#আইরাত_বিনতে_হিমি
#এক_বুক_ভালোবাসা
#পর্বঃ০৫
মাথার উপরের সূর্যটা আজ মনে হয় বেশিই তেজ দেখাচ্ছে। পিচঢালা রাস্তায় সূর্যের আলো চিকচিক করছে। গাছের পাতা একটুও নড়ছে না। চারদিকে গরম হাওয়া। পূর্ণা রশীদ চৌধুরীর সাথে স্কুলে এসেছে। সেখানে এসেই ঘেমে নেয়ে সে একাকার হয়ে গিয়েছে। রশীদ চৌধুরী পূর্ণাকে প্রথমে অফিস রুমে নিয়ে যায়। তারপর হেডমাস্টরের সাথে পূর্ণার পরিচয় করিয়ে দেয়। পূর্ণা সালাম দেয়। রশীদ চৌধুরী ফরম ফিলাপ করে টাকা জমা দেয়। হেডমাস্টার পূর্ণাকে নিয়ে তার ক্লাস রুমে যায়। তারপর সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। ক্লাসের শিক্ষক পূর্ণাকে সামনের একটা বেঞ্চে বসিয়ে দেয়। তারপর ক্লাস শুরু হয়। রশীদ চৌধুরী পূর্ণাকে রেখে চলে আসে। শিক্ষক ক্লাস নেওয়াতে ব্যস্ত। পূর্ণার পাশে বসা একটা মেয়ে পূর্ণাকে বলে,
– তোমার নাম কি?
পূর্ণা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
– আমার নাম পূর্ণা। তোমার নাম কি?
– আমি সাবা। তুমি রশীদ মামর কি হও?
পূর্ণা একটু ভেবে বলে,
– আমি ওনার মেয়ে।
সাবা একটু হাসার চেষ্টা করে বলে,
– মিথ্যে উনি আমার আপন মামা। আমি জানি উনার কোনো মেয়ে নেয়। সত্যি বলো।
পূর্ণা একটু থতমত খেয়ে যায়। কি বলবে। তখন ক্লাসের বের পড়ে যায়। ক্লাস শেষ সবাই শ্রেণি কক্ষ থেকে বেড়িয়ে যায়। ক্লাসে প্রবেশ করে কৌশিক। কৌশিককে দেখে পূর্ণা হাসে। কৌশিক পূর্ণার কাছে এসে সাবার মাথায় গাট্টা মেরে বলে,
– কিরে পূর্ণা এখানে কি করিস। চল বাহিরে চল।
সাবা বিরক্তি হয়ে বলে,
– কৌশিক ভাই আমায় মারলে কেন?
কৌশিক একটু ভাব নিয়ে বলে,
– তোকে মেরেছি। সরি রে আমি তোকে মারতে চায়নি। আমি তো আমার বোনকে মারতে চেয়েছিলাম পূর্ণাকে।
– মিথ্যে বলছো কেন তোমরা। তোমাদের যে বোন নেয় তা কিন্তু আমরা সবাই জানি।
কৌশিক পূর্ণার দিকে তাকিয়ে বলে,
– মায়ের পেটের বোনই বোন হয় না। অনেক সময় আত্মার সম্পর্ক থেকেও অনেক কিছু হয়। পূর্ণার সাথে আমাদের আত্মিক সম্পর্ক বুঝলি।
সাবা ঠোট টা গোল করে বলে,
– ও।
– তুই কি মজা নিচ্ছিস।
– না কৌশিক ভাই মজা নিবো কেন? আমি আহির ভাইয়ের কাছ থেকে শুনেছি ওহ তোমার বন্ধু। ওকে তুমি নিয়ে এসেছো।
– তাহলে তো সবই জানিস। আবার জিঙ্গাসা করছিস কেন? এখন সর আমাদের যেতে দে।
কথাটি বলে কৌশিক পূর্ণার হাত ধরে সেখান থেকে চলে যায়। আর সাবা রাগ করে বলে,
– আমি কি বুঝি না। তোমার সাথে ওর কিসের সম্পর্ক। আমি যদি কোনোদিন শুনি ওহ তোমার। তাহলে কিন্তু আমি তোকে খুন করবো কৌশিক।
সাবাকে এইভাবে ফুসতে দেখে ওর বন্ধু ইশানী বলে,
– কিরে সাবু এই ভাবে ফুসছিস কেন?
সাবা ইশানী ধমক দিয়ে বলে,
– ইশানী কতদিন বলছি আমায় সাবু বলবি না। আমার নাম সাবা।
– আচ্ছা ঠিকাছে কুল বেপস। এত রেগে আছিস কেন?
সাবা বাঘীনিদের মতো বলে,
– কৌশিক এমন টা কেন করলো। আমায় উপেক্ষা করলো। চলে গেলো ঐ পূর্ণা নামের মেয়েটার সাথে।
ইশানী একটা চিপসের প্যাকেট ছিড়ে বলে,
– তোর কি মনে হয় সাবা। কৌশিক ভাই প্রেমে পড়ছে ঐ পূর্ণার।
– জানি না শুধু জানি ওহ ঐ মেয়েকে ওদের বাসার নিয়ে আসছে। আর মামী মনি ওকে নিয়ে নাচছে। আমার ভালো লাগে না।
– দেখ সাবা কৌশিক ভাই যদি ঐ মেয়ের প্রেমে পড়ে তাহলে আমি ঘটনাটা স্বাভাবিক ভাবে নিব। আর যদি প্রেমে না পড়ে তাহলে আমি বেশ অবাক হব।
– মানে।
– মানে খুব সহজ। পূর্ণা আগুন সুন্দরী ওর প্রেমে যেই ছেলে পড়বে না সে তো ছেলের কাতারেই নেয়। শোন সাবা আমি মেয়ে হয়ে ওর রূপে মুগ্ধ।
সাবা বিরক্ত হয়ে বলে,
– ফালতু কথা বাদ দে। আমি যদি জানি ওহ আমায় ভালোবাসেনা। তাহলে ওর খবর আছে। খুন করবো আমি ওকে।
ইশানী সাবার মাথায় গাট্টা মেরে বলে,
– বোকার মতো কেন কথা বলছিস সাবা। কৌশিক ভাই কি তোকে কখনো বলছে সে তোকে ভালোবাসে। তাহলে তুই কেন মনে মনে মন কলা খাচ্ছিস।
– কেন খাব না কেন খাব না শুনি। কৌশিকের আমায় প্রতি কেয়ার। আমার কিছু হলে ওর অস্থিরপনা। কলেজে কেউ কিছু বললে তাকে মারা। সব কিছু কি শুধু এমনি এমনিই ছিলো বল। ও যে আমায় চোখে হারাতো।
– জানি না হয়তো বোন হিসেবে কেয়ার করছে।
– বোন হিসেবে কেয়ার কই রাফাত ভাই, রিয়ান ভাই, আহির ভাই ওরা তো এমন করে না। তাহলে কৌশিক ভাইই কেন বল।
– থাম সাবা তোর প্রশ্নের জবাব এক মাত্র কৌশিক ভাইই দিতে পারবে।
