আড়ালে_ভালোবাসি পর্ব ১৯+২০

#আড়ালে_ভালোবাসি
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_১৯||

নিশাত পাশে তাকিয়ে দেখে নেহা লোকটাকে জড়িয়ে ধরে আছে নিশাতের বুঝতে বাকি নেই এই সেই লোক যার জন্য এখানে আসা । লোকটা নেহা কে ছেড়ে নিশাতের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে

_” hi beautiful শালীকা আমি সাগর
নিশাত নেহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে হাত মিলায়।নেহা দুইজনের পরিচয় করিয়ে বসে পড়ে।

_” তাহলে আপনি যে আমার পাগল বান্ধুবির মন চুরি করছেন

সাগর একবার নেহার দিকে তাকিয়ে মুখের হাসি ঢির করে নিশাতে কে বলে

_” মন তো আমার চুরি করেছে সেই কবেই। ফেরত দেওয়ার নাম নেই

নেহা চিমটি কাটতে নিশাত আর সাগর এক সাথে হেসে দেয় । নিশাত বলে

_” তো আপনাদের বাড়ির লোক কি জানে ? i mean মেনে নিবে তো পড়ে যদি সমস্যা হয়

নেহা হাত ধরে বলে

_”আমাদের পরিবারের সবাই ওকে পছন্দ করে।আর মেনে না নিলে বুঝাবো

অনেকক্ষণ ধরে নেহা,নিশাত আর সাগর গল্প করছে। নেহার যেনো কথা শেষ হচ্ছে না নিশাত বাধা দিচ্ছে না প্রিয় মানুষের সাথে থাকলে সময় বুঝা যায় না ।

কিছুক্ষণ পর নেহা বলে

_” আচ্ছা এবার তাহলে যাওয়া দরকার অনেক সময় পার হয়ে গেছে ।

_” তোমরা বাইরে যাও আমি বিল দিয়ে আসছি ।

নেহা আর নিশাত বাইরে দাড়িয়ে গল্প করছে তখন সাগর এসে দুইজন কে আইস ক্রিম দেয়।

নিশাত হাত বাড়িয়ে নেওয়ার সময় পিছন থেকে কেউ নিশাতের হাত ধরে ফেলে । নিশাত পিছনে তাকিয়ে দেখে আরহান দাড়িয়ে আছে । চোখ মুখ লাল হয়ে আছে । নিশাত কিছু বলার আগেই আরহান নিশাতের হাত ধরে বাইকের কাছে নিয়ে যায় ।

নিশাত বাইকে উঠে একবার নেহার দিকে তাকায়।

আরহান কোনো দিকে না তাকিয়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে সোজা বাড়িতে চলে আসে । পুনরায় নিশাত কে টানতে টানতে রুমের ভিতর এনে বলে

_” কি করছিলে ওই ছেলের সাথে ? আমাকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করছিলে ?

এইটুকু যথেষ্ট নিশাতের চোখে পানি এনে দেওয়ার জন্য । যে মেয়েটা কঠিন সময় কখনো ভেঙ্গে পড়েনি সে এখন অল্পতে কান্না করে ফেলে । চোখ ভর্তি পানি নিয়ে আরহান কে কিছু বলতে যাবে তার আগে আরহান এগিয়ে এসে দুই গালে হাত দিয়ে বলে।

_” কি ভেবেছিলে ? আমি এইসব বলবো? তোমাকে ভালোবাসি আর বিশ্বাসেই তো ভালোবাসা টিকে থাকে

নিশাত আরহান কে জড়িয়ে ধরে বলে

_” আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আপনার লাল চোখ মুখ দেখে আমি ভেবেছিলাম

_” কি যে আমি তোমাকে ভুল বুঝেছি ? পাশে নেহা ছিল সেটা আমি দেখেছি আর আমি আমার নিশা পাখি কে খুব ভালো করে চিনি । রোদে চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল

নিশাত এবার মাথা তুলতেই দেখে আরহান ঘেমে শরীরে শার্ট লেগে আছে । কপাল দিয়ে ঘাম পড়ছে মুখ লাল হয়ে আছে ।

নিশাত নিজের উড়না দিয়ে আরহান এর কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলে

_” আসলে আজ নেহা জোর করে ওর

নিশাত কে বলতে না দিয়ে ।আরহান নিশাতের কোমর জড়িয়ে ধরে বলে

_” জানি ওই লোকটা নেহার বিএফ । কিছুদিন ধরে ওদের আমি ঘুরাঘুরি করতে দেখেছি। এক্সামের চাপে খেয়াল ছিল না । একবার তো পার্কে দেখেছিলাম

নিশাত ভ্রু কুচকে বলে

_” আপনি পার্কে কি করতে গিয়েছিলেন ?

_” আরে বাবা এমনি গিয়েছিলাম । ঘুরতে

_” তো ঘুরতে কি একা গিয়েছিলেন নাকি কোনো মেয়ের সাথে হুম

আরহান নিশাতের ফুলে থাকা ঠোঁটে কিস করে বলে

_” না রে বাবা সেই সাহস কি আমার আছে ? স্মোক করতে গিয়েছিলাম তখন দেখছিলাম

আরহান আনমনে কথাটা বলে দেয় কিন্ত যখন খেয়াল হয় নিশাতের দিকে তাকিয়ে দেখে নিশাত রাগে ফুঁসছে ।

_” তুই এখনো স্মোক করিস ? আমাকে না প্রমিজ করেছিলি স্মোক করবি না তাহলে

আরহান এবার নিশাত কে ছেড়ে কান ধরে দাড়িয়ে পড়ে।

_” সরি বাবু সত্যি সরি ! আর কখনো করবো না আসলে টেনশনে ছিলাম তাই মাথা কাজ করছিলো না বিশ্বাস করো আমি সত্যি ছেড়ে দিয়েছি কিন্ত মাঝে মাঝে

নিশাত রেগে বলে

_” তো যা টেনশন কমানোর কাছে যা । আমি কে ? আমাকে তো বিয়ে করেছিস শুধু মাত্র

নিশাত অন্য দিকে মুখ করে তাকিয়ে থাকে । আরহান এগিয়ে আসতে গেলে

_” একদম আমার কাছে আসবি না । যেই হাত দিয়ে ওই সব খেয়েছিস সেই হাত দিয়ে আমাকে স্পর্শ করবি না

_” বউ সরি আর করবো না সত্যি বলছি

নিশাত অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে

_” শরীর আমার ঘিনঘিন করছে

কথাটা বলে ওয়াশরুমে চলে যায় । আর আরহান ওখানেই দাড়িয়ে বিড়বিড় করতে থাকে

_” উফফ আরহান নিজের মুখের উপর কাবু করতে পারিস না ।যখন খুশি যা খুশি বলে দিস আজ তো তোর কপালে দুঃখ আছে । কিছু একটা কর

নিশাত ওয়াশরুম থেকে বের হতে দেখে আরহান ওভাবেই দাড়িয়ে আছে । নিশাত কে দেখে ভুবন ভুলানো হাসি দেয় । নিশাত না দেখার ভান করে বাইরে চলে যায়

আরহান পিছন থেকে ডাকে

_” বউ ও বউ শুনো না

নিশাত রান্নাঘরে এসে কোল্ড কফি বানিয়ে ঈশা কে ডাক দেয়। ঈশা এসে বলে

_” আপু কিছু বলবি ?

_” এটা তোর দুলাভাই কে দিয়ে আয়

ঈশা কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চলে যায় ।

আরহান গোসল করে বের হতেই দেখে ঈশা দাড়িয়ে আছে । আরহান মুচকি হেসে বলে

_” আরে আমার পুচকি যে

ঈশা কফি এগিয়ে দিয়ে বলে

_” আপু পাঠিয়েছে

আরহান বুঝে যায় যে নিশাত অনেকটা রেগে গেছে।
আরহান মুচকি হেসে কফির কাপ হাতে নিয়ে বলে।

_” তুমি খেয়েছো ?

