#এক_মুঠো_প্রেম_রঙ্গনা
লাবিবা ওয়াহিদ
| পর্ব ০৭ |
——————–
মাজেদা বেগম হচ্ছেন মৌসুমির মা অর্থাৎ সিদ্দিক সাহেবের ফুপ্পি। তাদের বিয়েটা পারিবারিক-ই হয়েছিলো। মাজেদার ছেলে’রা যার যার মতো ব্যস্ত। তাদের কারো বউ-ই তাকে নিজের ঘরে তুলেনি। আলগা বোঝা ভেবে সকলেই ছিলো বিরক্ত। তাঁর উপর মাজেদা বেগমের কর্কশ, ধারালো কন্ঠস্বর। তেঁতো কথাবার্তা কেউ-ই মানতে পারে না। এমতাবস্থায় মাজেদা বেগম এই বৃদ্ধ বয়সে কোথাও ঠায় না পেয়ে অবশেষে মেয়ের বাড়িতে ঠায় পেলেন। ছেলে’রা তাকে বের করে দিয়েছেন এ নিয়ে দিনে অন্তত তিন বেলা করে বিলাপ করে না ব!কলে যেন পেটের ভাত তাঁর হজম হয় না। তাঁর একটি লাঠি আছে। শক্ত-পোক্ত, বেশ সুন্দর একটি লাঠি। এটা চোর তাড়াতেও বেশ কার্যকরী। মাজেদা বেগমের এই লাঠিটি মাঝে মধ্যে ইরা’দ ও নিয়ে যায়, মা!রপিটের জন্যে। এটা অবশ্য ইরা’দ এবং মাজেদা বেগমের বাইরে কেউ জানে না।
মাজেদা বেগম হাঁতড়ে চশমা খুঁজছেন বারংবার। খোঁজার মুহূর্তে হঠাৎ তাঁর হাতে চশমা ধরিয়ে দিলো ইরা’দ। মাজেদা বেগম দ্রুত চোখে চশমাটা দিয়ে দিলো। চোখে চশমা না থাকলে চোখে যেমন ঝাপসা দেখে তেমনই মাথায় চিনচিন ব্যথা ওঠে। মাজেদা বেগম চশমার এক অংশ ধরে ইরা’দের দিকে সন্দিহান নজরে তাকিয়ে জিজ্ঞাসাসূচক কন্ঠে বলে,
–“এগুলা কী!? তুই আমারে আরেক চশমা দিছোস ক্যা?”
–“আহা নানু! এক চশমায় আর কতদিন চলবা? নতুন কিছুরও তো স্বাদ নিতে হয় নাকি?”
মাজেদা বেগম কপালে দুটো ভাঁজ ফেলে বলে,
–“নতুন চশমা?”
–“হ্যাঁ, তোমার জন্যে। আমি নিজে কিনেছি। নতুন কিছুর স্বাদ নাও এবার!”
–“এইডা তো ভুল কস নাই! দেহি, আয়নাডা আন তো। আমারে ক্যামন দেহায় দেহি?”
ইরা’দ মুচকি হেসে মাঝারো সাইজের আয়নাটা মাজেদা বেগমের দিকে নিয়ে এসে বলে,
–“একদম জোয়ান হয়ে গেছো নানু!”
মাজেদা বেগম যেন ফুলে-ফেঁপে ওঠলেন। আগের চশমার কথা আগেই যেন ভুলেই গেলেন। চোখ-মুখে মিছে লাজুক ভঙ্গি এনে বলে,
–“অনেকদিন পর একখান সুন্দর কতা কইলি! যাহ, খাওয়া – দাওয়া কর, বাইরে থেইকাই তো আইসোছ!”
–“হ্যাঁ নানু। যাচ্ছি।”
বলেই ইরা’দ তাঁর রুম থেকে চলে গেলো। চশমার কথা নূরজাহান-ই প্রথমে ইরা’দকে কল করে জানিয়েছিলো বিধায় আজ রক্ষা হলো। নয়তো তুলকালাম বাঁধতো যেন আজ।
বৃদ্ধ কঠিন মাজেদা বেগমের মুখে হাসি। অমায়িক হাসি। ইরা’দ-ই একমাত্র তাকে ভালোবাসে। তাঁর খেয়াল রাখে। নয়তো আজ পর্যন্ত কেউ তো বলেনি, “চশমা বদলাও।” কিন্তু মাজেদা বেগম তো আর জানেন না ভেতরের রহস্য। মাজেদা বেগম আয়না দেখতে দেখতে হঠাৎ শক্ত হয়ে গেলেন। মুখের হাসি উধাও হয়ে গেলো তার। কাঠ কাঠ গলায় আপনমনে বিড়বিড়ালো,
–“কই আমার প্রাণের টুকরা নিদ্র আমারে কতকিছু দেয় আর ওদিকে খ!বিশ, খা!চ্চর পোলার বউগুলা কিছু দিবে তো দূর উল্টো বাড়ি থেকেই বের করে দিলো। ঠা!ডা পরবে ঠা!ডা। এই বুড়ির কথা মিলায় নিস!”
