ইঁচড়েপাকা এবং সে❤️ পর্ব ৪৯+৫০

#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ–৪৯

শেহতাজ বেগম পরিচিত কন্ঠে নিজের নাম শুনে চেমকে গেলেন। সেই চেনা মানুষ টি তার সামনে, শেহতাজ বেগম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।
শেহতাজ বেগম তখন সবে মাত্র কলেজে উঠেছেন। উঠতি বয়ষে প্রচুর দুষ্টু ছিলেন কিশোরী দুষ্টু মেয়েটি কালাম সাহেবের মন কেড়ে নিয়েছিলেন। লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করা, চিলেকোঠার ঘড় থেকে চিঠি আদান প্রদান কত না সুন্দর সময় ছিলো সেগুলো। শেহতাজ বেগমের চোখের সামনে ভাসছে, সব।

কালাম সাহেব শেহতাজ বেগমের কাছে এসে দাঁড়ালেন, স্মিথ হেসে বললেন ” কেমন আছো শেহতাজ। ”

” ভালো আছি৷ তুমি কেমন আছো? বুড়ো হয়ে, গেছো যে।”

” তুমিও তো বুড়ি হয়ে গেছো। ”

” বুড়ি হবো না। বয়স তো আর কম হয় নি। স্বামী চলে গেলো, একমাত্র ছেলে চলে গেলো, এখন নাতী নাতনী দের কে নিয়ে দুনিয়া। তোমার বউ কেমন আছে?”

” আয়শার মা মারা যাবার শোকে এক মাসের মাথায় আয়শার নানী হার্ট অ্যাটাক করে, তার পর কিছুমাস পর সে মারা গেছে। ”

” মানুষ কি অদ্ভুত না? পরিবার চাপে পড়ে যাকে বিয়ে করলাম সে আমায় ছেড়ে চলে গেলো। যার সাথে এতো গুলো বছর সংসার করলাম সে কি ভাবে আমার মায়া ছারলো? ”

” মায়া ছেড়ে চলে যেতে হয় শেহতাজ। আমারা ও এক দিন চলে যাবো। ”

শেহতাজ বেগমের চোখ দুটো ছল ছল করছে। কালাম সাহেব লাঠিতে ভর দিয়ে বললেন ” কেঁদো না শেহতাজ। তোমার বিয়ের পরে আমি ঢাকায় চলে আসি, চাচার হাত ধরে বিদেশ পারি দেই। তোমাকে ভুলতে পারি নি জানো? পরিবারের কথা চিন্তা করে আয়শার নানী কে বিয়ে করি। আমার দুটো মেয়ে হয়। ”

” আসলে কি জানো? মনের মধ্যে ভালোবাসাটা যদি শুদ্ধ হয় তাহলে, যুগ যুগ পরেও তা ভোলা সম্ভব হয় না। আমরা চাইলেও আমাদের মন আমাদের ভুলতে দেয় না। ”
শেহতাজ বেগম মনে মনে, বললেন ‘ টান ছিলো এই জন্যই হয়তো শেষ বয়সে আবারও তোমার সাথে দেখা হলো। ‘

______________________

কিছুক্ষণ আগেই বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। সবাই খেতে বসেছে, নাছিম এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে আয়শা এদিক সেদিক ছুটা ছুটি করছে। হঠাৎ আয়শার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে উঠলো। আয়শা ঠোঁট কামড়ে হাসলো। চুপি চুপি নাছিমের পেছনে একটা চেয়ার রাখলো, এবং চেয়ারের ওপর লাল টমেটো।

আয়শা মিষ্টির প্লেট নিয়ে গিয়ে নাছিম কে বললো, ” আপনি হলেন আমার একমাত্র বেয়াই। আপনাকে মিষ্টি না খাইয়ে পারি। ”
বলেই আয়শা জোর করে নাছিমের মুখে পুরে দিলো, নাছিম নড়তে গিয়ে ধাম করে চেয়ারে বসে পরলো। টমেটু চেপ্টা হয়ে ‘ পচ’ শব্দ হলো।

সবাই নাছিমের দিকে তাকিয়ে, আছে। নাছিম আয়শার দিকে তাকাচ্ছে আরেক বার সবার দিকে তাকাচ্ছে। মুখে মিষ্টি নিয়ে হাসার ভান করলো। কয়েক মূহুর্ত পর সবাই সবার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। আয়শা হাত হাত ভাজ করে, ভ্রু নাচিয়ে বললো..

