আমার_মনপাখি পর্ব ১৩+১৪

#আমার_মনপাখি।
#পলি আনান।
#পর্ব – ১৩

এই বাড়ির ডানের গলিটাতে কোন মানুষের আসা যাওয়ার চিহ্ন নেই।সবটা নিরিবিলি। একে একে এই গলিতে ৪ টা রুম।রুম গুলোতে কোন আলো নেই সবকটা রুমে অন্ধকার। বাইরে অনুষ্টান শুরু হয়ে গেছে তাই প্রচন্ড জোরে গান চলছে।এইদিকটায় মিসেস ডালিয়া আছে বলে রাইফার মনে হয় না।তার কিছুটা সন্দেহ হচ্ছে।

_ আম্মু যদি আমাকে ডাকতো।তবে রুমটা এতো অন্ধকার করে রেখেছে কেন(ভাবতে ভাবত)।

রাইফার ভাবনার মাঝে তার মনে পড়ে তার আম্মুর মাইগ্রেনের সমস্যা আছে।যখনি সমস্যাটা শুরু হয় তখন তিনি দরজা জানালা বন্ধকরে, রুমের লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে।রাইফা আর এক মুহুর্ত নষ্ট না করে ৩ নাম্বার রুমটিতে দরজা ফাক করে ডুকে পড়ে।পুরো রুমটি প্রচন্ড অন্ধকার।কোন মানুষের অবয় দেখতে পাচ্ছেনা রাইফা।তাই সে শব্দ করে ডাকে,
_ আম্মু তুমি কোথায় আমি এসেছি।তোমার কি আবার সমস্যা হচ্ছে।কই আম্মু তুমি সাড়া দাও।

রাইফার কথার মাঝে কেউ একজন দরজাটা বন্ধ করে দেয়।রাইফা পেছনে তাকাতে আর কাউকে দেখতে পাচ্ছেনা।রাইফা ভয়ে দরজার কাছে এসে দরজা খোলার চেষ্টা করে কিন্তু সে অন্ধকারে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।হঠাৎ এই নিরিবিলি রুমে কারো গলার আওয়াজ পায় সে।
_ কি হলো দরজাটা খুলছে না মনপাখি।

এই কন্ঠোটার সাথে রাইফা বেশ ভালোই পরিচিত।রাগে মিশ্রিত একটি কন্ঠো।যে কন্ঠ তাকে বার বার হুমকি দেয়,তাকে সকল কাজে বাধ্য করে।এই কন্ঠো ওই অচেনা লোকটির। রাইফা আবার দরজা খোলার চেষ্টা করতে গেলেই লোকটি তাকে হেচকা টেনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।রাইফা ভয়ে কুঁকড়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।লোকটি রাইফর আরো কাছে এগিয়ে আসে।তাদের মধ্যে শুধুমাএ একটু ফাক।রাইফার বুকের ভেতর খুব জোরে টিপ টিপ শব্দ হচ্ছে।তার হৎপিন্ডের এই শব্দ খুব মনোজক সহকারে শুনছে অচেনা লোকটি।রাইফা ভয়ে কোন কথা বলছে না। চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে তার মুখে আচড়ে পড়া লোকটির নিশ্বাস।

খান বাড়ির ডান দিকটা একটু অন্ধকার তেমন কোন আলো নেই।জামাল খানের বিষয়টি চোখে পড়ে তাই তিনি লাইটিং এর লোকদের ডেকে দেখিয়ে দেয় যেন এই দিকটায় বেশি করে আলো লাগানো হয়।পুরো বাড়ির কানায় কানায় আলো থাকবে।
তার একমাএ মেয়ের বিয়ে কোন খাত যেন না থাকে ।জামাল খানের কথা মত লাইটিং এর ব্যাবস্থা দেওয়া হয় বাড়ির ডান দিকটায়।

বদ্ধ রুমে আছে রাইফা আর অচেনা লোকটি এখোনো আগের মতো দাড়িয়ে আছে।হঠাৎ কাচের জানালা ভেদ করে কিছু আলো রুমে ডুকে পড়ে।এই হালকা আলোয় রাইফা লোকটিকে দেখার জন্য আকুল হয়ে যায় কিন্তু মুখের অবয়টি কিছুতেই দেখা যাচ্ছে না।রাইফার ছটফটের কারনে লোকটির রাইফার কোমরের অংশে নজর পড়ে। মুহূর্তেই লোকটির রাগ আকাশ চুম্বুক হয়ে যায়।লোকটি রাইফাকে রেখে জালালর কাছে এগিয়ে যায় আর জানালার পর্দাটা ভালো করে দিয়ে দেয়।যেন কোন আলো রুমে প্রবেশ না করে।রাইফা সুযোগ বুঝে যেই পালাতে যাবে তার আগেই লোকটি তাকে হেচকা টানদিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।

