আশ্রিতা🌿 পর্ব -০৩+৪

#আশ্রিতা🌿
Sumana Easmin
পর্ব তিন + চার

কংকা ছোট বাচ্চাদের মত মুখ করে হিমুর দিকে তাকিয়ে রইল। হিমু তৎক্ষনাৎ নিজেকে সামলে নিয়ে বলল-
“কংকা তুমি আমায় কিস করলে?”
“কখন?”
“একটু আগেই যে তোমার জিহ্বা দিয়ে আমার ঠোঁট স্পর্শ করলে?”
“তুমিই তো বললে যে আমায়….
কথাটা শেষ না হতেই হিমুর বাবা রুমের ভেতরে ঢুকলেন। হিমুকে দেখে তিনি বললেন-
“কাল গ্রামের বাড়িতে যেতে হবে। হঠাৎ আনিস (হিমুর চাচা) রিয়ার বিয়ে ঠিক করেছে।”
“কিন্তু বাবা রিয়া তো সবে এসএসসি পরীক্ষা দিলো। এতো তাড়াহুড়ার কি দরকার ছিল?”
“হুম, সেটাই তো দেখতে যেতে হবে!”

পরদিন সকালে সবাই গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই বুঝতে পারলো বিয়ের ধুম পরে গেছে। আনন্দে ভরে উঠেছে পুরো বাড়ি। হিমুদের দেখে সবার আনন্দ আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।

বাড়ি ভর্তি কতো মেয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কতো সুন্দর করে সেজে গুজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু হিমুর চোখ সেই কর্নারের দিকে চুপ করে বসে থাকা কংকার উপরে। এই কাজ ঐ কাজ করছে আর ঘুরে ফিরে কংকার আশেপাশে গিয়ে ওকে দেখছে।

কংকা আজ সাদা রঙের শাড়ি পরেছে। সাদা রংয়ে ওর সৌন্দর্য বেড়ে আরো দ্বিগুণ হয়ে গেছে। কংকা গেস্ট রুমের কর্নারের দিকের একটা চেয়ারে চুপচাপ বসে আছে। ওর পাশে থাকা ছোট মেয়েটার সাথে মাঝেমাঝে কথা বলছে।

সারাটা দিন দৌড়ের উপর কেটে গেলো হিমুর। সন্ধ্যার পর একটু সুযোগ পেতেই কংকার সাথে গল্প করতে লাগলো। কংকা রিয়ার পাশে বসে ছিলো। হিমু ওর কাছে গিয়ে বলল-
“কংকোনা, ঐ যে মেরুন রঙের পাঞ্জাবী পরা একটা ছেলেকে দেখতে পাচ্ছো?”
কংকা ঐ দিকে তাকালো। হিমু হাসি চেপে রেখে বলল-
“ঐ ছেলেটার সাথে কিন্তু তোমার খুব মানাবে!”

ছেলেটা অনেক শর্ট ছিলো। আর কংকা অনেক লম্বা। হিমু যে ওকে জ্বালাচ্ছে ও সেটা বুঝতে পেরে মুখে ফুলে রইলো। কিন্তু কোন কথা বলল না। কংকাকে মুখ ফুলিয়ে থাকতে দেখে হিমু আর হাসি আটকাতে পারলোনা। হো হো করে হেসে উঠলো।

কংকা দুমদুম করে হেটে ওখান থেকে চলে গেলো। রিয়া হাসি আটকাতে না পেরে বলল-
“হিমু ভাইয়া তুমি এখনো আগের মতোই আছো।”
“কেমন রে?”
“ফাজিল টাইপের!”
বলেই দুইজন আবার হাসিতে ফেটে পরলো।

বরপক্ষ থেকে সবাই চলে আসছে। বিয়ে পড়ানোর আয়োজন নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। হিমুর দায়িত্ব পরে গেছে রান্না-বান্না সামাল দেওয়ার দিকে। আর কংকা ছোট বাচ্চাদের হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে, কাওকে সাজিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু কোনটাই নিখুঁত ভাবে করতে পারছেনা। তবে ছোট বাচ্চাদের সেগুলো খুব পছন্দ হচ্ছে।

বিয়ে পড়ানোর একটু আগে জানা গেলো রিয়া ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে গেছে। নিমিষেই পুরো বিয়ে বাড়ির আনন্দ মাটি হয়ে গেলো। বংশের মুখে চুনকালি লাগার ভয়ে রিয়ার বাবা আর হিমুর বাবার আলোচনা করতে বসলো। সবশেষে সিদ্ধান্ত নিলো, ঐ ছেলের সাথে কংকার বিয়ে দিয়ে দিবে। তবু বিয়ে ভাঙিয়ে বংশের মান সম্মান নষ্ট করতে পারবেনা।

