এক কাপ ঠান্ডা কফি পর্ব -১৩+১৪

#এক_কাপ_ঠান্ডা_কফি
#পর্ব:- ১৩

ইমাম সাহেব চলে এসেছে। রাতের আঁধারে লাশ দাফন করা হবে তবুও প্রচুর মানুষ উপস্থিত হয়েছে মাহিশার বাড়িতে। বিয়ে করে শশুর বাড়িতে যার যাবার কথা ছিল সে আজ কদিন পরে চিরস্থায়ী মাটির ঘরের বাসিন্দা হয়ে যাচ্ছে।
যে ছেলের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল তার বাবাও সন্ধ্যা বেলা এসেছেন। সেদিনের পর থেকে তারা আর কেউ আসেননি কিন্তু আজ যেহেতু মাহিশার লাশ নিয়ে আসা হয় তাই আসতে হয়েছে।

দাফন শেষে সবাই আস্তে আস্তে চলে গেছে। যে কজন বাকি আছে তারা বেশিরভাগ আত্মীয় বা প্রতিবেশী। দারোগা সাহেব মাহিশার বাবার কাছে গিয়ে বললো,

– সাজু ছেলেটাই কি সত্যি সত্যি আপনার মেয়ে খুন করেছে?

– সবকিছু শুনে আমারও তাই মনে হচ্ছে স্যার। কারণ এছাড়া আর কেউ নেই যার কারণে আমার মেয়ে খুন হতে পারে।

– ভালো করে মামলা করেছেন? মানে কতদিনের মধ্যে ধরা পড়তে পারে।

– জানি না, তবে ছেলেটা যেহেতু ভালো সাজার চেষ্টা করছে তাই পালাবে না। মনে হয় আজকের মধ্যে ধরা পড়তে পারে।

– আপনি আমাদের মংলা থানায় গিয়ে আরেকটা মামলা করে আসবেন আগামীকাল। তারপর আমরা এখান থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য চাপ দেবো।

– দারোগা সাহেব?

– বলেন।

– আমার মেয়ে ওই ছেলেটার কি ক্ষতি করেছে যে তাকে খুন করতে হলো।

– একবার ধরা পড়ুক তারপর সবকিছু জানতে পারবেন আপনারা। আমি এখন চলে যাচ্ছি, কাল সকালে গিয়ে মামলা করে আসবেন।

– ঠিক আছে স্যার।

★★★

রাব্বি সবসময় যার কাছ থেকে অস্ত্র নেয় তার আস্তানা গাবতলী। রাব্বি প্রথমে সেখানে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে। লোকটার বয়স ৬০ বছরের মতো হবে, রাব্বির সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে ওই মন্ত্রীর কারণে।

মন্ত্রী…
হ্যাঁ মন্ত্রী।
রাব্বি সবসময় যার কথা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় সে একজন মন্ত্রী। সরকারি দলের কিছু কাজ থাকে যেগুলো তারা আইনের মাধ্যমে করতে পারে না। তখন তারা রাব্বির মতো কাউকে ঠিকই কাজ করার জন্য ব্যবহার করে। রাজনৈতিক নেতাদের কাজকর্ম বড়ই অদ্ভুত, এখানে টিকতে হলে কতো কাজ অগোচরে করতে হয়।

রাব্বির আসল নাম কেউ জানে না। অস্ত্র বিক্রি করা এই লোকটার ধারণা ওই মন্ত্রী সাহেব নিজেও হয়তো জানে না রাব্বির আসল নাম কি। নামের সঙ্গে তার কোনো কাজ নেই, তার যেটা কাজ সেটা হলেই হয়। তবে রাব্বি ছেলেটা অনার্স পাশ করে কেন এমন পেশাদার খুনির কাজ করে তার জানা নেই।
আজ পর্যন্ত রাব্বি কখনো জেলে যায়নি। না না, ভুল কথা। রাব্বি জেলে গিয়েছিল, কিন্তু সেটা লঞ্চ ডাকাতি করার জন্য। কোনো এক রাতের আঁধারে তারা লঞ্চ ডাকাতি করতে চায়। সেখানে একটা মেয়ের সঙ্গে রাব্বির যখন পরিচয় হয় নাকি আগে থেকে পরিচিত ছিল জানে না। সেই মেয়ের জন্য নাকি রাব্বি তার দলের সঙ্গে বেঈমানী করে এবং পরবর্তীতে পুলিশের কাছে ধরা পড়ে।
কিন্তু সেখানে তার নাম ছিল ” সজীব। ”
রাব্বির এসব খবর সে এই লাইনের আরেক ছোট মাস্তানের কাছ থেকে জেনেছে। কিন্তু আসল কাহিনি কেউ বলতে পারে না।