সাবা আর কিছু বলে না। সে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে মাঠে চলে যায়। তার পেছন পেছন ইশানীও আসে। কিন্তু সাবা ইশানীকে ধাক্কা মেরে অন্য কোথাও ফেলে দেয়। ইশানীও বিরক্তি নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। সাবা মাঠে একা একা বসে আছে। মনের মধ্যে উঠেছে ঝড়। এই ঝড় যেসে ঝড় নয়। এই ঝড় ভালোবাসা হারানো ঝড়। ভয় হচ্ছে সাবার যদি কৌশিককে হারিয়ে ফেলে। যেদিন থেকে ভালোবাসা বুঝে সেদিন থেকে কৌশিকেই ভালোবেসে এসছে। কৌশিক তার অভ্যাস। কৌশিক তার নিত্যদিনের সঙ্গী। কৌশিক তার প্রেম। গান যেমন তাল ছাড়া শূন্য তেমনি সাবাও কৌশিক ছাড়া শূণ্য। কথাগুলো ভেবে সাবার কান্না পাচ্ছে। সে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। হ্যা সে পূর্ণার মতো সুন্দর নয়। তাই বলে সে তো অসুন্দর ও নয়। সে মানে পূর্ণা রূপবতী। কিন্তু সেও তো কম না। তাহলে কেন পূর্ণা। সে নয়। সাবা এইবার হাটুর মধ্যে মুখ গুজে কান্না করছে। দূর থেকে ইশানী সবটা দেখে তারও খুব কষ্ট হয়। তার বেষ্টুটা যে কৌশিক ভাইকে খুব ভালোবাসে। কাকে বলে সবকিছু ঠিক করবে সে। হ্যা পেয়েছি পূর্ণা। পূর্ণার চোখে সে কৌশিক ভাইয়ের জন্য ভালোবাসা দেখেনি। যদিও সে শিউর না কৌশিক ভাই পূর্ণাকে ভালোবাসে। সম্পূর্ণ ঘটনা পূর্ণার কাছে জানতে হবে। ইশানী পূর্ণাকে খুজতে খুজতে ক্যান্টিনে চলে আসে। যেখানে পূর্ণা, কৌশিক, ঐশী,রাফি, মিতা, কায়েস। সবার হাতেই ফুচকার প্লেট। ওরা সবাই হাসাহাসি করছে আর আড্ডা দিচ্ছে। ইশানী গিয়ে ওদের পাশে দাড়ায়। তখন ঐশী ওকে খেয়াল করে বলে,
– ইশানী কিছু বলবে?
ইশানী একটু হেসে বলে,
– কৌশিক ভাই আমি কি একটু পূর্ণাকে নিয়ে যেতে পারি।
কৌশিক ভ্রু কুচকে বলে,
– কেন?
পূর্ণা কৌশিককে ধমক দিয়ে বলে,
– তুই কেন মাথা ঘামাচ্ছিস। আমার ক্লাসমেট যেহেতু আমায় ডাকছে নিশ্চয় কোনো কারণ আছে। তুই বস আমি আসছি। চলো।
কৌশিক পূর্ণার হাত ধরে বলে,
– পূর্ণা কোনো সমস্যা হলে আমায় বলিস।
পূর্ণা হেসে বলে,
– অবশ্যই।
পূর্ণা ইশানীর সাথে চলে আসলে। ইশানী পূর্ণাকে বলে,
– তুমি পূর্ণা।
– হ্যা। কিন্তু তোমার নাম কি?
– আমার নাম ইশানী। আচ্ছা তুমি কি করে জানলে আমি তোমার ক্লাসমেট।
– ওহ। তখন আমি তোমাকে আমার ক্লাসে দেখলাম তো তাই ভাবলাম।
– ওহ। তুমি তো জিঙ্গাসা করলে না আমি তোমার নাম জানলাম কি করে?
– তখন তো স্যারই আমার নাম বলে দিলো।
– ওহ হ্যা। আচ্ছা চলো ঐ বটতলায় আমরা বসি।
পূর্ণা আর ইশানী বট গাছের নিচে বসে পড়ে। ইশানী পূর্ণার দিকে তাকিয়ে বলে,
– পূর্ণা তখন তোমাকে আমার বন্ধু সাবা একটা প্রশ্ন করেছিল?
– তোমার বন্ধু সাবা কে?
– ঐ যে কৌশিক ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করলো।
– ওহ। ওর নাম সাবা।
– হ্যা ওহ কৌশিক ভাইয়ের ফুপাতো বোন।
– আর তুমি ওর বন্ধু।
– হ্যা। পূর্ণা আমি তোমাকে কিছু বলতে চায়। তুমি মনোযোগ দিয়ে শুনবে কথাগুলো। এরপর যদি মনে হয় সত্যিটা বলার তাহলে বলবে অন্যথায় তোমার ইচ্ছে।
– বন্ধু ভেবে বলো।
– বন্ধু বললে বলে সাহস পেলাম। পূর্ণা তাহলে তোমাকে আমি তুই করে বলি। সুবিধা হবে আর কি?
– ঠিকাছে বলো।
– না না তুই আমাকে তুই করে বল। নাহলে আমার অসস্তি হবে।
– আচ্ছা বল।
ইশানী পূর্ণার হাত ধরে বলে,
– আমার বন্ধু সাবা। ছোট বেলা থেকে কৌশিক ভাইকে পছন্দ করে। কৌশিক ভাইও সাবার অনেক কেয়ার করে। আগলে রাখে। তার ছোট ছোট যত্ন সাবার মনের মধ্যে দোলা দিয়েছে। সেই দোলা এখন ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু কৌশিক ভাই কখনো সাবাকে বলেনি সে সাবাকে ভালোবাসে। কিন্তু ওর ছোট হৃদয় তার আগলে রাখাগুলোকে ভালোবাসা ভেবে নিয়েছে। আজ সকালে কৌশিক ভাইয়ের খালাতো ভাই আহির ভাই এসেছিল কলেজে। এসে বলে গিয়েছে কৌশিক ভাই নাকি একটা মেয়েকে বাড়ি নিয়ে এসেছে। যার সাথে কৌশিক ভাইয়ের অনেক সখ্যতা। যা কিনা সাবার মনের কষ্টের কারণ। সে খুব রেগে যায়। মনে অভিমান যানে। তার মধ্যে আজ নিজে থেকে দেখলো কৌশিক ভাইয়ের তোমার প্রতি এত টান। যা কিনা ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। ঐ দেখো( হাত দিয়ে দেখিয়ে ) আমার বন্ধুটা মাঠে বসে মুখ গুজে কান্না করছে। ওর মনে কৌশিক ভাইকে হারানোর ভয় জেগেছে। এইবার তুমি আমায় বলো তোমার সাথে কৌশিক ভাইয়ের সম্পর্ক কতদূর এগিয়েছে।
ইশানীর কথা শুনে পূর্ণা উচ্চস্বরে হেসে উঠে। যা দেখে ইশানী ভরকে যায়। এখানে হাসার কি হলো। পূর্ণা হাসি কিছুতেই থামছে না। সে কোনো রকমে হাসি আটকে বলে,
– তোমার বন্ধু খুব বোকা। বোন কখনো প্রেমিকা হতে পারে। সরি তুমি বলে ফেললাম।
– সমস্যা নেয় কথার মাঝে আমিও তোমাকে তুমি বলেছি। যাই হোক তুই আমার বন্ধুকে বোকা বললি কেন?
