#একটুখানি_আশা
#মেহরাফ_মুন(ছদ্মনাম)
#পর্ব ৭
মুনের চিৎকারে আদ্রাফ হতবম্ব।
-‘স্টপপপ।’ আদ্রাফ রেগে ধমক দিয়ে উঠলো।
মুন আদ্রাফের ধমক খেয়ে একটু চুপ হলো আর ততক্ষনে ওর চিৎকারের আওয়াজে সম্পূর্ণ বাড়িতে আলো জ্বলে উঠলো, ফুফিরা সবাই উঠে গিয়েছে হয়তো। মুন এখনো ঐভাবে চোখ বন্ধ করে মুখ কিচে আদ্রাফের হাতে আবদ্ধ রইল। আদ্রাফ তা দেখে রেগে ওর নিজের হাতের বাঁধন ছেড়ে দিল। আদ্রাফ মুনের হাত ছেড়ে দিতেই মুন নিজের ব্যালেন্স হারিয়ে মেঝেতে পড়ে গেল। আদ্রাফ সেদিকে পাত্তা না দিয়ে গটগট করে মুনকে ঐভাবে ফেলে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।
-‘আহহ, আমার কোমর।’ মুন আবারও চিৎকার দিয়ে উঠলো।
-‘আরে মুন মা। এভাবে চিৎকার দিলি ক্যান? আর তুই মেঝেতে ক্যান?’ ফুফি দৌড়ে এসে মুনকে তুলতে তুলতে অবিশ্বাস্য স্বরে বলে উঠলো।
-‘আরে ফুফি, এমনি পা পিছলে পড়ে গেছিলাম।’
-‘আহারে! একটু সাবধানে চলবি না মা? দেখ তো এখন।’ফুফি মুনকে উদ্দেশ্য করে বলল।
-‘বাই দ্যা ওয়ে মুন তুমি এখানে পিছলে কীভাবে পড়লে?’শাফিন ভাবুক স্বরে বলল।
-‘আরে পা মচকে পড়েছে হয়তো বা, না আপু?’অহু বলে উঠল।
-‘তো ‘ভুত’ বলে চিৎকার কেন দিলে মুন?’ শাফিন আবারও বলে উঠলো।
-‘তোমাদের বাসায় ভুতের মত দানব একটা রাত বিরাতে ঘুরে তাই।’ মুন আনমনে বিড়বিড় করে বলে উঠলো।
-‘আরে দূর শাফিন তুই যা তো। মেয়েটা এমনি পড়ে গিয়ে কোমরে ব্যথা পেল আর তুই সিরিয়াস বিষয়েও মজা নিচ্ছিস?’ ফুফি রাগীস্বরে বলে উঠলো।
-‘মা তোমরা এত রাতে এখানে কী?’এসবের মাঝে আদ্রাফ আবার দরজা খুলে বলে উঠলো।
-‘এই দেখ না। মেয়েটা পড়ে গেল ব্যথাও পেয়েছে তাই আসছি।’ফুফি বলল।
-‘তো পড়ে গিয়েছে ব্যথার ওষুধ দিলেই তো হয়। পুরো বাড়ি চিৎকার করে মাথায় তোলার কী আছে?ইডিয়ট!’মুনের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে কথাগুলো বলে আবারও শব্দ করে দরজাটা বন্ধ করে দিল।
-‘আমার ঘুমটার বারোটা বাজায় দিলে।’ শাফিন হায় তুলে চলে গেল রুমের দিকে।
-‘ফুফি আমি ঠিক আছি। তোমরা ঘুমাও গিয়ে। শুভ রাত্রি।’
-‘আচ্ছা, কিছু লাগলে বলিস।’ এই বলে ফুফিরা চলে গেল আর মুন আদ্রাফের রুমের দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে একটা বারি মেরে গালি দিতে দিতে রুমে ঢুকে গেল।
–
–
সূর্যের তির্যক রশ্মি চোখে পড়তেই মুন চোখ খুলে দেখল ফুফি দাঁড়িয়ে আছে।
-‘শুভ সকাল মা। উঠে পর। অনেক বেলা গড়িয়েছে। উঠে নিচে আয়।’ বলেই ফুফি চলে গেল।
মুন হাতের পাশে মোবাইল নিয়ে টাইমটা দেখতেই এক প্রকার লাফিয়ে উঠলো। ‘এত বেলা পর্যন্ত ঘুমালাম!’ মুন বিড়বিড় করে কিছুসময় বসে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে দেখল সোফার উপর অহনা বসে টিভি দেখছে আর কেউ নেই।