ঈশা মাথা নাড়িয়ে না বুঝায় । আরহান কিছুটা খেয়ে ঈশা কে দিতে গেলে নিশাতের ডাক পড়ে

_” ইসু তোর কফি নিয়ে যা ।কারোর টা খেতে হবে না

ঈশা আরহান এর দিকে তাকিয়ে বলে

_” এটা তুমি খাও আমি আসছি

আরহান আর কিছু না বলে সম্পূর্ণ খেয়ে নিচে যায় । নিশাত রান্না ঘরে সব খাবার টেবিলে সাজাচ্ছে ।

আরহান এগিয়ে যেতে গিয়েও পারছে বাড়িতে সার্ভেন্ট ভর্তি । আরহান এর এখন খুব রাগ লাগছে কেনো যে এত মানুষ রাখতে গেলো ।

নিশাত একবার আরহানের দিকে তাকাতেই দেখে আরহান কান ধরে সরি বলছে ।

নিশাত চুপচাপ নিজের কাজ করছে ।

টেবিলে সবাই বসে খাচ্ছে । আরহান শুধু উসখুস করছে সেটা নিশাত খেয়াল করলেও কিছু বলে না ।

আমজাদ হাবিব হটাৎ বলে

_” আরহান তুমি নাকি জব ইন্টারভিউ দিচ্চো?

আরহান নিশাতের দিকে তাকিয়ে বলে

_” জি আব্বু আসলে

_” থাক আমি বুঝছি । দুইটা থেকে তো রিজেক্ট হয়ে গেছো ?

নিশাতের খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।হা করে আরহান এর দিকে তাকিয়ে আছে । আরহান মাথা নিচু করে বলে

_” আমি চেষ্টা করছি আব্বু

আমজাদ হাবিব হেসে বলে

_” চাইলে আমি তোমার চাকরি দিতে পারি কিন্ত আমি জানি তুমি আমার দয়া নিবে না তাই তো পরিচয় গোপন করে ইন্টারভিউ দিচ্ছ । আজ তোমার উপর আমার গর্ববোধ হচ্ছে ।ইনশাল্লাহ তোমার চাকরি হয়ে যাবে । আমি একটা বই দেবো সেটা পড়ে দেখো কাজে লাগবে

আরহান নিরবে মাথা নাড়ায় । নিশাত তাড়াতাড়ি খেয়ে চলে যায় । আরহান ও হাত ধুয়ে ঘরে গিয়ে দেখে নিশাত নেই ।

ঈশার রুমে ও নেই । সারাবাড়ি খুঁজে কোথাও পায় না । হটাৎ মেঘের গর্জনে আরহান ছাদে গিয়ে দেখে নিশাত দোলনায় চোখ বন্ধ করে বসে আছে ।

আরহান এগিয়ে গিয়ে নিশাতের পাশে বসে তখনো নিশাতের চোখ বন্ধ । আরহান নিশাতের হাত ধরতেই নিশাত চোখ না খুলে হাত সরিয়ে নেয় ।

আরহান এবার নিশাত কে জড়িয়ে ধরে বলে

_” সরি নিশা পাখি i am really sorry সত্যি বলছি আর হবে না। অনেক চেষ্টা করেছি ছাড়াতে কিন্ত অতিরিক্ত টেনশনে

নিশাত নিজেকে ছাড়িয়ে অন্য জায়গায় গিয়ে দাড়ায় । আরহান ও পিছন পিছন গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ।

_” সরি সরি সরি সরি সরি

আরহান এক নাগাড়ে বলে যাচ্ছে । নিশাত অনুভব করলো ওর কাঁধে তরল জাতীয় কিছু পড়ছে আর আরহানের গলা ভারী হয়ে আসছে ।

