#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_6
কপি নিষিদ্ধ ❌
আয়েশা সামনে তাকাতেই দেখতে পেল,ওমর হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আয়েশা লিফটে প্রবেশ করল।
ওমর : কেমন আছেন মিস আয়েশা?
আয়েশা : আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?
ওমর : আলহামদুলিল্লাহ।
আয়েশা 3 নাম্বার বাটনে চাপ দিল।
আয়েশা : আপনি কতো তালায় যাবেন?
ওমর : আপনি যেখানে যাবেন আমিও সেখানে যাবো।
আয়েশা : মানে?
ওমর : আপনি তো আপনার বোনের কাছে যাবেন আমিও তার সাথে দেখা করতে যাবো।
আয়েশা : ওহ।
ওরা তিশার কেবিনের দিকে যেতে লাগল।
________________________________________________
ওরা কেবিনে প্রবেশ করে দেখে তিশা হেলান দিয়ে বসে আছে।
ওমর : কেমন আছেন ভাবি আই মিন আপু।
ওমর : [মনে মনে] উফফ বার বার কেন ভাবি বলি ফেলি এভাবে করলে তো ধরা পরে যাবো।
তিশা : আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি,আপনি কেমন আছেন?
তিশা : [মনে মনে] উনি আমাকে ভাবি বললেন কেনো?
ওমর : আলহামদুলিল্লাহ, মেডিসিন নিয়েছেন আপু?
তিশা : জ্বি, থ্যাঙ্ক ইউ আমাকে বাঁচানোর জন্য।
ওমর : থ্যাঙ্ক ইউ দেওয়া কিছু নেই আপনি আমার বোনের মতো।
তিশা উত্তরে আলতো হাসলো।
ওরা কিছুক্ষন কথা বললো তারপর ওমর চলে গেছে।
________________________________________________
পরদিন সকালে,
ওসমানের কেবিনে আয়েশা বসে আছে।
ওসমান : মিস আয়েশা, মিস তিশার রিপোর্ট দিয়েছে।
আয়েশা : কি হয়েছে ডক্টর?
ওসমান : ওনার মাথার পেছনের দিকে আঘাত লাগায় কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পেছনের দিকে আঘাত লাগায় ওনার মস্তিষ্কে খুব বাজে ভাবে প্রভাব ফেলেছে।
আয়েশা : ডক্টর এটাকি ঠিক করা যাবে না?
ওসমান : দেখুন আপনাকে কিছু জিনিস খেয়াল রাখতে হবে।
আয়েশা : কিসে?
ওসমান : ওনাকে টেনশন করতে দেওয়া যাবে না, মাথায় কোনো প্রকার প্রেশার দেওয়া যাবে না, তাকে আঘাত করে কোনো কথা বলা যাবে না, এসব কিছু পেশেন্টের মস্তিষ্কে বাজে প্রভাব ফেলে, এতে পেশেন্টের লাইফ রিস্ক আছে, এসব কিছু ঠিক মতো মেইনটেইন না করলে পেশেন্ট কোমায় চলে যেতে পারে।আপনি ওনার বোন তাই আপনাকে এসব কিছু খেয়াল রাখতে হবে।
আয়েশা : জ্বি ডক্টর বুঝতে পেরেছি, ওর সুস্থ হতে কতদিন লাগবে?
