আফিম বড্ড নেশালো ০২-পর্ব ৩২

#আফিম_বড্ড_নেশালো_০২
#লেখিকা_মাহযাবীন
#পর্বঃ৩২ [প্রথমাংশ]

একজন বিশ্বস্ত গৃহপরিচারিকার দিকে তাকিয়ে আফিম চোখের ইশারা করতেই একে একে সকল গৃহপরিচারিকারা বেড়িয়ে গেলো বাড়ি হতে।মুহুর্তেই বাড়ির দরজা-জানালা সব বন্ধ করে দেওয়া হলো।এগুলো যেনো সবটাই পূর্ব পরিকল্পিত ছিলো।এ সব দেখে নিয়ে ব্রুদ্বয়ের মাঝে ভাজ পরলো আরহান সাহেবর।একটি সহজ প্রশ্নের পর হওয়া এসব কান্ডের আগাগোড়া কিছুই বুঝতে সক্ষম হলেন না তিনি।নিরবে কৌতূহলী চোখে চেয়ে আছেন তিনি নিজের পুত্রের দিকে।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পুরো বাড়ি খালি হতেই আফিম নাফিয়ার হাত খানা নিজ হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়।শক্ত করে আঁকড়ে ধরে নিজ প্রেয়সীর হাত খানা।অতঃপর শান্ত, স্বাভাবিক ও দৃঢ় কন্ঠে বলে ওঠে,
-নাফিয়া আমার অর্ধাঙ্গিনী।
আফিমের উচ্চারিত এই ছোট্ট বাক্যখানা আরহান সাহেবের কান অব্দি এলেও তা যেনো ঠিক বোধগম্য হলো না তার।তিনি ব্রু কুঁচকেই জিজ্ঞেস করে উঠলেন,
-কি বললে?
-She is my better half,my life partner, my wife,she is Mrs. Afeem ibnan. [সে আমার অর্ধাঙ্গিনী, আমার জীবন সঙ্গিনী,আমার বউ,সে মিসেস. আফিম ইবনান।]
চোখে বিস্ময় ফুটে ওঠে আরহান সাহেবের।নিজ কানকে বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে পরেছে তার।অপর দিকে আরহান সাহেবের সাথে সাথে অন্য একজনও যেনো বিস্ময়ের চরম শীর্ষে অবস্থান করছে।অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে সে আফিমের মুখ পানে।আফিম সে চোখে চোখ রাখলো না।জানে এ দৃষ্টি প্রশ্নে পরিপূর্ণ আর সেসব প্রশ্নের উত্তর দেবার সঠিক সময় এখন নয়।তাই আফিম নিজের দৃষ্টি নিজের পিতার দিকেই তাক করে রাখলো।
বেশ কিছুক্ষণ থমকে থেকে এবার নড়েচড়ে উঠলেন আরহান সাহেব।জিহবা দ্বারা নিজের ওষ্ঠ ভিজিয়ে নিলেন।মনে মনে প্রশ্ন করলেন,
“এতোটাই অযোগ্য পিতা আমি যে বিয়ের আগে আমার মতামত নেওয়া তো দূরের কথা আমাকে জানানোর প্রয়োজনটাও অনুভব করলো না আমার ছেলে?”
আরহান সাহেব অনুভব করলেন তার চোখজোড়া মৃদু সিক্ত।দ্রুত তিনি তা লুকিয়ে মুছে নিলেন।তাকালেন আফিমের দিকে।শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে উঠলেন,
-আমি কি পিতা হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন করিনি আফিম?
-করেছেন।
-তাহলে সন্তান হিসেবে তোমার কি দায়িত্ব ছিলো না নিজের জীবনের এতো বড় সিদ্ধান্তে নিজের পিতার মতামত নেওয়া?
-সাধারণ যেকোনো সন্তানের জন্য অবশ্যই এটা তার দায়িত্বের মধ্যে পরতো।কিন্তু আপনার সন্তান হিসেবে আমার দায়িত্ব আপনার প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখা।মানে টাকা দিয়ে আপনার সব প্রয়োজন পূর্ণ করা।
-মানে? কি বলতে চাইছো?
-বাবা হিসেবে আপনি দায়িত্ব পালন করেছেন শুধু টাকার বান্ডিল পাঠিয়ে তাহলে ছেলে হিসেবে আমার দায়িত্ব টাও ঠিক টাকার বান্ডিলেই সীমাবদ্ধ থাকবে।এটাই স্বাভাবিক?
বাবা,সন্তানের তুলনা করা যায় মাটির তৈরি আসবাব পাত্রের সাথে।সন্তানরা যখন ছোট থাকে তখন তারা কাঁদা মাটির ন্যায় হয়।মানুষ কাঁদা মাটিতে যেমন নিজের ইচ্ছে মতো রূপ প্রদান করতে পারে ঠিক তেমনই বাবা-মা তাদের দেওয়া শিক্ষাদীক্ষার মাধ্যমে তাদের সন্তানকে নিজেদের মর্জি মতো যোগ্য করে গড়ে তোলে।সন্তানরা নিজের বাবা-মাকে দেখেই শিক্ষা গ্রহণ করে।আপনি যেমন দায়িত্ব বলতে শুধু টাকা টাকেই বোঝেন ঠিক তেমনই আমিও।কারণ আপনার কাছ থেকে এমনটাই শিখেছি।

