#আমি_সেই_তনু
#১৭পর্ব
#জান্নাত_উল_ফেরদৌস
আকাশ বেরিয়ে গাড়িতে উঠলো, ড্রাইভ করতে করতে ভাবছে জলি কে এক্ষনি কিছু জানানো যাবে না ওকে শিক্ষা দিতে ওর ফাঁদে ওকে ই ফেলতে হবে….
গাড়ি নিয়ে বাসায় ফিরে আসলো আকাশ,জলি আকাশকে দেখেই খুব খুশি হল। এমনিতেই সব সময় নিয়ে বিনিয়ে আকাশের এটেনশন নিতে চাইতো । আজও তার ব্যতিক্রম হলো না, এমনিতে প্রতিদিন আকাশ জলিকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করত। আজ আকাশ ইচ্ছা করেই জলি কে বলল, জানিস তুই যে পুরনো তনু থেকে বেরিয়ে আধুনিক করছিস এটা আমার ভীষণ ভালো লাগছে। আমি চাইনা তুই আর পুরনো তোর মত সেকেলে থাক তুই আরো আধুনিক হ তবেই তো আমার সাথে মানাবে।
জলি: তুমি ঠিক বলছো ভাইয়া আমি পুরনো তনুর মত না থাকলে তুমি আমাকে আরো ভালোবাসবে?
আকাশ: হ্যাঁ বাসবোই তো, তুই যদি পুরনো সেকেলে থাকিস তবে আমার পাশে তোকে মানাবে কি করে। ওরকম সেকেলে কত তনু তো আকাশকে ভালোবাসে…..
জলি যেন খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছে।
আকাশ আঙুল দিয়ে জনের মুখ স্পর্শ করে মুচকি হাসি দিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে গেল।
লতিফার ঘরে গিয়ে দেখল লতিফা কুরআন পড়ছে।
আকাশ: আসবো মা
লতিফা: আয়
মা তুমি নিজের শরীরের যত্ন নিচ্ছ না এমন অসুস্থ দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?
লতিফা: জানিনা রে বাবা হয়তো বয়স হচ্ছে তাই শরীরটা এমন নীতিয়ে পড়েছে। আজকাল কিছুই ভালো লাগেনা।
আকাশ: আমি জানি মা তোমার কেন কিছুই ভালো লাগেনা আমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিব তবে এখন চুপচাপ থাকতে হবে।
লতিফা: কী উত্তর বাবা? কি বলবি
আকাশ: মা আসলে আমাদের বাড়িতে যে আছে সে তনু না অন্য কেউ ওর নাম জলি ও আমাদের তনুকে কিডন্যাপ করেছিল দুই বছর আগে তারপর থেকে এখানে তনু সেজে আছে।
লতিফা: তুই এইসব কি বলছিস আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না আমার তনু কোথায়?
আকাশ: না চিন্তা করো না তনু এখন ভালো আছে। আকাশ লতিফাকে তনুর ঠিকানা বলল, তনু এখন আর পালিত বাবার কাছে আছে তারপর আকাশ লতিফাকে সব খুলে বলল।
লতিফা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বললো, ওরা আমার তনুকে কোথায় নিয়ে রেখেছিল কি করেছিল? তাইতো আমার বারবার মনে হতো এটা আমার তুলনা এটা অন্য কেউ।
আকাশ : এখন চুপচাপ থাকো, সময় হলে সব ধরা পড়বে।
দরজার পেছন থেকে মরিয়ম সব শুনেছে। আকাশ লতিফা খেয়ালই করেনি যে মরিয়ম উঁকি দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।
আকাশ লতিফার ঘর থেকে বের হওয়ার সময় লতিফাকে বলে যায়, মা আমি এখন প্রীতির কাছে যাচ্ছি সব সত্যিটা জানা আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ কেন এমন জঘন্য কাজ করল তার উত্তর ওকে দিতেই হবে।
বলে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো আকাশ।
গাড়ি নিয়ে সোজা প্রীতির বাড়িতে রওনা হলো।
প্রীতি আর নির্ভীক কে বিয়ে করেছে একটা সুন্দর ফুটফুটে কন্যা সন্তান হয়েছে প্রীতি এখন নিজের সংসার ঘর নিয়ে ব্যস্ত। আকাশের গাড়ি প্রীতির বাড়ির সামনে এসে থামল।
প্রিতির বাসায় যাওয়ার পর আকাশ জানতে পারে প্রীতি বিয়ে করেছে নির্ভীক কে আর প্রীতি এখন ওখানেই থাকে। শুনে আকাশ খানিকটা অবাকই হয়েছে।
আবার রওনা হল নির্ভীক বাসার দিকে, নির্ভীক বাসার কলিংবেল চাপতেই প্রীতি দরজা খুলল। আচল দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে দরজাটা খুলেছে, একদম সাধারণ মেয়ের মত সংসার করছে প্রীতি দেখে বোঝাই যাবে না এই প্রীতি কত ট্যালেন্টেড স্মার্ট ছিল!!
