#আমার_গল্পে_আমি_খলনায়িকা
পর্ব—০৩
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ
ডায়েরীটা আবারো যথাস্থানে রেখে আমি ঘর থেকে বেরিয়ে আসবো ঠিক তখন দেখতে পাই সামনে প্রত্যয় দাঁড়িয়ে আছে।
—একি দোয়েল তুমি?
(উল্লেখ্য – আমার নাম দোয়েল।প্রত্যয় আগে আমায় দোয়েল ভাবী বলে ডাকলেও এখন সম্পর্কের খাতিরে শুধু দোয়েল বলে সম্বোধন করে।)
—হ্যাঁ,আমি।তুমি এতো তাড়াতাড়ি ফিরে আসলে?
—আমায় দেখে ভয় পেয়ে গেলে বুঝি,এরকম মনে হচ্ছে।
—কি যে বলো না,ভয় পেতে যাবো কেনো?
—আমার ঘরে কি করছো তুমি?
—তোমার একটা ছবি নিতে এসেছিলাম,এই দেখো।
আমি ছবিটা দেখিয়ে প্রত্যয়কে বললাম।তারপর ও আমায় বললো-
—ও আচ্ছা,শুধু ছবি নিতে এসেছিলে নাকি অন্য কিছু?
—-তুমিই বলো,আর কি কাজ তোমার ঘরে আমার।এমনভাবে জেরা করছো যেনো কোনো গুপ্তধন লুকিয়ে রেখেছো ঘরে!
—না,সেরকম কোনো ব্যপার নয়।তুমি ছবিটা নিয়ে যাও,আমি আসছি।
আমি বেরিয়ে আসতেই প্রত্যয় ঘরের ভেতরে ঢুকে আমার মুখের সামনে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।যাই হোক আমি আর ব্যপারটা না টেনে নিজের ঘরে চলে আসলাম।ঘরে দেয়ালের সাথে আমার আর কল্লোলের একজোড়া ফ্রেম টানানো,আমি কল্লোলের ফ্রেমটা সরিয়ে প্রত্যয়েরটা বসিয়ে দিলাম।এবার মনে হচ্ছে খুব মানান সই লাগছে।এবার পাশে শুধু প্রত্যয়কেই মানায়,আর কাউকে নয়।কল্লোলের ছবিটা মেঝেতে আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেলি,যাতে কেউ এই ছবি টানানো নিয়ে প্রশ্ন করলে অযুহাত দাঁড় করাতে পারি।সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও একটা খটকা এখনো মন থেকে যাচ্ছে না আমার।কল্লোলের খুনের পেছনে সত্যিই আমি ব্যতীত কি প্রত্যয়ের কোনো ভূমিকা আছে,আর ঐ ডায়েরীর শেষের অংশেই বা কি ছিলো?কল্লোলের ওপর লাল চিহ্ন দেওয়া ছবিটা দেখার পরে আমি শেষ পৃষ্টা উল্টাতে যেতেই ঘরের বাইরে প্রত্যয়ের পায়ের আওয়াজ শুনতে পাই।তাই ডায়েরীটা শেষ পর্যন্ত দেখা হলো না।আমাকে যেকোনো মূল্যে ডায়েরীর রহস্য উদঘাটন করতে হবে,দেখতে কি আরোও কি লুকিয়ে আছে ডায়েরীতে।তবে এবার যা করার সাবধানে করতে হবে,একটুর জন্য আজ হাতেনাতে ধরা পড়িনি প্রত্যয়ের কাছে।এই মূর্খামী আর করা যাবে না,প্রত্যয় যদি এই জীবন ম র ণ খেলার খেলোয়াড় হয়ে থাকে আমি তার তার কোচ।ওর কাছে হার মানবো না কিছুতেই, জীবনের বাকিদিনগুলো নিজের একজন বাধ্য স্বামী বানিয়ে রাখতে চাই ওকে আমি,ওকে আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দেওয়া চলবে না।
–
–
–
–
–
সন্ধ্যাবেলা।আমি প্রত্যয়ের জন্য চা তৈরী করে নিয়ে এসেছি,কিন্তু প্রত্যয় রুমে নেই।ওকে ডাকতে যাবো ঠিক তখন ওর ফোনটা বেজে উঠলো।জানিনা ফোন রুমে রেখে কোথায় চলে গেলো।ফোনটা হাতে নিতেই দেখতে পাই একটা আননোন নম্বরের ফোনকল।আর কিছু না ভেবে কলটা রিসিভ করি।ঠিক তখন ওপাশ থেকে একটা মেয়ে কন্ঠ ভেসে আসলো।
—প্রত্যয় তুমি এটা কি করলে,তুমি বিয়ে করে নিয়েছো?না এটা হতে পারে না…তুমি আমার সাথে এটা করতে পারো না।
অদ্ভুদ ব্যপার প্রত্যয়ের বিয়ের আগে রিলেশন ছিলো,এটাও তো ও জানায়নি কাউকে।অবশ্য আমাকে দুইএকবার একটা মেয়ের কথা বলেছিলো বটে,বাট রিলেশনশীপের কথা তো স্বীকার করেনি।আমার মনে হলো,যেহেতু প্রত্যয় ঘরে নেই,আমি এই মেয়েটার সাথে কথা বলতেই পারি।দেখা যাক কি হয়।তাছাড়া এর সাথে কথা বলে অনেক কিছু জানা যেতে পারে প্রত্যয়ের ব্যপারে।আমি তাকে উদ্দেশ্য করে বললাম।
—প্রত্যয় রুমে নেই,আপনি না হয় একটু পরে কল করুন।
—প্রত্যয় রুমে নেই,আপনি কে তাহলে?