পূর্ণা উঠে দাড়ায়। বলে,
– চল সাবার কাছে যায়।
কথাটা বলে পূর্ণা সাবার কাছে আসে। সাবা এক ধ্যানে আকাশ দেখছে। পূর্ণা সাবার পাশে বসে বলে,
– সাবা।
কারো ডাকে সাবা তার পাশে তাকায়। পূর্ণাকে দেখে তার মাথাটা গরম হয়ে যায়। সে চিৎকার করে বলে,
– তুমি এখানে কি চাও?
পূর্ণা সাবার হাতটা ধরে বলে,
– কুল। আমি তোমায় কিছু বলতে এসেছি। আমার কথাগুলো আগে শুনো। পড়ে নাহয় রিয়েক্ট করবে।
সাবা কিছু বলে না। শুধু পূর্ণার কাছ থেকে হাতটা সরিয়ে নেয়। পূর্ণা মুচকি হাসে। সে বলতে শুরু করে,
– ইশানীর কাছ থেকে শুনলাম কৌশিককে ভালোবাস কথাটা সত্যি।
– তোমায় বলবো কেন?
– আমায় বলেই দেখো। শোন সাবা কৌশিক আর আমার সম্পর্কে তুমি যা শুনেছো তা ভুল নয়। তবে ওর আর আমার সম্পর্ক শুধু বন্ধুত্বে আটকে আছে। তাছাড়া আমি ওর বোন। ওহ আমায় বোনের নজরেই দেখে। যদি আমি কোনোদিন বুঝতে পারি এর থেকে বেশি কিছু ওহ আমার কাছে আশা করে। তাহলে আমি তোমায় কথা দিচ্ছি। সেদিন চৌধুরী বাড়িতে আমার শেষ দিন হবে। আমি চলে যাব কৌশিক ওহ তার পরিবার থেকে অনেক দূরে।
সাবা পূর্ণার দিকে তাকিয়ে বলে,
– সত্যি বলছো।
– সত্যি আমার কৌশিকের প্রতি কোনো অনুভূতি কাজ করে না। শোন সাবা আর একটা কথা বলি তোমায় যা আমি কখনো কৌশিককেও বলিনি। সাবা আমিও কাউকে ভালোবাসতাম সে আমায় ছেড়ে চলে গিয়েছে। আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাই আমি জানি ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রণা কতটুকু। তাই আমি বলছি স্বজ্ঞানে থাকতে আমি তোমায় কখনো কষ্ট দিবো না। তোমার ভালোবাসা তোমার কাছ থেকে কেড়ে নিবো না।
সাবা এইবার আবেগে আপ্লুত হয়ে পূর্ণাকে জরিয়ে ধরে। কান্না করে বলে,
– আই এম সরি পূর্ণা। আমি তোমায় ভুল বুঝেছিলাম। কিন্তু তুমি অন্যরকম। একদম আলাদা সবার থেকে। বন্ধু হবে আমার।
পূর্ণা হেসে বলে,
– অবশ্যই।
দুপুর অবধি ক্লাস করে ক্লান্ত শরীরের পূর্ণা বাড়ি ফিরে। পূর্ণাকে দেখে বনুলতা এগিয়ে আসে। তারপর আঁচল দিয়ে মুখের ঘাম মুছে দিয়ে বলে,
– প্রথম দিন কেমন ছিলো মা।
পূর্ণা হেসে সোফায় বসে বলে,
– আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো ছিলো। জানো মামনি। আমার স্কুলে সাবার সাথে পরিচয় হয়েছে।
– তাই হবেই তো সাবা তো তোর সাথেই পড়ে। কৌশিকের সাথে দেখা হয়েছে।
– হ্যা হয়েছে। আমি প্রথমে কৌশিকের সাথে পড়ে সাবার সাথে ছিলাম। সাবা এখন থেকে আমার বন্ধু।
– যাক ভালো। তুই বস আমি তোর জন্য লেবুর শরবত নিয়ে আসি। গরমে একদম ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছিস।
বনুলতা শরবত নিয়ে আসলে। পূর্ণা শরবত শেষ করে। তারপর বনুলতা বলে,
– স্কুল বাসে এসেছিস তো।
– হ্যা স্কুল বাসেই এসেছি।
– আচ্ছা যা ফ্রেশ হো গিয়ে। আমি খাবার দিচ্ছি।
– আচ্ছা মামনি।
পূর্ণা ধুপধাপ পা ফেলে উপরে চলে যায়। বনুলতা হেসে দিয়ে বলে,
– পাগলি মেয়ে।
পূর্ণার আজ অনেক শান্তি লাগছে। কত সুন্দর জীবন তার। থাক না কিছু ব্যথা সেগুলো নাহয় সে নাই আর খুচালো। এত সুন্দর পরিবার যেখানে সে পেয়েছে সেইখানে ঐসব কথা বাদ দেওয়াই ভালো। পূর্ণা ছাদে দাড়িয়ে কথাগুলো ভাবছিলো। পূর্ণা দুপুরের খাবার খেয়ে একটু ঘুমিয়ে আছরের নামাজ পড়ে আচারের বোয়াম নিয়ে ছাদে এসেছে। এখন সে আচার খাচ্ছে আর টোকে চোখ মুখ কুচকে ফেলছে। তার চোখ কুচকানোর ভাব দেখলে যেই কেউ তার প্রেমে পড়ে যাবে। হঠাৎ ছাদে প্রবেশ করে রাফাত। ছাদে সে এসেছে তার ফুলগাছের যত্ন নিতে। কিন্তু এসে দেখে পূর্ণা গোলাপ গাছের দুটো ফুল ছিড়ে তার লম্বা চুলে গাথার চেষ্টা করছে। যা দেখে রাফাতে মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায়। সে গম্ভীর কন্ঠে পূর্ণাকে বলে,
– ফুল গাছেই সুন্দর মাথায় নয়।
কারো গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে পূর্ণা পেছনে তাকায় দেখে রাফাত। রাফাতকে দেখে তার ভয় হয়। তবুও সাহস নিয়ে বলে,
– ভুল ফুল গাছেই সুন্দর হাতে নয় এইটা হবে। বলতে জানেন না বলেন কেন?