আকাশকে দেখে প্রীতি অনেকটা হতভম্ব হয়ে যায় যেন এটা হবারই ছিল।
প্রীতি: আকাশ তুমি এখানে!?
আকাশ: হ্যাঁ আমি এখানে এতটা অবাক হচ্ছ কেন এটা তো হবারই ছিল, তাই নাকি প্রীতি!?
প্রীতি মলিন হেসে বলল আচ্ছা ঠিক আছে সব কথা হবে আগে ঘরে এসো।
আকাশ ঘরে ঢুকে সোফায় বসলো। প্রীতি দু কাপ চা নিয়ে আকাশের সামনে এসে বসলো এবং নিজে থেকেই কথা শুরু করলো। আমি জানি আকাশ তুমি একদিন এখানে আসবে, তবে আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করে নয় , আমি অনুতপ্ত। তোমার সাথে কথা বলা আমার খুব জরুরী ছিল তবে নিজের মেয়ের কথা ভেবে আর কোন ঝামেলায় জড়াতে চাইনি আমার মেয়েকে ঘিরেই এখন আমার স্বপ্ন। নির্ভীক এখন আমার ভীষণ যত্ন নেয় আসলে নির্ভীক কে বিয়ে করে আমি অনেক সুখেই আছি ওর মত স্বামী পাওয়া আসলে ও ভাগ্যের ব্যাপার।
আকাশ: কেনো করলে এমন আমার বাবা আর তোমার বাবা তো বন্ধু ছিল তোমাকে তো নিজের সন্তানের মত ভালোবাসতো তবে কেন করলে!?
প্রীতি মলিন সুরে বলল আমি জানি আমি যা করেছি তার কোন ক্ষমা নেই তবে আমি ভীষন অনুতপ্ত!! সেদিন আমি জলিকে টাকা দিয়েছিলাম ঠিকই সেটা তোমাকে পাবার জন্য, মিথ্যা মোহ জেদ এসব আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল আমি মা হতে যাচ্ছি!! আমার মাঝে যে সত্তা বড় হচ্ছিল সেটা নির্ভীকের ।
সেদিন আমি জলিকে মোটা অংকের টাকা দেওয়ার পর ও যখন তনুকে অপহরণ করে , নিজে তনু সেজে তোমাদের বাড়িতে ছিল সেদিনই আমি তোমাকে সবটা জানিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জলি আমাকে ভয় দেখায় আমার বাচ্চা নষ্ট করে দেবে আমাকে মেরে ফেলবে, আমাকে মেরে ফেলল আমার কিছু আর আসতো যেত না!! কিন্তু আমার গর্বের সন্তান।
তাই আমি চুপ ছিলাম, ইরফান আমাকে বিয়ের প্রপোজাল করে আমি খুবই অনুতপ্ত ছিলাম হতাশ ছিলাম তখন হতাশায় আমি বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। নির্ভীকের যত্ন ভালোবাসা কেয়ার এসব আমাকে বুঝিয়েছে ভালোবাসা আসলে জোর করে পাওয়ার নয়। এটা নিজে থেকেই সৃষ্টি হয়।
আমাকে ক্ষমা করো আকাশ আমি আর এই পাপের বোঝাবো এমনিতে পারছি না। বলেই কান্না করে দেয় প্রীতি তখনই নির্ভীক এর আগমন।
নির্ভীক: স্যার আপনি?
