#গল্পঃ_ইচ্ছেটা_তোমারই
#লেখাঃ_মেহেদী_হাসান_রিয়াত
#পর্বঃ__৫
🌹
স্বামিকে রেখে প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে পার্টিতে যাওয়া বিষয়টা এতো বিবেচনা করলোনা আখি। হাজার হলেও স্বামীর কাছ থেকে অনুমতি নেওয়াটা জরুরি। কিন্তু বিষয়টাকেও এতো জরুরি মনে করছেনা আখি। কারন, আকাশকেতো সে স্বামী হিসেবে মানেই না, আবার অনুমতি?
পরদিন দুপুরে আসিফ চৌধুরির কাছে বললো,
— সন্ধায় একটু বাইরে যাবে, তার কলেজ বান্ধবিদের সাথে দেখা করতে।
— আসিফ চৌধুরিও বলে উঠে, সমস্যা নেই কিন্তু আকাশ দেলে ভালো হয়না?
— না বাবা, ওখানে শুধু আমরা মেয়ে ফ্রেন্ডই। আকাশ যাওয়ার দরকার নেই। তাকে বললে তো সে অনুমতিই দিবেনা।
— সে অনুমতি দিতে হবেনা আমিই দিচ্ছি অনুমতি, কিন্তু সাবধানে যাবে ওকে?
— হ্যা বাবা,
সন্ধায় আকাশ বাড়ি ফিরার আগেই আখি বের হয়ে যায় পার্টিতে জাওয়ার উদ্দেশ্যে। ওদিকে রাফিন অপেক্ষা করছে আখির জন্য।
রাফিনের কাছে এগিয়ে যায় আখি।
— হায় বেবি তুমি এডে গেছো? আকাশ আসেনিতো?
— না রাফিন, আকাশ এই বিষয়ে জানেওনা।
— ও গুড বেবি, কিন্তু এসব কি পরে এসেছো পার্টিতো। পার্টিতে কেও এসব ড্রেস পরে?
— তো কি পরবো? ওইসব ছোট ড্রেস?
— হ্যা,
— ইমপসিবল আমার ওইসব পরার কোনো অভ্যেস নেই।
— পরতে পরতেই তো অভ্যেস হবে, নাকি?
— আমি ওইসব পরতে পারবোনা।
— আচ্ছা কি আর করার, আসো।
আখি ভেতরে গিয়ে দেখে আজকের পার্টিটা আরো ঝাকঝমক পূর্ন। কিন্তু আগের তুলনায় লোকজন একেবারেই কম। যাক ভালোই হলো, বেশি লোকজনও আবার আখির ভালোলাগেনা। এতে আরো ঝামেলা বাড়ে।
লেখাঃ মেহেদী হাসান রিয়াত
পার্টি শুরু হলো অনেক আগেই। নতুন নতুন ক্যাপল দেখা যাচ্ছে আজ। একে অপরের সাথে নাচানাচিতে মগ্ন সকল ক্যাপলই।
রাফিন একটা ড্রিংস এর গ্লাস হাতে নিয়ে নাচতে নাচতে আখির হাতটা ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে বলে,
— সবাইতো পার্টি ইনজয় করছে আমরা কেনো বসে আছি বেবি?
রাফিনের সাথে তাল মিলাচ্ছে আখিও। পার্টি চললো অনেক্ষন ধরে। অনেকেই চলে গেছে।
আখি বলে,
— আচ্ছা বেবি আমার এখন যেতে হবে, আজতো একটু বেশিই করলাম।
— কি বেশি করলাম এখনো কিছুইতো করিনি।
— আচ্ছা বেবি টয়লেটটা কোন দিকে?
— এই সোজাগিয়ে ডান দিকে।(হাত দিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে দিলো রাফিন)
আখি বেড়িয়ে এসে দেখে, একটা মেয়ে তার কাছ থেকে বেদেয় নিয়ে যাচ্ছে। এটা কোনো ব্যাপার না। অবাক করার বিষয় হলো মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে লিফ কিস দিচ্ছে রাফিন।
— রাফিন….. (হুঙ্কার জনিত একটা আওয়াজ দিয়ে বলে উঠে রাফিন)
রাফিন একটা মুচকি হাসিতে মেয়েটাকে বিদায় দিয়ে আখির কাছে এলো।
— মেয়েটা কে রাফিন?
