আমার গল্পে আমি খলনায়িকা পর্ব -১৯

আমার গল্পে আমি খলনায়িকা
পর্ব—১৯
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

আমি তখনো প্রত্যয়ের নিকট আবদ্ধ।তার মানে ও আমাকে প্রত্যুষের থেকে বাঁচালো…কিন্তু কেনো?ওর তো এমনটা করার কথা নয়!অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম প্রত্যয়ের দিকে।

প্রত্যয় আমায় মুখের ওপর থেকে হাতটা সরিয়ে দিয়ে বললো :

—একদম শব্দ করো না!এখানেই দাঁড়িয়ে থাকো।আমি আসছি…

আমার প্রত্যয়ের কথানুসারে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।ও ওপাশটায় প্রত্যুষের কাছে চলে গেলো,একটু পরে আবার ফিরে আসে।

—দাদাভাই চলে গেছে,এবার আসতো পারো।

আমি বাইরে বেরিয়ে আসলাম,প্রত্যয় আমার হাতটা ধরে ঘরের ভেতরে নিয়ে গেলো।তারপরে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো।

—কেনো এসেছো এখানে….,?আর একটু হলেই তো।

—চুপ থাকো একদম,আমি তো আগে থেকেই জানতাম তোমরা দুই ভাই মিলে সবটা করছো।আমার আর রোদেলার সাথে গেম খেলছো তোমরা।কেনো বাঁচালে আমায় বলো,নিজের ভাইয়ের থেকে?

—তো কি করতাম,ও একবার তোমাকে এখানে দেখে ফেললে কি হতো জানো?চেনো ওকে তুমি?

—ওকে না চিনলেও তোমাকে ঠিক চিনে গেছি।তুমি এতোদিন ধরে ভালোমানুষ সেজে ঠকিয়েছো আমাদের।তুমি আসলে মোটেও সেরকম নয় যেমনটা দেখাও।একটা চি টা র তুমি!আর আমি এটাও জানি কাল প্রত্যুষকে তুমিই ইনফর্ম করেছিলে।নয়তো ওর পাহাড় থেকে একারই ফেরার কথা,সাথে লোকজন নিয়ে কেনো ফিরলো?

—আমি কাউকে কিছু বলি নি,বিশ্বাস করো আমায়।

—বিশ্বাস….আর তোমায়….ঘৃ না করি তোমায়,শুধুই ঘৃ না।আর কিছুই নয়।

—তুমি আমার পুরো কথাটা শুনবে,নাকি এভাবে বক বক করতেই থাকবে?

—আর কি শোনার বাকি আছে?

—তোমরা আমায় সবাই ভুল ভাবছো?আমি প্রত্যুষের সাথে কখনোই ছিলাম না,না এখন আছি।

প্রত্যয়ের কথা শুনে আমি বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বললাম:

—এর থেকে বড়ো মি থ্যে আর কিছু হতেই পারে না।আমাকে মিষ্টি কথা দিয়ে ভোলানোর চেষ্টা করো না একদম।

—দেখো,আমি জানি প্রত্যুষ আমার নিজের দাদা।আমি তো ওকে সবে চিনেছি।তার আগে ওর কোনো অস্তিত্ব ছিলো না আমার জীবনে।যারা আমায় ছোটোবেলা থেকে এতোটা যত্ন করে,ভালোবাসা দিয়ে বড়ো করে তুললো।আমি তাদের বি রু দ্ধে যাবো এটা ভাবলে কিকরে?কল্লোল ভাইয়া আমায় কোনোদিন বুঝতে দিয়েছে আমি ওর আপন ভাই নই।তুমি কিকরে ভাবলে ওর খু নি র সঙ্গ দেবো আমি।তাতে সে যতোই আমার নিজের ভাই হোক না কেনো।প্রত্যুষের সাথে যদি আমার র ক্তে র সম্পর্ক থাকে কল্লোল ভাইয়া আর ওর পরিবারের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক রয়েছে।র ক্তে র সম্পর্ক ছি ন্ন হলেও আত্মার সম্পর্ক যা কখনো ছি ন্ন করার নয়।

