#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ১৭
আনাজের মুখ একঝাঁক বিষাদে ভরে গেছে। ভেতরে উথাল পাথাল ঢেউ বয়ে চলছে। নিজের চক্ষুজোড়া কে বিশ্বাস করতে পারছে না কিছুতেই। ইয়ানার দৃষ্টিও স্তব্ধ রূপে রূপান্তরিত হয়েছে। আনাজের ব্যবহারটা ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না তার।
এক সময় আনাজ তার সিট থেকে উঠে পড়ে। সামনের দিকে চলতে শুরু করে। ইয়ানা সিটে বসেই বিষয়টি আন্দাজের প্রয়োগ করে। ঠিক চারহাত সামনে থাকা টেবিলটার সামনে যেয়ে দাড়িয়ে পড়ে আনাজ। তাকে দেখে সিটে বসা লোকটি সাথে সাথেই দাড়িয়ে যায়।
–‘আরে স্যার আসসালামু আলাইকুম, আপনি সিলেটে? ‘
আনাজ একবার লোকটির দিকে একবার লোকটির ওয়াইফের দিকে তাকায়।
–‘ আই থিংক, ইউ গাইজ আর শকড্ বাই দিস? ‘
–‘ছিঃ ছিঃ এসব কি বলছেন স্যার, শকড্ কেনো হবো? আপনি বসুন না স্যার আমাদের সাথে।’
লোকটির কথায় আনাজ বসে পড়ে তার পাশে। লোকটার ওয়াইফ কিছুটা ভরকে গেছে। তিনি তার নিজেকে আড়াল করে রাখার চেষ্টায় সংযতচিত্ত।
–‘সো, উনি তোমার ওয়াইফ রাইট? ‘
–‘জ্বি জ্বি স্যার। মানে অনেকদিন থেকে কোথাও যাওয়া হয় না তো, তাই ভাবলাম কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসা যাক।’
লোকটা ফিচেল কন্ঠে বলে। তার ওয়াইফের দিকে তাকিয়ে বলে,
–‘ সানিতা, ইনি হচ্ছে ডক্টরস হ্যাড। ঢাকা শহরের একজন ফেমাস জেরিয়াট্রিশিয়ান। সানিতা নতজানু হয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে। আনাজের দৃষ্টি সানিতার দিকে আবদ্ধ।’
–‘হ্যালো সানিতা! আপনার হাজবেন্ড তো পরিচয় দিয়ে দিলো, আমি আর কি দিব। বাই দ্যা ওয়ে, খুব সুখেই তো আছেন একটা ‘ডক্টর’ হাজবেন্ড পেয়ে? ‘
চোয়াল শক্ত করে আনাজ বলে। সানিতা ফলস্বরূপ ম্লান হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে। তবে সে আনাজের দিকে একরাশ তপ্ত লজ্জায় তাকাতে পাচ্ছে না।
ইয়ানা নিজের সিটে বসে ভেবে কুল পাচ্ছে না, আনাজ সেখানে কিসের আলাপ জুড়িয়ে দিয়েছে, এখানে তো ঠিকই কাঁপছিলো? হাউ স্ট্রেঞ্জ!