_ আমার কাছে আসলেই পালাই পালাই তাই না। তোমাকে আমি বারন করা সত্বেও তুমি ছেলেদের সাথে তো বেশ হেসে হেসে কথা বলেছো।আর বলেছিনা মার্জিত ভাবে আসবে তুমিতো একদম সবকিছু দেখাতে দেখাতে এসেছো।আমার কথা কি তোমার কানে যায় না।(চিৎকার দিয়ে)

রাইফা বুঝতে পারে লোকটি তার উপর অধিকার খাটাতে এসেছে। ছোট থেকে তার এই বিষয় টি ভালো লাগেনা তাই সে প্রচন্ড রেগে যায়।রাগের মাথায় বলে বসে,
_আমার জীবন, আমার ইচ্ছা, আমি যা খুশি তাই করবো আপনার কি।একদম অধিকার দেখাতে আসবেন না।আমি আপনাকে কিন্তু আর ভয় পাইনা।(রেগে)
_তোমাকে আমি কি বলেছিলাম মনে আছে, তোমার জীবন এখন আমার জীবনের সাথে মিলবে।তাহলে কেন তুমি আমার কথা বুঝনা।(রেগে)
_ এই সরুন সামনে থেকে। আপনি বলেছিলেন না অনিকের সাথে আমি যেন কোন সম্পর্ক না রাখি।আমি আপনাকে বলছি আমি অনিককে বিয়ে পর্যন্ত করবো।দেখি আপনি কি করেন।
_আমি তো অনেক কিছুই করবো।কিন্তু তুমি এখন কি করবে।তোমাকে আমি বলেছিলাম না ঠোঁটে এইসব রং কম মাখবে।পরিষ্কার করো তাড়াতাড়ি এই রং।
_করবো না আমি। কি করবেন আপনি।
_ আমি কি করবো তা এখনি দেখতেই পাবে।

লোকটি আর কোন কথা না বলে রাইফার দুই হাত পেছন থেকে মুচড়ে ধরে আরেক হাত দিয়ে রাইফার চুলগুলো আকড়ে ধরে। রাইফার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।রাইফা ছটফট করছে নিজেকে ছাড়াতে কিন্তু একচুল ও পারছে না।সে যত নড়াচড়া করছে লোকটি তত তাকে রুডলি কিস করছে।টানা ২০ মিনিট পর লোকটি রাইফার ঠোঁট আর হাত ছেড়ে দেয়।রাইফা রেগে হাত দিয়ে ঠোঁট মুছতে নিলেই আবার লোকটি রাইফার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।তবে এইবার লোকটি রাইফার ঠোঁটে কামড় বসিয়ে দেয়।রাইফা ব্যাথায় ছটফট করতে থাকে।তাই লোকটি রাইফাকে ছেড়ে দিয়ে রাইফার কপালের সাথে কপাল লাগিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে।রাইফা আবার হাত খোলা পেয়ে ঠোঁট মুছতে নিলেই লোকটি রাইফার হাত ধরে বলে,

_ তখন মুছতে চেয়েছিলে তাই একডোজ বেশি দিয়েছি। আবার মুছ তো আবার দিব। আমার কোন সমস্যা নেই দিতে,তুমি রাজি থাকলে বলো (হেপাতে, হেপাতে চোখ মেরে)
রাইফা আর কিছু বলেনা রেগে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।তবে লোকটির রাগ এখনো কমেনি।রাইফার কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,

_শাড়ি পড়েছো ভালো কথা। আমি।কিচ্ছু বলিনি।কিন্তু এই কোমড় পেট দেখালে কেন। খুব শখ তাইনা তবে আজকের থেকে শখটা মরে যাবে।