রাফাতের এইবার আরও রেগে যায়। রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে এসেছে। সে হাতে থাকা কাঁচিটা ছুড়ে মারে পূর্ণার দিকে। পূর্ণা ভয়ে চোখ মুখ খিচে ফেলে। কিন্তু কাঁচিটা পূর্ণার লাগে নি। পূর্ণার বাপাশ দিয়ে চলে গিয়েছে। যা দেখে পূর্ণার সস্তির নিঃশ্বাস নেয়। রাফাত চিল্লিয়ে বলে,
– কি ভাবছো। টার্গেট মিস করছি একদম না। ইচ্ছে করে সাইট কাটিয়েছি। শুনো পূর্ণাবতি আমার কাজেকর্মে ইন্টারফেয়ার করবে না। নাহলে কিন্তু খুব বাজে হবে।
পূর্ণা একটু এগিয়ে এসে বলে,
– আমার নাম পূর্ণা পূর্ণাবতি না। আর আমি আপনার কাজে হস্তক্ষেপ করি নি।
রাফাত রেগে গিয়ে পূর্ণার দিকে দুকদম এগিয়ে গেলে পূর্ণা দুকদম পিছিয়ে যায়। রাফাত ধমকে বলে,
– বাচাল মেয়ে। একদম বেশি কথা বলবে না। তুমি আমার কাজে হস্তক্ষেপ করোনি তো কি করছো। এইখানে কেন আসছো। এই ছাদ আমার আন্ডারে থাকে। তুমি ছাদে কি করো। আর আমার গাছের ফুল তোমার হাতে কেন?
পূর্ণা তুতলিয়ে বলে,
– কো কো কই। আর আমি কি জা জানতাম নাকি এই গাছ আপনার। জানলে কখনো ফুল নিতাম না। রাক্ষস একটা।
রাফাত পূর্ণার বাহু চেপে বলে,
– কি বললে তুমি আমি রাক্ষস। তোমাকে আমি।
কথাটা বলে রাফাত পূর্ণাকে ছাদে থেকে ধাক্কা দেয়। পূর্ণা ছাদ থেকে পড়ে যেতে নিলে রাফাত আবার ধরে ফেলে। পূর্ণার সারা শরীর নিচে ঝুলে আছে। আর রাফাত তার হাত ধরে আছে। পূর্ণা ভয়ে চোখ বুজে আছে। মনে মনে লা ইলাহা ইল্লাহ পড়ছে। রাফাত একটু ভাব নিয়ে বলে,
– আর রাফাত চৌধুরীকে রাগাবা।
পূর্ণা দ্রুত বলে,
– কখনোই না।
– এখান থেকে ফেলে দেয়।
– এই না আমি মরে যাব। প্লিজ আমাকে উঠান।আমাকে মারবেন না। আমায় মারলে আপনি জেলে যাবেন। তখন আপনার বউ আপনাকে বিয়ে করতে না পেরে খুজবে। আপনার অনাগত সন্তান আমায় অভিশাপ দিবে। দোয়া করে এমন অনর্থ করবেন না।
রাফাতের এইবার হাসি পাচ্ছে। এমন সিরিয়াস মোমেন্টে কেউ এইসব বলে। মেয়েটা সত্যিই পাগল। রাফাত বলে,
– ঠিকাছে বাঁচাতে পারি। তবে বলো আমার সাথে আর কখনো লাগতে আসবে।
– প্রশ্নই উঠে না।
– তাহলে সরি বলো।
– সরি সরি সরি হাজার বার সরি।
রাফাত পূর্ণাকে উঠিয়ে আনে। পূর্ণা ছাদের রেলিং ধরে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। আর একটু হলে তার দম বন্ধ হয়ে যেতো। আর রাফাত সে পূর্ণার দিকে তাকিয়ে আছে। পূর্ণার ভয় পাওয়া মুখটা দেখছে। এই মুখে জাদু আছে। রাফাতের কি যেনো হয়। সে মোহের মধ্যে আটকে যায়। সে পূর্ণার দিকে এগিয়ে যায়। পূর্ণায তখনও এইদিকে খেয়াল নেয়। রাফাত গিয়ে পূর্ণাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। পূর্ণা ভয় পেয়ে বলে,
– বললাম তো আর করবো না এইবার যেতে দিন।
কিন্তু পূর্ণার কথাগুলো যেনো তার কান অবধি এলো না। সে এক ধ্যানে পূর্ণার দিকে তাকিয়ে আছে। রাফাতের এই দৃষ্টি পূর্ণার ভালো লাগছে না। সে রাফাতকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। রাফাত ধীরে ধীরে পূর্ণার ওষ্ঠের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পূর্ণা ভয়ে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলে। তাদের মধ্যে দুরত্ব খুব কম। দুজনের শ্বাস প্রশ্বাস উঠানামা করছে। রাফাতের নিঃশ্বার পূর্ণার মুখে বাড়ি খাচ্ছে। রাফাত পূর্ণার খুব কাছে। হঠাৎ মাগরিবের আযানের ধ্বনি বেজে উঠে চারদিকে। রাফাতের হুশ আসে। সে পূর্ণার থেকে ছিটকে দূরে সরে আসে। জোরে জোরে শ্বাস নেয়। পূর্ণাও জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। রাফাত পূর্ণার দিকে একবার তাকিয়ে ছাদ থেকে নিচে চলে যায়। আর পূর্ণা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায়। শেষ মুহুর্তে আল্লাহ্ বাচিয়ে দিয়েছে। পূর্ণা এতটুকু বুঝেছে রাফাত সেচ্ছায় কিছু করেনি। যা ছিলো শুধুই খনিকের মোহ আর কিছু না।
#চলবে
বিঃদ্র ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।#আইরাত_বিনতে_হিমি
#এক_বুক_ভালোবাসা
#পর্বঃ০৬