-আমার পরিস্থিতিতে থাকলে তুমিও তাই-ই করতে যা আমি করেছি।
-পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে আপনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেলেও আমার কাছে পাবেন না।কারণ আপনার জায়গায় আমি থাকলে আমার স্ত্রী, সন্তানের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে কিছু হতোই না।আর ধরেন যদি হতোও তাহলেও আমি এতোটা স্বার্থপর হতাম না যে নিজের মা মরা সন্তানকে একটু স্নেহ দেখাবো না,তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ কথা বলবো না,তার মন বুঝার চেষ্টা করবো না বা কয়েক মিনিট সময় নিয়ে তার অভিমান ভাঙাবো না। এমন নির্দয় বাবা আমি কখনোই হতাম না,কখনো না।
কথাগুলো বলার মাঝেই অতীত মনে পরায় রাগের পরিমাণ বাড়ে আফিমের।আরহান সাহেবের সাথে আর এক মুহূর্তও কথা বলার ইচ্ছে হারায় সে।আরহান সাহেব কিছু বলার জন্যে উদ্ভূত হোন কিন্তু তার কিছু বলে ওঠার পূর্বেই নাফিয়ার হাতখানা আরো শক্ত করে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আফিম আরহান সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে,
-আমি ভীষণ ক্লান্ত।রেস্ট নিতে চাচ্ছি।
কথাখানা বলে আর দাঁড়ায় না আফিম।নাফিয়াসহ অগ্রসর হয় নিজ কক্ষের দিকে।

!!
আধা ঘণ্টার মতো সময় নিয়ে ওয়াশরুম হতে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে নিজ কক্ষে প্রবেশ করে আফিম।বিগড়ে যাওয়া মেজাজ এবার কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে তার।চুল মুছতে মুছতে শান্ত দৃষ্টিতে কক্ষের আনাচে-কানাচেতে চোখ বুলিয়ে নিলো আফিম।দেখা পেলো না নিজের প্রেয়সীর।ব্রুদ্বয়ের মাঝে মৃদু ভাজ ফেলে সে উঁকি দিলো নিজের কক্ষের সাথে লাগানো বারান্দাটিতে।এবার দেখা পেলো এক এলোকেশী কন্যার।আফিম বুঝলো তার হৃদহরণীর হৃদয়ে ছেয়ে আছে কয়েকশত প্রশ্নরা।ভাবুক মনে আকাশ পানে তাকিয়ে মেয়েটি নিজের এসকল প্রশ্ন নিয়েই ভাবছে।
নিজের ভেজা তোয়াল চেয়ারের উপর ফেলে আফিম এগিয়ে গেলো নাফিয়ার ধারে।দু’হাত মেয়েটির কোমরে রেখে জড়িয়ে ধরলো তাকে নিজের সাথে।কানের কাছে চুমু এঁকে বলে উঠলো,
-কি ভাবছো?
নাফিয়া আফিমের দু’হাতের উপর নিজের দু-হাত রেখে নিন্ম স্বরে জিজ্ঞেস করে উঠলো,
-আরহান স্যারকে বলা কথাগুলো কি মিথ্যে ছিলো?
প্রশ্ন শুনলো আফিম।মেয়েটির কাঁধে ঠোঁট বুলোতে বুলোতে সে বলে উঠলো,
-আরহান স্যার না শশুর আব্বা বলো।
#আফিম_বড্ড_নেশালো_০২
#লেখিকা_মাহযাবীন
#পর্বঃ৩২[শেষাংশ]