———————
নওরি রুমের এদিক থেকে সেদিক পায়চারী করছে। খেয়েছে আধঘন্টা হলো। তাঁর মস্তিষ্কে বিচরণ করছে বিরাট কৌতুহল। কৌতুহল ইরা’দকে নিয়ে। রাস্তায় আসার সময় বেশ কয়েকটি পোস্টার দেখেছে সে। সেই পোস্টার গুলোতে স্পষ্ট দৃশ্যমান ছিলো ইরা’দের বড়ো ফটো। কে এই ইরা’দ? বড্ড ভাবাচ্ছে নওরিকে। আফসোসও হচ্ছে তাঁর। কেন যে একটু পোস্টারগুলো পড়ে দেখলো না। খুদায়, তৃষ্ণায় এবং ফ্রিশার চিন্তাতে একপ্রকার কাহিল ছিলো সে। কী করেই বা এতদিকে খেয়াল করতো? ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে নওরি। গভীর নিঃশ্বাস। এর মাঝে নিদ্র এসে প্রবেশ করলো নওরির রুমে। নিদ্রকে দেখে নওরি থেমে গেলো। নিদ্র কোমড়ে দুই হাত গুঁজে এদিক ওদিক উঁকি মেরে বলে,
–“তোমার সুইট বিড়ালটা কোথায়?”
নওরি নিদ্রকে পর্যবেক্ষণ করতে করতে বলে,
–“বারান্দায়।”
–“ওকে।”
নিদ্র বারান্দার দিকে যেতে নিলে হঠাৎ থেমে যায়। নওরির দিকে ফিরে ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে বলে,
–“ভয় পাচ্ছো কেন তুমি?”
নওরি থতমত খেয়ে যায় নিদ্র’র কথায়। নিদ্র কী রকম করে যেন তাকিয়ে আছে নওরির দিকে। নওরিকে খুঁটিয়ে দেখতে ব্যস্ত নিদ্র। নওরিকে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করে বলে,
–“ভালো কথা, নাম কী তোমার?”
–“নওরি..।”
–“নৌরি ফুল?”
–“মৌরি ফুলের কথা বলছো?”
–“না, ওটার বানান ভুল। আমার তো নৌরি ফুল-ই বলতে ভালো লাগে।”
নিদ্র’র উদ্ভট কথাবার্তায় নওরি চমকে তাকিয়ে রয়।
–“ফুলটা দেখেছো?”
নিদ্র হঠাৎ মুখ ভার করে বলে,
–“না। কখনো নৌরি ফুল দেখিনি। কোথায় পাওয়া যায়? ঘ্রাণ কেমন? তোমার মতোন? ভীতু চেহারার?”
নওরি এবারও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। এই ছেলে বড্ড কথা বলে। তবে বাঁদর টাইপ না। নওরির ভালো-ই লাগছে। এই ছোট্ট সদস্যকে ভীষণ ভালো লাগছে। নওরি অমায়িক হাসি দিলো। যেন নিদ্র’র শেষোক্ত বাক্যে ভীষণ মজা পেয়েছে।
–“আসো। আমরা বসি। খুব গল্প করবো। অনেকদিন পর গল্প করার মানুষ পেয়েছি।”
—————-
ফ্রিশা দুনিয়া ভুলে বারান্দা এবং বাহিরটা দেখতে ব্যস্ত। সটান মেরে বসে পিটপিট করে সবটা দেখছে। মাঝারো সাইজের বারান্দার এক পাশে ফুল গাছে ভর্তি। বারান্দায় সিক নেই। ফ্রিশা তাই খোলা আকাশে নজর বুলাচ্ছে। আশেপাশে তাকিয়ে নতুনত্ব অনুভব করছে। আরেক দুনিয়ায় এসে পরলো নাকি? কে জানে?
