একটুখানি বিশ্বাস পর্ব ৬২+৬৩+শেষ

একটুখানি বিশ্বাস
পর্ব-৬২
রোকসানা আক্তার

অশ্রু চোখেমুখের কিণার-কাণারে সংকোচ রেখা ফুটে ওঠপ।মনে মনে যা ভাবলো তাই হলো।কিন্তু পিরিয়ড এত তাড়াতাড়ি হবে বুঝলো না। ডেটানুযায়ী এখনো দিনেক ছয় বাকি।যাইহোক,এসব সেনসিটিভ দিক একটু হেরপের হবেই এ নিয়ে মাথা ঘাবড়িয়ে লাভ নেই।ভেবেই অশ্রু মাথা ঝাঁকায়।
কিন্তু এখন প্রবলেম গোসলের আগে প্রটেক্টটা হাতে পেলো ভালো হত।এতে নিঃসংকোচ,নির্লিপ্ত,হালকা অনুভব হত। ভেবেই অশ্রু বাথরুমের দরজা খুলে মাথাটা একটু বের করে।রুমে কাউকে দেখতে পায়নি।অশ্রু মুখটা গম্ভীর করে দেয়ালের সাথে ঠেসে দাঁড়ায়।কী করবে,কাকে বলবে,কীভাবে বের হবে কিছুই মাথায় আসছে না।
এভাবে নানানও চিন্তার মুখর নিয়ে টপ করে ওপাশ থেকে অরুনের কন্ঠস্বর শুনতে পায়।বললো,
“অশ্রু,তাড়াতাড়ি করো।সবাই নিচে অপেক্ষা করছে। ”
অশ্রুর একবার ইচ্ছে হয় অরুনকে বলতে, কিন্তু সাহস হচ্ছে না।এতেতো নির্ঘাত ঠোঁটকাটা বলবে।উপায়ন্তর না পেয়ে অশ্রু চোখবুঁজে দৃঢ় একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে।এমন ধ্যাণতায় হুট করে অশ্রুর মাথায় একটা উপায় চেপে বসে।দরজাটা আবারো হালকা খুলে মাথাটা বের করে বললো,
“এই যে শুনুন?”
অরুন তখন ল্যাপটপ গুছাচ্ছে।হাতের নাড়ন বন্ধ করে অশ্রুর দিকে ফেরে।বললো,
“কিছু বলবে?”
অশ্রু মাথা নাড়ে।
“বলো,কী বলবে?”
“তোহিয়া রাণীকে একটু ডেকে দিতে পারবেন?”
“খুবই আর্জেন্ট?”
অশ্রু মাথা নাড়ে।
“তখন তো দেখলাম কিচেনে।বললো কোথায় নাকি একটু যাবার আছে।আচ্ছা,তারপরও আমি নিচে দেখে আসি।ওয়েট করো তুমি।”
অশ্রু সম্মতি দিয়ে মাথা ঝাঁকায়।তারপর অপেক্ষা করতে থাকে।মিনিটে পাঁচেকের পর অরুন রুমে আসে।গলা উঁচিয়ে বললো,
“অশ্রু?”
অশ্রু তরহর বলে উঠলো,
“হু,বলুন?”
“খালামণি বাইরে গিয়েছেন রহিম চাচাকে নিয়ে।”
“ওহ।”
“কেন দরকার আমায় বলতে পারো।”
“নাহ কিছু না।”
অশ্রুর এহেন কথায় অরুন আর কিছু বলেনি।নিজের কাজে আবার ব্যস্ত হয়ে যায়।
তারপর আরকি! বাধ্য মেয়ের মতো গোসল সেরে সেই লালরঙ্গা শাড়িটা পড়ে নেয়।শাড়ি পরিহিত অবস্থায় বাথরুম থেকো বেরুতেই চোখ যায় একটি মেয়ের দিকে।মেয়েটির বয়স তেমন বেশি হবে না।এই উনিশ-বিশ।বোধহয় সে রুম গোছগাছ করতে এসছে।অরুন সোফায় বসো মোবাইল টিপছে।সে সেখান থেকে কাজের মেয়েটির উদ্দেশ্য বললো,
“ফুলমতি? বিছানাটা ভালোভাবে ক্লিন করিস যাতে একটা ফুলের পাপড়ীও না থাকে!”
ফুলমতি দাঁত বের করো হেসে বললো,
“জ্বী,সাহেব।”
অশ্রুর রাগ উঠে যায় মেয়েটা এহেন হাসাতে।এখানে হাসার ই বা কী হলো!বাসরের ফুল কী গন্ধে ভরা বিষাদ? বাসর ফুলের কথা কানে শুনলেই নেগেটিভ মাইন্ড আসে কেন মানুষের?-পৃথিবীর সব কাপলেরই তো বাসর হয়।
যাইহোক,এদের হাসি-ঠাট্টাকে আগ্রাহ্যতা দেওয়ার কোনো মানে হয়না।
ভেবেই অশ্রু বাথরুমের চৌকাঠ থেকে আয়নার সামনে দাড়ায়।ফুলমতি অশ্রুকে দেখে বললো,
“ওহ ভাবী,আপনের গোচল শেস?”