আকাশে ঘন কালো মেঘ জমেছে। থেমে থেমে বিদুৎ চমকাচ্ছে। এক একটা বজ্রপাত পৃথিবী কাপিয়ে তুলছে। তার সাথে বয়ছে ঝড় হাওয়া। আজ সারাদিন গরম যাওয়ার পর সন্ধ্যায় কাল বৈশাখী দেখা দিয়েছে। বৈশাখ না আসতেই কাল বৈশাখী হানা দিয়েছে। এইবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সাথে শিলাবৃষ্টি হচ্ছে। বিদুৎ নেয় অনেকক্ষণ। পূর্ণার একা একা রুমে বসে ভয় লাগছে। একিই সে ঝড় বজ্রপাতে ভয় পায়। তার মধ্যে অন্ধকার। পূর্ণা ভয়ে বিছানার এক কোনায় গুটিশুটি হয়ে বসে আছে।তখন রাফায় ছাদে থেকে চলে আসলে পূর্ণাও চলে আসে। তার কিছুক্ষণ পরেই ঝড় উঠে। আবারও পৃথিবীর বুক কাপিয়ে বজ্রপাত হলো। মনে হচ্চে আসে পাশেই কোথাও পড়েছে। পূর্ণা ভয়ে এইবার মাগো বলে চিৎকার দিয়ে উঠে। বনুলতা পূর্ণার ঘরে মোমবাতি দিতে এসেছিল। এসে দেখে পূর্ণা ভয়ে আটোশাটো হয়্র বসে আছে। বনুলতা মোম রেখে পূর্ণার কাছে যায়। পূর্ণা এইবার ভয়ে বনুলতাকে জড়িয়ে ধরে। বনুলতা বুঝতে পারে পূর্ণা ভয় পাচ্ছে। সে পূর্ণার মাথায় হাত রেখে বলে,
– কিচ্ছু হয়নি মা এই তো আমি। কোনো ভয় নেয়।
বনুলতা এমন করে কথাগুলো বলছে যেনো কোনো বাচ্চা মেয়ে ভয় পেয়েছে। আসলে পূর্ণা ভয় পেয়ে বাচ্চাদের মতোই করছে। বনুলতা পূর্ণাকে অনেকক্ষণ জরিয়ে ধরে রাখে। এক একটা বজ্রপাতের আওয়াজে পূর্ণা কেপে উঠে।
রিয়ান, রাফাত, কৌশিক তিন ভাই একসাথে বসে কথা বলছে। রিয়ান, রাফাত বিজ্ঞদের মতো কৌশিককে জ্ঞান দিচ্ছে। কৌশিক শুধু নাড়িয়ে হু হা জবাব দিচ্ছে। কৌশিক এসেছিল রাফাতের কাজে ফিজিক্সের একটা ম্যাথ বুঝতে। এসে দেখে রিয়ান আর রাফাতের বিজনেসের বিষয়ে কথা বলছে। তখন কৌশিকও জয়েন করে সেই কথায়। রাফাত, রিয়ান কৌশিককে বুঝিয়ে দেয় কীভাবে ব্যবসায় চালাতে হয়। রাফাতদের কাপড় আর জুয়েলারির ব্যবসায়। এই ব্যবসায় রাফাত একাই সামলায়। মূলত বিজনেস টা রাফাতের। রাফাত নিজে এই বিজনেস দাড় করিয়েছে। এখন তার শো-রুম গুলোর অনেক নাম ডাক। রাফাতকেও সবাই এক নামে চিনে। রিয়ান বড় হওয়ার পর রিয়ানও তাকে সাহায্য করে। পাশাপাশি ডাক্তারি পড়ছে। আর কৌশিক ঘুরে ঘুরে খায়। রশীদ চৌধুরী ছোট খাটো একটা কোম্পানি তে চাকরি করতো। রাফাত যখন কলেজে তখন তার চাকরি চলে যায়। রাফাত তখন থেকেই বিজনেসে নেমে পড়ে। নিজের চেষ্টায় আজ সে এখানে। কৌশিক রাফাতকে বলে,
– দা ভাই আমি তোর মতো হতে চায়।
রাফাত হাসে। কৌশিকের গালটা টেনে দিয়ে বলে,
– হবি। আমার অনেক ইচ্ছে তুই অনেক বড় হবি। আমার এক ভাই ডাক্তার হবে আর এক ইঞ্জিনিয়ার। আমাদের ঘরে কোনো কিছুর কমতি থাকবে না।
রিয়ান মজা করে বলে,
– দা ভাই তোমার বউ আনবো ফ্যাশন ডিজাইনার। তাহলে আমাদের আর টাকা খরচ করে ফ্যাশন ডিজাইনার আনতে হবে না।
কৌশিক হো হো করে হেসে উঠে। রাফাত দুজনের দিকে কড়া চোখে তাকায়। দুজনেই রাফাতের দৃষ্টি দেখে চুপ হয়ে যায়। পরক্ষণেই রাফাত হেসে দিয়ে বলে,
– ঠিকাছে খোজা শুরু কর।
রাফাতের কথা শুনে তিন ভাই একসাথে হেসে উঠে। পাশের ঘর থেকে বনুলতা ছেলেদের হাসি দেখে সেও প্রশান্তির হাসি দেয়। তার ঘর আজ সুখে শান্তিয়ে ভোরপূর। হঠাৎ রাফাত কৌশিককে বলে,
– পূর্ণাকে তুই কোথায় থেকে এনেছিস। ওর অতীত কি? ওহ কেন সুইসাইড করতে গিয়েছিল।
কৌশিক মুখটা ছোট করে বলে,
– দা ভাই আমি কিছু জানিনা। শুধু জানি ওর খুব দুঃখ ওর যাওয়ার জায়গা নেয়।
– কিন্তু তোর তো জানা উচিৎ ছিলো।
– ওহ বলতে ইচ্ছুক নয়।
– আচ্ছা ঠিকাছে।
গভীর রাত। বৃষ্টি নেয়। তবুও বাহিরে বয়ছে দমকা হাওয়া। পূর্ণা নিজের রুমে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ পূর্ণার মনে হয় কেউ তার পায়ে হাত দিয়েছে। সে ভাবে স্বপ্ন দেখছে। হাতটা আস্তে আস্তে উপরে উঠছে।পূর্ণা ভয় পেয়ে যায়। সে সর্তকতার সাথে চোখ খোলে। কিন্তু রুমে আসা ব্যক্তি হয়তো আরও সর্তক ছিলো তাই পূর্ণার চোখ মেলে তাকানো দেখে চলে যায়। পূর্ণা দেখে তার রুম থেকে কেউ বেড়িয়ে যাচ্ছে। পূর্ণা বলে,
– কে কে যায়?