অদ্ভুত চরিত্রের এই রাব্বি তাকে একটু আগে কল দিয়ে আস্তানায় থাকতে বলেছে। আজ কালের মধ্যে আরো একজনকে মরতে হবে, আফসোস করার ভঙ্গি করলেন তিনি।
রাব্বি এসে গেছে। কোনো প্রকার কথা না বলে চুপচাপ একটা পিস্তল ফুল লোড মুহূর্তের মধ্যে চলে গেল।

গাবতলি থেকে সরাসরি সাভার চলে গেল। সে জানে এখানকার একটা ছোট্ট কাঁচা বাজারের পাশেই একটা লন্ড্রী দোকান। সেখানে গেলে আলাউদ্দীন কিংবা তার সঙ্গী কারো খোঁজ পাওয়া যাবে নিশ্চিত।

লাল একটা পাঞ্জাবি ইস্ত্রি করছিল ছেলেটা। রাব্বি তার সামনে যেতেই বললো,

– কেমন আছেন ভাইজান?

– তোর এ মাসের ঘরভাড়া বাকি নাকি?

– বুঝতে পারছি, কি জানতে চান বলেন।

– আলাউদ্দীনকে কোথায় পাবো?

– তা তো জানি না, গতকাল রাতে বাজারের মধ্যে দেখছিলাম। আজকে সারাদিন দেখি নাই।

– কার কাছে গেলে তার খবর পাবো?

– আলিফ হোটেলের মালিক বলতে পারবে তার ঠিকানা। তার সঙ্গে বেশ ভাব জমে উঠেছে ইদানীং, লোকটা নাকি কাউন্সিল নির্বাচন করবে।
দুটো টাকা হতে পারে নাই তাতেই শুরু করেছে, মনে হয় গোপন ব্যাবসা আছে।

– ঠিক আছে আমি আসি।
পকেট থেকে পাঁচ হাজার টাকা বের করে রাব্বি হাঁটা শুরু করেছে।

– রাব্বি ভাই?

– বলো।

– আলাউদ্দীন ইদানীং খুনখারাবি শুরু করেছে, তার সঙ্গে লড়তে গেলে একটু সাবধানে থাকবেন।

– আচ্ছা ঠিক আছে।

আলিফ হোটেলে মানুষ গিজগিজ করছে। রাব্বি চারিদিকে তাকিয়ে আগে কোথায় কি রয়েছে সব দেখে নিলো। তারপর মুখে মাস্ক লাগিয়ে এগিয়ে গেল মালিকের দিকে। লোকটা তাকে নিজেই ক্যাশে বসে আছে, চারিদিকে তাকিয়ে কোথায় কি দরকার নজর রাখছে।
রাব্বি ঘুরে একদম তার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। নিচ থেকে পিস্তলটা পেটে ঠেকিয়ে দিতেই লোকটা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল।

– কে আপনি? কি চান?

– আপনার সঙ্গে গোপনে কিছু কথা বলতে চাই।

– বলেন।

– এখানে নিশ্চয়ই আপনার বিশ্রাম করার আলাদা রুম আছে তাই না?

– হ্যাঁ হ্যাঁ।

– চলেন সেখানে গিয়ে কথা বলবো।

লোকটা দাঁড়াতেই রাব্বি তাকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর শরীরে পিস্তল ধরে তার সঙ্গে সঙ্গে চলে গেল একটা সাইডে। রুমের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করেই রাব্বি দরজা বন্ধ করে দিল। ভয়ে যবুথবু হয়ে বসে আছে তার সামনের লোকটা, রাব্বি আস্তে করে বললো,

– আলাউদ্দীন কোথায়?

– কোন আলাউদ্দীন?

