আমার গল্পে আমি খলনায়িকা পর্ব -১৭+১৮

আমার গল্পে আমি খলনায়িকা
পর্ব—১৭
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

ঘরে ঢুকেই প্রত্যুষ আর প্রত্যয় একে অপরকে আ লি ঙ্গ ন করলো।দুজনের মুখেই হাসি।প্রত্যয় প্রত্যুষকে উদ্দেশ্য করে বললো-

—আমার না ট ক টা কেমন হয়েছে দাদাভাই, দেখো ওদের দুজনকে কতো কায়দা করে বো কা বানালাম আমি।

প্রত‌য়ের কথা শুনে আমি পুরোপুরি বা ক রু দ্ধ।তারপর এতোদিন যা ঘটেছে এই দুই ভাইয়ের পরিকল্পনার অংশ ছিলো।আর আমরা কি ভেবে এসেছি,প্রত্যয় আর প্রত্যুষ দুজনেই সমান
কা ল প্রি ট!

—আচ্ছা ওরা দুজন কিছু বুঝতে পারেনি তো,?

—না কেউ কিচ্ছু বুঝতে পারেনি দাদা!

—এটাই তো চেয়েছিলাম আমি।সেই জন্যই বুদ্ধি করে রোদেলার ঘরে হোটেলের ঠিকানা আর ওষুধের প্রে স ক্রি প শ ন ফেলে রেখে এসেছিলাম।যাতে ওরা দুজন আমাদের ফাঁ দে পা দেয়,আর তাই হলো।

—একদম।ওরা ঠিক আমায় খুঁজে বের করলো।যদিও হোটেল ম্যানেজারকে আগেই সবটা শিখিয়ে রেখেছিলে তুমি,যেনো ওদের সামনে খানিকটা না ট ক করে আমায় ওদের হাতে ছেড়ে দেয়।তোমার বুদ্ধির সত্যি জবাব নেই।

তার মানে রোদেলার ওষুধের প্রেসক্রিপশন পাওয়া,আমাদের হোটেলে পৌঁছানো,প্রত্যয়কে খুঁজে পাওয়া এগুলো সব ওদেরই সাজানো প্ল্যান ছিলো।এতোদিন কতোটাই না ভুল পথে পরিচালিত করা হয়েছে আমাদের।ভাবতেই অবাক লাগে।

—এবার কিন্তু আমাদের আসল কাজটা করতে হবে,এমনিতেই অনেকটা দেরী করে ফেলেছি আমরা।

—হ্যাঁ,তুমি যেভাবে নির্দেশনা দেবা আমি তাই করবো।

—আমাদের এই কথাটা এক মূহুর্তের জন্যেও ভুললে চলবে না আমাদের দুই ভাইকে আলাদা করার পেছনে যে মানুষগুলোর অবদান ছিলো,তাদেরকে একে একে শাস্তি দেবো আমরা।তারা শুধু আমাদের দুজনকে আলাদা করেনি,তোকেও বাবা মায়ের থেকে আলাদা করেছে।একটা মি থ্যে র চাদরে ঢেকে রেখেছিলো তোকে এতোদিন যাবত।যার কোনো ক্ষমা হয় না,

—কিন্তু আমরা তো ইতিমধ্যে একজনকে পথ থেকে স রি য়ে দিয়েছি,

—কার কথা বলছিস তুই?

—কল্লোল,কল্লোল ভাইয়া?

—তোকে একটা সত্যি কথা বলি আজ প্রত্যয়,যা এতোদিন ধরেও বলে ওঠা হয়নি।

—কি সত্যি কথা?

—কল্লোলকে আমি খু ন করিনি,অন্য কেউ একজন খু ন করেছে কল্লোলকে।

—কি বলছো কি তুমি,তুমি খু ন না করলে,কে করেছে?তাহলে কি ঐ ছু রি র দাগগুলো….

—আমি তো শুধু গু লি করেছিলাম।তুই বল কেউ একসাথে কাউকে গু লি আর ছু ড়ি এই দুটো জিনিস দিয়ে আঘাত করে?