” মিষ্টি টা কেমন লাগলো বেয়াই সাহেব। ”

” ভালো। খুব টেস্টি।”

” আচ্ছা। ” বলেই আয়শা বাঁকা দৃষ্টিতে তাকালো। নাছিম বললো ” আমি ওয়াশ রুমে যাবো? ”

” হ্যাঁ যান। না করেছে কে? ”

” ইয়ে মানে আপনি যদি একটু আসতেন। এতো মানুষের ভীরে বাসায় কিভাবে ঢুকবো?”

আয়শা মুখ টিপে হেসে বললো “আচ্ছা চলুন। ” নাছিম পাঞ্জাবি চেপে ধরে আছে আয়শা নাছিম কে দেখছে এবং মনে মনে হাসছে। আয়শা নাছিম কে ওয়াশ রুমের দিকে নিয়ে গেলো, নাছিম আয়শার কানে কানে বললো,” টমেটো থেরাপি দেয়াটা কি ঠিক হলো। ”

” বেশ হয়েছে। যান গিয়ে ফ্রেশ হোন। আমি বাবার টাইড দেখে একটা পাঞ্জাবি আনছি। ”

আয়শা পাঞ্জাবি টা নাছিমের হাতে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। নাছিম শীষ বাজাচ্ছে এবং পাঞ্জাবি পড়ছে। রেডি হয়ে ছাদে গেলো। আয়াশা কাছে গিয়ে বললো,” স্যার লাঞ্চ করবেন চলুন।”

” লাঞ্চের নাম করে আবার উল্লটা পালটা কিছু খাওয়াবেন না তো?”

” এ মা! কি যে বলেন না স্যার। আপনি বসুন আরাম করে খান।” নাছিম টেবিলে খেতে বসলো, আয়শা একটার পর একটা খাবার প্লেটে দিয়েই যাচ্ছে নাছিম খেয়ে শেষ করতে পারছে না। মুখের ওপর না ও করতে পারছে না। আয়শা মুখ টিপে হেসে বললো, “আরেক টু দিবো?”

” প্লিজ আর না। ”

ফরিদ, বাধন আরে কয়েক জন বন্ধু মিলে খাওয়া দাওয়া ব্যাস্ত।তনু সুযোগ বুঝে ফরিদের জুতো জোড়া সরিয়ে ফেললো। ওরিনের কানে কাছে ফুসুরফাসুর করে বললো” দোস্ত প্লেন সাক্সেস।”ওরিন হাসলো। খাওয়া দাওয়ার পর যখন ফরিদ জুতো খুঁজে না পেলো তখন সবাই বুঝে গেলো জুতো নিয়ে কেউ চম্পট দিয়েছে। তনু গিয়ে, বললো…
” জুতো খুঁঁজছেন?ওটা তো আমার কাছে?”

বাধন হেসে বললো,” আশে পাশে এতো হেন্সাম ছেলে থাক তে জুতো চুরি করলেন কেনো?মন তো চুরি করতে পারতেন। ”

তনু মুখ ভেংচি কেটে বললো ” ফ্লার্ট করছেন। ”

বাধন করুন সুরে,” ভাগ্যিস আপনি বুঝতে পেরেছেন। ”

” বুঝা বুঝি বাদ দেন, আগে টাকা ছারুন। জুতো নিন।”

” এই ফরিদ জুতোর দাম কত?”