—আচ্ছা,তাই নাকি।যদি তোমার কথাই সত্যি হয়।প্রত্যুষ কেনো মা র লো না তোমায়?কল্লোলের সাথে সাথে তোমাকেও কেনো শে ষ করে দিলো না।আর তুমি অসুস্থতার ভান করে কেনো ঠকালে আমাদের?কেনো সবটা আগেই খুলে বললে না।

—প্রত্যুষ আমায় শে ষ করেই দিতেই চেয়েছিলো।ও আমাকেও নিজের শ ত্রু ই মনে করতো।কিন্তু আমি চাইনি ওর হাতে আমার মৃ ত্যু হোক।সেই কারণে ওর কাছে আত্মসমর্পণ করি।ওকে এটা বুঝাই আমি ওর সাথে আছি।ওর সাথে থেকেই কল্লোল ভাইয়ার পরিবারের বাকি স র্ব না শ করবো।এরপর ও নতুন করে প্ল্যান সাজালো।আমার থেকে পুরো ডিটেইলস জেনে ও প্রত্যয় মানে আমার মতো সেজে আমাদের পরিবারে প্রবেশ করে।যাতে ওর কাজটা আরোও সহজ হয়।এদিকে আমাকে একটা জায়গায় লুকিয়ে রাখে।তবে ও নিয়মিত দেখা করতে আসতো আমার সাথে।আমার দেখভাল করতো।এরপর একদিন ও আমায় জানায় যে তুমি আর রোদেলা নাকি ওর ব্যপারে সবটা জেনে গেছো।আমাদের প্ল্যান বদলাতে হবে।ও আমায় একটা হোটেল রুমে নিয়ে রাখলো,আর আমায় শিখিয়ে দিলো কি কি করতে হবে।আমি যা করেছি সবটা ওর মনরক্ষা করার জন্য।যাতে ও আমায় সন্দেহ না করে তাই ও যা যা বলেছে,যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে তাই করেছি।বিশ্বাস করো তোমার আর আমার লক্ষ্য আলাদা নয়।তুমি নিজের স্বামীর খু নি কে যতোটা ঘৃনা করো,আমিও ততোটাই করি।

প্রত্যয় কীকরে জানবে ও যাকে নিজের ভাইয়ের খু নি ভাবছে সেটা ওর সম্পূর্ণ ভুল ধারনা।আসল কালপ্রিট তো আমি।এই গল্পের আসল খলনায়িকা আর কেউ নয়,আমি নিজে।ভালোই হয়েছে প্রত্যয় আর রোদেলার দৃষ্টিতে একমাত্র প্রত্যুষই দোষী।ওরা জীবনে কোনোদিন জানতে পারবে না কল্লোলকে আর কেউ নয়,আমি খু ন করেছি।আর সেটা জানতেও দেবো না আমি।যাই হোক নিজের মনের শেষ সন্দেহটা দূর করার জন্য প্রত্যয়কে প্রশ্ন করলাম।

—সব বুঝলাম আমি,কিন্তু গতকাল কেনো প্রত্যুষকে বাঁচালে তুমি,এর কোনো উত্তর আছে তোমার কাছে?

—আমি প্রত্যুষকে বাঁচাই নি।এমনটাও তো হতে পারে ওর সাথে ঐ লোকগুলোর থাকা সত্যিই পরিকল্পনার বাইরে ছিলো।প্রত্যুষ নিজেও জানতো না কি ঘটতে চলেছে ওর সাথে!

—আর যদি লোকগুলো ওর সাথে না থাকতো তবে কি করতে তুমি?