ওসমান : হাতে পায়ের ক্ষতগুলো ৬/৭ দিনে সেরে যাবে কিন্তু মাথার আঘাতটা সারতে ৩/৪ মাস সময় লাগবে।
আয়েশা : আচ্ছা ডক্টর আমি আসি।
ওসমান : জ্বি।
আয়েশা ওসমানের রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
ওসমান : [মনে মনে] : জানপাখি আমি তোমার কিছু হতে দিব না, তোমাকে খুব দ্রুত সুস্থ করে তুলবো, ইনশাআল্লাহ।
________________________________________________
এক সপ্তাহ পর,
আজ তিশাকে হসপিটাল থেকে রিলিজ দেওয়া হবে।
এই এক সপ্তাহে ওসমান তিশার অনেক কেয়ার করেছে, তিশাকে টাইম টু টাইম মেডিসিন খাইয়েছে,তিশাকে যখন ইনজেকশন পুষ করতো তখন খুব আস্তে পুষ করতো, হাতে পায়ের ব্যান্ডেজ খুব সাবধানে খুলতো, অয়েন্টমেন্ট লাগানোর সময় ফু দিয়ে লাগাতো, এমন মনে হতো ব্যাথা তিশা নয় ওসমান পেয়েছে।
ওসমানের এই অতিরিক্ত কেয়ার তিশার চোখে পরেছে, এইসব কিছু তিশাকে খুব ভাবাচ্ছে।
এই এক সপ্তাহে ওমর ও আয়েশার মধ্যে খুব ভালো বন্ডিং তৈরি হয়েছে,ওমর সময় পেলেই আয়েশার সাথে কথা বলে।ওরা খুব ফ্রি হয়েছে , ওমর আয়েশাকে তুমি করে বললেও আয়েশা এখনও ওমর কে আপনি করে বলে, ওরা সময় পেলেই কফি শপে গিয়ে আড্ডা দেয়, সন্ধ্যায় হাটতে বের হয়, আর এই সব কিছু আয়েশা খুব ভালো ভাবে অনুভব করছে ও ওমরের প্রতি আরো দুর্বল হয়ে পরেছে।
এই এক সপ্তাহে আয়েশার ও ওসমানের যত্নে তিশার হাতে পায়ে ক্ষত সেরে গেছে তিশা এখন অনেকটাই সুস্থ তাই তিশাকে আজকে রাতে রিলিজ দেওয়া হবে।
________________________________________________
আয়েশা : একটা জিনিস খেয়াল করেছিস।
তিশা : কি?
আয়েশা : এই কয়দিন ডক্টর ওসমান কিন্তু তোর অনেক কেয়ার করেছে।
তিশা : হ্যাঁ, কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না উনি আমার এতো কেয়ার কেন করেছেন?
আয়েশা : আমার মনে হয় উনি তোকে ভালোবাসেন।
তিশা : কি সব যা তা বলছিস উনি কেনো আমাকে ভালোবাসবেন।
আয়েশা : ভালো না বাসলে কি তোর এত কেয়ার করতো।
তিশা : তুই ভুল ভাবছিস উনি আমাকে ভালোবাসেনা।
আয়েশা : আচ্ছা তুই বল কোনো ডক্টর কি তার পেশেন্টকে এত কেয়ার করে, তার পেশেন্টর জন্য এতো চিন্তিত হয়,মানুষ শুধু অতিরিক্ত কেয়ার আর চিন্তা শুধু মাএ তার ভালোবাসার মানুষটার জন্য করে।
তিশা : কিন্তু,
আয়েশা : তোর যা ইচ্ছে তাই ভাব আমি বাহিরে গেলাম।
আয়েশা কেবিন থেকে বেরিয়ে দেখলো ওমর ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
________________________________________________
আয়েশা : আপনি, এখানে?
ওমর : জ্বি, তোমার জন্য ওয়েট করছিলাম,তো আজ চলে যাবে?
আয়েশা : হ্যাঁ, যেতে তো হবেই।
ওমর : তোমার নাম্বার টা কি পেতে পারি?
আয়েশা : হ্যাঁ, এই নিন আমার নাম্বার।
ওমর : এটা আমার নাম্বার। চলো কফি খেয়ে আসি।
আয়েশা : কিন্তু তিশা তো একা।
ওমর : চলেই তো যাবে, যাওয়ার আগে একসাথে কফি খেতে চাই,প্লিজ চলো না।
ওমর : [মনে মনে]: আমরা স্পেস না দিলে তো ভাইয়া ভাবির সাথে কথা বলতে পারবে না।
আয়েশা : আচ্ছা ঠিক আছে, চলুন।
ওমর : চলো।
________________________________________________
ওরা কফি শপে গিয়ে কথা বলছে আর কফি খাচ্ছে।
কফি খাওয়ার এক পর্যায় ওমর আয়েশাকে বললো,
ওমর : তুমি কি আমার ফ্রেন্ড হবে?
আয়েশা : আমি কিভাবে আপনার ফ্রেন্ড হবো।
ওমর : কেন আমিকি এতোটাই খারাপ যে ফ্রেন্ড হতে পারবে না।
আয়েশা : না না আপনি যথেষ্ট ভালো, আসলে,
ওমর : কোনো আসলে নকলে নয়, হবে আমার ফ্রেন্ড?
