আড়ালে_ভালোবাসি পর্ব ২৯+৩০

#আড়ালে_ভালোবাসি
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_২৯||

বিছনায় বালিশ জড়িয়ে বসে আছে নিশাত। আরহান বকবক করে যাচ্ছে আর ড্রেস চেঞ্জ করছে।নিশাত কাচুমাচু হয়ে বসে আছে জানে কথা বললে এখন বিপদ ।

_”হাত পা বেঁধে ফেলে রেখে তারপর বাইরে যেতে হবে?পা কেটে রেখে বাইরে যাবো কাল থেকে।দেখি ঘুরাঘুরির সখ যায় কই। কার খেয়াল ডুবে ছিলে?আর একটু হলে কত বড়ো ক্ষতি হতো।সবাই এই সময় সাবধানে থাকে আর উনি নেচে নেচে বেড়ায়।

কথা বলতে বলতে আরহান ওয়াশরুমে চলে যায়।নিশাত হাফ ছেড়ে বাঁচলো।বিড়বিড় করে বলে।

_”যাক বাবা মুখ চালিয়েছে ভালো কথা।হাত তো চালায় নি।কিন্ত রাগ তো আমার করার কথা।

সেইসময় নিশাত গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে দেখে আরহান রক্তবর্ণ চোখে তাকিয়ে আছে।নিশাত কিছু বলার আগেই কোলে নিয়ে ঘরে আসে।নিশাত ভয় টে কিছু বলে না।রাগী মানুষের রাগ খুব ভয়ংকর কিন্ত যারা শান্ত তারা একবার রেগে গেলে সামলানো খুব মুশকিল।

নিশাত বিছানা থেকে নামতে গেলে দরজার খুলার আওয়াজে আবার আগে মত চুপ করে বসে থাকে।

আরহান চুল মুছতে মুছতে বলে

_”খাওয়া দাওয়া কি করা লাগবে না?জিরো ফিগার বানানোর ইচ্ছা থাকলে কবর দেওয়া ভালো।

নিশাত বিড়বিড় করে বলে

_”কথা শুনে পেট ভরে গেছে

বিড়বিড় করে বললেও সেটা আরহান ঠিক শুনতে পেয়েছে। আড় চোখে তাকাতেই নিশাত আমতা আমতা করে বলে

_”আমার খুদা লাগছে সাথে বাবুর ও।

আরহান চুল আঁচড়িয়ে বাইরে যেতে যেতে বলে

_”বিছানা থেকে যেনো এক পা না নামে।

আরহান যেতেই নিশাত ভেংচি কেটে বলে

_”শুধু বকবে।একটু ভালোবাসলে কি হয়।এই সময় তো স্বামীর ভালোবাসা চায় সবাই আর আমার পোড়া কপাল।নিজের দোষে আজ এমন হইছে যদি ঈশা থাকতো তাহলে কি পাগলামি না করতো।i miss u ishu

নিশাতের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।চোখের পানি মুছে ফোনে ইস্যুর সাথে কাটানোর ছবি গুলো দেখছে।ঈশার ছবিতে এতটা মগ্ন হয়ে গেছে আরহান যে ওর পাশে এসে দাড়িয়ে আছে সেদিকে ওর খেয়াল নেই।

আরহান ফোন কেরে নিতে নিশাতের হুস ফিরে।চোখ লাল হয়ে আছে।আরহান কি বলবে বুঝতে পারে না ।নিশাতকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।

নিশাত যেনো এই টুকু সাপোর্ট চাইছিল আরহানকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। আরহান ও বাধা দেয় না। কিছু কষ্ট কান্নার মাধ্যমে বেরিয়ে আসা ভালো।

অনেকক্ষণ পর আরহান জোড় করে নিশাতের মুখ তুলে বলে

_”আর না।অনেক কান্না করেছো আর করতে দেবো না।এই কান্না তুলে রাখো সঠিক সময়ে কান্না করো।এখন লক্ষ্মী মেয়ের মতো খেয়ে নাও।

নিশাত চোখ মুখে কিছু বলার আগেই আরহান বলে

_”চোখ মুছলে নাক মুছলে না কেনো?