—আমি তো ঠিক করেই নিয়েছিলাম কালকেই প্রত্যুষকে শে ষ করে দেবো।কিন্তু ওর ভাগ্য ওর সাথে ছিলো,তাই বেঁচে গিয়েছে।

সবটা শুনে আমি বুঝতে পারি এই সমস্ত ঘটনায় প্রত্যয় সত্যিই নির্দোষ।ও যা করেছে নিজেকে বাঁচানোর জন্য।তবে ও কি এবার আমায় মেনে নেবে?প্রত্যয় রোদেলাকে ভালোবাসে আমি যতোদূর জানি,ওদের ভেতরে একটা সম্পর্ক ছিলো।আমি জানি না,সেই সম্পর্ক কতোদূর অবধি গড়িয়েছিলো।প্রত্যয়ের মনে কি চলছে আমার সেই হদিস আগে খুঁজে বের করতে হবে।আবারো এতো কাছে পেয়ে ওকে হাতছাড়া করতে পারবো না আমি,তাতে যদি রোদেলার বি রু দ্ধে যেতে হয় তারপরেও।জানি রোদেলা আমার জন্য যা যা করেছে আমি ওর প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।কিন্তু প্রত্যয়েকে পাবার পথে যে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে তার শুধু ক্ষ তি ই চাইবো আমি,আর কিছু নয়।

আমি প্রত্যয়ের থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাবো ঠিক তখন ও আমায় পেছন থেকে ডাক দিলো:

—একটা কথা জিজ্ঞেস করবো তোমায়,যদি কিছু মনে না করো?

—কি কথা বলো?

—প্রত্যুষের সাথে তোমার……

—প্রত্যুষের সাথে কি আমার,আমতা আমতা করছো কেনো,বলো!

—তোমাদের দুজনের ভেতরে স্বামী স্ত্রীর স ম্প র্ক হয়েছে তাই না?

আমি অবাক হয়ে গেলাম প্রত্যয়ের কথা শুনে।ও এরকম একটা অদ্ভুত প্রশ্ন কেনো করলো বুঝতে পারছি না।আমি ওকে জিজ্ঞেস করি :

—কি ব্যপার হঠাৎ এই প্রশ্ন,আমি তো বুঝতে পারছি না কিছুই।

—কি বুঝতে পারছো না?আমি এটাই জিজ্ঞেস করেছি দাদাভাইয়ের সাথে তোমার…

—কোন উত্তরটা শুনলে বেশী খুশি হবে,যদি কিছু হয়ে থাকে,নাকি না হয়ে থাকে?

—যেটা সত্যি তাই বলবে…

আমি প্রত্যয়ের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইলাম।ধীরে ধীরে আমার চোখজোড়া অশ্রুর ভারে ভারী হয়ে যেতে লাগলো।প্রত্যয় আমার যন্ত্রনটা হয়তো উপলব্ধি করতে পেরেছে।ও কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে গেলো।তারপর ওর হাত দিয়ে আমার চোখের জল মুছিয়ে দিতে লাগলো।কেনো জানি না ভীষণ কান্না চেপেছে আমার।মনের ভেতরে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।জীবনের হিসেব নিকেশের পাতায় কোথাও একটা খামতি রয়ে গেছে,জানি না কিকরে সেই চিরচেনা ভারসাম্য ফিরে আসবে।আজ প্রত্যয়কে এতো কাছে পেয়েও আগের মতো মনের ভেতরে অনুভূতির দোলাচল সৃষ্টি হচ্ছে না।বড্ড অ প রা ধী মনে হচ্ছে নিজেকে।অতঃপর নিজের মাথাটা প্রত্যয়ের বুকের পাশে নিয়ে গেলাম,একটু আশ্রয় খোঁজার জন্য।

ঠিক তখন রুমের দরজার সামনে রোদেলা এসে উপস্থিত হয়।লক্ষ্য করলাম ও আমাদের দুজনকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে কিছুটা ভরকে গেলো।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here