আয়েশা : আব আচ্ছা হব। [কিছুটা ইতস্তত হয়ে বললো]
ওমর : ফ্রেন্ড হলে কিন্তু তুমি করে বলতে হবে।
আয়েশা : তুমি করে বলতে হবে!
ওমর : হুম।
হাত বারিয়ে দিয়ে
ওমর : উইল ইউ বি মাই ফ্রেন্ড?
আয়েশা : ইয়েস।
ওরা দু’জন হাত মিলালো।
________________________________________________
কেবিনে তিশা বসে বসে ওসমানের কথা ভাবছে,
তিশা : [মনে মনে] : উনি আমার এতো কেয়ার করেছেন কেনো, কেন উনি আমার জন্য এতো চিন্তিত ছিলেন, কই অন্যদের জন্য তো এতো চিন্তিত নন,আর বেলায় কেন এতো চিন্তিত, আচ্ছা আয়েশার কথাই কি তাহলে সত্যি, উনি কি আমাকে ভালোবাসেন?কিন্তু আমাকে কেন ভালোবাসবেন? কতোশত রূপবতী, ধনী মেয়ে তাকে পছন্দ করে ভালোবাসে, উনি কেন আমার মতো এতিম মেয়েকে ভালোবাসবেন।আমারতো কোনো যোগ্যতা নেই তার ভালোবাসার পাএী হওয়ার,আল্লাহ আমি কি করবো?
আহ মাথায় এতো যন্ত্রণা হচ্ছে কেন।
তিশা দু’হাতে মাথা চেপে ধরে চোখ মুখ খিঁচে ব্যাথা সহ্য করার চেষ্টা করছে ওর চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছে।
______________________________________
ওসমান তিশার সাথে দেখা করার জন্য ওর কেবিনের দিকে যাচ্ছে।
কেবিনের সামনে এসে দেখে তিশা দু’হাতে মাথা চেপে ধরে আছে।
ওসমান দ্রুত তিশার কাছে গেল।
ওসমান : মিস তিশা কি হয়েছে আপনার?
তিশা ঝাপসা চোখে ওসমানের দিকে তাকাল
তিশা : আমার মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা,
কথা সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই তিশা ওসমানের বুকে ঢলে পরে।
ওসমান : জানপাখি কি হল তোমার, চোখ খোলো জানপাখি।
ওসমান তিশাকে বেডে শুয়ে দিয়ে হাতে ইনজেকশন পুষ করে দিল।
________________________________________________
১০ মিনিট পর,
তিশা আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখতে পেল ওর সামনে ওসমান,ওমর এবং আয়েশা দাঁড়িয়ে আছে।
তিশা উঠার চেষ্টা করলে ওসমান ওকে উঠতে সাহায্য করে, তিশা একবার ওসমানের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল।অবশ্য এটা ওসমানের চোখ এড়ালো না।
ওমর : এখন কেমন লাগছে?
তিশা : ভালো।
ওসমান : আপনাকে কিছু জিনিস মেইনটেইন করে চলতে হবে।
তিশা ওসমানের দিকে তাকল কিন্তু কিছু বললো না।
ওসমান : আপনি বেশি টেনশন করতে পারবেন না, মাথা কোনো প্রকার প্রেশার নিতে পারবেন না। নাহলে পরে নানা রকম সমস্যা দেখা দিবে।
তিশা : জ্বি বুঝেছি।
তিশা : আয়েশা চল বাসায় যাবো।
আয়েশা : হুম।
ওসমান : আমরা আপনাদের পৌঁছে দিয়ে আসি।
তিশা : তার প্রয়োজন নেই, আমরা একা যেতে পারবো।
ওমর : আপু রাত হয়েছে, এখন আপনাদের একা যাওয়া ঠিক হবে না।
আয়েশা : উনারা যখন এতো করে বলছে তাহলে আর না করিস না।
তিশা : আচ্ছা ঠিক আছে।
ওরা হসপিটাল থেকে বের হলো।
________________________________________________
ওমর ড্রাইভিং সীটে বসেছে , ওমরের পাশের সীটে আয়েশা এবং পেছনের সীটে ওসমান এবং তিশা বসছে।