নিশাত পিছন দিকে ফিরতেই আরহান অশ্রুমাখা চোখে তাকিয়ে বলে

_” বিশ্বাস করো নিশা পাখি ওইসব না খেয়ে যতটা কষ্ট হয় তার থেকে ও বেশি কষ্ট হয় তুমি কাছে থেকেও কথা বলো না । জানো, একতরফা ভালবাসাকে আমি এতদিন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে এসেছি, যারা একতরফা ভালবেসে যায় তাদের কে নিয়ে অনেক হাসি তামাশা করেছি। কিন্তু আজ আমি বুঝেছি, একতরফা ভালবেসে যেতে কতবড় হৃদয় লাগে, কতটা কষ্ট সইতে হয়, কতটা নিঃস্বার্থ হতে হয়। তোমাকে আমি পাগলের মত ভালবাসি কিন্তু আমি যে এখনও তোমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসতে পারিনি। মনের কোনে এখনও তোমাকে আপন করে পাবার বাসনা রয়ে যায়। তোমাকে হারাতে চলেছি এই কথাটা মনে হলেই জীবণটাকে অর্থহীন মনে হয়, মনে হয় তোমাকে ছাড়া এ ভুবনে থেকে লাভ কি? তুমি না থাকলে যে আমার জীবণ থেকে হাসি আনন্দ সককিছুই বিলীন হয়ে যাবে! তবুও আমি এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে চাই, তোমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসতে চাই, জীবণের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত! পাশে থাকবে তো নিশা পাখি ?

নিশাত রাগী গলায় বলে

_” আমি যদি আপনার লাইফে এত ইম্পর্ট্যান্ট হয়ে থাকি তাহলে আপনার টেনশনের কথা আমাকে ফোন করে বলতেন । আপনি জব খুঁজছেন সেই ব্যাপারে ও আমাকে কিছু বলেননি। মনে হচ্ছে আমি আপনার জীবনে অর্থহীন

আরহান নিশাতের কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলে।

_” ওভাবে বলো না তুমি আছো বলে আমি আছি । তোমার জন্য আমি সব ছেড়ে দিয়েছি আর জবের ব্যাপারটা আমি তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চাইছিলাম তাই কিছু বলিনি । সেদিন লেট আসার জন্য বকে ছিলে সেইদিন আমার একটা জব ইন্টারভিউ ছিলো। আমি নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি তোমাকে হ্যাপি রাখার কিন্ত আমার ভুলে বার বার তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেলছি i am sorry প্লীজ আমাকে দুরে সরিয়ে দিও না

নিশাত আরহান কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলে

_” আব্বু যা বলছে সেই ভাবে কাজ করেন । আর ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে দেখেন লাভ হবে

_” তুমি পাশে থাকলেই চলবে আর কিছু লাগবে না

_” ভাবেন না যে আমি মাপ করে দিয়েছি । শাস্তি তো আমি পাবেন

_” ওকে মহারানী

রাতে
আরহান ল্যাপটপে বসে ইন্টারভিউ ব্যাপারে দেখছে আর নিশাত আরহান এর পাশে বসে কি সব লিখছে ।

কিছুক্ষণ পর আরহান এর হাতে একটা লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে বলে

_” এটাই আপনার শাস্তি

আরহান পুরোটা পড়ে টাসকি খেয়ে যায়। অবাক চোখে নিশাতের দিকে তাকিয়ে বলে

_” আর কিছু বাকি আছে ?

নিশাত মুচকি হেসে বলে

_” এখন মনে পড়ছে না । পরে বলে দেবো

আরহানের কাশি উঠে যায় ।নিশাত তাড়াতাড়ি পানি দেয় ।
#আড়ালে_ভালোবাসি
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_২০||

আরহান পানি খেয়ে নিশাতের দিকে তাকিয়ে বলে

_” are u sure?