—তাহলে কে করলো কাজটা….?

—সে কল্লোলের খুব কাছের একজন মানুষ ছিলো,জানতে চাস কে সে….?

প্রত্যুষের মুখে কথাটা শোনামাত্র ভয়ে বুক শুকিয়ে যেতে লাগলো আমার।স র্ব না শ!ও এতোকিছু কীকরে জানলো?কল্লোলের কাছের মানুষ বলতে ও নিশ্চয়ই আমাকে বোঝাতে চাইছে।একবার আমার নামটা বলে ফেললে রোদেলার সামনে ধ রা পড়ে যাবো আমি।না,এখান থেকে যেকরে হোক এক্ষুণি কে টে পড়তে হবে।আমি নিজেকে কিছুতেই অন্যের সামনে ভি লে ন হতে দেখতে পারবো না।তাছাড়া রোদেলা আমার সত্যিটা জানতে পারলে নিশ্চয়ই ছেড়ে দেবে না আমায়।তখন ওকে সাথে নিয়ে এই দুজনকে জব্দ করার কাজটা মুশকিল হয়ে যাবে।সবদিকটা চিন্তা করে আমি রোদেলাকে নিয়ে এই জায়গা থেকে সরে পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।

—কি হলো দাদাভাই,চুপ করে আছো কেনো,কল্লোকে কে খু ন করেছে বলো?

আমি হাতের কাছে রাখা একটা কিছু একটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলাম,অমনি ওদের দুজনের কথায় ছেদ পড়লো।সেই সুযোগে আমি রোদেলাকে নিয়ে সরে পড়লাম।ওরা দুজন কেউ কিচ্ছু বুঝতে পারেনি।গাড়ি করে ফিরে আসার সময়ে রোদেলা আমায় প্রশ্ন করে।

—দোয়েল আপু,প্রত্যুষ ওটা কি বললো?

—কি বললো?

—কল্লোলকে ও খু ন করেনি,অন্য কেউ করেছে?

—তুমি বিশ্বাস করো এখনো ওর কথায়?

—যদি আমাদের সাথে বলতো তবে হয়তো বিশ্বাস করতাম না,কিন্তু ও ওর ভাইয়ের সাথে কেনো মিথ্যে বলবে বলো,

—কি জানি,আমি ওর কোনো কথাই বিশ্বাস করি না।কল্লোলকে ও ছাড়া আর কে খু ন করবে।

—আমার কাছে কিন্তু ব্যপারটা রহস্যজনক মনে হচ্ছে।

–আমার কাছে মনে হচ্ছে না,কারণ আমি জানি এটা প্রত্যুষের একটা নতুন চাল।ও নিজের ভাইকে ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা করছে।

—কি জানি,হতেও পারে।আবার নাও হতে পারে।

এই মেয়েটা বড্ড বেশী কথা বলে।সবকিছু ছেড়ে দিয়ে এখন কল্লোলের বিষয় নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছে।আর ও যখন কিছু সন্দেহ করে ফেলেছে,তার কুলকিনারা বের করে ছাড়বে।আমি খুব ভালো করে চিনি ওকে।





এরপর আমরা যে যার বাসায় চলে আসলাম।আমি আর রোদেলা দুজনে মিলে প্রত‌্যয়কে আমাদের সামনে এক্সপোস করার একটা প্ল্যান করার।সেই অনুসারে দুজন নিজেদের কাজ শুরু করি।পরেরদিন প্রত্যয় বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেই আমি আর রোদেলা প্রত্যয়ের উদ্দেশ্যে
রওয়না দিলাম।যদিও এসমস্ত প্ল্যান রোদেলার মাথা থেকেই আসে।ওর ব্যবহার দেখে মনে হচ্ছে আমার থেকেও প্রত্যয়ের ওপর ওর অনেক বেশী ক্ষো ভ।আমি রোদেলাকে জিজ্ঞেস করি।

—রোদেলা,আজ কি করতে চলেছি আমরা?