আকাশ: হ্যাঁ আমি প্রীতির কাছে সব সত্য জানতে আসলাম।
নির্ভীক: স্যার আপনি হয়তো জানেন আগের প্রীতি আর এই প্রীতির মধ্যে আপনি দুজনকে খুঁজে পাবেন না প্রীতি অনেক বদলে গেছে আমি আজকাল নিজেই ওকে দেখে মুগ্ধ হই হয়তো ওর মেয়ের জন্যই এতটা বদলেছে….
আকাশ আর কিছু বলতে পারলো না, আজ তাহলে আসি, নির্ভীক তোমাদের দুজনকে দেখে খুব ভালো লাগলো।
নির্ভীক: আবার আসবেন স্যার।
আকাশ মুচকি হেসে বেরিয়ে গেল।
বাসায় গিয়ে দেখল জলি বাসায় নেই, আকাশ বেশ অবাক হলো!! লতিফাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করল, মা জলি কোথায়?
লতিফা: দেখলাম হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেল আমি জিজ্ঞাসা করায় কোন উত্তর দিল না!!
প্রীতি মেয়ের জন্য দুধ গরম করছে এমন সময় জলের ফোন…..
প্রীতি: আর কি চাও তুমি ?আমার কাছে আর কি চাওয়ার বাকি আছে তোমার?
জলি: হাহাহাহা কিছুই না শুধু তোমাকে জানালাম ! তনুকে আমি আজ একদম পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেব, যদিও তনুকে তুমিও পছন্দ করো না। এখন তো আমাকেও তুমি পছন্দ করো না।
প্রীতি!! বুঝতে পারছে তনুর বিপদ সন্নিকটে!! প্রীতি খুব চালাক মেয়ে ভালো হয়ে গেলেও নিজের ট্যালেন্ট তো আর কমে যায়নি… চালাকের সাথে উত্তর দিল, হ্যাঁ মেরে দাও ওকে আমি তোমাকেও ঘৃণা করি কিন্তু তার থেকেও বেশি ঘৃণা করি তো ওকে কারণ আকাশ তনুকে ভালোবাসে!!
জলি: তাইতো তোমাকে জানিয়ে রাখলাম আজ ওকে শেষ করে দেব যা আমার নয় তা কারো নয়!!
প্রীতি: আমিও তনুর মৃত্যু নিজের চোখের সামনে দেখতে চাই কোথায় আছো আমি এখনই আসবো?
জলি: সত্যি দেখতে চাও!?
প্রীতি: হ্যাঁ আমি দেখতে চাই যদিও আমি ভেবেছিলাম তুমি বেঁচে নেই!! তনু বেঁচে আছে এটা ভেবেই বিছানা হতো হলাম ওর মৃত্যুটা আমি নিজের চোখের সামনে দেখতে চাই?
জলি: তাহলে চলে আসো শ্যামসুন্দর রোড পরিত্যক্ত স্টেশনের পাশে যে পুরনো বিল্ডিং টা আছে।
প্রীতি আমি এখনই আসছি, আমি আসার আগে ওকে জীবিত দেখতে চাই ওর মৃত্যুটা আমি সামনে থেকে দেখব।
জলি হো হো করে হেসে বলে উঠলো তুমি যা চাও।
তনু আপন মনে নিজের বাবাকে হেল্প করছে, তনুর বাবা তোমাকে বলল কিছু জিনিসপত্র আর কিছু ওষুধ ট্রেতে করে এনে দিতে তনু তাই করতে অন্য কেবিনের দিকে যাচ্ছে হঠাৎ পেছন থেকে কেউ তনুর মুখ চেপে ধরে রুমাল দিয়ে!! তন অজ্ঞান হয়ে যায়… তনুর হাতে ট্রে ওখানেই পড়ে থাকে…
তনুর আসতে দেরি হচ্ছে দেখে তনুর বাব , ওই ঘরের দিকে পা বাড়ায়, হঠাৎ পড়ে যাওয়ার ট্রেটার উপর ডাক্তারের পা পড়ে ট্রে দেখে ভীষণ ঘাবড়ে যায় !! তনু কোথায়!?