–‘ স্যার, আপনি এখানে কি করছেন? কাদের নিয়ে এসেছেন? ‘
–‘তোমাকে হয়তো জানানো হয়নি। আমি রিসেন্টলি বিয়ে করেছি। ‘
–‘ তাই নাকি? দারুন সুসংবাদ দিলেন। তো এখানে হানিমুনে এসেছেন? তবে রিসোর্টটা কিন্তু খুব লাক্সারি। ‘
–‘ইয়াপ। একটা কথা বলবো রেহান? ‘
–‘জ্বি জ্বি অবশ্যই, জিজ্ঞেস করবেন না স্যার।’
–‘ ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, তোমাদের হানিমুনের পেমেন্টটা আমি করে দিবো? তোমার ওয়াইফকে নিয়ে একটু ভালোভাবে ঘুরাঘুরি করো। এখানে অনেক সুযোগ সুবিধা আছে একটা সনামধন্য রিসোর্ট হিসেবে, এন্ড সেগুলো খুব এক্সপেন্সিভ আই গেস। তো আমি চাচ্ছি…
–‘না না স্যার, আমাদের ঘুরাঘুরি শেষ মোটামোটি এসব লাগবে না ‘
–‘ কয়দিন থাকলে এখানে? ‘ (আনাজ)
—‘ এই তিন দিন তাই না? ‘
সানিতার দিকে তাকিয়ে রেহান জিজ্ঞেস করলেই সানিতা আমতা আমতা করে সম্মতিসূচক মাথা নাড়ায়।
–‘এই তিনটে দিন কিইবা দেখলে, এক কাজ করি। পেমেন্ট আমি করে দিচ্ছি তোমরা এনজয় করো। আরো কিছুদিন থাকো। হাজার হলেও তোমার ওয়াইফ তোমাকে ডাক্তার দেখে বিয়ে করেছে, একটা লাক্সারিয়াস লাইফ লিড করার জন্য। তাকেও সেভাবে চলতে দাও না!’
আনাজ কথাগুলো স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললেও সম্পূর্ণ সানিতাকে উদ্দেশ্য করে বলা। সেটা বেশ ভালো ভাবেই ধারণা করতে পেরেছে সানিতা। লজ্জায় মাথা কাটা পড়ছে তার।
–‘আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি’
বলে তড়িৎ গতিতে সেখান থেকে ছুটে চলে যায় ইয়ানা।
রেহান কিছু বোঝার ব্যার্থ চেষ্টা চালায়!
–‘ আচ্ছা শোনো, তো তোমরা এনজয় করো। আমি আর তৃতীয় ব্যক্তি না হই। পেমেন্টটা এখনি করে দিচ্ছি। তোমার ওয়াইফের খেয়াল রেখো’
রেহানের সাথে কথা শেষ করে ইয়ানার কাছে এসে বসে। ইয়ানার মুখে হাজারো কৌতুহলের ছাপ স্পষ্টভাবে এটেসেটে আছে। ইয়ানার কাছে এসে আনাজের মুখশ্রী পুনরায় ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে।
—‘ আনাজ আপনার কি হয়েছে বলবেন তো? আর ওরা কারা? ‘
ইয়ানার কৌতূহলভরা প্রশ্নে জবাব দেওয়ার মতো কিছু খুঁজে পায় না আনাজ। তবুও কোনোমতে বলে,
–‘ এই__এইতো! আমার হসপিটালের সহকারী ডক্টর।’
–‘তাহলে তাকে দেখে এভাবে কাঁপছিলেন কেনো আপনি? ‘
কাঠকাঠ গলায় বলে ইয়ানা। কিছু একটা অবশ্যই আছে যা আনাজ লুকোচ্ছে, বুঝতে পারে ইয়ানা।
–‘উহু, এসব বাদ দাও না, আচ্ছা শুনো এখানের চা কিন্তু বেস্ট হয়। ‘
–‘আমি সেটা তো জানতে চাইনি? আপনি কথা কেনো ঘুরোচ্ছেন? ‘
আনাজ কিছুটা ভরকে যায়।
–‘ আরে এমনি, অনেক দিন পর তাকে দেখলাম তো তাই হয়তো!’
–‘ তাকে বলতে? কার কথা বোঝাচ্ছেন?’
–‘ কেনো রে__রেহা_ন কে! ‘
আনাজের জড়তাপূর্ণ কথায় ইয়ানা বিচলিত হয়ে পড়ে। তবে পাল্টা উত্তর দেয় না আর।
–‘তো, কি কথা হলো? সেই সহকারী ডক্টরের সাথে? ‘
–‘ ওই আরকি এমনি খোঁজ খবর নিলাম। হঠাৎ এক সাথে দেখা হলো, তাই আর কি! তবে, তুমি এতো জেরা কেনো করছো আমাকে? যেনো আমি কোনো বড় মামলার আসামি! ‘
পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেয় আনাজ।
—‘ উত্তর দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করছি না’
–‘ ইয়ানা? রেগে আছো আমার উপর? খুব ভুল করে ফেলেছি, রেহানোর সাথে কথা বলায়? ‘
আনাজের কথাগুলো মনে যেয়ে লাগে ইয়ানার। মুহূর্তেই কঠিনতর রাগ গুলো গলে তরলে পরিণত হয়!