– খুনি আলাউদ্দীন।

– আপনি কি পুলিশের লোক?

– আলাউদ্দীন এখন কোথায় আছে?

– আমি জানি না, আজকে সারাদিন তার সঙ্গে দেখা হয়নি আমার।

– কাউন্সিল নির্বাচন করতে চান?

– জ্বি।

– এসব ছোটখাট কাউকে ধরে লাভ নেই, আপনি আমার কথা শুনলে আমি আপনাকে কাউন্সিলর বানিয়ে দেবো।

– কে আপনি?

– রাব্বি।

– আ্যা…

– আলাউদ্দীনের নাম্বারে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করেন সে এখন কোথায় আছে।

লোকটা পকেট থেকে মোবাইল বের করে কল দিল, কিন্তু রিসিভ হলো না। পরপর অনেকবার কল দিয়ে রিসিভ করাতে পারলো না।

– রিসিভ করে না।

– ওর সঙ্গে যারা আছে তাদের কাউকে কল দেন।

– কারো নাম্বার নেই আমার কাছে।

– ভালো করে কথা বল নাহলে কিন্তু এখানেই লাশ বানিয়ে দেবো৷ কাউন্সিলর হওয়া তো দুরের কথা তখন কোই যাবি বুঝতে পারছিস?

লোকটা আরেকটা নাম্বারে কল দিল। কল দেবার সময় বললো,

– এর সঙ্গে আলাউদ্দীন চলে না, তবে মাঝে মাঝে সঙ্গে রাখে। তার কাছে কারো নাম্বার আছে নাকি জিজ্ঞেস করে দেখি।

কল রিসিভ করছে।
– হ্যালো ফারুক? আচ্ছা শোন, আলাউদ্দীনের সঙ্গে কথা বলা দরকার।

– এখন তো সম্ভব না, ভাই একটা কাজের মধ্যে আছে।

রাব্বির ইশারায় লোকটা জিজ্ঞেস করলো,

– কিসের কাজ?

– একটা ছেলেকে খুন করতে হবে। ছেলেটাকে সেই দুপুর থেকে চেষ্টা করছি মারার জন্য। একবার তারে আলাউদ্দীন ভাই গুলি করছে কিন্তু হালায় বাঁইচা গেছে।

– কোন ছেলে?

– তুমি চিনবা না ভাই, নদীর ওপাড়ের মানুষ। খুলনার ওদিকে বাড়ি মনে হয়। সাজু নাম।

– ওহ্, কাম শেষ করে আলাউদ্দীনকে বলবা আমার সঙ্গে দেখা করতে।

– আচ্ছা ঠিক আছে।

লোকটা মোবাইল কাটতেই রাব্বি তার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে গেল। পকেট থেকে একটা স্প্রে বের করে সেটা লোকটার মুখের দিকে তাক করে মেরে দিল।

– রাব্বি বললো, একটু পরে তুই ঘুমিয়ে যাবি কিন্তু তার আগে দরজা বন্ধ করবি। আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবো, যদি দরজা খুলে বের হবার চেষ্টা করো তাহলে শেষ।

লোকটা ততক্ষণে টলতে লাগলো। রাব্বি আরও একটু সময় দাঁড়িয়ে থেকে যখন বুঝতে পারলো সঠিক সময় হয়ে গেছে। তখনই রুম থেকে বের হয়ে গেল, কিন্তু পিস্তল এমন করে হাতে রাখলো যেন হোটেলের কেউ বুঝতে না পারে।
লোকটা সত্যি সত্যি দরজা বন্ধ করে দিল।
এটা করার কোনো দরকার ছিল না, কিন্তু লোকটা যদি আলাউদ্দীনকে সতর্ক করে দেয় তাহলে তাকে রাতের মধ্যে শেষ করা যাবে না।

হোটেলে দাঁড়িয়েই রাব্বি তার দাদাজানের কাছে কল দিল, একজন মন্ত্রী সে।

– হ্যাঁ বলো।

– সাজু ভাইকে হয়তো বাঁচানো সম্ভব না।

– কি বলো এসব?