নিশাত কনফিডেন্স হয়ে বলে

_” অফকোর্স এটাই আপনার শাস্তি

আরহান আবার পড়া শুরু করে এবার জোড়ে জোরে পড়ে।তো নিশাতের শর্ত হচ্ছে….

1. সকালে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়তে হবে । নামাজ মিস করা যাবে না । ৫ওয়াক্ত পড়তে হবে আর নিশাত যখন কুরআন তেলোয়াত করবে পাশে বসে শুনতে হবে

2. ব্রেকফাস্ট নিশাত_ আরহান একই প্লেটে খাবে।

3.কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা বা খুবই টেনশন হলে সবার আগে নিশাতকে বলতে হবে

4. দিনে কমপক্ষে ৭-৮ বার ফোন করতে হবে।

5. বাসায় আসার সময় হাতে অবশ্যই, অবশ্যই চকোলেট আর ফুল থাকতে হবে তাও এত্তোগুলো।

6. যথেষ্ট সময় দিতে হবে।

7. হুটহাট করেই ঘুড়তে নিয়ে যেতে হবে তা বাইকে হোক বা গাড়িতে হোক বা হুড তোলা রিকশায়।

8. মাঝে মাঝে এই বৃষ্টিভেজা দিনে তারা দুজন মিলে বৃষ্টিবিলাশ করবে আর তার সঙ্গী হয়ে ওঠবে গরম ধোঁয়া উঠানো চা।

9. এক সপ্তাহে কমপক্ষে দুইবার লাল গোলাপ বা বেলী ফুল দিয়ে সিরিয়াস ভাবে প্রপোজ করতে হবে।

10. কোনো রকমের নেশা করা যাবে না ।

11. বেশির ভাগ সময় নিশাতের সাথে চিপকে থাকতে হবে লাইক আঠা।অন্য মেয়ের দিকে তাকালে বাড়ি ঢুকতে দেবো না

12. খুব বেশি কিছু না কিন্ত সাধারণ জীবন যাপন করতে হবে । লাইক মিডিল ক্লাস হাজব্যান্ড ওয়াইফ।

13.নিশাতের মুড অফ থাকলে অবশ্যই গান গেয়ে তা ঠিক করতে হবে।

14. তারা হবে আনকোমন কাপল। এলকোহল বা সিগারেট যদি খায় তাহলে নিশাত কে ও দিতে হবে ।

15. ম্যাচিং শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে ঘুড়তে বের হতে হবে।

16. তারা অনেক Cuddle করবে, পিলো ফাইট, একসাথে বসে পপকর্ন খাওয়া আর কার্টুন দেখা, সব।

17.পরিবারের সবাইকে সম্মান করতে হবে।অকারণে রাগারাগি করা যাবে না ।ঝগড়া হলে দুইজন একসাথে সরি বলতে হবে

18. তারা প্রেম করবে। লাইক গার্লফ্রেন্ড & বয়ফ্রেন্ড।

19. কোন কাজ করার না থাকলে রুমের দরজা জানালা সব লক করে ধুমিয়ে গান ছেড়ে নাচবে।

20. মন খারাপ হলে বা কষ্ট হলে নিশাতকে জড়িয়ে ধরে বলতে হবে

21. তাকে অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক
অনেক অনেক অনেক বেশির থেকেও অনেক বেশিই ভালোবাসতে হবে।

আরহান খাতাটা রেখে নিশাতের দিকে তাকায়। নিশাত কলম মুখে দিয়ে তাকিয়ে আছে । আরহান নিশাতের দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলে

_” তুমি না বললেও সব করতাম কিন্ত একটা মিস গেছে

_” কি সেটা বলেন আমি লিখে দিচ্ছি

আরহান নিশাতের গালে স্লাইট করতে করতে বলে

_” আদর ! সেটা তো বললে না বেশি বেশি আদর করতে

কথাটা বলে আরহান ধীরে ধীরে নিশাতের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । নিশাত তো কাপাকাপি শুরু করছে আজকাল আরহান কে বিরক্ত লাগে না । আশে পাশে থাকলে যেনো খুব ভালো লাগে ।

