#আমি_সেই_তনু
#১৬পর্ব
#জান্নাত_উল_ফেরদৌস
হঠাৎ একটা ছেলে আমাকে তনু বলে ডাকলো আমি বেশ অবাক হলাম…
ছেলেটা আমার কাছে ক্ষমা চাইছে। আমি পাত্তা না দিয়ে ছেলে টা রেগে যায় একপর্যায় আমাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে । আমি যখন চা*কু বের করি তখন ছেলেটা ঘাবড়ে যায় ,আমি কিছু বলার আগেই ছেলে টা আমার মুখের দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলে আরে তার থুতনি তে সেই তিল টা কোথায়?? তার মানে তুমি তনু না ,im sorry
আমি বুঝলাম ওইটা তনুর পরিচয় জিজ্ঞাসা করতে সে আমাকে সব খুলে বললো, ছেলেটা তোমার আশিক শুনে মনে মনে বেশ খুশি হলাম । আমি আকাশ কে ভালোবাসি সেটা ইরফান কে খুলে বললাম যে তোমাকে কিডন্যাপ করবো তার পর ইরফানের হতে তুলে দেবো সেই অনুযায়ী আমরা এগুলাম।
দেখো সেই রাতে ই আমি আমার থুতনি তে তিল এর মত এই ট্যাটু টা করিয়েছি , শুধু মাত্র আকাশ কে পাওয়ার আশায়।
পরদিন সুযোগ বুঝে তোমাকে স্কুল থেকে কিডন্যাপ করলাম , নিয়ে আসলাম এখানে আর আমি তুমি সেজে আকাশের সাথে চলে গেলাম। জানো আকাশ আমাকে অনেক ভালোবাসে ।
কথাটা শুনে হাহা করে এসে উঠলো!! আকাশ ভাইয়া তোমাকে না জলি, আকাশ ভাইয়া আমি ভেবে তোমাকে ভালোবাসছে, যেদিন জানতে পারবে ওটা তোমাকে কুকুরের মত তাড়িয়ে দিবে।
কথা টা শুনে জলি রেগে আগুন হয়ে গেলো, তনু কে একটা থা*প্পর মা*রলো , জলি আবার বলতে শুরু করলো…
সেটা আর কোনো দিনও হবে না , তুমি যদি কখনো কোনো দিন পালানোর চেষ্টা করো না আকাশের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করো আমি আকাশ কে ও শেষ করে দেবো । কারণ যা আমার নয় টা আর কারোর নয়।
আর তুমি চিন্তা করো না, এইযে মরিয়ম ওকে আমি অনেক টাকা দিয়েছি তার বিনিময় ও আমাকে শিখিয়ে দিবে কিভাবে তনু সেজে থাকা যায়।
তনু মরিয়ম কে দেখে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে বলে , কেনুরিয়ম খালা? বরোখালামনি তো তোমাকে নিজের বোনের মতো দেখতো কখনো কাজেরলক ভাবে নি আমিও তো নিজের মায়ের মত ই ভালবাসতাম!!
মরিয়ম: রাখেন আপনার ভালোবাসা টাকায় সব হয় ।
তনু আর কথা বাড়ালো না।
তনু একটু থেমে আবার আকাশ কে বলতে শুরু করলো। কয়েকটা লোকের সামনে নিয়ে যাওয়া হলো আমাকে, একজন খুব চড়া দামে কিনে নিলো আমাকে । পর দিন আমাকে চিনে নিয়ে যাবে।
ইরফান কেনো জানি এসব নিতে পারছিলো না কারণ আমাকে ওর হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। সেদিন রাতে ইরফান স্যার আমাকে পালাতে সাহায্য করে , রাতের আধারে জানিনা কতটা দৌড়েছি কত ছুটেছি দৌড়াতে দৌড়াতে একটা হসপিটালে এসে অজ্ঞান হয়ে জাই । পরদিন চোখ খুলে আমি আমার এই ডাক্তার বাবা কে দেখতে পাই। আমার কি হয়েছিল জানতে চাইলে ওনাকে সব খুলে বলি উনি বুঝতে পেরে আমাকে ওনার বাসায় নিয়ে আসে , তখন থেকে এখানে ই আছি।
স্কুল এর প্রিন্সিপাল কে ব্যাপার টা জানাই এবং গোপন রাখার জন্য রিকোয়েস্ট করি , উনি বেপার টা বুঝতে পারে। আর আমি ভালো ছাত্রী হওয়াতে সে আর কোনো আপত্তি করে নি আমাকে পরীক্ষা নির্বিঘ্নে দেওয়ানোর ওয়াদা করে।
জলি পড়াশোনায় ভালো না হওয়ায় ওকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া বেশ অসুবিধা হয় নি স্যার এর।
কিছুদিন পর জানতে পারি ওরা ইরফান কে মেরে ফেলেছে!!