গাড়ি চলতে লাগলো।
তিশা : [মনে মনে]: এই আয়েশার বাচ্চা সামনে কেন বসতে গেল, নিজে তার জানেমানের সাথে বসছে, আর আমাকে ওনার সাথে বসতে হচ্ছে,ধ্যাত ভাল্লাগে না।
আয়েশা : [মনে মনে] : হায় আমি আমার জানেমানের সাথে বসছি, আজকে আমরা ফ্রেন্ডশীপও করেছি, আমি তো খুশিতে পাগল হয়ে যাবো।
ওমর : [মনে মনে]: যাক অবশেষে আয়েশাজানের সাথে ফ্রেন্ডশীপ করতে পারলাম, প্রেমে ফেলার প্রথম ধাপ পূরন হলো।
ওসমান : [মনে মনে] : আমি জানি তুমি আমার কথা ভাবছিলে, অতিরিক্ত টেনশন করার ফলে জ্ঞান হারিয়ে ছিলে।
________________________________________________
ওরা তিশাদের বাসার পৌঁছাল।
তিশা : বাসায় আসুন আপনারা।
ওসমান : আজ না অন্য একদিন। আপনারা যান।
তিশা ও আয়েশা বাসার ভেতরে চলে গেল।
ওসমান এবং ওমর ও বাড়িতে চলে গেল।
________________________________________________
দু’দিন পর,
তিশা এখন সুস্থ, কাল থেকে অফিসে যাবে।
এই দু দিন আয়েশা ও ওমর প্রায় সময় ফোনে কথা বলেছে।
আয়েশার ও ওমরের ফ্রেন্ডশীপের কথা আয়েশা তিশাকে বলছে।
এই দু’দিন তিশার সাথে ওসমানের দেখাও হয়নি, কথাও হয়নি।
________________________________________________
রাতে,
তিশার রুমে,
আয়েশা : কাল অফিসে যাবি?
তিশা : হুম।
আয়েশা : আরো কিছু দিন রেস্ট নিতি।
তিশা : না ১১ দিন হয়ে গেছে অফিসে যাই না,আরও দেরি করলে চাকরি থাকবেনা।
আয়েশা : আচ্ছা, তুই এখন ঘুমিয়ে পর, আমি গেলাম।
তিশা : আচ্ছা।
তিশা শুয়ে পরলো,আয়েশাও নিজের রুমে চলে গেল।
________________________________________________
ভাইয়া আসবো?
ওসমান : হুম।
ওমর : ভাইয়া আমি তো আয়েশার সাথে ফ্রেন্ডশীপ করে ফেললাম, তুমি এখনো ভাবির সাথে ফ্রেন্ডশীপ করছোনা কেন?
ওসমান : আয়েশা তোকে পছন্দ করে বিধায়, তুই সহজেই আয়েশার সাথে ফ্রেন্ডশীপ করতে পেরেছিস।তুই যখন আয়েশার সাথে কথা বলিস তখন আয়েশার চোখে মুখে খুশির ঝলক দেখা যায়। কিন্তু তিশার ক্ষেত্রে তা নয়, ও আমার সাথে কথা বলতে চায় না, আমাকে এড়িয়ে চলতে চায়।
ওমর : কিন্তু এমন করলে তোমরা ফ্রেন্ডশীপ করবে কিভাবে?
ওসমান : আমি এতো সহজে হাল ছেড়ে দেওয়ার পাএ নই, শুন তোকে একটা কাজ করতে হবে।
ওমর : কি কাজ?
ওসমান ওমরকে কিছু একটা বললো।
ওমর : কিন্তু যদি উল্টো পাল্টা কিছু হয়ে যায় তখন?
ওসমান : আমি শিওর তিশা আমাকে বাঁচিয়ে ফেলবে তাই কিছুই উল্টো পাল্টা হবেনা, তুই জাস্ট কাজটা ঠিক মতো করিস।
ওমর : আচ্ছা, আমার কল এসেছে আমি গেলাম।
ওসমান : আচ্ছা।
ওমর ওসমানের রুমে থেকে চলে গেল।
ওসমান :[মনে মনে]: কাল তো তোমার সাথে ফ্রেন্ডশীপ করেই ছাড়বো।
________________________________________________
পরদিন সকালে,
অফিসে,
কোম্পানির মালিক শাহাবুদ্দিন শেখ তিশার সাথে কথা বলছেন।
শাহাবুদ্দিন : এখন কেমন আছো তিশা?