কোনো শব্দ নেয়। পূর্ণা বিছানা থেকে নেমে ঐ লোকের পেছনে যায়। লোকটি পূর্ণাকে তার পেছনে আসতে দেখে। সে দ্রুত পায়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নামে। পূর্ণাও দ্রুত পায়ে ছুটে। কিন্তু লোকটির নাগাল পাওয়ার আগেই সে বেড়িয়ে যায়। পূর্ণা দৌড় লাগায়। দৌড়ে সে বাহিরে চলে যায়। গিয়ে দেখে কেউ নেয়। পূর্ণা অনেক খুজে কিন্তু কোথাও কেউ নেয়। হঠাৎ কাধে কারোও হাতের স্পর্শ পেয়ে ভয় পেয়ে পেছনে তাকায়। দেখে কৌশিক। কৌশিককে দেখে সে একটু সাহস পায়। কৌশিক বলে,
– পূর্ণা এত রাতে এখানে কি করিস তুই।
পূর্ণা এখনো খুজছে। অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,
– কিছু না।
– এইভাবে কি খুচ্ছিস।
– কিছু না তো। আসলে আমার কেন জানি মনে হলো এইখানে কেউ ছিলো। আমি বেলকনি থেকে দেখলাম। তাই আর কি এখানে আসা।
– ওহ। কিন্তু পূর্ণা তোর এখানে একা আশা ঠিক হয়নি। কাউকে ডাকা উচিৎ ছিলো। চল উপরে চল।
পূর্ণা ঘরে চলে আসে। কৌশিক চলে যায়। পূর্ণা এখনো ঘামছে। খুব বেশি ভয় পেয়ে গিয়েছিল সে। আবার গভীর ঘুম থেকে উঠার কারণে শরীরের নার্ভ উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। পূর্ণা টেবিল থেকে ওয়াটার বোতল নিয়ে একটু পানি খেয়ে নেয়। তারপর বেলকনিতে গিয়ে চৌধুরী বাড়ির গার্ডেন টা দেখে। চারদিকে এত এত গার্ড। তাও কীভাবে বাহিরের মানুষ ঘরে ঢুকলো। নাকি বাহির থেকে কেউ আসেইনি। ঘরেরই কেউ ছিলো। কিন্তু কে? এত তাড়াতাড়ি কি করে ভ্যানিস হয়ে গেলো। সর্তক থাকতে হবে। বাড়িটা মোটেও ভালো নয়। এত ভালো মানুষের ভিড়ে শয়তান ঘুরে বেড়াচ্ছে। আচ্ছা আহির আসে নিতো। কিন্তু আহির আসলে তো সে জানতো। রাতে খাবার টেবিলে তো সে আহিরকে দেখলো না। ধ্যার আর ভাবা যাচ্ছে না।
পূর্ণা বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে। সকাল হতেই বনুলতার যুদ্ধ শুরু হয়েছে। ছেলেদের কলেজ, ভার্সিটি, অফিস সব সকালে।একা হাতে তাদের জন্য নাস্তা বানাতে গিয়ে সে হিমশিম খাচ্ছে। পূর্ণা সকাল সকাল উঠে বনুলতাকে সাহায্য করতে যায়। কিন্তু বনুলতার এক কথা,
– এখনো রান্না ঘরে প্রবেশ করার বয়স তোমার হয়নি। ঐ হাতে এখন কলম ধরো। ঠিক বয়স হলে আমিই তোমার হাতে খুন্তি ধরিয়ে দিবো।
বনুলতার জেদের কাছে পূর্ণা হেরে যায়। সে রশীর চৌধুরীর সাথে বসে বসে গল্প করছিলো। তখন পূর্ণা রশীদ চৌধুরীকে জিঙ্গাসা করে,
– আচ্ছা বাবা রাতে কি মেইন ডোর লক করা থাকে না।
– হ্যা থাকে তো। কিন্তু কেন?
– নাহ এমনি। প্রতিদিন কে লক করে?
– রাফাত করে।
– চাবি কি উনার কাছেই থাকে?
– হ্যা।
– ডুপ্লিকেট চাবি নেয়?
– আছে তো তোর মামনির কাছে থাকে। কিন্তু তুই এইসব কথা কেন জিঙ্গাসা করছিস?
– এমনি।
সকালের নাস্তা শেষ করে যে যার কাজে বেড়িয়ে পড়ে। পূর্ণা স্কুলে আসে কৌশিকের সাথে। আসার সময় পূর্ণা কৌশিককে বলে,
– কৌশিক সাবার সাথে তোর সম্পর্ক কেমন?
– ভালো।
– আমি জানি ভালো। কিন্তু তুই ওকে কোন নজরে দেখিস।
– বোনের নজরে।
– হোয়াট। তুই জানিস সাবা তোকে কত ভালোবাসে। তাছাড়া তুই কেন ওর প্রতি এত কেয়ারিং।
– সো হোয়াট পূর্ণা এর মানে এইটা হয় না আমি ওকে ভালোবাসিহ। ওহ যদি ভুল ভেবে আমায় ভালোবেসে বসে তাহলে সেটা ওর দোষ আমার না।
কথাটা বলে কৌশিক গাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।পূর্ণা কৌশিকের দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওহ ও গাড়ি থেকে নেমে যায়। গাড়ি থেকে নামতেই ওর সামনে হাজির হয় সাবা, ইশানী। সাবা অনেকটা আশা নিয়ে জিঙ্গাসা করে,
– কৌশিক কি বললো?