ফরিদ বললো ” হাজার ছয়ের মতো হবে।”

” রাইট তাহলে আপনার জুতো বেঁচে টাকা নিয়ে নিন। আমার বন্ধুর জন্য আমি জুতো এনেছি।”

বলেই বাধন জুতো জোড়া ফরিদের পাঁয়ের সামনে রাখলো। রাগে গা শীর শীর করছে তনুও। সবাই হো হো করে হাসছে।তনু বাধন কে বললো ” আপনাকে ছারবো না। হুহ।”

বাধন হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,”আগে ধরুন। তার পর না হয়, ছাড়া ছাড়ি হবে।”
অনু ভেংচি মেরে চলে গেলো।

———————————
আফজাল সাহেব এক কোনায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ওনার চোখ দুটো ঘোলা হয়ে আসছে। বুকের এক কোনে ব্যাথা অনুভব করছেন ” একটু পরেই তো মেয়েটাকে বিদায় দিয়ে দিবেন। তার মেয়ে অন্যের বাড়ির বউ হয়ে এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে।”
ভাবতেই আফজাল সাহেবের কষ্ট হচ্ছে। অকারণে মেয়েটা কে ভুল বুঝেছিলো।মেয়েটা কতো কষ্ট বুকে জমিয়ে সে দিন কান্না করেছে।
“” বিয়ে যদি সামাজিক বন্ধন না হতো তাহলে হয়তো কোন বাবা-মা মেয়েকে বিদায় দিতো না।”””

আয়শা বাবা কে খুঁজেতে খুঁজতে
ছাদের এক পাশে যেতেই দেখলো, বাবা মাথা নিচু করে চোখ মুছছে। আয়শা বাবার কাধে হাত রাখলো। আফজাল সাহেব মেয়ের থেকে কান্না লুকানোর চেষ্টা করছেন। বাবার কান্না দেখে আয়শার ও কান্না পাচ্ছে। বাবারা এমন হয় কেনো?ভেতরে শত কষ্ট লুকিয়ে রেখে সন্তানের সামনে সব সময় হাসি মুখে তাকিয়ে থাকে। এর নাম হয়তো বাবা।

” বাবা তুমি কান্না করছো?”

” মেয়ের বিদায়ের সময় সব বাবা মায়ের কান্না আসে রে মা। ”

” বাবা তুমি কেঁদো না। মেয়ে বলে কি বিয়ের পর পর হয়ে যায়? তোমার মেয়ে তোমার মেয়েই থাকবে। ”

আফজাল সাহেব রুমাল দিয়ে চোখ মুছলেন। এই মেয়ে টার কথায় মনে হয় জাদু আছে। আয়শার কথায় এতো বল কি ভাবে মাঝে মাঝে নিজেও চিন্তা করেন আফজাল সাহেব। আফজাল সাহেব চোখ মুছে ওরিনের কাছে গেলো। ওরিন নানা কে জরিয়ে ধরে কান্না করছে, বাবা কে দেখে কান্নার গতি নেরে গেলো, ওরিনের সামনে তো শুধু তার বাবা নয় মাও দাঁড়িয়ে আছে, তার বাবাই তো তার মা। ওরিন একবার বাবার পানে তাকাচ্ছে আরেক বার বোনের পানে তাকাচ্ছে। আয়শার কান্না লুকিয়ে হাসি মুখে বোন কে শ্বশুর বাড়ি পাঠালো। কনে বিদায় এতো কষ্টের হয় কেনো?

রাত আটটা নাগাদ বর যাত্রী ধানমন্ডির উদ্দেশ্য বেরিয়ে গেলো। আফজাল সাহেব ডাইনিং টেবিলে চুপ করে বসে আছেন, নানা ভাই রুমে রেস্ট নিচ্ছে। ছোট খালামনি সহ বাকি মেহমান রা নিজের কাজে ব্যাস্ত। আয়শা কাজের সহকারী মহিলার সাথে কাজ করছে বাবার দিকে তাকাতেই দেখলো আফজাল সাহেব বুকে হাত দিয়ে বসে আছে। আয়শা এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এগিয়ে দিয়ে বললো..
” সারা দিনে তোমার অনেক ধকল গেছে বাবা রুমে গিয়ে রেস্ট নাও। ”

