আড়ালে_ভালোবাসি পর্ব শেষ

#আড়ালে_ভালোবাসি
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||লাস্ট_পার্ট||

সালেহা বেগম আবার বলতে শুরু করে

_”আরহানের বয়স যখন ১৬তখন সে বাইক চালানোর জন্য জেদ করে।আমার ইমনের বয়স তখন ১৮।ইমন আরহান কে নিজের ভাইয়ের মতো দেখা দেখতো তাই আরহানের আবদার পূরণ করতে বাইক চালানো শিখায়।আরহান বাইক চালাচ্ছে আর ইমন পিছনে বসে আছে হটাৎ অ্যাকসিডেন্ট করে ।আমরা ছুটে যাই পরে জানতে পারি আমার ইমন মারা গেছে আর আরহান দিব্যি চোখের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে।তখন থেকে আমি আরহান কে সহ্য করতে পারি না।ওকে সবার চোখে খারাপ বানানোর জন্য ওর খাবারে মাঝে মাঝে ড্রাগ দিতাম। আস্তে আস্তে আরহান সেইসব নেশায় যোগ দেয় যেমনটা আমি চেয়েছিলাম।আমার স্বামী আমজাদ হাবিব আরহানের কাজে রুষ্ট হয়ে সব সম্পত্তি আমার নামে করে দিতে চেয়েছিল কিন্তু হটাৎ নিশাত ওর জীবনে আসে আর আরহান কে সম্পূর্ণ বদলে দেয়।আমি ভেবেছিলাম অন্য মেয়েদের মত এটা ও আরহানের টাইমপাস কিন্ত আমি ভুল।আরহান সম্পূর্ণ বদলে যায় যেটা আমার সহ্য হয় না তাই আমি যেকোনো ভাবে আরহানের জীবন থেকে নিশাতকে সরিয়ে ফেলতে চাইছিলাম আর আমি গুটি হিসেবে ঈশা কে ব্যাবহার করি।ঈশার কলেজের একজনকে দিয়ে ঈশার ছবি নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করি।আরহান সব জানতে পেরে নিজের মত হ্যান্ডেল করে আবার সেই ছেলে কে জেল থেকে বের করে ঈশা কে ব্লাকমেইল করি।ঈশা সুইসাইড করতে বাধ্য হয় ভেবেছিলাম ঈশা মারা গেলে নিশাত
আরহান কে ভুল বুঝবে কিন্ত হলো উল্টো।ঈশা বেচে গেলো তাই আমি আরহান কে মেরে ফেলি।সেদিন আমি লোক লাগিয়ে আরহান কে গুলি করি নিশাত কে ও মারতে চেয়েছিলাম।লোকজন বেশি থাকায় মারতে পারিনি।আরহান মারা যাওয়ার পর জানতে পারি নিশাত প্রেগনেট।আমার ছেলের ভাগ আমি কাউকে দি নাই সেখানে আরহানের সন্তান কে কি করে দেবো তাই তাকে মারার চেষ্টা করি। তার আগেই আমার স্বামী নিশাতের বিয়ে দিয়ে পাঠিয়ে দেয়।এখন বলুন আমি কি ভুল করছি নিজের সন্তান এর মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়া কি ভুল।এত কিছুর পরও আরহান বেচে আছে আর প্রতিদিন এসে আমাকে ভয় দেখায়। ও আমাকে মেরে ফেলবে

কিছুটা আতঙ্কে বলে সালেহা বেগম হটাৎ তালির আওয়াজ হয়। প্রেস মিডিয়ার লোক সব তালির আওয়াজ অনুসরণ করে সেদিকে ক্যামেরা ঘুরায়।

আমজাদ হাবিব তালি দিতে দিতে সালেহা বেগমের কাছে আসে।চোখে মুখে ঘৃনার ছাফ ।

একজন রিপোর্টার প্রশ্ন করেন

_”Sir আপনার কি কিছু বলার আছে ?আপনার স্ত্রীর এইসব কথার কোনো কিছু কি আপনি জানতেন?