আরহান যতই এগিয়ে আসছে নিশাতের বুকের ভিতর ধুকধুক করতে থাকে । আরহান নিশাতের ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোট মিলিয়ে নিলো। দুইজনে দুইজনার ভালোবাসাতে মিশে যেতে লাগলো।

আরহান যেই নিশাতের ওড়নায় হাত দেয় তখনি নিশাতের হুস ফিরে । নিশাত আরহানের হাত ধরে বলে

_” না এখন না সময় হোক আমি নিজে কাছে টেনে নেবো । তত দিন কি অপেক্ষা করতে পারবেন না ? মনের সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব শেষ করে আপনাকে আপন করতে চাই দেবেন কি একটু সময়?

আরহান মুচকি হেসে নিশাতের কপালে ছোট্ট একটা চুমু দিয়ে নিশাতকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ।

ফজরের আজান দিলে নিশাতের ঘুম ভেঙে যায় পাশে তাকিয়ে দেখে আরহান কি আনন্দে ঘুমাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে কতদিন পর শান্তির ঘুম ঘুমোচ্ছে। নিশাত আরহানের চুল এলোমেলো করে দিয়ে উঠে অজু করতে যায়।

অজু শেষ করে এসে দেখে আরহান বসে আছে। নিশাত মুচকি হেসে বলে

_” শুভ সকাল তাড়াতাড়ি উঠে পড়ুন মসজিদে যান নামাজ পড়তে

আরহান চোখ ডলতে ডলতে বাথরুমে যায়। অজু করে পায়জামা পাঞ্জাবী পরে বাইরে এসে দেখে ওর আব্বু নামাজ পড়তে যাচ্ছে ।

আমজাদ হাবিব ছেলেকে দেখে মহাখুশি আনন্দের সহিত ছেলেকে নিয়ে নামাজ পড়তে গেল।

নিশাত নামাজে বসার আগে ইশা কে উঠিয়ে তারপর নামাজ পড়তে বসে। নিশাত নামাজ শেষ করে কোরআন পরছে সেই সময়ে আরহান ঘরের মধ্যে ঢুকলো

আরহান বিছনায় শুতে গেলে নিশাত চোখ রাঙিয়ে তাকায়। আরহান এর আর কি নিশাতের পাশে এসে কুরআন তেলোয়াত শুনতে থাকে ।

নিশাত অনেকক্ষণ ধরে আরহানের জন্য অপেক্ষা করছে। সেই সকালে আরহান ইন্টারভিউ দিতে গেছে এখনো আসেনি । নিশাত এর অনেক টেনশন হচ্ছে ।

আশার অবসান ঘটিয়ে ডোর বেল বেজে উঠল। 97 দৌড়ে দরজাটা খুলে দেখে আরহান দাঁড়িয়ে আছে চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ।

নিশাত হাতের ব্যাগটা নিয়ে দরজা থেকে সরে দাঁড়ায় । আরহান কোন কথা না বলে সোজা নিজের রুমে চলে যায় নিশাতের তো খুব টেনশন হচ্ছে চাকরিটা কি আদৌ হয়েছে?

নিশাত গুটি গুটি পায়ে রুমের মধ্যে যে দেখে আরহান কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছে । নিশা পাশে বসে মাথায় হাত দিতে আরহান চোখ খুলে তাকায়।

শান্ত স্বরে বলে ওঠে
_” চাকরিটা কি হয়েছে? না হলে কোন সমস্যা নেই একটা নাহলে আর একটা হবে একবার না পারিলে দেখো শতবার। তাই বলে কি মন খারাপ করে থাকতে হবে

আরহাম সোজা উঠে বসে নিশাতের পাশে বসেই এক হাত দিয়েজড়িয়ে ধরে বলে

_” আমার চাকরি হলে তুমি খুশি না না হলে খুশি?