তিশা : আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি স্যার।
শাহাবুদ্দিন : কোনো কিছু বুঝতে সমস্যা হলে ম্যানেজারকে বলবে।
তিশা : জ্বি স্যার।
শাহাবুদ্দিন শেখ তার কেবিনে চলে গেলেন।
তিশাও নিজের কাজ করতে লাগল।
________________________________________________
লাঞ্চ টাইমে তিশা, আয়েশা ও হৃদিকা অফিসের পাশের রেস্টুরেন্টে গেল।
ওরা ভেতরে প্রবেশ করে বসে খাবার অর্ডার দিল।
হৃদিকা : তোমাদের দু জনকে খুব মিস করছিলাম।
তিশা ও আয়েশা : আমরাও।
হৃদিকা : এখানো তোমার হাতে পায়ে ব্যাথা আছে?
তিশা : না এখন হাতে পায়ে ব্যাথা নেই কিন্তু মাঝে মাঝে মাথা ব্যাথা করে।
হৃদিকা : ঠিক মতো মেডিসিন খাচ্ছো তো।
তিশা : হ্যাঁ।
আয়েশা : তো হৃদিকা বিয়ে কবে করছো?
হৃদিকা : উনি ডিউটির জন্য ঢাকার বাহিরে গিয়েছেন, তাই বিয়ে দু মাস পর হবে।
তিশা : তোমার হাসবেন্ডের নাম কি?উনি কি করেন?
হৃদিকা : উনি ডক্টর, ডক্টর সাজ্জাত হোসেন।
তিশা : ওহ।
হৃদিকা : খাবার চলে এসেছে।
ওরা তিনজন লাঞ্চ করে অফিসে চলে গেল।
________________________________________________
সন্ধ্যা তিশা ও আয়েশা অফিস থেকে বের হল।
রাস্তায় হাটার সময় হঠাৎ আয়েশার ফোন বেজে উঠে।
তিশা : কে কল করেছে?
আয়েশা : ওমর কল করেছে।
আয়েশা : আসসালামু ওয়ালাইকুম।
ওমর : ওয়ালাইকুম আসসালাম,কোথায় তুমি?
আয়েশা : আমি তো মাএ অফিস থেকে বের হলাম।
ওমর : তোমার সাথে কিছু কথা আছে, একটা আড্রেস এস এম এস করেছি সেখানে চলে এসো।
আয়েশা : হঠাৎ কি কথা বলবে?
ওমর : এমনই একটু কথা ছিল, তুমি চলে আসো, রাখছি।
ওমর কল কেটে দিল।
তিশা : কি হয়েছে?
আয়েশা : ওমর আমার সাথে কিছু কথা বলবে তাই আমাকে এক জায়গায় যেতে বলেছে।
তিশা : আচ্ছা, তুই যা, আমি বাসায় চলে যাই।
আয়েশা : আচ্ছা, আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো।
আয়েশা ওমরের দেওয়া আড্রেসে চলে গেল।
তিশাও বাসার দিকে যেতে লাগল।
________________________________________________
তিশার বাসায় যাওয়ার পথে দেখে ওসমানের গাড়ি দাঁড় করানো, ওসমান রাস্তার কিছুটা মাঝখানে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে,
তিশা : [মনে মনে] : উনি ডক্টর ওসমান না?
হঠাৎ কিছু দেখে তিশা দ্রুত ওসমানের সামনে যেয়ে ওর হাত ধরে হেঁচকা টান দেয় যার ফলে,
#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_7
কপি নিষিদ্ধ ❌
হঠাৎ কিছু দেখে তিশা দ্রুত ওসমানের সামনে যেয়ে ওর হাত ধরে হেঁচকা টান দেয় যার ফলে, ওসমানের ফোন রাস্তায় পরে যায়,আর ওসমান রাস্তার এপাশে চলে আসে।
তিশা : আপনি ঠিক মতো দেখে চলতে পারেননা আরেকটু হলেই তো আপনার এক্সিডেন্ট হয়ে যেত।
ওসমান : সরি আসলে কথা বলতে বলতে কখন যে রাস্তার মাঝে চলে এসেছি বুঝতে পারিনি।
তিশা : আচ্ছা, কিন্তু দেখে শুনে চলবেন, এখন প্রায়ই এক্সিডেন্ট হচ্ছে।
ওসমান : হুম।
তিশা : আচ্ছা আমি আসি।
ওসমান : শুনুন মিস তিশা।
তিশা : জ্বি।
ওসমান : আপনি আমার প্রাণ বাচিঁয়েছেন, আপনি কি আমার একটা কথা রাখবেন?