—শুধু দেখতে থাকুন।আজ প্রত্যয়ের সাথে কি করি,

—কি করবে তুমি ওর সাথে?

—বললাম তো সেটা দেখতেই পাবেন।ওকে এমন বাজেভাবে ফাঁ সা বো আজ,আমাদের সাথে মি থ্যে না ট ক করার মজা হাড়ে হাড়ে টের পাবে।

—তোমার প্ল্যান কি ওয়ার্ক করবে আদৌ,এখন পর্যন্ত কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারিনি।আমরা নিজেদের যতোবারই চালাক প্রমান করার চেষ্টা করেছি ওরা দুজন আমাদের উল্টো বোকা বানিয়ে দিয়েছে।আমরা জাস্ট কিছু না ওদের দুজনের সামনে।

আমার কথা শুনে রোদেলা ওর ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে একটা পি স্ত ল বের করে।আমি বেশ অবাক হলাম ওর এই কর্মকান্ড দেখে।

—একি,তুমি এটা কোথায় পেলে?

—কোথায় পেয়েছি জেনে কি লাভ আপনার,তবে আজ এটা দিয়েই প্রত্যয়কে জ ব্দ করবো।

—তুমি না বললে ওকে ফাঁ সা বে?

—হ্যাঁ,ফাঁ সা বো ই তো।দেখতে থাকুন কি করি।

আমি সত্যি বুঝতে পারছি রোদেলা পি স্ত ল টা দিয়ে কি করতে চাচ্ছে,আর ও এটা পেলোই বা কোথায়।যাই হোক কিছুক্ষণের ভেতরে আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে যাই।রুমের ভেতরে ঢুকতেই দেখি প্রত্যয় ওর বিছানায় বসে আছে।হঠাৎ আমাদের দেখেই আঁতকে উঠলো।জানি এখন ড্রা মা শুরু করবে আমাদের সাথে।ও কিকরে জানবে ওর আসল রুপটা জেনে গেছি আমরা।আমাদের দেখে প্রত্যয় কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো।

—তোমরা,তোমরা এসেছো??

—হ্যাঁ,প্রত্যয় আমরাই এসেছি।কেনো তুমি কি ভেবেছিলে?
(রোদেলা প্রত্যয়কে বললো।প্রত্যয় চুপ করে আছে।)

—তুমি কি ভেবেছিলো প্রত্যুষ এসেছে?

—আমার সামনে তোমরা ওর নাম নেবে না,বললাম না আমরা।আমি স হ্য করতে পারি না ওকে।

—জানি তো,তুমি প্রত্যুষকে ভীষণ ভ য় পাও।ওকে সহ্য করতে পারো না।ওর নাম শুনলেই ভয়ে বুক কেঁ পে ওঠে তোমার,তাই না?

—হ্যাঁ,একদম।তোমরা প্লিজ ওর বিষয়ে কোনো আলোচনা করবে না আমার সাথে।

এর না ট ক দেখে ইচ্ছে করছে একটা চ ড় বসিয়ে দেই গালে।কোনো মানুষ এতোটা মি থ্যে অভিনয় করতে পারে অন্যের সাথে।রোদেলা আবারো প্রত্যয়কে উদ্দেশ্য করে বললো।

—তোমাকে আর শুনতে হবে না ওর নাম,আর দেখতেও হবে না ওকে কখনো?সেই ব্যবস্থাই করতে এসেছি আজ আমরা।

—কি করতে চাইছো তোমরা?

রোদেলা আবারো সাথে করে নিয়ে আসা পি স্ত ল টা বের করলো।তারপর সেটা প্রত্যয়ের হাতে ধরিয়ে দেয়।

—প্রত্যুষ তোমার সাথে অনেক অ ন্যা য় করেছে জানি।আজ তোমার বদলা নেওয়ার দিন।নাও এটা নিয়ে নিজের ব দ লা নাও।আমরা দুজন আছি তোমামার সাথে,একদম ভয় পেয়ো না।আর লুকোচুরি নয়,আজ তোমায় এই কাজটা করতেই হবে।

এই বলে রোদেলা আমার দিকে আড়চোখে চেয়ে একটা হাসি দিলো,আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না ওর আসলে প্ল্যানটা কি…..??