অশ্রুর বলতে ইচ্ছে বা হলেও অনেকটা জোরপূর্বক উত্তর দিলো,
“হু।”
“গোচলডা কইরা হেইব্বি লাগতাছে আপনেরে।এত সুন্দর ভাবী আমগো।
বলেই অরুনের দিকে তাকায়।তারপর আবার বললো,
” আমাগো সাহেবের সাথে বেশ মানিয়েছে আপনেরে।”
অশ্রু আর কথা বলে নি।টাওয়াল বাঁধা চুল থেকে টাওয়াল টা নিয়ে চুলগুলোয় বাঢী দিতে থাকে। সুদীর্ঘ চুলগুলো মুহূর্তে কোমর ছাড়িয়ে যায়। না চাইতেও অরুনের সেদিকে নজর চলে যায়।
কী স্নিগ্ধতা তার চোখমুখে,কী সুন্দর সে!চোখ ফেরানোর মতো নয়।ইচ্ছে হয় এই মুহূর্তে তার চুলগুলো ছুঁয়ে চুলের সুগন্ধি মাখা ঘ্রাণ শুকতে।
তবে সম্ভব কীভাবে এখন?একটুতো অপেক্ষা করে পরে নাহয়?এই ফুলমতী টা বিদেয় হোক।ভেবেই অরুন মোবাইলের দিকে আবার চোখ ফেরে।

অশ্রু চুলে ঝাঁড়া দেওয়া শেষ হলে অরুন এবং ফুলমতিকে পাশ কেটে বেলকনিতে চলে আসে।টাওয়াল টা দড়িতে ঝুলিয়ে রেখে বেলকনির রেলিং ধরে দাঁড়ায়।পূবকাশে বসা সকালের সূর্যের মৃদু রোদ্দুর তার সারা মুখ চেয়ে যায়।শরীরে জড়িয়ে থাকা কিঞ্চিৎ হীমটুকু ধীরে ধীরে কমতে থাকে।আর শরীরে অনুভূত হয় একটা উষ্ণ ছোঁয়া।এই উষ্ণতায় একটা আরাম আরাম বোধ হচ্ছে।অশ্রু কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকে।হুট করে তলপেটের ব্যথাটা আবারো বাড়তে থাকে।এতক্ষণে কোমর ব্যথা ছিলনা।এখন আবার কোমর ব্যথাও করছে।ঠোঁটে ঠোঁট চেপে অশ্রু এটা সংবরণ করার চেষ্টা করছে।কিন্তু সম্ভব হয়েও হচ্ছে না।তোহিয়া খালামণি যেহেতু অনুপস্থিত তাহলে ফুলমতিকেই এই ব্যাপারটা বলা উচিত।সেই হয়তো সাহায্য করবে।ভেবেই অশ্রু পেছন ফেরে।ফুলমতী নেই।রুম থেকে কখন উধাও হলো সে?অশ্রুর মুখটা আবারো গম্ভীর হয়ে যায়।কপালটা এতই খারাপ!?শেষ মুহূর্তে যদি পুরুষ মানুষের এই দিকটা চোখে পড়ে?উফস কী করবে সে? কিছুই তার মাথায় আসছে না!
সং হয়ে দাড়িয়ে থাকে।এতক্ষণে অরুন অশ্রুর খুব কাছে চলে এসেছে।মুঁচকি হেসে অশ্রুর কোমর স্পর্শ করে।বললো,
“লাল শাড়ীতে এত সুন্দর দেখাবে।আই’ম সো ওয়ান্ডার্ড!এই এত সুন্দর কেন তুমি?”
অরুনের এসব কথায় অশ্রুর এখন একদম খেয়াল নেই।কত কষ্টে পেঁট,কোমর ব্যথাকে সামলে রেখে চিন্তার ভাঁজ চেপে ধরছে একমাত্র সেই জানে।
“এই অশ্রু,একটা কিস করবো?”
অশ্রু জবাব না দিয়ে অরুনের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বিছানার উপর গিয়ে বসে পড়ে।অরুন কিছু বুঝে উঠতে না পেরে বললো,
“কী হয়েছে, তোমার,?”
জোরপূর্বক জবাব দেয়,
“নাহ,কিছু না।আমার তোহিয়া রাণীকে দরকার।”
“বললামতো খালামণি বাসায় নেই, অশ্রু।”
কথা বলেনি অশ্রু।অরুন অশ্রুর দিকে তাকিয়ে থেকে দু’চোখ হতচকিত করে ফেলে।এই মেয়ে যে কাঁদছে!চোখের ভেতর এত পানির টলমল,যেন ঢেউ খেলছে।কিন্তু কেন পানি চোখে এর?সে কী গতকাল রাতে তাকে কিছু বলেছে, যেটায় তার মন খারাপ হবে!কই কিছুইতো বলেনি।তাছাড়া,কাল রাততো তার সাথে তার তেমন কথাই হয়নি।শুধু নিঃশব্দ ভালোবাসা ছাড়া।
অরুন ভেবে ভেবে অশ্রুর কাঁধ চাপটে ধরে।ঝাঁকিয়ে বললো,
“এই অশ্রু?মন খারাপ কেন?”
