#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ-২৯
টেবিলের ওপরে রাখা কাজ দুটো বাতাসে, ঘন ঘন উড়ছে। বুক ম্যাট সরিয়ে কাগজ টা হাতে নিয়ে পৃষ্ঠা গুলো চেক করলো।
আয়শা হাতে দিয়ে নাছিম বললো…
” খবরটা হলো, এই যে, পরশু দিন রাশিয়ান ব্রেন্ডের সাথে ফাইনাল ডিল টা হবে, সিলেটে। অফিস থেকে আপনার লেটার এসেছে। ”
আয়শা লেটার টার দিকে তাকালো। নাছিম বললো..
” ড্রেসের মডেল গুলো আপনি প্রজেক্টরে শো করে ডিটেইলসে বলবেন৷ ডিলটা হয়ে গেলে আপনার প্রমোশন পাক্কা। ”
আয়শা মনে মনে খুশি হলো। কিন্তু সমস্যা হলো, আয়শা ইংলিশে দূর্বল। কি ভাবে ডিটেইলসে কথা বলবে।
” কিছু ভাবছেন মিস, আয়শা?”
” হুম। আসলে স্যার আমার ইংলিশ স্কিল খুব একটা ভালো না… ”
নাছিম একটু হাসলো। পকেটে হাত হাত দিয়ে বললো..
” ওনারা বাংলাদেশের অনেক প্রডাক্ট কিনেছে। বাংলা ভাষা তাদের জানা আছে। আপনি বাংলাতেই বলবেন।”
” ওকে স্যার। ”
” পরশু দিন সকাল সাতটায় সিলেটের জন্য রওনা হবো। মনে থাকে যেনো। ”
” মনে থাকবে স্যার। ”
বলেই আয়শা নাছিমের কেবিন থেকে বেড়িয়ে নিজের ডেক্সে গেলো। মনে মনে তার বেশ আনন্দ হচ্ছে, প্রমশন টা হয়ে গেলে আয়শা ‘নাছিম ফ্যাশন ওয়াল্ডের’ চিফ ফটোগ্রাফার হবে, ভাবতেই আয়শার খুশি খুশি লাগছে।
————– সন্ধ্যা বেলা ———
কিছুক্ষণ আগেই আয়শা বাড়ি ফিরেছে। তখন হুড়াহুড়ায় সিলেট যাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেও বাবার কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার কথায় আয়শা বেমালুম ভুলে গেছিলো। আয়শার বাবা মেয়েদের স্বাধীনতা দিলেও কখনো ঢাকার বাইরে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেন নি। যদিও ওরিন অনেক বার শিক্ষা সফরে গেছিলো সেটার বিষয় আলাদা।
ভাবতে ভাবতে আর টেনশনে আয়শার মাথায় চাপা ব্যাথা শুরু হয়েছে। কি ভাবে সে অনুমতি চাইবে বাবার কাছে বাবা অনুমতি দিবে তো? আয়শা ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘড়ের দিকে গেলো চা বানাতে। দু কাপ চা বানিয়ে, আয়শা বারান্দায় গেলো। আফজাল সাহেব রকিং চেয়ারে বসে তাসবি পড়ছেন।
আয়শা বাবার হাতে চায়ের কাপটা দিয়ে, সোফায় বসলো। নিজে চায়ে চুমুক দিলো। আফজাল সাহেব তাসবি পড়া শেষ করে চা খেতে শুরু করলেন। আয়শা কি ভাবে কথা বলা শুরু করবে ঠিক বুঝতে পারছে না। আয়শা ক্ষানিকটা ভেবে বললো…
” বাবা চা টা কেমন হয়েছে?”
