আমার সংসার পর্ব ৩০

#আমার_সংসার
.
.
Part:30
.
.
Writer:Mollika Moly
.
.
– ” আঙ্কেল আপনি মুখ বের করতে না করেছেন কিন্তু চোখ বের করতে তো বারন করেননি তাই আমি মুখ বের না করে চোখ বের করেছি।
– “আরে বাপ তুই কি জিনিষ বলতো।এবার বলছি শুনো মাথা বের করবে না ঢুকাও মাথা।
– ” আচ্ছা ।
ফাহিম রেডি হয়ে ডাকলো সিনহা কে।
– “একি আপনি রেডি হয়ে কোথায় যাচ্ছেন?
– ” কেনো অফিসে।
– “এই শরীরে অফিসে?
– ” কেনো কি হয়েছে শরীরের,?
– “আপনি না রাত থেকে অসুস্থ।?
– ” আরে রাখুন তো অসুস্থতা কাল ছিলো আজ নাই সো আমি অফিসে যাচ্ছি।
– “নাহ যাচ্ছেন না,কে বলেছে অসুস্থ না আপনি,আপনার শরীর এখনো দুর্বল একটু আগেই তো মাথা ঘুরে পড়ে যেতে লাগছিলেন?
– ” ও কিছু না ঠিক হয়ে যাবে,।
– “হোক তবুও অফিস যাওয়া বারন।
– ” অফিসে ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে বুঝছেন না আপনি?
– “শুনুন জিবনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছুই না সো আপনি যাচ্ছেন না।
– ” আরে আমি কি মরে যাচ্ছি নাকি,অফিসেই তো যাচ্ছি।
– “চুপ করবেন আপনি এবার,আজ আমিও অফিসে কল করে বারন করে দিয়েছি যাবো না অফিস,আপনিও থেকে যান কিছু গল্প শুনবো?
– ” আচ্ছা।
-“আর এই যে নবাব সিফাত আহমেদের ছেলে তোমার কি ঘুম ভাংগে না,এখনো উঠোনি,বাবার মতোই হয়েছো তাই না?
– “মামনি আমি উঠে ছিলাম তো কিন্তু আঙ্কেল কি করেছে জানো ওয়াশরুম থেকে টাওয়াল পড়ে,,,,,পুরো কথাটা বলার আগেই ফাহিম গিয়ে মুখ চেপে ধরলো স্বপ্নের।
– ” বাবা স্বপ্ন যাও এখন উঠে ফ্রেশ হয়ে এসো ব্রেকফাস্ট করবো।
– “যাবোই তো তার আগে মা কে বলে যাই তুমি কেমন হয়েছিলে।
– ” না না বাবা পায়ে পড়ি তোর,আমার মান-ইজ্জতের ফালুদা বানাস না।
ওদের কান্ড দেখে সিনহা মিটি মিটি হাসছে।
– “স্বপ্ন যাও ফ্রেশ হয়ে এসো,ব্রেকফাস্ট ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
– ” ওকে মামুনি।
বলে স্বপ্ন ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
.
আর এদিকে সিফাত রেগে আগুন।সিনহা আজ অফিসে আসবে না কেনো।ওকে না দেখলে সিফাত থাকতে পারে না আজকাল।অফিসের সময়টুকু শুধু ওকে দেখে সেই সময়টুকু সিফাতের অনেক ভালো লাগে কিন্তু বাড়ি ফিরলে আবারো সেই একাকিত্ব তাকে গ্রাস করে ফেলে।আজ সিনহা কল করে ওকে বলে দিয়েছে অফিসে আসতে পারবে না।তারপর সিফাত কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দিয়েছে।বার বার সিফাত ফোন করছে কিন্তু রিসিভ করছে।তাই সিফাত রেগে আগুন হয়ে গেছে।ভাবে কি সে নিজেকে অফিস আসবো না বলেই কেটে দিলো আমি ওর বস নাকি ও আমার বস।নিজেকে কি বস ভাবে নাকি সে।স্বামীর সাথে সময় কাটাবে তাই না।বুঝে গেছি সব আমি।ওয়েট করো সিনহা আহমেদ স্বামীর সাথে সময় কাটানো বের করছি।
.