– আলাউদ্দীন অলরেডি সাজু ভাইয়ের কাছেই আছে কিন্তু সঠিক লোকেশন আমি জানি না। আর জানলেও কিছু করতে পারবো না সেটা আপনি ভালো করে জানেন। তাছাড়া তাকে যে আমার বাঁচাতেই হবে এমনটা তো নয়।

– হুম বুঝলাম। কিন্তু তুমি কি করবে এখন?

– এখানেই অপেক্ষা করবো। আমার বিশ্বাস ওই আলাউদ্দীন যত রাতই হোক এখানে আসবে। তারপর ওর হিসাবটা মিটিয়ে এখান থেকে বের হবো।

– তোমাকে আগামীকাল আরেকটা কাজ করতে হবে তোমাকে।

– কি কাজ?

– আমার পিএস তোমার পরবর্তী টার্গেট। সে আমার সঙ্গে বেঈমানী করেছে। আমার অনেক কথা সে ওই বিরোধী পক্ষের কাছে বলে দিয়েছে।

– সবাই কেন যে বেঈমানী করে।

– মানে?

– আপনি যেমন আপনার বিরোধী পক্ষের পিএস কে টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছেন। তারপর এই-যে মেয়েটা খুন তারপর সাজু ভাইয়ের খুনের কথা সবকিছু তার কাছে জানলেন। ঠিক সেভাবে সেও হয়তো আপনার লোককে কিনে নিয়েছে।

– ওর এক এক সবগুলো আমি কিনে নেবো।

– আপনার কাছে সাজু ভাইয়ের নাম্বার আছে?

– হ্যাঁ।

– একবার কল দিয়ে দেখেন তো, বেঁচে আছে কিনা।

– সেটা জেনে কি হবে?

– যদি সাজু মারা যায় তাহলে আলাউদ্দীনের কাজ তো শেষ হয়ে যাবে। তাহলে তাড়াতাড়ি এখানে আসবে আর আমি আমার কাজটা শেষ করবো।

[ এতো রাতে পোস্ট করলাম, কতজন পড়বে জানি না। তবে তাড়াতাড়ি পোস্ট করার জন্য যদি আগের পর্বে রেসপন্স কম হয় তাহলে সবার জন্য কিন্তু কফি বন্ধ করে রাখবো। হমমমম ]
#এক_কাপ_ঠান্ডা_কফি
#পর্ব:- ১৪

সাজু আর রামিশা যে টেবিলে বসে আছে। তাদের ঠিক তিনটা টেবিল পরে গুটিশুটি মেরে বসে আছে আলাউদ্দীন। তার চোখে রাগের আগুন ঝড়ে পড়ছে, কারণ এইমাত্র রেস্টুরেন্টের মধ্যে অনেক যুবক প্রবেশ করেছে। সম্পুর্ণ রেস্টুরেন্ট এখন কানায় কানায় পরিপূর্ণ, এই মুহূর্তে গুলি করার রিস্ক নেওয়া বোকামি।
কাজের জন্য নিজেকে বিপদে ফেলার কোনো ইচ্ছে আলাউদ্দীনের নেই। দরকার হলে অপেক্ষা করবে সে, রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে বাহিরে গিয়ে সে দাঁড়িয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিলো। কারণ এখন যদি গুলি করতে যায় তবে এই যুবকদের হাতে ধরা পড়তে হবে।
একপ্রকার বাধ্য হয়ে বেরিয়ে গেল আলাউদ্দিন।

সাজুর আঘাতপ্রাপ্ত হাতের দিকে তাকিয়ে রামিশা চুপ করে রইল। ক্ষনিকের জন্য সে সাজুর প্রতি রাগ করে ছিল, পুতুল ওভাবে কথা না বললে হয়তো এমনটা হতো না।

– সাজু ভাই, যখন গুলি লেগেছিল তখন আপনি অজ্ঞান হয়ে গেছেন নাকি শ

– না, তবে তীব্র ব্যথা ছিল। গুলি লাগার পরে আমি অনেকক্ষণ স্বাভাবিক ছিলাম। পরে অবশ্য আর কিছু মনে নেই।

– আপনি কীভাবে বুঝতে পেরেছেন আমার উপর কেউ আক্রমণ করতে পারে?