” ভালো হয়েছে। তুই কি কিছু বলবি। ”
” হ্যাঁ বাবা৷ আসলে বুঝতে পারছিনা, তুমি আমাকে অনুমতি দিবে কি না। ”
” কি হয়েছে? ”
” কোম্পানির প্রডাক্টের ডিলের জন্য পরশু সিলেট যেতে হবে। আর আমাকে প্রজেন্টেশনের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷ ”
” ইম্পর্ট্যান্ট হলে, তো যেতেই হবে৷ ”
” বাবা তুমি যদি অনুমতি দাও তাহলে যাবো।”
” হ্যাঁ যাবি। ঢাকার বাইরে যাস না তার মানে তো এই না যে কোথাও যেতে পারবি না। চাকরি আমিও করেছি। সব কিছু সিরিয়াস ভাবে নিতে হবে মা। ”
আয়শার চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো। বাবা অনুমতি দিয়েছে ভাবতেই তার অবাক লাগছে। নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। আয়শা ভেজা চোখের পাপড়ি গুলো বাম হাত দিয়ে মুছে বাবা কে বললো…
” থ্যাংক ইউ বাবা।”
” মন দিয়ে চাকরিটা কর। আশা করি তুই এগিয়ে যাবি।”
আয়শা হালকা হেসে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো। আফজাল সাহেব চা খেতে খালি কাপটা টি-টেবিলে রাখলেন। আয়শা খালি কাপটা নিয়ে রান্না ঘরে রেখে এলো৷ মাথা থেকে চিন্তার বোঝা নামাতে পেরে বড্ড হালকা লাগছে আয়শার।
আয়শা রুমে গিয়ে, বিছানায় ধাপাস করে শুয়ে পড়লো। ওরিন টেবিলে বসে গুন গুনিয়ে পড়তে পড়তে আয়শার দিকে তাকালো, ফ্যানের বাতাসে আয়শার চুল গুলো ঝুড় ঝুড় করে উড়ছে। আয়শার চেহারায় খুশির ছাপ।
ওরিন পড়া বন্ধ করে আয়শার উদ্দেশ্য বললো…
” কি ব্যাপার এভাবে শুয়ে পড়লে যে?”
আয়শা ওরিনের দিকে তাকিয়ে বললো..
” পরশু অফিসের কাজে সিলেট যাচ্ছি। বাবার কাছে যাওয়ার পার্মিশন পেয়েছি। ”
ওরিন খুশি খুশি হয়ে বললো…”ওয়াও তুমি সিলেট যাচ্ছো?”
” হুম। পরশু। ”
” তোমার বস যাবে না?”
আয়শা ভ্রু নাচিয়ে বললো..” কেনো রে?”
” এমনি জিজ্ঞেস করলাম। তোমার বস কে যা ভাল্লাগে না। ওনার চেহারা টা, আমার পরিচিত একটা ছেলের সাথে খুব মিলে।”
আয়শার কপালে ভাজ পড়লো, এই মেয়েটা বলে কি, খারুস কে ভালো লাগে? খারুস কে তো আয়শার ও ভালো লাগে। নাহ নাহ। ওরিন কে তো ভালো গলতে দেয়া যাবে না, নাছিম স্যারের নামে দু চারটা বদ নাম বলতে হবে। আয়শা গলা খেকিয়ে বললো..
” শোন নাছিম স্যার কে তোর ভালো লাগে না। ওই পরিচিত ছেলে টাকে হয়তো তোর ভালো লাগে। তাই দুজনের চেহারা গুলিয়ে ফেলছিস।”
” জানো আপু, চেহারা না অনেকটা মিলে৷ ”
” এমন টা হয়, ওরিন। এতো টা ভাবিস না। ”
ওরিন হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো৷ আয়শা আয়শা আবার বলতে শুরু করলো…
” তুই জানিস ওই খারুস টার গার্লফ্রেন্ড আছে। ওকে পছন্দ করিস না। ”
” তাই নাকি। তুমি জানলে কি ভাবে গার্লফ্রেন্ড আছে?”