নিশাত আরহান এর কথায় নির্বাক হয়ে যায় অবাক চোখে আরহানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে

_” এটা কেমন প্রশ্ন আপনি চাকরি পাবেন এতে আমি খুশি হব না।কোন স্ত্রী কি স্বামীর সাফল্যে খুশি না হয়ে থাকে।

এবার গম্ভীর হয়ে নিশাতের চোখে চোখ রেখে বলে

_” আসলে তোমাকে কি করে বলব আমার চাকরিটা না হয়ে গেছে

নিশাতের চোখ টলমল করছে পানি পড়বে পড়বে আরহান হঠাৎ নিশাতকে জড়িয়ে ধরে বলে

_” ইয়েস মাই প্রিন্সেস আমার চাকরি হয়ে গেছে। তোমার দোয়া কবুল হয়েছে।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ আরহান কে ধাক্কা মেরে বুকে কিল ঘুষি মারতে থাকে

_” কুত্তা হারামী ! আরেকটু হলে আমার জান বেরিয়ে যাচ্ছিল

আরহান নিশাতকে নিজের সাথে মিশিয়ে বলে ।

_” আমার শেরনি সহজে ভয় পাবে সেটা ত আমি ভাবিনি আর জামাই কে কেউ কুত্তা হারামী বলে

নিশাত বুকে চিমটি কেরে বলে

_” আমি বলি ।আর এই গুলো আপনাকে সহ্য করতে হবে

আরহান নিশাতকে উঠিয়ে কোলে নিয়ে চারিদিক ঘুরাতে থাকে। এই প্রথম নিশাত আরহান কে মন খুলে হাসতে দেখছে ।

নিশাত এর কাছে এই সময়টায় সবচেয়ে মধুর।নিশাতের মনে হচ্ছে সময়টা যেনো এখানেই থেমে যায়। নিশাত মুগ্ধ নয়নে আরহানের হাসি দেখছে আরহান হাসতে হাসতে নিশাতকে ঘুরাচ্ছে আর বলছে

_” নিশা পাখি আজ আমি খুব খুশি খুব খুব খুব। আমার মত খুশি কেউ নেই। আজ আমি তোমার সব স্বপ্ন পূরণ করার প্রথম সিড়িতে পা দিয়েছি। দেখো নিশা পাখি আমি একদম তোমার মনের মত হয়ে যাবো । একটু অপেক্ষা করো নিশা পাখি একটু

নিশাত আরহানের দুই গালে হাত দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলে

_” তোমার জন্য ছাড়া কার জন্য করবো । তোমাতেই আমার নিশ্বাস প্রশ্বাস । তোমাতেই বাঁচার নতুন ইচ্ছা

আরহান এর খুশি দেখে কে । নিশাত কে নামিয়ে বলে

_” আমি তোমার জন্য আজ কিছু এনেছি । নিজের টাকা দিয়ে

নিশাত শুধু আরহান কে দেখছে । কে বলবে কয়েক মাস আগে একটা প্লে বয় ছিল আর এখন একজন সাধারণ মানুষের মত জীবন যাপন করে । নিজের বাবার টাকা পয়সায় কোনো অহংকার নেই ।

আরহান ব্যাগ থেকে চুড়ি আর মেহেন্দি বের করে নিশাতের হাতে দিলো। নিশাত চুপ করে দেখছে

কিছু সময় চুপ থেকে মুহুর্ত টাকে উপভোগ করার মধ্যে অনেক সুখ ।

প্রতিটি মেয়ের বাবার দেওয়া প্রথম উপহার আর স্বামীর দেওয়া প্রথম উপহার অমূল্য

আরহান নিশাতের দিকে তাকিয়ে বলে

_” আজ আমি নিজে হাতে তোমাকে মেহেন্দি পড়িয়ে দেবো

নিশাত মুচকি হাসছে । আরহান নিশাত কে বসিয়ে সযত্নে নিশাতের হাতে মেহেন্দি পড়িয়ে দিচ্ছে আর নিশাত সে তো নিজের স্বামীকে দেখতে ব্যাস্ত

অনেকক্ষণ পর
আরহান নিশাত কে বলে

_” দেখো তো কেমন হইছে ?