আমজাদ হাবিব নিজের চোখ মুখ শক্ত করে বলে

_”ওই কুৎসিত মহিলা কখনো আমার স্ত্রী হতে পারে না।আমার সন্তান এর যার এত রাগ সে আমার স্ত্রী না কখনোই না।সে হয়তো ভুলে গেছে আমার ছেলের জন্য তাকে রাখা। ইমন কে আমি সমান ভালোবাসা দিতাম।শুধু আমি না আমার ছেলে ও খুব ভালোবাসত।ইমনের মৃত্যুর পর থেকে আমার ছেলে চুপ হয়ে যায় কারোর সাথে তেমন কথা বলত না।মাঝে মাঝে ডুকরে কান্না করতো।সেইসব আমি বাবা হয়ে দেখেছি।আমি কখনো ভাবিনি একটা অ্যাকসিডেন্ট এর জন্য এত কিছু করবে

সালেহা বেগম চিৎকার করে বলে

_”অ্যাকসিডেন্ট ছিল না।ইচ্ছা করে করা হইছিলো।নাহলে আরহান বেচে যায় কি করে?সব ইচ্ছা করে জেদের জন্য করেছিল। ও যদি জেদ ন ধরত তাহলে আজ আমার সন্তান বেচে থাকতো।তোমার ছেলে একটা অভিশাপ।নিজের মা কে তো খেয়েছে সাথে আমার ছেলেকে।এখন আবার আমাকে ভয় দেখাচ্ছে।কত বার তোমাকে বলেছি তুমি ত

_”খবরদার তুমি আমার সন্তানের নামে কিছু বলবে না।তোমার মুখ দেখতে আমার ঘৃনা হচ্ছে

আমজাদ হাবিব পুলিশ কে ইশারা করতেই পুলিশ এসে সালেহা বেগম কে নিয়ে যায়।সালেহা বেগম মাথা নিচু করে কোনো কথা ছাড়াই চলে যায়।আমজাদ হাবিব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কাউকে ফোন করলো।

নিশাত তো স্তব্ধ হয়ে আছে পাশে ঈশা ও যেনো শকড হয়ে আসে।

আরহানের ফোনে কল ইশারায় সে একটু দূরে কি কল ধরে।

ওপাশ থেকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আমজাদ হাবিব বলেন

_”আমাকে ক্ষমা কর বাবা।আমি তোর জন্য কিছু করতে পারলাম না।মায়ের অভাব পূরণ করতে গিয়ে তোর জীবনটাই নষ্ট করে দিলাম।আমার বুঝা উচিত ছিল নিজের জিনিস রেখে কোনো কেউ অন্যের জিনিসের খেয়াল রাখবে না।আমি সেই সব বাবা দের মধ্যে পড়ি যারা নিজের সন্তানদের জন্য বিয়ে করে সন্তানদের সুখ কেড়ে নেয়।আমাকে ক্ষমা কর

একজন রিপোর্টার প্রশ্ন করেন

_”স্যার ম্যাডাম বলছিলেন আরহান আবরার নাকি বেচে আছে কথাটা কি সত্য? যদি আমাদের একটু বলতেন তাহলে ভালো হতো

আমজাদ হাবিব মুচকি হেসে বলে

_”যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছে।আজ কথাটা মিলে গেলো।আমার ছেলেকে কেউ মারতে পারে নি সে বেচে আছে আর খুব ভালো আছে।

এতটুকু বলে আমজাদ হাবিব নিজের রুমে চলে যান।আজ নিজেকে খুব অসহায় লাগছে।একটা ভুল সারাজীবনের কান্না।

আরহান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পিছনে ঘুরতেই নিশাত ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছে।

_”কিহলো ওভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?