–‘ না না, রাগ করবো কেন? রাগ করার কোনো
কারণ আছে? ‘
প্রশান্তির হাসি হাসে আনাজ। যেটা মাত্রই দেখানো! অথচ বুকের ভেতরে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে! ইয়ানা বুঝতে পারে নি সেটা।
——
—‘কালকে সকালে আমরা ঢাকা ব্যাক করছি’
আনাজের কথায় কিছুটা অবাক হয় ইয়ানা।
–‘ মানে? গত পরশুই তো আসলাম, এতো জলদি ব্যাক করবো? ‘
–‘ হুম… আমি ফ্লাইটের টিকেট বুক করছি।’
ল্যাপটপে তাকিয়ে আনাজ বলে। সকালের পর থেকে সারাদিন ভিষণ অন্যমনষ্ক ভাবে থেকেছে আনাজ। প্রতিনিয়তই ঘামছে সে। মুখের চিন্তার রেশটা সরতেই চাচ্ছে না কিছুতেই!
ইয়ানাও হতবাক আনাজের এমন রিয়েকশান দেখে। আচানক এমন বিহেভিয়ার করার মানে কি? ভাবিয়ে তুলছে ইয়ানাকে।
#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ১৮
গাড়ি থেকে নেমেই আনাজের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে শুরু করে ইয়ানা। রিসোর্ট থেকে মাত্রই দাদুর গ্রামে ফিরলো। সেখান থেকে দাদু দিদাসহ সবার সাথে দেখা করে বিদায় নিয়ে ঢাকায় যাবে। আটটা বিশ বাজে এখন। সোয়া দশটায় ফ্লাইট। কাজেই সকাল থেকে প্রতিটিক্ষণ খুব ব্যাস্ততার মাঝে অতিবাহিত হয়েছে। চটজলদি গ্রামের ভেতরের এবড়োথেবড়ো রাস্তাগুলো পার করছে আনাজ। ইয়ানার আন্দাজ করা কঠিন হয়ে পড়ছে হঠাৎ আনাজের এমন ব্যবহার। লোকটা গতসকালের পর থেকেই কেমন আজব রিয়্যাক্ট করছেন।
ভেতরে প্রবেশের পর সবাই অবাক না হয়ে পারেন না। সবারই প্রশ্নবিদ্ধ চাহনি ইয়ানা আর আনাজে যেয়ে ঠেকেছে।
–‘কি ব্যাপার, তোরা এতো জলদি চলে এলি? তোদের যাওয়ার দু’দিনও তো হলো না বৈকি!’
আয়নার কথায় নির্বৃত্তচিত্তে আনাজ বলে,
–‘মা সেখানে থাকা আর পসিবল না, আই মিন আমার জরুরি প্রয়োজনে যেতে হচ্ছে।’
আনাজের কথার মাঝের ভেজালটা ধরতে পারে ইয়ানা। তবে শীতল দৃষ্টিতেই অপপাত মনোনিবেশ করে সে।
–‘কি এমন প্রয়োজন আছে? ‘
–‘ মা প্লিজ, আমি তোমাকে এর আগেও বলেছিলাম আমি এসবের পেছনে সময় দিতে পারবো না, আর এখনতো আর্জেন্টলি যেতে হচ্ছে। পরে না-হয় ইয়ানাকে নিয়ে আরো ভালো ট্রিপে যাবো? ‘
আনাজের কথা বোধগম্য হলো না কারোরই। তাও এক প্রকার জোড় দিয়ে বাকিরা বলে,