ঝাঁকানিটা ছিল খুব জোরে।এতে অশ্রুর ব্যথাটা আরো বেড়ে যায়।তাই সে মনের অজান্তে “আউ ” শব্দ তুলে অসহায় গলায় বললো,
“প্লিজ জোরে ঝাঁকাবেন না। ব্যথাটা আরো বাড়ছে।”
মুহূর্তে অরুনের চোখ যায় অশ্রুর হাতের দিকে।সে পেটের উপর দু’হাত চেপে রেখে আছে।হয়তো পেটব্যথা করছে।আর মোটামুটি বুঝতে সক্ষম হয় কেন এমনটা হচ্ছে।অরুন খানিক হাসার চেষ্টা করে অশ্রুর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
“তুমি এখানে বসো।আমি এখনই আসতেছি।একদম নড়বে না।”
অরুন রুম থেকে বেরিয়ে যায়।কিছু সময় কাঁটার পর অরুন আবার রুমে এসে অশ্রুর হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বললো,
“যাও,চ্যান্জ করে আসো।”
অশ্রু অবাক নয়নে ব্যাগের দিকে তাকায়।এতে যে “জয়া” আছে অশ্রু বুঝতে পারে।লজ্জায় আরো মাথা নুইয়ে আসে। নুয়ানো মাথায়ই উঠে দাড়ায়।তারপর কাবার্ডের দিকে এগিয়ে আরেকটা নতুন শাড়ি বের করে নেয়।এবার শাড়ির কালারটা অফ অরেন্জ।।তারপর বাথরুমে।
অরুন হেসে দেয়।এই মেয়েটার এত লজ্জা কেন? মোটামুটি ম্যাচিউরড মেয়েরা এসবতো স্বাভাবিকভাবে নেয়।নিজ মনে ভেবেই অরুন আবারো মাথা ঝাঁকায়।

অশ্রু বাথরুমে এসে ঘনঘন নিঃশ্বাস ছাড়তে থাকে।বুকে হাত রেখে দেয়ালে মাথাটা ঠেকায়।আর অরুনকে একশোটা গালাগাল করতে থাকে,
“অসভ্য ব্যাটা, লজ্জা একদম নেই!বুঝেও ফেললো ” আই’ম পিরিয়ড!”
তারপর চ্যান্জ করা শেষ হলে অরুন অশ্রুকে নিচে নিয়ে যায়।নিচে এতক্ষণ সবাই এই দুই মানব-মানবীকে একসাথে দেখতে কতটায় না অপেক্ষায় ছিল।যা তাদের চোখ-ঠোঁট,মুখ বেশ ফুঁটে উঠেছে।এখন সেই অপেক্ষার অবসান ঘটলো।দুজন সিড়ি ক্রস করতেই অরুনের কাজিনরা অরুনকে ফেলে রেখে অশ্রুকে হাত টেনে একান্তে নিয়ে যায়। শুরু হয় তাদের মান-অভিমান,কৌতুক,হাসি,-ঠাট্টার কথা।
একটুখানি বিশ্বাস
পর্ব-৬৩
রোকসানা আক্তার

বৌ-ভাত ,পিঠা-ফুলির সব আয়োজন মোটামুটি শেষ হয়।
দিনেক পেরিয়ে মাস আসে।সময়ের সাথে সাথে চারপাশের মানুষগুলোও নানান ব্যস্ততায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।অরুনের বিয়ের সপ্তাহ খানিক পরই ইমতিয়াজ রুমকিকে নিয়ে আমেরিকা চলে যায়।ভুট্টো পোদ্দার এতদিনকার স্থগিত বিজনেস ডিলগুলো ভাঙ্গতে থাইল্যান্ড ব্যাক করেন।বাদবাকি সব আত্মীয়-স্বজন বিয়ের পরইদিন নিজেদের আস্তাবলে ফিরেন।খুব খুবই একাকীত্ব ফিল হয় অশ্রুর।ইচ্ছে হয় ছুটে গিয়ে সবার সাথে আবার মুখরিত আনন্দে মেতে উঠতে,তাদের সাথে সময় কাটাতে কিন্তু সম্ভব নয়।এই সুনসান পুরো বাড়িতে অশ্রুর একাই কাটে।সময় হলে কাজের লোকগুলোর সাথে দু-তিনটে কথা বলে, আবার বলে না।অরুনও বাসায় তেমন থাকে না।সাংসারিক দায়িত্ববোধর আদলে নিজেকে জড়িয়ে নতুন উদ্যমে বাবার বিজনেসে হাত লাগায়।সকাল নয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত সময় পার হয় প্রধান পরিচালকের চারকোটার রুমখানায়।এখন ব্যস্ততা তার খুবই বেশি।এতদিনকার অচল কাজগুলো এখন চারহাতে তাকে চালাতে হচ্ছে।