একমুঠো বসন্ত পর্ব -১৯+২০

#একমুঠো_বসন্ত
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব_১৯

দেখতে দেখতে মাঝখানে তিনবছর কেটে গেছে নিহিলার। এইতো আর কয়েকদিন পরেই সে এই জায়গাটা ছেড়ে যাবে। মায়া বসে গেছে। কীভাবে থাকবে সে! কয়েকবছর যেন চোখের পলকেই কেটে গেছে। এই জায়গায় হয়ত তার আর আসা হবে না। শেষবারের মতো নিহিলা সব গোছাগাছ করে নিচ্ছে। রিনা আহমেদ অনেকদিন ধরে যেতে বলছেন। সেই হোস্টেলে আসার পর থেকে আর তেমন যাওয়া হয়নি। যদিও নিহিলা কথা দিয়েছিল সে নিয়ম করে ঐ বাড়িতে যাবে কিন্তু কথানুযায়ী যাওয়া হয়নি। সে নিজেকে আড়াল করতে চেয়েছিল। রাহান ভাই মাঝে মাঝে অরিনকে নিতে আসতো কিন্তু নিহিলা আড়ালে লুকিয়ে যেত। এই তিনটা বছরে একবারও দেখা হয়নি। বুকে তীক্ষ্ণ ব্যথা অনুভব হয় তবুও নিহিলা ঐ বাড়িতেও যায় না। মাঝে মাঝে অরিনের সাথে কল করে খবরাখবর নেয়। মাঝে মাঝে অরিন কথার ফাঁকে রাহান ভাই অফিসের কাজে বাইরে গিয়েছে জানালে তবেই যায়। গিয়ে সেদিনের মধ্যেই চলে আসে। এ নিয়ে রিনা আহমেদের বেজায় রাগ কিন্তু নিহিলা নিজে বাঁচার জন্যই এতসব। অনুভূতির সূচনা বুঝতে পেরেই আড়ালে চলে আসার আয়োজন। সে জানে আদো অনুভূতি রয়ে গেছে। তাই তো যাওয়া হয় না কিন্তু আজকে আর না গিয়ে উপায় নাই। এই তো পরশুই তার ফ্লাইট।

নিহিলা নিজেকে পরিপাটি করে বেরিয়ে পড়লো। সে ঐ মানুষটার মুখোমুখি হতে চাচ্ছে না কিন্তু কিছুই করার নেই।
অরিন থেকে শুনেছে রাহান ভাইকে বিয়ের জন্য অনেক বলেছে কিন্তু উনি এড়িয়ে গেছে। নিহিলা কথাগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলল।

গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির সামনে আসতেই তার অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেল। এমন না যে এই তিনবছরে এই প্রথম সে এসেছে কিন্তু কেন জানি খারাপ লাগছে। প্রথমদিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। এইতো প্রথম যেদিন এই বাড়ির সামনে এসেছিলো ঠিক এমনই অনুভূতি হয়েছিল। ভয়,অস্বস্তিতে ঘেরা এক অনুভূতি ছিল সেদিন। আজকেও তেমন অনুভূতি। সেদিন প্রথম আসা ছিল আর আজ শেষ আসা। নিহিলা চারদিকে তাকিয়ে বাড়িটিকে একবার পর্যবেক্ষণ করে নিল। সে বাগানের সামনে একটু এগিয়ে গেল। এইতো এই জায়গাটাতে গোলাপের ডাল পড়েছিল। মানুষটা কী যত্ন সহকারে তাকে কাঁ’টা থেকে আটকে দিয়েছিল! এসবের কারণেই তো অনুভূতি জন্মে গিয়েছিল। মুহূর্তটা মনে পড়তেই নিহিলা নিজেকে সংযত করে নিল। সে বাগান থেকে চোখ ফিরিয়ে বাড়ির সদর দরজার দিকে এগিয়ে আসতেই দুতলার ব্যালকনিটাতে চোখ আটকে গেল।
মুহূর্তে দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল। কতগুলো দিন মাস পরে এই মানুষটার একদম সামনে। নিহিলার মনের ভেতরে তোলফার হয়ে যাচ্ছে। সে নিজেকে শান্ত করে চোখ নামিয়ে নিল। পা বাড়াতে নিতেই না চাইতেও আরেকবার উপরে দৃষ্টি চলে গেল। রাহান ভাই নেই, বোধহয় ভেতরে চলে গেছে। নিহিলা হাসলো। ভালোই হয়েছে বেশি অনুভূতি জন্মাতে দেয়নি, নয়তো এরকম এড়িয়ে চলা এতদিন পরে দেখা এসব সে সহ্য করতো কীভাবে! ঐ মানুষটার তো তার প্রতি কোনো অনুভূতি নেই তবে সে কেন আগ বাড়িয়ে এভাবে বোঝা হয়ে থাকবে!
নিহিলা না চাইতেও চোখ দিয়ে দুফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। সে চোখ মুছে বাড়ির কলিং বেল বাজাতেই অরিন এসে দরজা খুলে দিল। সে জড়িয়ে ধরে নিহিলাকে ভেতরে নিয়ে গেল।

