আমার আকাশে তারা নেই পর্ব -০৯

#আমার_আকাশে_তারা_নেই
#লাবিবা_আল_তাসফি
পর্ব: ৯

–‘জানেন তো ইহান আমার জীবনের প্রথম প্রেম প্রথম ভালোবাসা দুটোই আপনি। প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়েছিলাম আপনার। তখন হয়তো ভালোবেসে উঠতে পারিনি তবে ভালোলাগা আর নাম না জানা নতুন এক অনুভূতির সাথে পরিচিত হয়েছিলাম। আপনি যখন কথা বলতেন আমি চেয়ে চেয়ে দেখতাম। আপনার কথা বলার স্টাইলটা আমার খুব ভালো লাগতো। এখনো লাগে। কথায় আছে যাকে ভালো লাগে তার দোষ গুলোও নাকি ভালোলাগে। প্রথম থেকেই আপনি আমার সাথে খুব একটা কথা বলতেন না। তবে যতটুকু বলতেন হাসি মুখে বলতেন। আপনার সে হাসিতেই আমি ভালোবাসা খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়তাম। ঐ সামান্য হাসিতেই আমি মুগ্ধ হতাম। তবে যত দিন বাড়তে লাগলো আমার সাথে আপনার কথা বলার পরিমাণও তত কমে আসতে লাগলো। আস্তে আস্তে আমার মনে হল আপনি আমার উপর বিরক্ত হন, শুধু বিরক্ত না প্রচন্ড রকম বিরক্ত হন। কিন্তু ততদিনে আপনার প্রতি আমার ভালবাসাটাও হয়ে গিয়েছিল। আপনার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য দিন দিন তৃষ্ণার্থ হয়ে উঠছিলাম। ‌বেসামাল হয়ে যাচ্ছিলাম। বারবার ছোট ছোট আবদার নিয়ে আপনার কাছে হাজির হতাম। কিন্তু প্রতিবারই আপনি আমায় আশাহত করে আমার ছোট্ট মনটাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতেন। কষ্ট পেতাম। কাঁদতাম। তবে এই বেহায়া মন আবারো নির্লজ্জের মত আপনার কাছে ছুটে যেত। অভিমান যে হতো না তেমনটি না। অভিমান হতো, খুব অভিমান হতো। তবে অভিমানকে আমি প্রশ্রয় দিতাম না। ‌ অভিমান কে প্রশ্রয় দিলে হয়তো এতটা দিন আপনার অবহেলা সহ্য করতে পারতাম না। সহ্য ক্ষমতা হয়তো অনেক আগেই হারিয়ে ফেলতাম। কিন্তু আমি চাই না কখনো আপনার উপর থেকে আমার ভালোবাসা হারিয়ে যাক। আমিতো সারাটা জীবন আপনাকে ভালবেসে কাটিয়ে দিতে চাই। আপনার থেকে অবহেলা পেয়ে রাতে যখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে অন্ধকারের মাঝে নিজের কষ্ট গুলো কে উড়িয়ে দিতাম তখন অন্ধকার ঐ আকাশের বুকে হাজার তারার মেলা দেখে খুব কষ্ট হতো। কারন আকাশের বুকে হাজার তারার মেলা আর আমার বুকের মাঝটা অন্ধকারে ঘেরা। তবে পার্থক্য হলো তার বুকে উজ্জ্বল করে রাখার জন্য অনেক তারা রয়েছে। তবে আমার আকাশে কোনো তারা নেই! আপনার সকল অবহেলা সহ্য করতে পারলেও কালকের পাওয়া আঘাত আমি সহ্য করতে পারিনি। আমার স্বামীর কাছে আমার মূল্য না থাকলেও অন্য সবার মুল্য আছে! এই জিনিসটা কয়জনে মেনে নিতে পারবে বলতে পারবেন? কোন মেয়েই মেনে নিতে পারবে না। আমিও পারিনি। দম বন্ধ হওয়া অনুভুতি হচ্ছিল।’

বলতে বলতে কেঁদে ফেললে ইচ্ছে। মেয়েটার অভিমান জমে জমে পাহাড় সমান হয়ে গিয়েছে। এই অভিমানের পাহাড় কবে ভাঙবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। ইহান তখনও ইচ্ছের দিকে চেয়ে আছে। মেয়েটিকে সে সত্যিই অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। নিজের কাছেই নিজেকে নর্দমার কীট মনে হচ্ছে। আসলেই কি সে ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য? এত পবিত্র ভালোবাসা কেউ বারবার অবহেলা করার শাস্তি কি হতে পারে? তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হোক! সে নিজেই নিজের শাস্তি দাবি করবে।

–‘আমায় শাস্তি দাও ইচ্ছে। তবে ছেড়ে যেও না। একবার সুযোগ দাও আমায়। কথা দিচ্ছি দ্বিতীয়বার অভিযোগ করার মতো সুযোগ আমি দিব না তোমায়।’

ইহানের কথায় নিরব রইল ইচ্ছে। কিছু না বলেই সে বেড থেকে নেমে গেল। তারপর রুম থেকে নিরবে প্রস্তান করলো।