পূর্ণার প্রথমে মন খারাপ হয় সাবার মুখটা দেখে। পড়ে বলে,
– সাবা কৌশিক যায়ই বলুক। কৌশিক শুধু তোর হবে।
– তারমানে কৌশিক বলছে ওহ আমায় ভালো বাসে না।
– তেমন কিছু না। আসলে কৌশিক ওর ভেতরে থাকা অনুভূতি টা বুঝতে পারছে না। যখন বুঝবে নিশ্চয় তার কাছে চলে আসবে। বিশ্বাস রাখ। এখন চল ক্লাসে যাওয়া যাক।
ওরা কেউ আর কথা বাড়ায় না ক্লাসে চলে যায়।
নিজের কেবিনে বসে নতুন মডেলের সাথে কথা বলছে রাফাত। আজ তাদের একটা শ্যুট আছে। যেখান ওদের নতুন ব্র্যান্ডের কয়েকটা শাড়ি আর জুয়েলারির ভিডিও করা হবে। সেগুলো পড়ে কীভাবে শ্যুট করবে। কত টাকার ডিল হবে তা নিয়েই মডেলের সাথে আলোচনা করছে রাফাত। হঠাৎ কথার এক পর্যায় মডেল করা মেয়েটি রাফাতের কাছে এসে বসে। যেটা রাফাতের ভালো লাগে না। সে মুখটা সরিয়ে বলে,
– দূরে গিয়ে বসুন তন্নী।
তন্নী কথা শুনে না সে রাফাতের আরও কাছে চলে আসে। রাফাতের কোলে বসে পড়ে। ওর ঘারে কপালে গালে চুমু খেয়ে থাকে। রাফাত উত্তেজিত হয়ে পড়ে। সে নিজেকে অনেক সামলে তন্নীকে ধাক্কা মেরে ফ্লোরে ফেলে দেয়।তারপর চিৎকার করে বলে,
– আপনার সাহস কি করে হয় আমার সাথে নোংরামি করার।
তন্নী একটু হেসে বলে,
– আমি জানি জান তোমাদের মতো ডেসিং ছেলেরা প্রথমে না করবেই পড়ে ঠিক হয়ে যাবে।
কথাটা বলে তন্নী রাফাতের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। রাফাত এইবার সহ্য করতে না পেরে কষিয়ে চড় মারে। তন্নী ছিটকে টেবিলের উপর পড়ে। রাফাত তন্নীকৈ উঠিয়ে আরও দুইটা চড় মেরে বলে,
– এতই যেহেতু দেহ বিলানোর শখ। তাহলে এই পেশায় না থেকে নষ্ট পল্লীতে যাহ।দেহ ব্যবসায় কর।মডেল না হয়ে প্রস্টেটিউট হো ভালো হবে।
তন্নী চিল্লিয়ে বলে,
– রাফাত চৌধুরী মুখ সামলে। আমি তন্নী চাইলে তোমার এত দিনের গড়ে তোলা সমার্জ্য ভেঙে গুড়িয়ে দিতে পারি।
– আরে আমি জানি তোর মতো মেয়ে কি কি করতে পারে। আজ থেকে চৌধুরীর গ্রুপের সাথে তোর সব সম্পর্ক শেষ। আমার বোঝা হয়ে গিয়েছে কি দিয়ে তুই তোর এত নাম কামিয়েছিস। নাও গেট আউট ফ্রোম হেয়ার।
– রাফাত তুমি পচতাবে। তোমার নেওয়া ডিসিশনে তুমি পচতাবে। কাজটা তুমি ঠিক করলে না।
– আরে হাট। রাফাত চৌধুরী নিজের নেওয়া ডিসিশনের কারণে কখনো পচতাই নি আর পচতাবেও না। গার্ড।
রাফাত চিৎকার করে গার্ড ডেকে তন্নীকে অফিস থেকে বেড় করে দেয়। কিন্তু এতকিছুর মধ্যে রাফাত ভুলেই গিয়েছিল আজকের মধ্যে তার শ্যুট করতে হবে তাকে নাহলে বিরাট বড় লস হয়ে যাবে। জায়গায় জায়গায় নতুন শাড়ির বিজ্ঞাপন দিতে হবে। সামনে ঈদ। এই সময় এত লস হলে চলবে না। রাফাতের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। সে তার এসেসটেন্টকে কল করে নতুন মডেলের খোজ করতে বলে। আগামী পাঁচ ছয় ঘন্টার মধ্যে মডেল চাই। কিন্তু এত কম সময়ে মডেল সে কোথায় পাবে। রাফাতের এক একটা রাম ধমক তাকে নাস্তা নাবুত করে দিচ্ছে। রাফাত কেবিনে বসে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। হঠাৎ চোখের সামনে ভেসে উঠে একটা ছবি। সুন্দরী কোমল চেহারার এক মেয়ে কোমর অবধি তার চুল। হে সেই তো পারবে। তাকে দিয়েই কাজটা করাতে হবে। রাফাত চোখ মেলে তাকায়। পূর্ণা পূর্ণা খুব সুন্দর একটি মেয়ে। শুধু সুন্দর নয় মারাত্মক তার সৌন্দর্যতা। এই মেয়ে মডেল হিসেবে খারাপ না। কিন্তু হয়তো অভিজ্ঞ নয়। তবে সমস্যা নয় শিখিয়ে নিবে সে। এই মুহুর্তে পূর্ণায় ভরশা। রাফাত বাড়ির নাম্বারে কল করে। কলটা ধরে বনুলতা,
– হ্যালো।
– মম পূর্ণা কই।
– কেন পূর্ণা তো স্কুলে।
– কোন স্কুল।
– ঐ তো তোরা সবাই যেটা তে পড়েছিস।
– ওকে।
রাফাত কল কেটে। পকেটে মোবাইল ঢুকিয়ে ব্লেজার পড়ে দৌড়ে বাহিরে আসে। গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে বলে,
– গাড়ি স্টার্ড দাও।
– কোথাও যাব স্যার।
– কৌশিকের কলেজে।
– আচ্ছা স্যার।
ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ড দেয়। এক ঘন্টার রাস্তা তারা আধাঘন্টায় এসে পৌছায়। রাফাত গাড়ি থেকে নেমে দেখে পূর্ণা রাস্তায় দাড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে। সাথে সাবা, ইশানী আছে। রাফাত গাড়ি থেকে হুডি নিয়ে তা পড়ে পূর্ণার কাছে যায়। পূর্ণার হুডি ম্যানের দিকে তাকালে রাফাত ওর মুখে ক্লোরোফোম এসপ্রে করে দেয়। সে ঢুলে পড়ে রাফাতের কোলে। সাবা চিল্লিয়ে বলে,
– হে কে আপনি?