_”এইসব কি হলো?তোমার যে ভাই ছিল আর সালেহা মা যে তোমার নিজের মা না সেটা কখনো বলনি কেনো?

_”বলার মত তেমন কিছু হলে অবশ্যই বলতাম।আম্মু কে কখনো আমি সৎমা ভাবিনি। ইমন ছিল আমার একমাত্র সঙ্গী।নিজের ভাইয়ের মতো দেখতাম।আমি ভাবতে পারিনি আম্মু ওই কারণে আমার সাথে এমন করলো।

আরহানের কণ্ঠস্বর ভারী লাগছে নিশাত বুঝতে পারে আরহানের অনেক কষ্ট হচ্ছে ।হবে নাই বা কেনো যাকে নিজের মায়ের মত ভালোবাসা হয় সে যদি ক্ষতি করতে চায় তাহলে তো কষ্ট হবেই।নিজের মায়ের মত ভালোবাসা কেউ দিতে পারবে না।

আরহান কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা উপরে চলে যায়।রুমে গিয়ে দরজা আটকে দেয়।নিশাত যেতে চেয়েও যেতে পারেনি।জয়ের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলে

_”আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।কোনো মা কি নিজের ছেলের সাথে এমন করতে পারে।

জয় তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে

_”এই জন্য তো বলে সৎমা। সৎ অর্থ ভালো, মা অর্থ জননী কিন্ত সবাই এই সৎমা কে খারাপ অর্থ বানিয়ে রেখেছে ।

_”তোমরা জানলে কি করে যে আম্মু এইসব করেছে।

জয় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে

_”যেদিন তোমরা ব্রিজের উপর ছিলে সেদিন আরহানের গুলি লাগে।আরহান হালকা দেখতে পায় ওদের বাসার কাজের লোক কে।যে ওই বাড়ির খুব বিশ্বস্ত।আরহানের সেন্স ফীরার পর সে শুধু বলে ওর বেচে থাকার খবর যেনো কাউকে না জানাই।ওদের বাড়ির কেউ ক্ষতি করতে চাইছে আর
আরহানের আব্বুর সাথে যোগাযোগ করে তোমাকে বাড়ি থেকে বের করি।আংকেল সব জানত।সেদিন যখন সবুজ কে ধরি তখন ওর ফোনে একটা কল আসে। কলের ব্যাক্তির কণ্ঠে সালেহা বেগম মত।সবুজ কখনো দেখেনি তাই বলতে পারেনি।তারপর তোমাকে দিয়ে সিসিটিভি লাগানো হয় তাতেই বুঝা যায় এই সব এর পিছনে সালেহা বেগম আছে।উনার মুখ থেকে সব বের করার জন্য আমরা উনাকে থ্রেট দি আর মাঝে মাঝে ভয় দেখাতাম যাতে তিনি নিজেই সব স্বীকার করেন।আমি আরহান কেউ ভাবতে পারিনি এই সবার পিছনে এত বড় একটা জঘন্য কারণ ছিল। সব জানার পর আমজাদ হাবিব আর আরহান খুব ভেঙ্গে পড়ে। ইমন কে যতটা ভালবাসতাম তার থেকে বেশি সালেহা অ্যান্টি কে ভালোবাসত। এত ভালোবাসায় কি হলো।সবাই সত্যি বলে মায়ের মত ভালো কেউ বাসতে পারবে না।সব থেকে অভাগা সে যার সব থেকেও কিছু নেই।

জয়ের চোখের ও পানি।ঈশা তো কান্না করে দেয়।নিশাত চুপ মেরে যায়।কি বলে আরহানকে সান্তনা দিবে।কোনো ভাষা খুজে পাচ্ছে না।

কিছু একটা ভেবে নিশাত উঠে দাড়ায়।রুমের সামনে এসে জোড়ে জোড়ে বলে

_”কি গো বাবুর আব্বু?এভাবে রুমে বন্ধি থাকলে কি হবে।বাবুর ফুসকা খেতে ইচ্ছা করছে।দরজা খুলো।

ভিতর থেকে কোনো সাড়া নেই।নিশাত জোড়ে জোড়ে ধাক্কা দিতে দিতে বলে

_”বাবু কে এভাবে কষ্ট দিলে বাবু রাগ করবে।খুলো না।আমার হাত ব্যাথা করছে তো।কই ?