——–
নওরি তাঁর কাপড়ের ব্যাগ থেকে জামা-কাপড় বের করছে। একটা জামাও ঠিক নেই। পুরাতনের ছাপ। এগুলো নওরির কত বছর আগের জামা-কাপড় তাঁর জানা নেই। চাঁদটা ভালো জামা আছে, একদম নতুন। দুইটা ইদের এবং দুইটি মাহির দেয়া উপহার। খিব যত্নে আগলে রেখেছিলো এই চারটি জামা। বাহিরে যাওয়ার পোশাক হিসেবে এই চারটি-ই ভরসা। আজ একটি পরে আসলো এখন ব্যাগে আছে আরও তিনটি। নওরি জামা-কাপড় বের করার সময় হঠাৎ দেখলো ফোনের বক্স। নওরির মস্থায় এলো ফোনের কথা। দ্রুত ফোনের বক্সটি হাতে নিলো সে। এটি মাহির দেয়া এন্ড্রোয়েড ফোন। খুব বেশি পুরাতন নয়। মূলত মাহি এই ফোনটা কেনার প্রায় ছ’মাস পরই তার এক খালু বিদেশ থেকে ফোন পাঠায়। সেজন্যে এই ফোনটি আর ব্যবহার করেনি মাহি। নওরির কাজে দিবে ভেবে নওরিকেই ফোনটি দিয়ে দেয়। নওরি নিতে চায়নি। মাহি ধমকি-ধামকি দিয়ে নওরির দিকে ধরিয়ে দিয়েছে। এবং কাঠ কাঠ গলায় বলে,
–“বোনের থেকে বোনের জন্যে উপহার। এতে এত ত্যাড়ামি করলে থা!প্পড় খাবি! তুই কেন বুঝিস না আমার ছোট বোনের জায়গাটা আমি তোকে দিয়ে দিয়েছি। তোর প্রতি আমার দয়া নেই, দয়া করে এ পর্যন্ত কিছুই দেইনি। তোর জন্যে আমার ভাবনা আপনজনের মতো। হয়তো রাফিয়ার মতো তোর আপন বোন নই, কিন্তু তুই আমার আত্মার সাথে মিশে গেছিস।”
নওরি ছলছল নয়নে মাহির দিকে তাকিয়ে ছিলো শুধু। মাহির মতো কেউ বুঝি এত ভালোবাসতে পারে বুঝি? আজ সে তাঁর এই মাহি বোনের থেকেই এত দূরে। অতীত ভাবতেই বুকের বা পাশটা চিনচিন করে উঠলো। বক্স খুলে ফোন বের করতে গিয়ে দারুণ চমকালো নওরি। এইতো, নওরির সব টাকা। এর মানে কী চুরি হয়নি টাকা? নওরির এবার সব মনে পরে যায়। ফোনের সাথেই হাতে নওরির টাকাগুলো ছিলো। ব্যস্ত ভঙ্গিতে ফোন রাখতে গিয়ে টাকাটাও ভুলবশত এই বক্সে রেখে দিয়েছিলো সে। টিকিট মাহি কিনে দিয়েছিলো বিধায় এই টাকাগুলোর প্রয়োজন পরেনি। নওরি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। যেদিন সে রোজগার করবে, প্রথম মাসের টাকা দিয়ে সর্বপ্রথম মাহির জন্যে উপহার কিনবে। এই মানুষটা তাঁর অতি প্রিয় এবং আপন মানুষ। নওরি টাকাগুলো সহি-সালামতে রেখে ফোনটা অন করে মাহিকে কল দিলো। সিমটাও মাহির। মাহি সাথে সাথে রিসিভ করলো যেন নওরির কলের অপেক্ষায় ছিলো।
–“ফাইনালি কল দিলি। আমার তো প্রাণ বেরিয়ে আসছিলো দুশ্চিন্তায়। কেমন আছিস? ঠিকমত পৌঁছাতে পেরেছিস তো?”
নওরি আপনমনে বলে ওঠে,
–“এত কেন ভালোবাসো তুমি আমায় মাহি আপা?”
মাহি হকচকালো, চমকালো। বিস্মিত কন্ঠে শুধায়,
–“মানে?”
–“এতকিছু দিয়েছো, এত সাহায্য করেছো। ঋনের বোঝা যে বাড়িয়ে দিলে!”
–“চুপ! কিসের ঋন? সব ঠিকাছে। বড়োদের মতো কথা বললে পি!টাবো। যা প্রশ্ন করেছি তাঁর উত্তর দে।”
–“হ্যাঁ, পৌঁছিয়েছি।”
–“তোর ওই আন্টির ব্যবহার কেমন?”
–“খুব ভালো। আমার প্রত্যাশার বাইরে।”
–“যাক নিশ্চিন্ত হলাম।”
–“বাসার সবাই কেমন আছে? আমার খোঁজ করেছে?”
–“এতকিছু তো জানি না। দাঁড়া তোর ওই সুরভীর পেট থেকে সব বের করব। সব জেনে তোকে জানাবো। আচ্ছা?”
–“ঠিকাছে আপু। তুমি ভালো থেকো।”
–“তুইও ভালো থাকিস। এখন তোর নতুন লড়াই। কঠোর পরিশ্রম দ্রুত এডমিশন দিয়ে ভালো একটা পাবলিক ভার্সিটিতে ভর্তি হবি৷ তোকে ভালো থাকতে হবে রে নওরি। মানুষদের মুখে আঙুল তুকে দেখাবি তোর নতুন রূপ। ভীতগ্রস্ত মুখটা আর দেখতে চাই না আপু।”
–“ভালো কথা মনে করালে। জানো আজ,..”
–“থেমে গেলি কেন? বল!”