লোকটি এবার রাইফার কোমড়ে নিজের ধারালো নখ দিয়ে আচড় কাটে। রাইফা ব্যাথায় চিৎকার করতে নিলেই লোকটি।আবার রাইফার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। আর আরেক হাত দিয়ে রাইফার পেটে কোমড়ে আচড় কাটতে থাকে।রাইফার ঠোঁটের অসহ্য ব্যাথা তার উপর কোমরে নখ দিয়ে লোকটি আচড় কেটেই যাচ্ছে।তার চোখ জুড়ে চোখের পানির বন্য বয়ে যাচ্ছে।সে নিশব্দে কাদতে থাকে লোকটি বুঝতে পারে রাইফার অবস্থা খারাপ তাই রাইফাকে ছেড়ে দেয়।ছাড়া পেয়ে রাইফা দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায়। লোকটি কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে রাগ নিয়ন্ত্রণ করছে।

আবার লোকটা রাইফার কছে এসে তার ঠোঁটে
পাগলের মতো চুমু খেতে থাকে। রাইফার একটু ও নড়ছে না।তার শরীর জুড়ে ক্ষত গুলো ভিষণ জ্বালা করছে। এবার লোকটা হাটু ভেঙ্গে রাইফার সামনে বসে।তারপর পাগলের মতো রাইফার কোমড়ে পেটে কিস করতে থাকে।রাইফার এবার কিছুটা নড়ে চড়ে উঠে।লোকটির মাথার চুলগুলো খামচে ধরে।নিজেকে সরাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু লোকটির কাছে আবদ্ধ রাইফা কিছুতেই নিযেকে ছাড়াতে পারছে না। আজানা অনুভূতি গুলো বারবার কড়া নারছে লোকটি রাইফার অবস্থা বুঝে তাকে ছেড়ে দেয়।
এবার লোকটি রাইফাকে অবাক করে দিয়ে রাইফার শাড়ির আঁচলের দিকটার কুচি গুলো খুলতে থাকে। তারপর রাইফার হাতের দিকটায় কুচি গুলো ছেড়ে দেয়।এবার রাইফার হাত দুটো পেছনে নিয়ে একটা কাপড় দিয়ে বেধে দেয়।লোকটি মুখে মাক্স পড়ে নেয়।পাশে থাকা টেবিল থেকে কিছু মেকাপ নেয়।রাইফাকে নিয়ে লোকটি জানালার সামনে দাড় করায়।আর জানালার পর্দা সরিয়ে দেয় হালকা আলো ঘর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।তারপর নিজ হাতে রাইফাকে সাজাতে থাকে।রাইফা অবাক হয়ে লোকটির কান্ড দেখছে। মুখের মধ্যে হালকা পাউডার, হালকা লিপস্টিক,দিয়ে সাজিয়ে দেয় রাইফাকে।চুল গুলো আবার সুন্দর করে চিরনি দিয়ে আঁচড়ে দেয়।রাইফার দিকে লোকটি মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কিন্তু তা রাইফা দেখছে না।কেননা লোকটি হুড়ি জ্যাকেট পড়া।তাই তাকে কোন ভাবেই বুঝতে পারছে না সে।লোকটি রাইফার ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেয়ে রাইফার দিকে তাকিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে বলে,

_আমার শত আঘাত, ক্ষত আমি মুছে দেব আমার ভালোবাসা দিয়ে।যদি আমার কথা মত চলো তবে আমার ঘরের রানী করে রাখবো।তোমার এইসব জেদ আমাকে বারবার বাধ্য করে আমার হিংস্র রুপ দেখাতে।তাই ভেবে চিনতে কাজ করো।

লোকটি এবার রাইফার হাতের বাধন খুলে দিয়ে দরজার সামনে নিয়ে দাড় করায় দরজা টা খুলে দিয়ে রাইফার কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে বলে,
_ যাও মনপাখি, অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাচ্ছে।হয়তো তোমাকে সবাই খুজছে।

রাইফা অবাক হয়ে লোকটির দিকে তাকিয়ে আছে।কেন যানি তার প্রতি মায়া লাগছে তার।তবু্ও নিজেকে সামলে দরজা থেকে দৌড় দেয় সে।যেন পালাতে পারলেই বাচে।

আর লোকটি তাকিয়ে আছে রাইফার যাওয়ার পানে তাকিয়ে।নিজের মনে কেমন যেন শূন্যেতা বিরাজ করছে।
_তোমাকে তো আমি যেতে দিতে চাইনা মনপাখি।আমি চাই তুমি আমার নিড়ে থাকো ।
#আমার_মনপাখি
#পলি_আনান
#পর্ব – ১৪

