একমুঠো বসন্ত পর্ব -২৩+২৪

#একমুঠো_বসন্ত
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব_২২

দুইদিন কেটে গেল। আজ রিনা আহমেদরা আসবেন। যেহেতু আর দুইদিন পরেই বিয়ে সেহেতু তারা সবাই ব্যস্ত। তাই রিনা আহমেদদের নিয়ে আসার দায়িত্ব পড়েছে রিহি আর নিহিলার উপরে। নিহিলা গাড়ি থেকে নেমে এদিক ওদিক তাকালো। একটু এগিয়ে যেতেই ওদের চোখে পড়লো। ঐতো অদূরে অরিন আহানদের দেখা যাচ্ছে। নিহিলা তাদের আশেপাশে চারদিকে উঁকি দিল কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে দেখতে পেলো না। মনকে এতো বুঝিয়েও শান্ত রাখতে পারছে না। বারেবারে যেকোনো কারণে মন আবার উতলা হয়ে উঠছে।

অরিন আহান এসে দাঁড়ালো। নিহিলা সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় করলো। প্রথমবারের মতো নিজের পরিবারের সাথে মিলবেন বলে রিনা আহমেদের মুখের হাসি যেন সরছেই না। তিনি এসেই নিহিলাকে জড়িয়ে নিলেন,
“তোর জন্য আমি আমার সুখ ফিরে পাচ্ছি। তোর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ থাকবো রে মা।”

“উঁহু ফুপি, এমন করে বলিও না।”

রিনা আহমেদের কথার প্রেক্ষিতে অরিন আহানও তাল মিলালো,”আসলেই, তোমার জন্যই আমরা আমাদের এই পরিবারকে চোখের দেখা দেখবো। ”

আহানও তাল মিলালো,
“আসলেই, আই থিঙ্ক এই দেখাটার মধ্যে শুভ কিছুই হবে।” বলতেই অরিন তার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই আহান চুপ হয়ে গেল।

“বাহ্ রে, আমিও তো খুশি তোমাদের সাথে আবার দেখা হচ্ছে বলে। এইবার আসো গাড়িতে উঠো। বড়ো বাবা অপেক্ষা করছেন।” বলতেই তারা সবাই গাড়িতে উঠে পড়তেই নিহিলাও উঠতে নিল। সে গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে ঢুকার আগেও পেছনে আরেকবার তাকালো। তার মনে হচ্ছে মানুষটা আসবে। এসেই রিনা আহমেদের দিকে তাকাবে,
রিনা আহমেদ জিজ্ঞেস করবেন, “কিরে তোর এতক্ষন লাগলো ক্যান?”
জবাবে মানুষটা শীতল কণ্ঠে জানাবে, “এইতো সবকিছু সেটিং করতে আটকে পড়েছিলাম।”
অরিনের ডাকে নিহিলা ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো। আসার পরে থেকে নিহিলার এভাবে আশেপাশে তাকানো দেখে অরিন আহান দুজনেই কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে।

“কিরে গাড়িতে উঠে পর?”

“হ্যাঁ” সূচক মাথা নেড়েই নিহিলা গাড়িতে উঠে বসলো। তার মন হুট্ করে কেন জানি খারাপ হয়ে গেল। অথচ তার আরো খুশি হওয়ার কথা কিন্তু সে খুশি হতে পারছে না কেন!

বাড়িতে এসে রিনা আহমেদ আমান শেখকে সালাম করতেই তিনি বোনকে জড়িয়ে নিয়ে কেঁদে দিলেন। কেউ এটা কল্পনাও করেনি। রিনা আহমেদ নিজেও করেননি। এরপর আমান শেখ অরিন-আহান দুজনকেই কাছে টেনে নিলেন। এতক্ষনে নিহিলার কাঙ্ক্ষিত প্রশ্নটি আমান শেখ করলো,
“তোর বড়ো ছেলে কই?”