– সন্দেহ হচ্ছিল। তবে তোমার উপর আক্রমণ হবার সম্ভাবনা ছিল কিন্তু সে তোমাকে হাতের কাছে পেয়েও হত্যা করেনি।

– কেন?

– ওদের দলের একটা লোক পুলিশের হাতে বন্দী। তাকে খুন করার চেষ্টা করছে তাদের কন্ট্রাক্টকারী, কিন্তু সে চায় লোকটা বেঁচে থাকুক। আমি সেই লোকটার জন্য সামান্য রক্তের ব্যবস্থা করেছি তাতেই নাকি সে তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে।

– এসব আপনি কীভাবে জানেন?

– রাব্বি কল করেছিল আমাকে।

– রাব্বি কি সেই খুনি?

– হ্যাঁ।

– আমাকে যে ছেলেটা সাহায্য করেছে তার নাম রবিউল ইসলাম। সত্যি বলতে তিনি যদি আমাকে না নিয়ে আসতেন তাহলে জানি না কি হতো।

– রাব্বি বলেছিল যে তুমি নাকি একটা ভালো ছেলের হেফাজতে আছো। তবে তিনি এতটা বেশি উপকার করবে ভাবিনি।

– আপনার উপর এমন একটার পর একটা হামলা হচ্ছে এখন কি করবেন?

সাজু এবার ছবির প্রসঙ্গে গেল। রামিশার মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো ওয়ালপেপারে সেই ছবিটি এখনো আছে।

– একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?

– করেন।

– এই ছবিটি কি তুমি কাউকে দিয়েছ? শুধুমাত্র তোমার কাছেই কিন্তু এই ছবিটি আছে, তাছাড়া আর কারো কাছে নেই।

– কেন বলেন তো?

– মাহিশা নামের মেয়েটার লাশ যে ফ্ল্যাটে পাওয়া গেছে সেখানে এই ছবিটি ছিল। সেম ছবিটি কেউ একজন কম্পিউটার প্রিন্ট করে সেখানে রেখে দিয়েছে।

– বলেন কি? আপনার ছবি সেখানে।

– তুমি ভালো করে মনে করে দেখো তো।

– ছবিটি আমার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা আছে সাজু ভাই।

– কিহহ?

– আপনি যখন অসুস্থ ছিলেন তখন আমি এটা পোস্ট করেছিলাম। তাই হয়তো আপনি দেখতে পাননি বা জানেন না।

সাজু মনে মনে ভাবলো এটা তার আগেই খুঁজে দেখা দরকার ছিল। রামিশার ফেসবুক আইডি খুঁজলেই সে জানতে পারতো।

– তারমানে খুনি তোমার আইডি থেকে ছবিটি ডাউনলোড করে নিয়েছে।

– কিন্তু কেন সাজু ভাই?

– আমাকে বিপদে ফেলতে।

– মাইগড।

– আমি তোমাকে এখান থেকে বেরিয়ে তোমার বোনের বাসায় নিয়ে যাবো। তুমি সেখানে থাকবে, দিনে বা রাতে কখনো বাসা থেকে বের হবে না।

– আমি আপুর বাসায় যাবো না।

– তাহলে?

– আপনি অসুস্থ, যেকোনো সময় বিপদে পড়তে পারেন তাই আমি আপনাকে একা এভাবে বের হতে দেবো না। আমি আপনার সঙ্গে থাকবো, যদি বিপদ হয় দুজনেই একসঙ্গে বিপদে পরবো।

সাজুর মোবাইলে একটা মেসেজ এলো। নাম্বারটা অপরিচিত কিন্তু খবরটা গুরুত্বপূর্ণ।

” রেস্টুরেন্টে আপনার শত্রু আছে, সাবধান। ”

সাজু চারিদিকে তাকাতে লাগলো। দ্রুত খাবার শেষ করালো তারা, চারিদিকে অনেক যুবকদের সে দেখতে পাচ্ছে। এদের মধ্যে কে সেই খুনি তা জানা অসম্ভব। রামিশাকে নিয়ে সাজু ভাই আস্তে করে বেড়িয়ে গেল।
লিফট ব্যবহার না করে তারা সিঁড়ি দিয়ে নামলো। মেইন গেট দিয়ে বের না হয়ে পিছনের একটা ছোট্ট গেট দিয়ে বের হয়ে গেল।

অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে আলাউদ্দীন যখন আবারও উপরে গেল তখন দেখে সেখানে কেউ নেই।

★★

সকাল বেলা সাজুর ঘুম ভাঙলো মোবাইলে কল আসার কারণে। গতকালের সেই ওসি সাহেব কল দিয়েছে, সাজু ঘুম ঘুম চোখে রিসিভ করলো।

– ওসি সাহেব উত্তেজিত হয়ে বললেন, সাজু সাহেব আপনি কোথায়?