ইচ্ছে হলে অশ্রুকে আগের মতন সময় দেওয়া হয়না।তারসাথে প্রাণভরে দু’চারটি কথা বলা হয়ে ওঠে না।এরজন্যে মাঝে মধ্যে বুকের ভেতরটা খুব শূন্যতা অনুভব হয়।রাতে অফিস থেকে বাসায় ফিরে ক্লান্তিমাখা চোখদুটোয় অশ্রুর সামনে তার বাচ্চামো বায়না তুলে ধরে!কথা বলার ধরন খুবই আকুলতার বেসুরে।পাগল মনটা উন্মাদ হয়ে চেয়ে থাকে একটুখানি ভালেবাসার স্পর্শ পেতে।এই ভালোবাসার অপ্রতিম স্পর্শ টুকুই যেন তাকে আবার সজীবতা করে তুলবে।
তখন অশ্রু বিস্মিত চোখে তাকায়।কথা বলে না।অশ্রুর চুপ থাকা দেখে অরুনও তার স্বইচ্ছায় আদরের অপেক্ষা করে না।
আগে পা বাড়িয়ে নিজেই সেই সুখের পরখ আদায় করে নেয়।কি পরশ মাখানো ভালোবাসা তাদের!একজন আরেকজনার মাঝে নিমিষে বিলীন হয়ে ভালোবাসার পরিপূর্ণতা সুর তুলে।
তাদের পরম সুখকর মুহূর্তে কেউ তাদের বিরক্ত করে না। গাছে পাখি ডাকে না, পাতা নড়ে না।,বাতাস এলে দোলে যায়না।কি নিষ্প্রভ, কি নিটোল,কি নিমজ্জ!দুটো মানব-মানবীর ভালোবাসার মাখামাখি শুধুই অনুভূতির কান দিয়ে।

আজ রাত বাসায় ফিরতে অরুনের অনেকটা দেরী হয়ে যায়।কলিংবেল বাজার শব্দ শুনে আজ অশ্রু নিজে গিয়েই দরজা খুলে দেয়। অরুন কপালের ফোঁটা ফোঁটা ঘামে ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কি ব্যাপার?আজ তুমি দরজা খুললে যে?”
অশ্রু মাথা নিচু করে মিটিমিটি হাসে।তার এতক্ষণে অপেক্ষাটা শুধুই যে অরুনের জন্যে ছিল তা গোপন রেখে অন্য কথা টানলো,
“আপনাকে আজ কতবার কল দিলাম।একটিবারও তো রিসিভ করলেন না!”
অরুন হাঁটার মাঝেই থেমে যায়।ঘাড় ঘুরিয়ে আক্ষেপ কন্ঠ টেনে বললো,
“আই’ম স্যরি অশ্রু।আসলে আজ কাজের চাপ এতটাই বাড়ছে যে কল রিসিভ করার সুযোগ হয়নি।দেখলেই আজ কতটা দেরী করে বাসায় ফিরলাম।”
“হইছে,ঢং যত্ত।”
অভিমান করে বলা।অরুন ফিঁকে হেসে দেয়।তার বড্ড অভিমানী বউটা এখন খুব যে অভিমান করা শুরু করবে তা অরুন ঢের জানে।অরুন মাথা ঝাঁকিয়ে অশ্রু কাছে আসে।কাঁধে হাত রেখে নরম গলায় বললো,
“চলো,আগে রুমে যাই।তারপর যতখুশি অভিমান করো।ওকে অভিমানী?”
অশ্রু মাথা নেড়ে সায় দিয়ে অরুনের সাথে হাঁটতে থাকে।সিড়ির ধাপগুলো পার হওয়ার সময় অশ্রু ঝটাং গলায় বললো,
“আচ্ছা,আমার এত নাম কেন?”
অরুন ভ্রু কুঁচকে ফেলে।বললো,
যেমন?”
“মায়াবিনী,আদরিনী,রূপের ডালি,অভিমানী।এত নাম ডাকলে আমিতো আমার আসল নামটাই খুঁজে পাবো না ।”
অরুন হেসে দেয়।এ’কথার জবাব দেয়নি।তারপর দুজন
রুমে ঢোকে।অশ্রু অরুনের থেকে কোর্টটা হাতে নিয়ে বেলকনিতে মেলে দেয়।রুমে ঢুকে দেখে অরুন বাথরুমে চলে গেছে ফ্রেশ হতে।অশ্রু এপাশ থেকে বললো,
“ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে যাবেন।আমি খাবার রেডি করছি।”
অশ্রু ডাইনিং এসে খাবারের ধরণগুলো একে একে ডাইনিং এ সাজাতে থাকে।ফুলমতী পানির গ্লাস,জগ,লবণ সব এগিয়ে দেয় অশ্রুকে।তার কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেলে অশ্রুকে বললো,
“আপা,এইহানে আমি আর থাকবো?”
