#এক_বাক্স_ভালোবাসা
#পর্ব_৫
#লেখিকা_বন্যা_মৃধা।
হঠাৎ জিসান বসা থেকে উঠে দাঁড়াল অঃতপর আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে এক গাঁদা গোলাপ এগিয়ে দিয়ে বলল…
জিসান: হিমু আই লাভ ইউ।
জিসানকে কি উত্তর দেব বুঝতে পারছিলাম না এভাবে ক্যাম্পাসে সবার সামনে প্রোপোজ করবে তা ভাবতেই পারিনি জিসানের এমন কান্ড দেখে ক্যাম্পাসের সবাই আমাদের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। এতোদিন সবটা আমার প্লান ছিল তবে কিছুদিন যাবৎ জিসানের প্রতি আমিও একটু দুর্বল হয়ে পরেছিলাম তবে এটা ভালোবাসা ছিল না শুধু ভালোলাগা। আচ্ছা ভালোলাগা থেকেই তো ভালোবাসা সৃষ্টি হয় তাইনা? তার মানে কি আমার সাথেও এমন হবে কিন্তু আদির সঙ্গে তো আমার বিয়ে হয়েছে। এখন যদি আমি জিসানের সঙ্গে রিলেশনে যাই আর এই খবর যদি বজ্জাতের গাদি বাসায় পৌঁছে দেয় তাহলে আমার কি হবে? না না কিছু হবে না আমি কিছু হতে দেব না প্রয়োজনে বাবার সামনে মাথা নিচু করে মুখোমুখি জবাব দিব তবু আমার ভালোলাগা নষ্ট হতে দেব না। (মনে মনে)
সব টেনশন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে হাত বাড়িয়ে দেই আমার ভালোলাগার দিকে মানে জিসানের দিকে ঠিক তখনি উদয় হলো বাংলাদেশের নকল প্রেসিডেন্ট আমার ভালোলাগায় বাঁশ দিতে। আমার সম্মুখে এসেই ২০৫০ সালের ভাষন দিতে শুরু করল।
আদি: হিমু তুমি এখানে.. সেই কখন থেকে তোমাকে খুঁজতেছি কল করলাম তাও রেসপন্স পেলাম না এমন করলে চলে বলো.. চলো বাসায় চলো।
~~তুই এখানে কেন???
আদি: আমার হিমু কি আমার উপর খুব রাগ করেছে.. আরে বোকা হাসব্যান্ড ওয়াইফের মধ্যে এমন অভিমান হয়ে থাকে তাই বলে এমন করতে হবে?
আমায় কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে এবার আমায় জড়িয়ে ধরল এবং পুনরায় বলতে শুরু করল..
আদি: পাগলী মেয়ে এমন কেউ করে.. তুমি এমন করলে আমাদের বেবিও যে কষ্ট পাবে।
আদির শেষ কথাটা শুনে জিসান উঠে চলে গেল আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম জিসানের চোখ বেয়ে জল পরছে। আদির এমন কান্ড দেখে আমিও বিশাল পরিমানের শকড খাই। ও আমার শত্রু তবে আজ এসব বলবে এটা আমার ভাবনার বাইরে ছিল। আদি আমায় ছেড়ে দিয়ে আমার হাত ধরল অঃতপর আমায় বাইকে উঠিয়ে বাইক স্টার্ট করল। আমি আদিকে কিছু বলতে পারলাম না সব যেন আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিল।
বাসায় পৌঁছাতে আর কিছুটা পথ বাকি ছিল কিন্তু বাসায় না গিয়ে আদি রাস্তার মাঝেই বাইক থামাল বাইক থেকে নেমে দুজনেই নীরবে দাঁড়িয়ে আছি এবার আমার নীরবতা ভেঙে বললাম..
~~এখানে কেন বাইক থামালি, এখানে কি তোর সেই আনিকা রাজকুমারী আসবে?