“ভাইজান, ওর কাজ আছে তাই ফ্লাইট একসাথে পড়েনি।”

“দুইদিন পরে হলেও আসতে বল।”

“জি ভাইজান।”
—–

নিহিলা হলুদ সবুজ মিশ্রনের শাড়ি পড়েছে। যতই অন্য রঙগুলো সুন্দর লাগুক গায়ে হলুদের জন্য এই রঙগুলোই মানানসই লাগে। অরিনকেও পড়িয়ে দিয়েচ্ছে। ও শুধু ঘুরে ফিরে নিজেকেই দেখছে কারণ প্রথমবারের মতো শাড়ি পড়া। রিহিকে সবাই হলুদ লাগাচ্ছে।

নিহিলা নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে ডালা নিয়ে যাওয়ার সময় রিনা আহমেদ ডাক দিলেন।

“নিহি, ডালাটা আমাকে দেয়। তুই এই কফিটা একটু রাহানকে দিয়ে আয় তো মা। আমাকে ভাইজান ডাকছে।”

নিহিলা কফির কাপটা নিল। তার ইচ্ছে করছে না বারবার ঐ মানুষটার সামনে পড়তে, অবশ্য আসার পরে থেকে আরেকবারও দেখা হয়নি। নিহিলা সামনে যায়নি, এখন কফির কাপটা দিতে গিয়ে যদি দেখা হয়ে যায়! কিন্তু মুখের উপর জবাব দেওয়া অভদ্রতা। সেজন্যই নিহিলা কাপটি অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাতে নিল। রাহান ভাই দুপুরের পরপরই এসেছিলেন। উনিও আর রুম থেকে বের হয়নি বিধায় নিহিলার অস্বস্তি কম লেগেছে কিন্তু এক মনে অস্বস্তি কমলেও আরেকমনে উনি কী করছেন সেটাই দেখতে ইচ্ছে করে।
পাশ দিয়েই অরিন মোবাইল কানে দিয়ে যেতেই নিহিলা ডাক দিল।

“অরিন এটা তোর বড়ো ভাইয়ের জন্য। দিয়ে আয়।”

“ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। তোর জন্য তো ঐ রুম নিষিদ্ধ না। তুই যা।” বলেই সে সিঁড়ি বেয়ে চলে গেল। রিহির বিয়ের সব আয়োজন ছাদে হচ্ছে বিধায় মানুষজন তেমন একটা নেই।
নিহিলা এগিয়ে গেল। দেরি করলে চলবে না। তার উপরে যাওয়া লাগবে। সে রাহানের রুমের দরজার ফাঁক দিয়ে একটু দেখার চেষ্টা করলো। না দরজা বন্ধ। সেইবার যে কথা হলো এরপর এই প্রথম দেখবে। কিন্তু মনে ভীষণ অস্তিরতা ঘিরে ধরছে। মনে হচ্ছে যেন কতগুলো মাস মানুষটাকে দেখেনি!নিহিলা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইল। পরক্ষনেই নিজেকে সামাল দিল। সে কেন এতো আড়স্থ হচ্ছে! এখন কী করবে! ঠোকা দিবে না-কি ডাকবে?

সে ঠোকা দিল। পরপর দুইবার ঠোকা দিতেই নিহিলার মুখশ্রী তেতো হয়ে গেল।

রাহান দরজা খুলেই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে আবারো লেপটপ দেখার স্থানে বসে পড়লো।
তা দেখে কফির কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নিহি গুটিয়ে গেল। মানুষটা এতগুলো দিন পরেও দেখে এমন ভাব করছে যে প্রতিদিনই দেখা হয়। নিহিলা তাকালো, তার এমন ভাব দেখে মনে হচ্ছে নিহিলার এখানে আসা স্বাভাবিক।
“আপনার কফি।” রাহান এক পলক কফির দিকে তাকিয়ে লেপটপের স্ক্রিনে দৃষ্টি দিল।
“আমি ধোয়া উঠা ছাড়া খাই না। তুমি অলরেডি ঠান্ডা করে ফেলেছো। আবার বানিয়ে নিয়ে এসো।” বলেই রাহান নিজের কাজ করতে লাগলো।
নিহিলা রাগী দৃষ্টি নিঃক্ষেপ করে রাগী স্বরে কিছু বলতে নিবে সেসময় রাহান একবার মুখ তুলে তাকালো। তা দেখে নিহিলা মুহূর্তর মধ্যে বোকা বোকা চাহনীতে হাসার চেষ্টা করলো,
“আসলে শাড়ি পড়ে এতসব! উপরে ওরা ডাকবে আমাকে।”

“তো পড়েছো কেন?”

“মানে? আমার বোনের বিয়ে আর আমি শাড়ি পড়বো না?”

“বারণ করেছে কে!”