তিশা : কি কথা?
ওসমান : আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি?
তিশা : ফ্রেন্ড আর আমরা!
ওসমান : কেন হলে কি খুব ক্ষতি হবে।
তিশা : আব তা না।
তিশা : [মনে মনে]: এখন কি করবো, ওনাকে মুখের উপর না ও করতে পারছি না,আবার হ্যাঁ করতে পারছি না, আমিতো কেনো ছেলের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথাই বলি না,আচ্ছা ফ্রেন্ডশীপ করেই দেখি।
ওসমান : কি হল কি ভাবছেন?
তিশা : আচ্ছা হব আপনার ফ্রেন্ড।
ওসমান : তো ফ্রেন্ডশ?
তিশা : ইয়াহ নাও উই আর ফ্রেন্ডশ।
ওসমান : তুমি আমার বয়সে ছোট তাই তোমাকে কিন্তু তুমি করেই বলবো,তোমার কি এতে আপত্তি আছে?
তিশা : না, আপনি তুমি করে বলতে পারেন।
ওসমান : চলো ফুচকা দিয়ে ফ্রেন্ডশীপ সেলিব্রেট করি।
তিশা : ফুচকা দিয়ে!
ওসমান : হ্যাঁ তোমার তো ফুচকা ফেবারিট।
সন্ধিহান চোখে তাকিয়ে
তিশা : আপনি কিভাবে জানলেন আমরা ফুচকা ফেবারিট?
আমতা আমতা করে
ওসমান :আব না মানে সব মেয়েরাই তো ফুচকা পছন্দ করে, আমি ভাবলাম তোমরাও ফেবারিট হবে, তাই আর কি।
ওসমানকে আমতা আমতা করে কথা বলতে দেখে তিশা ফিক করে হেসে দিল।
তিশা : হয়েছে আর আমতা আমতা করতে হবে না, আমি ফুচকা অনেক পছন্দ করি,আমার কাছে ফুচকা মানেই ভালোবাসা।
ওসমান : ফুচকা মানে ভালোবাসা!
তিশা : হুম,অামি আর আয়েশা অনেকবার ফুচকা চ্যালেন্জ করে খেয়েছি।
ওসমান : তাহলে চলো আজ চ্যালেন্জ করা যাক।
তিশা : আজ কে না আরেকদিন চ্যালেন্জ করবো।
ওসমান : আচ্ছা তাহলে চলো রেস্টুরেন্টে যাওয়া যাক।
তিশা : ফুচকা খেতে রেস্টুরেন্টে যাবো?
ওসমান : হুম। নাহলে কোথায় যাবো?
তিশা : রাস্তার স্টলের ফুচকা রেস্টুরেন্টের ফুচকা থেকে ১৫ গুন বেশি মজা।
ওসমান : আচ্ছা তাহলে চলো।
তিশা : ডক্টর সাহেব এত আনহেলদি ফুড খাবেন? আমি তো জানতাম ডক্টররা সবসময় হেলদি ফুড খায়।
ওসমান : আমি আগে মানুষ তারপর ডক্টর, হ্যাঁ এতো বছর লন্ডনে ছিলাম তাই খাইনি,কিন্তু স্কুল কলেজে লাইফে অনেক খেয়েছি।
তিশা :আচ্ছা চলুন যাওয়া যাক।
________________________________________________
ফুচকার স্টল সামনে থাকায় ওদের বেশিদূর এগোতে হয় নি।
তিশা : আপনারটায় ঝাল দিতে বলবো?
ওসমান : হুম অনেক ঝাল করে বানাতে বলো।
তিশা : আচ্ছা, মামা দুটো ফুচকা দেন একটায় ঝাল কম আরেক অনেক ঝাল দিবেন।
ফুচকাওয়ালা : আইচ্ছা আপনেরা বসেন।
ওরা চেয়ারে বসে পরে
ওসমান : তুমি ঝাল খেতে পারোনা?