আদি: না হিমু কেউ আসবে না। আজ আমি তোকে কিছু না বলা কথা বলতে চাই এর আগে অনেকবার বলতে গিয়েও বলতে পারিনি।
~~ আমি তোর কোনো কথা শুনতে চাই না তুই জিসানের সামনে এমন কেন করলি, আমার ভালো কি তোর সহ্য হয় না?
আদি: প্লীজ আমার কথাটা একটিবার শোন তারপর তোর যা ভালো লাগে তাই করিস আমি তোকে বাঁধা দিব না।
~~ বললাম তো আমি তোর কোনো কথা শুনতে চাই না।(বলেই হাঁটতে শুরু করি)
আদি: হিমু প্লীজ এমন করিস একটিবার আমার কথাটা শোন।
আদির কথায় কান না দিয়ে আমি বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটতে থাকি কিছুটা এগিয়ে পিছনে ফিরতেই দেখি আদি সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। আদিকে দেখে আজ কেন যেন মনের মধ্যে অজানা এক অনুভূতি অনুভব করছি তাই আর পিছনে না তাকিয়ে খুব দ্রুত বাসায় চলে আসি।
বাসায় প্রবেশ করতেই সবাই আদির কথা জানতে চাইলে আমি বলি ও আমায় নামিয়ে দিয়ে ফ্রেন্ডের সাথে ধুরতে গেছে।
তখন থেকেই মনের মধ্যে কে যেন হাতুড়ি পিটাচ্ছে হয়তো জিসানের জন্য এমন অনুভব করছি। এতোদিনে এটুকু বুঝেছি যে জিসান আমায় খুব ভালোবাসে জিসানের সঙ্গে এমনটা করা আমার একদমই ঠিক হয়নি তাই ফোন হাতে নিয়ে জিসানকে কল করলাম কিন্তু রিসিভ করল না আবার কল করায় কেঁটে দিল।
বিকেল গড়িয়ে রাত হতে চলল কিন্তু আদি এখনো বাসায় আসছে না সবাই তাকে কল করেই যাচ্ছে কিন্তু তার ফোন বন্ধ পাচ্ছে বাসার সবার মুখে টেনশনের ছাপ দেখা যাচ্ছে। আমি এসবে মাথা না ঘামিয়ে জিসানকে কল করতে থাকি।। অবশেষে রাত ১০টা নাগাদ জিসান আমার কল রিসিভ করে..
~~ তোমায় সেই কখন থেকে কল করেই যাচ্ছি কেঁটে দিচ্ছিলে কেন?
জিসান: এতোদিন আমার পাশে থেকে একটু একটু ভালোবাসার মানে বোঝালে আমাকে তোমার মায়ায় বাঁধলে আর যখন আমার মনের কথা তোমায় বললাম তখন তুমি আমায় দূরে ঠেলে দিলে কেন করলে আমার সাথে এমন?
~~ জিসান বিশ্বাস করো আমি এসবের ব্যাপারে কিছু জানতাম না আর তুমি তো জানো আমাদের বিয়ে হলেও আমরা এ বিয়ে মানি না।
জিসান: বিয়েই যদি না মানো তাহলে আদি যে বললো তোমাদের বেবির কথা সেটা কি?
~~ ও চায় না যে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলি আর আমি যদি প্রথম থেকে এই বিয়ে না মানি তাহলে বেবি কি গাছ থেকে পরবে?
জিসান: হুম সেটা ঠিক। হিমু সত্ত্যি আমি তোমায় খুব ভালোবাসি তোমাকে এক মূহুর্ত না দেখলে আমার ভালো লাগেনা সবসময় তোমায় দেখতে ইচ্ছে করে।
জিসানের কথায় কি উত্তর দেব.. সত্ত্যি এটা যে আমি জিসানকে ভালোবাসিনা তবে ওর সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে। শুধু ভালো লাগা থেকে তো আর একটা সম্পর্ক তৈরী হয় না আর আমি তো এখন আদির স্ত্রী।
জিসান: কি হলো কথা বলছো না কেন?