আয়শা কিছু একটা ভেবে বানিয়ে বানিয়ে বললো…
” ওনার বোনের বিয়েতে দেখেছি। ”
আয়শা মিথ্যা বলে জিব্বাহ কাটলো। ওরিন কিছুটা নিরাষ হয়ে বললো…
” ও আচ্ছা। ওনাকে না তোমার সাথে খুব মানাতো। ”
” ধুর। কি যে বলিস। কোথায় মালিক কোথায় কর্মচারী।”
বলেই আয়শা হেসে উড়িয়ে দিলো। নাছিম হলো আকাশের মতো তার থোড়ি না সাধ্য আছে, নাছিমের কাছে যাবার৷ নাছিম কে সে দেখতে পারবে অনুভব করতে পারবে কিন্তু কাছে যাবার কোন যোগ্যতা আয়শার হয় নি।
আয়শা ফ্যানের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে৷ ওরিন আর কিছু বললো না। সে আবার পড়ায় মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করলো। আয়শা বোধহয় নাছিম কে খুব অনুভব করছে, আয়শার চোখের কোনা বেয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।
“”” সব কিছু ধরা ছোঁয়া যায় না, দূর থেকে শুধু অনুভব করতে হয়!””
~রুহি জাহান(মায়া)
~~~~~~~~~~~~~~~~~
সকাল বেলা…..….
আয়শা চুলায় ভাত বসিয়েছে, চুলোর পাশে দাঁড়িয়ে সবজি কাঁটছে। ওরিন ঘুম ঘুম চোখে আয়শার পিঠে হেলান দিয়ে বললো…
” গুড মর্নিং আপাই..”
” গুড মর্নিং। এতো তাড়াতাড়ি উঠলি যে?”
” রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে ছিলাম। তাই সকাল সকাল ঘুম ভেঙ্গেছে। ”
” আদা চা খাবি?”
” উমম আচ্ছা।”
বসার ঘর থেকে, আফজাল সাহেব আওয়াজ দিয়ে বললেন..
” আমার জন্য এক কাপ দিস মা। ”
আয়শা চুলায় চা বসিয়ে দ্রুত সবজি কেটলো। আগামীকাল সকালে, সিলেটের জন্য রওনা হবে, অনেক বছর পর আয়শা ঢাকার বাইরে যাবে। ভাবতেই বেশ ভালো লাগছে। আয়শার আর নাছিমের সাথে আর কে কে যাবে। আয়শা খুব জানতে ইচ্ছা করছে । ইচ্ছা করলেই বা কি?ওই খারুস টাকে আয়শা মটেও ফোন দিবে না। হুহ খালি ভাব নেয়।
কিছুক্ষণ আগেই আয়শা অফিসে ঢুকেছে। রিসিপশনে রিমির পরিবর্তে আরেক টা মেয়ে এসেছে। ভাবতেই আয়শার খুব অবাক লাগছে, কারো অবস্থান খালি থাকে না, এক জন মানুষের জায়গা আরেক মানুষ নিয়ে নেয়। হয়তো প্রকৃতিরই নিয়ম।
আয়শা দৈর্ঘ্য শ্বাস ফেলে নিজের ডেক্সে গেলো। ডেক্সে গিয়ে বসতেই আয়শার চোখ গেলো নাছিমের কেবিনের দিকে। নাছিম ম্যানেজার স্যারের সাথে কথা বলছে। আয়শা কম্পিউটার অন করে গালে হাত দিয়ে নাছিমের দিকে তাকিয়ে রইলো। কথা বলতে বলতে হঠাৎ নাছিম আয়শার দিকে তাকাতেই আয়শা কম্পিউটারের মনিটরের দিকে তাকালো।
খারুস টা বুঝেনি আয়শা তারই দিকে তাকিয়ে ছিলো এতোক্ষণ, আয়শা মনে মনে হাসলো। আয়শা নিজের কাজে মন দিলো।
দুপুর দু’টোর দিকে আয়শার ডেক্সের টেলিফোনটা শব্দ হলো। আয়শা ফোনটা কানের কাছে নিতেই ফোনের ওপাশ থেকে বললো…
“#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya
পর্বঃ-৩০
পাশে থেকে টেলিফোনের ভু ভু শব্দ আসছে। ফোনটা তুলে কানের কাছে নিতেই ফোনের ওপাশ থেকে পরিচিত কন্ঠে কেউ বললো…
” হ্যালো। মিস, আয়শা.. ”
আয়শার ডেক্সের বরাবর কেবিনের দিকে তাকিয়ে বললো..
