আশ্রিতা🌿 পর্ব -০৬

#আশ্রিতা🌿
Sumana Easmin
পর্ব ছয়

হিমু যখন কংকার সাথে গভীর মিলনে আবদ্ধ হয়ে গেছে ঠিক তখনই দরজায় নক করার শব্দ শোনা গেলো।
একটুপর কংকা গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো। আর হিমু বিছানায় চুপচাপ শুয়ে রইলো।
কংকা দরজা খুলতেই দেখলো হিমুর মামাতো বোন মায়া চোখ মুখ লাল করে দাঁড়িয়ে আছে। সে কংকার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল-
“ইউ ব্লাডি বিচ্! এতোক্ষণ সময় লাগে দরজা খুলতে?”
হঠাৎই এমন রুক্ষ ব্যবহারে কংকা হতভম্ব হয়ে গেলো। সে কি বলবে তাই ভাবতে লাগলো। কংকাকে চুপ থাকতে দেখে মায়া আরো রেগে গিয়ে বলল-
“আচ্ছা তোর এতো সাহস কি করে হলো? আমার কথার উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকার?”
তারপর সে কংকার কোন উত্তরের অপেক্ষা না করেই রুমের ভেতরে হিরহির করে ঢুকে পরলো।
হিমুর কাছে গিয়ে বলল-
“হিমু এসব কি শুনছি আমি? তুমি নাকি এই হীন দরিদ্র, আন-কালচারাল মেয়েটাকে বিয়ে করেছো? যার কিনা কোন বংশ পরিচয় নেই!”
হিমু প্রথমত মায়াকে দেখেই অবাক হয়ে গিয়েছিল। তার উপরে আবার তার মুখ থেকে এমন কথা শুনে সে আরো অবাক হয়ে গেলো। কংকা দরজায় স্হির হয়ে দাঁড়িয়ে মায়ার কথা গুলো শুনছিলো। হিমু কংকার দিকে এক পলক তাকিয়ে দেখলো ওর চোখে পানি টলমল করছে। হিমু কিছুটা ইতস্তত করতে করতে বলল-
“মায়া কি বলছো এসব? আমি ওকে ভালোবাসি! আর ভালোবাসতে কোন টাকা পয়সা, বংশ পরিচয় লাগেনা। এমনি এমনি হয়ে যায়!”
হিমুর কথা পুরোপুরি শেষ না হতেই কংকা রুমের বাইরে চলে গেলো। হিমু মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল-
“তুমি এই কথাগুলো কি আমায় আলাদা করে বলতে পারতেনা? কংকার সামনেই বলতে হলো? ও কতোটা কষ্ট পেলো বুঝতে পারছো?”
“সেটা আমার জানার দরকার নেই! তুমি শুধু কংকার দিকটাই ভাবলে? আমার দিকটা একবারো ভাবলে না? তুমি কি জানো না আমি তোমায় কতোটা ভালোবাসি?”
কথাটা বলেই মায়া হিমুকে জড়িয়ে ধরার জন্য এগিয়ে গেলো। কিন্তু হিমু সেটা বুঝতে পেরে নিজেকে সরিয়ে নিলো। সে বিছানা থেকে উঠে বলল-
“মায়া তুমি প্লিজ ছেলে মানুষি করো না। এমন টাতো না যে আমি তোমার সাথে রিলেশন করছিলাম বা বিয়ে করতে চেয়েছিলাম! আমি জাস্ট তোমায় বোনের চোখেই দেখি এসেছি আর ভাইয়ের জায়গা থেকেই ভালোবেসেছি! তাই এখন তুমি আমার আর কংকার মধ্যে কাঁটা হয়ে না ঢুকলেই বেশি ভালো হয়!”

মায়া রাগে গর্জে উঠে বলল-
“কিহ্? আমি তোমাদের মাঝে কাঁটা হয়ে ঢুকেছি? তুমি আমায় এত্তোবড় এক কথা বলতে পারলে?”
“না আসলে আমি সেভাবে বলিনি, আমি শুধু বলতে চেয়েছি তুমি আমার আর কংকার মধ্যে কোন বাঁধা হয়ে….
হিমুকে কথা শেষ করতে না দিয়েই মায়া বলল-
“কি নেই আমার মাঝে? আর কি আছে ঐ কংকার মাঝে? বলো?? যে কারনে আমি তোমার ভালোবাসা পেলাম না কিন্তু কংকা পেয়ে গেলো?”
হিমু মায়ার সাথে আর কথা বাড়াতে চাচ্ছে না। তাই সে মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল-
“সেটা তুমি নিজেই খুঁজে বের করো! তুমি তো কালচারাল মেয়ে। তাই এই সামান্য উত্তর টুকু বের করা তোমার কাছে কঠিন কিছুই নয়, রাইট?”
মায়ার উত্তরের অপেক্ষা না করেই হিমু রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

মায়া ছোট বেলা থেকেই হিমুর প্রতি প্রচন্ড দুর্বল ছিলো। এতোটাই দুর্বল যে, সে যেকোন মুল্যে হিমুকে পেতে রাজি! হিমুর বাবা অনেক ভেবে চিন্তে ঠিক এই সুযোগ টার সৎ ব্যবহার করলেন। উনি মায়ার হাতে হিমুকে তুলে দিতে চাইলেন এই শর্তে যদি হিমু কংকাকে ডিভোর্স দিয়ে দেই। মায়া সেই শর্তে রাজি হয়ে গেল আর চলে এলো হিমুদের গ্রামের বাড়িতে, ব্যস!!! ড্রামা শুরু হয়ে গেলো!!