নিশাত হালকা আরহান কে ধাক্কা দেয়।

_”তোমার ঐ পিপঁড়ার মত হাত আমার কিছু করতে পারবে না।তাই বৃথা চেষ্টা করে এনার্জি নষ্ট করে লাভ নেই।

আরহান নিশাতের মন অন্য দিকে ঘুরানোর জন্য চেষ্টা করছে নিশাত সেটা বুঝতে পেরে বলে

_”আমাকে মাপ করো।আমি সত্যি অনেক খারাপ।নিজের বোনের কষ্ট বুঝতে পারলাম না আর না তোমাকে বুঝতে পারলাম না।আমাকে ক্ষমা করে দাও প্রমিজ করছি এখন থেকে তোমার মনের মত হবার চেষ্টা করবো।তুমি যা বলবে সব করবো।শেষ বারের মত আমাকে ক্ষমা করো একটা সুযোগ দিয়ে দেখো।

_”এটা সময় হলে দেখা যাবে আগে খেয়ে নাও।আজকাল একটু বেশি বলছো

আরহান ভাত মাখিয়ে নিশাতের মুখের সামনে ধরলে নিশাত খেয়ে নেয়। আরহান খাইয়ে উঠে যেতে গেলে নিশাত হাত ধরে বসিয়ে দেয়।

পেলেটে ভাত নিয়ে আরহানকে খাইয়ে দেয়।

_”আচ্ছা তোমার যেই কাজ করতে গিয়েছিলে সেই কাজ কি হয়েছে ?

খাওয়াতে খাওয়াতে প্রশ্ন করে নিশাত।আরহান কোনো উত্তর দেয় না দেখে নিশাত আবার বলে

_”আচ্ছা বলতে হবে না কিন্ত আমরা এই জায়গায় থাকছি কেনো? মানে তোমার বাড়ি

বাকিটা বলার আগেই আরহান ধমক দিয়ে বলে

_” ওতো কথা বলো কেনো?সময় হলে সব জানতে পারবে।একটু সময় দরকার তারপর আমি নিজে সব বলবো এখন তোমাকে একটা কাজ করতে হবে

বেশ গম্ভীর কণ্ঠে বলে আরহান।নিশাত ফিক করে হেসে বলে

_”তুমি এমন ভাবে বলছো যেনো আমরা কোনো সিক্রেট মিশনে যাচ্ছি।

আরহান চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই নিশাত মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করে ।আরহান আবার গম্ভীর কণ্ঠে বলে

_”ধরে নাও সেইরকম।কাল তুমি আমাদের বাসায় যাবে। সেখানে একটা ছোট কাজ করতে হবে আর হা আমরা এখানে আছি বা আমি বেচে আছি এই কথা কাউকে বলবে না।

নিশাত চিন্তিত হয়ে বলে

_”তোমার আম্মুকে ও জানাবো না?জানো উনি কত কষ্ট পেয়েছিলেন।তোমার বেচে থাকার কথা শুনে খুব ভালো লাগবে

_”আমি বললাম না কাউকে বলবে না মানে বলবে না।কাল যাবে কানে ব্লুটুথ দিয়ে কেউ যাতে বুঝতে না পারে।বাকিটা কাল বলবো

_”ওকে

নিশাত পেলেট রেখে এসে দেখে আরহান শুয়ে আছে।নিশাত কোনো কথা না বলে আরহানের বুকে শুয়ে পড়ে ।

_”কিহলো এটা?

নিশাত চোখ বন্ধ করেই বলে

_”বাবু বাবা কে অনেক মিস করছিলো।এখন কাছে পেতে চায় আমার কি দোষ ।

বাচ্চাদের মত মুখ করে বলে।আরহান নিশাতের আড়ালে হাসে।

মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আরহান আর নিশাত নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। আরহান একবার নিশাতের দিকে তাকিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলে

_”সব কিছুর জন্য প্রস্তুত হতে হবে তোমাকে।হয়তো আমি থাকবো আবার না।নিজের অজানা শত্রুর থেকে তোমাকে বাঁচাতে হবে।

সকালে

আরহান ফোনে কথা বলছে আর নিশাত ঘরে রেডী হচ্ছে।

হটাৎ আরহান চিল্লিয়ে বলে

_”বের হয়ে গিয়েছে মানে? আই ডোন্ট নিড এনি এক্সকিউজ যে করেই হোক ওকে আমার চাই মানে চাই ।সেটা কি করে করবি তোরা ভালো জানিস।এক ঘণ্টার মধ্যে ওকে চাই

কথাটা বলে আরহান ফোন ছুড়ে মারে।

_”একটা ও কাজের না

_”কে কাজের না ?হুম?

