আমার মুগ্ধতায় তুমি পর্ব -১১

#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ১১
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*অর্শি দেখতে পেলো আয়াদের রুমের মধ্যে একটা মেয়ে। অর্শি এই দৃশ্যটা দেখে যেনো আকাশ থেকে পড়ল। “আয়াদ রাতের আঁধারে নিজের ঘরে মেয়ে নিয়ে আসে”! কথাটা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগলো তার। কতটা নিচু হতে পারলে মানুষ রাতের গভীরে কোনো মেয়েকে একান্তে নিজের রুমে নিতে পারে? এই কথাটা বোঝার মতো বয়স অর্শির ঠিক হয়েছে। অর্শি ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে মেয়েটি আর আয়াদের দিকে। অর্শি ভাবছে “এই দৃশ্য যদি মা বাবা দেখতো তবে কি হতো? হয়তো বুক ফেটে মরেই যেতো। এতো ভালোবাসার সন্তান এতোটা নোংরা হয়ে গেছে সেটা যে কোনো মা বাবার জন্য ভিশন লজ্জাজনক”।

অর্শি আয়াদের এই নোংরামি সহ্য করতে পারলো না। জানালার পাশ থেকে সরে যায় সে। হাত পা কাঁপছে অর্শির। এসব কি দেখলো সে? আয়াদের সাথে তার সম্পর্ক ঝগড়ার মধ্যে সিমাবদ্ধ থাকলেও আয়াদকে কখনও সে নিচু চরিত্রের মানুষ মনে করেনি। কিন্তু আজ এই সব দেখার পর অর্শির চোখে আয়াদ একটা নষ্ট ছেলে ছাড়া অন্য কিছু নয়। অর্শি দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে একটু সামলে নেয়। নিজের রুমে ফিরে এসে অর্শি দরজা বন্ধ করে দিলো। বার বার অর্শির মনে পরছে আয়াদের সাথে ঐ মেয়েটির দৃশ্যটি। ভাবতেই লজ্জা করছে এতো ভদ্র ঘরের একটা ছেলে এতোটা নিচু মানসিকতার পোষন করে।

— মিস্টার আয়াদ আপনার ফাইল রেডি? আপনাকে কন্ট্রাক করা যাচ্ছে না বলে আমি নিজে এখানে চোরের মতো চলে এসেছি।

মিস ডায়না নিজের মুখের উপর থেকে চাদরটা সরিয়ে দিতেই আয়াদ চমকে উঠলো। এতো রাতে চোরের মতো আয়াদের রুমে আসার কি প্রয়োজন ছিলো মিস ডায়নার? আয়াদের মাথায় আসছে না কিছু। আয়াদ ডায়নার উদ্দেশ্যে কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে বলতে লাগলো

— এতো‌ রাতে আপনি আমার রুমে কেনো? কেউ কি দেখেছে আপনাকে? প্লিজ! আপনি এখন এখান থেকে চলে যান।‌ কাল‌ আমি ফাইল নিয়ে আপনার সাথে মিট করবো। প্লিজ! কেউ যদি আপনাকে এতো রাতে আমার রুমে দেখতে পায় আমার মান সম্মান শেষ হয়ে যাবে।

ডায়না আয়াদের ভয়ে আতকে ওঠা চোখ জোড়া আর মুখে চলে আসা স্পষ্ট চিন্তার ছাপ দেখতে পেয়ে একটু হেসে উঠলো। ডায়নার হাসি দেখে আয়াদের চোখ জোড়া কৌতুহলী হয়ে উঠলো। “ডায়না হাসছে কেনো”? প্রশ্নটা মনের মধ্যে নাড়া দিচ্ছে আয়াদের। আয়াদ ডায়নার উদ্দেশ্যে কৌতুহলী কন্ঠে বলে উঠলো

— আপনি পাগলের মতো হাসছেন কেনো? কি হয়েছে?

— আরে না এমনি হাসছি। ছেলে হয়ে এতোটা ভয় পাচ্ছেন ঐ দিকে আমি মেয়ে হয়েও কোনো ভয় না পেয়ে এখানে চলে এসেছি। যাই হোক আমাকে কেউ দেখতে পায়নি।

— বাঁচালেন আমায়। এখন আপনি আসুন কল ফাইল দিয়ে দিবো।

আয়াদের কথটা মিস ডায়নার পছন্দ হলো‌ না। উনি একটু রেগে গিয়ে ভিশন কর্কশ গলায় আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলল

— উহু, আমার এখনি লাগবে ফাইলটা। কাল অনেক দেরি হয়ে যাবে।

— দেরি মানে? আমার যখন ইচ্ছা তখন দিবো। আর লিসেন ফার্দার আমার বাড়ি এমন হুট হাট করে চলে আসবেন না। এটা আমার পছন্দ না।