কিছুক্ষণের মধ্যেই হিমুর কানে কথাটা গেলো। হিমু রাগে আগুন হয়ে ওর বাবার কাছে আসলো। এসে রাগান্বিত কন্ঠে বলল-
“শুনলাম তোমরা নাকি ঐ ছেলের সাথে কংকার বিয়ে দিতে চাচ্ছো?”
“হুম কেনো? কংকার মত নিয়েই আমরা সব সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর ঐ ছেলে কংকাকে দেখে পছন্দও করেছে।”

হিমু রাগে কোন কথা বলতে পারছিলো না। চোখ দুটো রক্তের মতো লাল হয়ে উঠলো। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল-
“বাবা তুমি এই বিয়ে ক্যান্সেল করে দাও!”
হিমুর বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন-
“কেনো, এতে তোর কি সমস্যা? ছেলে পছন্দ হয়নি?”

হিমুর রাগান্বিত কন্ঠ শুনে অলরেডি বাড়ির সব গার্জিয়ানরা সেখানে উপস্থিত হয়েছে। হিমু এক পলক সবার দিকে তাকিয়ে বলল-
“আমি কংকাকে ভালোবাসি! ওর বিয়ে হলে শুধু আমার সাথেই হবে, না হলে কারো সাথে নয়!”

হিমুর কথা শুনে সবার চোখ কপালে উঠে গেলো। হিমুর মা ওর কাছে এসে বলল-
“হিমু তুই এসব কি বলছিস? তোর মাথা ঠিক আছে তো?”
“হ্যাঁ মা আমার মাথা একদম ঠিক আছে।”
“কিন্তু শুধু তুই ওকে চাইলেই তো হবেনা, ওর ও তো মত থাকতে হবে। আর এই বিয়েটার সাথে আমাদের বংশের মান সম্মান সব জড়িয়ে আছে!”

হিমুর বাবা কংকাকে এমনিতেই অনেক ভালোবাসতেন। কিন্তু পুত্রবধূ হিসেব অমন অনাথ মেয়েকে তিনি কখনোই চান না। হিমুর মার অবশ্য কিছুটা মত ছিলো।

হিমু আর কোন কথা না বলে কংকার কাছে গেলো। ওকে বিয়ের সাজে দেখে হিমুর মাথায় আরো বেশি রক্ত উঠে গেলো। সে কংকার পাশে বসে বলল-
“বিয়ের কথা বলতেই অমনি রাজি হয়ে যেতে হলো?”
কংকা চুপ।
“কিন্তু আফসোস! বিয়েটা তোমার ঐ ছেলের সাথে হচ্ছেনা!”
“কেনো?”
“কারন আমি তোমায় বিয়ে করবো!”
কংকা চুপচাপ।
“এবার যেমন খুশি তেমন করে সাজো।”
বলেই হিমু চলে গেলো।

ঐদিকে হিমুর বাবা একেবারেই নারাজ। তিনি কোন মতেই কংকার সাথে হিমুকে বিয়ে দিবেন না। হিমুও নাছোড়বান্দা। সেও কোন মতে ছাড়বেনা। একটুপর কানাঘুষা করতে করতে এই কথা বরপক্ষের কাছে গিয়ে পৌঁছুলো।
কিছুক্ষণ তর্কবিতর্ক হওয়ার পরে বিয়েটা ভেঙে গেলো।

রাত দেড়টার দিকে হিমুর সাথে কংকার বিয়ে পড়ানো হলো। কংকার মা অনেক খুশি। ফ্যামিলির সবাই অনেক খুশি শুধু হিমুর বাবা ছাড়া।

অতঃপর হিমুর কাঙ্ক্ষিত সেই বাসর রাত। সে রুমে ঢুকেই অবাক। কংকা আয়নার সামনে সাজতে বসেছে। হিমু ওর পেছনে দাঁড়িয়ে ওর দুই ঘাড়ে হাত রাখলো। তারপর কংকার মুখের দিকে ঝুঁকে পড়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল-
“বলেছিলাম না। খুব বেশি দেরী নেই।”
কংকা হিমুর মুখের দিকে মুখটা ঘুরিয়ে নিয়ে বলল-
“এতো আবেগ!”
হিমুর সব আনন্দ মুহুর্তেই নষ্ট হয়ে গেলো। সে গম্ভীর গলায় বলল-
“আবেগ নয় ভালোবাসা!”
“যদি বলি সে ভালোবাসার প্রমাণ দিতে হবে তুমি পারবে?”
“কিভাবে দিতে হবে?”
“আজকের পর থেকে তুমি আমায় কখনোই স্পর্শ করতে পারবেনা!”