–“অচেনা ছেলের সাথে আজব ব্যবহার করে ফেলেছি আপা।”
বলেই সমস্ত ঘটনা খুলে বললো নওরি। সব শুনে মাহি কিছু ভেবে বলে,
–“চার দেয়ালের কষ্ট সইতে সইতে তোর মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে নওরি। এটা মোটেও উদ্ভট ব্যবহার নয়। বরং তোকে এমনটাই হতে হবে। হোক দুশ্চিন্তায় তুই তোর লিমিটেশন হারিয়ে ফেলিছিলি। বাট আই সয়্যার নওরি, তোকে এরকমটাই হতে হবে। শান্ত, ভদ্র থাকলে তোর সমস্যা বাড়বে বৈ কমবে না।”
—————
খাবার টেবিলে নূরজাহানের পরিবারের সঙ্গে বসেছে নওরি। ইতস্ততায় হাঁটু কাঁপছে তাঁর। অস্বস্তিতে শক্ত হয়ে বসে সকলকে দেখছে সে। একসঙ্গে টেবিলে খাওয়ার অনুভূতি তাঁর প্রথম হচ্ছে। তাও আবার ভিন্ন এক পরিবারে, যেই পরিবারে নওরি বর্তমানে আশ্রিতা। লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে রয় নওরি। ফ্রিশা ডাইনিং টেবিলের নিচে নওরির পায়ে বসেছে। গাঢ় লোমে বেশ সুড়সুড়িও লাগছে তাঁর। এছাড়া নূরজাহানের হাসবেন্ডের নজর ভালো না। কী রকম অসন্তোষ ভাব তাঁর। যেন নওরিকে দেখে খুব একটা সন্তুষ্ট নয়। হঠাৎ সারিফার কথায় নওরির ধ্যান ভাঙ্গে।
–“কী হলো আপু? খাচ্ছো না?”
নওরি জোরপূর্বক হাসি দিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
–“খা..খাচ্ছি!”
#এক_মুঠো_প্রেম_রঙ্গনা
লাবিবা ওয়াহিদ
| পর্ব ০৮ |
—————–
ঘুমের মধ্যে বিছানা হাঁতড়ে ফ্রিশাকে না পেয়ে নওরির ঘুম ছুটে গেলো। চট করে উঠে বসে আশেপাশে খুঁজলো ফ্রিশাকে। চাঁদের আলোয় আবছা আলোকিত রুমটি। এছাড়া পর্দাও দেয়া হয়নি। বারান্দার দরজাটাও খোলা। এলোমেলো হিম হাওয়া প্রবেশ করছে।
এমতাবস্থায় ফ্রিশাকে খুঁজতে গিয়ে নওরি লম্বা- চওড়া এক অবয়ব দেখতে পেলো। রুমের বাম দিকের শেষ কর্ণারে। ওখানে মূলত নিদ্র’র পড়াদ টেবিল। নওরির ভয়ে, আতঙ্কে কপালে ঘাম জমেছে। বিন্দু বিন্দু ঘাম। সে কী ঘুমের ঘোরে ভুল দেখছে? কান খাড়া করে শুনতে পেলো নিস্তব্ধ রুমে খুঁটখুঁট শব্দ। পৃষ্ঠা উল্টানোর শব্দ।
এবার দারুণ ভয় পেলো নওরি। ভয়ে রীতিমতো জমে গেলো সে। ওটা কী জ্বিন, ভূত টাইপের কিছু? চিৎকার করা কী ঠিক হবে? যদি সেটা তাঁর ঘাড় মটকে দেয়? নওরি থরথর করে কাঁপত্ব কাঁপতে ফ্রিশাকে খুঁজছে। ফ্রিশা কোথায়?
হঠাৎ বিড়বিড়ানি শুনতে পেলো নওরি। কান খাড়া হয়ে গেলো তাঁর। কী যেন বলছে অবয়বটা। নিস্তব্ধ রাতে কী ভয়ানক লাগছে এই কন্ঠস্বর। গলা শুকিয়ে কাঠ কাঠ। ধীর পায়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াতে গেলেই নওরির পায়ের নিচে লোম লাগলো। এর মানে কী ফ্রিশার উপর? তাকে পারা দিলো?
নওরি ক্ষীণ আর্তনাদ করে পুণরায় তাঁর পা টি উঠিয়ে ফেললো। খুব দ্রুর ভঙ্গিতে। নওরির হালকা, খুব হালকা কন্ঠস্বরব অবয়বটি পিছে ঘুরলো যা নওরি স্পষ্ট বুঝতে পারলো। অবয়বটির হাতে ক্ষীণ আলো দেখাচ্ছে। নওরি ভয়ে গায়ের ওড়নাটি দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো।
হঠাৎ লাইট জ্বলে উঠলো। সেই লাইটের আলোর ছ’টায় নওরির চোখ-মুখ কুচকে গেলো। পরপর শোনা যায় পুরুষালি ভরাট কন্ঠস্বর।
–“ভয় পাস না সারিফা। এটা আমি। তোর গ!র্ধব ভাইটা না জিজ্ঞেস করে আমার ইম্পর্টেন্ট একটি কাগজ নিয়ে এসেছে। এত বললাম দিলো না। বলে কি না আমায় ব্ল্যাকমেইল করবে? সিরিয়াসলি? এজন্য-ই পন্থা না পেয়ে এই মাঝরাতে আসতে হলো আ….”