ইহান বাধা দিল না। শুধু করুন মুখের ইচ্ছের যাওয়ার পানে চেয়ে রইল। মেয়েটাকে ছেড়ে সে একদম থাকতে পারবে না। মেয়েটার চঞ্চলতার প্রেমে পড়ে গেছে সে। হুটহাট ভালোবাসার আবদার করে বসা! ভীত চোখে তাকানো, আবার কখনো লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া। তার প্রত্যেকটা রূপই ইহানকে মুগ্ধ করে। কিন্তু নিজের কাজকে বেশি সময় দিতে যেয়ে ইহান এই সুন্দর চঞ্চল মেয়েটার মনে দাগ কেটে দিয়েছে। কাজ বাদে যে সুন্দর একটা পৃথিবী রয়েছে সেটা ইহান খুব দেরিতে বুঝতে পেরেছে। তবে এখনো খুব বেশি দেরি হয়নি তার। এখনো সুযোগ আছে সবটা গুছিয়ে নেওয়ার। পরবর্তীতে হয়তো আর এ সুযোগটা পাবেনা।

________________

বেলা উঠেছে। মোশাররফ মোড়ল বাজার থেকে বড় ইলিশ মাছ এনেছে। বাজারের সব থেকে বড় আর তাজা মাছটি সে এনেছেন জামাইয়ের জন্য। শুধু তাই নয় দুই কেজি খাসির গোশত আনিয়েছেন কাজের ছেলেটিকে পাঠিয়ে। জামাইয়ের আপ্যায়নে কোনো রকম ত্রুটি তিনি রাখতে চাননা। বিয়ের পর এই প্রথম জামাই এল। ইহানকে তার ভীষন পছন্দ। কিন্তু মেয়ের সাথে ইহান কিছুটা অন্যায় করেছে যার ফলে তিনি ইহানকে ছোট খাট হলেও শাস্তি দিবেন। একদম শাস্তি না দিয়ে ছেড়ে দলে চলবেনা। আর তার শাস্তির ধরনটাও হবে অন্যরকম।

কাল রাতেই ইহান মোশাররফ মোড়লকে কল করেছিল। তাকে ইহান তখন সবটা বুঝিয়ে বলে। সে এটাও মেনে নেয় যে সে ইচ্ছের সাথে অন্যায় করেছে তার জন্য তিনি যেমন ইচ্ছা শাস্তি দিতে পারেন। মোশাররফ মোড়লও ইহানকে শাস্তি পাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে নিতে বলেছিলেন। বর্তমানে জামাই-শ্বশুরের মধ্যে এক প্রকার স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। নিরবে সে যুদ্ধ সামনের দিকে এগিয়ে চলছে যার সম্পর্কে আশেপাশের কোন মানুষের ধারণা নেই।

_________________

–‘ইচ্ছের আম্মা আজ খাসির গোশত তোমাকে রান্না করতে হবেনা।’

মোশাররফ মোড়ল বলে উঠেন নাজিয়া খাতুন কে উদ্দেশ্য করে। তার কথায় নাজিরা খাতুন তাকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,

–‘আমি না করলে কে করবে? মেয়েটা এখানে কিছুদিনের জন্য বেড়াতে এসেছে। এখন ও কিছুটা রেস্ট নিক। রান্নাটা বরং আমি করব মেয়েকে করতে বোলো না যেন।’

–‘না না সে ঠিক আছে। ইচ্ছে রেস্ট নিক। আমি ইচ্ছের কথা বলছি না। আসলে আজ রান্নাটা ইহান করবে।’

মোশাররফ মোড়লের কথা শুনে দাঁড়িয়ে থাকা সকলে চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ইহান মাত্রই আপেলের কামড় বসিয়ে ছিল, শ্বশুরের এরূপ কথায় সে হতভম্ব হয়ে যায়।

–‘অবাক হচ্ছো সবাই? আসলে আমি নিজেও অবাক হয়েছিলাম যখন জামাই বাবাজি এসে আমায় কথাটি বলল। আমিও তো অনেক বার না করেছি কিন্তু ও তো মানতে নারাজ। সে নাকি আজ নিজ হাতে খাসির গোশত রান্না করে আমাদের সকলকে খাওয়াবে। জামাইয়ের আবদার বলে কথা! না রেখেও তো উপায় নেই!’

ইহান বলার মত কিছু খুঁজে পেল না। সে কথা বলতেই যেন ভুলে গেছে। অবাক হয়ে শ্বশুরকে দেখতে লাগলো। লোকটা কি সুন্দর করে তাকে ফাঁসিয়ে দিল। জীবনে এমন একটি শ্বশুর থাকলে আর কি লাগে!

নাজিয়া খাতুন চোখ বড় বড় করে ইহানের দিকে চাইল। এই মুহূর্তে ইহান অস্বীকারও করতে পারছে না। তাই সে দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বলল,

–‘হ্যাঁ হ্যাঁ আসলে আমার খুব ইচ্ছা হল। এমনিই ইচ্ছে হলো একটু রাঁধতে আরকি। হেহে।’

মোশাররফ মোড়ল ইহানের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব জয় করা একটি হাসি দিল। এই হাসির অর্থ, “কেমন দিলাম?!”

ইচ্ছে এতক্ষণ যাবত জামাই শ্বশুর কে পর্যবেক্ষণ করেছিল। সে শিওর এরা দুজন মিলে কোন তালগোল পাকাচ্ছে। ইহানের অসহায় মুখ আর তার বাবার মুখে হাসি দেখেই সে বুঝতে পারলো তার সন্দেহই ঠিক। তবে তার ইহানের জন্য খুব মায়া লাগছে। বেচারা একটা ডিম ও ঠিক করে ভাঁজতে পারে না। তার থেকেও বেশি আফসোস হচ্ছে তার। আজ বোধহয় আর তার খাসির গোশত খাওয়া হবে না। দু কেজি গোশত বোধ হয় পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে!

চলবে………

(এত মানুষের মন খারাপের কারণ হতে চাই না। তাই কষ্ট করে হলেও গল্পটি পোস্ট করলাম।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here