নিশাত হাতের দিকে তাকিয়ে চমকে যায় । আরহানের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে

_” এটা আপনি দিয়েছেন ? কোথায় শিখলেন ?

আরহান চুল ঠিক করে বলে

_” আমি সব পারি বুঝেছেন mrs wife

নিশাত পাশে তাকিয়ে দেখে ইউটিউবে ভিডিও চলছে । নিশাত আড় চোখে তাকিয়ে বলে

_” সে তো দেখতে পাচ্ছি

আরহান মাথা চুলকিয়ে বলে

_” মেহেন্দি রাঙা হাত আমার খুব পছন্দের । সবসময় তো পারবো না কিন্ত মাঝে মাঝে তোমাকে মেহেন্দি পড়িয়ে মন ভরে দেখতে চাই

একজন স্ত্রীর স্বামীর মুখে এমন কথা শুনে নিজেকে সব থেকে বেশি সুখী মনে হয় । নিশাত এর বেলায় ও ব্যাতিক্রম নয় । নিশাত আরহান এর বুকে মুখ লুকায় ।

আরহান ও পরম আবেশে নিজের প্রেয়শী নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় ।

_” কাল থেকে তোমাকে আর কেউ জ্বালাবে না ।কাল থেকেই অফিস join করতে হবে

নিশাত মন খারাপ করে বলে

_” কালই ?

আরহান মাথা দুলায় । নিশাত নিজেকে ঠিক করে বলে

_” কখন আসছেন ? আর আমি কিছু খেতে দেয়নি । আপনি গোসল করে নিন আমি খেতে দিচ্ছি

_” একদম না । তুমি হাত ধুবে না । আমি গোসল করে আসছি

আরহান যেতেই নিশাত পা তুলে মেহেন্দি দেওয়া দেখছে । কিছুটা বেকে গেছে কিন্ত নিশাতের কাছে সব থেকে সুন্দর হইছে । নিশাত এর আব্বু নিশাত কে ঈদের সময় মেহেন্দি দিয়ে দিতো সেই কথা মনে উঠতেই নিশাতের চোখ ভিজে যায় ।

নিজেকে সামলে সার্ভমেন্ট কে বলে খাবার দিতে ।

পরের দিন
সকাল থেকে নিশাত রান্না করছে । আজ আরহানের অফিসের প্রথম দিন । নিশাত টিফিন রেডী করছে তো একবার আরহান ডেকে এটা সেটা চাইছে । নিশাত পুরাই হিমশিম খাচ্ছে আবার ভার্সিটিতে যেতে হবে।

আরহান ওর আব্বুকে সালাম করে নিশাতের কপালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে যায় আর নিশাত যতক্ষণ পর্যন্ত আরহান কে দেখা যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত তাকিয়ে থাকে ।

ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় ঈশা কে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে যায়। ভার্সিটিতে যেয়েও ভালো লাগছে না নিশাতের মনটা আরহান এর কাছে পড়ে আছে ।

নেহা ব্যাপার টা খেয়াল করে নিশাত কে কথার জালে ফাসাচ্ছে কিন্ত নেহা বার্থ । নিশাত শুধু হা না উত্তর দিচ্ছে

নেহা এবার বিরক্তি হয়ে বলে

_” তুই কি ভাইয়া কে ভালবেসে ফেলেছিস?

এর উত্তর নেহা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে তবুও নিশাত কে বাজিয়ে দেখতে চাইছে।

নেহার কথায় নিশাত ভাবতে থাকে । সত্যি কি ভালোবাসা নাকি অভ্যাস ।

চলবে

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here