“এখন যাও।যখন প্রয়োজন হবে ডাক দিব।”
“জ্বী,আইচ্ছা। ”

কিছুক্ষণ পর,অরুন ডাইনিং এসে চেয়ার টেনে বসে।অশ্রু প্লেটে ভাত ঢালার সময় অরুনের দিকে তাঁকায়।চুলের কিছুটা অংশ ভিঁজে গেছে তার। মুখটা ধোঁয়ার পর ভালো করে টাওয়েল দিয়ে মুছে নি।মুখের কিছু অংশও ভেঁজা ভেঁজা দেখাচ্ছে। এই ভেঁজা মুখে কেমন স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে আছে! তারউপর,ব্রাউন কালার গেন্জি,পড়নে টাউজার বেশ মানিয়েছে।এমন দীর্ঘকায় দেহের সুদর্শন পুরুষ তার জীবনেও যে আবির্ভূত হবে অশ্রু আবেগে আপ্লুত!অশ্রু মনোযোগ দিয়ে অরুনকে দেখতে থাকে।অশ্রুর এহেন দৃষ্টিপাতে অরুন ভ্রু-যুগল কুঁচকে ফেলে।বললো,
“কী দেখছো?”
অশ্রু অস্বস্তিতে পড়ে যায়।মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,
“নাহ,নাহ কিছু না।”
অরুন মুঁচকি হাসে।তারপর বললো,
“প্রচন্ড খিদে পেয়েছে।আগে খেতে দাও।তারপর রুমে যেয়ে আমাকে মন ভরে দেখো,যাতে আমিও মনভরে আদর করতে পারি। ”
অশ্রু জড়সড় একটা বিষম খায়।মনে মনে বললো,কি অসভ্যরে বাবা!এই ছেলের একদম ঠোঁটকাটা! ”
তারপ অরুনের খাবার শেষ হলে রুমে চলে যায়।অশ্রু হাতের কিছু কাজ সেরে,বাকি কাজগুলো ফুলমতীকে বুঝিয়ে দিয়ে উপরে চলে আসে।দরজা বন্ধ করতেই অরুন অশ্রুর হাত ধরে ফেলে।
“আহা,এভাবে হাত ধরেছেন কেন?ব্যথা পাচ্ছিতো!”
“আমার যে এখন তোমাকে আদর করতে খুব মন চাইছে।”
“ইচ্ছে হলে ইচ্ছেটাকে চেপে রাখুন।আগে আমার একটা কথা শুনুন।”
“আগে আদর দিয়ে নিই।তারপর সব শুনবো।”
বলেই অরুন অশ্রুকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে ঠোঁটে আলতো কিস করতে যাবে।ওমনি অশ্রু বলে উঠলো,
“আরেহ,শুনুন না? মা হবো। ”
অরুনের কানে প্রথমে কথাটি বোধগম্য নয়।ঘোর ঘোর গলায় বললো,
“বুঝি নি।আবার বলো।”
“মানে আমার পেটে আপনার সন্তান!”
অরুন কথাটি শোনামাত্র অশ্রুকে ছেড়ে দেয়। প্রথম দফায় চোখদুটো অশ্রুর দিকে স্থবির রেখে চুপ সং হয়ে থাকে। দ্বিতীয় দফায়….

একটুখানি বিশ্বাস
পর্ব-সমাপ্তি পর্ব
রোকসানা আক্তার

দ্বিতীয় দফায় অরুন হাঁটু ভাজ করে বসে পড়ে।তার তীক্ষ্ণ কান অশ্রুর পেটের কাছে এনে শব্দ শোনার চেষ্টা করে।আদুরে ভঙ্গিতে বললো,
“এ্যাঁ,সত্যিইতো আমার মামুনি কুটকুট করে নড়ছে।সত্যি মামুনি আমায় কিছুদিন পর বাবা বলে ডাকবে?”
অশ্রু হতবিহ্বল চোখে অরুনের দিকে তাঁকায়।ঝাঁঝ গলায় বললো,
“এ আপনি কি বললেন?”
অরুন উঠে দাঁড়ায়। স্বাভাবিক গলায় বললো,
“কি বললাম।”
“মেয়ে বাবু হবে নাকি ছেলে বাবু হবে এ তো বলা যায় না।অথচ আপনি বড়শী বানানোর আগেই মাছ ধরে ফেলেছেন!”
অরুন মিটি হাসে।বললো,
“আমার সবথেকে মেয়ে বাবু পছন্দ। আগ থেকেই ভাবতাম আমার যেন একটা সুন্দর ফুটফুটে মেয়ে বাবু হয়।মহান আল্লাহ যেন আমাকে উনার দানশীল হাতে একটা মেয়ে বাবু দান করেন।এতদিনের কামনা আল্লাহ নিশ্চয়ই ফিরিয়ে দিবেন না।দ্যাখো তুমি-আমার মেয়ে বাবুই হবে ইনসাল্লাহ ।তাছাড়া,এটাও জানো?আমি যে আগ থেকেই মেয়ে বাবুর নাম সাজেস্ট করে রেখেছি!”