–‘আচ্ছা যেতে যেহেতু চাচ্ছে, যেতে দাও।এমনিতেও তোমার ছেলে খুব ব্যস্ত মানুষ। পরে না-হয় বউকে নিয়ে ঘুরে বাকিটা পুষিয়ে নিবে…
বাড়ির সবার কাছ থেকে বিদায় নেয় তারা। দাদু দিদার মন বেশ খারাপ৷ সবেই তাদের নাতি নাতবউ এলো, আবার না থেকেই যেতে হচ্ছে। ইয়ানা আর আনাজকে জড়িয়ে ধরেন দিদা। তাঁর মন চাইছে না তার নাতনিরা চলে যাক। চোখটা পানিতে চিক চিক করছে।
–‘ উহু দিদা, এভাবে মন খারাপ করে না। আমরা আবার আসবো তো! তখন তোমার সাথে অনেক দিন থাকবো। ‘ (আনাজ, ইয়ানার সাথে সুর মিলায়)
–‘ ততদিন কি আর বেঁচে থাকা হবে? ‘
দিদার কথায় মন খারাপ হয়ে যায় সবার।
–‘ এভাবে বলে না দিদা, তুমি না থাকলে আমরা কার কোলে এভাবে মাথা পেতে দিবো বলো? তুমি সবসময় আমাদের মাঝে থাকবে।’
দিদাকে ম্যানেজ করে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় আনাজ ইয়ানা। শুধুমাত্র তারাই ঢাকায় ব্যাক করছে। বাকি আনাজের বাবা মা বোন দিন কয়েক থেকে ব্যাক করবে।
এয়ারপোর্টে যেয়ে ইয়ানাকে বসিয়ে রেখে পাসপোর্ট চেক করাতে গেছে আনাজ। ইয়ানা নির্বিকারচিত্তে সীটে বসে আছে। মাথায় অঢেল চিন্তা ভাবনা ঘুরছে আনাজ কে নিয়ে। এক সময় তার পাশে এসে বসে আনাজ। পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালের উপরে জমে থাকা প্রলেপের ন্যায় বিন্দু বিন্দু ঘামগুলোকে মুছে নেয় সে। আনাজের দিকে পিটপিটিয়ে চেয়ে ইয়ানা। দৃষ্টি সরছে না তার।
–‘ আনাজ আপনি ঠিক আছেন? ‘
ইয়ানার কথায় আনাজ তার দিকে তাকায়।
–‘হ্যা ঠিক আছি তবে, হসপিটালে একটু ঝামেলা হয়েছে একটা ডিল নিয়ে তাই ফিরতে হচ্ছে।’
–‘এটা সাজানো গুছানো নিছক কোনো মিথ্যে নয় তো? ‘
ইয়ানার সন্দেহীন প্রশ্নে ঘাবড়ে যায় আনাজ। অন্যদিকে তাকিয়ে কি একটা মনে করে নেয়। অতঃপর আবার ইয়ানার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। সব কিছুই সুক্ষ্ণতার সাথে অবলোকন করে চলছে ইয়ানা। মুখে সন্দেহের ছাপটা স্পষ্ট ভাসমান।
–‘মানে? কি বুঝাতে চাইছো তুমি? মিথ্যে হবে কেনো? ‘
কোনভাবে হেসে উড়িয়ে দেয় আনাজ। ইয়ানার হৃদ মাঝারে এখনো প্রশ্নের শিহরণ বয়ে চলছে!