-‘শুভ সকাল আপু।’মুনকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে মিষ্টি হেসে অহনা বলল।
-‘শুভ সকাল। আর কেউ নেই? দেখছি না যে কাওকে?’ মুন অহনার পাশে বসতে বসতে বলল।
-‘ওদেরকে একসাথে দিনে আর দেখা যায় না। রাতেই সবাইকে দেখবি একসাথে। তোর ফুফা আর আদ্রাফ অফিসে চলে যায় আর শাফিনের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। আজ এখন উঠে নাস্তা না করেই কই জানি চলে গেল।’ ফুফি কিচেন থেকে আসতে আসতে মুনের উত্তর দিল।
-‘এগুলো খেয়ে নেয়।’ ফুফি নাস্তার প্ল্যাট দিয়ে আবারও কিচেনে চলে গেল।
-‘একটা কথা জানো আপু?’ অহু পাশ থেকে ফিসফিস করে বলে উঠলো।
-‘হ্যাঁ বলো।’নাস্তা মুখে দিতে দিতে বলে উঠলো মুন।
-‘শাফিন ব্রো তাঁর গার্লফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করতে গিয়েছে। আজ সারাদিন ট্যুর দিবে তাই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেছে।’ অহু আবারও ফিসফিস করে বলল।
-‘কী বলো?’ মুন অবিশ্বাস্যভাবে বলল।
অহু ‘হ্যাঁ’ সম্বোধনে হাসিমুখে মাথা নাড়লো।
————————
এভাবেই পুরো দিনটা হাসিমুখে কেটে গেল। মুন রুমের ব্যালকনিতে বসে আছে। অহনা তাঁর বফ এর সাথে দেখা করতে গিয়েছে মুনকেও যেতে বলেছিলো কিন্তু মুন কাবাব মে হাড্ডি হতে চায় না আর তাঁদের পার্সোনাল টাইমে না যাওয়াই ভালো তাই মুন যায়নি।
-‘এই যে ভীতুর ডিম।’
কারো পুরুষালি কণ্ঠ শুনে মুন পিছনে তাকিয়ে দেখল তাঁর রুমের দরজায় হেলান দিয়ে আদ্রাফভাইয়া দু’হাত বুকে গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।
-‘আপনি? আর ভীতুর ডিম কে?’ মুন রাগিভাবে আদ্রাফের সামনে গিয়ে বলল।
-‘কে ভীতু সেটা তো কাল রাতেই বোঝা গেছে।’
-‘দেখুন আপনি কিন্তু আমার সহ্যের সীমা লঙ্গন করছেন। রাগ উঠলে আমি কী করব এটা নিজেই জানি না।’মুন হাতের আঙ্গুল আদ্রাফের দিকে তাক করে বলল।
-‘আরে মুন মা। রেডি হয়ে নেয় তাড়াতাড়ি। আমি আদ্রাফকে তোর জন্য অফিস থেকে আসতে বলছিলাম। তোর কী কী লাগবে সব কিনে নিয়ে আসিস। আদ্রাফের কাজ আছে সে তোকে সব কিনে দিয়ে আবার বাইরে যাবে।’ ফুফি রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল।
ফুফি রুমে ঢুকতেই আদ্রাফ ভাইয়া বেরিয়ে গেল।
–
–
মুন দ্রুত একটা নেভি ব্লু কুর্তি পড়ে একপাশে বিনি করে হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো। নিচে সোফায় আদ্রাফ ভাইয়া বসে ফোন দেখছে। মুন নিচে নামতেই ফুফি এগিয়ে এসে মুনের তুটনি ধরে বলল,’মাশ’আল্লাহ! আমার মা টা। নজর না লাঘুক কারো।’
