এক জোড়া নুপুর পর্ব -১২

#এক_জোড়া_নুপুর (১২)

ফোনে কথা বলছে শাহান। সে ইদানীং খুবই ব্যস্ত থাকে। ভার্সিটিতেও ঠিকঠাক সময় দিতে পারে না। রাজনৈতিক জীবনটা আসলেই ভিন্ন। এখানে থাকতে হলে পাথর বনে যেতে হয়। হুট করেই এ জীবনে প্রবেশ করে ফেলল সে। তারপর থেকে রাজনীতি ধ্যানে জ্ঞানে পরিনত হয়ে গেল। কোনো মতে অর্নাসটা শেষ করল। সামনেটা ও অনিশ্চিত। হেরা সবে গোসল করেছে। চুল গুলো তোয়ালেতে মোড়ানো।
“ভাইয়া!”

মুখের শব্দগুলো শেষ হতে না হতে ছুটে এল হেরা। দু চোখ ভিজে উঠেছে। কতদিন পর ভাইকে দেখতে পেল। যদিও ওদের সম্পর্কটা খুনসুটির নয় তবু অদ্ভুত ভাবে হেসে ফেলল শাহান। আলগোছে চুলের মুঠি ধরে বলল,
“ছিঁচকাদুনে।”

চুল ছেড়ে দিয়ে চলেই যাচ্ছিল সে,তবে থেমে গেল হেরার কণ্ঠ পেয়ে।
“ভাইয়া।”

মৃদু হাসল শাহান। তারপর বোনের দিক হাত বাড়িয়ে বলল, “কি হলো?”

“এতদিনে মনে পড়ল আমাদের কথা?”

শাহান তৎক্ষণাৎ জবাব খুঁজে পেল না। ঠোঁট প্রসারিত করার ন্যায় বলল, “সবসময়ই তো মনে পড়ে।”

“তাই এতদিন পরে এলে?”

“গোসল করব,মা কে বল গরম পানি বসাতে। শীত এসে গেল।”

“এখনি বলছি।”

হেরা চলে যেতেই গায়ে থাকা কোর্ট খুলে ফেলল শাহান। আকাশে তেমন রোদ নেই। দেখতে দেখতে শীত ও এসে গেল। খানিকক্ষণ পর হেরা এল।
“ভাইয়া,ভেতরে যাও।”

হেরার কথা মতো ভেতরে এল শাহান। যাওয়ার পূর্বে কোর্টটা দিয়ে গেল। হেরা বিলম্ব না করে সাবান পানিতে ভিজিয়ে দিল। আগে হলে কখনোই করত না সে। কিন্তু এতদিন পর তার ভাই এসেছে। ভেতরে ভেতরে খুব আনন্দিত হয়ে আছে। তাই চুপচাপ করে যাচ্ছে সকল কাজ।

আজকে নির্বার একটি শো আছে। গান রেকর্ডিং এর আগে সিদ্ধান্ত ওকে দিয়ে বেশ কিছু গান গাইয়ে নিচ্ছে। এতে ওর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে। তখন গান রেকর্ডিং করলে সুফল পাওয়া যাবে। সেই জন্যেই এত আয়োজন। সুন্দর গ্রাউন পরেছে নির্বা। তাকে দেখতে বরাবরের মতোই সুন্দর লাগছে। সিদ্ধান্ত ফাইল হাতে নিয়ে নিজের রুমে কাজ করছে। সে গায়ক হলেও তাকে নানান কাজ সামলাতে হয়। আজকাল বাবার বিজনেসেও হাত লাগাতে হচ্ছে। সিদ্ধান্ত’র গুণের কারণেই আজ এত কিছু অর্জন হলো। নির্বাকে একটা রুমে বসিয়ে দেওয়া হলো। সে পুতুলের মতো সোফায় বসে ছিল। এসির হাওয়া শরীরে লাগতেই চোখ দুটো কেমন করে যেন বুজে আসে। ধীরে ধীরে মেয়েটি তলিয়ে যায় ঘুমে। সিদ্ধান্ত কাজ শেষ করে এসে দেখল নির্বা গভীর ঘুমে। তার মায়াবী মুখশ্রী নজরে আসতেই এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে দিল ওর ঠোঁটে। ধীর কণ্ঠে ডাকতেই চোখ খুলল মেয়েটি। সিদ্ধান্তকে দেখে এক প্রকার ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
“সরি। আমি কখন ঘুমিয়ে পড়লাম। একদমই বুঝতে পারি নি।”

“খুব অন্যায় করে ফেলেছ।”

“সরি।” মিইয়ে এল নির্বার কণ্ঠ। সিদ্ধান্ত বেশ মজা পেল। নির্বার কিছুটা কাছে এসে একটু নিচু হলো।
“আর ইউ আপসেট গার্ল?”

