আমার সংসার পর্ব ৩১

#আমার_সংসার
.
.
Part:31
.
.
Writer:Mollika Moly
.
.
সিনহার মা আচমকায় সিনহা কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো আর সাথে সাথেই মুখ টা কালো করে ফেললো।ঘটনার আকস্মিকতায় সিনহা ‘থ’হয়ে গেলো।কৌতুহল চোখে তাকালো সাইরি আর সিনহা ওদের মায়ের দিকে।
– “আজ এতো বছর পর তুই আবার কেনো ফিরে এসেছিস।তোর ফিরে আসা তো আমরা আশা করিনি।
– ” মা তুমি এসব কি বলছো?অবাক চোখে তাকালো সিনহা।নিজের মায়ের মুখে এমন কথা শুনবে আশা করেনি সে।তার মা কি অভিমানে এসব বলছে নাকি ঘৃনা নিয়ে। তার মায়ের চোখ মুখে সে তীব্র রাগ ঘৃনা দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু কেনো?
– “ঠিকই বলছি সেদিন সিফাতের পরিবার কে ঠকিয়ে আমাদের মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে গিয়েছিলি।তবে আজ কেনো ফিরে এসেছিস।কলঙ্কমাখা মুখ টা দেখাতে।লোকের চোখে আবারো আমাদের খারাপ বানাতে।তোর জন্য আমার ছোট মেয়ে টার বিয়ের ঘর আসতো না।আসলেও ভেংগে যেতো।একটা কথায় বলতো এই বাড়ির মেয়ে খারাপ বিয়ের পর প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যায়।নিজের প্রতি ঘৃনা আসে আমার যে তোর মতো মেয়ে কে জন্ম দিয়েছিলাম বলে।তুই চলে যা এখান থেকে।লোক জানা জানি হওয়ার আগেই তুই চলে যা।তোর জন্য সিফাতের পরিবারের সাথে সম্পর্ক খারাপ করতে চাই না।তোর জন্য আমরা আবারো আমরা কলঙ্কিত হতে চাই না।তোর মতো কলঙ্কিনী মেয়ের দরকার নেই আমাদের।
– ” বাহ মা আজ তোমার মুখে এই কথাগুলো বড্ড বেমানান লাগছে।আমার জন্য সিফাতের পরিবারের সাথে সম্পর্ক খারাপ করতে চাও না তাই তো।কিন্তু সিফাতের পরিবারের সাথে তোমাদের সম্পর্কের মাধ্যম কে বলোতো, আমি।আমি সেই বাড়ির বউ তেমাদের বড় মেয়ে যার কারনে তোমরা আজ সিফাত এর পরিবারের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক।
– “তুই বউ ছিলি।কিম্তু এখন আর নেই কারন তুই ওদের ঠকিয়ে আমাদের মান সম্মান নিয়ে খেলেছিস।সিফাতের আর ওর পরিবারের বিশেষ করে ওর বাবার ভালবাসার মুল্য দেসনি।
– ” ভালবাসা,তুৃমি কার ভালবাসার কথা বলছো মা।তোমার মেয়ে জামাই সিফাতের ভালবাসা।হাসালে মা।তোমরা তো আমাকে বোঝা মনে করে ছিলে।তাই যত তারাতারি সম্ভব যার তার সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো।আর সিফাতের বাবার অনেক টাকা পয়সা ছিলো আমায় বিয়ে দিলে তোমরা আর আমি সবাই সুখে থাকবো এটা ভেবে আমায় বিয়ে দিয়েছিলে।তোমরা ঠিকই সুখী হয়েছিলে মা।কিন্তু একটিবার কি ভেবে দেখেছিলে তোমার মেয়ে সুখে আছে কি না।সে কি মেনে নিতে পেরেছে কি না। তোমরা অর্থ,সম্পদ দেখে বিয়ে দিলে।কিন্তু একটিবার ভাবলে না ছেলে টা কেমন,ছেলে দেখার প্রয়োজন মনে করোনি। বিয়ের পর যে তোমাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলাম এটাও তোমরা ভেবে দেখোনি কেনে আমি তোমাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি।ওপরের সুখ টাই দেখলে মা ভিতরে যে আমি প্রতি মুহুর্তে খুন হয়ে গেছি সেটা তোমাদের চোখে পড়লো না।মা আজ যদি বাবা তোমার সাথে অত্যচার করতো,রাতে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে এসে অমানুষের মতো আচরন করতো তাহলে কেমন লাগতো।গর্ভাবস্থায় যদি তোমায় বলা হতো বাবু জন্মাবার পর আমরা আলাদা হয়ে যাবো আর বাবুটাকেও কেড়ে নিবো তখন তুমি কি করতে।আমাকে তোমরা ডিভোর্সি ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছিলে মেনে নিয়েছি শুধু তোমাদের মুখের হাসির জন্য।নিজের স্বপ্ন কে নিজ হাতে ভেংগে ফেলেছি বিনিময়ে কি পেয়েছি আমি প্রতিনিয়ত মানুষিক অত্যচার।তবুও সব সহ্য করে থাকতাম কিন্তু সিফাত যদি ভালোনাসতো।যখন প্রেগন্যান্ট হয়েছি তখন ভেবেছিলাম আর যাই হোক সন্তানের জন্য আমায় রাখবে কিন্তু না সে আমার সন্তান চায় আমাকে না।আমাকে বলা হয়েছিলো সন্তান জন্মাবার পর সে আর আমি আলাদা আমার সন্তান নিয়ে সে জারার সাথে সংসার করবে।এতোকিছুর পরও আমি কলঙ্কিনী ঠকিয়েছি সবাই কে তাই না।আজ আমার দিকে আঙুল তুলছো সবাই।এই আঙুল টা আমার উচিত তোমাদের দিকে তোলা।তোমরা আমার জিবন টা শেষ করে দিয়েছো।প্রচুর রেগে কথা গুলো বলে কেঁদে ফেললো সিনহা।
ওর মা সব টা শুনে মাথা নিচু করে ফেললো।চোখে তার জল এসে গেছে।সত্যই তো সিনহা বলছে আমরা তো এতোকিছু ভাবিনি।শুধু বিয়েটা দিয়েছে ছেলে কেমন সেটাও জানার প্রয়োজন মনে করিনি।ভেবেছি অর্থ প্রাচুর্যের মাঝে মেয়ে সুখে থাকবে কিন্তু মেয়ের প্রকৃত সুখ এটা না সেটা বুঝিনি।প্রত্যেকটা নারীর প্রকৃত সুখ হলো তার স্বামীর ভালবাসা।স্বামীর ভালবাসা না পেলে হাজারো ঐশ্বর্য তাকে সুখী করতে পারবে না।কথাগুলো ভাবছে সিনহার মা।অনেকক্ষন চুপ থাকার পর সিনহার মা মাথা তুলে সিনহা কে বললো
– “জামাই কোথায় সাথে আসেনি?