আরহান তবুও দরজা খুলে না দেখে নিশাত ফ্লোরে বসে জোড়ে চিৎকার দেয়

_”আহ মরে গেলাম গো।এই বাড়িতে কেউ আমায় আর আমার বাবুকে ভালোবাসে না।উফফ ব্যাথা

আরহান দরজা খুলতেই নিশাত মাথা উচু করে তাকিয়ে দেখে চোখ ফোলা।হয়তো কান্না করেছে।

_”ড্রামা শেষ ?

নিশাত গাল ফুলিয়ে বলে

_”আমি শুধু ড্রামা করি তাই না।থাক আমি আর আমার বেবি কে কেউ ভালোবাসে না।বুঝছি

নিশাত অন্য দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসে।আরহান কোলে তুলে নিয়ে বলে

_”বাবুর কি ইচ্ছা করছিলো?

_”বলবো না ।

_”তো কাকে বলবে।চলো আজ ঘুরতে নিয়ে যাবই

_”এই না হলে আমার জামাই।

নিশাত আরহানের গালে একটা পাপ্পি দেয়।আরহান মুচকি হেসে কপালে ভালোবাসা দেয়।

5বছর পর
আরহান ল্যাপটপে বসে কাজ করছে হটাৎ নিচে থেকে নিশ আরিশ এর কান্না আর চিল্লানোর আওয়াজ কানে আসতে ল্যাপটপ রেখে নিচে চলে যায়।

আরহান নিচে গিয়ে ওর চোখ কপালে। নিশ আরিশ একে অপরের চুল ধরে টানাটানি করছে।ঈশা একা সামলিয়ে পারছে না।আরহান দুইজনকে আলাদা করে ধরতেই দুইজন ছুটাছুটি শুরু করে দেয়।

আরহান হালকা করে একটা ধমক দেয়।দুইজনে চুপ করে যায়।আরহান চোখ রাঙিয়ে বলে

_”কি শুরু করছো তোমার দুইজন ?

আরিশ ছোটছোট চোখ করে বলে

_”পাপা ও আমাকে আগে মারছিল।

নিশ পাল্টা জবাব দেয়

_”না পাপা ও আগে আমাকে মেরেছিল।

আরহান ঈশার দিকে একবার তাকায় তো একবার নিশ আরিশের দিকে।

আরহান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে

_”দুইজন এখন সরি বলবে।বলো

আরিশ বলে দেয় কিন্ত নিশ বলবে না।কিছুতেই নিজের হার স্বীকার করবে না।

আরহান যেতে যেতে বলে

_”ওকে ফাইন নো চকোলেট ফর ইউ।

আরহান চলে যেতে গেলে নিশ বলে

_”না না ওইগুলো আমার চাই।এই আরিশ আই এম সরি! কিন্ত মনে রাখিস আমি মেয়ে আর মেয়েরা অল টাইম রাইট হয়।

আরহান আড় চোখে তাকাতেই নিশ মুখে হাত দিয়ে বলে

_”সরি

আরিশ বাকা হেসে বলে

_”তোকে সরি বলতে হবে না। যাই হোক তুই ত আমার ৫মিনিটের ছোট বোন।চল আমরা খেলতে যাই

আরহান মুচকি হেসে বলে

_”দ্যাটস লাইক মাই বয়।

নিশ কে টানতে টানতে নিজে যায়।পিছন পিছন ঈশা ও যায়।

আরহান নিজের চোখের চশমা খুলে দেয়ালে রাখা নিশাতের ছবির দিকে তাকিয়ে বলে

_”দেখেছো কত দুষ্ট হয়েছে বাচ্চারা। নিশ তো একদম তোমার মত হয়েছে।ওদের সামলানোর জন্য তুমি নেই।আমি আর পারছি না।কেনো চলে গেলে এভাবে একা ফেলে।খুব খুশি হইছ আমাকে এভাবে দেখে।প্লীজ ফিরে এসো প্লীজ

