#আমার_সংসার
.
.
Part:26
.
.
Writer:Mollika Moly
.
.
সকালে অফিসের জন্য বেরুতে অনেক দেরী হয়েছে সিনহার।তারাহুরো করে বের হচ্ছে। আজ স্বপ্নের স্কুলে ফ্যাংশন আছে।ওকে তৈরি করতে দেরী হয়ে গেছে চারপাশ টা ছোটাছুটি করছিলো কথাস শুনতে চায় না স্বপ্ন। ওকে রেডী করিয়ে বাহিরে রাস্তায় দাড়িয়ে আছে সিনহা স্বপ্ন কে নিয়ে।তখুনি ফাহিম বের হলো গাড়ি নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে।
– “আজ এতেক্ষনেও এখানে স্কুলে তো চলে যান?
– ” হ্যাঁ আসলে স্বপ্ন এতো দুষ্টু হয়েছে যে ওকে রেডী করতে দেরী হয়ে গেছে।
– “উঠে আসুন ড্রপ করে দেই।
– ” আরে লাগবে না,গাড়ি পেয়ে যাবো।
– “পেয়ে যাবেন এখনো তো পাননি। কখন পাবেন না পাবেন তার কি গ্যারান্টি আর আপনার অফিসেরও তো দেরী হচ্ছে স্বপ্ন কে নামিয়ে দিয়ে আবার অফিস যাবেন।কতো লেট হবে ভেবে দেখেছেন?
– ” হুম তাও ঠিক।
– “তাহলে উঠে আসুন?
– ” কিন্তু আপনার তো দেরী হয়ে যাবে অনেক ঘুর হবে।
– “কিছু হবে না আসুনতো।
সিনহা আর স্বপ্ন পিছনে উঠে বসলো।ফাহিম ড্রাইভ করছে।স্বপ্ন কে স্কুলে নেমে দিলো।
– “মিসেস আহমেদ সামনে এসে বসুন?
– ” নাহ এখানে ঠিক আছি আমি।
– “আমাকে কি ড্রাইভার বানানোর মতলব আছে নাকি?খানিক হেসে বললো ফাহিম
– “না না একটু না, আমি আসছি সামনে।সিনহা হেসে সামনে গিয়ে বসলো।
– ” ড্রাইভার বড় কথা নয়।আপনার সাথে গল্প করতাম বাট পিছনে আর সামনে গল্প কিভাবে করি বলুন।আর ড্রাইভারের কথা না বললে আপনি আসতেনও না।কথাগুলো বলে আবারো হাসলো ফাহিম।
সিনহাও মানবতার খাতিরে একগাল হাসি দিলো।
.
দুজনে গল্প করছে আর ড্রাইভ করছে ফাহিম।আজকে এমনিতেই দেরী হইছে আবার পড়লো জ্যামে।আজ সিনহার জব থাকবে না আর সে সিউর।জ্যামে যে থাকে সেই বোঝে জ্যামে থাকলে কেমন লাগে।সিনহা বোরিং হতে লাগলো, আর টেনশন ভয় তো আছেই।সিনহার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে সে টেনশন করছে চুপসে গেছে কেমন জানি।ফাহিম সিনহার মুড অন করার জন্য বেশ কিছু মজার গল্প করতে শুরু করলো। ফাহিমের গল্প শুনে সিনহা হেঁসে কুটিকুটি। হাসছে আর ভাবছে মানুষ টা খুব মিশুক।মানুষের মন ভালো করে দিতে পারে নিমেষেই।দুজনে প্রচুর গল্প করছে আর হাসছে।ওদের এই হাসির ওপর অগ্নি বর্ষন করছে পাশের গাড়ি থেকে এক জোড়া চোখ।সিনহা ফাহিমের মতো সিফাতও সেই জ্যামে আটকে আছে ওদের পাশের গাড়িতেই।জ্যাম ছেড়ে গেলে সিনহা কে অফিসে নামিয়ে দিয়ে হাত বাড়িয়ে বাই বলে ফাহিম চলে যায়।সিফাত দেখে আর রাগে হাতমুঠো করে ফেলে হনহন করে নিজের কেবিনে যায়।যাওয়ার আগে পিয়ন কে বলে সিনহা আসলেই যেনো তারাতারি তার কাছে পাঠিয়ে দেয়।
.
