আরশিকথা-৯
শুভ্রকে দেখে সুপ্রভা একটু নার্ভাস হয়ে গেল।
-এসো ভেতরে এসো দীপ্র!
-না, না, এখন ভেতরে আসব না। তুমি শিটটা দাও, আমি পরে কখনো আসব।
সুপ্রভা শিটটা এনে দিলো। সুপ্রভা আঁড়চোখে দেখল, শুভ্রর চোখেমুখে দুষ্টু হাসি!
শিট নিয়ে বের হতেই শুভ্র বলল, দীপ্র তুই ফটোকপি করে বাসায় চলে যা, আমি শিটটা দিয়ে আসি ওদের বাসায়। ওরও তো পড়তে হবে!
দীপ্র সহজ বিশ্বাসে রাজি হয়ে গেল। শুভ্র আধঘন্টা বাদে আবার কলিংবেল বাজাল। সুপ্রভা দরজা খুলে দেখল এবারে শুভ্র একাই।
শুভ্র শিটটা দিলো, সেই সাথে একটা খাম!
এতে কি আছে?
খুলে দেখো! যাচ্ছি এখন! সকালে সাড়ে ছয়টায় পড়তে যেও! আমি থাকব!
সুপ্রভার সাথে মা থাকে রাতে। কোনোভাবেই এটা দেখতে পারবে না। তাই ওয়াশরুমে ঢুকে খামটা খুলল।
শুভ্র ফোন নম্বর দিয়েছে, সেই সাথে সুন্দর করে লেখা।
সুপ্রভা,
আমাকে কি একবার বলবে, ভালোবাসি?
শুভ্র
সুপ্রভা মনে হলো লজ্জায় মুখ লুকাবে। কিভাবে বলবে ভালোবাসি!
সকাল সকাল সুপ্রভা তৈরি হয়ে নিলো। আগে বের হয়ে গেলে পিয়াকে পাওয়া যাবে না। তাই রিক্সা নিয়ে নিলো।
শুভ্র সাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছিল!
সুপ্রভা নেমে পড়ল।
শুভ্র হাসল, সুপ্রভা মনে হলো এই হাসিটা দেখার জন্য ও সব কিছু করতে পারবে!
আরেবাহ! তুমি তো ঠিক টাইমে চলে এসেছ সুপ্রভা!
সুপ্রভা কিছু বলল না প্রথমে, তারপর বলল, শিট আপনি লুকিয়ে রেখেছিলেন?
শুভ্র বলল, কোন শিট?
দীপ্রর ক্যামিস্ট্রি শিট!
নাহ, একদম না!
তাহলে?
আছে কোথাও, খুঁজে পাচ্ছে না৷ পরে আমি বললাম, নিয়ে আয় সুপ্রভার কাছ থেকে।
আমার না মনে হচ্ছে আপনার কোনো হাত আছে এর পেছনে!
না না, আমি কেন এরকম করব!
আপনাকে দেখে বোঝা যায় না আপনি অনেক দুষ্টু!
তুমি আমাকে বলবে না?
কী?
যেটা শুনতে চাইলাম!
সুপ্রভা হেসে হাঁটতে শুরু করল।
শুভ্র বলল, কি হলো, বলবে না?
না!
আচ্ছা, শোনো সুপ্রভা, আমি কিন্তু তোমাকে ভালোবাসি। অনেক ভালোবাসি!
সুপ্রভা ব্যাগ থেকে একটা খাম বের করে শুভ্রকে দিলো।
তারপর মিসের বাসায় ঢুকে গেল।
শুভ্র খামটা খুলে দেখল, গোটা গোটা অক্ষরে লেখা,
শুভ্র,
ভালোবাসি বা প্রেম এই বিষয়টা কি সত্যি আমি জানি না। কিন্তু আপনার কথা ভাবতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। আপনার সাথে কথা বলতেও আমার ভীষণ ভালো লাগে।
আপনার পাশে অন্য একটা মেয়েকে দেখতে আমার একটুও ভালো লাগছিল না। এগুলো কি ভালোবাসা?
যদি তাই হয়, তাহলে আপনাকে ভালোবাসি!
সুপ্রভা
এটুকু পড়ে শুভ্র বাসায় গেল না, সুপ্রভার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। পড়া শেষে ওরা যখন বের হলো, তখন পিয়া চৈতি সাথে ছিল। এই মুহুর্তে ওদের কিছুই বুঝতে দেওয়া চলবে না৷ শুভ্র তাই সাইকেল নিয়ে অন্যদিকে চলে গেল।
★★★
বাসায় ফিরেছে সুপ্রভা। মা বললেন, প্রভা, ছোটো আন্টি ফোন করেছিলেন৷ ঢাকায় যেতে হবে তোকে।
-কেন মা?
-একটা ছেলের কথা বলেছিল ছোটো আন্টি৷ ওর সাথে দেখা করার জন্য৷
-ওহ আচ্ছা। ঠিক আছে। কবে যেতে হবে?