– ” জামাই কোন জামাই তোমরা তো জানো মা সব টা,সিফাত আর আমি একসাথে নেই।
– ‘সিফাতের কথা বলছিনা আমি।
– “তাহলে কার কথা বলছো তুমি?
– ” বলছি যার সাথে বিয়ে করেছিস তার কথা?
– “মা তুমি আমাকে এই চিনো,তুমি ভাবতে পারলে আমি বিয়ে করেছি?
– ” তাহলে এই ছেলে টা কার?
– “এটা আমার ছেলে।
– ” বিয়ে করিসনি সেদিন সন্তান কে রেখে গিয়েছিস তাহলে এই ছেলে কিভাবে পেলি?
– “মা ডাক্তার আর আমি ছাড়া কেউ জানে না এই সত্য টা?
-” কোন সত্য কি সত্য বল?
– ” সেদিন আমার জমজ এক ছেলে এক মেয়ে হয়েছিলো।
কথাটি শুনে সিনহার মা খুশি আর বিষ্ময় চোখে তাকালো।
– “বলিস কি এতো বড় সত্য গোপন করে গেলি আমাদের কাছে?
– ” না করে উপায় ছিলো না মা।সিফাত তো জান্নাত কে আমার কাছে থেকে কেড়েই নিচ্ছে একা আমি কিভাবে বাঁচতাম মা।হয়তো সেজন্যই আল্লাহ আমার জমজ বাচ্চা দিয়েছে।একটা আমার কাছে আরেকটা তার বাবার কাছে অন্য মায়ের কাছে বড় হচ্ছে। জান্নাতের ওপর আমার কোনো অধিকার নেই মা সে সিফাত আর জারার মেয়ে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো সিনহা।
– “কে বলেছে সে জারার মেয়ে?
– ” কেনো মা কে বলবে জারার জন্যইতো আমি সেদিন চলে গিয়েছিলাম।আমার সন্তান নিয়ে সে জারার সাথেই সংসার বাধবে সেজন্যই চলে গিয়েছিলাম।
– “কিন্তু সিফাত তো জারা কে বিয়ে করেনি।
সিনহা চমকে উঠে তাকালো ওর মায়ের দিকে।
– “মানে বিয়ে করেনি জারা কে,তাহলে কাকে বিয়ে করেছে?
– ” কাউকেই বিয়ে করেনি,সে শুধু তোকে ভালবাসে,কতো কষ্ট পেয়েছে ছেলেটা এইসব তুই জানিস না।ছেলেটার চোখের দিকে তাকাতে পারিনা।বড্ড ভালবাসে তোকে।আজো তোর অপেক্ষায় আছে । অবশেষে তার এই একাকিত্বটা দুর করার জন্য আমরা দুই পরিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি সাইরির সাথে ওর বিয়ে দিবো।
কথাগুলো শুনে সিনহার মাথায় যেনো আকাশ ভেংগে পড়লো।সে ফাহিমের জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলো সাইরির সাথে কারন ফাহিম সাইরি কে ভালবাসে।আর এখানে সাইরির সাথে সিফাতের বিয়ে কি হচ্ছে ওর সাথে কিছুই বুঝতে পারছে না।মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো সিনহা।।
সাইরি ছুটে এলো।
– “আপু তুই ঠিক আছিস বল কি হয়েছে তোর?
– ” মা সিফাত কি বিয়েতে রাজি?
– “রাজি ছিলো না এখন রাজি।
– ” ওহ আসছি।
– “কেনো এখুনি যাবি কেনো আজ থেকে যা।
– ” না আরেকদিন আসবো।
– “সিনহা বলছিলাম যে এখন থেকে আমাদের সাথে থাক না ভালো লাগবে?
– ” নাহ মা আসছি এখন আমার একটু কাজ আছে।
বলে আর দেরী না করে সিনহা চলে গেলো।
.
to be continue….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here