নিশাতের কণ্ঠে আরহান সেদিকে তাকিয়ে থ মেরে যায়।নিশাত ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে

নিশাত এগিয়ে এসে আরহানের সামনে তুরি বাজিয়ে বলে

_”কি হলো?কোন মেয়েকে চাই?

কিছুটা রাগী ভাবে বলে আরহান নিশাত কে ভালো করে দেখছে। ব্ল্যাক কালারের গাউন।মাথায় হিজাব। হাতে হোয়াইট স্টোনের চুরি।কালো কালারের মধ্যে নিশাতের মুখটা ফুটে উঠছে।

আরহানের মুখ থেকে আপনাআপনি বের হয়ে যায়

_”মাশাল্লাহ

_”কি? কি বললেন ?

আরহানের হুস আসলে নিজেকে ঠিক করে বলে

_”কিছু না।তুমি রেডী?

_”রেডী পরে আগে বলেন কাকে চাই?কোন মেয়ের প্রতি প্রেম জাগছে?

_” হোয়াট??

_”ঠিক তো বলছি। তুমি তো ফোনে বলছিলে ওকে আমার চাই।

_”শাট আপ!মুখ বন্ধ রেখে ব্লুটুথ পড়ে নাও।

নিশাত কানে পড়তে পড়তে বলে

_”আজকে আমাকে কেমন লাগছে ?

আরহান অন্যদিকে তাকিয়ে বলে

_”জাস্ট লাইক এ পেত্নী।তাও আবার কালো পেত্নী

নিশাত গাল ফুলিয়ে বলে
_”এই পেত্নী নিয়ে আপনাকে সংসার করতে হবে।

মাঝ রাস্তায় আরহান গাড়ি দাঁড় করিয়ে বলে

_”এখান থেকে তোমাকে একা যেতে হবে আর যা বলছি মনে থেকে যেনো।ওই বাড়ি কে আসছে না আসছে সব খবর আমার চায়।আর কিছু খেতে বললে খাবে না ।ভুলেও যেনো এক গ্লাস পানিও খাবে না

নিশাত বিরক্তি নিয়ে বলে।

_”উফফ আমি ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছি না।যা বলছ সব করবো ।এখন যাই

_”সাবধানে

নিশাত গাড়ি থেকে নেমে একটা ক্যাব বুক করে চলে যায়। আরহান কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে সে ও চলে যায়।

নিশাত দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজাতেই সার্ভমান্ট এসে দরজা খুলে দেয়।

নিশাত ভিতরে যেতেই সার্ভমান্ট সালেহা বেগম কে ডাকে। নিজের চুল খোফা করতে করতে সালেহা বেগম নিচে আসে।নিশাতকে দেখে কিছুটা চমকে যায়।নিশাত এগিয়ে গিয়ে সালাম করতেই

সালেহা বেগম মাথায় হাত রেখে বলে

_”কেমন আছিস ?ওখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো।

নিশাত মুচকি হেসে বলে

_”না কোনো সমস্যা হচ্ছে না কিন্ত তোমাদের আর এই বাড়িটাকে খুব মিস করছিলাম

_”যখন মনে হবে তখন চলে আসবি।তোর জামাই আসে নি

নিশাত আমতা আমতা করে বলে

_”না ও তো কাজে গেছে তাই আমি একা আসলাম।
তোমার হাতে খাবার খেতে।

_”ভালো করেছিস।তুই বস আমি নিজে তোর জন্য আলু পরোটা বানাচ্ছি।

নিশাত মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।সালেহা বেগম যেতেই নিশাত উপরে চলে যায়।