চলবে….. গল্পে আমি খলনায়িকা
পর্ব—১৮
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

গতপর্বে প্রত্যয়ের আসল রুপটা দোয়েল আর রোদেলার সামনে আসে।এরপর দুজনে মিলে পরিকল্পনা করে কিভাবে প্রত্যয়কে এক্সপোস করা যায়।সেই উদ্দেশ্য রোদেলা প্রত্যুষকে ফাঁসাতে ওর হাতে একটা পি স্ত ল ধরিয়ে দেয়,আর প্রত্যুষকে শেষ করে দেবার জন্য বলে।তারপর :

—-এটা দিয়ে আমি কি করবো,আমি কাউকে মা র তে পারবো না।
প্রত্যয় কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলো।

—কেনো মারতে পারবে না,যে তোমার সাথে এতোবড়ো অ ন্যা য় করলো তুমি তাকে শা স্তি দেবে না?(রোদেলা)

—আমার খুব ভয় করছে,বিশ্বাস করো।আমি এমন কাজ কখনো করিনি।কেনো আমাকে দিয়ে এসব করাতে চাইছো তোমরা?

—দেখো,প্রত্যুষ শুধু তোমার সাথে অ ন্যা য় করেনি।আমাদের সবার সাথে অ ন্যা য় করেছে।তোমাকে এসবের শো ধ তুলতেই হবে আবার।নাকি তুমি নিজেই চাইছো না?প্রত্যুষের জন্য কিসের এতো দরদ তোমার?

—আমার ওর জন্য কোনো দয়া মায়া নেই,কিন্তু আমি খু ন খারাবি করতে পারবো না।

—ঠিক আছে,বুঝতে পেরেছি তোমার ভীষণ ভ য় করছে।আমরা দুজনেই আছি তোমার পাশে।দরকার হলে আমরা দুজন সাহায্য করবো তোমায়,আর আমাদের ব্যপারে কেউ কিচ্ছু জানতেও পারবে না।

রোদেলা এমনভাবে প্রত্যয়কে বোঝালো ও আর না করতে পারলো না।যদিও আমরা ভালো করেই জানি প্রত্যয় কোনোরকম ভয় পাচ্ছে না।ও আসলে নিজের ভাইকে মা র তে ই চাচ্ছে না।আবার আমাদের সামনে প্রকাশ করতেও পারছে না।পিস্তলটা হাতে নিয়ে প্রত্যয় বললো –

—ঠিক আছে,বলো কি করতে হবে আমায়?

—তোমাকে আমাদের সাথে একটা জায়গায় যেতে হবে।আমরাও নিয়ে যাবো তোমায়।সেখানে প্রত্যুষ থাকবে।তোমাকে যেটা করতে হবে সেটা হলো প্রত্যুষকে পেছন থেকে এই পি স্ত ল টা দিয়ে অ্যাটাক করবে তুমি।জাস্ট একটা গু লি ওর শরীরে বিধুক আমাদের সকল কাজ শেষ।সেই সাথে তুমিও নিজের প্রতিশোধ গ্রহনের সুযোগ পাবে।

—কিন্তু ও যদি কোনোভাবে দেখে ফেলে আমাদের,আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে যায়?