দুপুরের খাওয়া দাওয়ার জন্য সবাই বসে পড়লো কিন্তু রাহান ভাই আসলো না। যদিওবা উনি নিহিলা আসার পরে একমুহূর্তের জন্যও নিচে নামেনি। তা থেকে নিহিলা নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারছে।
রিনা আহমেদ অরিনকে পাঠালো রাহানকে ডাকতে।
বেশ কিছুক্ষন পরে অরিন এসে জানালো,
“ভাইয়া আজ খাবে না।”

আহান অরিনের দিকে তাকালো। রিনা আহমেদ এগিয়ে গেলেন,
“খাবে না মানে?”

“যদি ইচ্ছে হয় তাহলে অল্প করে দিয়ে প্লেটটা রুমে দিয়ে আসতে বলেছে।” বলতেই রিনা আহমেদ প্লেট নিয়ে রুমে চলে গেল।

নিহিলা ভাবলো কেন আসলো না মানুষটা! পরিবারের সাথেই তো খেত উনি। তাহলে কী মানুষটিও নিহিলাকে এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে! কিন্তু উনি কেন এড়িয়ে যাবেন! মানুষটির তো আর নিহিলার মতো অনুভূতি নেই! তাহলে কী এসবের সাথেও নিহিলা ওতপ্রোতভাবে জড়িত!
নিহিলা মলিন শ্বাস ফেলল। সে এসব কী ভাবছে। নিজেকে যেকোনো জায়গায় এতো মূল্য কেন দিচ্ছে! সে তো এসব কিছুই হতে দেয়নি। নিজের জন্যই নিজে সরে গিয়েছিল। নিহিলা ভাবনাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিল।
খাবার খেয়ে অরিন আহান আগেই রুমে চলে গিয়েছিল। তারা আজ আড্ডা দিবে। নিহিলা আগের মতো চিপস ভেজে নিল। সে বাটিটা নিয়ে উপরে উঠে দ্রুতপদে রুমের দিকে অগ্রসর হতে নিতেই রাহানের কণ্ঠস্বর পেয়ে থেমে গেল।
“কেমন আছো?”
মানুষটির এমন কথায় নিহিলা থমকে গেল। সে পিছু ফিরে তাকাতে পারলো না। এই একটা কথায় ভেতরে সব চুরমার হয়ে যাচ্ছে তার।
“আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?”উপরে যতই শান্ত দেখাক না কেন ভেতরে ভেতরে সব উলোটপালোট হয়ে যাচ্ছে। মনের ভেতরের অবস্থাটা বিপরীত মানুষকে বুঝতে দেওয়া যাবে না কোনোভাবেই।

“আমি মানুষের পেছনে দেখে কথা বলি না।” রাহানের এমন গম্ভীরালি কথায় নিহিলা ফিরে তাকালো। মানুষটার স্বভাব এখনো আগের ন্যায় রয়ে গেছে। নিহিলা এক ফলক সামনে থাকা মানুষটির দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেলল।

রাহান ট্রাওজারের পকেটে হাত দিয়ে নিজেই পিছু ফিরে গেল। তা দেখে নিহিলা মাথা তুলে তাকালো।

“কান্না করেছিলে কেন?”

“কই?” বলতেই নিহিলার বাড়িতে ঢোকার সময়ের কথা মনে পড়ে গেল কিন্তু মানুষটা তো ভেতরে চলে গিয়েছিল তবে আবার খেয়াল কীভাবে করলো! তাহলে কী দ্বিতীয়বার আবারো এসেছিল!

“পালিয়ে গিয়েছিলে?”

“পালাবো কেন?”

“প্রশ্ন আমি করেছি।”

“আসলে আমার পড়া হচ্ছিলো না বিধায় হোস্টেলে গিয়েছিলাম। ওখানে পড়াশোনাটা ভালোমতোই হয়েছে।”

“কেন হচ্ছিলো না?”