রাইফা লোকটির হাত থেকে ছাড়া পেয়ে দৌড়ে অনুষ্ঠানে পৌছে যায়।বাড়ির চারিদিকে গান চলছে।মানুষের কোলাহল। পুরো বাড়ি মুখর হয়ে আছে।রাইফা রাইসাকে খুজছে।তার গলা শুখিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।মনে হচ্ছে এখনি নিজের শরীরের ভর ছেড়ে দেবে।এই মুহূর্তে রাইফার মনে দাঁড়িয়ে থাকা তার জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ।নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে সামনে থাকা চেয়াটিতে বসে পড়ে রাইফা।ক্লান্ত শরীর চোখ নিয়ে রাইসাকে খুজে যাচ্ছে রাইফা।শরীরটার ভর আর নিজের মধ্যে সামলে রাখতে পারছে না সে।ক্লান্ত শরীরটা অজানা কারো কাধের উপর ভর ছেড়ে দেয়।রাইফার ক্লান্ত শরীরটাকে কেউ সযত্নে আকড়ে ধরে।রাইফার চোখগুলো বারবার বন্ধ হয়ে আসছে তবুও কার বাহুডোরে সে আছে তা দেখার জন্য চোখ গুলো অনেক কষ্টে খোলার চেষ্টা করছে।তার চোখ বার বার ঝাপসা হয়ে আসছে।কানে আসছে পরিচিত কারো শব্দ।যে তাকে পাগলের মতো ডেকে যাচ্ছে।তবু্ও রাইফার মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছে না।নিজের ঝাপসা চোখে সেই পরিচিত মানুষটিকে দেখে ,নিজের শরীরের সমপূন্ন ভার ছাড়ার আগে রাইফা বিড়বিড় করে বলে,
_ আ….হা…দ,, ভা..ই, আ….মি,, বা…সায় যা
..ব।

🌿🌿🌿

রাত ৯ টা।পুরো বাড়ি নিরিবিলি। চৌধুরী বাড়ি আর মির্জা বাড়ির সদস্যরা এখনো খান বাড়িতে।আহাদ রাইফার রুমে রাইফার পাশে বসে আছে।ঘুমন্ত রাইফার দিকে তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে।
বিয়ে বাড়িতে আহাদ রাইফাকে দেখে খুব বিদস্ত অবস্থায়।তার আগের সাজ আর পরের সাজের মিল খুজে পায়না আহাদ।তাকে দেখে মনে হয় এখনি সেন্সলেস হয়ে যাবে তাই তাড়াতাড়ি রাইফার পাশে গিয়ে বসে পড়ে।রাইফাকে পাগলের মতো ডাকতে থাকে। আর সে সময় রাইফা সেন্সলেস হয়ে যায়।তাকে বাসায় আনার সময় শিহাব আর রাইসা আহাদের সাথে আসতে চেয়ে ছিল।কিন্তু আহাদ তাদের বারন করে না আসতে।আর কাউকে বিষয় টা না জানাতে বলে।রাইফাকে বাড়ি এনে রাইফার রুমে শুইয়ে দেয় আহাদ।তার মনে জন্ম নিয়েছে হাজার প্রশ্ন।রাইফার এ অবস্থা কি করে হলো।তার চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে ভিষণ ভয় পেয়েছে।অনেক্ষন কেদেছে।আহাদের সকল প্রশ্নের উওর পাবে রাইফার সেন্স আসার পর। আহাদ রাইফার পাশে বসে তার হাত দুটো আকড়ে ধরে।রাইফার হাতে সযত্নে কিস দিয়ে বলে,

_ এভাবে কাছে তোমায় সারাজীবনের জন্য চাই।যদি তুমি আমার মনের ভাষা বুঝতে তবে এই জিবনে চাওয়ার আর কিছুই থাকতো না।