নিজের কোমর হতে আফিমের হাত জোড়া সরিয়ে আফিমের দিকে ফিরে দাঁড়ায় নাফিয়া।তার চোখে চোখ রেখে উৎসুক কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-মানে?
নাফিয়ার চেহারা পানে তাকিয়ে মৃদু হাসলো আফিম।দু’হাতে আঁকড়ে ধরলো নাফিয়ার মুখখানা।নাকে নাক ঘষে বলে উঠলো,
-মানে আপনি মিস.শেখ থেকে মিসেস. আফিম ইবনানে পরিণত হয়েছেন আরো অনেক আগেই।
আফিমের কথা শুনে তার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে নাফিয়া।কথাখানা সহজে যেনো হজমই হচ্ছে না মেয়েটার।কিছুক্ষণ সময় নিয়ে সে থেমে থেমে জিজ্ঞেস করে উঠলো,
-কবে?কিভাবে?
নাফিয়ার প্রশ্ন শুনলো আফিম।মেয়েটার মনের হাল বুঝার চেষ্টা করছে সে।সেই সাথে মেয়েটিকে কিভাবে সবটা বুঝিয়ে বলবে তাও ভাবছে।ভাবতে ভাবতেই নাফিয়াকে নিজের অনেকটা কাছে টেনে নিলো আফিম।চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো,
-নাফিয়া,তুমি এখনো ছোট।বিয়ে,সংসার এসব একটা বড় দায়িত্ব।আমি চাই না তুমি এই ছোট বয়সে এসব দায়িত্ব নেও।অনেকে বিয়েটাকে অনেক সহজ ভাবে।কিন্তু জানো পৃথিবীর সবথেকে কঠিন কাজটা কি?
-কি?
-সম্পর্ক গড়ে তোলার পর সেই সম্পর্কটার সৌন্দর্য টা ধরে রাখা বা বজায় রাখা।
বিয়ে সহজ!তিন কবুল বললা আর হয়ে গেলো।কিন্তু বিয়ের পর অনেক গুলো দায়িত্বে আবদ্ধ হতে হয় মানুষকে,অনেক দিকে খেয়াল রাখতে হয়।বিয়ের এসব শত দায়িত্বের মাঝে গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব হচ্ছে ‘সম্পর্কের যত্ন’।বিয়ের পর স্বামী ও স্ত্রীর প্রথম দায়িত্ব হওয়া উচিৎ একে-অপরের মানসিক শান্তি হওয়ার চেষ্টা করা।দ্বিতীয় দায়িত্ব একে-অপরের প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখা।তৃতীয় দায়িত্ব, একে-অপরের পরিবারকে আপন করে নেওয়া।চতুর্থ দায়িত্ব নিজেদের সংসার গুছিয়ে রাখা ও সংসার সুখময় করে রাখা।পঞ্চম দায়িত্ব সংসারে তৃতীয় পক্ষের কারো হস্তক্ষেপ হতে না দেওয়া।এমন আরো অনেক দায়িত্ব থাকে।অনেক সমঝোতা ও ত্যাগের মাধ্যমে টিকে থাকে একটি সম্পর্ক।আর এগুলো শুনতে যতটা সহজ মনে হয় তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা ততটাই কঠিন।