তিশা : আমি একদমই ঝাল খেতে পারিনা, শুধু ফুচকার বেলায় একটু ঝাল খাই।
ওসমান : আমি আবার ঝাল ছাড়া কোনো খাবার খেতে পারিনা।
ফুচকাওয়ালা : নেন আপনেগো ফুচকা।
ওরা প্লেট দুটো নিল।
________________________________________________
তিশার দিকে একটা ফুচকা বারিয়ে দিয়ে
ওসমান : হা করো।
তিশা : আমার আছে তো আপনি খান।
ওসমান : উহুম ফ্রেন্ডশীপ সেলিব্রেট করবো আর ফ্রেন্ডকে খাইয়ে দিবনা তা কি হয়। হা করো।
ওসমান তিশাকে খাইয়ে দিল,তিশাও ওসমানকে খাইয়ে দিল।
________________________________________________
তিশা : এই নিন মামা।
ওসমান : তুমি কেন টাকা দিচ্ছো?
তিশা : কেন দিলে কি হবে?
ওসমান : ট্রিটতো আমার দেওয়ার কথা।
তিশা : আচ্ছা চলুন আইসক্রিম খাওয়া যাক।
ওসমান : চলো।
ওরা আইসক্রিম নিলো ওসমান বিল দিল।ওরা আইসক্রিম খেতে খেতে ব্রিজের ওপর উঠল।
________________________________________________
তিশা : আমার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা এটা,আমার যখন ভিষণ মন খারাপ হয়, তখন আমি এখানে চলে আসি,নদীর দিকে তাকালে মন ভালো হয়ে যায়।
ওসমান : তোমার নদী, সমুদ্র পছন্দ?
তিশা : হুম কিন্তু সাতার পারি না, পরলে শেষ। আপনার সমুদ্র পছন্দ নাকি পাহাড়?
ওসমান : আমার পাহার পছন্দ, যখন পাহাড়ের চূড়ায় উঠে সামনের দৃশ্য দেখি তখন অশান্ত মন শান্ত হয়ে যায়। তোমার আর কি কি পছন্দ?
তিশা : আমি গান গাইতে ভালোবাসি, গান শুনতে ভালোবাসি,আমার মন খারাপ থাকলে আমি গান শুনি, মন ভালো থাকলেও গান শুনি।
ওসমান : গান এত পছন্দ?
তিশা : হুম ভীষণ পছন্দ। আপনার গান ভালো লাগে না।
ওসমান : হুম আমারও গান ভীষণ ভালো লাগে। তোমার কোন গান পছন্দ?
তিশা : বাংলা ও হিন্দি, ইংরেজি কিছু কিছু ভালো লাগে। আপনার?
ওসমান : আমারও শেইম।
তিশা : গান গাইতে পারেন?
ওসমান : হুম।
তিশা : আমাকে একটা গান গেয়ে শুনাবেন?
ওসমান : কোন গান শুনবে?
তিশা : SRK এর Main yahaa hoon yahaa গান টা শুনবো, আমার অনেক পছন্দের গান এটা।
ওসমান গান গেয়ে শুনালো।
তিশা : আপনি তো খুব সুন্দর গান গাইতে পারেন।
ওসমান : থ্যাঙ্ক ইউ।
ওরা কিছুক্ষন সেখানে থেকে নিজেদের পছন্দ অপছন্দ নিয়ে কথা বলে।রাত বেশি হওয়ায় ওসমান তিশাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আসে।তারপর নিজেও বাসায় চলে যায়।
________________________________________________
আয়েশা : এতক্ষণ কোথায় ছিলি?
তিশা : ফ্রেশ হয়ে এসে বলছি।
তিশা ফ্রেশ হয়ে এসে আয়েশাকে সব বলল।
________________________________________________
তিশা : তার সাথে ফ্রেন্ডশীপ করে কি ভুল করলাম?
আয়েশা : একদমই না উনি মানুষ হিসেবে অনেক ভালো বিশ্বাস করতে পারিস।
তিশা : আচ্ছা দেখি কি হয়।তা ডক্টর ওমর কেন ডেকে ছিল?
আয়েশা : ও নাকি আমাকে মিস করেছিল তাই ডেকেছে। আমরা ঘুরতেও গিয়েছিলাম।
তিশা : আচ্ছা তুই যে উনাকে ভালোবাসিস তা কি উনাকে বলেছিস?
আয়েশা : না রে।
তিশা : কেন?