” যাচ্ছি মা। ” বলেই গ্লাস টা নিয়ে রুমে চলে গেলেন।
।#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-৫০

খোলা জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস আসছে। ওরিন জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ঠান্ড বাতাস তার খুব ভালো লাগে।
কিছুক্ষণ আগে রুমে কয়েক টা মেয়ে বসে বসে হাসি ঠাট্টা করছিলো। সারা দিনের ক্লান্তিতে ওরিনের ভীষণ টায়ার্ড লাগছে তার ওপর আবার ভারী গয়না শাড়ি।

ওরিন ফরিদের জন্য অপেক্ষা করছে, ঘড়িতে বারো টা পয়তাল্লিশ বাজে। ওরিন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসবে নাকি , ভাবছে। ওরিনের ভাবনায় ছেদ পড়লো দরজা খোলার শব্দে। ফরিদ দরজা আটকে দিলো, শেরোয়ানীর বোতাম খুলতে খুলতে বললো, ” এখনো ফ্রেশ হওনি? যাও ফ্রশ হয়ে ওযু করে এসো। ”

ওরিন ব্যাগ থেকে জামা নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হয়ে ওযু করে এলো। ফরিদ দুটো জায়নামাজ বিছিয়ে রেখেছে, ওরিন ফরিদ এক সাথে নামাজ আদায় করলো। নামাজ পড়া শেষ হতেই ফরিদ বাইরে চলে গেলো। ওরিন বিছানায় বসে আছে, তাজা গোলাপের গন্ধে ঘর টা মম করছে। বিছানায় পাপড়ি ছিটানো।

ফরিদ ঘরে ঢুকলো, হাতের পেছনে কিছু একটা লুকোনো। ফরিদ শিউলি ফুলের মালা বের করলো। ওরিন কে বললো ” আমি জানি তুমি শিউলি ফুল ভীষণ পছন্দ করো। ”

” হুম। করি। ”

” এই ফুল গুলো তোমার বাবার বাগানের থেকে চুড়ি করিয়েছি মারিয়াকে দিয়ে। তোমার জন্য মালা গেঁথে এনেছি। ” বলেই ফরিদ ওরিনের চুলে বেধে দিলো। ওরিন স্মিথ হাসলো। ফরিদ ওরিনের হাতের পিঠে চুমু দিলো। আগে ফরিদের দিকে তাকালে, রাগ লাগতো নানা রকম ফন্দি আটতো আর আজ ফরিদ কে দেখে ওরিনের ভীষণ লজ্জা লাগছে।

——————————–
সকাল আটটা কি সারে আটটা বাজে। কেউ এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। খালামনি আংকেল নিজের রুমে রেস্ট নিচ্ছে। নানা ভাইও ঘুমে। আয়শা এবং সহকারী মহিলা নাস্তা বানাচ্ছে। আয়শা চা কাপে ঢেলে নানা ভাইয়ের রুমে গেলো। নানা ভাইয়ের দরজার টোকা দিতে নানা ভাই দরজা খুলে দিলো। আয়শা নানা ভাই কে চা দিয়ে। বাবার রুমে গেলো, বাইর থেকে দরজা খোলা আয়শা রুমের ভেতরে ঢুকে অবাক হলো, বাবা বুকে দু হাত চেপে ঘুমিয়ে আছেন।

আয়শা পাশের টি টেবিলে,চায়ের কাপ রেখে বাবা কে ডাক দিলো। আফজাল সাহেব নড়লেন না। আয়শা এবার একটু অবাক হলো, বাবা তো এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমায় না। ফজরের নামাজ আদায় করে বারান্দায় বসে থাকেন আর না হয় ছাদের যায়। আয়শা আফজাল সাহেবের হাত ধরে বললো…

” বাবা ওঠো। বেলা হয়েছে তো। ”

