একটুখানি আশা পর্ব -০৬

#একটুখানি_আশা
#মেহরাফ_মুন(ছদ্মনাম)
#পর্ব ৬

ঘুম ভাঙলো ফুফির ডাকে।

-‘এত ঘুমালে চলবে? সেই কখন সকালে এসে ঘুমাইলে এখনো খাবার খাসনি ক্ষিদে লাগেনি? উঠ মা,তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়, সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে।’ বলেই ফুফি হাসিমুখে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।

মুন ফ্রেশ হয়ে এসে রুমে বসে রইল। অস্বস্তি লাগছে ভীষণ,এতগুলো মানুষের সামনে কীভাবে যাবে। নিচ থেকে ফুফির ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়লো। মুন উঠে নিচে নেমে দেখল টেবিলে একজন আধ-বয়স্ক বাবার বয়সী আঙ্কেল, আদ্রাফ ভাইয়া, আর দুজন তাঁরই সমবয়সী ছেলে-মেয়ে সম্ভবত দুজনে দুয়েকবছরের বড়ো-ছোট হবে।
মুন ওখানে যেতেই ফুফি মুনকে উদ্দেশ্য করে বলল,’আরে মুন মা, এসো এখানে সবার সাথে পরিচয় করে দিই।’

-‘এই হচ্ছে তোমার ফুফা।’মুনকে বসিয়ে খাবার বাড়তে বাড়তে ফুফি বলল।

মুন ফুফার দিকে তাকিয়ে সালাম দিতেই ফুফা মিষ্টি হেসে সালামটা নিয়ে বলল,’কেমন আছো মা? তোমার বাসায় সবাই কেমন আছে? তোমার কথা অনেক শুনেছি তোমার ফুফি থেকে, একমাত্র বড়ো মেয়ে, ওই বাড়ির রত্ন তুমি। তোমার বাবা আমাদেরকে বিশ্বাস করে তাঁর একমাত্র রত্নকে এখানে পাঠিয়েছে তাই কোনো কিছুর কমতি হবে না ইনশাআল্লাহ। আমাদেরকে তোমার আরেকটা পরিবার ভাবতে পারো মা। যখন যেটা ইচ্ছে মন খুলে বলবে। এখন থেকে তুমিও আমার আরেকটা মেয়ে। তাই এই বাবা-মাকে কোনোকিছু বলতে সংকোচ করবে না, ঠিক আছে মা? আর আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো মা?’

মুন মুচকি হেসে জবাব দিল,’জি ফুফা সবাই ভালো আছে আর আসতে কোনো সমস্যা হয়নি।’

ফুফি এবার তাঁর ছেলেমেয়েদের দিকে তাকিয়ে বলল,’মুন এ হলো আমার বড়ো ছেলে আদ্রাফ।সকালে তো দেখছোই। আর এ হচ্ছে ছোট ছেলে শাফিন আর এ হচ্ছে আমার ছোট মেয়ে অহনা, ওকে আমরা অহু বলেই ডাকি। শাফিন তোমার দুইমাসের বড়ো সমবয়সী ভাবা যায় আর অহু তোমার এক বছরের ছোট।’

মুন এবার একে একে সবার দিকেই তাকালো। শাফিন আর অহু উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে। বোঝায় যাচ্ছে মুনের সাথে কথা বলার জন্য। মুন এক নজর ফুফির বড়ো ছেলে আদ্রাফের দিকে তাকালো কিন্তু আদ্রাফ এক মুহূর্তের জন্যও মুনের দিকে তাকালো না, সে নিচের দিকে তাকিয়ে খেতে ব্যস্ত। খাওয়ার মাঝে কিছুসময় পর পর কপালটা কুঁচকে ফেলছে, হয়তো বিরক্ত হচ্ছে কিন্তু বিরক্তি ভাবটা প্রকাশ করতে পারছে না। মুন বুঝতে পারলো না এভাবে বিরক্ত কেন? মুন এখানে আসাতে সে কী কোনো কারণে ডিসটার্বড? মুন এসব আর না ভেবে আর দুজনের দিকে তাকালো। শাফিনকে উদ্দেশ্য করে হাত নেড়ে বলল,’হ্যালো ভাইয়া, আই এম মুন।হাও আর ইউ?’