আয়েশা : ও যদি আমাকে শুধু বন্ধুই ভেবে থাকে তখন।
তিশা : দেখ তার মনে কি সেটা তো আমরা জানি না, আবার তোর মনে কি তা তো সে জানে না, তাই না জেনে কিছু বলিস না।
আয়েশা : আমি বলার পর যদি আমাকে রিজেক্ট করে দেয় তখন?
তিশা : পজিটিভ চিন্তা কর,এখন না কিছু দিন পর বল,আগে বুঝার চেষ্টা কর তোর প্রতি তার ফিলিংস টা কেমন।
আয়েশা : হুম।
তিশা : মন খারাপ করিস না। দোয়া করি উনি যদি তোর জন্য ভালো হয় তাহলেই যেন আল্লাহ তোদের চার হাত এক করে দেন।
আয়েশা : হুম, আচ্ছা আমি রুমে গেলাম।
তিশা : হুম যেয়ে শুয়ে পর।
আয়েশা ওর রুমে চলে গেল।
তিশা : [মনে মনে]: আল্লাহ ডক্টর ওমর যদি আয়েশার জন্য ভালো হয় তবেই তুমি তাকে ওর সাথে মিলিয়ে দিও,আর যদি সে ভালো না হয় তাহলে তুমি তাকে আয়েশার জীবন থেকে সরিয়ে ফেল,আমি চাইনা ভুল মানুষকে ভালোবেসে ও সারা জীবন কষ্ট পাক,আল্লাহ তুমি সবসময় ওকে সুখে রেখো,আমিন।
________________________________________________
ওমর : ভাইয়া কাজ হয়েছে?
ওসমান : আমি প্ল্যান বানিয়েছি আর তা কাজে দিবেনা তা কি হয়।
ওমর : ফ্রেন্ডশীপ হয়েছে তোমাদের?
ওসমান : ইয়াপ ব্রো।শুধু একটা শোক সংবাদ আছে।
ওমর : কি?
ওসমান : তুই সব কিছু ভালো ভাবেই করছিস,ট্রাকও ঠিক রাইমে এসেছে, যখন জানপাখি আমার হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে রাস্তার পাশে নিয়ে এসেছে, তখন আমার হাত থেকে ফোনটা পরে শহিদ হয়ে গেছে।
ওমর : আহারে।
ওসমান : তোর আর আমার শালি সাহেবার কি খবর?
ওমর : পুরোই ঝাক্কাস, আজ ওকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম।
ওসমান : আচ্ছা, কালতো সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে, যা শুয়ে পর।
ওমর : হুম তুমিও, গুড নাইট।
ওসমান : গুড নাইট।
ওমর ওর রুমে চলে গেল ওসমানও শুয়ে পরলো।
________________________________________________
এভাবেই দেখতে দেখতে ৩ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলে।
এই ৩ সপ্তাহে তিশা ও ওসমানের মধ্যে খুব ভালো বন্ডিং তৈরি হয়েছে। ওসমানের প্রতি যে দ্বিধা দন্ড ছিল তা কেটে গেছে।ওরা ভালো বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। ওসমান তিশার মন খারাপ হতে দেয় না সব সময় হাসি খুশি রাখার চেষ্টা করে, ওরা প্রায় দেখা করে, ফোনে কথা বলে,খুব ভালো যাচ্ছে ওদের দিন কাল।
আয়েশা আর ওমরের দিন কাল ভালোই যাচ্ছে, কিন্তু আয়েশা বুঝতে পারছেনা আদোও কি ওমর ওকে বন্ধু ভাবে নাকি ওর জন্য অন্য কিছু ফিল করে।আয়েশা ক্রমশই ওর প্রতি দূর্বল হয়ে পরেছে।
________________________________________________
আজ শুক্রবার,
তিশা ও আয়েশা খুব সকালবেলা উঠেই ঘর পরিষ্কার করছে,
কাজ শেষে ওরা গোসল করে নামাজ পরে নিল।
তিশা চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে ভাবচ্ছে,
এতো দিনে বুঝতে পেরেছি ডক্টর ওসমান ভালোই খারাপ না,উনাকে বিশ্বাস করা যায়, এই প্রথম আয়েশা ব্যতীত কেউ আমার বন্ধু হল,যার সাথে আমি মন খুলে কথা বলতে পারছি, আর
হঠাৎ তিশার ফোন বেজে উঠল,
চলবে কি?
[