কথা বলতে বলতে হটাৎ কাধে কিছুর স্পর্শ পেয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে জয় দাড়িয়ে আছে।

জয় ছলছল চোখে আরহানের দিকে তাকিয়ে বলে

_”খুব মনে পড়ছে ?

আরহান কিছু না বলে নিজের ঘরে যায়।জয় নিশাতের ছবির দিকে তাকিয়ে বলে

_”তোমাকে বলেছিলাম আমার বন্ধু কে ছেড়ে যেও না।তুমি তোমার কথা রাখলে না।খুব খারাপ তুমি।আজ তুমি থাকলে আমাদের পরিপূর্ণ জীবন হতো।
আরহানকে জীবন্ত লাশের মত থাকতে হতো না।

নিশ,আরিশ আরহান আর নিশাতের সন্তান।৫বছরে কারোর জীবন পরিবর্তন না হলেও আরহানের জীবনের চাকা ঘুরে গেছে।সেদিন এর পর থেকে সালেহা বেগম পাগল হয়ে গেছে।বর্তমানে পাগলা গারদে আছে।আমজাদ হাবিব নিজের সব কিছু আরহানের নামে দিয়ে করে দিয়েছে। নিশ আরিশের এক বছর জন্মদিনে নিশাত একা গাড়ি নিয়ে বের হয় হটাৎ ব্রেক ফেল করে।আরহান যখন খবর পায় ছুটে যায় হসপিটালে কিন্ত ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
আরহান গিয়ে নিশাতের সাদা কাপড়ে মোড়ানো দেহ দেখে।সেদিন আরহান খুব ভেঙ্গে পড়েছিল। চোখের পানি যেনো বেইমানি করছিলো।ঈশা জয় সবাই কান্না করছিলো।ঈশা তো বার বার সেন্স হারিয়ে ফেলছিলো।নিশাতের কবর দেওয়ার সময়
আরহান বার বার নিশাতের মাথা কোলে নিয়ে বলছিলো

_”নিশা পাখি প্লীজ উঠো।তোমার স্বপ্ন পূরণ করবে না ।আমাদের বাচ্চা তো তুমি বলতে অজ্ঞান।নিশ, আরিশ আমাকে একা রেখে তুমি যেতে পারো না।তুমি বিনা তো আমি অচল।প্লীজ যেয়ো না উঠ।

সেদিন আরহানের ডাক তার নিশা শুনেনি।হসপিটাল থেকে একজন এসে একটা ফোন দেয়।আরহান নিশাতের মাথা কোলে নিয়ে দেখে নিশাতের ফোন।লোকটা ফোনের রেকডিং অন করে দিতেই নিশাতের কণ্ঠ ভেসে আসে

_” আরহান আমাকে মাপ করে দিও।আমি পারলাম না তোমার কথা রাখতে।খুব ইচ্ছা ছিল তোমার সাথে নিজের সন্তানদের সাথে আরো অনেক দিন থাকবো কিন্ত আল্লাহ হয়তো চাইনি।আমার কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে।শেষ বারের মত হয়তো তোমাকে দেখতে পারবো না তুমি কিন্ত কান্না করবে না।কখনো আমার কথা মনে উঠলে মুচকি হাসবে।আমার ইসু আর আমার বাচ্চাদের দায়িত্ব তোমার কাছে দিয়ে গেলাম। আমি জানি তুমি পারবে।তোমাকে পারতে হবে।
#আড়ালে_ভালোবাসবো তোমাদের।