ফোনের ওপাশ থেকে আরহান চিল্লিয়ে বলে

_”আজ বাড়ি আসো তোমার পরোটা বানাবো।বার বার বারণ করছি কোনো কিছু খাবে না তারপর ও।

নিশাত বিরক্ত নিয়ে ফিসফিস করে বলে

_”চুপ করো তো কাজ করতে দাও।

নিশাত গিয়ে আমজাদ হাবিব এর রুমে ব্লাবের ভিতর হিডেন ক্যামেরা লাগায়।

ওপাশ থেকে আরহান আবার বলে

_”ড্রয়িং রুমে একটা লাগিয়।

নিশাত কাজ শেষ করে আরহানের ছবির সামনে দাড়িয়ে দেখতে থাকে ।ফোনের ওপাশ থেকে আরহান বলে

_”আবারও বলছি কিছু খাবে না কিন্ত

নিশাত কিছু বলার আগেই সালেহা বেগম বলে

_”কি রে তুই এখানে দাড়িয়ে আছিস কেনো?

নিশাত চোখের পানি মুছার ভান করে বলে

_”এই লোকটাকে খুব মনে পড়ছিল

সালেহা বেগম নিশাতের মাথায় হাত দিয়ে বলে

_”যে যাওয়ার সে তো গেছে।ধরে রাখা তো যাবে না তাই বলে নিজের লাইফ নষ্ট করিস না।আর বাচ্চা কে নিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো।তোর আব্বু বলেছিল ওরা নাকি বাচ্চা চায়।

নিশাত কিছু বললো না কিন্ত ওপাশ থেকে আরহানের ফোঁস ফোঁস করার আওয়াজ ঠিক পাচ্ছে।

বিকালে নিশাত বাড়ি আসে আরহানের কথা মত।বাড়ি এসে দেখে আরহান নেই।

ফ্রেশ হয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।আজকাল নিশাতের শরীর তেমন চলছে না যত দিন যাচ্ছে বাচ্চার আভাস পাচ্ছে।শরীরটা বিছনায় এলিয়ে দিতেই ঘুমের রাজ্যে চলে যায়।

কিছুর আওয়াজে ঘুম ভেংগে যায় নিশাতের।লাল চোখে তাকিয়ে দেখে আরহান পাশে বসে ল্যাপটপে মনোযোগ দিয়ে কি দেখছে ।

নিশাত উঠে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে ঘুমঘুম কণ্ঠে বলে

_”কি করছে উনি?মেরে ফেলবে নাকি

আরহান কিছু বলা না।নিশাত চোখ ভালো করে ডলে বলে

_”আপনার বাড়ি তো এটা।আর উনি কি করছেন? এ তো আপনার বাড়ির সার্ভমান্ট? আমি কিছু বুঝলাম না

আরহান কিছু বলতে যাবে তার আগে কলিং বেল বেজে উঠে ।আরহান উঠে যায় নিশাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে

_”এত রাতে কে আসলো? গিয়ে দেখি তো

নিশাত চোখ ডলতে ডলতে নিচে গিয়ে চোখ চড়কগাছ।
#আড়ালে_ভালোবাসি
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_৩০||

নিশাতের পা যেনো আটকে গেছে সামনে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না।কিছু সময়ের জন্য নিশাত স্তব্ধ থেকে কাপা কাপা কণ্ঠে বলে

_”ইসু

আরহান পিছনে তাকিয়ে দেখে নিশাত সিড়ি ধরে দাড়িয়ে আছে।ঝড়ের বেগে কেউ নিশাতকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে।নিশাত ও সমান তালে জড়িয়ে ধরে কান্না করে ।

ঈশার চোখে মুখে চুমু দিয়ে বলে

_”কোথায় ছিলি এতদিন?জানিস আমি কত কষ্ট ছিলাম।মাঝে মাঝে ভাবতাম তোর মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী।এভাবে আমাকে ছেড়ে কেনো গেলি বল?আপু কি এতই খারাপ যে আপুকে কিছু বলা যাইনি।

ঈশা কান্নার জন্য কথা বলতে পারছে না।পিছন থেকে আরহান বলে

_”ওকে ঘরে নিয়ে যেতে হবে।শরীর ভালো না।

নিশাত চোখ মুখ মুছে বলে

_”চল উপরে চল

জয় ঈশা কে ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।নিশাত নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না ।আরহানের দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে হয়তো আরহান নিশাতের চোখের ভাষা বুঝতে পেরেছে।