— ফ্রেন্ড?
— ফ্রেন্ড মানে, এটা আবার কেমন ফ্রেন্ড বিদায় দেওয়ার সময় লিফ কিস দিতে হয়?
— বাদ দাও বেবি।
— অনেক রাত হয়েছে আমি আসি। তোমার সাথে কাল কথা বলবো আমি।
পেছন থেকে রাফিন হাতটা চেপে ধরে টান দেয় আখিকে।
— ওপ বেবি কোথায় যাচ্ছো?
— ওপ রাফিন ছারোতো বাসায় যাচ্ছি।
— ও আচ্ছা আচ্ছা, কিন্তু তুমি এভাবে চলে গেলে আমি কি শুধু শুধু এতগুলো টাকা লস দিলাম। এর বিনিময়ে আমারও তো কিছু পাওনা থাকতে পারে তাইনা।
— মানে, কি বলছো তুমি?
— সেটা আমার বলতে হবেনা, আই হোপ তুমি বুঝতেই পারছো আমি কি বলতে চাইছি।
— দেখো রাফিন সবসময় ফাজলামি ভালো লাগেনা। ক্লিয়ার করে বলো তুমি কি চাচ্ছো?
— ওকে একবারে ক্লিয়ার করে বলছি, তোমাকে আজকে রাতের জন্য আমার রক্ষিতা হতে হবে।
— হোয়াট, রাফিন যথেষ্ট হয়েছে।
— এখনো তো কিছুই হয়নি বেবি,,,,,
— কি করছো রাফিন? রাফিন ছারো বলছি,,,,,,, ঠাস,,, তুমি এতো নোংরা জানলে আমি কখনোই তোমার সাথে রিলেশন করতামনা। বিয়ের জন্য তো রাজি হতামই না।
— তুই আমায় থাপ্পর মারলি? রাফিনকে থাপ্পর মারলি তুই? এর মাশুল তোকে আজ এই মুহুর্তেই দিতে হবে ভালো ভালো বলছিলাম কাজ হয়নি তাইনা? আর তোকে কে বিয়ে করছে? অন্য একটা ছেলের সাথে রাতের পর রাত থেকেছিস। আরে বাসি খাবারতো আমি ছুয়েও দেখিনা। কিন্তু তোর মতো বাসি খাবারটা একটু টেস্ট করতে ইচ্ছে করছিলো তাই দুই দুইবার পার্টি দিয়েছি। প্রথম বারতো আকাশ এসে ঝামেলা করে দিলো। এখন? ডাক তোর হিরুকে। এই খানের আসে পাসেও এখন কোনো লোক নেই তোকে বাচানোর মতো। শকুনের মতো চিড়ে চিরে খাবো তোকে আমি, কেও বাচাতেও আসবেনা। ভালো ভাবে বলেছিলাম শুনিসনি। এখন দেখ রাফিনকে থাপ্পর দেওয়ার পরিনাম কতো ভয়ানক। হা হা হা।
লেখাঃ মেহেদী হাসান রিয়াত
রাফিন একটা হাসি দিয়ে গায়ের জামাটা খুলতে খুলতে এগিয়ে যাচ্ছে আখির দিকে।
একহাত সামনে দিয়ে রাফিনকে থামানোর চেষ্টা করে এক পা একপা করে পিছুচ্ছে আখি।
— ছি ছি ছোট, দাদর সামনে এসব করতে বুঝি লজ্জা করেনা তোর। এই জন্যই কি তোকে কোলে পিঠে করে মানুষ করলাম? এই দিনটি দেখার জন্যই কি তোকে বড় করলাম? ছি ছি ছোট।
পেছন থেকে কারো গলার আওয়াজ শুনে একটু চমকে উঠে রাফিন। ছোট, দাদা, আমারতো কোনো ভাই নেই তাহলে? আবার বলছে কোলে পিঠে করে মানুষ করলো।
পেছনে তাকিয়ে দেখে কেও একজন। মিঠি মিঠি রঙিন আলোতে মুখটা ঠিক বুঝা যাচ্ছেনা তার। একটা প্রশ্ন ছুড়ে দেয় রাফিন,
— কেরে তুই?
