#ইস্ক_সাহেবান
#হীর_এহতেশাম
||পর্ব-১২||
[বোনাস পার্ট]
★পুরো বাড়িতে খুঁজেও ইফতি কে পেল না ইবাদ। অসুস্থ অবস্থায় কোথায় গেল মেয়েটি। নিজের রুমে প্রবেশ করতেই ইবাদের চোখ বড় হয়ে গেল। ধীর গতিতে চোখ জোড়া বন্ধ করে একটি লম্বা শ্বাস ফেলল। ইশাল আর ইরফান তার সাথে সাথে রুমে প্রবেশ করতে ওদেরও চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। সারা বাড়ি যাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে সে ইবাদের রুমে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে। ইবাদ অন্যদিকে তাকিয়ে হেঁসে দিলো। এগিয়ে গিয়ে নিজের বিছানায় বসলো। ইফতির গায়ে চাদর টেনে দিলো। এক হাত বাড়িয়ে ইফতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। ইরফানের মোটেও ভালো লাগলো না এমন দৃশ্য। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সামনে থাকা মানুষ গুলোর দিকে।
—-ইবাদ ঘুমাতে দে। তুই ফ্রেশ হয়ে নে।
—তুইও ফ্রেশ হয়ে নে।
—হুম। ইশাল চলে যাওয়ার সময় ইরফান কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,
—-তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আয়…
না চাইতেও রুম ছেড়ে চলে গেল ইরফান। ওরা চলে যেতেই দরজা বন্ধ করে দিলো ইবাদ। ইফতির পাশে গিয়ে বসে পড়লো,
—-এক মুহুর্তেই কলিজা মোচড় দিয়েছিল সাহেবান। মনে হচ্ছিলো এই বুঝি সব হারিয়ে ফেললাম। আপনি আমাকে কেন যে এত ভয় দেখান, আমি বুঝি না। ইবাদ ফ্রেশ হতে চলে গেল।
★নিজের বন্ধুই যে নিজের ভালোবাসার মানুষের এত বড় ক্ষতি করে দেবে তা ইবাদ ভাবতেও পারে নি। ইফতিকে ইরফানই ইনজেকশন পুশ করেছে, এটা জানার পর ইবাদ ভেঙ্গে পড়েছে। যতবার ইরফান কে দেখছে একটা অজানা ভয়ে কেঁপে উঠছে সে। কেন করলো এমন ইরফান? এক্ষুনি তাকে এই বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করা যাবে না। হিতে- বিপরীত হতে পারে। সবটা গুলিয়ে ফেলছে ইবাদ। ইরফান যদি ইফতির ট্রিটমেন্টে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে..?
—–ইবা….থেমে গেল ইশাল। ইবাদ কে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে ইশাল খানিকটা অবাক হলো। এগিয়ে গিয়ে তার সামনে বসেএ পড়লো। ইবাদের কোনো হুশ নেই। ইশালের উপস্থিতি এখনো টের পায় নি সে। টেবিলে থাকা গ্লাস তুলে টেবিলে মৃদু আঘাত করলো। ইবাদ চমকে তাকালো..
—-তু–তুই.. সরি খেয়াল করি নি।
—-কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি? কি নিয়ে এত্ত আপসেট?
—-কিছু না। ইরফান কোথায়?
—-আছে হয়তো বাহিরে, কেন?
—-নাহ্ এমনি…!
—-তুই কিছু নিয়ে আপসেট?
—নাহ্..! আচ্ছা ইফতি সুস্থ হয়ে যাবে এটা তুই আর আমি শিওর… সুস্থ হওয়ার পর ইফতি আর ইরফানের জুটি কেমন হবে..?
—-হোয়াট..? পাগল তুই? কি বলছিস। ইফতি সুস্থ মানুষ। যেকোনো কারণে ও নিজের মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে, কিন্তু ইরফান? ইরফান অসুস্থ একজন মানুষ। ও কখনো সুস্থ হবার না। ইরফানের জন্য এমন কাউকে চায় যে ইরফান কে কন্ট্রোল করতে পারবে। যাকে দেখলে সে শান্ত হয়ে যাবে, ব্যস্!