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিশাতের উদ্দেশ্যে বলে

_”ঈশা মারা যায়নি।সেদিন কেবিনে আগুন লাগানোর আগে ঈশা কে সরিয়ে নেওয়া হয়।আর এই সব করেছে সবুজ মানে যে ঈশা কে ব্লাকমেইল করতো।ঈশা কে সবুজ ভালোবাসত কিন্ত ঈশা রাজি ছিল না তাই ব্ল্যাকমেইল করে নিজের কাছে আনতে চেয়েছিল।

নিশাত অবাক নয়নে দেখছে আরহানকে।আরহান একটু থেমে বলে

_”ঈশার এভাবে হটাৎ মারা যাওয়া আমার খটকা লাগে । পরে খোজ নিয়ে জানতে পারি ঈশার লাশ পাওয়া যায়নি আর ঈশা কে ডিস্টার্ব করতো সে জেল থেকে বের হয়ে নিখোঁজ।সব কিছু অন্যরকম লাগে।হসপিটালের সিসিটিভি চেক করতে জানতে পারি সেদিন সবুজ হসপিটালে গিয়েছিল।সবুজের ব্যাপারে খোজ নিয়ে জানতে পারি ও গাজীপুর আছে।আমিও যাই গাজীপুর।বিশ্বাস ছিল না যে ঈশা বেচে আছে তবে এই টুকু বিশ্বাস ছিল ঈশার মারার পিছনে সবুজের হাত আছে।সবুজ কে আটকে রেখে যখন মারধর করি তখন শুধু ও একটা কথা বলে ঈশা আমার কাছে নেই। ব্যাপারটা সন্দেহজনক!পরে অনেক মারার পর বলে সেদিন ও ঈশা কে নিয়ে পালাতে চেয়েছিল কিন্ত যে ওকে জেল থেকে ছাড়িয়েছে সে ঈশা কে নিজের কাছে রাখে সঠিক সময়ে সবুজের কাছে দেবে।সবুজের মাধ্যমে ঈশা কে পাই।

নিশাত কাপাকাপা কণ্ঠে বলে

_”কে সে ?

আরহান একটু দূরে সরে বলে

_”জানিনা সবুজের সাথে নাকি ফোনে কথা বলত।সবুজ কখনো তাকে দেখেনি কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি তাকে পেয়ে যাবো

নিশাত বিশ্বাস করতে পারছে না ঈশার মত একটা ছোট মানুষের সাথে কারোর এত শত্রুতা থাকতে পারে। নিশাত বলতে যাবে ঈশার ডাকে ছুটে যায়।

ঈশার কাছে গিয়ে গালে হাত দিয়ে বলে

_”ঠিক আছিস তুই?কিছু খাবি?

ঈশা মুখটা কাচুমাচু করে মাথা নাড়ায়।নিশাত শিরীন কে ডাকতে যাবে তার আগেই আরহান খাবার হাতে করে নিয়ে আসে ।

নিশাত হাত বাড়িয়ে পেলেট নিতে গেলে আরহান না দিয়ে বলে

_”আমার বোনকে আমি খাওয়াবো।আশা করি এতে কারোর কোনো সমস্যা হবে না ।

নিশাত কিছু বলে না।আরহান ঈশা কে নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে ।পাশে জয় বসে আছে।নিশাত তাকিয়ে দেখছে ।ঈশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই চোখ যায় ব্যান্ডেজ করা হাতের দিকে।

নিশাত আলতো করে হাতটা ছুঁয়ে দিয়ে বলে

_”খুব ব্যাথা করছিলো?আমাকে মাপ করে দে।বড়ো বোন হয়ে তোর মনের কথা বুঝতে পারলাম না।একবার আমাকে বলতি সুইসাইড করার কি দরকার ছিল বল?