~~জিসান আমাকে কয়েকদিন সময় দাও।
জিসান: হিমু আমি তোমায় জোর করব না তবে আমি তোমায় সত্ত্যি ভালোবাসি।
~~ হুম এখন রাখছি পরে কথা হবে।
জিসানের কল কাঁটতেই রুমে অভির প্রবেশ সয়তানি হাসি দিয়ে বলল..
অভি: জানো জানু আমার কপালটাই খারাপ ভেবেছিলাম ভাইয়া কোনো মেয়ে নিয়ে পালিয়েছে এই সুযোগে তোমার আমায় বিয়েটা সেরে ফেলব কিন্তু সেটা আর হলো না।
~~ আদি বাসায় আসছে কখন?
অভি: এই তো মাত্র বাবা ভাইয়াকে হেব্বি বকুনি দিচ্ছে হয়তো আজ ভাইয়াকে গুলি করে মেরে ফেলে সেই খবরই তোমায় দিতে আসছি।
~~ ওরে পিচ্ছি অভিটা আমায় কতো ভালোবাসে আগে বুঝলে ছোটবেলায়ই বিয়ে করে নিতাম।
অভি: এখন করলেও সমস্যা নেই কারন তোমায় বিয়ে করতে আমি সবসময় রাজি।
~~ওই সয়তানের হাড্ডি তুই আমার পিছনে কেন পরিস আমার বোনকে প্রোপোজ করতে পারিস না?
অভি: তাই তো এটা তো কখনও ভাবিনি। আজ থেকে তোমার সঙ্গে ব্রেকাপ আর তোমায় এতোগুলো ধন্যবাদ এতো সুন্দর আইডিয়া দেওয়ার জন্য তবে আমি কিন্তু তোমায় ভুলতে সব ভুলতে পারব না একটু ভালোবাসব কারন সবাই বলে প্রথম ভালোবাসা ভোলা যায় না তাই আমি…
~~ তুই যাবি এখান থেকে নাকি আমার রাক্ষসী রুপটা দেখতে চাস..
আমার কথা শুনে অভি চলে গেল অঃতপর আমি শুয়ে পরি কারন আদির মুখটা আমার একদম দেখতে ইচ্ছে করছে না জিসানের কথা ভাবতে ভাবতে আমার চোখ লেগে যায় হঠাৎ দরজার খট খট শব্দ কানে পৌঁছাতে ঘুম ভেঙে যায় আড় চোখে তাকিয়ে দেখি আদি শোফায় শুয়ে আছে আমি কেয়ার না করে ঘুমে মনোযোগ বসাই।
এরপর থেকে আমাদের মাঝে শুরু হয় কঠিন শত্রুতা এবং দুরত্ব। দুজনের পথ আলাদা হয়ে যায় আদি বাইকে আর আমি রিক্সায় করে কলেজে যাই। দুজনের মধ্যে কথা বলা একদম অফ ইদানিং আদির মুখে অন্ধকার দেখা যাচ্ছে হয়তো আনিকার সঙ্গে কিছু হয়েছে।
এভাবে কেঁটে যায় কিছুদিন আদির সঙ্গে যতটা আমার দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে ঠিক ততটাই জিসানের সঙ্গে আমার মেলামেশাটাও বাড়ছে একদিন আমি রুমে বসে ফোন ঘাটতেছিলাম তখন আদি আমার সামনে বরাবর বসে।
আদি: হিমু তুই জিসানকে ভালোবাসিস?
~~ তা জেনে তুই কি করবি? আর যদি জানাটা খুব ইমপরট্যান্ট হয় তাহলে আমার উত্তর হবে হ্যাঁ আমি জিসানকে ভালোবাসি আর সেটা একটু না অনেকটা।
আদি: তুই যখন জিসানকে ভালোবাসিস আমি তোকে বাঁধা দেব না তুই ওকে নিয়ে সুখে থাক এটা আগেও চেয়েছি আর ভবিষ্যতেও চাইব।
~~ আদি একটা হেল্প করবি?
আদি: হুম বল চেষ্টা করব।
~~ তুই বাবা মাকে একটু ম্যানেজ করে আমাদের ডিভোর্সের ব্যবস্থা করে দে প্লীজ!