– আমি আমার এক বড়ভাইয়ের বাসায়।

– মেয়েটার খুনিকে পাওয়া গেছে। সে গতকাল রাতে আমাদের একটা স্বীকারোক্তির ভিডিও দিয়ে নিজে আত্মহত্যা করেছে।

সাজুর চোখের ঘুম পুরোপুরি উধাও হয়ে গেল।
– কি বলছেন? রাব্বি আত্মহত্যা করেছে?

– ওর নাম তো রাব্বি না, সেই খুনিটার নাম হচ্ছে আলাউদ্দীন। খুব খারাপ মানুষ, বেশ কিছু মামলা আছে তার নামে। সে নিজের মুখে বলেছে ওই মেয়েকে সেই হত্যা করেছে। তারপর আপনার উপর আক্রমণ করা, আপনার ছবি সেই বাসায় রেখে যাওয়া সবকিছু স্বীকার করেছে।

– অসম্ভব।

– আপনি থানায় আসুন আমি আপনাকে সেই ভিডিও দেখাচ্ছি। আর সিসিটিভি ফুটেজ দেখবেন বলেছিলেন, সেটাও দেখে যাবেন।

– ঠিক আছে আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

ডাইনিং টেবিলে বসে আছে সাজু। তার সামনে লিয়াকত আলী হাসান ও তার স্ত্রী এবং রামিশা।
এই সেই লিয়াকত আলী, যার সঙ্গে সাজুর প্রথম এই রহস্য বের করার কাজে পদচারণ। লিয়াকত সাহেব ডিবিতে চাকরি করে, ঢাকাতেই থাকে।

– সাজু বললো, আমাকে আপনার অনেক সাহায্য করতে হবে ভাই। বেশ কিছু মোবাইল নাম্বারের তথ্য বের করে দিতে হবে। কাকে কল করা হয়েছে কার কাছ থেকে কল এসেছে, সবকিছু আমার জানতে হবে।

– তোমার কাছ থেকে যতটুকু জানলাম তাতে করে মামলা বেশ জটিল। কিন্তু এটাকে ডিবির দায়িত্বে দিলে মনে হয় বেশি ভালো হতো। আচ্ছা ঠিক আছে তোমার নাম্বার দিও আমি অফিসে গিয়ে বের করে দেবো।

– নাম্বার কিন্তু অনেক গুলো ভাই।

– মানে?

– ৭/৮ টা নাম্বার চেক করতে হবে। পরবর্তীতে সেই সংখ্যা বাড়তে পারে।

– ঠিক আছে হয়ে যাবে। একটু সাবধানে থেকো আর ঢাকার মধ্যে যেকোনো বিপদ হলে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানাবে।

– আচ্ছা।

– আমি জানি তুমি আমাকে জানাবে না, কারণ তুমি নিজের বিপদের কথা কাউকে বলো না।

– এবার বলবো সমস্যা নেই।

★★

পরপর তিনবার ভিডিওটা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলেন সাজু। রক্তাক্ত আলাউদ্দীন নিজের হাতে মোবাইল নিয়ে রেকর্ড করেছেন।
সে বলছে,

” বাগেরহাট থেকে ওই মেয়েকে আমিই তুলে নিয়ে এসেছি। তারপর ওই বাসায় নিয়ে গিয়ে হত্যা করে ফেলেছি কিন্তু লাশ গুম করতে পারিনি। যার সঙ্গে লাশের বিষয় কথা হয়েছে সে লাশ গুম না করে পালিয়ে গেছে। আমার ভুল হয়ে গেছে, আমার এমন মারাত্মক ভুলের জন্য আমি অনুতপ্ত। আমি আমার দোষ স্বীকার করছি, আমি জানি আমার বিচার হবে। আদালত হয়তো আমাকে ফাঁসি দিয়ে দেবে, আর সেজন্য বারবার উকিলদের কষ্ট করতে হবে। তাই আমি নিজেই আত্মহত্যা করতে চাই, আমাকে ক্ষমা করবেন। ”