————————
খানিকক্ষণ বাদেই তাদের কাঙ্খিত প্লেনটি চলে আসে। যাবতীয় স্ক্যানিং শেষ করে চলে আসে তারা। প্লেনে যেয়ে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত সীটে বসে পড়ে। বরাবরের মতো ইয়ানা গ্লাসের পাশে বসেছে। কিছুক্ষণের মাঝেই প্লেনটা চলতে শুরু করে। আগে বিশাল রানওয়েটা প্রদক্ষিণ করে নিবে। তারপর ঢাকার পথে উড্ডয়ন করবে। পুরো রানওয়েটা ঘোরার অবস্থায় প্যাসেন্জারদের বিশেষ সতর্কবার্তা দিয়ে দেয়।
আনাজ নিজে সিটবেল্টটা বেঁধে নেয়। তবে, ইয়ানা কিছুতেই আটকাতে পারছে না। তারপরও ব্যার্থ চেষ্টা চালিয়ে আনাজকে বলে। আনাজ তাকে দেখে একটু হাসি দেয়। রম্যের সুরে ফিসফিসালো ভাবে বলে,
–‘ বেল্টটা বাঁধতেও হেল্প চাও? ‘
আনাজের মুখের বাঁকা হাসিটা দেখে আরো রাগে যায় ইয়ানা।
—‘ আজেবাজে চিন্তা করবেন না, যত্তসব! ‘
ইয়ানার দিকে আনাজ খানিকটা ঝুকে এলে ভরকে যায় ইয়ানা। আনাজ এবার সশব্দে হেসে ওঠে।
–‘এখন না তুমিই বললে, সীট বেল্ট বেঁধে দিতে। এখন আবার এভাবে ভয় পাচ্ছো? ‘
থতমত খেয়ে যায় ইয়ানা। আনাজ সীট বেল্টটা বাঁধতে নিলেই গোটা শরীরে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যায় তার। একটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
—
এক সময় প্লেনটা উড়তে শুরু করে। উপরে উঠতেই ইয়ানার শ্বাস আটকে যাওয়ার অবস্থা হয়। মুহূর্তেই আনাজের একহাত চেপে ধরে সে। আনাজ ফট করে ইয়ানার দিকে তাকাতে দেখে ইয়ানা ভয় পাচ্ছে। আনাজ আরো জোড়ে ইয়ানার হাত চেপে ধরে।
–‘ইায়ানা? কষ্ট হচ্ছে? পানি খাবে? ‘
অস্থিরতার কন্ঠে আনাজ প্রশ্ন করে।
–‘হ্যা দিন’
জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে ইায়ানা। বোতলের ক্যাপটা খুলে আনাজ নিজেই ইয়ানাকে পানি খাওয়িয়ে দেয়। সিপ দেয় ইয়ানা। ইয়ানার হাসফাসে দায়িত্বরত কেবিন ক্রু’রা ছুটে আশে।
—‘ ম্যাম আপনার শ্বাস নিতে অসুবিধা হচ্ছে অনুমান করতে পারছি। অনুগ্রহ করে অক্সিজেন মাস্ক আপনার নাকে এবং মুখে দৃঢ়ভাবে স্থাপন করুন। অতঃপর স্বাভাবিক ভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিন’
কেবিন ক্রুর নাবোধক মাথা নড়িয়ে ইয়ানা জানান দেয় তার এসবের প্রয়োজন নেই।
–‘ঠিক আছি আমি,’
ইয়ানার বিশেষ প্রয়োজন না থাকায় চলে যায় কেবিনকর্মীরা। আনাজের নিষ্পলক দৃষ্টি ইয়ানাতে নিবদ্ধ। হাত দিয়ে এখনো ধরে আছে ইয়ানাকে। তার বারণ করা শর্তেও।
–‘তুমি আগে কেনো বলোনি, যে তোমার প্লেনে এরকম প্রবলেম হয়? ‘ (আনাজ)
–‘ ওই আসলে এ সময় একটু ঝাঁকি লাগে তো, তাই হয়তো! ‘
ইয়ানা এবার আনাজের দিকে তাকাতেই আনাজ ইয়ানার মাথার উপর তিনবার ফু দিয়ে দেয়। আবার কি কি বিড়বিড়িয়ে পড়তে লাগে। বুঝতে সময় লাগে নি আনাজ দোআ পড়ছেন। ব্যাপারটি বেশ ভালো লাগে তার কাছে। আনাজ কতো রেসপন্সিবল হাসবেন্ড, চিন্তা করতেই মনের প্রশান্তির জোয়ার বয়ে চলছে তার।
#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ১৯