আহাদ রাইফার পাশ থেকে উঠে গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়ায়।পুরো কালো আকাশ টায় একটি মায়াবি চাঁদ ফুটে আছে।কিছু তারা জ্বলজ্বল করছে।চাঁদের আলোয় চারপাশ মনমুগ্ধ কর লাগছে।আহাদ ভাবতে থাকে এই মূহুর্তটা অন্য রকম হতে পারত তার পাশে রাইফা থাকতো।দুজনে মিলে চন্দ্রবিলাশ করতো।কিন্তু রাইফা তার কাছে আছে তবে ঘুমন্ত।আবেগ প্রকাশের নেই কোন সুযোগ।নেই কোন ভালোবাসি বলার মূহুর্ত।রাইফা নাইবা ভালোবাসলো তবে নিজের ইচ্ছার মূহুর্তটা তো পূরন করতে পারে আহাদ।তাই সে রাইফার রুমে গিয়ে জানালার পর্দা গুলো সরিয়ে দেয়। রুমের লাইট টা অফ করে দেয়।চাঁদের আলোয় রাইফার মুখখানা আরো মায়াবী লাগছে।আহাদ রাইফার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,

_ নাই বা পাশে বসে চাঁদ দেখলাম।ঘুমন্ত তোমার চেহারায় মায়াবী চাঁদের আলোর এই মোহময় মূহুর্তের ভালোবাসার অপেক্ষায় রইলাম আবার।

🌿🌿🌿🌿

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠনে বিভিন্ন বয়সের ছেলে মেয়েরা নাচ করছে।রাইসা ক্ষনে ক্ষনে ফোপাচ্ছে। সে যেন এই মুহূর্তে কেদে দিবে।কিছুক্ষন আগেও কেদে কেদে চোখ ভাসিয়েছে।শিহাব তাকে কিছুতেই শান্ত করতে পাচ্ছে না।শিহাব রাইসার মাথায় হাত দিয়ে বলে,
_ প্লিজ তুমি কেদো না,আমার দোহায় লাগে।তোমার কান্না দেখে আমার ও কান্না পাচ্ছে।

শিহাবের কথা শুনে রাইফা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।রাইসার তাকানোর ভাব দেখে শিহাব বলে,

_কি হলো এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো।তুমি কেদোনা প্লিজ।আর কতো কাদবে আমি আহাদের সাথে কথা বলেছিতো।রাইফা একদম ঠিক আছে তুমি যদি এভাবে কাদো তবে সবাই সন্দেহ করবে।এবারের মতো থামো প্লিজ।

রাইসা শিহাবের কথা শুনে থেমে যায়।এবার শিহাব রাইসাকে অবাক করে দিয়ে রাইসারএলো মেলো চুলগুলো ঠিক করে আর বলে,

_দেখেছো কেদে কেদে মুখটা কেমন করেছো। পুরো পেত্নি লাগছে। কতো সুন্দ্র চুল গুলো কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে।দাঁড়াও আমি ঠিক করে দেই।

শিহাব সযত্নে রাইসার চুল, ঠিক করে দেয়।আর রাইফা অবাক হয়ে শিহাবের কান্ড দেখছে।রাইসার চাহনি দেখে শিহাব মুচকি মুচকি হাসছে।

🌿🌿🌿🌿

_ তুমি কি আমাকে সত্যেটা বলবে।নাকি আমি সত্যেটা খুজে বের করবো।(শান্ত ভাবে রাইফার চোখের দিকে তাকিয়ে আহাদ)।

আহাদের কথা শুনে রাইফা ভয়ে একবার ঢোক গিলে। সে বুঝতে পারছে তার আজ আর রক্ষে নেই।সে আহাদের খবর জানে, একবার কোন বিষয়ে সন্দেহ হলে তা খুটিয়ে খুটিয়ে বের করে ছাড়বে।তবুও নিজেকে বাচাতে অভিনয় করে রাইফা বলে,
_ আ…..আমার কি হবে আহাদ ভাই। আমি একদম ঠিক আছি।
_ না,, তুমি ঠিক ছিলেনা তখন।তোমাকে দেখে মনে হচ্ছিল তুমি কোন কারনে ভয় পেয়েছিলে।।

রাইফার কান দিয়ে এবার গরম ধৌয়া বের হচ্ছে।কপাল জুড়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম চিকচিক করছে।বুকের ভেতর কেউ যেন হাতুড়ি পেটাচ্ছে।সেই শব্দ পুরো রুমজুড়ে তাল মেলাচ্ছে। এলোমেলো লাগছে তার সবকিছু। বলতে গিয়েও বলতে পারছে না কোন কথা। মাছের কাঁটার মতো কথাগুলো তার গলায় বিধছে। রাইফার যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন সে আহাদকে তার পাশে দেখতে পায়।পুরো বাড়ি এখনো নিস্তব্ধ। কেউ এখনো বাসায় ফিরেনি। কিচ্ছুক্ষণ পর আহাদ রাইফাকে জেরা করা শুরু করে,তারপর থেকেই বেচারির অবস্থা ভয়ে করুন।

