#উমা [কপি করা নিষেধ]
#৫ম_পর্ব
রাত বাড়ছে, সারাদিনের ধকলে ক্লান্ত শরীর ঘুমে জড়ি
য়ে গেছে উমার। হঠাৎ কারোর স্পর্শ পেতেই আৎকে উঠলো সে। সে ঘরে একা, তাই চিৎকার করতে যায় সে। তখনই মুখ আটকে ধরে কেউ। ধীর স্বরে বলে,
“চেঁচিয়ো না, আমি রুদ্র”
পুরুষালি হাত জোড়া উমার শরীরে বিচরণ করছে। উষ্ণ নিঃশ্বাস ছুয়ে যাচ্ছে কান। গভীর নিরব রাতের অন্ধকারে রুদ্রের মুখশ্রী দেখা না গেলেও অবয়বটুকু দেখা যাচ্ছে। আকর্ষিক ভয়ে উমার শরীর অবশ হয়ে আসছে। রুদ্র তো নিখোঁজ ছিলো! এই ব্যাক্তি কোথা থেকে আসলো? রুদ্রের শান্ত লাল চোখ জোড়া তখন তাকিয়ে আছে উমার দিকে। আলতো হাতে অবাধ্য চুলগুলো গুজে দিলো কানের পেছনে। কেঁপে উঠলো ষোড়শীর সমস্ত শরীর। এই প্রথম কোনো পুরুষের শীতল স্পর্শ পেয়েছে সে। আমাবস্যার আঁধারে উমার অস্থিরতা চোখে পড়লো না রুদ্রের। তার চোখে মাদকতা। আজ প্রথম নেশা না করেও নেশাগ্রস্থ সে। উষ্ণ ঠোঁট ঠেকালো উমার গলার কাছে। জড় কালো কুৎসিত ভয় উঁকি দিলো মনের ভেতর উমার। সারা শরীর শিরশির করে উঠলো তার। অস্থিরতা বাড়লো। দম আটকে আসতে থাকলো উমার। তীব্র আতঙ্ক ত্রাসে হাত পা ছুড়তে লাগলো সে। উমার অস্থির আচারণে খানিকটা বিরক্ত হলো রুদ্র। মূহুর্তেই ঝাঁঝিয়ে উঠলো সে,
“নড়ছো কেনো?”
“ছাড়…ছাড়ুন আমায়”
কাঁপা ভীত স্বরে কথাটা বলে উমা। চোখ জোড়ায় নোনা জলের ঢেউ উঠেছে। গলাটা আটকে আসছে, রুদ্রকে ধাক্কা দেবার চেষ্টা করতে লাগলো উমা। নিজেকে তার কাছ থেকে ছাড়ানোর প্রবল চেষ্টা করতে লাগলো সে। উমার নড়াচড়া, ছটপটানিতে বিরক্ত হয়ে ছেড়ে দিলো রুদ্র তাকে। রুদ্রের হাত থেকে মুক্তি পেতেই বিছানা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লো উমা। হাপাতে হাপাতে দ্রুত হস্তে মোমবাতিটা জ্বালালো উমা। মোমের হলুদ আলোতে উজ্জ্বল হলো অন্ধকার কালো ঘর। সেই ঔজ্জ্বল্যে ভীত চোখে তাকালো রুদ্রের দিকে। খাটে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রুদ্র তাকিয়ে আছে তার দিকে। আজ প্রথম নজর রুদ্রকে খুতিয়ে দেখলো উমা। এর আগেও রুদ্রকে দেখেছে সে, কিন্তু ভয়ের চোটে কখনো মাথা তোলার সাহস পায় নি। লোকটা সুদর্শন, গ্রামের আর পাঁচটা সুদর্শন, সবল লোকের গণনায় নির্দ্বিধায় পড়ে সে। লম্বাটে ফর্সা মুখ, কালো চুল পড়ে রয়েছে কপালে, চাপদাঁড়িতে ঘিরে আসে গাল; ঘোলাটে চোখের হিংস্র চাহনী এড়ালো না উমার নজরে। রুদ্র মুখ খিঁচিয়ে বললো,
“আমি তো বললাম, আমি রুদ্র। তাহলে এতো ছটপটানি কেনো?”
“আপনি..এখানে?”
“আমি বাদে কি অন্য পুরুষকে আশা করছিলে তুমি?”