-‘হেই মুন,আ’ম ফাইন। নাইস টু মিট ইউ আর হ্যাঁ আমায় ভাইয়া বলো না, মা বলেছে আমরা সমবয়সী তাহলে নাম ধরেই ডেকো আর ভাইয়াটা তুমি আদ্রাফ ব্রো এর জন্য রেখে দাও।’ শাফিন মুচকি হেসে বলল।

মুন মুচকি হেসে ‘হ্যাঁ’ বোধক মাথা নেড়ে অহুকে ইশারা করে হাত নাড়লো।
-‘হ্যালো অহু।’
-‘হেই আপু। তুমি অন্নেক কিউট।’ অহু উৎসুক হয়ে বলল।

-‘তাই? তুমিও একদম বার্বিডলের মত। একটা পুতুলের মত।’অহু তা শুনেই মুনকে এসে জড়িয়ে ধরে ইংরেজিতে বলল,
-‘জানো আপু আমি অন্নেক খুশি হয়েছি তোমাকে এখানে পেয়ে। মামনির কাছে অনেক শুনেছি তোমার কথা।’

মুন বুঝতে পারলো এরা বাংলা তেমন পারে না কারণ এদের কথার ধরণেই বোঝা যাচ্ছে। সেও মুচকি হেসে অহুর গাল দুটো টেনে দিল। এর ভেতর ফুফার খাবার শেষে সবাইকে ‘শুভ রাত্রি’ বলে ঘুমানোর উদ্দেশ্যে রুমে চলে গেল। আর অহু আর শাফিন তো কথার ঝুড়ি নিয়ে বসছে। কথার ফাঁকে ফাঁকে দুজন ঝগড়াও করছে। মুন এসব দেখে মুখ টিপে টিপে হেসে চলল। বোঝায় যাচ্ছে ভীষণ মিশুক ওরা।

-‘অহু, শাফিন।’গম্ভীর কণ্ঠস্বরে ডাক দিল আদ্রাফ ভাইয়া।

-‘সরি ভাইয়া।’ অহু আর শাফিন দুজনেই একসাথে বলে উঠলো আদ্রাফ ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে এরপর চুপ হয়ে খাবারের দিকে মনোযোগ দিল।
মুন এদের ব্যবহার কিছুই বুঝতে পারলো না। বড়ো ভাই নাম ধরে ডাকতেই চুপ হয়ে গেল।

আদ্রাফ ভাইয়া এটা বলেই সাথে সাথে টেবিল ছেড়ে উঠে রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো।
উনি যাওয়ার সাথে সাথে ফুফি অহু, শাফিন দুজনের মাথায় এসে টোকা মেরে বলল,’তোরা জানিস না? আদ্রাফ খাবারের টেবিলে বেশি কথা বলা পছন্দ করে না। আরেকবার যাতে না দেখি। আর মেয়েটাকেও আসার সাথে সাথে ঠিকমতো খাবারটাও খেতে দিচ্ছিস না দুজনে, তোদের আড্ডার জন্য সে খাবারটাও শেষ করতে পারেনি। চুপচাপ খেয়ে রুমে যা দুজনেই। আড্ডা কাল সকালে দিস।’

দুজনেই কাঁদো কাঁদো ফেইস করে রইল।

-‘আহঃ ফুফি বকছো কেন? এদের দোষ নেই আমিই কথা শুরু করছিলাম।’

-‘তুই জানিস না কিরকম ফাজিল এগুলো।’

অহু আর শাফিন দুজনেই আর কোনো কথা না বলে টেবিল ছেড়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেল।

-‘রাগ করেছে ওরা। এভাবে বকলে কেন ফুফি?’

ফুফি মুচকি হেসে বলল,’দুইমিনিটে এদের রাগ ভেঙে যাবে, সকালে দেখিস রাগ নেই। সারাদিন ফাজলামি করে, পড়াশোনার নাম-বালাই নেই, বন্ধুদের সাথে ট্যুর, এদিকওদিক ঘোরাঘুরিই করে। তুই এই দুইটার পাল্লায় পড়লে বুঝবি। আচ্ছা, যা ঘুমাতে যা মা। শুভ রাত্রি।’

-‘তুমি ঘুমাবে না ফুফি?’