নিহিলা বিরক্ত হলো।
“আশ্চর্য তো! এই কফি বানানোর দায়িত্ব আমার না।”

নিহিলার কথায় রাহান ভ্রু কুঁচকে গম্ভীরস্বরে বলল,
“আমি নাহয় অতিথিদের সাথে খারাপ ব্যবহার করি কিন্তু তোমরাও এমন কিছু করো জানা ছিল না।”

নিহিলা মুহূর্তের মধ্যে শান্ত হয়ে গেল। আসলেই তো তাদের বাড়িতে অতিথি এসেছে সে কীভাবে সামান্য কফির জন্য এভাবে ব্যবহার করছে!
নিহিলা পিছু ফিরে গেল। তা দেখে রাহানের ঠোঁটের কোনা প্রশস্ত হলো।

বেশ কিছু সময় পরে নিহিলা ধোয়া উঠা কফি নিয়ে ফিরে এলো। সে এসে দাঁড়াতেই রাহান ঐভাবেই আগের ন্যায় কাজ করতে লাগলো।
তা দেখে নিহিলা এগিয়ে রাহানের সামনের টেবিলটাতে কফি রেখে দিতে যেতেই রাহান গম্ভীর কণ্ঠে শুধলো,

“তোমাকে রাখতে বলছি?”

নিহিলার এবার রাগ চড়ে গেল। সে বেশ রাগী কণ্ঠে শুধালো,

“আমি কী এখানে পড়ে থাকবো?” বলেই নিজে নিজের জিব্বায় কামড় দিল। কী বলে ফেলেছে সে এটা!

রাহান লেপটপ বন্ধ করে উঠে দাঁড়ালো। সে সোজা কাপড়ের ট্রলির কাছে এগিয়ে গিয়ে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে পা বাড়াতে গিয়ে থেমে পিছু ফিরে নিহিলার দিকে তাকালো,

“এখন তো আছোই। তোমাদের বাড়ি তুমি চাইলে এভাবে থাকতে পারো। মাইন্ড করবো না।”

রাহান ওয়াশরুমে ঢুকতেই নিহিলা কফির কাপ ঐভাবেই রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। মানুষটার এমন অদ্ভুত কর্মকান্ড তার মাঝে মাঝে সহ্য হয় না। এই যেমন এখন হচ্ছে না। এটা ভাবতেই মুহূর্তের মধ্যেই নিহিলার মনে জবাব দিয়ে দিল, এই বিরক্তের গম্ভীর স্বভাবটাই তো তার ভালো লাগার কারণ কিন্তু সামনে থাকলে এমন অস্তিরতা ঘিরে ধরে কেন! বোধহয় প্রথমদিনের সেই ভয়টা রয়ে গেছে। এতকিছুর পরেও এতো ভালো লাগার কারণ সে খুঁজে পায় না! এতদিন মন নির্জীব ছিল অথচ এখন সেই নির্জীব ভাবটা আর নেই। তাহলে কী তার সব সজীবতা এই মানুষটার মাঝেই! এটা ভাবতেই সে নিজেকে সামাল দিল। বারবারে এমন ভাবনা তার মানাই না। এসব কিছুই হবে না। তার নিজেকে শক্ত করা উচিত।
#একমুঠো_বসন্ত
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব_২৩

আজ রিহির বিয়ে। নিহিলা রিহিকে জড়িয়ে ধরে আছে। রিহি সাজতে পারছে না কোনোভাবেই। ক্ষনে ক্ষনে চোখের পানি চলে আসছে। পাশেই অরিন তাকিয়ে আছে। সে বারবার জিজ্ঞেস করছে,”বিয়েই তো হচ্ছে, এখানে কান্না করে নিজের সুন্দর মুখটা নষ্ট করছো কেন? ”

নিহিলা অরিনের এমন বোকা বোকা প্রশ্নে হাসলো,
“শোনো অরিন, এখানে বিয়ে মানে হচ্ছে শশুরবাড়ি চলে যাবে আর আগের মতো বাবার বাড়িতে আসতে পারবে না। আগের মতো মুক্তভাবে চলতে পারবে না।”বলা শেষ করতেই রিহির এতক্ষনের চাপা কান্না আরো জোরে বেরিয়ে এলো।