রুদ্রের এমন প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেলো উমা। এটা কেমন ধারা প্রশ্ন? উমাকে চুপ করে থাকতে দেখে তার দিকে এগিয়ে এলো রুদ্র। উমা দুকদম পিছিয়ে যেতে নিলেই রুদ্র তাকে খপ করে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেললো। কানে ঠোঁট লাগিয়ে বললো,
“পালাচ্ছো কেনো? পালিয়ে লাভ নেই। এতদিন পর ঘুঘুকে খাঁচায় আটকাতে পারলাম।”
“ছাড়ুন আমায়?”
“ভুলে যেও না আমি তোমার স্বামী। অধিকার আছে তোমার উপর”
রুদ্রের কথায় জমে গেলো উমা। বিয়ে মানেই কি তবে শারিরীক সম্পর্ক? বুয়ে মানেই তার উপর পূর্ণ অধিকার পেয়ে যাবে রুদ্র? এমনটা কেনো? যে উমার উপর তার নিজের অধিকার নেই সেই উমার উপর আজ অন্য কেউ অধিকার জমাচ্ছে। অজান্তেই নোনাজল গড়য়ে পড়ে চোখ থেকে। যাকে চিনলো না জানলো না তাকে নিজেকে কিভাবে সপে দিবে উমা? ত্রাসে বুকটা ভীত হয়ে এলো উমার। রুদ্রের হাতের বেষ্টনী থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলো সে। কিন্তু পুরুষের শক্তির সাথে পেরে উঠলো না। রুদ্র নিজের শক্তির অপব্যাবহার করলো। টেনে ছুড়ে ফেললো বিছানায়। নিজেকে চাপিয়ে দিলো কিশোরীর উপর। উমার আর্তনাদ লাল দেয়ালেই আটকে থাকলো। এক হিংস্র পাশবিক রাতের মুখোমুখি হলো উমা। নিজের সকল বাসনার পূর্তি করলো রুদ্র। আমাবস্যার অন্ধকারে এক কিশোরীর মেয়ের ইচ্ছাকে গলা টিপে হত্যা করা হলো। একটা সময় সকল চেষ্টা ছেড়ে দিলো উমা, ছটফটানি থেমে গেলো। জড় বস্তুর মতো পড়ে রইলো সে।
নিঝুম রাত। রুদ্র ঘুমে মগ্ন। উমার চোখে ঘুম নেই। এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো সিলিং এর দিকে। জীবনসঙ্গী নিয়ে ভাবনাটা সকল কিশোরীর ই থাকে। উমার ও ছিলো। বড় দিদিদের কাছে শুনেছিলো, বরেরা নাকি ভালোবাসে, স্নেহ করে। ভালোবাসার অর্থটি না জানলেও উমার মনে এক সুপ্ত বাসনা ছিলো তার সঙ্গীটি তাকে প্রচন্ড আগলে রাখবে, তার ইচ্ছের সম্মান করবে; তার মনটাকে বুঝবে। কিন্তু রুদ্রের এই পাশবিক আচারণ তার সকল স্বপ্নকে মূহুর্তেই পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে। মানুষটাকে অপছন্দ ছিলো ঠিক ই কিন্তু এখন ঘৃণা জন্মাতে লাগলো তার প্রতি। এটাই যদি ভালোবাসা হয় তবে চাই না তার ভালোবাসা, চাই না তার স্নেহ। বুকটা হু হু করে উঠলো উমা। বালিশে মুখ গুজে নোনাজল ছেড়ে দিলো সে। রুদ্রের ছোঁয়া বিষ লাগলো তার। কোনো মতে উঠে দাঁড়ালো সে। শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে স্নানঘরের দিকে এগুলো সে। দরজা লাগিয়ে বালতিতে পানি ভরলো। পুরোটা শরীর সাবান দিয়ে ধুয়ে রুদ্রের বিষাক্ত ছোঁয়াগুলো মিটিয়ে দিতে চাইলো। ঠোঁট কামড়ে কাদতে লাগলো। মনে মনে বললো,
“হে ভগবান, আমায় মুক্তি দাও। মুক্তি দাও।”
উমার এই কান্নাটুকু শোনার ও কেউ নেই এই জমিদার বাড়িতে। ঘৃণায় গা গুলোচ্ছে তার। রুদ্রের প্রতি এক তরী ঘৃণা নিয়ে কি করে দিনের পর দিন থাকবে তার সাথে? স্নান শেষে বেড়িয়ে এলো উমা। চোখ গুলো ফুলে উঠেছে, ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গেছে। রুদ্র তখন ও ঘুম। একরাশ ঘৃণা নিয়ে তাকালো তার দিকে। একই বিছানাতে শুতেও ইচ্ছে হলো না উমার। বেশ কিছুসময় দাঁড়িয়ে থেকে ধীর পায়ে বেড়িয়ে এলো কক্ষ থেকে। অন্ধকার বাড়িতে একা একা উমা হাটছে। উমার বরাবর ই ভুত প্রেতে ভয় ছিলো। কিন্তু আজ সেই ভয়টা বিলীন হয়ে গেছে। আজ যদি তেনারা তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায় আফসোস নেই। অন্তত এই পাষন্ড দুনিয়া থেকে তো মুক্তি পাবে!