_ তোমার মুখ থেকে কথা বের হচ্ছেনা কেনা। আমি এত বার প্রশ্ন করছি ।(ধমক দিয়ে আহাদ)
_ আ…..মি….. আ…..মি।
_ কি আমি আমি করছো তখন থেকে।,তুমি যদি সত্যে টা না বলো তবে আমি এখনি বিয়ে বাড়ি থেকে সবাইকে খবর দিয়ে আনবো।এখন বাজে রাত ১০.২০। তারা আসতে আসতে ১২.৩০ তো বাজবেই।আমি যদি এখন খবর দি তবে তুমি ঠিক করেই বুঝতে পারছো কি হবে।

আহাদের কথাগুলো রাইফার জন্য একেক টা আগুনের ফুলকির মতো লেগছে।তার পুরো শরীর জ্বলে উঠে আহাদের কথা শুনে।নিজেকে বাচাতে উপায় খুঁজে পাচ্ছেনা সে।বিপদের সময় মনে হয় কোন বুদ্ধি মাথায় আসেনা।সব এলোমেলো লাগে,কথা বলার ভাষা গুলো ও হারিয়ে যাচ্ছে।কোন কথা থেকে কোন কথা সাজাবে ভেবে পাচ্ছেনা।ঘামে তার পুরো শরীর ভিজে যাচ্ছে।আহাদ রাইফার দিকে সুক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে সে বরশিতে মাছ ধরছে। মাছের দিকে সে তাকিয়ে আছে টোপ ফেলে ধরার উদ্দেশ্য।

_ কি হলো বলবে নাকি আমি সবাই কে খবর দিয়ে আনাবো।তখন মুখথেকে ঠিকিই সব কথা বের হবে।(রাইফার দিকে এগোতে এগোতে)
_ আ……আসলে আমি যখন ওয়াশরুমে যাই তখন কেউ আমার সাথে অশভ্যতা করা চেষ্টা করে আর আমি পালিয়ে আসি।বাকিটা আমার আর মনে নেই।

রাইফার কথা শেষ হয়ে দেরি হলো কিন্তু তার গালে চড় পরতে দেরি হলো না।আহাদের চোখ গুলো ভিষণ লাল হয়ে গেছে।কপালের রগ ভেসে উঠেছে। হাত মুষ্টি বদ্ধ করে আছে।রাগে তার পুরো শরীর কাপছে।আর রাইফা চড় খেয়ে কিছুদূর ছিটকে যায়।সে ফ্যালফ্যাল করে আহাদের দিকে তাকিয়ে থাকে।যেন সে কিছুই বুঝতে পারছে না তার সাথে কি ঘটে গেল।যখন বুঝলো তখন হাটু মুড়ি দিয়ে কান্না শুরু করে।আহাদের রাগ কিছুতেই কমছে না। সে রাইফাকে টেনে বিছানা থেকে নামিয়ে চিল্লিয়ে বলে,

_ তোমায় আমি বলেছিলাম না এমন করে সেজে তুমি বাড়ির বাইরে যাবেনা কিন্তু তুমি কি করলে আমি বারন করা স্বর্তেও নাচতে নাচতে চলে গেলে কেন এখন ভালোলাগছে না। এখন ভয় পেলে কেন আর কাদছোই বা কেন।(রাইফার কান্না মাখা চোখের দিকে তাকিয়ে চিল্লিয়ে বলে আহাদ)

আহাদ রাইফার সামনে থেকে সরে গিয়ে সামনের টেবিল থেকে একটা ফুলদানি নিয়ে নিচে আছাড় মারে।ভাঙ্গার শব্দে রাইফার পুরো শরীর কেপে উঠে।আহাদ আরেকটা ফুলদানি হাতে নিতেই রাইফা গিয়ে আহাদের বুকে ঝাপিয়ে পরে। আর আহাদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাদতে থাকে।রাইফা বুঝতে পারে আহাদের রাগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে হয়ে গেছে তাই সে ছোট বেলার মতো আহাদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
রাইফা তাকে জড়িয়ে ধরার কয়েক সেকেন্ড সে স্তব্ধ হয়ে যায়।যখন বুঝতে পারে রাইফা তাকে জড়িয়ে ধরেছে তখন ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি ভেসে উঠে।আহাদ মনে মনে বলে,