অশ্রু ভ্রু যুগল বেঁকে বললো,
“কী নাম?”
“রিধি।”
অশ্রু খুশি হওয়ার পরিবর্তে মুখটা গম্ভীর করে ফেললো। বললো,
“মেয়ে বাবু নাকি ছেলে বাবু তা একমাত্র উপরওয়ালাই জানেন।এখন এরকম কনফিডেন্সলি বলা ঠিক নয়।শুধু দোয়া করেন যাই হোক, যেন সুস্থ-সবলভাবে সে পৃথিবীতে আগমণ করে৷ ”
অরুন অশ্রুর দিকে ছলছল চোখে তাঁকায়।অশ্রুর মাথা আলতোভাবে তার দিকে খানিক টেনে খুব জোরে কপালে একটা চুম্বন এঁকে দেয়।শান্ত এবং নরম গলায় বললো,
“তুমি আমায় আজ জীবনের সবথেকে শ্রেষ্ঠত্ব উপহার দিলে অশ্রু।রিয়েলি,আই’ম সো হ্যাপী।অনেক বেশি।আর শুনো?তুমি কিন্তু একদম কাজ করবা না।কিচেনে যেয়ে তোমার রান্না করা লাগবে না।তোমার যদি এদের রান্না না পছন্দ হয় তাহলে আমি বাইরে থেকে ভালো বাবুর্চি নিয়ে আসবো। নড়াচড়া একদম করবে না।যখন যা প্রয়োজন ফুলমতী আছে,রহিম চাচা আছেন,আসফিয়া খাল আছেন,নুরুল মিয়া আছে ওরা সবাই ২৪ ঘন্টা তোমার পাশে থাকবে।বেখেয়ালিপনা করে নিজে কিছু করতে যাবা না। ”
“এ্যা এভাবে স্থবির থাকলে অবশ হয়ে যাবো।পরে আমার বাচ্চাও প্রতিবন্ধী হবে।বাচ্চার সুস্থতার জন্যে নড়াচড়া খুবই জরুরী। ”
“হাঁটতে ইচ্ছে হলে বেলকনি,বাগান,সুইমিংপুলের আশপাশ ঘুরবা তবে ছোট একটা কাজও হাত দিয়ে ধরবা না।মনে থাকবে?”
“আচ্ছা বাবা,বেশ মনে থাকবে!”
“এইতো লক্ষী মেয়ে।আর শুনো?তুমি কীভাবে জানলে আমি যে বাবা হবো।”
“গর্ভরবী কিট এনেছি ফুলমতীকে দিয়ে।”
“ওহহ,বেশ করেছো।”
” এত তাড়াতাড়ি বাচ্চা নিতে আমার একদমই ইচ্ছে ছিলনা।এই তুমি না খুবই খারাপ!”
“অতিরিক্ত ভালোবাসায় গর্ভধারণ করলে স্বয়ই আল্লাহই খুশি।বুঝলে?”
“ঢং।”
অরুন খিলখিল হেসে দেয়।মাথায় গাট্টি দিয়ে আদুরে গলায় বললো,
“পাগলী।”

তারপর থেকে অশ্রুর প্রতি অরুনের আলাদা কেয়ার বেড়ে যায়।অফিস থেকে সন্ধের আগে আগেই বাসায় ফিরে আসে। কাজের বেশি চাপ থাকলে তা পি.এ কে বুঝিয়ে দিয়ে চলে আসে।এমনো দিন যায় অফিসেও ঠিকমতো যায় না।সারাক্ষণ অশ্রুর পেছনে ব্যয় করে।তাছাড়া,অশ্রুর কখন কোন খাবারটা খেতে ইচ্ছে করে তার যখন তখন তালাস করে বসে।একদিন হলো কী–তখন রাত এগোরটা।অশ্রু ঘুমিয়ে।হঠাৎ ঘুম থেকে সে জেগে যায় আর এপাশ ওপাশ হাসফাস করতে থাকে।সাথে সাথে অরুনও জেগে উঠে।লাইট অন করে তাকিয়ে অশ্রুর পুরো শরীর ঘামে একাকার।অরুন প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়।অশ্রুর একদম নিকটে ঘেঁষে বললো,
“কি হয়েছে অশ্রু,তোমার?”
অশ্রু ক্লান্তিভরে জবাব দিলো,
“হাত-পা প্রচন্ড জ্বালাপোড়া করছে।আর গলাটার ভেতর খুসখুস লাগছে।”
“পানি এনে দিব?”
“খেতে ইচ্ছে করছে না।”
“তাহলে কী খেতে ইচ্ছে করছে বলো আমাকে!”
” কিছু না।”
অরুন অশ্রুর দু’হাত শক্ত করে ধরে কড়া গলায় বললো,
“বলো আমায়?”