কথাগুলো বলে থামে আফিম।জিহবা দ্বারা নিজের ওষ্ঠ ভিজিয়ে আবারও বলতে আরম্ভ করে,
-বিয়ের মতো সম্পর্কে মানসিক ব্যাপারের সাথে সাথে শারীরিক কিছু বিষয়ও জড়িত থাকে।এসবের জন্য তুমি এখনো পরিণত বয়সে যাওনি।আর এসব ভেবেই আমি এখনো অব্দি আমাদের বিয়ের সত্য টা লুকিয়ে রেখেছিলাম তোমার কাছ থেকে।কিন্তু আজ বলতে হলো।এখন জেনেছো আমি তোমার অর্ধাঙ্গ।কিন্তু তবুও কিচ্ছু পরিবর্তন হবে না,কিছুই না।যা যেমন চলছিলো ঠিক সেভাবেই চলবে।
কথাগুলো বলে এবার থামে আফিম।নাফিয়ার গাল হতে হাত সরিয়ে এবার তার কোমর আঁকড়ে ধরে সে।কপালে আলতো করে এক চুমু এঁকে বলে ওঠে,
-মিস.শেখ,তুমি কি জানো বিয়ের পর স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে বন্ধুত্ব থাকাটা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ?বন্ধুত্ব যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনই স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে প্রেম থাকাটাও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।প্রেম না থাকলে এই সম্পর্ক টা ধীরে ধীরে মরে যায়,নিজের সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে।তাই আমি তোমার স্বামী হওয়ার পাশাপাশি তোমার বন্ধু হতে চাই।চাই তোমার প্রেমিক পুরুষ হতে।এখন যেহেতু তোমার স্বামী হওয়া বারণ তাই আমি এখন শুধু তোমার প্রেমিক হতে চাই,হালাল প্রেমিক।

কথাখানা বলে ঠোঁটে মৃদু হাসি টানে আফিম।
মেয়েটির কপালে কপাল ঠেকিয়ে অপলক তাকিয়ে রয় নিজ প্রেয়সীর মুখপানে।অপেক্ষা তার প্রেয়সীর উত্তরের।
এতোক্ষণ কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়েই চুপচাপ মনোযোগী শ্রোতার ন্যায় সবটা শুনছিলো নাফিয়া।কিন্তু এবার আর আঁটকে রাখতে পারলো না নিজের আবেগ।হুট করে কেঁদে উঠলো সে।

!!
নিজের ক্যাবিনে বসে কাজে ব্যস্ত রিয়াদ।আফিম অফিসে না আসায় কাজের চাপ টা তার উপর একটু বেশিই।কাজের মাঝে হটাৎই তার ফোনে ‘টুং’ করে এক শব্দের সৃষ্টি হয়।শব্দটি কর্ণকুহর অব্দি পৌঁছাতেই সেদিকে আড় চোখে তাকায় রিয়াদ।ব্রুদ্বয়ের মাঝে মৃদু ভাজ ফেলে নিজের ফোন হাতে নেয় সে।অতঃপর একখানা ম্যাসেজ চোখে পরে তার,
“শুধু শুধু বেঁচে থেকে দুনিয়ার উপর বোঝা কেন হচ্ছেন?”
ম্যাসেজ টা পড়তেই মেজাজ বিগড়ে গেলো রিয়াদের।সে রাগ চেপে রিপ্লাই করলো,
-Excuse me?
রিয়াদ ম্যাসেজ সেন্ড করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রিপ্লাই এলো,
-I am saying the fact. [আমি প্রকৃত সত্যটি বলছি] আল্লাহ কি আপনাকে শুধু সারাক্ষণ কামলা খাটার জন্য তৈরি করেছেন?জীবন কি তা তো জানেনই না আপনি।দুনিয়ার কোনো সৌন্দর্য সমন্ধেও ধারণা নেই আপনার।জীবন উপভোগ করার সাথে তো আপনার দূর দূর অব্দি কোনো সম্পর্ক নেই।এভাবে বেঁচে থেকে হুদাই দুনিয়ার উপর বোঝা হয়ে আছেন।
অপরিচিতার এমন ম্যাসেজে থতমত খেয়ে যায় রিয়াদ।ভাবে আসলেই তার জীবনে তো খাওয়া,ঘুম আর কামলা খাটা ছাড়া কিচ্ছু নেই।তবে কি সত্যিই পৃথিবীর বুকে সে কেবল এক বোঝা মাত্র?
প্রশ্নখানা রিয়াদের মনে উদিত হতেই একটি দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো সে।মনমরা হয়ে রিপ্লাই করলো,
-লিসেন, মাইন্ড ইউর অন(own) বিজনেস।
ম্যাসেজটি পাঠিয়ে রিয়াদ তার ফোন পূর্বের জায়গায় রাখতেই যাবে এমন সময় আবারও ম্যাসেজের শব্দ কানে আসে রিয়াদের।
-আমার কাজ হচ্ছে সত্য কথা বলা।আর আমি সেটিই করছি।দেখেন তো বাইরে কেমন মেঘলা আবহাওয়া।এই আবহাওয়ায় আপনার বয়সী ছেলেরা বাইক নিয়ে বের হয়,বন্ধু নিয়ে ঘুরে।আর আপনি কামলা দিচ্ছেন।
উক্ত ম্যাসেজটি পড়েই ফোন রেখে উঠে দাঁড়ায় রিয়াদ।নিজের ক্যাবিন হতে বেরিয়ে অগ্রসর হয় কুসুমের দিকে।

