আড়ালে অনুভবে পর্ব ১০

#আড়ালে_অনুভবে
#সাদিয়া_আফরিন_প্রতিভা
#পর্বঃ১০
সারা বিয়েবাড়ি জুড়ে পিনপিন নিরবতা বিরাজ করছে।সবাই মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।অবস্য থাকবে নাই বা কেনো?এমন কি কখনো হয়েছে?বিয়ের আসরে বড় এবং কনে দুজনেই গায়েব।🥴

বিয়েবাড়িতে সবার ই মন মেজাজ খারাপ শুধু প্রভা আর নিরব বাদে।এক কোনায় দাঁড়িয়ে দুজন ঠোট চেপে নিজেদের হাসি আটকাচ্ছে।সবার এমন অবস্থা দেখে দুজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে আড়ালে হাই ফাইভ দিলো।

ফ্লাসব্যাক—–
রোদ্দুর যখন ওসব কথা ভাবছিলো ঠিক তখনি ওর ঘড়ের দড়জায় কেউ নক করে।রোদ্দুর সিগারেট টা ফেলে দিয়ে দড়জা খুলতেই প্রভা কে দেখতে পায়।
রোদ্দুর:একি প্রভা,তুমি এখানে?তোমার তো এখন বিয়েতে থাকার কথা।

প্রভা:দুটো মানুষকে একসঙ্গে কষ্ট পেতে দেখে কি করে চুপ করে থাকি বলুন তো ভাইয়া?

রোদ্দুর:ক কি বলতে চাইছো তুমি?

প্রভা:জানেন তো ভাইয়া।রোদ আপু প্রতিদিন রাতে কাদে,প্রচুর কাদে।তার মুখে শুধু একটাই কথা, “দেখবি বোন,রোদ্দুর ঠিক আসবে।আমার বিশ্বাস মিথ্যে হয়ে যেতে পারেনা”।কিন্তু ওড় বিশ্বাস টা কে তো আপনি ই মিথ্যে করে দিলেন।আপনাকে ছাড়া আপু বেচে থেকেও মরে যাবে ভাইয়া।আমি আজ আপনার কাছে হাত জোড় করে অনুরোধ করছি।আপুকে বাচান,এখনো সময় আছে ভাইয়া।

রোদ্দুর বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।সে তো ভেবেছিলো রোদেলা নিজের ইচ্ছেতে বিয়ে করতে চায়।কিন্তু এমন কিছু সে কল্পনাও করতে পারেনি।

প্রভা:আপনি সত্যি করে বলুন তো ভাইয়া। ভালোবাসেন না আপুকে?যদি আপনার উত্তর না হয় তাহলে আমি কথা দিচ্ছি,চলে যাবো এখান থেকে।আপনাকে আর ডিস্টার্ব করবো না।

রোদ্দুর এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।প্রভা কে কোনো উত্তর না দিয়ে পাশ কাটিয়ে ছুটে চলে যায়।রোদ্দুর কে বেড়িয়ে যেতে দেখে প্রভা ঠোটের কোণে তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে।নিজেও পা বাড়িয়ে চলে রোদ্দুর এর পিছন পিছন।
অন্যদিকে–
সাড়া রুম এ পায়চারি কিরে চলেছে আহান।এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১০০ বার রাউন্ড দেওয়া হয়েছে। বারবার দড়জার দিকে তাকিয়ে নিরব কে খুজে চলেছে।আরো একবার পুরো রুম এ রাউন্ড দিয়ে দড়জার দিকে তাকাতেই দেখলো নিরব তাড়াহুড়ো করে রুমে ঢুকে দড়জা লক করে দিচ্ছে।নিরব কে দেখে যেনো জানে পানি আসলো আহান এর।
আহান: তোর আসার কি দরকার ছিলো?আরো পরে আসতি!এখনি সবাই এসে পরবে আমাকে ডাকতে।তুই বরং বিয়েটা শেষ হওয়ার পরে আসতি তাহলেই আরো ভালো হতো।

নিরব:এই শালা চুপ কর।আর একটা কথাও না বলে এটা পরে নে।
(কথাটা বলেই হাতে থাকে প্যাকেট থেকে একটা বোরখা বের করে আহান এর হাতে ধরিয়ে দেয়। আহাত এবার হতভম্ব হয়ে যায়)

আহান:তোর কি আমারে মাইয়া মনে হয়?আমি এইডা পরমুনা।

নিরব:পরবিনা মানে কি?তাহলে তোকে বাড়ি থেকে বের করবো কি করে?