নওরি মুখ থেকে হঠাৎ ওড়না সরিয়ে ফেলতেই ইরা’দও নওরির দিকে তাকালো। নওরিকে দেখতেই ইরা’দের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরলো। নওরির বিস্ময় তো আকাশচুম্বী। এরকম একটি ঘটনা উভয়ের জন্যেই ছিলো অপ্রত্যাশাজনক।
নওরি চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে ই’রাদের পানে। ইরা’দও বিস্মিত চাহনি নিক্ষেপ করে আছে নওরির পানে। ইরা’দ নওরিকে দেখেনি। তবে নওরির চোখ জোড়া আর নওরির পরিহিত ওড়নাটা ইরা’দের পরিচিত।
ফ্রিশা হুট করে নিচ থেকে উপরে উঠে এলো। এতক্ষণ ফ্লোরে হাত-পা মেলে ঘুমিয়েছে। ঘরে শব্দ হচ্ছে দেখে আর ঘুম হলো না। তবে পুণরায় নওরির কোলে উঠে আরাম করে ঘুমিয়ে পরেছে। ইরা’দ একপলক নওরির দিকে তো একপলক ফ্রিশাকে দেখছে। নওরি অস্ফুট স্বরে বললো,
–“আপনি?”
–“তুমি?”
–“এখানে কী করছেন?”
–“একই প্রশ্ন আমারো!”
–“আপনি আগে বলুন।”
ইরা’দ দুই ধাপ এগিয়ে এসে বললো,
–“আমার বাসায় আমি থাকবো না? আজব!”
–“এর মানে এটা আপনার বাড়ি? আপনি-ই নিদ্র’র নিদ্র ভাই?”
–“হু। চিনেছো? কিন্তু নিদ্র নই, ইরা’দ আমি। তোমার পরিচয় দাও। তুমি নিদ্র’র রুমে কী করছো?”
নওরি থতমত খেয়ে বলে,
–“আমি নওরিয়া তাফরিন। নূরজাহান আন্টির দুসম্পর্কের আত্নীয়।”
আত্নীয়’র কথাটা নূরজাহান নওরিকে জানিয়েছে।নূরজাহান সবাইকে বলেছে যে নওরি তাঁর দুসম্পর্কের বোনের মেয়ে। পড়াশোনার জন্যে এখানে এসেছে। নওরি এত ইতস্তত হলেও বাস্তবটাকে মেনে নিলো। নূরজাহান নিজেও চায় না নওরির দিকে কেউ আঙুল তুলুক। নওরি এখানে এসেছে প্রায় তিন দিন হয়ে গিয়েছে। কম-বেশি সকলের সাথে মিশতে পারলেও নূরজাহানের হাসবেন্ড তাকে এড়িয়ে চলে। বড্ড গাম্ভীর্যপূর্ণ লোক তিনি।
ইরা’দ হঠাৎ হাসলো। নওরি বো!কার মতো তাকিয়ে রইলো ইরা’দের পানে। হাসছে কেন ছেলেটা?
–“হোয়াট এ কো- ইন্সিডেন্ট! তোমার সাথে প্রথম পরিচয় হলো ছিনতাইকারী আর ব্যাগ নিয়ে আর দ্বিতীয় পরিচয় হলো এই মাঝরাতে আমি চুরি করতে এসে। সো ফানি!”
নওরি ভীতগ্রস্তের মতো একপলক দরজার সিটকিনির দিকে তাকালো।
–“ভয় পাচ্ছো?”
–“দরজা তো লক করে ঢুকেছি। আপনি ঢুকলেন কী করে?”
ইরা’দ আবারও হাসলো। যেন এটা নওরির প্রশ্ন নয় বরং এক বিরাট কৌতুক।
–“যেভাবেই ঢুকেছি, তোমার মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। আচ্ছা, তুমি কী ভয় পাচ্ছো?”
নওরি পিটপিট করে ইরা’দের দিকে তাকিয়ে আটকে গলায় বলে,
–“আপনি যেই কাজেই আসুন না কেন, ফিরে যান। আশা রাখছি এত রাতে এখানে আপনার আর কোন নেই।”
ইরা’দ কিছুটা নড়েচড়ে দাঁড়ালো। হাই তুলতে তুলতে দায়সারা ভাবে বললো,
–“বুঝেছি ভয় পাচ্ছো। আচ্ছা, যাই কেমন?”
ইরা’দ যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই হঠাৎ থেমে দাঁড়িয়ে বলে,
–“লাইট নিভিয়ে দিবো?”