মাত্রই এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় ফিরলো ইয়ানা আর আনাজ। প্রচুর টায়ার্ড দুজনে। সেই সকাল থেকে টানা জার্নির মধ্যে ছিলো। ইয়ানার দীর্ঘ জার্নিতে শরীরটা বড্ড খারাপ লাগছে। এসে একবার শাওয়ার নিলে মোটামোটি রিফ্রেশ ফিল আসে। আনাজও মাত্রই ফ্রেশ হয়েছে। ল্যাপটপটা নিয়ে বসে পড়ে সে। ইয়ানা সিক্ত চুলগুলোকে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুখিয়ে নিচ্ছে। সরু সরু চোখের চাহনি আনাজের দিকে অবস্থিত।
চুল শুখিয়ে নিয়ে আনাজের কাছে যেয়ে বসে । আনাজের দৃষ্টি এখনো ল্যাপটপে।
–‘ এয়ারহোস্টেস গুলোকে দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন নিশ্চই? কফি চাই? ‘
ইয়ানার কথায় বোধগম্য হয় না আনজের। ল্যাপটপ থেকে চোখ ফিরিয়ে ইয়ানর দিকে তাকায়।
–‘মানে? ‘
–‘মানে ঐ যে, সুন্দরী সুন্দরী কেবিন ক্রু গুলোকে দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন। তাই ভাবলাম কফি খাবেন নাকি! ‘
শক্ত কন্ঠে ইয়ানা তার মনে থাকা রাগগুলোকে ব্যক্ত করে। প্লেন চলাকালীন ইয়ানার দৃষ্টি আনাজে ছিলো। বারবার সে একই জিনিস লক্ষ্য করে চলছিলো আনাজ ব্যাটা এয়ার হোস্টেসগুলোর দিক আড়চোখে চাইছিলো! ব্যাপারটা লক্ষ্যমান হতেই রাগে ফুসছিলো সে। তবে প্লেনে থাকায় তেমনভাবে আনাজকে বলতে পারেনি। সেটা যদি অন্য জায়গায় হতো তাহলে নির্ঘাত আনাজের কপালে শনি থাকতো!
ইয়ানার কথায় চোয়াল শক্ত করে আনাজ বলে,
–‘ কিহ? কখন আমি এয়ারহোস্টেজের দিকে দেখছিলাম? আর আমি ওদের দিকে তাকিয়েই বা কি করবো? ‘
আনাজের কথায় ইয়ানা একগাল হেসে প্রতিত্তোরে বলে,
–‘হেহ! এ যে দেখছি ভুতের মুখে রামরাম! এরপর আর কারো দিকে ওভাবে তাকাবেন না, নাহলে আপনার একদিন কি আমার একদিন, মাইন্ড দ্যাট!’
কফি বানাতে চলে যায় ইয়ানা। বিষয়টি উপেক্ষা করে আবার ল্যাপটপে মন দেয় আনাজ। এরকম অভিজ্ঞতার অভ্যেস আছে তার। মেয়েটা প্রায়শই এরকম করে। আর আনাজ ছিলো নিজের টেনশানে। নিজেই জানে না কখন কেবিনকর্মীর দিকে তাকিয়েছিলো। হয়তো বড় জোড় দু একবার চোখ পড়ে গিয়ে ভুলক্রমে। আর কোনোভাবেই সেটা ইয়ানার দৃষ্টিপাত হয়। তাই মেয়েটা রেগে আছে!
গরম গরম দুকাপ ধূমায়িত কফি নিয়ে আনাজের সন্নিকটে এসে বসে ইয়ানা। তবে কফির মগটা হাতেই ধরে রয়েছে সে। আনাজ ল্যাপটপে তাকিয়েই হাত বাড়িয়ে দেয় নেওয়ার উদ্দেশ্যে। তবে ইয়ানা চুপচাপ তার নিজের কফিতে সিপ দিয়ে যাচ্ছে। এবার আনাজ ল্যাপটপ স্ক্রিন থেকে নজর সরায়। ভ্রুক্ষেপ করে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,
–কি ব্যাপার? দাও! নাকি আবার কোনো নতুন বাহানা বানালে? ‘
আনাজের হাসি দেখে মন দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে ইয়ানার। ফট করে তার অধরজোড়া আনাজের মগে লাগিয়ে চুমুক দিয়ে কফিটাকে এঁটো করে, আনাজের হাতে ধরিয়ে দেয়।
ইয়ানার কান্ড দেখে আনাজ মাধুর্যপূর্ণ হাসি দেয়। তার গোলাপি ওষ্ঠদ্বয় ইয়ানার চুমুক দেওয়া অংশে লাগিয়ে সিপ দিয়ে তার দিকে তাকায়। ইয়ানা ফ্যালফ্যাল করে শূন্য চাহনিতে আনাজকে দেখতে মত্ত। এই লোকটা না সব জায়গায় হাইজিন খুঁজে বেড়ায়? তাহলে তার এঁটো করা কফি তো ছুয়েও দেখার কথা না, কিন্তু তিনি তা না করে তার চুমুক দেওয়া জায়গাতেই কফি পান করলেন? তাও আবার তৃপ্তি সহকারে?