আয়াদের কথাটা শুনে বায়নার মাথা গরম হয়ে যায়। ফাইলটা আজই লাগবে তার। মিস ডায়না আয়াদের কথাটা শেষ হতেই আয়াদের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো। আয়াদ নিজেও রেগে আছে ডায়নার খামখেয়ালি কাজে। কিন্তু ডায়নার রাগটা আয়াদের রাগকে ছাড়িয়ে যায়। ডায়না রেগে গিয়ে আয়াদের শার্টের কলার চেপে ধরে আয়াদের বুকের উপর রিভালবারটা চেপে ধরে। রাগে গজগজ করতে করতে ডায়না আয়াদকে দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো

— আমাদের একটা নিয়ম আছে। যাকে আমাদের প্রয়োজন পরে না। তাকে আমরা আর রাখি না। এখনি যদি ফাইলটা আমি না পাই তো ৬টা বুলেট তোর বুকটা এপার ওপার করে বেরিয়ে যাবে।

ডায়নার কথা শুনে আয়াদ থ মেরে যায়। এসব কি বলছে ডায়না? আয়াদ মাথা গরম না করে ঠান্ডা মাথায় ফাইলটা ডায়নার হাতে তুলে দিলো। ডায়না আয়াদের কলার ছেড়ে দিয়ে ফাইলটা চেক করে দ্রুত গতিতে রুম থেকে বেরিয়ে চলে যায়।‌ ডায়না চলে যেতেই আয়াদ সোফার উপর ধপাস করে বসে পরলো। আয়াদ তো মানুষের উপকার করার জন্য কাজ করে থাকে। তবে কি আয়াদ কোনো মাফিয়া চক্রের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে? প্রশ্নটা আয়াদের মনকে বিষিয়ে তুলছে।

* সকাল হতেই অর্শির ঘুম ভেঙ্গে যায়। রাতে ঘুম তেমন একটা হয়নি। আয়াদের ব্যাপারটা মাথায় চেপে বসেছে তার। অর্শি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে নাস্তা করতে চলে যায়। নাস্তার টেবিলে বাবা বসে আছেন। অর্শি বাবার পাশে দাঁড়াতেই আয়াদের বাবা অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— অর্শি মা কি খবর তোর? আজ কাল বড্ড ব্যস্ত নাকি তুই?

বাবার কথার বিপরীতে অর্শি বেশ শান্ত গলায় জবাব দিলো

— কোথায় ব্যস্ত? আমি ফ্রি আছি বাবা।

— হুম তোকে তো দেখতে পাওয়াই যায় না‌। আচ্ছা বস নাস্তা করে নে আগে।

— হুম।

অর্শি বাবার পাশে বসে বাবার দিকে তাকালো। “সত্যি বাবার ভালোবাসা হয়তো তার ভাগ্যে ছিলো না। কিন্তু এই বাবাটা নিজের বাবার থেকে কোনো অংশে কম না”। অর্শি বাবার দিকে তাকিয়ে কথাটা ভাবছে হঠাৎ অর্শির ভাবনার মাঝে আয়াদ চলে এলো।

— আয়াদ কোথায় থাকিস আজ কাল? তোকে তো বছরের দুই ঈদের মতো দুবার দেখতে পাওয়া যায়।

বাবার কথায় অর্শির ঘোর কাটে। অর্শি আয়াদের দিকে তাকাতেই কেমন একটা লাগছে তার। ভিশন রকম ঘৃণা কাজ করছে আয়াদের বিপরীতে। এতোটা ঘৃণা হয়তো অর্শি লাইফে অন্য কাউকে কখনও করে‌নি। অর্শি আয়াদের দিকে থেকে মুখ সরিয়ে নিয়ে চুপচাপ খাবার খেতে লাগলো। আয়াদ চেয়ারে বসতে বসতে তার বাবা বলছে

— আমি বাসায়ই থাকি। তুমি কাজের চাপে বিজি থাকো বলে খোঁজ পাও না।

— হুম, ঠিক বলেছিস। বয়স হয়েছে‌ আর কত। রিটায়ের্ড এর ও সময় চলে এসেছে।

— হুম।

* আয়াদ খাবার খাচ্ছে আর আড় চোখে অর্শির দিকে তাকাচ্ছে। অর্শি মাথা নিচু করে খাবার খেয়ে খাবার শেষ করে টেবিল থেকে উঠে যায়। আয়াদ ও খাবার শেষ করে অর্শির সাথেই উঠে যায়। অর্শি রেডি হয়ে নিলো। ভার্সিটিতে যেতে হবে। আয়াদ বাইক নিয়ে বাড়ির নিচে অপেক্ষা করতে লাগলো। নির্দিষ্ট সময় পার হতেই অর্শি বাড়ির নিচে আসলো। আয়াদ বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অর্শি আয়াদের পাশ থেকে একটু এগিয়ে সামলে যেতেই আয়াদ অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলল

— আবার সেই নাটক শুরু হয়েছে! আমার বাইকে করে যেতে হবে বলে দিচ্ছি।

অর্শি আয়াদের কথার কোনো জবাব দিলো না। আরো একটু এগিয়ে যেতেই আয়াদ বাইক থেকে নেমে দৌড়ে অর্শির সামনে চলে যায়। অর্শি মাথা নিচু করে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলল

— আয়াদ ভাইয়া আমার পা আছে আমি একা যেতে পারবো। আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। প্লিজ! আমাকে আমার মতো থাকতে দিন।

আয়াদ অর্শির কথার বিপরীতে একটু বাঁকা হাসি দিলো। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলতে লাগলো আয়াদ

— সরি আমি কাউকে একা থাকতে দেই না। আমার সাহায্য নিতেই হবে মানে নিতেই হবে।

কথাটা বলতে বলতে আয়াদ অর্শির হাত ধরলো। আয়াদ অর্শির হাত স্পর্শ করতেই অর্শি ভিশন রেগে যায়। রেগে গিয়ে অর্শি আয়াদকে চমকে দিয়ে আয়াদের হাত থেকে নিজের হাত এক টানে ছাড়িয়ে নিয়ে

— ঠাসসসস, ঠাসসসস। ঐ অপবিত্র, নোংরা হাতে আমাকে স্পর্শ করবেন না আপনি।

সজোরে কসিয়ে থাপ্পড়টা আয়াদের গালে পরতেই আয়াদ অবাক হয়ে গেলো। গালে হাত দিয়ে মাথাটা নিচু করে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বিক্ষিপ্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো আয়াদ

— অপবিত্র হাত মানে! কি করেছি আমি? সেটা বল।

— কি করেননি? রাতের গভীরে সকলের অগোচরে রুমের মধ্যে মেয়ে নিয়ে এসে সারা রাত ফুর্তি করে এমন একটা ভাব করছেন যেনো কিছুই করেন নি।

— মানে! কার সাথে ফুর্তি করলাম? কি সব বলছিস তুই? মাথা ঠিক আছে তোর?

— এই ওয়েট ওয়েট আমার সামনে নাটক না একদম। আমি সব জানি কাল রাতে আমি নিজের চোখে দেখেছি সব টা।

অর্শির কথা শুনে আয়াদ বুঝতে পারলো অর্শি কি বলছে। আয়াদ একটা মুচকি হাসি দিয়ে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলল

— অর্শি সত্যি টা জেনে মানুষকে অপবিত্র বলিস প্লিজ! সবটা না জেনে একতরফা মন্তব্য করিস না প্লিজ!

— ওহহহ তাই। সত্যিটা হলো ঐ মেয়ে বিপদে পরে রাতে মুখ ঢেকে আপনার রুমে এসেছিলো। আপনি তাকে সাহায্য করতে মদের খাওয়ালেন। তারপর দুজন মিলে ইনজয় করলেন সারা রাত। তারপর ও মেয়ের বিপদ কেটে গেলো আর সে চলে গেলো। তাই তো?

— যেটা ভাবার ভাবতে পারিস? আর কিছু বলবো না আমি।

— চুপ একদম। আমি যা জানি তাতেই হবে। আর কিছু জানার নেই আমার। নেক্সট টাইম আমার পথ আটকালে খারাপ কিছু হবে বলে দিলাম। নোংরা মানুষ একটা।

কথাটা বলে অর্শি আয়াদের সামনে দিয়ে হনহন করে চলে গেলো। আয়াদের চোখের কোন থেকে দুফোটা নোনা জল গড়িয়ে পরলো। আয়াদ সত্যিটা না পারছে বলতে আর না পারছে আড়াল করতে।

* ভার্সিটিতে এসে আয়াদ ক্যাম্পাসে এসে মন মরা হয়ে বসে আছে। সব বন্ধুরা আড্ডা দিচ্ছে। আয়াদ একটা কোনে চুপটি করে বসে আছে। অর্শির বলা কথা গুলো মনকে আঘাত করেছে ভিশন। আয়াদ একটু নিজেকে শান্ত করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অর্শির ডিপার্মেন্টের সামনে দিয়ে নিজের ক্লাসে যাবার সময় আয়াদ অর্শিকে দেখার জন্য অর্শির ক্লাসে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। আয়াদ অর্শির ক্লাসে তাকাতেই থ মেরে দাঁড়িয়ে পরলো। এসব কি দেখছে আয়াদ? অর্শি হঠাৎ করে এসব কেনো করছে? আয়াদ দেখতে পেলো অর্শি………………………….

#চলবে…………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here