—সেরকম কিছুই ঘটবে না।বলেছি না,আমরা সবটা সামলে নেবো।





এরপর আমি আর রোদেলা প্রত্যয়কে নিয়ে একটা জায়গায় রওয়না দিলাম।আজ প্রত্যুষ অফিসের কোনো একটা অ্যাসাইনমেন্টের জন্য পাহাড়ি এলাকায় গিয়েছে।সেখান থেকে ফেরার জন্য একটা ছোটো জঙ্গলের রাস্তা পার হতে হয়।আমরা প্রত্যুষ ফেরার আগে প্রত্যয়কে নিয়ে জঙ্গলের রাস্তা বরাবর পৌঁছে গেলাম।তারপর অপেক্ষা করতে থাকি প্রত্যুষ ফিরে আসার।প্রত্যয় শুধু একের পর এক প্রশ্ন করে চলেছে আমাদের।ওর মনের ভেতরে কি দোটানা চলছে সেটা আমরা ছাড়া আর কে ভালো জানবে।একদিকে নিজের দাদাভাইয়ের প্রান স ঙ্ক ট অন্যদিকে আমাদের সামনে ইনোসেন্ট সেজে থাকা।ওর কৃতকর্মের শাস্তি এমনটাই হওয়া উচিত।আমি আর রোদেলা ওর এই দূরাবস্থা বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছি।প্রত্যয় উদ্বিগ্নস্বরে আমাদের প্রশ্ন করে।

—এখানে এসে কি করতে চলেছি আমরা?কেউ তো কিছু বলো আমায়।

—এই শুনশান রাস্তা দিয়ে একটু পরে একটা গাড়ি আসবে।ঐ গাড়িতেই প্রত্যয় থাকবে।আর তোমাকে সেই সুযোগটাই কাজে লাগাতে হবে।

—সেটা কিকরে সম্ভব,ও বাইরে না বেরিয়ে আসলে কিকরে হবে…?

—ওকে বাইরে বের করানোর দ্বায়িত্ব আমার।তোমাকে সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।তুমি শুধু তোমার কাজটা করবে।আমরা যেভাবে বলবো তাই করবে।
আমি প্রত্যয়কে বললাম।ও প্রত্যুত্তরে মাথা নাড়ালো।




একটু পরে আমাদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে একটা গাড়ি জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে ঠুকলো।গাড়িটা আরেকটু কাছে আসতেই বুঝে গেলাম প্রত্যুষেরই গাড়ি।তার মানে ও আছে ভেতরে।যদিও গাড়িটা বেশ ধীরগতিতে চলছে।আমি আর সময় নষ্ট না করে ওর নম্বরে কল দিলাম।ও একটু পরে ফোন রিসিভ করে।

—হ্যালো প্রত্যয়,তুমি কোথায়?

—-এইতো আমি অফিসের কাজ শেষ করে ফিরছি।

—এখন কোথায় আছো বলো?

—লোকেশনটা তো ঠিক জানি না,তবে এটা একটা জঙ্গলের রাস্তা।

—তার মানে আমি যা ভেবেছি ঠিক তাই!

—কি হয়েছে বলবে?

—আমি তোমার গাড়িটা দেখতে পেয়েছি।রাস্তা ওপরেই আছি আমরা‌।

—সেকি,তোমরা এখন এই জঙ্গলের রাস্তায় কি করছো,আর আমরা মানে।আর কে আছে তোমার সাথে?

—আরে আমরা বলতে আমি আমার একটা বন্ধুর সাথেই এসেছিলাম।তোমায় বলছি সবটা।আগে গাড়ি থেকে নামো।আমরা পৌঁচ্ছাছি তোমার কাছে।

—কিন্তু আমি যে তোমাদের কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না।আচ্ছা প্রাঙ্ক করছো না তো আমার সাথে?

—সেরকম কোনো ব্যপারই নয়,তুমি কিন্তু দূরে চলে যাচ্ছো গাড়ি থামাও বলছি।বাইরে বেরিয়ে দেখো আমরা রাস্তার ওপরেই আছি‌।

—ঠিক আছে।নামছি।

আমরা দূর থেকে লক্ষ্য করলাম প্রত্যুষের গাড়ির স্পিড কমে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।তারপর গাড়িটা রাস্তার পাশে গিয়ে থামলো।রোদেলা প্রত্যয়ের হাতে পি স্ত ল টা আবারো ধরিয়ে দিয়ে বললো।

–এইতো,এক্ষুণি বের হবে গাড়ি থেকে।আমাদের হাতে কিন্তু একদম সময় নেই।প্রত্যুষ গাড়ি থেকে বের হওয়া মাত্রই কাজটা করবে তুমি।