হিমু হেসে ফেলল। কংকার ঘাড় থেকে হাত নামিয়ে বলল-
“এ আবার তেমন কি? যদি বলতে তোমার দিকে কখনোই তাকানো যাবেনা, তাহলে হয়তো আমি পরীক্ষায় হেরে যেতাম। কারন আমি তোমায় স্পর্শ না করে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবো। কিন্তু তোমায় না দেখে এক মুহুর্তও কাটাতে পারবোনা!”

কংকা বিস্মিত হয়ে গেলো। হিমুর দিকে তাকিয়ে বলল-
“তাই বুঝি। ঠিক আছে তাহলে এই কথাই রইল।”

হিমু আর কোন কথা না বলেই বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলো। একটু পর কংকাও ওর পাশে গিয়ে শুয়ে পরলো। হিমু কংকার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। কংকাকে নড়াচড়াও করতে দিচ্ছে না।

হঠাৎ কংকা এক অদ্ভুত কান্ড করে বসলো। হিমুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই এক করে ওর শরীরের সব কাপড় খুলতে লাগলো। হিমু বাধ্য হয়ে অন্য পাশ ফিরে শুলো। কারন কংকাকে কোন কাজে বাধা দেওয়া মানে, নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারা।

হিমু জানতো কংকার মাথায় গন্ডগোল আছে। কিন্তু এতোবেশি গন্ডগোল আছে সেটা ও ভাবতে পারেনি। একটু পর কংকা হিমুকে বলল-
“তুমি আমার দিকে তাকাও। নয়তো আমি রাগ করবো, এমনকি কান্নাও করতে পারি।”
কংকার কোন সেন্টি নাই। কি করতে কি করে বসে। হিমু ভয়ে ভয়ে ওর দিকে তাকালো। অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করে নিয়ে আছে। এমন নগ্ন-রুপসীর সামনে নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখাটাও এক অসাধারণ ক্ষমতা।

প্রায় দুই ঘন্টা পর কংকা হিমুর উপর শুয়ে বলল-
“তুমি তোমার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছো। এবার আমায় উত্তীর্ণ করো।”

হিমু কংকার কথার মাথা মুন্ডু তেমন কিছুই বুঝলো না। শুধু এতোটুকু বুঝলো কংকা ওকে স্পর্শ করার অনুমতি দিয়েছে।

হিমু ক্ষুধার্ত বাঘের মতো কংকার উপর ঝাঁপিয়ে পরলো। দীর্ঘক্ষণ পর ও যখন আবেগের আতিশয্যে চলে গেছে তখন ওর ঘাড়ের কাছে কংকার গরম নিঃশ্বাস অনুভব করতে পারলো। ও আরো ক্ষুধার্ত ও হিংস্র হয়ে উঠলো। একটুপর কংকা ওর কানে ফিসফিস করে বললো-
“আমি তোমার সব কিছুর স্বাদ পেতে চাই। এমনকি রক্তের ও। হিমু এতোটাই গভীর মোহে হারিয়ে গিয়েছিল যে ও কংকার কথার অর্থ না বুঝেই বলল-
“আমার সবকিছুই তো তোমার!”
কংকা আর এক মুহুর্ত দেরী করলো না। সাথে সাথে হিমুর ঘাড়ে ওর ধারালো দাঁত দুটো বসে দিলো। তৃষ্ণার্ত চাতক পাখির মতো ঢকঢক করে হিমুর রক্ত দিয়ে ওর মৃত্যুক্ষুধা মেটাতে লাগলো।

কংকা হিমুর ঘাড় থেকে মুখ সরিয়ে বলল-
“তোমার রক্তের স্বাদ তোমার মতই অতুলনীয়। আর সবার থেকে আলাদাও!”
হিমু এতোক্ষণ স্বর্গসুখ ভোগ করছিলো। সে ঘোরের মধ্যে চোখের পাতা না খুলেই বলল-
“মুখ সরালে কেনো? আরো যতো খুশি রক্ত নাও।”
কংকা হিমুর বুকের উপর মাথা রেখে বলল-
“না। আর বেশি রক্ত নিলে তুমি মারা যাবে!”