সাথে সাথে আকাশ কে ফোন করে, হ্যালো, আকাশ কোথায় তুমি!?
আকাশ: আমি তো আপনার কাছেই যাচ্ছিলাম আপনি হসপিটালে আছেন তো!?
ডাক্তার: আমি আছি কিন্তু তনুকে তো খুঁজে পাচ্ছিনা ওকে কেউ নিয়ে গেছে মনে হচ্ছে!!
কথাটা শুনে আকাশ যেন ভয়ে ঘাবড়ে যায!! আবার কি বিপদ বানাচ্ছে তোমার জীবনে … আঙ্কেল আমি আসছি আপনি চিন্তা করবেন না আমি আসছি। বলে ফোনটা রেখে দেয় আকাশ ।
হঠাৎই প্রীতির ফোন, হ্যালো আকাশ জলি তনু কে কিডন্যাপ করেছে শ্যামসুন্দর প্রত্যেকটা স্টেশনের পাশে যে বিল্ডিংটা রয়েছে সেখানে তুমি দ্রুত সেখানে যাও আমিও আসছি ওরা তনুকে মেরে ফেলবে!!
আকাশ: গাড়ি চালাতে চালাতে আকাশ বলল এসব তুমি কি বলছ প্রীতি আমি থাকতে আমার তনুর কিছুই হতে পারে না আমি যাচ্ছি।
ফোনটা রেখে আকাশ তাৎক্ষণা ৎ ডাক্তারকে আর লতিফাকে ফোন করে তাদেরকেও সেখানে যেতে বলে পুলিশ নিয়ে।
তনু চোখ খুলে নিজেকে একটা চেয়ারে বাধা অবস্থায় পর্যবেক্ষণ করে,,,,, একটা অন্ধকার ঘর ওপরে একটা ফুটো দিয়ে তির্যকভাবে আলো রুমে ডুকছে দরজা বন্ধ তনু ভয়ে আতকে ওঠে। কেউ আছো? প্লিজ কথা বলো কেউ আছো ? বাঁচাও আমাকে!
হঠাৎই লোহার দরজা খোলার একটা শব্দ তনুর কানে ভেসে আসে। অনেকগুলো লম্বা লম্বা ছেলে হাতে পি*স্তল
সাথে জলি, জলের চোখ গুলো লাল হয়ে আছে ভয়ংকর লাগছে জলি কে যেন আজকে সব শেষ করে দেবে জলি!!
জলি এসেছে আর টেনে তনুর সামনে বসে, তোমাকে আমি বলেছিলাম আমার আকাশের আশেপাশে তোমাকে যেন না দেখি কথাটা শুনলে না দেখলে তো তোমার মৃত্যু তোমাকে এখানে টেনে এনেছে কেউ তোমাকে বাঁচাতে পারবে না। জলের হাতে খুব ধারালো একটা চা*কু । তনু চাকু দেখে ভয় পাচ্ছে না মুচকি মুচকি হাসছে…
জলি তনুর হাসি দেখে প্রশ্ন করে উঠলো , এই মেয়ে তোমার মৃত্যু ভয় নেই!? তুমি ভয় পাচ্ছ না!??
তনু: আফসোস তুমি এখনো বুঝলে না, আকাশ ভাইয়া তোমাকে নয় তোমার চেহারার আমি কে ভালোবাসে…
এদিকে আকাশ খুব দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছে যে করেই হোক তনু তার বাঁচাতেই হবে আকাশের মাথায় শুধু এখন তনু!! এক সময় গাড়ি এসে শ্যামসুন্দর পরিত্যক্ত ট্রেন স্টেশনে থামল। পুরনো বিল্ডিং এ ঢুকতেই কারো কথা শোনা যাচ্ছে আকাশ সেদিকেই গেল। গিয়ে দেখল জলি আর তনু মুখোমুখি বসে আছে। আকাশ জোরে চিৎকার করে জলে কে মারতে যাবে তখনই কয়েকজন আকাশকে আটকে ধরল ……
চলবে….?