আরহান রেকডিং শুনে নিশাতের মৃতদেহ বুকে জড়িয়ে অসংখ্য চুমু তে ভরিয়ে দিচ্ছে।নিশাতের লাশ মাটি হবার পর থেকে আরহানের চোখে এক ফোঁটা পানি আসেনি।কি করে আসবে নিশাত যে অনেক বড় দায়িত্ব দিয়ে গেছে।বাচ্চা দুটির দিকে তাকালেই নিশাতের কথা খুব মনে পড়তো।তবু ও ভেঙ্গে পড়েনি।নিশাতের কথা মত ঈশার সব দায়িত্ব নিজে নিয়েছে।১বছর আগে জয়ের সাথে ঈশার বিয়ে দেয়। নিশ আরিশ কে একা সামলায়।অফিস+সংসার একা হাতে সামলায়। কেউ বিশ্বাস করবে না এই আরহান একসময় দায়িত্ব নিতে ভয় পেতো।আজ সবার দায়িত্ব আরহানের কাধে।নিশাত সব দায়িত্ব আরহানের কাধে দিয়ে নিশ্চিন্তে কবরে শুয়ে আছে।সবার সামনে আরহান শক্ত থাকলে ও নিশাতের কবরের কাছে গিয়ে সব অভিযোগ এক সাথে করে।নিশ, আরিশ ছোট হওয়ায় কিছু বুঝতে পারে না শুধু এই টুকু জানে তার পাপা তাদের দুনিয়া।

আরহানের মাঝে মাঝে খুব অভিমান হয়।মনে হয় এভাবে বেইমানি না করলেও পারতো।কিন্ত পরক্ষনেই নিশাতের হাসি মাখা ছবি দেখলে সব রাগ নিমিষেই ফুস হয়ে যায়।ঈশা এখনো মাঝে মাঝে কান্না করে।শুধু কান্না করে না আরহান।

ঘরে নিশাতের ছবি হাতে নিয়ে বসে আছে আরহান।মুখে তার মুচকি হাসি।

_”কিছু সম্পর্কে মানুষ ধৈর্য হারায়।তবুও সুখ দুঃখ সব মিলিয়ে কোনো এক অচিন মায়ায় পড়ে থাকে।বছরের পর বছর সময় গুলো গুনে পার হয় কিন্ত সে সম্পর্ক গুলো থেকে বের হতে পারে না কারণ হলো মায়া।তোমার মায়া আমাকে বড্ড পোড়ায়। খুব দেরি না তোমার দেওয়া সব দায়িত্ব পালন করে খুব তাড়াতাড়ি আসবো তোমার কাছে।তখন না হয় সব অভিমান দেখাবো।

আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।দরজায় জোড়ে জোড়ে বারি পড়ায় বুঝতে দেরি হলো না কে আসছে।

আরহান মুচকি হেসে বলে

_”তোমার দুষ্ট গুলো চলে আসছে।আজ তুমি থাকলে দেখতাম কেমন সামলাতে পারো।

মুচকি হেসে নিশাতের হাসি মাখা ছবি রেখে দরজা খুলে দেয়।নিশ আর আরিশ হুড়মুড় করে ঢুকে আরহানের হাত ধরে বলে

_”পাপাই ঘুরতেই নিয়ে যাবে না?আজ তো রবিবার!

আরহান মুচকি হেসে বলে

_”আমার প্রিন্স,প্রিন্সেস বলেছে যা যেয়ে উপায় আছে।চলো

নিশ আর আরিশ হইহুল্লোর শুরু করে দেয়।

পার্কে নিশ, আরিশ খেলছে।আরহান দূরে দাঁড়িয়ে থাকা কাপলদের দেখছে ।ঈশা নিশ আর আরিশের সাথে খেলছে।আরহান একবার ওদের দিকে তাকিয়ে সেই একজোড়া কাপলদের কাছে যায়।

ছেলেটা মেয়েটার উপর হাত তুলতে গেলে আরহান হাত ধরে ফেলে।

ছেলেটা রেগে বলে

_”এই আপনি আমার হাত ধরলেন কেনো?