—-ইরফান ইফতিকে পছন্দ করে। ইশালের দিকে তাকিয়ে বলে ইবাদ।
—-তাই নাকি? পছন্দ করলেই পেতে হবে কেন? পৃথিবীতে অনেক কিছুই আছে যা আমাদের পছন্দের কাতারে পড়ে, সব কিছু আমরা পাই? না তো..? তাহলে…? পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটি সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল ইশাল।
—-এটা এখনো ছাড়িস নি? সিগারেটের দিকে তাকিয়ে বলে ইবাদ।
—-প্রশ্নই আসে না।
—-এখনো আটকে আছিস?
—নাহ্! পাগল নাকি? আটকে কেন থাকবো। যে যাওয়ার সে যাবেই।
—-খারাপ লাগে না?
—-কিসের খারাপ ব্রো? আমি আছি, আমার হাসপাতাল আছে, মাঝে মাঝে বোনেরা আসে। আর কি লাগে..?
—-যাকে চেয়েছিলি সেই নেই..!
—-বাদ! এটা বল ইফতিকে তোর কেমন লাগে..?
–এটা কেমন প্রশ্ন?
—–যেমনই হোক উত্তর দে..? আমি দেখেছি, তোর অস্থিরতা, তোর সবটা..! আমার ধারণা মিথ্যে না। হবারও নয়..?
ইবাদ ইশালের দিকে তাকিয়ে রইল।
—-আম…..ইবাদ কিছু বলার আগেই নিচ থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ আসে। ইশাল আর ইবাদ একে অপরের দিকে তাকালো।
—-চলতো…
দুজনেই নিচে নেমে আসে।
★—আমি তোমাদের পর? একটি বার আমায় বললে না? আমি কি কেউ না?
নাহিদা বেগম মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। জাফর এহতেশাম আর দিদার মাহসান দুজনেই এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সবাইকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেয়েটি আবারও চিৎকার করে উঠল,
—–কি হলো? চুপ করে আছো কেন? তোমরা বোবা না? উত্তর দাও..! এসব কি করে হলো? আমার কথা কি কারো কানে যাচ্ছে না? সবাই এখনো চুপ। আশে পাশে থাকা ফুলের ভাস গুলো তুলে আছাড় দিলো সে। অন্য একটি ফুলের ভাস তুলে পেছনে ঘুরতেই থেমে গেল।
ইবাদ আর ইশাল ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে মেয়েটির দিকে তাকালো। দুজনেরই চোখ কপালে। একে অপরের দিকে তাকালো। মেয়েটি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তাদের দিকে। অফ সোল্ডারের একটি কালো রঙের ওয়েস্টার্ন ড্রেস তার পরনে। যা হাটু পর্যন্ত গিয়ে থেমেছে। পায়ে হাই হিল। চুল গুলো খোলা। কোমর পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। দেখতে হুবুহু ইফতির মত। ইশাল ইবাদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
—টুইনস?
ইবাদ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে দিদার মাহসানের দিকে তাকালো,
—-কে দাদু?
—-ইফতির জমজ বোন। দিদার মাহসানের কথা শুনে ইবাদ বড়সড় একটি ধাক্কা খেল। ইফতিরা জমজ ছিল। কই আগে তো কেউ বলে নি। ইফতিও তো কোনো দিন বললো না।
—-আপনি এসেই ভাঙচুর কেন শুরু করেছেন? শান্ত হয়ে কি কথা বলা যায় না?
হাতে থাকা ফুলের ভাস ছেড়ে দিলো ইশরা। পড়ে গিয়ে ভাস টি ভেঙ্গে টুকরোতে পরিণত হলো। বিকট শব্দ চারপাশ কাঁপিয়ে তুলল। ইশরা ইবাদের দিকে চোখ রেখেই নাহিদা বেগমকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করল,
—-ইনিই ইফতির ট্রিটমেন্ট করছে?
—হ্যাঁ। তুই অযথা…..