নির্বা কেবল মাথা নাড়াল। সে আসলেই দুঃখিত বোধ করছে। সিদ্ধান্ত চমৎকার শব্দে হাসল। এতে অবশ্য নির্বা লজ্জা পেল। কেমন করে ঘুমিয়ে পড়ল সে?
“ইটস নর্মাল। যে কেউ ঘুমিয়ে যেতেই পারে। এতে মন খারাপের কিছু নেই। মনে থাকবে?”

“হুম।”

সিদ্ধান্ত কথার ফাঁকে কিছু কাজ সেড়ে নিল। নির্বা তখনো দাঁড়িয়ে। ছেলেটার শরীর থেকে তীব্র এক পারফিউমের ঘ্রাণ আসছে। এতে করে শরীর মন কেমন ছন্নছাড়া হয়ে যাচ্ছে। সেসব সিদ্ধান্ত’র নজর এড়াল না। সে মৃদু হেসে বলল, “সময় হয়ে গেছে। আসো বের হব।”

টিভিতে লাইভ শো বিধায় হেরা বসেছে মুড়ি মাখা নিয়ে। গতকাল নির্বার সাথে তার কথা হলো। মেয়েটি এত পরিশ্রমী যা বলার বাহিরে। হেরা তো ধরেই নিয়েছে,ভবিষ্যৎ এ তরুণ ও জনপ্রিয় গায়ক সিদ্ধান্ত হক কে টেক্কা দিবে নির্বা। যদিও তার এই ভাবনার কোনো মানে নেই। সিদ্ধান্ত হচ্ছে সুপার স্টার। আর নির্বা সবে গান শুরু করেছে। তবু কখন কি হয় কে বলতে পারতে। এইতো গত সপ্তাহে একটা নিউজে নির্বাকে নিয়ে কি সুন্দর কথা বের হলো। সেসব পড়ার পর থেকে হেরা বিচলিত হয়ে আছে। সে নিজেও নির্বার কণ্ঠের ভক্ত। সিদ্ধান্ত’র সাথে নির্বার যুগল গান হলে বেশ ভালো হবে। সে গানের সুরে কল্প থেকে বের হলো। নির্বার গান শুরু হয়ে গেছে। উত্তেজনা নিয়ে দেখছে সে। শাহান সবে ভাত খেয়ে উঠেছে। হেরার মনোযোগ আর নির্বার কণ্ঠ পেয়ে সে নিজেও এল।
“ভাইয়া,দেখ নির্বা গাইছে।”

“হুম। বেশ ভালো গায়।”

“আমি তো ভেবেছি ও সিদ্ধান্ত হক কে টেক্কা দিবে একদিন।”

“দিতেও পারে।”

“কিন্তু একটা কথা বলতেই হয়। সিদ্ধান্ত হক না থাকলে নির্বার গানের জগৎ দেখাই হতো না। ইস ওর ভাগ্যটা বড়ো ভালো।”

“হুম।”

শাহানের কল আসায় সে মাঝ পথেই উঠে গেল। হেরা পুনরায় টিভিতে নজর দিল। গান শুনতে শুনতে বিভোর হয়ে পড়ল সে।

গান শেষ হতেই হোস্ট বললেন, “ওয়াও। বাস্তবে কত সুন্দর আপনার কণ্ঠটা!”

“থ্যাংকস।”

হোস্ট এবার সিদ্ধান্ত’র দিকে তাকাল। সিদ্ধান্ত মিটিমিটি হাসছে। নির্বা বেশ নার্ভাস ফিল করছে। বেচারির হাত কাঁপছে। প্রথমবারের মতো টিভি চ্যানেলে এসেছে সে।
“সিদ্ধান্ত হকের কণ্ঠে একটা গান হোক?”

“আমার গান তো সর্বদাই শুনেন। আজ নির্বার গান হবে শুধু।”

“বেশ তো। একেই বলে দায়িত্ব। দর্শক দেখছেল তো নিজে তরুণ গায়ক হয়েও আরেকজনকে গড়ে তোর সব দায়িত্ব নিয়েছে সিদ্ধান্ত হক। এই বিষয়ে আপনাদের কি মতামত? ম্যাসেজ করে জানাতে পারেন স্ক্রিনে থাকা নাম্বার গুলোতে।এবার আসি আজকের আর্কষণ মিস নির্বার কাছে,আপনি এবার কোন ক্লাসে পড়ছেন?”