আরহান মুচকি হেসে বলে

_”এখন কাছে আছে তাই গুরত্ব বুঝছো না যেদিন চিরকালের জন্য চলে যাবে সেদিন হাজার কাদলে ও ফিরে আসবে না।তোমাদের সব কথা আমি শুনেছি।তুমি কি ভাবছো মেয়েটা বেহায়া।তাই তোমার কাছে বার বার ফিরে আসে।আসলে সে ভালোবাসার মূল্য দিতে জানে যেটা তুমি জানো না।যে মেয়েটার হাজার অপশন থাকা সত্বেও তোমাকে বেছে নিয়েছে, তোমার কষ্টে কান্না করে তাকে কষ্ট দেয়ার অধিকার তোমার নেই। যে মেয়েটা একটা শাড়ি কেনার জন্য সারা দোকান চোষে বেড়ায়,কোনো ভাবনা ছাড়া তোমাকে নিজের সুখের কারণ করতে চেয়েছে তাকে অসুখী করার অধিকার তোমার নেই।

ছেলেটা রেগে বলে

_”আমার জিনিস আমি যা খুশি করবো আপনার কি?আপনি নিজের জিনিস কে যত্ন করেন।

_”এটাই আমাদের ভুল।মেয়েরা ও মানুষ।তাদের কে জিনিস/মাল বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার অধিকার আল্লাহতালা আমাদের দেয়নি। আমার ভালবাসা নেই বলে বুঝছি।তোমার টা কাছে আছে তাই বুঝতে পারছো না।সময় থাকতে সব কিছুর কদর করো।

আরহান চলে যেতেই মেয়েটা ছেলেটার দিকে তাকায়।ছেলেটা মাথা নিচু করে বলে সরি।

নিশ, আরিশ ছুটে আরহানের কোলে উঠে বলে

_”পাপা আইসক্রিম খাবো।

আরহানের মনে পড়ে যায় নিশাত আইসক্রিম খাওয়ার জন্য কেমন জেদ করতো।পুরনো কথা মনে পড়লে ঠোঁটের কোণে মৃদ হাসির রেখা ফুটে উঠে।

আরহান দুইজন কে আইসক্রীম কিনে দেয়।দুইজন
আরহান কোলে বসে খাচ্ছে আর আরহান অপলক নয়নে তাকিয়ে দেখছে।

দুইজনের মাথায় চুমু দিয়ে বলে

_”লাভ ইউ প্রিন্স অ্যান্ড প্রিন্সেস।

নিশ, আরিশ ও বলে

_”লাভ ইউ পাপা

আরহান ছোট করে বলে

_”লাভ ইউ নিশা পাখি । অ্যান্ড আই মিস ইউ সো মাচ

আরহানের শরীর জুড়ে শীতল বাতাস বয়ে গেলো।

এখানেই শেষ আরহান আর নিশাতের আড়ালে ভালোবাসার গল্প।দোয়া করি সবার ভালোবাসা পূর্ণতা লাভ করুক।

_____________________সমাপ্ত_____________

(গল্পটা মনের মত শেষ করতে পারলাম না ।অনেক চাপের মধ্যে গল্প দিয়েছি।অনেক ভুল ত্রুটি হয়েছে।ক্ষমা করবেন।এই গল্পের মাধ্যমে অনেকের ভালোবাসা পেয়েছি আশা করো আগামী তে আরো ভালোবাসা পাবো।গল্পটা এখানেই শেষ কার কেমন অনুভূতি কমেন্ট করে বলবেন প্লিজ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here