_ছোট বেলার কথা তোমার এখনো মনে আছে।আমি যখনি রেগে যেতাম তুমি তখনি আমায় জড়িয়ে ধরতে।আর তখনি আমার রাগ পানি হয়ে যেত।
কিছুক্ষণ পর রাইফা আহাদকে ছেড়ে দেয়।আর আহার রাইফাকে ঔষুধ এনে খাইয়ে দেয়।এভাবে কেটে যায় আরো কিছু মূহুর্ত।

🌿🌿🌿🌿
সকাল ৭ টায় ঘুম ভেঙ্গে যায় রাইফার।বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে খেয়াল করে তার পেটে কোমড়ে ক্ষত স্থানে কোন ব্যাথা নেই। রাইফা আনমনে বলে,
_এটা কি হলো কাল যখন আহাদ ভাইয়ের সাথে কথা বললাম তখনো ক্ষত স্থানে ব্যাথা ছিল তাহলে এখন ব্যাথা নেই কেন।

রাইফা নিজের কোমড়ে পেটে হাত দিয়ে চমকে যায়।না কোন ব্যাথা নেই। তাহলে ব্যাথা সেরে গেল কেমনে। রাইফা এইসব ভাবতে ভাবতে বালিশের পাশ থেকে ফোন নিতে যায়। সে দেখে ফোনের নিচে একটা কাগজ। কাগজ টা খুলে দেখে লেখা আছে,

“আমি জানি কাল আমি তোমাকে বেশি আঘাত করেছি।কিন্তু কি করবো বলো। তোমার আচরন দেখে আমার মাথায় আগুন লেগেযায়।তাই একটু ব্যাথা দিয়েছি।যদি ভবিষ্যতে আবার এমন করো তবে আরো ভয়ংকর কিছু তোমার জন্য অপেক্ষা করবে।আর ক্ষত স্থানে আমি মলম লাগিয়ে দিয়েছি।আশা করি ব্যাথা কমে যাবে।ভালো থেকো মনপাখি।”

রাইফা লেখা গুলো পড়েই কাগজটা কুচিকুচি করে ডাস্টবিনে ফেলে আর বলে,
_ বদমাইশ লোক তুই একটা নেকড়ে কোন ছেলে। এতো বড়ো নখ রাখে। তোর হাতে এতো বড় নখ থাকে কেন।তোর জীবনে বিয়ে হবেনা অভিশাপ দিলাম।

লেপটপের স্কিৃনের দিকে তাকিয়ে অচেনা লোকটি রাইফার কান্ড দেখে হাসতে হাসতে বলে,

_তোমার কারনে নেকড়ে আর পিচাশ ও হতে পারি।যদি তুমি বলো বিড়ালের মত থাকবো তবুও আমার তোমাকে পেলেই হবে।(বাকা হাসি দিয়ে)

🌿🌿🌿
সকাল ৯ টা।যানজটে আটকে আছে রাইফা। তার গর্ন্তব্য ভার্সিটি।আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস আছে তাই সে যাচ্ছে। তা না হলে অনিকের থেকে বাচতে সে কিছুতেই সে ভার্সিটি তে যেত না। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস্টাও মিস দেয়া যায় না।বাসয় আজ তাকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়েছে। সবাই যানতে চেয়েছে কেন সে কাল এতো তাড়াতাড়ি চলে এসেছে।সবাইকে সে বলেছে তার হঠাৎ জ্বর হয় তাই চলে এসেছে। অবশ্য বাড়ির সবাইকে মেনেজ করতে রাইসা তাকে হেল্প করেছে।

রাইসা দোয়া পড়তে পড়তে ভার্সিটিতে ডুকে। যেন অনিকের সাথে না দেখা হয়,কিন্তু সে গেটে ডুকেই যা দেখে তা দেখে ভয়ে একবার ডোক গিলে।

চলবে……

(ভুলগুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)
চলবে…….

(ভুলগুলো ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here