ঈশা ভয়ে ভয়ে বলে

_”আপু আরহান ভাইয়া ছেলেটাকে জেলে দেওয়ার পর কি করে যেনো ছাড়া পায়।আর আমাকে ব্লাকমেইল করে ।আরহান ভাইয়া কে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।কি করবো বুঝতে পারছিলাম না এমনিতেই তুই আমার জন্য নিজের সব সুখ বিসর্জন দিয়েছিলি আবার তোর জীবনে আমি ঝামেলা করতে চাইনি।আরহান ভাইয়াকে তুই খুব ভালোবাসি সেটা আমি জানি।ভাবলাম আমি চলে গেলে সব ঝামেলা শেষ ।

নিশাত ধমকের সুরে বলে

_”হা তুই ত আমার ঝামেলা।অনেক বড় ঝামেলা।খুব বড়ো হয়ে গেছিস তাই না নিজের সিদ্ধান্ত একা নিচ্ছিস।

ঈশা নিশাতকে জড়িয়ে ধরে বলে

_”প্লীজ আপু মাপ করে দে আর কখনো করবো না।বিশ্বাস কর আল্লাহ কাছে ও আমি মাপ চাইছি।এখন তুই রাগ করিস না আর করবো না তো

ঈশার কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে সেটা নিশাত বুঝতে পেরেছে। জয় তেড়ে এসে বলে

_”বাহ এই টুকু মেয়ের মাথায় কি বুদ্ধি!অসাধারণ।তো আমাদের যে এত ঝামেলায় ফেলে তার বেলায় কি?ইচ্ছা করছে একটা দি

জয় হাত বাড়াতেই ঈশা কান্না করে।জয়ের এমন রেগে যাওয়ার কারণ নিশাত আরহান কেউ বুঝলো না।

জয় আবার ধমক দিয়ে বলে

_”এই চুপ!একদম চুপ।এখন কেনো কান্না করছো?তুমি জানো এই কয় মাসে আমাদের উপর দিয়ে কি যাচ্ছিল কোনো আইডিয়া আছে dame it!

আরহান পরিবেশ ঠান্ডা করতে বলে

_”আচ্ছা থাক।গাড়িতে অনেক বকাবকি হইছে এখন এইসব বাদ।ঈশা তুমি রেস্ট করো আমি আসছি

ঈশা মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।আরহান বের হবার সময় নিশাতের হাত ধরে বাইরে নিয়ে আসে

নিশাত বিরক্তি নিয়ে বলে

_”কি হইছে ?

আরহান নিশাতের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে

_”আজ থেকে সব ভালো হবে।ঈশা ফিরে এসেছে।এখন আর কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না।

_”কিন্ত যে আপনাকে মারতে চেয়ে

পুরোটা শেষ করতে পারে না তার আগেই আরহান নিজের আঙ্গুল নিশাতের ঠোঁটে রাখে

_”হুস কোনো কথা না।তোমাকে ওইসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।তুমি ভিতরটা সামলাও আর আমি বাইরেটা।কি পারবে তো ?

নিশাত আরহান কে জড়িয়ে ধরে বলে

_”পারবো।সব পারবো।শুধু তুমি পাশে থাকো।আর কিছু চাই না আবার আগের লাইফ চাই।খুব ভালোবাসি তোমাকে খুব।

আরহান আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে

_”আমিও ভালোবাসি আমার বাবুর আম্মুকে।

এদিকে

জয় ঈশা কে বিভিন্ন রকম জ্ঞান মূলক কথা বলে যাচ্ছে।ঈশা মাথা নিচু করে সব শুনছে।

জয় ঈশা কে ভালো করে দেখছে ঠোঁট লাল হয়ে আছে সাথে নাকটা ও।এখনই মনে হয় পানি পড়বে পড়বে ভাব। নিশাত যত চঞ্চল ঈশা ততই শান্ত।

জয় এগিয়ে এসে ঈশার চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে

_”দেখো ঈশা তুমি জানোনা তোমার বোনের কি অবস্থা হইছিলো।তোমাকে পেয়ে আরহান পাগলের মত করছিলো সেটা তো তুমি জানো।নিজের বোন ভাবে তোমাকে।সবাই কত ভালোবাসে আর তুমি এমন একটা কাজ করে সবাইকে বিপদে ফেলে দিলে।সুইসাইড করার পাপ সেটা তো জানো।৫ওয়্যাক্ত নামাজ পড়ে কি করলে জীবনে?