প্রত্যুষ এরপর গাড়ি থেকে নেমে আসলো।রোদেলা একপ্রকার প্রত্যয়কে দিয়ে জোর করে পি স্ত লে র নিশানা তাক করিয়েছে।কিন্তু একটু পরে আমাদের সবার সমস্ত পরিকল্পনায় জল ঢেলে আরো দু তিনজন লোক গাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসলো।অদ্ভুত ব্যপার,প্রত্যুষ তো একাই গিয়েছিলো,আর একাই ফেরার কথা।তাহলে এই লোকগুলো জুটলো কোথা থেকে?প্রত্যয়ের জন্য ব্যপারটা ভীষণ সুবিধার হয়ে দাঁড়ালো,ও একটা মোক্ষম অযুহাত পেয়ে গেলো।জানি এটারই ব্যবহার করবে এখন,আর তাই হলো।আমাদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে প্রত্যয় বলে উঠলো।

—তোমরা দুজন এটা করতে পারলে আমার সাথে,বলেছিলে কেউ নাকি থাকবে না,কেউ কিছু দেখবে না।এখন এতো মানুষের সামনে আমি কাজটা কিকরে করবো?আর একটু হলেই দেখে ফেলবে সবাই আমাদের।

রোদেলা বেশ বিরক্তির স্বরে আমাকে বলতে লাগলো-

—দোয়েল আপু,আপনি বলেছিলেন প্রত্যুষ একাই ফিরবে।তাহলে এরা কারা ওর সাথে।সমস্ত প্ল্যানে জল ঠেলে দিলো।শিট!

—আমি জানি না,এসব কিকরে হলো।সত্যি জানি না।

আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রত্যুষ এদিক ওদিক আমাদের খুঁজে চলছে।কোথাও খুঁজে না পেয়ে ও কল করলো আমার নম্বরে।

—এগুলো কোন ধরনের ফান,তোমরা নাকি রাস্তার উপরেই আছো,তো কোথায় সেই রাস্তায়।যেটার ওপরে আছো তোমরা,আমার মাথার ওপরে..?

—থাকলেও থাকতে পারে,উপরে তাকিয়েই দেখো না।

—তার মানে এটাও প্রাঙ্ক ছিলো।আর কোনোদিন তোমার কোনো কথা সিরিয়াসলি নেবো না আমি।কান ধরলাম।

—আচ্ছা ঠিক আছে।সাবধানে বাড়িতে আসো।ভাবলাম তোমার মুড অফ কিনা,তাই একটু অন্যরকম কিছু করে তোমায়….

—মেজাজটাই খারাপ করে দিয়েছো আমার,ফোন রাখো।

এই বলে প্রত্যুষ ফোন কেটে দিলো।প্রত্যয়কে দেখে বেশ রিলাক্স রাখছে এবার।ও যেনো খুব খুশিই হয়েছে।অবশ্য সেটাই হবার কথা।কিন্তু এই লোকগুলো প্রত্যুষের সাথে কিকরে এলো?কোথায় এমনটা নয় তো কেউ আগে থেকেই প্রত্যুষকে ইনফর্ম করে দিয়েছিলো,আজ আর সাথে কি ঘটতে চলেছে?কিন্তু সেটা অন্য কারোর পক্ষে কীকরে জানা সম্ভব।প্ল্যানটা আমার আর রোদেলার ছিলো, প্রত্যয় ছাড়া কোনো চতুর্থ ব্যক্তির জানবারই কথা নয়।তবে কি প্রত্যয়……?সেটাও বা কীকরে হয় ও তো সারা সময় জুড়ে আমাদের সাথেই ছিলো।ওর কাছে ফোন বা অন্য কিছু ছিলো না যার মাধ্যমে প্রত্যুষের কাছে খবরটা পৌঁছাতে পারে।যাই হোক,প্রত্যুষ আমাদের না পেয়ে লোকগুলোদের নিয়ে আবারো গাড়ি চেপে চলে গেলো।আমরাও ফিরে এলাম।