নিহিলা জবাব দিল না। রুম থেকে নিহিলার উদ্দেশ্যে অরিন আহানের ডাক ভেসে আসতেই নিহিলা বাটি নিয়ে পিছু ফিরে গেল।
“ওরা ডাকছে। আমি যাচ্ছি।” বলেই নিহিলা অগ্রসর হতে নিল।

“আবার পালিয়ে যাবে?”

“না তো। আপনার একেকটা সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাহান ভাই। আমার মতো ক্ষুদ্র মানবীর পেছনে এই সময়টা কেন দিচ্ছেন?”

“কে বলেছে তোমার পেছনে সময় দিচ্ছি?আর ক্ষুদ্র মানবী কেন? তুমি তো বেশ বড়ো হয়েছো।”

নিহিলা তাকালো। তাহলে কী মানুষটা একটু হলেও পাল্টিয়েছে? এইতো মজার কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু তা উনার মুখভঙ্গিমার সাথে যাচ্ছে না। নিহিলা কী তা বলবে! না থাক, পরে আবার সেই আগের মতো গম্ভীর ভাবটা চলে
আসবে।

“আমি আসছি।” বলেই নিহিলা দ্রুত পায়ে জায়গা ত্যাগ করলো।

নিহিলা পেছনে ফিরে কয়েক পা বাড়াতেই রাহান পিছু ফিরলো। সে পেছনে থেকে কিছু একটা বলতে গিয়ে নিজেকে থামিয়ে দিল। সে কেন এসব করছে! তার সাথে তো এমন কিছু মানাচ্ছে না। সে রুমে এসে বারান্দার দোলনাটিতে বসলো। চুপচাপ খোলা আকাশটির দিকে তাকিয়ে রইল। তার সবকিছু পাল্টে যাচ্ছে কিন্তু কাউকে বোঝাতে পারছে না। কেন এসব হচ্ছে তা সে ভালোমতোই জানে। এই তিনবছরে প্রায় সময় সে অরিনকে নিয়ে আসতো ভার্সিটি থেকে। এরপর পরে নিজেকে সংযত করেছিল কারণ তার সাথে তো এসব যাচ্ছে না! রাহান চুপচাপ রেলিংয়ের ধারে এগিয়ে গেল। ট্রাওজারের পকেটে হাত গুঁজে অদূরে দৃষ্টি দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

নিহিলার কেন জানি খারাপ লাগছে। তার দমবন্ধ লাগছে।এতগুলো দিন তো এজন্যই দূরে সরেছিল তবে আবারো কেন এসব সামনে পড়তে হলো। যতক্ষণ ওখানে ছিল বুক ধড়ফড় করছিল। সে বুকে হাত দিয়ে বড়ো শ্বাস ফেলল। এটাই শেষবার। আর তো আসবে না সে। একেবারের জন্য চলে যাবে।
#একমুঠো_বসন্ত
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব_২০

নিহিলা সব গোছাগাছ করে নিল। হোস্টেল রুমটার প্রতি মায়া জন্মে গেছে। সে সবকিছু ঠিকঠাক করে বসা থেকে উঠে জানালার দিকে এগিয়ে গেল। শেষবারের মতো জানালাটির বাইরে দৃষ্টি দিল। সে আলতো করে পর্দাগুলো ছুঁয়ে দিল। এরপরে মনকে শক্ত করে পর্দা টেনে দিয়ে ব্যাগ সব নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
এয়ারপোর্ট এ রিনা আহমেদরা আসবেন বিদায় দিতে। নিহিলা এয়ারপোর্ট এ নেমে আশেপাশে তাকাতেই অরিন এসে দাঁড়ালো। একে একে আহান আর রিনা আহমেদও এসে দাঁড়ালেন। নিহিলা একটু উঁকি দিল। তার ভাবনাতে এসেছে কোনো একটা ইমাজিন হোক যে রাহান ভাইও এসেছে কিন্তু অনেকক্ষন কথা বলে বুঝতে পারলো তিনি আসেনি। তিনি অফিসের কাজে বাইরে গিয়েছেন। আজ ফিরবে। আচ্ছা? উনি যদি নিহিলা চলে গেছে জানে তাহলে কী খারাপ লাগবে? পরক্ষনেই নিহিলা নিজের বোকামির জন্য হাসলো। উনার কেন খারাপ লাগবে!
নিহিলা সবার সাথে বসে রইল। পাশেই অরিন আহান কথা বলছে। নিহিলা চারপাশে তাকালো। শেষবারের মতো জাপান দেখে নিচ্ছে। সে জানে হয়ত আর আসা হবে না। প্রথমবার এখানে পা রাখার স্মৃতিটা মনে পড়ে যাচ্ছে। কী সুন্দর মুহূর্ত! নতুন জায়গা, তার স্বপ্নের জায়গা! আহান নিতে এসেছিলো, তারপর রাহান ভাইয়ের প্রথম দেখাতেই ধমক। নিহিলার চোখে একে একে সব ভেসে উঠছে। সময় কত দ্রুত ফুরোই! দেখতে দেখতে চারবছর সে কাটিয়ে দিয়েছে । আজ বাড়ি ফেরার পালা।
উপরের মনিটর থেকে শেষ বারের মতো আওয়াজ আসলো বোর্ডিং আওয়ার শেষ, যাত্রীদেরকে উদ্দেশ্য করে স্পিকারে বলছে। নিহিলা অরিনকে জড়িয়ে নিল। আহানকে সহ বিদায় দিয়ে সে পা বাড়ালো রিনা আহমেদের কাছে।
“শুধু একটা বছর কাছে ছিলি, কিছুই তো করতে দিলি না। এই তিনবছর যখন ইচ্ছে দেখতে পারতাম, চলে আসতিস। কিন্তু এখন তো আর তাও পাবো না।”