নিহিলা মনে মনে নিজেকে গা’লি দিল। কী দরকার পড়ছিল এখন অরিনকে বোঝাতে যাওয়া! একজনকে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে গিয়ে আরেকজন উপলব্ধি করে কান্না করে দিচ্ছে। এতক্ষন কোনোমতেই চুপ করালে এখন তার নিজের কথা শুনে আরো বেশি কান্না। এখন তারই সামাল দিতে হবে ভেবে নিহিলা মলিন চোখে রিহির দিকে তাকালো। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে নয়তো ওরা এসে দেখলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। এজন্যই তো নিহিলাকেই রিহির সাথে রুমে পাঠিয়েছে। নিহিলা এক পলক ঘড়ির দিকে তাকালো,এদিকে সময় চলে যাচ্ছে। নিজের পায়ে নিজের কুড়াল মা’রা বোধহয় এটাকেই বলে। অরিন বিজ্ঞ ব্যক্তিদের মতো বোঝার ভান করে মাথা নাড়লো। সে আরো কিছু জিজ্ঞেস করতে নিতেই নিহিলা থামালো,
“অরিন তোকে আমি রাতে সব বুঝিয়ে দিবো। এখন এরে সামলায় আগে।”বলেই নিহিলা রিহির দিকে তাকালো,
“তুই জানিস? তোরে কান্না করলে কী বিশ্রী লাগে? আর তোর না ইচ্ছে ছিল বিয়েতে এতো সুন্দর করে সাজবি। বিশবছর পরে যখন তোর বিয়ের এমন কান্নামাখা ছবি দেখবি তখন ইচ্ছে করবে অতীতে এসে আরেকটু ভালো করে সেজে যায়। তোর বাচ্চারা বলবে,’মা তুমি এভাবে মুখ করে ছিলে কেন!’ বিয়ে মানুষের একবারও হয়। আর হবে না কিন্তু। না কি তোর আরেকটা করার ইচ্ছে আছে?” বলতেই অরিন নিহিলাকে হাত দিয়ে থামিয়ে নিজেই বলা শুরু করলো,

“একবার কেন! আমাদের এখানে অ্যানিভার্সিরি হয়। প্রতি বছর বছর সুন্দর করে সাজে। তোমাদের এখানে হয় না?” অরিনের বোকা বোকা প্রশ্নে রিহি নিহিলা দুজনেই হেসে দিল। সে এখানের সংস্কৃতি আর ঐখানের সংস্কৃতি গুলিয়ে ফেলছে। সকাল থেকে নিহিলাকে কত বোকা বোকা প্রশ্ন যে করেছে তা নিহিলা রিহিকে বলে শোনাতেই রিহি হেসে দিল। এর মধ্যেই মন ভালো অবস্থায় নিহিলা রিহিকে সাঝানোর ব্যবস্থা করলো।
———

রিনা আহমেদ ছেলের দিকে এগিয়ে এলেন।

“আসা পর্যন্ত রুমে ছিলি যে? একটু বাইরের পরিবেশ দেখতি ভালো লাগতো।”

“আমি অচেনা জায়গায় খাপ খাওয়াতে পারি না। তোমার জন্যই এখানে আসা।”

“তাই বলে সবাই ডাকতে এসেছিলো তবুও গেলি না যে? ”

“মা আমার ভালো লাগে না।”

রিনা আহমেদ অনেকক্ষন নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে মুখ খুললেন,
“তুই কী নিহিলাকে পছন্দ করিস?”

“কেন মনে হচ্ছে?”

“না, তোর জন্য যদি জীবনসঙ্গী হিসেবে নিহিলাকে ঠিক করি তাহলে আমি কী তোর মনের বিরুদ্ধে যাবো?”

“তুমি কোনোদিন আমার মনের বিরুদ্ধে যাওনি।”

“তাহলে কী তুই রাজি ধরে নিবো?”

“তোমার উপরেই সব।”

রিনা আহমেদ খুশি খুশি মনে বেরিয়ে গেল। যাক, তার ছেলে বিয়ের জন্য রাজি হয়েছে। তাহলে অরিন আহান ঠিক ছিল।
———