চোখ বন্ধ করে চুপচাপ বসে আছে সাজু।

– ওসি সাহেব বললো, আমরা শুধু শুধু আপনাকে সন্দেহ করেছি অথচ আসামি নিজের মুখে সব স্বীকার করে নিলো।

– একটা কথা বলি স্যার।

– বলেন।

– খুনটা আলাউদ্দীন করে নাই।

– মানে?

– এটা একটা বাচ্চা ছেলেও বুঝতে পারবে যে এই রেকর্ড তাকে দিয়ে জোর করে করানো হয়েছে। আপনি ভালো করে দেখুন আলাউদ্দীন রক্তাক্ত অবস্থায় আছে। তাকে নিশ্চয়ই কেউ প্রচুর মারধর করে এমন স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়েছে।

– তাহলে খুনি?

– আমার বিশ্বাস আপনি নিজেও জানেন সেই খুনির নাম। কিন্তু আপনিও এই মামলা নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করতে চান না তাই ভিডিওটা বিশ্বাস করে এই মামলা ক্লোজ করতে চান।

– আমি জানবো কীভাবে? যদি সত্যি সত্যি জানি তাহলে তো গ্রেফতার করতাম।

– গতকাল হাসপাতালে আপনি আমার সঙ্গে কার কথা বলিয়ে দিয়েছেন? সত্যি সত্যি কি সে কোনো রাজনৈতিক নেতা, নাকি অন্য কেউ।

– আমি আপনার কথা কিছু বুঝতে পারছি না।

– আপনি ঠিকই বুঝতে পারছেন স্যার। আপনার মুখ দেখে গতকাল বেশ ভয়ে যবুথবু হয়ে গেছেন সেটা মনে হচ্ছিল। সত্যি সত্যি যদি রাজনৈতিক কোনো নেতা হতো তাহলে আপনার আরও খুশি হতেন। নেতাদের আদেশে কাজ করতে পারার আনন্দ আপনার চোখেমুখে ভাসতো।

– তেমন কিছু নয়।

– এই মামলার ঘটনায় আপনিও আমার কাছে অবিশ্বাসী হয়ে গেলেন স্যার। মংলা থানার সেই দারোগা সাহেব যেমন আমাকে মারার ষড়যন্ত্র করেছে। আপনি তেমন করে আসল লোকটাকে আড়ালে রাখতে চাইছেন।

– দেখুন আমরা আইনের মানুষ। সাক্ষী প্রমাণের উপর ভিত্তি করে সবকিছু করে থাকি। আলাউদ্দীন নিজের মুখে সব স্বীকার করেছে তাই এটাকে অবিশ্বাস করে নতুন করে তদন্তে নামা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তবে সাব্বিরের বাবাকে গ্রেফতার করার কাজ চলছে।

– উত্তর বাড্ডার যেই ফ্ল্যাটে লাশ পাওয়া গেছে সেই ফ্ল্যাটের মালিকের বাসা গুলশানে তাই না?

– হ্যাঁ।

– সেই লোকটা গতকাল কল করেছিল তাই না?

– মানে?

– আমি আপনার ফাইল দেখে জানলাম আপনি সেখানে ওই মালিকের বিষয় কোনো তথ্য লেখেন নাই। ম্যানেজারের কথা উল্লেখ আছে কিন্তু সেই বাসার মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করার কোনো চিন্হ নেই। হয়তো আপনাদের মধ্যে গোপনে কথা হয়েছে কিন্তু আপনি সেটা গোপনেই রাখতে চান।

– চুপচাপ।

– আপনার থেকে এমনটা আশা করিনি স্যার।

– ওই লোকটা খুবই ভয়ঙ্কর সাজু সাহেব। আমি চাইনা এটা নিয়ে আমার নিজের কোনো ক্ষতি হোক। আপনার ও উচিৎ নিজেকে বাঁচাতে এই মামলা থেকে বেরিয়ে যাওয়া।

– ভয়ে?