সকালের কিরণ পূবের জানালা দিয়ে উঁকি দিচ্ছে রুদ্রের রুমে। সকালে ওঠার স্বভাব নেই তার। তবে আজ তার ঘুমটি ভাঙ্গলো ভোরেই। মুখে তৃপ্তির হাসি নিয়ে চোখ খুললো রুদ্র। এর একটাই কারণ, গতকাল মদের এক বিন্দুও খায় নি সে। সে ঠিক করেছে উমার কাছে আসার সময় মদ্যপান করবে না। মেয়েটির ভীতচোখের মোহে পড়েছে বহুকাল আগে, যেদিন একটা আটপৌড়ে শাড়ি পড়া কিশোরী কাঁচা আম পাড়তে ঢুকেছিলো এই বাড়িতে। রুদ্র ভেবেছিলো মেয়েটি তার নিছক ভালোলাগা। কত সুন্দর নারী দেখেছে সে, এটা এমন কিছুই না। কিন্তু কেনো যেনো মেয়েটির দেবীমূর্তীর আদলে মুখশ্রীকে ভুলতে পারলো না সে। তারপর সেই ভালোলাগা মোহে পরিণত হলো। প্রথমে ভেবেছিলো ভোগ করবে, কিন্তু মেয়েটিকে ভোগ করতে ইচ্ছে হলো না রুদ্রের। তাকে সারাটাজীবন নিজের খাঁচায় আটকে রাখার এক অদম্য ইচ্ছে হলো রুদ্রের। আজ সেই ইচ্ছে পূরণ হলো, আজ থেকে সেই মেয়েটি সর্বক্ষণ তার আঙ্গিনাতে বিচরণ করবে, কথাটা ভাবতেই রুদ্রের মনমন্দির উচ্ছ্বাসে ভরে যাচ্ছে। মেয়েটির সাথে প্রতিটি মূহুর্তকে অন্তিমক্ষণ অবধি মনে রাখতে চায় সে। তাই মেয়েটির জন্য মদ্যপান করবে না সে। রুদ্রের কথা, একবার শরীর হাসিল করলে মন হাসিল করতে কতক্ষন। রুদ্র হাতড়ালো বিছানায়। ঠান্ডা বিছানাটি দেখেই চমকে উঠলো। পাখি কি পালালো? তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো সে। না উমা কোথাও নেই, ঘরের স্নানঘরেও না। রুদ্রের মাথায় যেনো বাজ পড়লো। বুকের বা কোনায় চিনচিনে অনুভূতি হলো। বড় অদ্ভুত এই অনুভূতি! ত্রিশ বছরের যুবককে অবাক করলো এই অনুভূতি। শার্টটা গায়ে দিয়েই ছুটলো সে। এক এক করে প্রতিটা ঘর দেখলো রুদ্র, ফুলির মাকেও জিজ্ঞেস করলো সে। ফুলির মা এক রাশ বিরক্তি নিয়ে বললো,
“আমি কি দারোয়ান নি? যে তোমার বউ পাহারা দিম?”
রুদ্র অস্থির হয়ে উঠলো, সারা বাড়িতে উমা নেই। রুদ্রের অস্থিরতায় বিরক্ত হয়ে লক্ষী দেবী বললেন,
“বউ কি তোমার একা হয়ে রুদ্র? দেখো কোথাও আছে হয়তো”
“আমি সব জায়গা দেখেছি মা, পেলাম না কোথাও”
লক্ষী দেবীর চোখে মুখে বিরক্তি। ছেলের আদিক্ষেতা পছন্দ হচ্ছে না। মালিনী দেবী বললেন,
“আমি তো সকালে উঠি, ফুল তুলি। আমিও দেখি নি বউ কে।”
রুদ্রের অস্থিরতা ক্রমশ বাড়ছে। এক অজানা ভয়ে হিম ধরছে তার। কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়ছে সে। তখনই…..
চলবে
[