” জ্বি স্যার? ”
” দুপুর দুটো বাজে। বাসায় গিয়ে রেস্ট নিন৷ কালকে লং জার্নি করতে হবে। ”
” ওকে স্যার। ”
নাছিম ওপাশ থেকে ফোনটা কেটে দিলো। আয়শা নিজের জিনিস পত্র গুছিয়ে নিচ্ছে, নাছিম আয়শার দিকে তাকালো। আশা বাসন্তী রঙের কুরতি পরেছে, ক্ষানিকটা রোদের আলোতে শুভ্র দেখাচ্ছে৷ নাছিম চেয়ার ঘুরিয়ে, আয়াশা কে দেখছে। আয়শার মুখের সামনে এলোমেলো কিছু চুল নড়ছে, আয়শা ক্ষানিকটা বিরক্ত হয়ে চুল গুলো, কানের পিঠে গুঁজলো। অবাধ্য চুল গুলো তবুও খুব জ্বালাতন করছে, আরেক অবাধ্য রমণীকে।
আয়শা সাইড ব্যাগটা নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো৷ দুপুর তিনটার দিকে বাসায় যেতেই, আয়শা ক্লান্তিতে বিছানায় শুয়ে পড়লো। রুম ফাঁকা ওরিন এখনো কলেজ থেকে ফেরেনি।
শান বাধানো পুকুরের পারে ব্রেঞ্চিতে তনু আর ওরিন নোটস মিলাচ্ছে। গাছ থেকে কয়েকটা লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি তাদের ওপরে পরছে। তনু কয়কটা চিপস খেতে খেতে বললো…
” সে দিন ফরিদ ভাই আমাদের ছেড়ে দিলো, ভাবতেই আমার না খটকা লাগছে। ”
ওরিন মনোযোগ দিয়ে নোটস লিখছে, তনুর দিকে এক পলক তাকিয়ে বললো…
” এই সেইম প্রশ্ন টা আমার মাথায় এসেছিলো৷ এতো দামি টায়ার নষ্ট করলাম তাও একটা না চারটা, বোরখা দুটো ফেলে দেওয়া ছাড়া আর কোন রি-একশনই নেই। ”
” অবাক করার বিষয়। তোর দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলো। ”
” তাতে কি হয়েছে? ”
” আমার মনে হয় ফরিদ ভাই তোকে লাইক করে। ”
” কি যা তা বলছিস। মাথা ঠিক আছে তোর?”
” ঠিকই আছে দোস্ত। জাস্ট মনে হইলো। ”
ওরিন তনুর কথা আমলে না নিলো। আরো কিছুক্ষণ নোটস লিখে, কলেজ থেকে বের হলো। রাস্তার এক পাশে ওরিন রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছে৷ অপর পাশে ফরিদ এক্সাম শেষে কলেজের বিপরীত পাশের টং দোকানে চা খাচ্ছে। আর বাধনের সাথে কথা বলছে।
কথায় কথায় ফরিদ হঠাৎ হাসলো, ওরিন খেয়াল করে দেখলো ফরিদ হাসলে তার গালে খুব সুন্দর একটা টোল পড়ে। ওরিনেরো ছোট বেলার খুব শখ ছিলো বড় হলে তার গালে টোল হবে। ওরিন বড় তো হলো কিন্তু গালে টোল দেখা গেলো না। ওরিনের সব ধারণা মিথ্যা হয়ে গেলো।
” আপা কই যাইবেন? ”