কংকা রুম থেকে বেরিয়ে সায়লা বেগমের (হিমুর মা) কাছে গিয়ে বসে আছে। আর ভাবছে হিমু এখনো কেনো তার কাছে যাচ্ছে না। হিমুর দেরী হওয়াতে সে ছটফট করে মরছে। না জানি মায়ার সাথে সে এতোক্ষণ ধরে কি কিরছে!!

হিমু রুম থেকে বেরুতেই দেখলো ওর বাবা একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। সে এক মুহুর্তেই ওর বাবার গেইম টা বুঝতে পারলো। তাই ও রাগে হিসহিস্ করে ওর বাবার পাশ দিয়ে চলে গেলো।

মায়া রুম থেকে বেরিয়ে হিমুর বাবাকে দেখে বলল-
“সরি আংকেল! আমি মনে হয় পারবোনা! হিমু কংকাকে অনেক ভালোবাসে!”
“কি বলছো এসব পাগল মেয়ে! আমি জানি তুমি পারবে! সেই বিশ্বাস আমার আছে!”
“কিন্তু”
“কোন কিন্তু নয়। আমি চাই এই বাড়ি থেকেই তোমার সাথে হিমুকে বিয়ে দিয়ে নিয়ে যেতে। ঐ অযোগ্য মেয়ে টাকে আমি কখনোই আমার পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিতে পারবোনা।”

সায়লা বেগম কে আসতে দেখে ওরা দুজনেই টপিক চেন্জ করে অন্য টপিকে গেলো।
সায়লা বেগমের দিকে তাকিয়ে হিমুর বাবা হাসতে হাসতে বললেন-
“দেখো দেখি কান্ড! মায়া আজই চলে যেতে চাচ্ছে!”
“কেনো?”
মায়া কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল-
“এখানে থেকে আর কি করবো ফুপি? যাদের দেখতে এসেছিলাম তারাই তো আমার সাথে ভালো করে কথাটা পর্যন্ত বলল না।”

সায়লা বেগম কিছুটা রেগে গিয়ে বললেন-
“কংকা আর হিমু তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে?”
“না থাক ফুপি, বাদ দাও সেসব কথা!”
“আচ্ছা আমি দেখেছি বিষয় টা!”
বলেই উনি চলে গেলেন।

কংকা একা একাই রুমে বসে কান্না করছিলো। হিমু রুমে যাওয়ার সাথে সাথেই সে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। হিমু ওর পাশে গিয়ে বসলো। কংকা কান্না করতে করতে বলল-
“ঐ রুম থেকে এই রুমে আসতেই এতোক্ষণ সময় লাগলো?”
“আসলে আমি….
“থাক! কিছু বলতে হবেনা! তোমার যায়গায় যদি আমি ঐ ভাবে কোন ছেলের সাথে এতোক্ষণ ধরে একটা রুমে থাকতাম তাহলে তুমি কি করতে?”
“কংকোনা প্লিজ আমার কথাটা আগে শোনো!”
“আমি তোমার থেকে আলাদা করে আর কি শুনবো? তাও আবার নিজের চোখ কানকে অবিশ্বাস করে? সত্য তো এটাই হিমু, আমি তোমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নই! আমি সবদিক থেকেই তোমার অযোগ্য।”

হিমু কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো এমন সময় সায়লা বেগম রুমে এসে ঢুকলেন! কংকার দিকে তাকিয়ে বললেন-
“কংকা তুই কি মায়ার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিস?”
হিমু রাগে গর্জে উঠে বলল-
“তোমার কি মনে হয় মা? কংকোনা তেমনটা করতে পারে? আর কেউ না চিনুক তুমি তো ওকে খুব ভালো করেই চেনো!”
হিমুকে হঠাৎই এমন রেগে যেতে দেখে উনি বললেন-
“কি হয়েছে হিমু? আমায় সব খুলে বলতো!”
হিমু তারপর একে একে সব খুলে বলল! সায়লা বেগম প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললেন-
“আর এখানে একমহুর্ত থাকা যাবেনা। তোরা রেডি হ, আমরা আজই রওনা দিবো! এখানে অনেক বড় ঝামেলা তৈরি হতে যাচ্ছে!”
সায়লা বেগমের কথা শুনে কংকা স্বস্তি ফিরে পেলো। সে চোখ মুছতে মুছতে বলল-
“মা আমার এখানে একদম দম বন্ধ হয়ে আসছে। কেউ যদি যেতে নাও চায় তবুও আমি একাই তোমার সাথে যাবো!”
কংকার কথা শেষ হতে না হতেই হিমুর বাবা রুমে ঢুকলেন। উনি বাহির থেকে সব কথা শুনেছিলেন। তাই রুমে ঢুকেই সায়লা বেগম কে বললেন-
“সামনেই ঈদ। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ঈদটা করেই এখান থেকে চলে যাবো।”
কথাটা বলেই উনি চলে গেলেন।
সেটা শুনে হিমু, কংকা, সায়লা বেগম সবাই রেগে আগুন হয়ে গেলো।