আয়শা লক্ষ্য করলো আফজাল সাহেবের হাত ঠান্ডা হয়ে আছে। ঠোট দুটো শুকনো। আয়শা হাতের পার্লস চেক করে চমকে গেলো। আয়শা বাবার বুকে মাথা রাখলো, আফজাল সাহেবের পুরো শরীর স্মিথ হয়ে গেছে। আয়শা জোরে বাবা বলে, চিতকার দিলো…

আয়শার চিতকার শুনে সহকারী মহিলা দ্রুত রুমে প্রবেশ করলো। আয়শা কান্না করতে করতে বললো ” খালা নানা ভাই কে ডাক দাও। ডাক্তার কে ফোন করো বাবার হার্ড ব্রিড বন্ধ হয়ে গেছে। ” সহকারী মহিলা দ্রুতো ডাক্তার কে কল দিলেন। ততক্ষণে বাসার সবাই আফজাল সাহেবের রুমে চলে গেছে।

আয়শার নানা ভাই আফজাল সাহেবে বুকে মাথা রেখে, হার্ডের শব্দ শোনার চেষ্টা করলেন চুপ করে থ মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। আয়শা কান্না করেই যাচ্ছে। ” নানা ভাই বাবার কি হলো? আমার বাবা কে উঠতে বলো না?”

কালাম সাহেব কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। চোখ দুটো ভার হয়ে আসছে। কি ভাবে বলবে আফজাল আর নেই। মেয়েটা তো পাগল হয়ে যাবে। কালাম সাহেবে খুব কষ্ট হচ্ছে, এক বার যদি আফজাল কে বুকে জরিয়ে বলতে পারতেন,’বাবা তোমাকে অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি। আমার মেয়ে তোমাকে বিয়ে করে সবচেয়ে ঠিক কাজ করেছে। ‘

কিছুক্ষণ পর ডাক্তার সাহেব এলেন। আফজাল সাহেবের পার্লস হার্ট চেক করে বললেন…
” উনি সম্ভবত গতকাল রাতেই মারা গেছেন। তাই বড়ি টেম্পারেচার ঠান্ডা হয়ে গেছে।”

কালাম হাসেব ভাঙ্গা কন্ঠে বললেন “কি হয়ে ছিলো আফজালের?”

” ঘুমের মধ্যেই হয়তো হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন। তাই বুকে হাত দিয়ে ছিলেন।”

আয়শা এক কোনে বসে, ফুপিয়ে কান্না করছে। ওরিন ঘরে ছুটে ঢুকলো, কিছুক্ষণ আগেই সহকারী মহিলা ওরিন কে ফোন করে সব কিছু বলেছে। ওরিন আফজাল সাহেব কে দেখে কান্নায় ভেঙে পরলো। গত কালই তো বাবা হাসি মুখে তাকে বিদায় দিলো।কে জানতো সে হাসি ওরিনের দেখা বাবার শেষ হাসি হবে।

ফরিদ ওরিন কে জরিয়ে ধরে রেখেছে। সে খুব ভালো করেই ওরিনের কষ্ট বুঝতে পারছে৷ সে ও যে অনাথ। বাবা মা হারা একটা ছেলে। এই বেদনার সাথে সে তো খুব আগে থেকেই পরিচিত। ফরিদ বাম হাত দিয়ে নিজের চোখ মুছলো। নাছিম রুমের এক কোনার দাঁড়িয়ে আছে, এইতো সে দিন এক টেবিলে বসে দুজন খাবার খেলো আজ সে মানুষ টা নেই। ভাবতেই নাছিমের খারাপ লাগছে। এই মূহুর্তে কি বলে সে আয়শাকে শান্তনা দিবে। বাবা মা হারালে এর কোন স্বান্তনা হয় না। যে এতিম হয় সে বুঝে কষ্ট টা।