– আপনি কিন্তু প্রায় ফেঁসে যাচ্ছিলেন, তিনি যদি এই কাজটা না করতেন তাহলে আপনার এখন স্থান হতো জেল হাজতে।

– খুনটা রাব্বি করেছে এটা শিওর, তাই না?

– হ্যাঁ। কিন্তু আপনি আমি চাইলে কিছুই প্রমাণ করতে পারবো না। আপনার ভাগ্য ভালো যে তিনি আপনাকে বাঁচাতে চেয়েছেন। নাহলে শুধু রাব্বিকে রক্ষা করতেন।

– মানুষকে বিপদআপদ থেকে রক্ষা করার মালিক আল্লাহ, আমি সেই বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাবো। আমি আশা করবো আপনি তার সঙ্গে আমাকে একটু দেখা করার ব্যবস্থা করে দিবেন।

– কোনো লাভ হবে না।

– লোকসান নাহয় আমারই হোক।

সাজুর মোবাইলে কল এসেছে। ওসি সাহেবের দিকে তাকিয়ে কলটা রিসিভ করলো সাজু।

– কে বলছেন?

– আপনার বুদ্ধি সত্যি প্রশংসনীয়। আপনি সত্যি সত্যি আমার সঙ্গে দেখা করতে চান?

– হ্যাঁ চাই। আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে আপনি কোনো রাজনৈতিক নেতা নয়।

– ঠিকই বলেছেন, আমি সেরকম কেউ নয় তবে সবাই ওটাই জানে। কারণ ক্ষমতা দিয়ে আমি তারচেয়ে বেশি কিছু করতে পারি।

– আপনি ঠিক এই মুহূর্তে কীভাবে কল দিলেন?

– ওইযে বললাম, ক্ষমতা দিয়ে।

– সম্ভবত ওসি সাহেব আপনাকে কনফারেন্সে রেখে আমার সঙ্গে কথা বলছে।

– হতেই পারে। কারণ সে যদি না করে তাহলে দুদিন পরে তার কোনো আত্মীয় থাকবে না।

– আমার পরবর্তী টার্গেট আপনি।

– আমি তোমাকে সত্যিই বাঁচাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি তো আমার উপকারের কথা স্বীকার করো নাই। বরং আমার পিছনে লাগার চেষ্টা শুরু করে দেবে তাই না?

– আমি সবার উপকার গ্রহণ করি না।

– রাব্বির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাও?

– হ্যাঁ চাই।

– সদরঘাট চলে যাও। রাব্বি সেখানেই আছে, তুমি সেখানে গিয়ে যেকোনো একটা বরিশালগামী লঞ্চে উঠে পড়বে। রাব্বি সেই লঞ্চে উঠবে, তারপর সেখানে তার সঙ্গে কথা বলে নিও।

– আপনি কি আমাকে বিভ্রান্ত করছেন?

– মোটেই না, রাব্বির সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে হলে চলে যাও। তোমাকে দেখে রাব্বিও সেই লঞ্চে উঠে যাবে। একটা কথা মনে রেখো, এবার যদি রাব্বি তোমাকে লাশ বানিয়ে দেয় সেখানে আমার কোনো নিষেধ থাকবে না।
কি আশ্চর্য কান্ড, গতকাল রাব্বিকে আমি নিজে বলেছিলাম তোমাকে বাঁচাতে। আর আজ আমি নিজে চাইবো সে তোমাকে মেরে ফেলুক। অদ্ভুত।

[ আর ০২ পর্বে সমাপ্ত হবে। শুধুমাত্র এক কাপ ঠান্ডা কফির জন্য অনেক অপেক্ষা করতে হলো।
মাফ করবেন। আর আমি একটা গল্প প্রতিযোগিতার জন্য একটা ছোটগল্প লিখেছি, সেখানে আপনাদের সহযোগিতা দরকার হবে। পোস্ট করে লিঙ্ক দিলে আপনারা একটু সেখানে হাজিরা দিয়েন। ]

চলবে…

মোঃ সাইফুল ইসলাম।
চলবে…

লেখাঃ- মোঃ সাইফুল ইসলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here