আহান:মানে কি?আমার সুস্থ সবল দুটো পা আছে।চল বেড়িয়ে যাই।
(কথাটা বলেই দড়জার দিকে যেতে নিলো আহান।নিরব টান দিয়ে ওকে আটকালো)

নিরব:আববে গাধার বাচ্চা তোর কি মাথা টা গেছে?তুই এইভাবে বরের পোষাকে বাসার সবার সামনে দিয়ে বেড়িয়ে যাবি আর সবাই তোকে বেরোতে দিবে?

আহান:হ ভাই,সেটা ঠিক।কিন্তু তার জন্য বোরখা পড়তে হবে?

নিরব:তোর নিশাত কে চাই?

আহাত:১০০ বার চাই হাজার বার চাই।

নিরব:তাহলে তাড়াতাড়ি পরে নে এটা।
(আহান এবার আর কোনো উপায় না পেয়ে বোরখা টা পরে নিকাব বেধে নেয়।নিরব এবার খুব সাবধানে ওকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। কাজে ব্যাস্ত থাকায় কেউ খেয়াল করেনি।)

এদিকে–
রোদ্দুর গাড়ি নিয়ে সোজা চলে আসে রোদেলার বাড়ি তে,সাথে প্রভাও ছিলো।প্রভা আর কিছুই জিজ্ঞেস করেনি।শুধু এক দৃষ্টিতে রোদ্দুর কে দেখে যাচ্ছে,এতটাই যখন ভালোবাসে তাহলে ফিরিয়ে দিলো কেনো?
গাড়ি থামার পর প্রভা রোদ্দুর কে সাথে রোদেলার রুমে চলে যায়।রুমে শুধু রোদেলাই ছিলো,বাকিরা একটু বাহিরে গেছে।
রোদেলা তখন ও নিঃশব্দে চোখের অশ্রু ঝড়াচ্ছে। তখনি খটখট আওয়াজ এ দড়জা খোলার আওয়াজ পায়।দড়জার দিকে তাকাতেই রোদ্দুর কে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায় সে।রোদ্দুর এসেছে!তার রোদ্দুর এসেছে!তার বিশ্বাস ভাঙেনি।
এক ঝটকায় খাট থেকে উঠে দাঁড়ায় সে।ইচ্ছে করছে এখনি গিয়ে রোদ্দুর কে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু তবুও মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বলে,

রোদেলা: আ আপনি এখানে কেনো এসেছেন? প্রভা উনি কেনো এসেছেন?ওহ,বিয়েতে নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন বুঝি?বেশ,কিন্তু আমার রুম এ কেনো?বের…

প্রভা:বেশি কথা বলার সময় নেই আপু।রোদ্দুর ভাইয়া তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছে।

রোদেলা:মা মানে?ব বললেই হলো নিয়ে যেতে এসেছেন?কোথায় নিয়ে যাবেন হ্যা!

রোদ্দুর:জাস্ট শাট আপ।মুখ টা বন্ধ রেখে চলো আমার সাথে।

রোদেলা:আমি যাবোনা।ক কেনো যাবো হ হ্যা?
(রোদ্দুর এবার রোদেলার কাছে এসে দু হাত দিয়ে কাধ চেপে ধরে)

রোদ্দুর:কারণ তুমি শুধু আমার।শুধু রোদ্দুর এর।নিজের চোখের সামনে টোমাকে অন্য কারোর হতে দেই কি করে?
(রোদেলার চোখ দিয়ে এবার নোনাজল বেড়িয়ে আসে।সে পেরেছে,পেরেছে নিজের ভালোবাসা দিয়ে রোদ্দুর এর মন জয় করতে।এই মানুষটা এখন শুধুই তার রোদেলা বেলার রোদ্দুর)

প্রভা:তোদের যত কথা আছে সব পরে বলিস প্লিজ।এখন দয়া করে চল।

রোদেলা:ন না প্রভা

প্রভা:এখন আবার কি হলো?

রোদেলা:আমি এখন চলে গেলে আব্বুর মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে।আমি এটা কিছুতেই হতে দিতে পারিনা।

প্রভা:ওয়েট..
(কথাটা বলেই হাতের থাকা ফোন দিয়ে কাউকে ফোন করে।তারপর লাউড স্পিকার এ দিয়ে দেয়)
প্রভা:হ্যালো!