হিমু আর কোন কথা বলল না। সে এতোটাই ঘোরের মধ্যে ছিলো যে কংকার কথার কোন অর্থও খুঁজতে গেলোনা। বরং কংকার উপরে ক্ষুধার্ত হিংস্র বাঘের ন্যায় ঝাঁপিয়ে পরলো। অতঃপর চিরাচরিত প্রকৃত স্বর্গ সুধা উপভোগ করতে লাগলো।

সকালে হিমুর ঘুম ভাঙতেই দেখলো কংকা পার্শ্বে নেই। সে ঘুম ঘুম চোখেই কংকাকে ডাকতে লাগলো। আর রাতের সুখ স্মৃতি গুলো রোমন্থন করতে লাগলো। তার স্মৃতিতে সব কিছুই স্পষ্ট ভাবে ভেসে উঠলো শুধু কংকার রক্ত পান করা টা ছাড়া।

একটু পর কংকা হিমুর ডাক শুনে প্রায় দৌড়ে রুমে আসলো। কংকার দিকে তাকিয়েই হিমুর চোখ কপালে উঠে গেলো। হিমু খেয়াল করলো এতোদিন কংকার গায়ের রং কেমন ফ্যাকাশে ধরনের লাগতো। আজ সেই ফ্যাকাশে রং তীব্র আকার ধারণ করেছে।

ওর গায়ের রং আজ ঠিক স্বর্ণের মতো জ্বলজ্বল করছে। মনে হচ্ছে একটু ছোঁয়া পেলেই রক্ত বের হয়ে যাবে। হিমু অবাক হয়ে কংকাকে জিজ্ঞেস করলো-
“আজ তোমায় এতো সুন্দর লাগছে কেনো?” কংকা একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল-
“সিক্রেট”

কংকা আজ হলুদ রঙের শাড়ি পরেছে। হিমুর চোখে ওকে আজ হলুদ পরীর মতো লাগছে। সজীব আর প্রাণবন্তে ভরা। কংকা বেডের পার্শে দাঁড়িয়ে ছিলো। হিমু ওর হাত ধরে এক টান মেরে বিছানায় শোয়ালো। তারপর কংকার গালে আঙুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে বলল-
“হঠাৎই আমার টিয়া পাখিটার মুখে কথা ফুটলো রহস্য টা কি? আবার এক রাতেই সুন্দরও হয়ে গেলো!”

কংকা অভিমান করে বলল-
“যাহ্, আমি বুঝি আগে সুন্দর ছিলাম না?”
“আমি কখন বললাম যে ছিলে না? আমি জাস্ট বললাম আগের থেকে আজ অনেক বেশি সুন্দর লাগছে কেনো!”
“হইছে চলো! বাবা অনেক রাগ করে বসে আছেন। আমি ভয়ে তার সামনে যেতে পারছিনা।”
হিমু হাসতে হাসতে বলল-
“তার সামনে যেতে কে বলছে?”
“বলতে হবে কেনো? আমি নিজেই গিয়েছি!”
“ওহ্ আচ্ছা। বেশ কথা ফুটেছে তো তোমার মুখে! কথা বলা বন্ধ করতে হবে দেখছি!”

বলেই হিমু কংকাকে জোর করে কিস্ করতে লাগলো। কংকা শুধু ওকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। হঠাৎ কংকার একটা হাত হিমুর ঘাড়ের রক্ত পান করার জায়গায়টায় গিয়ে লাগলো। হিমু তখনি ব্যাথায় কুঁকড়ে গেলো। হিমু কংকাকে ছেড়ে দিয়ে বলল-
“ঘাড়ে এমন ব্যথা করছে কেনো? কি হয়েছে ওখানে দেখোতো!”

কংকা হিমুর ঘাড়ের ঐ জায়গা টা একবার আলতো করে স্পর্শ করে দিলো। তারপর এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। ধীরে ধীরে হিমুর ঘাড়ের ব্যাথাটা কম অনুভূত হলো।
হিমু ঘাড়ে হাত বুলিয়ে নিয়ে বলল-
“আশ্চর্য তোমার হাতে জাদু আছে নাকি? ব্যথা অনেক টা কমে গেলো।”
কংকা হাসতে হাসতে বলল-
“হুম আছে বৈ কি! আর কোন কথা নয়, ওঠো বলছি! বাইরে সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমি গেলাম তুমি থাকো।”

কংকা বাইরে চলে গেলো। হিমু ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেস হতে।
শাওয়ার শেষে সে ড্রেস চেঞ্জ করতে গিয়ে লক্ষ্য করলো, শরীরের বিভিন্ন জায়গাই আঁচড়ের দাগ। সে প্রথমে একটু আঁতকে উঠলো! কিন্তু পরক্ষণেই কংকার কথা ভেবে একটা মুচকি হাসলো। তারপর অস্ফুটে ওর মুখ দিয়ে বের হলো
“রাক্ষুসী!”