সিনহা,ফাহিম,স্বপ্ন তিনজন ব্রেকফাস্ট শেষ করলো।স্বপ্ন টিভি অন করে কার্টুন দেখতে শুরু করলো। সিনহা আর ফাহিম বিছানার ওপর মুখোমুখি বসে আছে কেউ কিছু বলছে না।নিরবতা ভেংগে সিনহাই প্রথমে বলে উঠলো….
– “মায়াপরী টা কে?
সিনহার কথা শুনে ফাহিম অবাক হয়ে তাকালো সিনহার দিকে।ভাবছে হয়তো সিনহা জানলো কিভাবে এটা তো কাউকে বলেনি সে?
– “কি হলো চুপ যে?
– ” ককই কিছু না।
– “বলবেন না মায়াপরী টা কে?
– ” কই কেউ না,আপনি জানলেন কি করে?
– “গতকাল জ্বরের ঘোরে যে একটি নামই বার বার উচ্চারিত করেছেন আপনি সেটা হলো ” মায়াপরী”।
সিনহার কথাটা শুনে ফাহিম খানিক লজ্জা পেলো।এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো।সিনহা সেটা খেয়াল করে খানিক মৃদু হাসলো।
– “আমার মনে হয় ঐ সেই মায়াপরী।দেয়ালের ছবিগুলোর দিকে আঙুল বাড়িয়ে দেখালো সিনহা ফাহিম কে।
ফাহিম আবারো অবাক হলো।তার মনেই ছিলো না সে পুরো ঘর তার মায়াপরীর ছবি লাগিয়েছে।এটা কেউ দেখলে লজ্জাকর অবস্থায় পড়বে সে।আজ সিনহা দেখলো সে খুব লজ্জা পেয়েছে।
– “লজ্জা পাচ্ছেন?
– ” আরে নাহ লজ্জা পাবো কেন?
– “তাহলে বলুন আপনার সেই ভালবাসার গল্প?
– ” কই ভালবাসার গল্প কিছুই না,আমার কোনো ভালবাসার গল্প নেই।
– “আচ্ছা সে না হয় নাই বা বললেন,কিন্তু মায়াপরী আর দেয়াল জুড়ে ছবি এটার তো গল্প আছে নাকি সেটা বলুন?
– ” তেমন কিছু না,।
– “বন্ধু ভাবেন?
– ” হ্যাঁ এটা আবার প্রশ্ন করেন আপনি?
– “তাহলে বলছেন না কেনো?
– ” বলার মতো কিছুই না তাই বলছি না।
– “আমার মনে হয় কিছু,যেটুকু হয় সেটুকুই না হয় শুনি,সেটুকু দিয়েই না হয় আমি পুরো গল্প টা সাজিয়ে দিবো।
– ” পুরো গল্প সাজাবেন মানে?
– “সে না হয় পরে বলবো,এখন বলুন?
তারপর সিনহা কে ফাহিম তার মায়াপরীর সব কথা বলে।কখন কোথায় দেখা হয়েছে,ভালবাসা হয়েছে অথচ বলা হয়নি সব টা।ফাহিমের কথাগুলো শুনে সিনহা বুঝে গেলো সে এখনো সাইরির নাম টাও পর্যন্ত জানে না।ভালবাসার কথাও বলতে পারেনি।সাইরি তো সিনহার ছোট বোন।তার বোনের জন্য এতো ভালো একটা ছেলে কখনো হাতছাড়া করবে না সে।কারন শুধু অর্থ পতিপত্তি নয় ফাহিম মানুষ হিসেবে অনেক ভালো।আর ওর কথায় বোঝা গেলো সাইরি কে সে অনেক ভালবাসে সুখে রাখবে।
.