মুন মুচকি হাসলো। ফুফি যখন এসব বলতে ব্যস্ত তখন আদ্রাফ ভাইয়া সোফা ছেড়ে উঠে মুনের দিকে এক নজর তাকিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। বাইরে বের হতে হতে বলে উঠলো,’মা দ্রুত।’
-‘আচ্ছা যা। আদ্রাফের সাথে সাথে থাকিস।’
মুন হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেল বাসা থেকে। বের হতেই দেখল আদ্রাফ গাড়িতে উঠে ড্রাইভিং সিটে আগে থেকেই বসে আছে যেন মুন উঠার অপেক্ষা। মুন গাড়িতে উঠে বসতেই আদ্রাফ গাড়ি চালানো শুরু করল।
শপিং এ পৌঁছাতেই আদ্রাফ গাড়ি থেকে নেমে মুনকে ওর পিছন পিছনে অনুসরণ করতে বলল।
শপিংটা অনেক বড়ো আর অনেক মানুষের আনা-গুনা। কেউ যদি জায়গা না চিনে যে কেউ নিশ্চিত হারিয়ে যাবে। অনেক ভিড়। আদ্রাফ একে একে দোকানে ঢুকছে আর মুনকে এটা ওটা নিবে কিনা জিজ্ঞেস করছে। আদ্রাফ ভাইয়া মুনকে ফেলে অনেক আগে আগে হাটছে। অনেক সময় অনেক দূরেই চলে যাচ্ছে। কিছুসময় পর পর মুন দৌড়ে আদ্রাফের কাছে আসছে। এক পর্যায়ে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরিহিত এক মেয়ে আদ্রাফের কাছে আসলো আর কোশলাদি বিনিময়ের পর মুনের দিকে তাকিয়ে ইংলিশে বলল কে সে। আদ্রাফ মুনের দিকে না তাকিয়েই সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে বলল,’মাই কাজিন।’
বোঝায় যাচ্ছে আদ্রাফের ফ্রেন্ড। এভাবেই কথা বলতে বলতে মুনকে ফেলে অনেক দূর এগিয়ে গেল এরা। মুন এতক্ষন চোখে চোখে রাখছিলো এক পর্যায়ে এত মানুষের ভীড়ে হারিয়ে ফেলল ওদের। মুন দৌড়ে ওদিকেই গেল যেখানে শেষবার আদ্রাফ ভাইয়া আর মেয়েটিকে দেখা গিয়েছিল। ওখানে গিয়েই দেখল তিন-চারদিক থেকে গলি। মুন ভেবে পাচ্ছে না সে কোনদিক দিয়ে যাবে। তবুও নিজেকে যথাসাধ্য শক্ত করে এগিয়ে গেল কিন্তু না ঐদিকে আদ্রাফের ছিটে-ফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। মুন সব গলিই একে একে দেখল। একসময় খুঁজতে খুঁজতে শপিং এর বাইরে বের হয়ে গেল। মুন কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। এই অচেনা জায়গায় কী করবে সে? এত্তো বড়ো শপিংমলে ঘুরেও আদ্রাফকে পেলো না। আদ্রাফ ভাইয়া কী তাঁর কথা একটুও মনে করল না? সন্ধ্যা নেমে আসছে এই অচেনা জায়গাটিতে। সে ফুফির বাসার ঠিকানাটাও এখনো জানে না আর সিম মাত্রই কিনতে এলো আজ। মুন বসে পড়লো রাস্তায়। আশেপাশে কয়েকজন ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে মুনের দিকে কিন্তু সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে আবারও। মুন মাথা চেপে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো। এই প্রথম নিজেকে এত অসহায় লাগছে। কী করবে সে এখন?
#চলবে ইনশাআল্লাহ
(অগোছালো হওয়ার জন্য দুঃখিত। ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন দয়া করে।)