নওরি হাওয়ার বেগে বললো,
–“আমি নিভিয়ে নিবো। আপনি যান!”
ইরা’দ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। শব্দহীন, মুচকি হাসি।
–“বুঝেছি ভয় পাচ্ছো। তুমি এত ভীতু প্রথম দিন তো বুঝলাম না!”
নওরি নিজেও বুঝতে পারছে না। এটা কী আদৌ প্রথমদিনের গম্ভীরমুখো ইরা’দ? এমন এলোমেলো ব্যবহার কেন তাঁর? যেন নেশা করা এক মা!তা!ল সে। অদ্ভুত আচরণ ঠেকলো। নওরিকে চুপ থাকতে দেখে ইরা’দ আর কিছু না বলে বারান্দার দিকে চলে গেলো৷ ইরা’দকে বারান্দায় যেতে দেখে নওরির ভেতরটা ধক করে উঠলো। বারান্দায় যাচ্ছে কেন? নওরি কোনরকমে ফ্রিশাকে কোল থেকে নামিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বারান্দার দিকে ছুটলো। বারান্দায় গিয়ে নওরির চোখ কপালে উঠে গেলো। ইরা’দ পাইপ বেয়ে নামছে। নওরি চোখ বড়ো বড়ো করে অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,
–“আপনি পাইপ বেয়ে নামছেন কেন? পরে যাবেন তো!”
ইরা’দ শুনলো-ই না যেন। তাঁর সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পাইপ বেয়ে নামছে। নওরি রেলিঙ ঘেঁষে দাঁড়ালো। দেখার চেষ্টা করছে ইরা’দ কতটুকু নামলো। নওরির নিচের বারান্দাটা খোলা ছাদের মতো। অর্থাৎ বেশ কিছু জায়গা নিয়ে এই বারান্দাটি করা হয়েছে৷ এই অংশটুকু একটি ছোট রুমের সমান, যেটি নানান গাছ-পালায় আবৃত। দো’তলা অবধি এত জায়গা নিয়ে করলেও তিন তলা থেকে আবার অল্প জায়গা নিয়ে বারান্দা। খুব সম্ভবত ৪ থেকে ৫ ফুট এর প্রস্থ। নওরির ভাবনার মাঝেই ইরা’দ চট করে সেখানে নেমে পরলো। একপলক উপরে তাকিয়ে হাত নাড়াতে নাড়াতে চিৎকার করে বলে,
–“গুড নাইট ভীতু।”
ইরা’দ ভেতরে ঢুকে গেলো। নওরি রেলিঙ এ দুই হাতের ভর দিয়ে মাথাটা বের করে সবটা দেখতে লাগলো। এর মানে কী এটাই ইরা’দের রুম? আর বারান্দাটাও!? এই খোলা বারান্দা নওরি আগেও দেখেছে, কিন্তু এটা জানতো না এই সুন্দর বারান্দার মালিক ইরা’দ। ইরা’দ তাঁর আশেপাশে থেকেও জানতে পারলো না ইরা’দের পরিচয়? সৃষ্টিকর্তা এ কোন লুকোচুরি খেলালো?
———–
রিংটোনের কর্কশ ধ্বনিতে ইরা’দের ঘুম নরম হয়ে এলো। একসময় ভেঙ্গেও গেলো। কিন্তু বদ্ধ আঁখিদ্বয় খোলার বিন্দুমাত্র আগ্রহ প্রকাশ করলো না ইরা’দ। কিছুক্ষণ ওভাবেই পরে রইলো। মস্তিষ্ক এখনো তাকে সবটা জানান দিতে ব্যর্থ। কী হচ্ছে, কী হতে চলেছে সেসব কিছুই উপলব্ধি করলো না। কিছু বোঝার পূর্বেই মাথায় টনটনে ব্যথা অনুভব করলো সে। কপালে পরলো কতশত ভাঁজ। চোখ কুচকে পিটপিট করে তাকালো সে। তড়িৎ সূর্যের তীক্ষ্ণ কিরণ তাঁর আঁখিদ্বয়ে প্রবেশ করলো। ইরা’দ চোখ বুজেই উঠে বসলো। ব্যথায় মাথা ভনভন করছে যেন। পায়ে ভার অনুভব করতেই চোখ মেলে তাকালো। একি! তাঁর পায়ে জুতা? পরিহিত প্যান্ট, শার্টের দিকে নজর বুলালো ইরা’দ। হ্যাঁ, গতকাল রাতে যা পরে বেরিয়েছিলো সেগুলোই আছে। শার্টের কলার নাকে বিঁধতেই বি!চ্ছিরি এক গন্ধ নাকে আসলো। মুহূর্তে-ই গা গুলিয়ে আসলো ইরা’দের। মনে করতে লাগলো গতকাল রাতের ঘটনাগুলো।
সব একে একে মনে পরতেই চোখ মুখ অসম্ভব কুচকে ফেললো ইরা’দ। দু হাতে নিজের কয়েক গাছা চুল মুঠো করে চাপা স্বরে,
–“শিট, শিট, শিট!”