সুপ্রভা একবারে রাজী হয়ে গেল দেখে মা খুবই অবাক হলেন।
★★★
সুপ্রভা ঢাকার টিকিট করে দীপ্রকে ফোন করল।
-দীপ্র, আমি কাল সকালে ঢাকায় চলে যাচ্ছি৷ জরুরি প্রয়োজন।
-প্রভা, আমাকে জানাবি না আগে? আমরাও তো যাচ্ছি। তোর বাসে যাওয়ার দরকার কি, আমাদের সাথে যাবি।
– না না, আমি অলরেডি টিকিট করে ফেলেছি।
দীপ্র আর কথা বাড়ালো না। প্রভার সাথে ঝগড়া ঝামেলা করা যায় না। ও যেটা বলে, সেটাই করবে।
সকাল সকাল বাস টার্মিনালে এসে হাজির হলো দীপ্র। সুপ্রভাকে তুলে দিতে এসেছিলেন ওর বাবা।
-ওহ, দীপ্রও যাচ্ছে?
-জি আঙ্কেল। তবে আমি ভাইয়ার সাথে গাড়িতে যাব। সুপ্রভাকে নিতে এসেছি। টিকিটটা দে তো, ক্যান্সেল করে আনি!
সুপ্রভা বলল, না না, কোনো দরকার নেই, আমি বাসে চলে যাব।
দীপ্র সুপ্রভার হাত থেকে লাগেজটা নিয়ে গাড়িতে তুলল।
সুপ্রভা বলল, দীপ্র, এটার কোনো দরকার ছিল না।
না থাক, তোকে একা যেতে হবে না।
অগত্যা সুপ্রভাকে যেতে হলো! ২০০ টাকা বাদ দিয়ে দীপ্র টিকিট ক্যান্সেল করে এনে সুপ্রভাকে বলল, এই নে, পথে চিপস তুই খাওয়াবি।
সুপ্রভা গাড়িতে ওঠেনি তখনো। শুভ্র নামে নি একবারো, সুপ্রভার দিকে তাকায়ও নি। যেন চেনেই না সুপ্রভাকে।
পুরো পথে সুপ্রভা কোনো কথা বলল না, ঘুমিয়ে গেল। মিররে আঁড়চোখে ঘুমন্ত সুপ্রভাকে বারবার দেখছিল শুভ্র।
দীপ্র কানে হেডফোন দিয়ে আছে।
ঘন্টাদুয়েক চলার পরে গাড়ি থামল একটা পাম্পে৷
ব্রেক কষায় সুপ্রভার ঘুম ভেঙে গেল।
– দীপ্র বলল৷ আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। প্রভা চল?
-না, আমি নামব না। তুই যা।
শুভ্র বলল, আমি আছি এখানে। তুই আয় ফ্রেশ হয়ে, তারপরে আমি যাচ্ছি।
দীপ্র চলে গেলে প্রভাও নেমে পড়ল। শুভ্রর সাথে বসে থাকার কোনো মানে হয় না। শুভ্র একা একা হেসে একটা সিগারেট ধরিয়ে নিলো। প্রভা হেঁটে হেঁটে একটা পাইপ দেওয়া কলের কাছে গিয়ে বসে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিচ্ছিল। শুভ্র এগিয়ে এসে টিস্যু বাড়িয়ে দিলো৷
প্রভা চোখ খুলে শুভ্রকে দেখে টিস্যু নিলো না, ওরনায় চোখ মুখ মুছে নিয়ে হেঁটে চলে গেল। দীপ্র আসছে ওর কাছে।
শুভ্র মনে মনে বলল, এখনো এত ভালোবাসো! সহজ হতে পারছ না কেন প্রভা!
প্রভা হেঁটে হেঁটে গাড়ির দিকে গেল। শুভ্র ওর পেছন পেছন দ্রুত হেঁটে চলে গেল। দীপ্র এগিয়েও এলো না, আবারও ফিরে যাচ্ছে, ফাস্টফুড শপের দিকে।
প্রভা গাড়িতে ঢুকে বসল, শুভ্র হঠাৎ দ্রুত হেঁটে এসে দরজা টেনে ঢুকে প্রভার পাশে বসে আবার দরজা লাগিয়ে দিলো৷
প্রভা চমকে উঠে বলল, একি, আপনি?
শুভ্র কিছু বলল না প্রথমে। তারপর আচমকা প্রভাকে টেনে কাছে নিয়ে ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।
প্রভা ছটফট করছিল, আহা, কি প্রবল তৃষ্ণা বুকের ভেতর! শুভ্রকে ছাড়ল না প্রভা! সেই প্রথম দিনের মত প্রবল ভালোবাসায় শুভ্রর ঠোঁট শুষে নিলো, নিতেই লাগল৷ কিছু সময় পরে শুভ্র সরে গিয়ে বের হয়ে গেল। কোনো কথা হলো না দুজনের। দীপ্র চলে এসেছে!
চলবে
শানজানা আলম