ইয়ানা এসব ভাবতে ব্যস্ত কিন্তু আনাজ একদম ভাবলেশহীন ভাবে রয়েছে। ইয়ানার দিকে একবার তাকিয়ে দেখে। পরবর্তীতে তার ল্যাপটপটা বন্ধ করে, চশমাটা সাইডে থাকা কাবার্ডে রেখে দেয়।
ইয়ানার দিকে পাশ ফিরে পা গুজিয়ে বসে আনাজ।
–‘কি ব্যাপার? এমন ভনিতা ধরেছো যেনো তোমার এঁটো কফি খেয়ে মহাভারত অশুদ্ধ করে ফেললাম?’
–(……নিশ্চুপ ইয়ানা)
–‘কি হলো? এভাবে মূর্তির মতো তাকিয়ে আছো কেনো? খুব পাপ করে ফেললাম? বাই দ্যা ওয়ে, ইউ আর মাই পার্সনাল প্রোপার্টি।’
ভ্রু নাচিয়ে হাসছে আানজ। এক কথায় রম্যের হাসি যেটাকে বলে। চুপ থাকার বাঁধ ভেদ করে ইয়ানা বলে,
–‘ আপনার বলে আর্জেন্ট ডিল ছিলো? কই আপনাকে তো ব্যাস্ত বলে মনে হচ্ছে না!’
ইয়ানার সন্দিহান কন্ঠ আনাজের কর্ণকুহরে বাড়ি খেতেই কিছুটা হকচকিয়ে উঠার উপক্রম হয় তার!
–‘আচ্ছা….
আনাজ অন্যকিছু বলতে নিবে সাথে সাথে ইয়ানা বলে,
–‘প্রসঙ্গ বদলাবেন না। যেটা বলেছি সেটার উত্তর দিন’।
–‘হ্যা ডিল ছিলো তো, তবে কিছু টাইমের জন্য ব্রেক নিয়েছি।’
–‘তো এই ডিলটা তো ভার্চুয়ালি করা হচ্ছে তাই না? এটাতো আপনি সিলেটে বসেও করতে পারতেন? ‘
–‘ আই নো, তুমি আমার উপর রেগে আছো। আমাদের ফার্স্ট হানিমুন বলে কথা এতো জলদি শেষ করলাম! আচ্ছা শুনো নেক্সট বার আমরা বাংলাদেশে না বাহিয়ে কোথাও হানিমুনে যাবো, এন্ড আই প্রমিস সেখানে অনেক দিন থাকবো, এস ইউ সে…’
–‘হানিমুনের কথা আমি শুনতে চাই নি আনাজ, আপনি…
ইয়ানা সম্পূর্ণ কথা শেষ করার আগেই আনাজের ফোনের রিংটোনটা বেজে ওঠে। কল রিসিভ করেই ব্যালকোনিতে চলে যায় আনাজ।
ইয়ানা আনাজের উত্তর না পেয়ে, তার মুখে চাপা রাগের আভাসটা ফুটে রয়েছে। গজগজ করতে করতে কফি নিয়ে ড্রয়িং রুমে চলে যায়। মনে মনে পণ করে আনাজের এড়িয়ে যাওয়া ব্যাপারটা শুনে তবেই সে ক্ষ্যান্ত হবে!
চলবে,
চলবে,