে এলোনা।মারের কারণে শরীরে জ্বর চলে এসেছে রুপ্সিতার।ফ্লোরেই জ্বর নিয়ে পড়ে আছে।
কাঁদতে কাঁদতে চোখদুটো ফুলে গেছে।জবা ফুলের ন্যায় লাল রং ধারণ করেছে।
রুমের বাইরে থেকে আওয়াজ শোনা যাচ্ছে
রুপ্সিতার বাবা তার মাকে জোরে জোরে বলছে,কালকেই ছেলে পক্ষকে আসতে বলেছি সম্ভব হলে বিয়েটা কালকেই দিয়ে দেবো।তোমার মেয়েকে বলে দিবে যেন কোন রকম জামেলা না করে।যেসব কিছুর জন্য আমাদের সম্মানের কথা ভাবলোনা সেসব স্বামীর কাছ থেকেই বুঝে নিতে বলিও।
নিজের ঘর থেকে বাবা কথাগুলো শুনে নিজের প্রতি এখন ঘৃনা লাগছে রুপ্সিতার।ও কি এতটাই খারাপ?বাবা কি ইঙ্গিত করলো ওর বুঝতে অসুবিধা হলোনা।জ্বর গায়ে নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে আবারো কাঁদতে লাগলো।
#চলবে……..।
#
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#সূচনা_পর্ব
(গল্প কারো কাছে ভালো না লাগলে এড়িয়ে যাবেন।বাজে মন্তব্য করবেন না।সবার লিখা সবার পছন্দ হয় না।ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।হ্যাপি রিডিং।)