শেষের কথাটা জয় গম্ভীর কণ্ঠে বলে।ঈশা নিজের কানে হাত দিয়ে বলে

_”সরি ভাইয়া আর হবে না ।

জয় ফিক করে হেসে দেয়। ঈশা ছোটছোট চোখ করে তাকিয়ে আছে ।জয় ঈশার নাক টেনে বলে

_”পিচ্ছি একটা

দরজায় দাড়িয়ে নিশাত সবটা দেখছে।নিশাতকে পিছন থেকে জড়িয়ে আছে আরহান।

নিশাতের কানে ফিসফিস করে বলে

_”ঈশা মেয়েটা ওমন সবার মন জয় করে নেয়।ঈশা কে পাওয়া গেছে শুনার পর জয় পাগলের মত বলছিলো নিশাত খুব খুশি হবে ।নিশাতের কলিজার টুকরা পাওয়া গেছে ।

নিশাত মুচকি হেসে বলে

_”জয় ভাইয়া খুব ভালো।

আরহান অভিমানী কণ্ঠে বলে।

_”সবাই ভালো শুধু আমি বাদে।এই আগের বারের মত ঐভাবে প্রপোজ করবে

নিশাতের সেইদিনের কথা মনে পড়ে যায় লজ্জায় চলে যেতে গেলে আরহান নিশাতের উড়না ধরে

_”এক বাচ্চার মা হবে এখনো এত লজ্জা।এভাবে আমাকে মারার প্ল্যান করেছো নাকি। হায়

নিশাত আরহানের কথায় আরো লজ্জা পেয়ে যায়।
আরহান নিশাতের কানে কানে ফিসফিস করে বলে

_”লজ্জা পেও না। নাহলে কিছু একটা হয়ে যাবে

নিশাত আরহানকে ধাক্কা দিয়ে ঘরে গিয়ে বলে

_”ইসু তুই ফ্রেশ হয়ে নে।এখনো সেই পোশাকে আছিস?যা আগে গোসল কর

ঈসাকে উঠতে সাহায্য করে নিশাত।আরহান বাইরে থেকে বলে

_”তোমরা এই ঘরে ঘুমাও আমরা অন্য ঘরে আছি।

জয় ঘর থেকে যেতেই নিশাত ঈসাকে ওয়াশরুমে নিয়ে গোসল করিয়ে নিজের ড্রেস পড়িয়ে দেয়।

ঈশা কে ভালো করে বসিয়ে নিশাত প্রশ্ন করে

_”তোর পিঠে এইসব কিসের দাগ ?

ঈশা যেনো আটকে উঠে নিশাত কে জড়িয়ে ধরে বলে

_”আপু ওরা আমাকে অন্ধকার একটা রুমে আটকে রাখে আর খেতে না চাইলে লাঠি দিয়ে খুব মারত।

নিশাত ঈসাকে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দিতে থাকে

_”ঈশা কে যে করেই হোক ওইসব ভয় কাটাতে হবে।(মনে মনে)

নিশাত ঈশার মন ঘুরানোর জন্য বলে

_”ইসু তুই এভাবে কান্না করতে কি হবে?কয়দিন পর বাবু এসে কি দেখবে যে ওর খালা মনি কান্না করে।এটা কি ভালো দেখা যাবে আর কান্না করলে তোকে পেত্নী লাগে

ঈশা চট করে নিশাতের বুক থেকে উঠে অবাক চোখে বলে

_”মানে আপু তুই

নিশাত চোখ দিয়ে বুঝায় ঈশা যা ভাবছে সত্যি ।ঈশা নিশাতের পেটের কাছে মাথা দিয়ে বলে

_”ইয়াহু আমি খালা আম্মু হবো। কতো দিন অপেক্ষা করেছি।দেখি তো বাবু নড়ছে কি না। হ্যালো বাবু আমি তোমার খালামণি।

নিশাত ঈশার কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ।ঈশা মুখ ছোট করে বলে

_”আপু বাবুর নাম কিন্ত আমি রাখবো।আমাকে রাখতে না দিলে বাবু কে ধরতে দেবো না বলে দিলাম।