রুম থেকে বেরুতেই সে দেখলো সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে। মনে হয় ওর জন্য অপেক্ষা করছে। ও দ্রুত মাথা নিচু করে গিয়ে কংকার পাশে বসে পড়লো। আড়চোখে দেখলো ওর বাবা ওকে রাগে গিলে খাচ্ছে। কিন্তু কিছু বলতে পারছেনা।

হিমু মাথা নিচু করে মুখ টিপে হাসতে লাগলো। একটুপরেই খাওয়াদাওয়া শুরু হয়ে গেলো। কংকাকে গোগ্রাসে খেতে দেখে হিমু ফিসফিস করে বলল-
“বেশি তাড়াহুড়া করে খেওনা। শেষে দেখা যাবে খাবারের সাথে দাঁত গুলোও গিলে ফেলছো।”
কংকা রাগে মুখ ফুলে একটু খেয়েই উঠে গেলো। হিমু মনে মনে এটাই চাচ্ছিলো। ও যাওয়ার একটু পরেই হিমু কংকার জন্য প্লেটে করে খাবার নিয়ে গেলো।

রুমে গিয়ে দেখে কংকা মুখ ফুলে সোফায় বসে আছে। হিমু টেবিলের উপর প্লেট টা রেখে বলল-
“বাহ্, বিয়ের আগে কতো সুন্দর না বলেই আমার প্লেটে খাইতে বসতা আর এখন খাওয়ার সময় আমায় চিনতেই পারোনা, বাহ্। এই না হলে আদর্শ বউ!”

হিমুর কথা শুনে কংকার যতোটা না রাগ লাগছিলো তার চেয়েও বেশি হাসি পাচ্ছিল। সে হাসি চেপে রাখার চেষ্টা করতে করতে বলল-
“হ্যাঁ, তুমিও কিন্তু খুব আদর্শ স্বামী। তাই মানুষকে খোঁটা দিয়ে নিজে পেট পুরে খেয়ে আসলে!”
“হইছে থাক। তোমার সাথে এক প্লেটে খাবো বলে ঐ কথাটা বলেছিলাম। আসো একসাথে খাই।”
কংকা আর কোন কথা না বাড়িয়ে হিমুর পাশে বসে এক প্লেটে খেতে লাগলো।

হিমু খেতে খেতে বলল-
“আচ্ছা বলোতো, তুমি যে আমার সাথে ঐ রকম করতে সেটা কি ইচ্ছে করে করতে?”
“কি রকম?”
“ঐ যে মা যখন আমার কাছে তোমায় রেখে বিয়ে খেতে গিয়েছিল তখন, শাড়ি ঠিক মতো পড়তে না, প্রায় সব কিছু বের হয়ে থাকতো! কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিতে না। শুধু বোকার মতো ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকতে?”
কংকা কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে বলল-
“জানিনা!”
“থাক জানতে হবেনা!”
“শুধু আমায় কখনো ছেড়ে যেওনা তাহলেই হবে!”

হিমুর কথা শুনে কংকার মুখ কালো ছায়ায় ঢেকে গেলো। সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল-
“তুমিই যেনো আমায় আবার ছেড়ে যেওনা!”

হিমু কোন উত্তর না দিয়ে হাসতে হাসতে হাত ধুইতে গেলো। সে হাত পরিষ্কার করতে করতে বেসিনের আয়নায় নিজের মুখ দেখতে লাগলো। ও খেয়াল করলো আজ ওর মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাশে ফ্যাকাশে লাগছে। হাত ধোয়া শেষে ও যেতে ধরে হঠাৎ আয়নায় কংকাকে দেখে থমকে গেলো।

বেসিন টা রুমে মধ্যেই একপাশে ছিলো। কংকা সোফায় বসে খাচ্ছিল। বেসিনের আয়নার ঠিক সামনে সোফা গুলো রাখা ছিলো।
হিমু খুব ভালো করে দেখতে পেলো আয়নাতে কংকাকে একদম বয়স্ক বুড়ির মতো দেখাচ্ছে। হাত-পা, মুখের চামড়া সব কুঁচকে গিয়েছে। চুলগুলো সাদা হয়ে আছে। হিমুর ভেতর অজানা ভয়ে কাঁপতে লাগলো। সে ভয়ে পেছনে ঘুরে কংকাকে দেখার সাহস পেলো না।
To be continue….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here