বলে ওঠে। কিছু সময় পার হতেই দ্রুত ভঙ্গিতে ফোনের এল্যার্ম বন্ধ করে ওয়াশরুমে ছুটলো। এখনো মৌসুমির ঘুম ভাঙ্গেনি। যত দ্রুত সম্ভব লেবুর রস খেতে হবে।
—————-
নওরি বারান্দার এক কোণে হাটু ভেঙ্গে বসে আছে। মাথায় তাঁর অজস্র চিন্তা-ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে। বেশিরভাগ-ই ইরা’দকে কেন্দ্র করে। কে এই ইরা’দ? কেন তাঁর ছবি বাহিরের বিভিন্ন দেয়ালে টাঙানো পোস্টারে থাকে? আর রাতের ঘটনাগুলো-ই বা কী?খুব প্রশ্ন জমে আছে নওরির মস্তিষ্কে। তবে নওরি এটা মানতে পারছে না যে ইরা’দ মাঝরাতে তাঁর ঘরে ছিলো! এত রাতে অবিবাহিত একটা মেয়ের ঘরে আরেকটা জোয়ান ছেলে!? কেউ দেখে ফেললে কী হতো? নওরির তো দম আটকে আসছে। নাহ! ইরা’দের ব্যবহার আরও নিচও হতে পারতো! নাহ কাউকে ভরসা নেই। এরপর থেকে খুব সাবধানে থাকতে হবে। ঘুমালেও কাম খাড়া করে ঘুমাতে হবে। আর অবশ্যই বারান্দার দরজা ভালো করে লাগিয়ে ঘুমাতে হবে।
হঠাৎ সারিফা আসলো নওরির রুমে। তবে নওরি তখন সারিফা নওরির উদ্দেশ্যে বললো,
–“নিচে যাবে? বাগানে?”
হঠাৎ মেয়েলী কন্ঠস্বরে নওরির ধ্যান ভাঙ্গে। চমকে মাথা তুলে তাকিয়ে বলে,
–“কী?”
–“বাগানে যাবে?”
–“আচ্ছা, চলো। ফ্রিশা…”
–“আমার ভাইয়ের রুমে গিয়ে তাকে গুতাচ্ছে!”
হেসেই বললো সারিফা। নওরিও আলতো হাসলো। নিশ্চয়ই নিদ্র এখনো ঘুমোচ্ছে। নওরি মাথায় ওড়না জড়িয়ে বলে,
–“চলো যাই।”
সিঁড়ি বেয়ে দো’তলায় আসতেই ইরা’দের মুখোমুখি হলো নওরি। চমকে তাকালো ইরা’দের পানে। ইরা’দ মাত্রই দরজা খুলে বেরিয়েছে। ইরা’দকে দেখে নওরি সারিফার হাত টেনে দ্রুত নামতে চাইলো কিন্তু সারিফা শক্ত হয়ে থেমে আছে। নওরি ব্যস্ত হয়ে সারিফার কানে ফিসফিস করে বলে,
–“দাঁড়ালে কেন সারিফা?”
–“ভাইয়ার সাথে কথা বলবো।”
সারিফার স্বাভাবিক কন্ঠ। সারিফার কন্ঠস্বর শুনে ইরা’দ পিছে ফিরে তাকালো। ইরা’দের সেই চাহনি নওরির আত্মা কাঁপিয়ে ফেললো। ইরা’দের চাহনি গভীর নয় তবে গম্ভীর। গত রাতের কিছুই খুঁজে পেলো না সেই আঁখি-দ্বয়ে। অদ্ভুত লাগলো নওরির। ব্যাপার কী? তাকে দেখেও না দেখার ভান করছে কেন? হঠাৎ কী এমন হলো যে রাতের ইরা’দ হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে গেলো?
সারিফা নওরির হাত ধরে টেনে ইরা’দের দিকে কয়েক ধাপ এগোলো।
–“ভাইয়া, আমি যেটার কথা বলেছি এনেছো?”
–“সময় পাইনি। দেখি কাউকে দিয়ে আনিয়ে নিবো।”
বলেই ইরা’দ চলে গেলো। নওরির দিকে তাকানোর প্রয়োজন অবধি করলো না। এদিকে নওরি ইরা’দের যাওয়ার পানে হতভম্ব চাহনি নিক্ষেপ করে আছে। কী হলো ব্যাপারটা? একবার তাকানোরও প্রয়োজনবোধ করলো না? অদ্ভুত! মানুষটাই অদ্ভুত। আপাদমস্তক অদ্ভুত!
নওরি আনমনে অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,
–“উনি কী সবসময়-ই এমন?”