একহাত উঁচিয়ে নাহিদা বেগম কে থামিয়ে দিল ইশরা।
ইবাদের দিকে কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে বলল,
—-কে কি করছে তাতে নজর না দিয়ে আমার বোন কে সুস্থ করে তুলুন। এটাই আপনার কাজ। আমি আমার বোন কে সুস্থ দেখতে চাই। নাহলে একজন কেও আমি ছেড়ে কথা বলবো না। কথাটা বলেই ইশালের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই ইশাল সরে দাঁড়ালো। ইশরা দ্রুত উপরে চলে গেল। গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়লো ইশাল। ইবাদের দিকে একটু ঝুকে ফিসফিস করে বলল,
—-মনে হচ্ছে সামনে থেকে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ড সরে গেছে। একটা মেয়ে এতটা রুড কি করে হয়?
ইশালের কথার জবাব ইবাদ দিলো না। দিদার মাহসানের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
—-আগে বলো নি কেন?
—বলার সুযোগ কই পেলাম এর মাঝেই এসব….
—-উনি কি এমনই?
—-হ্যাঁ ও বদমেজাজী। আমার ইফতি শান্ত হলেও ওর মাঝে তার ছিটেফোঁটাও নেই। নাহিদা বেগমের করুণকন্ঠ স্বর শুনে ইবাদ ফিরে তাকালো।
—-দু মিনিটে কি হাল করে দিলো ঘরের৷ মারু এসব পরিষ্কার কর।
—আচ্ছ ভাইসাব। ইবাদ দ্রুত উপরে চলে গেল। ইবাদের সাথে সাথে ইশালও।
★ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করলো ইশরা। ইফতি ঘুমাচ্ছে। ইফতির পাশে গিয়ে বসে পড়লো সে। চোখে পানি টলমল করছে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না আটকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইফতির হাত নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে কেঁদে দিলো।
—–কী থেকে কী হয়ে গেল হীর? আমি তো ভেবেছিলাম আমি আসলে তুই… কান্নার জন্য কথা বলতে পারছে না মেয়েটি। কান্না দমিয়ে বলল,
—তুই সুস্থ হয়ে উঠবি.. খুব শীগ্রই তুই সুস্থ হয়ে উঠবি। তোকে সারপ্রাইজ দিতে এসে আমি নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম। চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ালো ইশরা। পেছনে ফিরতেই ইবাদ আর ইশাল কে দেখে চেহারায় আবার কাঠিন্যে ভাব টেনে নিল। ওদের কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার সময় ইশাল হাত ধরে আটকালো। তারপর টেনে সামনে এনে দাঁড় করালো।
—-সবসময় চেহারা এমন করে রাখেন কেন? এতক্ষণ তো বেশ কান্নার রোল প্লে করছিলেন, আমাদের দেখে কি গায়ে আকাশ ভেঙে পড়লো।
–হাত ছাড়ুন।
—-কেন ছাড়িয়ে নিন। যে এত বড় বড় কথা বলতে পারে সে এইটুকু তো পারবে। ইশালের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ইশরা।
—-আমি রোল প্লে করি না। ডিরেক্ট ক্যারেক্টর এ চলে আসি। কথাটা বলেই হাত ঘুরিয়ে এক ঝটকায় ছাড়িয়ে ইশালের কলার চেপে ধরল ইশরা। দাঁতে দাঁত চেপে হেঁসে বলল,
—-আমার কি করতে হবে আমি খুব ভালো করে জানি। যদি ভেবে থাকেন আমায় ট্রিট করবেন তাহলে নিজেই ট্রিট হয়ে যাবেন। আমি ইফতি নই, এতক্ষণে বুঝে যাওয়ার কথা। কলার ছেড়ে দিলো ইশরা। রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেল। ইশালের রাগ হলো। একটা মেয়ে এতটা রুড বিহেভ নিত্ব কিভাবে চলে? ইশালের চোখ মুখ দেখে ইবাদ বলে উঠলো,
—–মনে হচ্ছে সামনে থেকে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ড সরে গেছে। ইশাল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। ইবাদ ঠোঁট চেপে হাসলো।
চলবে….?
||অযথায় সবাই ভাবছিলেন যে ইশালও ইফতিকে পছন্দ করে।🤦♀️ যাইহোক, দেখা যাক কি হয়? আর একটা কথা,অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা খারাপ। এটা বাংলা সিরিয়াল না কি সেটা আমরা নাহয় দেখতে থাকি। ||