-‘আমি এগুলো গুছিয়ে রেখে যাব। তোর কোনোকিছু লাগলে ফুফিকে বলিস।’

মুন ‘হ্যাঁ’ বোধক মাথা নেড়ে রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই কিছু একটা মনে পড়তেই আবার পিছনে ফিরলো। ফুফির উদ্দেশ্যে বলল,’ফুফি বাবা-মাকে বলতে ভুলেই গিয়েছি আমি এসেছি সেটা আর আমার সিমও নেই।’

-‘ভাইজান আর ভাবীর সাথে আমি কথা বলেছি দুপুরে। তুই তখন ঘুম ছিলি তাই আর জাগাতে বারণ করেছিল ভাইজান। আর এখন তো অনেক রাত হয়েছে। তুই গিয়ে ঘুমা। কালকে উঠে আদ্রাফকে বলবো তোকে শপিং এ নিয়ে গিয়ে তোর জরুরি সব জিনিস কিনে দেওয়ার জন্য। চিন্তা করিস না সব পেয়ে যাবি মা।’ মুচকি হেসে বলল ফুফি।

মুন ‘আচ্ছা’ বলে হাসিমুখে সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল।
সিঁড়ির সামনে বরাবর দু’রুমের মধ্যে মুনের রুম কোনারটা। রুমে যাওয়ার সময় আগের রুমে চোখ পড়লো মুনের। দরজা একটু ফাঁক করে খোলা। পুরোপুরিভাবে লক করেনি। মুন সেই ফাঁক দিয়ে দেখেই বুঝতে পারলো রুমটা ওই আদ্রাফ খাটাশের। মুন আপনমনে বিড়বিড় করে নিজের রুমে ঢুকে গেল। এখানে আসার আগে যতটুকু অস্বস্তি লেগেছিলো এখন তাঁর ছিটে-ফোঁটাও নেই। সবাই মাত্র কিছু সময়ের ভেতর আপন করে নিলো তাঁকে। কী অমায়িক ব্যবহার সবার। ফুফাও ভীষণ ভালো। যথেষ্ট সুদর্শনও বটে। ফুফিও সুন্দর আর তাঁর ছেলে-মেয়েগুলোও সুন্দর। সবাই খুব মিশুক শুধু ওই আদ্রাফ খাতাশটা ইতর। অহংকারের শেষ নেই, হু, হাসতেও জানে না, মুখের কথাতে একটু মধুও নেই। মুন আদ্রাফের কথা বলতেই মুখ ভেংচি কাটলো। এসব ভাবতে ভাবতেই মুন ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় শুইলো কিন্তু ঘুম আসছে না। পুরো একটা দিন ঘুমানোর পর আর ঘুম আসছে না। অনেক রাত হয়ে গেল এভাবেই। মুন উঠে রুমের ভেতর কিছুক্ষন হাঁটা-হাঁটি করল। হঠাৎ করেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। বাবা-মা, আরিফা, চাচা-চাচীদের মনে পড়ছে ভীষণ। এই মন খারাপের ওষুধ হচ্ছে চাঁদ দেখা। বাসায় থাকাকালীন রাতে ঘুম না আসলে মুন একা একা চন্দ্রবিলাস করতো। মুন ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। কিছুসময় চাঁদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। চাঁদ দেখার সময় পাশের রুমের ব্যালকনিতে চোখ যেতেই দেখল ওই রুমের আলো। মুন একটু ভাবনায় পড়ে গেল, এতরাতে ওই খাতাশটা এখনো ঘুমাইনি?কী করছে এতরাত অব্দি।হঠাৎ করেই ভীষণ পানির তেষ্টা পেল। রুমে এসেই দেখল পানি নেই। তাই পানির উদ্দেশ্যে রুম থেকে বের হতেই অন্ধকারে কেউ একজনের সাথে জোরেসোরে ধাক্কা খেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যেতে নিলেই ওই মানবটা মুনকে ধরে টেনে তুলতেই মানবটার বুঁকের মধ্যে গিয়ে পড়লো। মুন ভয়ে চোখমুখ কিচে চিৎকার করে উঠলো,
-‘ভুততততততত..’

#চলবে ইনশাআল্লাহ
(ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন দয়া করে, রাফিনের নামটা চেঞ্জ করে আদ্রাফ দিলাম, বিভ্রান্ত হবেন না দয়া করে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here