—আমি ওর ওয়াইফ,
—ওহ আপনিই তাহলে সেই দোয়েল ভাবী, প্রত্যয়ের দোয়েল ভাবী তাই না?
মেয়েটার কন্ঠস্বর শুনে আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি সে ভীষণ রেগে আছে,আর আমাকে কটাক্ষ করে কথাটা বললো।
—আমি বললাম না তোমায়,আমি প্রত্যয়ের ওয়াইফ,কথা শুনতে পাও না নাকি?
—আমি আপনার সাথে কথা বলছি কেনো,প্রত্যয় কোথায় আপনি তার কাছে ফোনটা দিন বলছি।
—প্রত্যয় রুমে নেই,বাই দ্যা ওয়ে তোমার নামটা কি?
—আমার নাম কি সেটা না হয় প্রত্যয়ের থেকে জেনে নিবেন,আপনার সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আমার।আমি জানি আপনি ওর মাথাটা চিবিয়ে খেয়েছেন,লজ্জা করলো না ভাবী হয়ে দেবরকে বিয়ে করতে।আপনার না স্বামী গত হয়েছে কয়েকদিন আগে,
—মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ।তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলতে পারো না।আমি জাস্ট তোমার নামটাই জিজ্ঞেস করেছি।
—প্রত্যয়ের থেকে জেনে নেবেন,ও যে মেয়েটাকে একসময় বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো আমি সেই,যার সাথে দীর্ঘ দুবছর ধরে রিলেশন করে তাকে না জানিয়ে নিজের ভাইয়ের বৌকে বিয়ে করে নিয়েছে আমি সেই…ঠকেছি আমি,আমাকে ঠকানো হয়েছে।
—আমার তোমার স্যাড স্টোরি শুনতে বিন্দুমাত্র আগ্রহী নই বুঝলে,এগুলো শুনতে চাই না আমি।
—আমি তো চাইছিও না আপনার মতো একটা বাজে মহিলার সাথে কথা বলতে,প্রত্যয় কোথায় ওকে ফোনটা দিন বলছি।বিয়ে হতে পারলো না,স্বামীর ফোনটা এর ভেতর হাত করে নিয়েছেন।
—তুমি বড্ড ঔদ্ধত মেয়ে,নেক্সট টাইম যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না আমার স্বামীর সাথে,মাথায় থাকে যেনো।
এই বলে আমি কলটা কেটে দিলাম।ঠিক তখন রুমের ভেতরে প্রত্যয় ঢুকে পড়লো।
—দোয়েল,কেউ কল করেছিলো নাকি?
—তোমার বিয়ের আগেও কারোর সাথে কি রিলেশন ছিলো?
(প্রত্যয়ের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আমি ওকে বেশ গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করি)
—কেনো,কি হয়েছে,কে কল করেছিলো বলো?
—একটা অত্যন্ত বেয়াদব আর ঔদ্ধত মেয়ে,আজেবাজে কথা বলছিলো তোমায় নিয়ে,এমনকি আমাকে পর্যন্ত ইনসাল্ট করেছে।
—তুমি বোধহয় রোদেলার কথা বলছো,
—রোদেলা?ওর সাথে রিলেশন ছিলো তোমার,কই কখনো তো জানাও নি আমাদের…
—হ্যাঁ,ছিলো আমাদের ভেতরে একটা সম্পর্ক।আসলে আমি…..
প্রত্যয় কথাটা শেষ করতে না করতেই ঘরের ভেতরে আমার শ্বাশুড়ী মা ঢুকে পড়লেন।উনি সাধারণ অনুমতি না নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন না,আজ বেশ অন্যরকম লাগছে তাকে দেখে।আমি জিজ্ঞেস করলাম।
—একি,মা আপনি?কি হয়েছে?
—দোয়েল,প্রত্যয় তোমাদের বাবা একটু আগে কল করেছিলো আমায়,
—তো,কি বলেছেন উনি?
—আমাদের শহরের একটা হাসপাতালে একজন রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে,যাকে কিনা ছয় মাস আগে গু লি করে আর ছু রি মেরে খু ন করার চেষ্টা করা হয়েছিলো।সে মারা যায়নি,এখনো বেঁচে আছে।হাসপাতালেই আছে।আমাদের কল্লোল নয় তো বৌমা?দেখো ওর সাথেও কিন্তু এমনই ঘটনা ঘটেছিলো,ছয় মাস আগেই।ওর লাশটাও দাফন করতে পারি নি আমরা,ঝড়ের রাতে যখন এম্বুলেন্সে করে নিয়ে আসা হচ্ছিলো…
—সেই এম্বুলেন্স এক্সিডেন্ট করে রাস্তার পাশে নদীতে গিয়ে পড়ে,পরে এম্বুলেন্স খুঁজে পাওয়া গেলেও ড্রাইভার আর লাশের হদিস মেলেনি।আমাদের সবটা মনে আছে মা,কিন্তু ভাইয়া কিকরে বেঁচে থাকবে মা।এটা অসম্ভব…
(প্রত্যয়)
আমি ভালোই বুঝতে পারছি এই মূহূর্তে প্রত্যয়ের ভেতরে কি চলছে,আমার ভেতরে যা চলছে ঠিক তাই।কারণ দুজনেই তো একই অপরাধে অপরাধী।কিন্তু প্রত্যয়ের মায়ের এই ভাবনা আদৌ কতোটুকু সত্যি?
চলবে………