“মিস.কুসুম, গিভ মি ইয়র ফোন”
রিয়াদকে দেখেই নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় কুসুম।উক্ত বাক্যটি শুনে ব্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-জ্বি স্যার?
-ফোন দেও তোমার।
আচমকা রিয়াদের এ কথায় অপ্রস্তুত হয়ে পরে কুসুম।আমতাআমতা করে কিছু বলতে উদ্ভূত হয় সে কিন্তু তার কিছু বলার আগেই রিয়াদ ছোঁ মেরে তার ফোন নিজের হাতে নিয়ে নেয়।ফোনের স্ক্রিন খোলা থাকায় রিয়াদের বেশ সুবিধেই হলো।সে সোজা কুসুমের ফেসবুক অ্যাপ ওপেন করলো।কিন্তু ওপেন করবার পরপরই হতাশ হলো ছেলেটা।
সে সন্দেহ করেছিলো তাকে ম্যাসেজ দেওয়া মেয়েটি স্বয়ং কুসুমই।কারণ যেই তাকে টেক্সট করছে সে কাছের কেউই।আর রিয়াদের জন্য যেহেতু অফিসই তার ঘর সেহেতু অফিসের স্টাফরাই তার সব থেকে কাছের।সেই সাথে স্টাফদের মাঝে একমাত্র কুসুমই কৃষ্ণবর্ণা।তাই সব মিলিয়ে রিয়াদ একশো ভাগ নিশ্চিত হয়েছিলো যে মেয়েটি কুসুমই।কিন্তু এখন কুসুমের ফেসবুক আইডি চেক করতেই হতাশ হলো সে।
ফেসবুক ভালো করে চেক করা শেষে রিয়াদ এক পলক তাকালো কুসুমের দিকে।মেয়েটি ব্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।এভাবে একটি মেয়ের ফোন চেক করায় এখন রিয়াদের নিজেরই লজ্জাবোধ কাজ করছে।নিজের অপরাধবোধ লুকোনোর চেষ্টা করে সে স্বাভাবিক ভাবে কুসুমের ফোন কুসুমের দিকে এগিয়ে দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,
-স্যরি।
এই একটি শব্দ বলেই সাথে সাথে স্থান ত্যাগ করে রিয়াদ।সোজা নিজের ক্যাবিনে ফিরে যায় সে।
এদিকে রিয়াদ স্থান ত্যাগ করতেই মুচকি হাসে কুসুম।

!!
প্রেয়সীর চোখের পানি আলতো হাতে মুছে দিতে দিতে আফিম চিন্তিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে উঠলো,
-কাঁদছো কেনো?কি হয়েছে?
আফিমের এ প্রশ্নে যেনো তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো নাফিয়া।ক্রোধান্বিত,অশ্রুসিক্ত চোখে তাকালো সে নিজের পুরুষের দিকে।দু’হাতে শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো ছেলেটির শার্টের কলার।দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করে উঠলো,
-সব সীদ্ধান্ত আপনাকে একা নেওয়ার অধিকার কে দিয়েছে?বিয়ের আগে মতামত নিয়েছিলেন আমার?জানতে চেয়েছিলেন আমি কি চাই?
নাফিয়ার প্রশ্নে তার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় আফিম।উপযুক্ত উত্তর খুঁজে না পেয়ে সে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-বিয়েতে অমত তোমার?অন্য কারো হতে চাও?
আফিমের এমন প্রশ্ন নাফিয়ার রাগের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি করলো।সে আরো শক্তভাবে আফিমের কলার নিজের হাতের মুঠোয় চেপে ধরে উচ্চ স্বরে বলে উঠলো,
-চুপ, একদম চুপ।

চলবে।

[

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here