সিনহা তারাহুরো করে অফিসের ভিতর ঢুকতেই পিয়ন ওকে বলে দেয় সিফাত তাকে ডেকেছে।ভয়ে ওর কলিজা কেঁপে উঠে।জব মনে হয় আজ যাবে।
ভয়ে ভয়ে সিফাতের কেবিনে যায়।দরজায় দাড়িয়ে ভিতু কন্ঠে নক করে।
– “আসবো,,?
– ” জ্বী,,,!
– “গুড মর্নিং!
– ” মর্নিং মাই ফ্যুট,ক টা বাজে এখন?
দাতের ওপর দাত চেপে বললো সিফাত।
– ” স্যার ঘরিতে দেখুন,আপনার ঘরি কি নষ্ট হয়েছে,আল্লাহ নষ্ট ঘরি কেন পড়ে আসছেন,শুনেন ঐ নষ্ট ঘরি টা ঠিক করে নিলেই তো পারেন,নষ্ট ঘরি পরে মানুষের মাঝে যাবেন না কিন্তু পাগল ভাববে।কোথায় ঠিক করবেন জানেন না নিশ্চয় তাই না,শুনুন বলে দেই আমাদের অফিস থেকে বের হয়ে একটু হাটার পর যে মোড় আছে না ঐ মোড়ে মাথায় একটা দোকান আছে তারপর,,,,,! সিফাতের ধমকে আর কিছু বলতে পারলো না সিনহা।চমকে উঠলো।
– “সেট আপ।মজা করো তুমি আমার সাথে?
– ” ছি ছি স্যার মজা কেন করবো আপনার সাথে।আমিতে ভালো বুদ্ধি দিলাম।আপনার ঘরি নষ্ট হয়েছে তাই, ঠিক করার বুদ্ধি দিলাম।আচ্ছা ওতদুর যেতে হবে না আমি একবার চেষ্টা করে দেখি হয় কি না।আমি করতে পারলো তো টাকা লাগবে না আপনার।আমি মানবতার খাতিরে ফ্রিতে করে দিবো।কই দেখি ঘরিটা।
বলে সিনহার হাতেস ঘরিটা দেখতে গেলো।আর সিফাত রাগে হাত মুঠো করে আছে।
– “কই ঘরি তো ঠিকই আছে।সব কাটায় কাটায় ঠিক ১১ঃ১৫ বাজে।১১ঃ১৫ আবার বলেই জিহ্বায় কামড় দিলো সিনহা।সিফাতের থেকে চটাস করে দুরে চলে গেলো সিফাতের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে রাগে দুচোখের নাটা এক হওয়ার মতো অবস্থা।
– ” চোখ অমন করে আছেন কেনো।আপনি কি টেষ্ট করছেন ট্যারা হওয়ার?বাট আপনার টা তো হচ্ছে না,ট্যারা এভাবে হয় দেখুন বলে সিনহা চোখ ট্যারা করে সিফাতের সামনে গেলো।দেখেছেন এভাবো ট্রাই করুন হয়ে যাবে।বাট এতো সুন্দর চোখ থাকতে আপনার ট্যারা লুক করতে ইচ্ছে করলো কেনো বলুনতো ভালো লাগে মনে হয় ট্যারা চোখ তাই না?
– “জ্যাস্ট সেট আপ সিনহা।অনপকক্ষন ধরে তোমার এই আজাইরা প্যাচাল টলরেট করছি।আজ তোমাকে আমি খুনই করে ফেলবো উল্টা পাল্টা আর একটা কথা বললে।
– ” না না এই ভুল টা করবেন না।আমাকে খুন করলে আপনার ফাঁসি হবে,আমার ছেলেটা মা হারা হবে,আর আপনার বউ আর আমার মেয়েটা জান্নাত বাবা হারা হবে।
– “খবরদার জান্নাত কে মেয়ে বলবে না।একবার বারন করছি না।সে শুধু আমার মেয়ে ওর ওপর তোমার কোনো অধিকার নেই।
– ” আপনি অধিকার দেওয়ার কে মি.সিফাত আহমেদ?