ক্ষানিকটা দূরের থেকে রিকশাওয়ালার ডাকে,ওরিনের ধ্যান ভাংলো। ফরিদ ওরিনের দিকে তাকালো, ওরিন দ্রুত রিকশায় উঠে পড়লো। বাসায় ফেরার পর ওরিন দেখলো, আয়শা বিছানায় ঘু মাচ্ছে। আজ মনে হয় আগে ছুটি নিয়েছে আয়শা আপা। ওরিন শাওয়ার নেয়ার জন্য বাথরুমে গেলো।
”””””””””””””””””””””””””””””””””
সন্ধ্যা সাতটা কি সারে সাতটা। ওরিন কাপর ভাজ করে ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছে। আয়শা আলমারি কাছে দাঁড়িয়ে জামা কাপর ওরিনের হাতে দিচ্ছে। আগামী কাল সকালে সিলেটের উদ্দেশ্য রওনা হবে। বাসে যাবে নাকি ট্রেনে আয়শা নিজেও সঠিক জানে না। বাসের গন্ধে আয়শার বড্ড বমি পায়৷ যেহেতু নাছিম স্যার যাবেন, বাসে জার্নি করার কোন চান্স নেই। কোম্পানির মালিক পাবলিক বাসে না চড়ার সম্ভবনা বেশি।
প্রথম বার ট্রেন জার্নি করবে ভাবতেই আয়শার ভালো লাগছে। মাত্রায় এক্সাইটেড হওয়ার ফলে সে রাতে আয়শার ঘুম হলো না। ভোরের দিকে চোখ ঘুমে বুজে এলো।
আয়শার ঘুম ভাংলো সকাল সাত টায়। নাছিমের সতেরোটা মিস কল দেয়ার অওর ফোনের রিং টোনের শব্দে আয়শার ঘুম ভাংলো। ফোন স্ক্রিনে ঘুম ঘুম চোখে ঝাপসা নাছিমের নাম দেখতেই আয়শার পিলে চমকে উঠলো..
আয়শা ফ্রেশ হয়ে দ্রুত রেডি হয়ে নাছিম কে কল দিলো। নাছিম ফোন রিসিভ করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো…
” এখন কয়টা বাজে মিস আয়শা?”
” আটটা বাজে স্যার.. ”
” আর আমাদের রওনা হবার কথা ছিলো। সাতটায় এক ঘন্টা লেট করেছেন। ”
আয়শা চুপ করে রইলো , এই মূহুর্তে তার কি করা উচিত বুঝতে পারছে না সে। ফোনের ওপাশ থেকে নাছিম বললো…
” আপনাদের বাসার মোড়ে আসুন। কুইক..”
” আসছি স্যার। ”
বলেই আয়শা ফোনটা কেটে দিলো। বাবার কাছ থেকে থেকে ওরিনের কাছে বিদায় নিয়ে দ্রুতো বের হলো। কয়ক মিনিটের মধ্যেই আয়শা বাসার মোড়ে পৌঁছে গেলো। নাছিম গাড়ির গ্লাস টা নামিয়ে আয়শা কে ইশারা করলো। আয়শা রাস্তা পার হয়ে গাড়ির ডোর খুলতেই আয়শা দেখলো নাছিম ছাড়া গাড়িতে আর কেউ নেই।
” কি ভাবছেন। ভেতরে বসুন, লেট হচ্ছে তো। ”
আয়শা নাছিমের পাশের সিটে বসলো। কিছুটা অবাক হয়ে বললো..
” স্যার আর কেউ যাবে না?”
” আর কে যাবে?”
” ম্যানেজার স্যার, চিপ সেক্রেটারি স্যার..”