“তেতুল চাটনী খেতে ইচ্ছে করছে।”
অরুন যথেষ্ট জানে এসময়ে মেয়েরা টক,ঝাল খেতে পছন্দ করে। টক-ঝালটাই যেন তাদের মূখ্য হয়ে উঠে।তাই ভেবেই সে আগেই কাঁচা তেতুল,বরই,পেয়ারা ফ্রিজে এনে রেখেছে।তবে এখনতো তার শুধুই তেতুল চাটনী প্রয়োজন। তারউপর রাত অনেক।এসময়ে দোকান খোলা পাবে বলে মনে হয়না।ভেবেই অরুন গলা খাঁকারি টেনে বললো,
“অশ্রু,কাঁচা তেতুল চলবে না?বেশি ঝাল করে?”
“য়ু হু।ওটা এখন কেনজানি গন্ধ গন্ধ মনে হচ্ছে ।”
অরুন অশ্রুর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বিছানার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।তারপর কিছু একটা ভেবে বালিশের পাশ থেকে মোবাইল টুকে কাউকে কল করে।যেভাবেই হোক তেতুল চাটনী নিয়ে আসতে।প্রয়োজন হলে দোকানদারকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলবে,তাকে কোলে করে দোকানে নিয়ে এসে হলেও তেতুল চাটুনী আনতেই হবে।
পরে আর কী! যেমন আদেশ,তেমন কাজ।অরুন রফিককে দিয়ে তেতুল চাটুনী আনিয়েই ছাড়লে।রফিক হলো পোদ্দার বাড়ির গেটের দারোয়ান।
এরকম হাজারো বায়না অরুন সময়-অসময় পূরণ করতে চেষ্টা করে।।।
এভাবেই দিন যায়,দিনের পর মাস আসে।আবার মাসের পর মাস কেটে যায়।সময়ের পরিক্রমায় অরুনের মাঝেও অনেক পরিবর্তন ঘটে।এই যেমন- গাম্ভীর্য, দায়িত্ব,কর্মঠ বোধ তারমাঝে লক্ষ করা যাচ্ছে। আগে যেমন-হ্যাং আউট,আড্ডা,মজা-মাস্তিতে লিপ্ত থাকতো,বদৌলতে এখন সংসার,সমাজ,ধর্ম-কর্মে মন দিয়েছে।এসব নিয়ে অশ্রু মাঝে মাঝে খুবই ভাবনাতুর হয়।এ কি সেই আগের অরুন?নাকি অন্যকেউ।কাউকে কাছে পেয়ে মানুষের বদ অভ্যাসগুলো যে একসময় পরিবর্তন হয় এবং স্বাভাবিক-সুস্থ্য জীবন বেঁচে নিয়ে নতুন জীবন শুরু করে তা অশ্রুর জানাই ছিলনা।অথচ অরুনকে দেখে আজ বিশ্বাস করতে হয়।
ভালোবাসা সবই পারে।ভালোবাসা নামক এই শব্দটি পৃথিবীর সকল হিংসা,বিদ্বেষ, অহংকার-দম্ভ,প্রতারণার সব ঝালকে বিনাশ করে পৃথিবীর বুকে চিরায়ত শান্তি নিয়ে আসা সম্ভব। সত্যিই ভালোবাসার অবদান শুধুই ভালোবাসা।

আজ অশ্রুর ন’মাস পূর্ণ হলো।নবজাতকের আগমণের সুনীল সময় এসে গেছে। দেরী নেই।তাই অরুন অশ্রুর হালকা পেটব্যথা দেখেই আজ সকালেই তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।অশ্রুর মা-বাবা,নুজিফা,তোহিয়া রাণী, আবরার মোটামুটি সবাই ই উপস্থিত।তাদের সবার চোখেমুখে একরাশ আতঙ্ক এবং ভয়। হাসপাতালের বেড থেকে বাইরে দিকে দিকে অশ্রুর চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসছে।যে আওয়াজের শব্দে পারুল বেগমের বুকের ভেতরটা থরথরে কেঁপে উঠছে।তিনি মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করছেন মেয়ের যেন সুস্থ ও সাবললীভাবে গর্ভপাত হয়।আলাউদ্দিন নফল নামাজ পড়তে পাশ্বর্স্ত একটা মসজিদে কিছুক্ষণ আগেই ছুটে গিয়েছেন।
অরুন ভয়,আতঙ্ককে বুকের একপাশে চেপে রেখে ব্যস্ত মনে বারংবার ডাক্তারদের চেম্বারে ছুটে যাচ্ছে কখন সিজার হবে,কখন সিজার হবে।অশ্রুর কান্নার প্রতিধ্বনি তারও যে বিন্দুমাত্র সয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে এ শুধু উপরওয়ালারই জানেন।

সন্ধের শেষ আলোটুকু নিভার একটু আগেই অপারেশন থিয়েটার থেকে এক নবজাতকের কান্নার আওয়াজ এপাশে ছিটকে পড়ে।তার এই কান্নার ধ্বনি যেন তার পৃথিবীতে আগমণের বার্তা সবাইকে জানান দেওয়ার উপায় মাত্র।