আফজাল সাহেবের দাফন কাজ শেষ করে মাগরিবের পরে সবাই বাসায় এলো। আয়শা দাদীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে ওরিন খাটের এক কোনে বসে আছে। ওরিন রুগ্ন কন্ঠে বললো ” মা চলে গেলো। মায়ের পরে যাকে বাবা আর মায়ের স্থান দুটোই দিয়েছি তাকেও আল্লাহ নিয়ে গেলো। আমরা তো এখন অনাথ।”

শেহতাজ বেগম ওরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,” শান্ত হও ওরিন। আমি বুঝি তোমাদের কষ্ট টা। আল্লাহ তোমাদের সহায় হবেন। ”
আয়শার চোখের পানি দাদীর কাপরে পড়ছে। এই মূহুর্তে মেয়ে দুটো কে কি ভাবে সামলাবে সেটাই শেহতাজ বেগম ভাবছেন।

ডাইনিং টেবিলের পাশে কালাম সাহেব ফরিদ নাছিম এবং তুষার আরো লোকজন বসে আছে। কালাম সাহেবের ভেতরে ভেতরে নিজেকে গিলটি ফিল হচ্ছে। নিজেই সম্পর্কের মাঝে একটা বেড়া-জাল সৃষ্টি করেছিলেন, যদি আফজাল কে আপন মনে করে নিতেন তাহলে হয়তো আরেকটু ছেলেটাকে স্নেহ করা যেতো।

আমরা মানুষেরাই এমন “__বেঁচে থাকতে কেউ কাউকে আপন করে নেই না। মরার পরে আপন করতে চাই। কিন্তু তখন মানুষটাই কাছে থাকে না__”

–রুহি জাহান (মায়া)

রাত দশ টা কি সারে দশটা বাজে দাদী প্লেটে ভাত নিয়ে বসে আছেন। আয়শা ওরিন সারাদিন কিছু খায় নি। খুব কষ্টে ওরিনে কে একটু খাবার খাওয়াতে পারলেও আয়শ কে পারে নি। আয়শা বাবার রুমের বারান্দায় গিয়ে বাবার চেয়ারের পাশে বসে আছে। নাছিম দাদীর কাছে গিয়ে বললো।
” তোমার কথা মতো, ফরিদ কে বাসায় পাঠিয়েছি তোমার কিছু জিনিসপত্র আনতে। তুমি এখনে কতো দিন থাকবে? ”

শেহতাজ বেগম বললেন
” শুধু আমি কেনো? তোরাও থাকবি। নিকট আত্নীয় মারা গেলে কম পক্ষে তিন দিন থাকতে হয়। এটা আমাদের দ্বায়িত্বর মধ্য পড়ে নাছিম। ”

” ঠিক আছে দাদী। তুমি যা বলবে তা-ই হবে। ”

” আয়শার খালার কেমন যেনো গাঁ ছাড়া ভাব। এই পরিস্থিতিতে মানুষিক সাপোর্ট খুব প্রয়োজন বুঝলি।”

” হ্যাঁ। আমিও লক্ষ করেছি, তিন দিন আগে থেকে। ”

” তুই একটু দেখ না খাওয়াতে পারিস নাকি।” বলেই শেহতাজ বেগম স্যুপের বাটিটা নাছিমের হাতে দিলো। নাছিম আয়শার কাছে গেলো। আয়শার পাশে গিয়ে বসলো। পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে আয়শা নাছিমের দিকে তাকালো।

” সারা দিন কিছু খাননি শরীর দূর্বল হতে পারে। প্লিজ একটু হলেও খান। ”

বলেই নাছিম চামুচ টা এগিয়ে দিলো, আয়শা স্যুপ টা মুখে নিলো। কোনমতে গিলে বললো ” প্লিজ আর না। ভালো লাগছে না আমার। ” নাছিম খাওয়ার জন্য জোর করলো না। এই পরিস্থিতিতে খাবার ভেতরে না যাওয়াটাই স্বাভাবিক। নাছিম আয়াশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।

আয়শা আগের মতোই বাবার চেয়ারের পাশে হেলান দিয়ে বসে রইলো। আয়শার চোখের কোনে নোনা পানি জমছে।


চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here