” ওনারা চলে আসলে আমার অনুপস্থিতিতে অফিস সামলাবে কে? তাই সি.ই.ও আর প্রডাক্ট প্রেজেন্টেশন যিনি করবেন সে যাবে মানে আপনি আর আমি। ”
আয়শা চুপ করে বসে রইলো। লং জার্নি করতে হবে এই খারুস টার সাথে৷ আয়শা এতোক্ষণ কথা না বলে কি ভাবে থাকবে। আশে পাশে কেউ থাকলেই তো আয়শার বড্ড কথা বলতে ইচ্ছা হয় গল্প করতে মনে চায়৷
আয়শা কথা থেকে নিজেকে বিরত রাখার জন্য, বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো। সকাল আটটা বাজে রাস্তায় কোন ভীর নেই। নেই কোন কোলাহল। যানজটহীন রাস্তাটায় সকালের আলোতে চিক চিক করছে। চারিদিক বেশ সুন্দর লাগছে।
প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেলো নাছিম ড্রাইভ করছে, রেইল স্টেশনে এতো ক্ষনে তো চলে আসার কথা। আয়শা খেয়াল করে দেখলো এটা ঢাকা থেকে অনেকটা বেরিয়ে গেছে,গাড়ি গাবতলী ছাড়িয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। আয়শা নাছিম কে বললো…
” স্যার আমরা কোথায় যাচ্ছি।”
” উগান্ডা যাচ্ছি। ”
আয়শা ভেংচি কাটলো। নাছিম ড্রাইভিংয়ে মন দিয়ে বললো..
” জানোই তো সিলেট যাচ্ছি।”
তার মানে গাড়ি দিয়ে সারা টা পথ পাড়ি দিতে হবে ভাবতেই আয়শার দুঃখ কিছুটা বেরে গেলো, আয়শার ট্রেনে চড়া হলো না। ভেবেছিলো, ট্রেনে হয়তো একটু স্পেস পাবে এই খারুস টার থেকে, আয়শার আশায় সেগুরে বালি দিয়ে দিলো। এই খারুস টা।
শহর থেকে ধীরে ধীরে গাড়ি অন্য দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। চারিদিকে এখন শুরু শাড়ি শাড়ি আম গাছ এবং মেহগনি গাছ। আয়শা ক্ষানিকটা জানালা ফাঁকা করে দিলো। বাইরে থেকে বেশ বাতাস আসছে। বাতাসের কারনে কয়েক টা চুল আয়শাকে বেশ জ্বালাতন করছে।
আয়শা চুল গুলো কানের পিঠে গুজে , বাইরের প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে গাইতে শুরু করলো….
“আজ এক নাম না জানা কোন পাখি
ডাক দিল ঠোঁটে নিয়ে খড়কুটো
আজ এলো কোন অজানা বিকেল
গান দিলো গোধূলি এক মুঠো
তুমি যাবে কি? বলো যাবে কি?
দেখো ডাকছে ডাকলো কেউ
তুমি পাবে কি? পা পাবে কি?
সামনে বেপরোয়া ঢেউ
ছুঁয়ে দিলে সোনা কাঠি খুঁজে পাই
যদি যাই ভেসে এমনি চাই।
টুপটাপ বৃষ্টি ফোটা গেল থেমে
ভেজা ভেজা খিড়কি দরজা তুমি খোলো
আজ এক নাম না জানা কোন হাওয়া
চোখ বুজে ভাবছে বেয়াদব ধুলো…”
নাছিম অবাক হয়ে কয়েক মূহুর্ত তাকাচ্ছে আবার ড্রাইভ করছে। আয়শা এতো ভালো গান গাইতে পারে, তা নাছিমের আগে জানা ছিলো না। আয়শা চুলের ঝুটিটা খুলে ফেলেছে। বাইরের বাতাসের সাথে সাথে আয়শার চুলের ঘ্রাণ নাছিমের নাকে লাগছে..
নাছিম গাড়ি ব্রেক করে, আয়শার উদ্দেশ্য বললো..
” আপনার চুল থেকে স্মেইল আসছে। ”
আয়শা হেসে উত্তর দিলো..
” স্মেইল তো আসবে কারন আমি চুলে ব্যাবহার করি, বাজাজ আমন্ড অয়েল। ”
নাছিম কিছুক্ষণ আয়শার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। মেয়টা তেলের প্রমোট করলো নাকি। আয়শা নাছিমের চাহুনিতে অসস্তি অনুভব করছে। আয়শা বাইরের দিকে তাকিয়ে বললো..
“গাড়ি থামালেন যে..?”
” সকাল দশটা বাজে নাস্তা করতে হবে তো?”
”
”
চলবে।