আমি কোনো মতে এসএসসি টা দিয়ে এখানে চলে আসি, বাবার হসপিটালে নার্স হিসেবে কাজ করি এখন ।
আকাশের চোখ দুটো পানিতে ভিজে গেছে , তনুর মুখ টা হাত দিয়ে আলতো করে ধরতেছে, কপালে একটা চুমু খেয়ে , কেনো তুই আমার সাথে যোগাযোগ করিস নি তনু তুই জানিস আমি প্রতিদিন একটু একটু করে মরেছি !! জলি যত ই তনু সাজুক আমি তার মধ্যে তোকে খুঁজে পায়নি খুব কষ্ট হতো এটা ভেবে তুই কেনো এতো বদলে গেলি এটা ভেবে।
তনু কান্না জড়িত কন্ঠে , আপনার কোনো দোষ নেই ভাইয়া । আমি জানি আপনি নির্দোষ।
তনুর পালিত বাবা কে নিচে নামতে দেখে তনু একটু দূরে সরে দাঁড়ায় আকাশের থেকে।
ডাক্তার: তবে তুমিই আকাশ? জার জন্য আমার মেয়ে টা প্রতিদিন চোখের জল ফেলত। You look handsome young man!
আকাশ : thanks auncle! আচ্ছা তনু কিন্তু এই জলির ডিএনএ তোর বাবার সাথে ম্যাচ করে কি করে?
তনু: আমি আর বাবা সেই খবর ও নিয়েছি, মনে আছে আপনার সাথে ঘুরতে যাওয়ার সময় একটা হসপিটাল দেখিয়ে বলতেন এখানে আমি হয়েছিল। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সেদিন আমার আগে আমার আর একটাও বোন হয়েছিল।
এর পর কি হয়েছিল সেটা বাবা মা বলতে পারে।
আকাশ: কই আমরা যখন হসপিটালে পৌঁছেছিলাম , শুধু তোকে একা ই পেয়েছিলাম , তখন আমার 10বছর বয়স ছিল সবই তো বুঝতাম!!
তনু : এর উত্তর এক মাত্র বাবা ই দিতে পারবে।
আকাশ: তুই আমার সাথে চল
তনু : আজ না ভাইয়া, এখন আপনার সাথে গেলে ,জলি যদি কোনোভাবে জানতে পারে। বড় খালামনি বা রোহিত আঙ্কেল এর বিপদ হতে পারে। সব প্রমাণ রেডী করে আইনের আশ্রয় নিয়ে ওদের না জানিয়ে যেতে হবে।
আকাশ তনুর কথায় শায় দিয়ে গাড়ী নিয়ে বেরিয়ে পড়লো রনির কাছে।
পুলিশ কে অনেক অনুনয় বিনয় করে দেখা করলো রনির সাথে।
রনি আজকাল অনেক বদলে গেছে, কেমন নেতিয়ে পড়েছে!! আকাশ কে দেখে ই জিজ্ঞাসা করলো , কেমন আছো বাবা?
আকাশ: ভালো, আপনাকে আমি কিছু কথা জিজ্ঞাসা করবো আশা করি সত্যি সত্যি উত্তর দিবেন?
রনি: কি কথা বাবা?
আকাশ: সেদিন হসপিটাল এ তনুর একটা যমজ বোন ও হয়েছিল সে কোথায় বলুন!?
এই কথা শুনে রনি ঘাবড়ে যায় , নিজের পাপের কথা মনে পড়ে যায়। দুই চোখে অশ্রু মিশ্রিত অবস্থায় আকাশের কাছে অনুনয় করে বলতে থাকে …
আমি পাপ করেছি বাবা , আমি পাপী আমাকে ক্ষমা করো !!
আকাশ: দেখুন আপনি সত্যিই টা না বললে আমি জানবো কি করে? সত্যি টা বলে নিজের পাপ কে একটু হলেও কমানোর চেষ্টা করুন!?
রনি অশ্রুসিক্ত চোখে, সেদিন আমার দুইটা বাচ্চা জন্ম হয় । দুই টা বাচ্চা ই ভীষণ সুন্দর , সেদিন হসপিটালে আমার এক নারী ব্যাবসায়ী বন্ধু ও আসে , আমি একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে আমার বন্ধু কে দেখাই সে আমার ঐ বাচ্চা কে ভীষণ পছন্দ করে এবং অফার করে বাচ্চা টা তাকে বিক্রি করে দিতে সে আমাকে এত টাকা অফার করে যে নিজের মানুম বাচ্চা টা বিক্রি করে দিতে ও পিছু পা হই নি আমি আর একটা ও দিয়ে দিতাম কিন্তু তোমরা এসে যাওয়াতে আমি আর পারি নি ।
তার পর কি হয়েছে আমি কিছু ই জানিনা বাবা।
আপনার সেই মেয়ে এখনো বেঁচে আছে একজন সিরিয়াল কিলার হয়ে নাম জলি । হয়তো আপনার সেই বন্ধু ই ওকে এইভাবে তৈরি করেছে। আপনার জন্য আজ তিন টা জীবন ক্ষতির সম্মুখীন…. আচ্ছা আজ উঠি আবার দেখা হবে।
রনি : আমার তনু কেমন আছে বাবা?
আকাশ কিছু বলতে গিয়ে ও আবার বললো না।
বেরিয়ে গাড়িতে উঠলো, ড্রাইভ করতে করতে ভাবছে জলি কে এক্ষনি কিছু জানানো যাবে না ওকে শিক্ষা দিতে ওর ফাঁদে ওকে ই ফেলতে হবে….
চলবে?
(কাল লিখতে লিখতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম 😐)