মায়া হিমুর ছোট চাচা চাচির সাথে গল্প করছে। উনারাও কংকাকে পছন্দ করেন না। উনাদের মায়াকে অনেক পছন্দ।এতে মায়ার শক্তি আরো বেড়ে গেলো।

বিকেলে কংকা পুকুর পাড়ে বসে একধ্যানে পানির দিকে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে কি করা যায়। সে কি হিমুকে ছেড়ে চলে যাবে না কি হিমুর কাছেই থাকবে! অথচ সে শুধু হিমুকে ভালোবাসে পাওয়ার জন্য এতোদিন নিজেকে তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছে। অনেক কষ্ট সহ্য করেও হিমুর কাছাকাছি থেকেছে।

হিমু বাজারে গিয়েছিল কেনাকাটা করার জন্য। রুমে এসে কংকা দেখতে না পেয়েই সে খুঁজে বেড়াতে লাগলো। একটু পর সে খেয়াল করলো কংকা পুকুর পাড়ে বসে আছে। তাই সে ঐ দিকে যেতে লাগলো।

হিমু কংকার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই কংকা চমকে উঠলো। তারপর মাথা নিচু করে আবার পানির দিকে তাকিয়ে রইল। হিমু ওর পাশে বসে বলল-
“এখানে একা একা কি করছো? রুমে চলো!”
“তুমি রুমে যাও। আমার এখানে একা থাকতে ভালো লাগছে!”
“আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আমিও থাকি!”

কংকা রেগে গিয়ে বলল-
“তোমায় এখানে থাকতে হবেনা। তোমার জন্য অন্য কেউ রুমে ঠিক ই অপেক্ষা করছে। যাও তুমি!”
হিমু বুঝতে পারলো কংকা মায়ার বিষয় টা নিয়ে অনেক রেগে আছে। তাই সে কোন কথা না বলে চুপচাপ বসে থাকতে লাগলো।

একটুপর হঠাৎ সে খেয়াল করলো পানিতে কংকার যে ছবি ভেসে উঠেছে সেটাতে কংকাকে একদম বুড়ির মতো লাগছে। আর আগের থেকেও বেশি বিদঘুটে দেখাচ্ছে। সে তোতলাতে তোতলাতে কংকাকে বলল-
“পানিতে তোমায় অমন অদ্ভুত দেখাচ্ছে কেনো? কংকা বুঝতে পেরে সাথে সাথে আসল দেহধারন করে বলল-
“কোথায়? আমি তো অদ্ভুত কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।”
হিমু পানির দিকে তাকিয়ে দেখলো সত্যিই এখন আর ঐরকম অদ্ভুত দেখাচ্ছে না।

হিমু কিছু না বলে ভয়ে ভয়ে ওখান থেকে উঠে রুমে চলে গেলো। সে কংকাকে ভয় পেতে লাগলো। মায়া বেলকনীতে দাঁড়িয়ে হিমু আর কংকাকে এতোক্ষণ ফলো করছিলো। হিমুকে রুমে যেতে দেখেই সেও হিমুর রুমে ঢুকে পরলো।

আর এদিকে কংকা ওর শরীরের বিষয় টা নিয়ে ভাবতে লাগলো। ও চেয়েছিলো ওর শরীরে শুধু হিমুর রক্ত থাকবে। হিমুর রক্ত পান করে সে ওর আত্মাকে নতুন জীবন দিবে। কিন্ত সেটা তো সে করতে পারছেনা। যার জন্য ওর আত্মা টাও ধীরে ধীরে মৃতের মতো নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। আর সে সব ধরনের ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলছে।

কংকা ভাবতে লাগলো কি করা যায়। এভাবে হিমুর জন্য নিজেকে শেষ করে দিবে নাকি সে ওর জগতে ফিরে যাবে!

একটু পর চিন্তা ভাবনা শেষ করে ও রুমের দিকে যেতে লাগলো। ঠিক দরজার কাছে এসেই সে হিমু ও মায়ার কন্ঠ শুনতে পেলো। এতে সে রাগে আগুন হয়ে গেলো।

To be continue….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here