বোনের বিয়ে উপলক্ষে সাফাত এসেছে বোনকে বিদায় দিতে। দীর্ঘ দুইবছর পরে সে বাড়ির দরজায় পা রাখলো। তার হুট্ করে কান্না পাচ্ছে কিন্তু ছেলেদের না-কি কান্না করতে নেই এইটা ছোটবেলা থেকেই আমান শেখ বলে এসেছেন। নিহিলা যখন তার কোনো খেলনা নেয়ার বায়না করতো সে তখন কান্না করে দিতো। তখনই আমান শেখ এসে বলতেন, যায় হয়ে যাক না কেন ছেলেদের কান্না করা মানায় না। সেই কথা মনের মধ্যে রাখতে গিয়ে আর বাস্তবতা উপলব্ধি করতে করতে গিয়ে এখন আর কান্না করে না। কান্না করে না এটা ভুল সে তো কান্না করে। তবে মানুষের সামনে নয়, আড়ালে। এখন যে ঢাকায় থাকে সেই বাড়ির প্রতিটা দেয়াল জানে তার রাতের চিত্র। তার তো বোঝানোর মতোও কেউ নেই। হয়ত নিজে দোষেই সবাইকে হারিয়েছে। তারও ইচ্ছে করে দিন শেষে কাউকে মনের সব কথা উজাড় করে বলে হালকা হতে কিন্তু সে মানুষের যে বড্ড অভাব তার! সাফাত বাড়িটার দিকে তাকালো। আজ তার একমাত্র ছোট বোনটার বিয়ে। তার সেই ছোট বোনটাও আজ বড়ো হয়ে গিয়েছে! বোনটার কথা রাখতেই তো এখানে আসা। বোন ভেবেছে ভাই বুঝি তাকে ভুলে গেল! মানুষের অনুপস্থিতিতে মানুষ পেলে ভোলা যায় কিন্তু সে তো কোনো মানুষ পায়নি! তবে ভুলবে কীভাবে! সাফাত মলিন শ্বাস ফেলল। নিহিলাও বোধহয় এসেছে। চারবছর পরে মেয়েটাকে দেখবে। বাড়িতে অনেক মানুষের আনাগোনা। কারোর দৃষ্টি সাফাতের দিকে পড়লো না। সাফাত আস্তে ধীরে বাড়ির সদর দরজা পেরিয়ে ভেতরে এগিয়ে গেল। সাফাত ঘরে ঢুকেই চারদিকে তাকালো। তার নিজের বাড়ি, প্রতিটি দেয়ালে তার কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে অথচ আজ কেন জানি অচেনা লাগছে সব। হয়ত দুইবছর পরে এসেছে তাই সব অচেনা হয়ে আছে। সে একটু এগিয়ে যেতেই একটা রুম থেকে হাসির আওয়াজ ভেসে আসলো। এটা রিহির হাসি সে সেটা ভালোমতো বুঝতে পেরেছে। সে এগিয়ে গেল। রুমে সব মেয়ে বিধায় সে ঢুকলো না। সে দরজায় ঠোকা দিয়ে ডাকলো, “রিহি!”
সাফাত ভেবেছিল এতো আওয়াজের মাঝে কেউ তার ডাকটা শুনবে না কিন্তু না। এতো সব আওয়াজের মাঝে রিহি ঠিকই ভাইয়ের আওয়াজটাকে ধরে নিল। সে মাথা তুলে তাকালো। সবার পিছে দরজার ধারে তার ভাই দাঁড়িয়ে আছে। রিহি দৌড়ে ভাইয়ের কাছে এগিয়ে গেল।
রিহি এগিয়ে গিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরলো। সাফাতও পরম আদরে বোনকে জড়িয়ে নিল। রিহি ভাইয়ের দিকে মাথা তুলে তাকালো। সে তার সুদর্শন ভাইকে চিনতে পারছে না। এমন অচেনা, অগোছালো হয়ে গিয়েছে তার ভাই!

“ভাই তুই এমন হয়ে গেছিস ক্যান? এই ভাই তোকে চেনা যাচ্ছে না কেন?” বলেই মুখে হাত বুলিয়ে দিল,
“দাঁড়ি রেখেছিস? তুই তো এমন কালো ছিলি না!এতটা পাল্টে গেলি!”
বোনের কথায় সাফাত মলিন হাসলো। সবাই বাইরের চাকচিক্য মলিন দেখেই প্রশ্ন করে অথচ ভেতরেরটা যে ম’রে গেলেও কেউ খেয়ালও করে না!

নিহিলা সবেমাত্র রুমে ঢুকতে নিচ্ছিলো। এমন সময় রিহির এমন কথায় থমকে দাঁড়ালো। সে মূলত রিহির কিছু জুয়েলারী রুম থেকে আনতে গিয়েছিল। নিহিলা সরে দাঁড়ালো যাতে করে ওকে কেউ না দেখে।
রিহির কথায় নিহিলাও সাফাতকে একবার পরখ করে নিল। আসলেই আগের সুদর্শন সাফাত ভাই আর এখনের সাফাত ভাইয়ের বিস্তর পার্থক্য। একান্ত নিজের চেনা পরিচিত না হলে এখন কেউ চিনবে না। দাঁড়িতে ভর্তি, অগোছালো চুল। নিহিলা শার্ট এর দিকে তাকালো। শার্ট এর হাতা একটা উঁচু করে রাখা আরেকটু নিচু। নিহিলা থমকালো। অথচ আগে কত পরিপাটি করে থাকতেন উনি। সবসময় নিজেকে আলাদা করে গুছিয়ে রাখতেন। নিহিলার খারাপ লাগলো এমন কেন হয়েছে উনি! তাহলে কী সাফাত ভাই একটুও ভালো নেই!

#চলবে ইন শা আল্লাহ।
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here