“মায়ের মতো আগলে রেখেছ। যা করেছ অনেক বেশি করেছ ফুপি। কৃতজ্ঞতা রইল।”

রিনা আহমেদ এক গাদা আদেশ দিল। তার চোখ গড়িয়ে অশ্রু পড়ছে। ভাবতেও অবাক লাগছে যে এই মেয়েটিকে সে হয়ত আর কাছে পাবে না।
নিহিলা চোখ মুছে পা বাড়ালো। রিনা আহমেদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো, “চিন্তা করো না ফুপি,তোমাকে আমি পরিবারের সাথে মিলাবোই।”
নিহিলা হাঁটতে হাঁটতে পিছু ফিরে তাকালো। এই মানুষগুলো তার দ্বিতীয় পরিবার ছিল। অচেনা দেশের পরিবার। নিহিলা ঝাঁপসা দৃষ্টিতে তাদের হাত নাড়িয়ে বিদায় দিল।
নিহিলাকে যতক্ষণ পর্যন্ত দেখা যায় ততক্ষন তাকিয়ে রইল ওরা। অরিন আহানের মন খারাপ। রিনা আহমেদও চোখ মুছে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। এইবার ফিরতে হবে। বাসায় শুধু শফিক আহমেদ আছেন। রাহান আজ বাইরে থেকে ফিরবে। ছেলেটাকে কিছু ভালোমন্দ খেতে দিতে হবে।
রিনা আহমেদ অরিন আহানকে ডাক দিতেই অরিন আহান না করলো।
“আরেকটু থাকি, নিহিলার ফ্লাইটের প্লেনটা অন্তত দেখি। শেষবারের মতো।”
রিনা আহমেদ দিরুক্তি করলো না। তিনিও দাঁড়িয়ে রইলেন।

নিহিলা সবকিছু শেষ করে প্লেনে নিজের সিটে গিয়ে বসে পড়লো। ভাগ্য ভালো জানালার পাশেই সিট্ পড়েছে। অন্য সময় হলে খুশি লাগতো কিন্তু আজ লাগছে না। আজ যেন ভেতরে ভেতরে র’ক্ত’ক্ষরণ হচ্ছে। এতদিন একটা আশা ছিল কিন্তু আজ সেটাও আর নেই। একেবারের জন্য মিলিয়ে গেল। নিহিলার হুট্ করে কান্না চলে আসলো। কান্নার মাঝে হিচকি উঠতেই আশেপাশের মানুষগুলো তার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে ফিরে তাকালো। নিহিলার লজ্জায় অস্বস্তি ঘিরে ধরতেই সে মাথা নিচু করে ফেলল। মানুষগুলো একবার দৃষ্টি দিয়েই তারপর ফিরিয়ে নিয়েছে। নিহিলা জানালার বাইরে দৃষ্টি দিল। ক্ষনে ক্ষনে হিচকি উঠছে। সে মুখ চেপে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। জীবন কী অদ্ভুত! চারবছর আগে যখন এই দেশে আসবে তখন কান্না এসেছিল সেই পরিবারের জন্য আর এখন কান্না এসেছে এই পরিবারের জন্য। অথচ চারবছর আগে এই মানুষগুলোর প্রতি কোনো মায়ায় ছিল না। না ছিল কারোর প্রতি টান। প্লেন ছেড়ে দিছে। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। যখনোই আকাশে উড়াল দিল তখনই কান্না আর আটকে রাখতে পারলো না। কান্নার সাথে সাথে বুক ছিঁড়ে তপ্ত শ্বাস বেরিয়ে এলো। আজ থেকে সব আশা বেরিয়ে গেল। শেষ সব। দ্বিতীয়বারের মতো অনুভূতিটা এই দেশ ছাড়ার সাথে সাথেই বিসর্জন দিল।

