আমার সংসার পর্ব ৭

# আমার_সংসার
.
Part :07
.
Writer :Mollika Moly
.
.
সিফাত সেই যে বের হয়েছিলো
সারাদিনে আর বাড়ি না ফিরে
রোজ যেমন রাতে ফিরে সেই তেমন
রাত করেই ফিরলো।সিনহা বিছানার
একপাশে শুয়ে আছে গুটিশুটি হয়ে।
ঠক করে শব্দ হলো দরজা খোলার
সিনহা জেগেই ছিলো তাই সে ওপাশ
ঘুরে থেকেই এপাশে মুখ ঘুরে দেখে
সিফাত এসেছে।কিছু না বলে মুখ টা
ঘুরিয়ে আবার শুয়ে পড়লো।সিনহা
ভেবেছে আজো হয়তো সিফাত
মাতলামি করবে নেশার ঘোরে,সেই
ভয়ে সিনহা কুকড়ে যাচ্ছে। পাশ ফিরে
আর তাকাচ্ছে না।
.
কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো,সিনহা
অনেকটা সময় চুপটি করে শুয়ে থাকার
পরও সিফাতের কোনো প্রভাব না পড়ায়
মুখটা আবার ঘুরিয়ে দেখলো,সিফাত
টাওয়াল দিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে, সোজা
বিছানার পাশে গিয়ে বসলো।
.
সিনহা ততক্ষণে আবারো ঘুমের ভান
করে শুয়ে থাকলো।সিফাত ওর পাশে বসে
মুখটা উচু করে দেখলো সিনহা জেগে আছে
কিনা।তারপর আলমারী থেকে একটা ডায়েরী
বের করলো।তাতে কি কি যেনো লিখে আবারো
ডায়েরিটা আলমারি তে রেখে,সিনহার পাশে
সোজা হয়ে শুয়ে পড়লো।ঘুম আসছে না সিফাতের
চোখে,সেলিং এর দিকে তাকিয়ে একমনে কি যেনো
ভেবেই চলেছে সে।
.
আর এদিকে সিনহার ভয়ে কাচুমাচু অবস্থা।
কখন কি মাতলামি শুরু করে নাকি কে জানে,
কিন্তু আজ সিফাত কে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে,
মাতাল দেখাচ্ছে না তাহলে কি সিফাত আজ
ড্রিংক করেনি,কথাটি ভাবতেই ঠোঁটের কোনে
একচিলতে হাসি ফুটে উঠে সিনহার।মনে
প্রশান্তি পায়।ভাবতে থাকে সিফাতের এমন
একটুখানি বদলে যাওয়াতে।ভাবতে ভাবতে
সিনহা ঘুমিয়ে পড়ে।
.
অনেকটা সময় সেলিংয়ের দিকে তাকিয়ে
থাকার পর,মনের অজান্তেই চোখদুটো
ঘুমন্ত সিনহা দিকে চলে যায় সিফাতের
থমকে যায় যায় সিফাতের চোখদুটো।
এ যেনো এক ঘুমন্ত পরী ঘুমিয়ে আছে
ওর পাশে,চোখ ফেরাতে পারছে না ও।
শ্যামলা বর্ণ গায়ের রং সিনহা,থুতনির
কোনার দিকে একটা তিল,চোখের
পাতায় একটা তিল,ঠোঁটের মাঝে
বেশ কয়েকটা তিল,আর মায়াবী
একটা চেহেরা,যা মানুষকে খুব
সহজেই আকর্ষিত করতে সক্ষম।
.
সিফাতঃসিনহার থেকে চোখ সড়াতে।
পাড়ছে না,এই মায়াবী মুখ খানি সে এর
আগে খেয়াল করেনি,কেমনজানি মাতাল
করা চেহেরা,ঘোর লেগে যাচ্ছে সিফাতের
তখনি সিফাতের প্রথম স্ত্রীর কথা মনে হলো।
নিজেই নিজের মন কে বোঝাতে লাগলো,।
.