বিকেলে হঠাৎই কলিংবেল এর আওয়াজে সাইরির সাধের ঘুম টা নষ্ট হলো।বিরক্ত নিয়ে তিড়িং বিড়িং করে হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে দরজা খুললো।দরজা খুলেই ওর চোখ কপালে উঠে গেলো। মুখে খুশির রেখা টেনে গেলো।খুশিতে সোজা গিয়ে জরিয়ে ধরলো দরজার ওপারে থাকা মানুষটাকে।দুজন দুজন কে জরিয়ে আছে।অতঃপর চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো ভালবাসার,আনন্দের কষ্টের সংমিশ্রণের জল এটা।নিজেকে সামলাতে পারছে না কেউই তারা।অনেকন দিন পর দুই বোন দুজনকে দেখছে।সিনহা এসেছে তার বাবার বাড়ি।সেই যে বিয়ের সময় বাড়ি থেকে গিয়েছিলো অভিমানে আর ফিরেনি সে।মনে মনে ভাবতো তার বাবা মা তাকে হয়তো টাকার কাছে বিক্রি করে দিলো কেনো না সিনহার পরিবাড আর্থিক দিক থেকে সচ্ছল ছিলো না।সিনহা কে এতো বড় বাড়িতে বিয়ে দেওয়ার পর তাদের কষ্ট লাঘব হয়।গ্রাম থেকে শহরে ফ্ল্যাটে সিনহার শ্বশুরই থাকতে দিয়েছে।বিনিময়ে তারা সিনহা কে নিয়েছিলো তার ডিভোর্স দেওয়া নেশাসক্ত ছেলের জন্য।সেইসব রাগে অভিমানে কখনো সে বাবার বাড়ির সাথে যোগাযোগ রাখেনি।কিন্তু সিনহাট শ্বশুর তার দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করেছে।সাইরি কে পড়াশুনার খরচ ওদের সংসারের খরচ সব চালিয়েছে।আজ এতোদিন পর সিনহা ফিরে এসেছে সেই খুশিতে সাইরি ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছে সাথে সিনহাও।স্বপ্ন অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে তার মা কে। আর ভাবছে মামুনি কাঁদছে কেনো।হয়তো বাবা মায়ের বাড়ি অনেকদিন পর এসেছে তাই কাঁদছে। মামুনি অনেকদিন পর কেনো আসলে এটুকুনি সময় লাগে আস্তে রোজ রোজ আসতে পারলো না তাহলেই তো কষ্ট হতো না।এইসব ভেবে স্বপ্ন ভিতরে চলে গেলো।
.
সিনহার মা নিজের রুমে শুয়ে ছিলো।স্বপ্ন সোজা গিয়ে সিনহার মায়ের রুমে গেলো।স্বপ্ন কে দেখে তিনি অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলেন।ছেলে টাকে।মুখটা বরই মায়া।মুখ টা চেনা মনে হচ্ছে কিন্তু কখনো তো এই ছেলে কে দেখিনি।কিন্তু মুখটা অনেক চেনা অনেক আপন মনে হচ্ছে। সিনহার মা স্বপ্ন কে ডাকলো।কাছে নিয়ে বসালো।
– “নাম কি তোমার বাবা,এখানে কোথা থেকে এলে?
– ” আমার নাম স্বপ্ন। তুমিই আমার নানু তাই না?
কথাটি শুনে কলিজা টা কেঁপে উঠলো তার।কে এই ছেলে নানু বলে।আপনও মনে হয়।
– “কে বলেছে বাবা আমি তোমার নানু?
– ” আমার মামুনি বলেছে।
তিনি আবারো অবাক হলেন,তার অবাক হওয়ার পালা যেনো শেষ হচ্ছে না।
– “কে তোমার মা।পুরো কথাটি শেষ না করতেই সাইরি বাহির থেকে চেঁচাতে লাগলো।
– ” মা দেখবে এসো কে এসেছে।তিনি ডাক শুনে তারাহুরো করে রুম থেকে বের হলো।পিছু পিছু স্বপ্ন। বের হয়ে দেখে সিনহা এসেছে। ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো সিনহা কে।মা মেয়ে দুজন দুজনকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে কান্না শুরু করলো অনেক শক্ত করে জড়িয়ে আছে এমন ভাবে মনে হয় কলিজার ভিতরে নিয়ে যেতে চায় তারা।খানিকক্ষণ এভাবে থাকার পর সিনহার মা আচমকায় সিনহা কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো আর সাথে সাথেই মুখ টা কালো করে ফেললো।
.
To be continue………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here