পরেরদিন আমি প্রত্যয়ের সাথে দেখা করার জন্য ওর বাসায় গেলাম।জানিনা,এতোক্ষণে কি কি ঘটেছে।গতকালকের ঘটনা সম্পর্কে নিজের ভাইকে কিছুই জানায়নি,এমনটা তো হতে পারে না।যদি তাই হয় তাহলে আরোও মুশকিল হয়ে যাবে।প্রত্যয়ের বাসায় ঢুকতেই দেখতে পাই ওর রুমে কেউ নেই।আমার সন্দেহ আরোও ঘনীভূত হতে লাগলো।ভাবলাম রোদেলাকে ফোন করে ওর সাথে কথা বলবো,সেই উদ্দেশ্য ফোনটা হাতে নিতেই নিচ থেকে কারোর পায়ের আওয়াজ আমার কানে ভেসে আসে।অমনি আমি আড়ালে চলে গেলাম।তারপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকলাম বাইরে কি ঘটছে।একটু পরে প্রত্যয় আর প্রত্যুষ এসে ঘরের ভেতরে ঢুকলো।ঠিক যা সন্দেহ করেছিলাম তাই হয়েছে,এই প্রত্যয়কে একলা ছেড়ে দেওয়া একদম ঠিক হয়নি।প্রত্যুষ নিশ্চিত এতোক্ষণে জেনে গিয়েছে সবটা।ও রুমের ভেতরে পা বাড়াতেই হঠাৎ কিছু একটা ভেবে থেমে গেলো।

—কি হলো দাদাভাই,চলো ভেতরে চলো!

—দাঁড়া,এক মিনিট।আমার কিছু একটা গন্ডগোল লাগছে।

—কেনো,কি হয়েছে?

—কেউ বোধহয় এসেছিলো এখানে,আমি নিশ্চিত কেউ এসেছিলো?

—তুমি বুঝলে কিকরে….?

—এই দেখ,একটু ভালো কর দেখ।কারোর পায়ের জুতোর ছাপ ফ্লোরে দেখা যাচ্ছে।রাতে হালকা বৃষ্টি হয়েছিলো না,এটা সেই কাদামাটির ই দাগ!

—কিন্তু,কে এলো বলো তো?

—আমি বুঝতে পেরেছি কে এসেছে,খোঁজ ভালো করে।আমিও খুঁজছি।আজ ওর সব খেলা শে ষ করবো আমি।

প্রত্যুষের কথা শুনে আমি ভীষণ ভ য় পেয়ে গেলাম।এই মুহুর্তে দুজনের নিকট নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে।প্রত্যয় আর প্রত্যুষ হন্যে হয়ে আমায় খুঁজতে লাগলো।প্রত্যুষ ঐদিকটায় চলে যায়।এরপরেই খুঁজতে খুঁজতে আমার সামনে প্রত্যয় চলে আসে।ওকে দেখে আমার ভয়ের মাত্রা আরোও বেড়ে গেলো।আমি সরে যাওয়ার চেষ্টা করতেই পাশে রাখা ফুলদানিটা মেঝেতে পড়ে গেলো।কিছু বলতে যাবো অমনি প্রত্যয় আমার মুখটা চেপে ধরলো।প্রত্যয় ওপাশ থেকে বলে উঠলো।

—কিসের শব্দ হলো রে,কাউকে কি পেয়েছিস?

—না,দাদাভাই….কেউ নেই।

—শব্দটা হলো কিসের?

—খুঁজতে গিয়ে অসাবধানবশত ফুলদানিটা পড়ে গেছে!

–ভালো করে খোঁজ,পেলেই আমায় জানাবি…

—ঠিক আছে।

আমি তখনো প্রত্যয়ের নিকট আবদ্ধ।তার মানে ও আমাকে প্রত্যুষের থেকে বাঁচালো…কিন্তু কেনো?ওর তো এমনটা করার কথা নয়!অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম প্রত্যয়ের দিকে…..

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here