কেন আমি সিনহার মায়ায় পড়ে যাচ্ছি, এটাতো
ঠিক না,আমিতো জারা কে ভালবাসি,সিনহা কে।
বাবার জন্য একটা মেয়ের জিবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
আমিতো চাইনি বিয়ে করতে সিনহা কে,কেনো জোর
করে বিয়ে দিলো,যদি জারা কে মেনে নিতো তাহলে
আমার সাথে বাবা,মায়ের এতো দুরত্ব তৈরী হতো না।
মানছি আমি জারা ভুল করেছে,অন্যায় করেছে আমার সাথে কিন্তু ও তো ওর ভুল বুঝতে পেরেছে,আবার ফিরেছে আমার কাছে,আমিও ওকে
অনেক ভালবাসি তাই ওর ফিরে আসাতে আমি খুব খুশি হয়েছি।আমি ওকে মেনে নিতে পেড়েছি বাবা,মা কেন পারলো না।বাবা মা অন্যায় করেছে আমার সাথে । ওকে মেনে না নিয়ে কেন সিনহার সাথে বিয়ে দিলো,আর সিনহাই বা কেমন আমাকে বিয়ে করতে রাজি হলো,আমি বিবাহিত,নেশাগ্রস্ত তারপরো কেন রাজি হলো,লোভ সবই লোভ । ওরা তে ছোটলোক
টাকার জন্য সব করতে পারে,বড় বাড়ির বউ হবে এই লোভে সে আমায় বিয়ে করেছে।লোভে বিয়ে করেছিস থাক বড় বাড়ির বউ হয়ে আমাকে কখনোই পাবি না,আর এই বাড়িও তোকে ছাড়তে হবে এই ঘর,এই ঘর আমি শুধু জারার আর কারো নয়।
একমনে কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলো সিফাত।
.
আচমকা সকালে ঘুম ভেংগে গেলো সিফাতের।
চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে পাশে সিনহা নেই।
এদিক ওদিক তাকাতেই সিনহা কে মেঝেতে দেখতে পেল সে। লম্বা ঘোমটা টেনে মেঝেতে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়ছে সে।
.
খানিকটা সময় সিনহা কে দেখছে আর গতকালের তার সিনহার প্রতি হওয়া ধারনাগুলোর কথা ভাবছে।
আচ্ছা ও কি সত্যিই লোভে পড়ে বিয়ে করেছে,কিন্তু এতো ধার্মিক মেয়ের লোভ থাকবে না আমি যতদুর জানি,যদি লোভ না হয় তাহলে বিয়ে করবে কেনো।
জানি না কিছু আমি,মাথায় আসছে না কিছু,আর আমি ওকে নিয়ে এতোকিছু কেন ভাবছি আমিতো জারা কে ভালবাসি,সিনহা দুদিনের ভেসে আসা মেঘ আমার জিবনে ওকে সরতেই হবে আমার জিবন থেকে।
.
নামাজ শেষে উঠে জায়নামাজ গুছিয়ে রেখে,বিছানায় তাকিয়ে দেখি উনি তাকিয়ে আছে,আমার দিকে।আমি প্রথমে বললাম,,
.
–সুপ্রভাত।
.
–হুম।
.
–আজ এতো ভোরে ঘুম ভাংলো?
.
–হুম ভেংগে গেলো।
.
–বেশ তো,তাহলে যান,এখন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে, ফজরের নামাজ আদায় করুন।
.
–আবারো অধিকার??
.
–উহু অধিকার না,আগেই বলেছি,আমি আপনাকে অধিকার দেখায় না,এটা আমার কর্তব্য, আমি একজন মুসলিম হিসেবে নিজে নামাজ পড়া এবং অপরকে নামাজের জন্য আহবান করা আমার দায়িত্ব, কর্তব্য দুটোই।এখন যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।
.
–আমিতো নামাজ পড়িনা।
.
–পড়েন না আজ থেকে পড়বেন,আজকের এই সকাল টা নামাজের মাধ্যমে সুন্দর করে তুলুন,আর রোজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করুন।দেখবেন মন ভালো থাকবে।হতাশা থাকবে না।আর আজ তো জামায়াত শেষ,আপনি আজ বাড়িতেই নামাজ পড়ুন, কাল থেকে মসজিদে জামায়াতে নামাজ পড়বেন।
.
সিনহার কথা শুনে সিফাত খানিকক্ষণ সিনহার দিকে তাকিয়ে,কোনো কথা না বলে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো।
.
ফ্রেশ হয়ে এসে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে বসলো।
.
সিনহা মনে মনে হাসলো,অনেকটা খুশি হলো সে,সে পেরেছে তার প্রথম ধাপ পেরুতে,নামাজের দিকে মন নিয়ে আসতে পেরেছে সে সিফাত কে।আজ সে জয়ী,আর কিছু না পাক তার বর নামাজ পড়েছে এটাই অনেক বড় পাওয়া তার কাছে।কেনোনা নামাজ মানুষকে সবরকম খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে,মন সর্বদা পবিত্র থাকে।সিনহা নিশ্চিত সে পারবে তার সিফাত কে স্বাভাবওকে ফিরিয়ে আনতে।
.
to be continue….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here