আদি: আচ্ছা তুই যেটা চাইবি সেটাই হবে আমি সবাইকে বলে আমাদের ডিভোর্সের ব্যবস্থা করে দেব হ্যাপি?
~~ এতগুলা হ্যাপি এই নাহলে আমার
ছোটবেলার শত্রু সরি বন্ধু। (জড়িয়ে ধরে)
আদি: অনেক রাত হয়েছে এখনি লক্ষী মেয়ের মতো ঘুমিয়ে পর জিসানের সঙ্গে নাহয় কাল কথা বলিস।
~~ আচ্ছা কিন্তু একটা শর্তে।
আদি: হুম বল।
~~ আজকে তুই আমার পাশে ঘুমাবি প্লীজ না করিস না প্লীজ প্লীজ!
আদি: আচ্ছা ঘুমাব তুই ঘুমিয়ে পর আমি একটু আসছি।
~~ আচ্ছা।
( বেলকনিতে গিয়ে সিগারেটের ধোঁয়ায় মগ্ন হই। একদিন ফাজলামি করে সিগারেট খেয়েছিলাম বলে পুরো কলেজ আমাকে কান ধরে চক্কর দিতে হয়েছিল এটা ছিল সিগারেট খাওয়ার শাস্তি আর এই শাস্তিটা দিয়েছিল হিমু। আজ মনে হচ্ছে এই সিগারেট ছাড়া আমার আপন কেউ নেই। হিমুর সাথে কাঁটানো প্রতিটি মূহুর্ত আমার বুকে বিঁধছে যাকে সব থেকে আপন মনে করতাম সেই আমায় আজ পর করে দিল। টানা এক ঘন্টা পর সিগারেটকে দূরে সরিয়ে ঘুমাতে আসি।
হিমু ঘুমিয়ে পরেছে হিমুকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে খুব সুন্দর লাগে মুখটা মায়ায় ভরা। প্রতিদিনের মতো আজও ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি তবে আজ চোখের জল চোখে নয় গাল বেয়ে পড়ছে।)
আদি: হিমু আমি তোকে সেই ছোটবেলা থেকে খুব ভালোবাসি রে.. নিজের থেকেও তোকে বেশি ভালোবাসি প্লীজ এভাবে আমার হাত ছেড়ে দিস না।
#এক_বাক্স_ভালোবাসা
#পর্ব_৬
#লেখিকা_বন্যা_মৃধা।
আদি: হিমু আমি তোকে সেই ছোটবেলা থেকে খুব ভালোবাসি রে.. নিজের থেকেও তোকে বেশি ভালোবাসি প্লীজ এভাবে আমার হাত ছেড়ে দিস না..
তুই জিসানকে ভালোবাসিস আমায় ভালোবসিস না তাই তোকে ছেড়ে আমি অনেক দূরে চলে যাব। কখনও আমায় খুঁজে পাবি না হয়তো আর খোঁজার চেষ্টাই করবি না। সবসময় এভাবে হাসিখুশি থাকিস তোর মুখে হাসি থাকলে আমিও ভালো থাকব।
(অঃতপর একটা চিরকুট রেখে বেড়িয়ে পরলাম অজানা এক গন্তব্যে। মন না চাইতেও আজ বাইকের স্পীড ত্রমেই বাড়ছে।)
অভির চিৎকারে আমার ঘুম ভাঙে চোখ মেলে দেখি সকাল হয়ে গেছে তাই বেডকে বায় দিয়ে দরজা খুললাম। মূহুর্তেই রুমে অভি প্রবেশ করে অভির মুখে আকাশ সমান অভিমান দেখা যাচ্ছে।
~~ কি হয়েছে পাগল প্রেমিক মুখটা এমন অন্ধকারে জড়িয়ে রেখেছিস কেন?