তখন রাফাত ওর মুখটা খুলে বলে,
– আমি। ওকে নিয়ে যাচ্ছি। একটু কাজ আছে।
– ওহ। কিন্তু এইভাবে কেন ভাইয়া।
– যদি ওহ জানতো আমি ওকে নিয়ে যেতে এসেছি তাহলে কখনো যেত না। বোন তোর সাথে আমি পড়ে কথা বলবো। এখন ওকে নিয়ে যায়।
কথাটা বলে রাফাত পূর্ণাকে কোলে তুলে নেয়। গাড়িতে বসে হুডি খুলে ফেলে। ড্রাইভার কে বলে,
– বাগান বাড়ি চল।
– ওকে স্যার
রাফাতের গাড়ি বাগান বাড়ি এসে থামলে রাফাত পূর্ণাকে নিয়ে ভেতরে আসে। পূর্ণাকে সোফায় শুয়িয়ে ওর মুখে পানি ছিটিয়ে মারে। পূর্ণা হকচকিয়ে উঠে। বড় বড় চোখ করে তাকায়। জোরে জোরে শ্বাস নেয়। নিজেকে শান্ত করে সামনে তাকিয়ে দেখে রাফাত হাতে পানির বোতল নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সে বুঝতে পারে রাফাত তার মুখের উপরে পানি ঢেলে দিয়েছে। পূর্ণা সম্পূর্ণ ভিজে গিয়েছে। সে রাগ দেখিয়ে বলে;
– এইভাবে কেউ পানি মারে।
– তো কি করবো। মরার মতো ঘুমাচ্ছিলে যে।
তখনই পূর্ণার মনে পড়ে কেউ তাকে কিডন্যাপ করে এইখানে নিয়ে এসেছে। সে রাফাতের দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলে,
– আপনি আমায় কিডন্যাপ করেছেন।
রাফাত আয়েশী ভঙ্গিতে সোফায় বসে বলে,
– হ্যা করেছি।
– তাহলে তো আপনার জন্যাই আমি হুশে ছিলাম না। আবার আপনি আমায় বোকেন।
– ওহ স্টোপ পূর্ণা।
– নাহ নাহ আমি থামবো না। আমার জবাব চাই। আপনি কেন আমায় কিডন্যাপ করলেন। কেন মুখে পানি মারলেন। আপনার অসভ্যতা মির জন্য আমি ভিজে গেলাম। এখন যদি আমার ঠান্ডা লাগে জ্বর হয় তখন কি হবে। তখন আমি আবার জ্ঞান হারাবো। আমাকে আবার আপনার ঘরে যেতে হবে। আল্লাহ্ কি হবে এইবার। তুমি বাঁচাও।
রাফাত মুখ চেপে ধরে রাগী কন্ঠে বলে,
– দুমিনিট চুপ থাকতে পারো না। এত চিল্লাচ্ছো কেন? তোমার মতো বাঁচাল মেয়ে আমি দুটো দেখিনি।
পূর্ণা এখনো অম অম করে যাচ্ছে। রাফাত এইবার রেগে পূর্ণাকে উঠিয়ে সোফায় ছুড়ে মারে। পূর্ণা ব্যথায় চোখ মুখ খিচে বলে,
– ওহ মাগো আমার কোমরটা গেলো রে। এই রাক্ষস আমায় মেরে ফেলবে কেউ বাঁচাও গো।
রাফাতের ইচ্ছে করছে নিজের মাথায় নিজের বাড়ি মারতে। কোন আক্কেলে এই মেয়েকে সে ভাবলো সে মডেল করতে পারবে। এর মতো বাচাল হবে মডেল। কান্ড বিলিভ। ইমপসিবল। রাফাত রাগে সামলাতে না পেরে পূর্ণাকে থামানোর জন্য ওর ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ ডুবিয় দেয়। এহেন কান্ডে পূর্ণার স্টেচুর মতো দাড়িয়ে থাকে। দুমিনিট পর রাফাত পূর্ণাকে ছেড়ে দিয়ে। পূর্ণার গায়ের ওরনা দিয়ে ওর মুখটা মুঝে সোফায় বসে পড়ে। পূর্ণা এখনো মুর্তির মতো দাড়িয়ে আছে। কি হলো এটা। কি করলো সে। এতো দেখছি রাক্ষস থেকে লুচু হয়ে গেলো। রাফাত বলে,
– বসো পূর্ণাবতি কিছু কথা আছে তোমার সাথে।
পূর্ণা রাগে কটমট করে রাফাতের দিকে তাকায়। চিৎকার করে বলে,
– কি করলেন এইটা আপনি। আপনি মানুষ। একটা মেয়ের ইজ্জতে হাত দেন।মানলাম আপনার বোন নেয় বলে বোনের কদর জানেন না। কিন্তু মা তো আছে।
রাফাত পূর্ণাকে সোফায় বসিয়ে ওর বাহু চেপে বলে,
– আর একটা বাজে কথা বললে খুব খারাপ হবে বলে দিলাম। মাত্র কিস করছি এরপর আরও বাজে কিছু করবো সো চুপ।
পূর্ণা চুপ হয়ে যায়। তার আর ইচ্ছে নেয় আরও কিছু হওয়ার। রাফাত পূর্ণার পাশে বসে জোরে শ্বাস নেয়। নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে সব বলা শুরু করে,
– শোন পূর্ণা। আজকে আমাদের একটা নতুন শাড়ির ছবি তোলার কাজ ছিলো। এজন্য আমরা দেশের নামকরা মডেল হায়ের করি। কারণ এই শাড়ির বিজ্ঞাপন দেওয়াটা খুবই জরুরি। কিন্তু শেষ মুহুর্তে মডেল চলে গিয়েছে। আই মিন আমি মডেলকে বের করে দিয়েছে। এখন আর মডেল পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু শ্যুট করাটা জরুরি। নাহলে অনেক টাকার লস হবে আমার। তাই আমার মনে হয় এর হাত থেকে তুমি আমাদের বাঁচাতে পার।
পূর্ণা অবাক হয়ে বলে,
– আমি।
– হ্যা তুমি।
– কিন্তু কীভাবে।
– তুমি মডেল সাজবে। তোমাকে পড়ানো হবে আমাদের নতুন শাড়ি গহনা। যেগুলো সামনে বাজারে আসবে। তুমি শ্যুট করবে।
পূর্ণা চোখের পাতা বার বার ফেলে বলে,
– আ আ আমি। আ আমি আর শ্যু শ্যু শ্যুট।সরি মিস্টার চৌধুরী আমার দাড়া সম্ভব না।
কথাটা বলে পূর্ণা দৌড় লাগায়।রাফাত চিল্লিয়ে বলে,
– পূর্ণা স্টোপ পূর্ণা। দাড়াও বলছি।
কে শুনে কার কথা পূর্ণা দৌড়ে বাহিরে চলে আসে। তবে রাফাতের নাগালের বাহিরে যেতে পারেনি। রাফাতের দুজন মহিলা গার্ড পূর্ণাকে ধরে ফেলে। পূর্ণা চিল্লিয়ে বলে,
– ছাড়ো আমায় ছাড়ো বলছি।
কিন্তু কেউ ছাড়ে না। রাফাত এলে রাফাতের কাছে ধাক্কা দিয়ে পূর্ণাকে ফেলে দেয়। রাফাত পূর্ণাকে উঠিয়ে বলে,
– রাফাত চৌধুরীর অনুমতি ছাড়া কেউ রাফাত চৌধুরীর বাগান বাড়ি থেকে বেড়ুতে পারেনি। আর সেখানে তো তুমি একটা পিচ্চি মেয়ে।
কথাটা বলে রাফাত পূর্ণাকে পুলের কাছে নিয়ে যায়। পূর্ণা পুল দেখে বলে,
– এইখানে কেন আমরা?
– যান পূর্ণা এখানে অনেক বড় বড় কুমির আছে। যারা মানুষ খায়। ধরো আমি যদি তোমাকে এখান থেকে ফেলে দেয় তাহলে কেমন হবে।
পূর্ণার হাতটা ছেড়ে দিয়ে আবার ধরে বললো কথাটা। পূর্ণা ভয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে আছে। একটু পা পিচ্ছিলে গেলে বা রাফাত হাত ছাড়লে হে খতম হয়ে যাবে।
#চলবে
বিঃদ্র ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টি তে দেখবেন ধন্যবাদ।