নিরব:হ্যা বলো..

প্রভা:আহান ভাই এখন কোথায়?

নিরব:এইতো আমার সঙ্গেই আছে,নিশাত ও আমার সঙ্গেই।ওদের নিয়েই কাজি অফিস এ যাচ্ছি।

প্রভা:গুড।কিন্তু ওদের নিয়ে কোথাও যাওয়ার দড়কার নেই।ওদের নিয়ে এ বাড়িতে চলে আসুন।

নিরব:হোয়াট!কিন্তু কেনো?

প্রভা:যা বললাম তাই করুন।রাখছি আমি।

(প্রভা কল টা কেটে দেয়।রোদ্দুর আর রোদেলা দুজনেই অবাক হয়ে গেছে।ওরা কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রভা বলে ওঠে)
প্রভা:হুশশ..কিচ্ছু বলবে না।এখন আমই যা বলছি তাই করবে।
(প্রভা এবার রোদেলা আর রোদ্দুর কে ব্যালকনি তে নিয়ে যায়।সেখানে ও আগে থেকে মই এর ব্যাবস্থা করে রেখেছে।রোদেলা আর রোদ্দুর এবার প্রভার কথা অনুযায়ী সেখান থেকে নেমে বেড়িয়ে যায়)

ফ্লাসব্যাক ওভার—–
নিরব আর প্রভা একে অপরের দিকে তাকিয়ে ইশারায় সম্মতি জানায় মানে ওদের কাজের টাইম এসে গেছে।
প্রভা:রোদেলা আপু কোথায় আছে সেটা আমি জানি।

নিরব:আর আহান কোথায় আছে সেটা আমি জানি।
(সবাই অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকায়।ওরা এবার পিছনে তাকিয়ে কাউকে ভিতরে আসতে বলে।
পিছন থেকে এবার সুপ্তি আর অঙ্কিত বেড়িয়ে আসে।আর তাদের পাশে রোদেলা-রোদ্দুর আর নিশাত-আহান)
রোদেলার মা:রোদেলা তুই!কোথায় চলে গিয়েছিলিস?আ আর তোর পাশে এই ছেলেটা কে?

আহানের বাবা:আহান,তোর পাশে এই মেয়েটা কে?

নিরব:ওয়েট ওয়েট!সবার করফিউসন আমি ক্লিয়ার করছি (নিরব এবার ওদেরকে সবটা খুলে বললো যে ওরা একে অপরকে ভালোবাসে।)

আহানের মা:বাবা তুই আমাদের একবার টি বলতে পারতিস।আমরা তো তোর মতামত জানিতে চেয়েছিলাম

আহান:আই এম সরি আম্মু,আসলে আমি তখন তোমাদের মুখের উপর কিছু বলতে পারিনি তাই।

আহানের মা এবার নিশাত এর কাছে গিয়ে মুচকি হেসে ওর কপাতে চুমু খেলেন।খুব সহজেই মেনে নিলেন ওকে।আহান কে সামান্য কথা শোনালেও তেমন কিছুই বলেনি।
প্রভা এবার রোদেলার মা বাবার কাছে গেলো। অনেক বোঝানোর পর ওনারাও রোদ্দুর কে মেনে নিলেন।সিদ্ধান্ত নিলেন এই আসরেই রোদেলা আর রোদ্দুর এর বিয়ে দেবেন।রোদ্দুর এর আম্মু আব্বু খুব ছোটবেলাতেই মারা যায়,তখন নিশাত অনেক ছোট।তাই ওর গার্জিয়ান বলতে তেমন কেউ নেই।রোদ্দুর ও আর বিয়েতে আপত্তি করলোনা।
আহান এর মা বাবা ঠিক করলেন আহান আর নিশাত এর ধুমধাম করে বিয়ে দিবেন।
কাজি এবার বিয়ে পরানো শুরু করলেন।কবুল বলা সম্পন্ন হওয়ার পর সবাই একসঙ্গে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো।
সবাই রোদেলা আর রোদ্দুর এর দিকে ফুল ছুড়লো।কিন্তু নিরব বারবার শুধু তার পাশে প্রভার দিকেই তাকাচ্ছে।বারবার প্রভার দিকে ফুল ছুরছে।প্রভা এবার বিরক্ত হয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিরব এর দিকে।নিরব মুচকি হেসে আবারো সেই একই কাজে মন দেয়।

#চলবে

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here