“একাদশ শ্রেণি।”

“গ্রেট। একজন একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিল্পীর কণ্ঠ এতটা পরিপক্বতা আসলেই প্রশংসনীয়। আমরা আপনার দ্বিতীয় গান শুনব তার আগে দর্শকদের ম্যাসেজ দেখে আসি।”

নির্বা মৌন রইল। চোখের ইশারায় শক্ত থাকলে বলল সিদ্ধান্ত। নির্বাও একই ভাবে বুঝাল সে ভীষণ অস্বস্তি বোধ করছে। এই সময়ে দারুণ কাজ করল সিদ্ধান্ত। নিজের সিট থেকে উঠে এসে নির্বার পাশে এসে বসল। ধীর কণ্ঠে বলল, “গার্ল,ইউ ক্যান ডু এভরিথিংক। শক্ত থাক,আমি আছি তো।”

কিছু সময় পর হোস্ট বললেন, “দর্শকদের কাছ থেকে দারুণ একটা প্রস্তাব এসেছে। আমরা এতদিন যাবত মিস নির্বার কণ্ঠে প্রয়াত শিল্পী কিংবা এইজি শিল্পী অথবা তরুণ শিল্পী দের গান শুনে এসেছি। কিন্তু কখনোই বর্তমান সময়ের হার্টথ্রব সিদ্ধান্ত হকের গান শুনি নি। দর্শকদের দাবি সিদ্ধান্ত হকের একটি গান হোক আপনার কণ্ঠে।”

নির্বা চমকে তাকাল। সিদ্ধান্ত’র গান গাওয়ার মতো সাহস নেই তার বুকে। তার উপর মানুষটা ওর নিকটে বসে। সে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। এদিকে হোস্ট কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ল। সিদ্ধান্ত দেখল নির্বা কাঁপছে। ভয় পাচ্ছে মেয়েটি। ওকে ভরসা দিতে সিদ্ধান্ত বলল, “মনে কর এটা তোমার সবথেকে বড়ো পরীক্ষা। আমি জানি তুমি পারবে।”

সিদ্ধান্ত’র দেওয়া ভরসা গুলো নির্বার উফর বিস্তর প্রভাব ফেলে। ছেলেটা ছায়ার মতো যত্ন নেয় ওর। এই যে আজকে গান গাইল,দারুণ হয়েছে। সবটাই তো সিদ্ধান্ত’র জন্য। ছেলেটা পাশে বসে থাকলেও চোখ ফোনের পানে। মন দিয়ে কিছু একটা দেখছে সে। চোখে অসম্ভব রকমের দ্যুতি। মায়া,ভালোবাসা যেন ঠিকরে পড়ে।
“ভাইয়া।”

“ডোন্ট কল মি ভাইয়া। সিদ্ধান্ত বলে ডাকবে।”

নির্বা ছোট ছোট করে তাকাল। এত বড়ো মানুষটার নাম ধরে ডাকতে কেমন যেন লাগে তার। সিদ্ধান্ত এখনো ফোনে তাকিয়ে। কথাটা ফোনে নজর রেখেই বলেছিল। কি এমন দেখছে সে? সময় চলে গেলেও যখন নির্বা কিছু বলল না তখন সিদ্ধান্ত ফোন রাখল। ওর দিকে ফিরে বলল, “হ্যাঁ। বলো,কিছু বলতে চাইছিলে তুমি।”

“ধন্যবাদ বলার জন্য। আপনি সবসময় আমায় আগলে রাখেন। সত্যি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হয়।”

জবাবে মৃদু হাসল সিদ্ধান্ত। বাইরের বাতাসে চুলগুলো হাল্কা আন্দোলিত হচ্ছে। ছেলেটার হাসি অসম্ভব সুন্দর। এই হাসি যেমন নারীর হৃদয় কে খু ন করে দিতে পারে ঠিক তেমনি ভাবে জাগাতে পারে অসীম সম্মান ও শ্রদ্ধা।

**পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা। এই পবিত্র মাসে নিজেকে ডুবিয়ে রাখুন আল্লাহ’র ইবাদতে। সকলের মোনাজাতের এক কোণে আমাকে রাখার অনুরোধ।**

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here