– “মানে,,কি বলতে চাইছো তুমি,আমি অধিকার দেওয়ার কে মানে আমি ওর বাবা।
– ” আপনি ওর বাবা তাই আপনার অধিকার আছে বাট আমি ওর মা আমারো সমান অধিকার আছে।
কথাটি শুনে সিফাত খানিক হাসলো।তারপর বলা শুরু করলো।
– “হাসালে সিনহা।তোমার অধিকার আছে ওর ওপর তাই না সেটাও কিসের অধিকার মায়ের অধিকার।এই অধিকার দেখাতে তোমার লজ্জা করে না।যখন জন্ম দিয়ে একদিনের শিশু রেখে চলে গিয়েছিলে তখন মনে হয়নি তোমার জান্নাত তোমার সন্তান।
– ” আমি কেনো চলে গিয়েছিলাম সেটা আপনি খুব ভালো করেই জানেন।
– “জানিতো কেনো চলো গিয়েছিলে,তোমার প্রেমিকের কথায় ভালবাসার টানে,এতোটা প্রেম জেগেছিলো যে স্বামীকে ছেড়েছো তো ছেড়েছই সন্তান কে ছাড়তে দ্বীধাবোধ করোনি।তুমি আসলেই একটা নোংরা মেয়ে।যে একজনের ঘর ছেড়ে গিয়ে আরেকজনের সাথে ঘড় বাধতে পারে তাদের মতো নিকৃষ্ট মেয়ে আর নেই।
কথাটি শোনা মাত্রই সিনহা প্রচন্ড রেগে গিয়ে সিফাতের গালে কষে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
– “কাকে নোংরা বলছেন আপনি।কে নোংরা,নিজের মন কে প্রশ্ন করুন।যে ঘরে বউ থাকা সত্বেও ডিভোর্স দেওয়া বউয়ের প্রেমে অন্ধ থাকে,ঘরের বউ কে অপমান করে।অবিচার করে তার সাথে,ভালবাসা দেয় না।মাতাল অবস্থায় কাছে আসার ফসল হয় আমাদের সন্তান, সেই সন্তান টুকুও আমাকে হারাতে হয় কারন সে তার ডিভোর্স দেওয়া বউটাকে আবারো ঘরে নিয়ে আসবে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে। তাদের কখনো সন্তান হবে না জন্য আমার সন্তান কে আমার কাছে থেকে কেড়ে নেয়।সেদিন আমি কেনো একদিনের সন্তান কে রেখে চলে গিয়েছিলাম সেটা আপনি জানেন তবুও সেটার অন্য অর্থ বুঝান কেনো।আমি সেদিন ভালোবাসার মানু্ষের হাত ধরে যাইনি,সেদিন আমার ভালবাসার মানুষ আর আমার সন্তান কে অন্যের কাছে দান করো দিয়ে গেছি।আপনার ভালবাসার মানুষ জারা কে আপনাকে আর আমার সন্তান কে দান করেছি।আমার ভালবাসার মানুষ অন্য কেউই ছিলো না,আপনি ছিলেন।আর জান্নাত জন্মাবার পর আমরা আলাদা হয়ে যাবো আর আপনি জান্নাত আর জারা কে নিয়ে থাকবেন আমাদের মাঝে এমন কথা ছিলো। আপনি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে জান্নাত কে কেড়ে নিতেন এটা আমার কাছে সম্মানের ছিলো না সেজন্য আমি কাউকে না জানিয়ে চলে গেছি।নিজের স্বামী সন্তানকে অন্য কাউকে দিয়ে থাকাটা যে কতোটা কষ্টের এটা কেবলি সেই বুঝে যার এই অবস্থা হয়।আপনিতো সুখেই ছিলেন জারা আর আমার মেয়ে জান্নাত কে নিয়ে।আপনাদের সুখে রেখে আমি চলে এসেছি।বাধা হয়ে দাড়াইনি।আজ সন্তানের কাছে থেকে দুরে সরে আছি জন্য এই নয় যে জান্নাত কে আমি ভালোবাসিনা বা আমি ওর মা না।আমাকে আর আমার সন্তান কে আলাদা করেছেন আপনিই।একটা মায়ের কাছে থেকে তার সন্তান কে কেড়ে নিয়ে কতোবড় অন্যায় করেছেন ভেবে দেখুন।
প্রচুর রেগে কথা গুলো বলে সিনহা চলে গেলো সিফাতের কাছে থেকে।আর সবটা শুনে সিফাত বসে পড়লো ফ্লোরে।
.
to be continue…..