কিন্তু নিহিলা যদি জানতো! মুদ্রার এই পিঠটা যদি দেখতো! তবে পরিস্থিতি অন্তত ভিন্ন হতো। মুখে হাসি রেখেই যেতে পারতো।
রাহান দ্রুত দৌড়ে এয়ারপোর্ট এ এগিয়ে এলো। রিনা আহমেদরা এগিয়ে সামনে আসতেই আহান ডাক দিল,

“মা, এটা রাহান ব্রো না?” আহানের কথা শুনে অরিন, আর রিনা আহমেদ দুজনেই তাকালো। হ্যাঁ, রাহান এগিয়ে আসছে।

রিনা আহমেদ একটু এগিয়ে যেতেই রাহান এসে দাঁড়ালো।
“কিরে বাবা!”

মায়ের কথা শুনে রাহান আশেপাশে তাকালো।
“শুনলাম, নিহিলা চলে যাবে আজ?”

“চলে গিয়েছে তো। এখনই বিদায় দিলাম।”

“ওহ।” রাহান পিছু ফিরে গেল।

“ব্রো দেখো। নিহিলার ফ্লাইটের প্লেন।” আহানের কথা শুনে রাহান উপরে তাকালো। মাথার উপর খোলা আকাশে প্লেনটি উঠে যাচ্ছে। রাহান আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। যতক্ষণ পর্যন্ত প্লেনটা চোখের আড়ালে মিলিয়ে যাচ্ছে ততক্ষন তাকিয়ে রইল। আকাশে প্লেনটা ছোট আকার ধারণ করে মিলিয়ে যেতেই রাহানের চোখ ঝাঁপসা হয়ে এলো। তার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়ত হাটু গেড়ে বসে পড়তো কিন্তু রাহান নিজেকে শক্ত করলো। তার বুঝতে বেশ দেরি হয়ে গেছে। সে কেন আগে এই অনুভূতিটার সাথে পরিচিত হয়নি! তাহলে হয়ত আজ পরিস্থিতি অন্যরকম হতো! এভাবেই হারিয়ে ফেলল!

অরিন,আহান দুজনেই ভাইয়ের দিকে তাকালো। তারা বেশ বুঝতে পারলো তাদের ভাইয়ের কষ্ট হচ্ছে কিন্তু দেখাচ্ছে না। তাদের খারাপ লাগলো। ওদের চোখ দেখে রিনা আহমেদ তাকালেন। তিনি এগিয়ে রাহানের কাঁধে হাত রাখতেই রাহানের ধ্যান ফিরে আসলো। সে পিছু ফিরলো।

“তো এভাবে দৌড়ে এলি? আর বাহির থেকে কখন ফিরলি?”

“এমনি নিতে এলাম।”

“আহান তো আছেই ড্রাইভিং করার জন্য। তুই এতো জার্নি করে আসতে গেলি কেন? সবেমাত্র বাইরে থেকে এলি। বাসায় বিশ্রাম নিতি।”

“নিতে এসেছি বলে দুঃখ পাচ্ছ যে?”
বলেই রাহান গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। ড্রাইভিং সিটে বসতে নিতেই আহান ডাক দিল,

“ব্রো, তুমি অন্য সিটে বসো। ড্রাইভ আমি করবো।”
আহানের কথায় রাহান কিছু না বলে সরে গিয়ে ড্রাইভিং এর পাশের সিট্ টাতে বসলো।
রাহান জানালার বাইরে দৃষ্টি দিল। তার কিছুই হুট্ করে ভালো লাগছে না। বুঁকের ভেতর কোথাও যেন চিনচিন ব্যথা অনুভব করছে। তার এমন কেন লাগছে! বাবার মুখ থেকে নিহিলা চলে যাচ্ছে শুনে সে কেন দৌড়ে এলো! কেন নিহিলাকে একটি ফলক দেখার জন্য এতো জার্নির পরেও আবার এখানে চলে আসলো! তার এমন বাজে অনুভূতি কেন হচ্ছে! তাহলে কী নিহিলা চলে গেছে তাই! কিন্তু তার সাথে নিহিলার কিসের সম্পর্ক! এমন তো না যে অনেক ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। তবে এই অনুভূতির নাম কী!

#চলবে ইন শা আল্লাহ।
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here