— তোর দাদা। চিনতে পারছিসনা?
— দেখ যা বলবি সোজাসুজি বল, আমার সময় নষ্ট করলে আমি তোর জীবন নষ্ট করে দেবো।
— হা হা হা। আমায় মারবি তুই? তোর দাদকে মারবি? খুব বড় হয়ে গেছিস নারে?
— আকাশ? দেখ ভালোয় ভালোয় চলে যা বলছি এটা আমার আর আখির পার্সনাল বিষয়।
— ওপ রাফিন, তোকে আমি কি বলেছিলাম সেইদিন? কাওকে জোর করবিনা। আর ও এখনো তোর হয়নি, ও এই মুহুর্তেও আমার স্ত্রী।
— দেখ আকাশ আমি চাইনা তোর সাথে নতুন করে কোনো শত্রুতা হোক। আর তুইতো চার মাস পরে ওকে এমনিতেই ছেরে দিবে তাহলে?
— যখন আমি যানতে পারলাম আখির বয়ফ্রেন্ড তুই। তখনি আমার বুঝা হয়ে গিয়েছিলো আখি কতো একজন ভালো মানুষ বেছে নিয়েছে। তোর পেছনে সারাক্ষনই আমার লোক চলাফেরা করে।
তোর পাস্ট টু লাস্ট সকল ডিটেইল আমার কাছে আসে। আমি আখিকে অনেকবার বুঝানোর চেষ্টা করেছি। বেচারি বুঝতে চায়নি কেনো চায়নি জানিস? তোকে ভালোবাসে বলে, বিশ্বাস করে বলে। আর তুই সেই বিশ্বাসের এই প্রতিদান দিলি?
— এতো কাহিনি করিস না আকাশ। পারলে এবার এখান থেকে জেন্ত বের হয়ে দেখা।
রাফিনের ইশারায় কয়েকজন লোক এসে আকাশের চারপাসটা ধিরে ধরলো।
আকাশ একটা মুচকি হাসি দিয়ে জামার হাতা পোল্ড করতে করতে বলে,
— মনে আছে, সেই কলেজ লাইফে একবার করেছিলাম, তাও তোর সাথে। যার কারনে প্রেন্সিপাল আমাদের কলেজ থেকে বের করে দিতে চেয়েছিলো। তার পর আর কখনো করা হয়নি। এখন মনে হচ্ছে আবার করতে হবে।
আকাশ সকলের মাঝখান থেকে হেটে এসে আখির হাতটা ধরে সোজা বের হয়ে যাচ্ছে।
পেছন থেকে রাফিন লোকগুলোকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে।
— ওই শালা হিরু গিরি দেখাচ্ছে আর তোরা চেয়ে চেয়ে দেখছিস?
আকাশ একটু থেমে লোক গুলোকে উদ্দেশ্যা করে বলে উঠে,
— ও এখনো বিষয়টা বুঝতে পারছেনা, বুঝিয়ে দিয়ে তারপর আসো।
চোখে একটা সানগ্লাস লাগিয়ে আখির হাতটা ধরে সেখান থেকে বের হয়ে আসে আকাশ। গাড়িতে উঠে আখিকে নিয়ে চলে যাচ্ছে সে। আখি আজ কোনো উত্তর করছে না। চুপচাপ বসে আছে গাড়িতে।
নিরবতা ভেঙে আকাশ বলে উঠে,
— তোময়য় স্বাধিনতা দেওয়ার অর্থ এই নয় কাওকে বলা ছারা নিজের ইচ্ছে মতো কোনো ফাদে গিয়ে পা দিবে। রাফিনের সাথে থাকা লোকক গুলো আমারই লোক।
কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ বসে আছে আখি।
হটাৎ গাড়ি ব্রেক চাপায় চমকে উঠে আখি। সামনে তাকিয়ে দেখে কয়েকজন লোক দাড়িয়ে রাস্তা আটকে রেখেছে তাদের? কিন্তু এরা কারা?
To be continue………