তার ধ্বনিতে চারপাশের সবকিছু সজীব হয়ে উঠে।গাছে গাছে পাতা নড়ে,পাখি গান গায়, অপেক্ষাকৃত মানুষগুলোর ম্লান মুখে মুহূর্তে ফেলফেল হাসি চলে আসে। খুশি মনে সবাই ছুটে যায় অপারেশন থিয়েটারে।অশ্রু নিস্তেজ শরীর নিয়ে শুয়ে আছে।চোখের পাতা টলমল।উপস্থিত সবাইকে দেখেও কথা বলার সাহস হচ্ছে না।কথা বলতেই যেন এখন তার কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ডাক্তার হাসিমুখে নবজাতককে অরুনের হাতে তুলে দিয়ে বললো,
“আপনার কন্যা সন্তান হয়েছে।”
“আলহামদুলিল্লাহ। ”
সাথে সাথে সবাই “আলহামদুলিল্লাহ” বলে উঠলো।
অরুন নবজাতককে কোলে তুলে নেয়। তার ছোট ছোট হাত-পা মৃদু নড়ে নড়ে উঠছে,ছোট চোখদুটো দিয়ে টগবগ সে চারপাশ তাকাচ্ছে।মাথার চুলগুলো কুঁকড়ে আছে। অরুন তার পরম স্নেহাশিস কণ্যার দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থেকে কপালে আলতো একটা চুমু দেয়। তারপর অরুনের থেকে পারুল বেগম নবজাককে নিজের কোলে টেনে নিয়ে মশকারা আদর দিতে থাকে।
কয়েক মিনিট পার হতে অশ্রু কথা বলার শক্তি পায়। সামনে সবাইকে দেখে অনেক খুশি হয়। খুশি হওয়ার সাথে সাথে নূরীকে দেখে খানিক অবাক হয়।নূরীকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“নূরী,তুমি?”
নূরী বলার আগেই পাশ থেকে তোহিয়া রাণী বলে উঠেন,
“আমার অরুন বাপজান যদি প্রেমের বিয়ে করে এত সুন্দর একটা সংসার পাততে পারে তাহলে আবরার কেন পারবে না!সত্যিই ভালোবাসার বিয়ে শুধুই যে ভন্ডামী তা নয়।ভালেবাসার বিয়ে পবিত্র থেকেও পবিত্র হতে পারে।ধন্যবাদ অশ্রু তোমাকে।আমার ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করায়।”
অশ্রু হেসে দিয়ে বললো,
“এসব কেমন কথা, খালামণি! এরেন্জ বিয়ে এবং রিলেশন বিয়ে দুটোরই নেগেটিভ /পজিটিভ আছে।শুধু ভালোমানুষ পাওয়াই দুর্বর। নূরী খুবই ভালো মেয়ে।আই হোপ,আবরার ভাইয়ার জন্যে নূরীই পারফেক্ট ”
“এইজন্যেই তো আর দেরী না করে সামনের সপ্তায় এদের বিয়েটা সেরে ফেলবো।”
“ইনসাল্লাহ। ”
নূরী লজ্জা পেয়ে মাথা নুইয়ে রাখে।আবরাররে লজ্জা কী সে’ত খুশির চোটে হাসে।
অশ্রু মনে মনে একটা প্রশান্তির শ্বাস নিল।যাক,অবশেষে ভালোয় ভালোয় নূরী এবং আবরারের বিয়েটা মেনে নিল। এবার বিপুল?তার কি অবস্থা? তার কি স্মৃতির সাথে এফেয়ার চলছে?
কেনজানি আজ খুব মায়া লাগছে বিপুলের প্রতি অশ্রুর।
এসব ভাবনার মাঝেই সবাই কেবিন ত্যাগ করে অরুন ছাড়।নবজাতককে পারুল বেগম সাথে করে বাইরে নিয়ে যান।
অরুন চেয়ার টেনে অশ্রুর কাছে এসে বসে।ভ্রু নাঁচিয়ে কৌতুক করে বললো,
“কী বললাম না?আমার মেয়ে সন্তান হবে?দেখলে আল্লাহ আমার মনের আশা পূরণ করেছে।”
অশ্রু হেসে দেয়।তারপর বললো,
“এখন ট্রিট চাই,তাইতো?”
অশ্রুর এহেন কথায় অরুন অশ্রুর দিকে চোখ বড় করে তাকায়।জবাব তুলে না। অরুনের চুপ থাকা দেখে অশ্রু আবার বললো,
“কী হলো,বলুন?”
অরুন এবার ফিকে হাসে।অশ্রুর আরো কাছে এসে তার ডানহাতটা শক্ত করে ধরে।বললো,
“‘তুমি এবং রিধি’ উপহার থেকে আমার জীবনে আর কোনো বড় উপহার হয়না। তোমার একটুখানি বিশ্বাসের ভরসায় তোমাকে ইহজীবনে পেয়েছি তারজন্যে আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া।ভালোবাসি মায়াবিনী,অনেক ভালোবাসি। ও আমার রূপের ডালি।ও আমার অভিমানী।ও আমার অশুপাখি!
বলেই অরুন অশ্রুর হাতে একটা চুমু বসায়।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here