নিশাত মুচকি হেসে বলে।

_”বাবুর নাম আমার ঠিক করা আছে।আমি না থাকলে ওই নাম ওদের আমার কথা মনে করিয়ে দেবে

ঈশা কাদো কাদো মুখ করে বলে

_”আপু ওমন বলিস না আমি তোকে কোথাও যেতে দেবো।তোকে ছাড়া আমি থাকবো কি করে

_”হইছে আর ড্রামা করতে হবে না।শুয়ে পড়

ঈশা নিশাতকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে।নিশাত ঈশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।কিছুক্ষণের মধ্যে ঈশা ঘুমের রাজ্যে পারি দেয়।

নিশাত ঈশা কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে এই কয়দিনে চেহারার কি অবস্থা হইছে ।মুখটা শুখিয়ে গেছে।শরীরে মারের দাগ।

নিশাত আস্তে করে ঈশা কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বাইরে যায় ।

খুব ছাদে যেতে ইচ্ছা করছে।রাতে যাওয়া ঠিক না তবুও নিশাতের মন আজ খুব খারাপ।খোলা আকাশে যদি একটু ভালো হয়।নিশাত আস্তে আস্তে ছেড়ে গিয়ে রেলিং ধরে দাঁড়াল।দুর আকাশের দিকে তাকিয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলে

_”i am sorry আব্বু আম্মু।আমি তোমাদের কথা রাখতে পারলাম না।ঈশা কে সুন্দর জীবন দিতে পারলাম না।সব আমার জন্য।আমি যদি ঈশা কে একটু বুঝতাম তাহলে ঈশার সাথে এত কিছু হতো না।নিজের ভুলের জন্য নিজের জীবন থেকে দুইমাস চলে গেছে।আমাকে মাপ করে দাও

নিশাত উড়না দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরছে যাতে কান্নার আওয়াজ বাইরে না যায়।হটাৎ কাধে ঠান্ডা কিছু অনুভব হওয়ায় ভয় পেয়ে যায়।পিছনে ঘুরে দেখার আগেই দুটো হাত আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে।নিশাতের বুঝতে দেরি হলো না ।

শান্ত গলায় বলে

_”তুমি ঘুমাওনি?

আরহান নিশাতের কানের লতিতে কামড় দিয়ে বলে

_”আমার বউয়ের মন খারাপ আর আমি আসবো না সেটা কি করে হয়।বউয়ের মন খারাপ মনে বরের ও মন খারাপ।

আরহানের লজিক শুনে নিশাত কি বলবে বুঝতে পারছে না।

কিছু সময় দুইজন চুপ থেকে নিশাত বলে

_”ওরা ইসু কে অনেক মেরেছে।শরীরে দাগ পড়ে গেছে।আমি ওদের কঠিন শাস্তি চাই।বিনা কারণে যারা তোমার আমার সুখ নষ্ট করেছে তাদের শাস্তি চাই ।তবে সেটা আইনত।

নিশাতের কথায় আরহান নিশাতকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে

_”তোমাকে কথা দিলাম আমার বাচ্চা পৃথিবীর আলো দেখার আগে সবাই সবার শাস্তি পাবে।এমন শাস্তি দেবো তারা সারাজীবনে কখনো ভুলতে পারবে না

আরহান নিশাতের চোখের দুই পাতায় চুমু খায়।কপালে ভালোবাসা দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।নিশাত নিজের সব কষ্ট ভালোবাসার মানুষের বুকে বিলীন করছে ।

দুইজন দুইজনার হৃদপিন্ডের ডাক শুনতে ব্যস্ত তখনই নিচ থেকে জয়ের চিৎকার কানে আসে। দুইজন দুইজনকে ছেড়ে দেয়

নিশাত বলে

_”চিল্লানোর আওয়াজ আসছে না ?

_”জয়ের চিৎকার

নিশাত আর আরহান নিচে গিয়ে দেখে ঈশা হাত পা ছুড়াছুড়ি করছে আর পাগলের মত বলছে আমাকে মেরো না আমাকে মেরো না আমি কিছু করিনি।

জয় ঈসাকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করছে কিন্তু ঈশা কারো কথা শুনছে না।নিশাত আর আরহান দুইজন অবাক চোখে দেখছে।

নিশাত এগিয়ে যেতে গেলে ঈশা চিৎকার করে বলে

_”আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আমাকে মেরো না প্লীজ।

চলবে

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here