–“কোনো কিছু নিয়ে হয়তো রেগে আছে। ভাইয়া গম্ভীর হলেও এতটাও গম্ভীর নয়।”
–“উনি তোমার বড়ো জেঠুর ছেলে?”
–“হ্যাঁ।”
–“আজ তো শুক্রবার। ছুটির দিনে কোথায় গেলো?”
–“ভাইয়ার ছুটির দিন আছে নাকি? তাঁর তো যখন তখন ডাক পরে।”
নওরি ভ্রু কুচকালো। কী এমন কাজ তাঁর?”
–“মানে? পেশা…”
–“রাজনীতিবিদ। এসব কথা ছাড়ো। চলো উপরে চলে যাই। আর বাগানে যেতে ভালো লাগছে না।”
বাসায় আসতেই দেখলো দরজার সামনে ফ্রিশা এবং নিদ্র দাঁড়িয়ে আছে। নিদ্র’র চোখ ফুলে আছে। নির্ঘাত ঘুম থেকে উঠেছে। সারিফা দু’জনের দিকে চোখ বুলিয়ে বলে,
–“কী সমস্যা?”
নিদ্র হঠাৎ নাক টেনে বলে ওঠে,
–“আমাদের ফেলে ঘুরতে গেছো তোমরা? আমরা এতটাই তুচ্ছ যে আমাদের ডাকার প্রয়োজনবোধ করলে না? হাউ?”
নওরি ফ্রিশার দিকে তাকালো। ফ্রিশা ওঁৎ পেতে আছে। দরজা খুললেই ফট করে বেরিয়ে যাবার ধান্দা তাঁর। নওরি নিদ্র’র উদ্দেশ্যে বললো,
–“ঘুরতে যাইনি। মাঝপথেই ফিরে এসেছি।”
সারিফা হুট করে নওরির কথা কেড়ে নিয়ে বলে,
–“ভাবলাম তোদের ছাড়া একা গিয়ে কী করবো। তাই চলে এসেছি।”
নিদ্র চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে রয় সারিফার পানে। তারপর সন্দেহজনক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
–“এটা নিশ্চয়ই নৌরি ফুলের ভাবনা?”
সারিফা একপলক নওরির দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
–“হ..হ্যাঁ!”
নিদ্র হঠাৎ খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
–“আমি জানতাম। তুমি তো আর নৌরি ফুলের মতো আমায় ভালোবাসো নি! তাই তোমারও এই চিন্তা করার কথা না।”
সারিফা চোখ রাঙালো। নিদ্র’র উদ্দেশ্যে কাঠ কাঠ গলায় বললো,
–“বে!য়াদব ছেলে!”
——————
–“শা***, বা*** তোর সাহস কেমনে হলো আমাকে দিয়ে ওসব গিলানোর? তুই জানিস কত বড়ো অন্যায় করেছিস?”
–“আহ! আর মারিস না। থাম ভাই, আমার ভুল হইছে, ছাড় তো এবার। পিঠের ছাল তুলে নিবি নাকি?”
–“দরকার হলে তা-ই করব। তাও তোকে ছাড়বো না। আর তুই সামান্য ভুল কেমনে বলিশ? কত বড়ো ঘটনা ঘটেছে জানিশ? সব তোর জন্যে, কে বলেছিলো দুই গ্লাস খাওয়াতে? ওয়াক! আমার এখনো বমি পাচ্ছে।”
নিখিলকে ছেড়ে দিয়ে ইরা’দ দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। ক্রোধে একপ্রকার গা রিঁ রিঁ করছে তাঁর। নিখিল পিঠে হাত দেয়ার মিথ্যে চেষ্টা চালিয়ে একজনের উদ্দেশ্যে বললো,
–“জল আনো, একদম ঠান্ডা জল। সাহেব রেগেছে। রাগ ভাঙ্গো!”
ইরা’দ এবার পায়ের জু’ তো খুলে হাতে নিলো। নিখিল আরও দূরে সরে গিয়ে বলে,
–“এই, একদম না। অন্যায় করে ফেলিনি আমি। আমি জানতাম নাকি দুই গ্লাসেই মাতাল হয়ে যাবি? আমি তো দুই বোতল খেলেও মাতাল হই না।”
–“ইহ! সাধু পুরুষ আসছে! এক বোতল খেয়ে তোর কী হাল হয়েছিলো সেটা নিজের চোখেই দেখেছি।”
–“আচ্ছা, কী হয়েছে বলবি তো! কার কী করেছিস?”
ইরা’দ এদিক সেদিক তাকিয়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেললো। শব্দের সাথে নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে আওড়ায়,
–“স!র্বনাশ হয়েছে! এমনই এক নাশ যেটা আমার কল্পনারও বাহিরে।”
[কপি সম্পূর্ণ নিষেধ]
———————————
~চলবে, ইন-শা-আল্লাহ্।
রিচেক দেয়া হয়নি। ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম।
———————–
~চলবে, ইন-শা-আল্লাহ্।