অভি: শুধু তোমার জন্য।
~~ আমি আবার কি করলাম শুনি।
অভি: তোমার আইডিয়ায় কাল রাতে তোমার বোনকে পটাতে মেসেজ দিয়েছিলাম কিন্তু তোমার রাক্ষুসী বোন আঙ্কেলকে সব বলে দিয়েছে তাই আঙ্কেল কল করে বলেছে আবার ডিস্টার্ব করলে বাবাকে বলে দেবে।
~~ আরে বোকা ছেলে প্রেমে এমন অনেক শত্রু হানা দেয় তাই বলে কি প্রেমকে ছেড়ে দিতে হবে.. ভীতু ছেলে হয়ে থাকিস না সাহসী হয়ে আমার বোনকে তুলে নিয়ে আয়।
অভি: হুম ভাইয়ার মতো আমিও তোমার বোনকে তুলে নিয়ে আসব।
আদি কোথায়.. ওতো প্রতিদিন লেট করে ঘুম থেকে ওঠে তাহলে আজ এতো সকালে উঠে কোথায় গিয়েছে? বুঝেছি হয়তো তার পিরিতের আনিকা তাকে ডেকেছে তাই ছন্নছাড়া প্রেমিকের মতো ৭ সমুদ্র ১৩ নদী পার হয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে গেছে। (মনে মনে)
অভি: জিএফর দিভাই কি হলো?
~~ কই কিছু না তো তুই এখন যা গিয়ে ওকে পটানোর প্লান কর।
অভি চলে যাওয়ার পর আমি ওয়াশ রুমে চলে আসি। সাওয়ার কমপ্লিট করে সুন্দর একটা ড্রেস পরে নেই অঃতপর বের হয়ে সাজতে বসে পরি। চোখে কাজল হালকা মেকাপে নিজেকে আবদ্ধ করি। এতো ঘটা করে সাজার কারন কি জানেন.. তাহলে শুনুন..
আজ কলেজে গিয়ে জিসানকে ভালোলাগার কথা বলে দেব তবে আমি ওকে ভালোবাসি না কিন্তু ভালোবাসতে চাই। বজ্জাত আদির থেকে জিসান হাজার গুন ভালো ও আমায় খুব ভালোবাসে। আর লেট না করে নিচে চলে আসি খাবার টেবিলে সবাই উপস্থিত থাকলেও আদিকে দেখা যাচ্ছিল না। আদির বাবা মা আমায় আদির কথা জিজ্ঞেস করায় আমি বলেছি সকাল থেকেই ওকে দেখিনি আর আমায় কিছু বলেও যায়নি। খাওয়ার পর্ব কমপ্লিট করে খুব দ্রুত কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দেই কারন অন্যদিনের থেকে আজ কলেজ যাওয়ার আগ্রহটা খুব বেশি। রাস্তায় জ্যাম থাকায় কিছুটা লেট হয়।
তাই কলেজে পৌঁছেই দ্রুত ক্লাসে চলে আসি। জিসানের পাশে বসতেই ও আমাকে দেখে মুচকি একটা হাসি উপহার দিল। অঃতপর আমরা ক্লাসে মনোযোগ দিলাম। ক্লাস শেষে বের হতে যাব তখন জিসান আমার হাত ধরে বলল..
জিসান: তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে আমার সঙ্গে চলো।
সারপ্রাইজের কথাটা শুনে আমি খুব খুশি হই। জিসান আমায় তার গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে আর আমি জিসানের দিকে তাকিয়ে আছি। জিসান আমায় কলেজের ছাদে নিয়ে আসে এসে কিছুটা অবাক হই কারন এখানে কলেজের প্রায় স্টুডেন্ট রয়েছে। সম্পূর্ন ছাদ রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো সবার মাঝে শ্রুতিও রয়েছে তাই ওকে ইশ্বারা করলাম কিন্তু ও মাথা নাড়িয়ে না বোধক উত্তর দিল।
জিসান আমায় নিয়ে ছাদের মাঝ বরাবর এলো সেখানে টেবিলে সুন্দর একটা কেক রাখা রয়েছে সবাই আমাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। জিসান কি করতে চাচ্ছে কিছুই মাথায় ঢুকল না।
জিসান: হ্যাপি বার্ডে হিমু..
জিসানের সঙ্গে সবাই উইস করতে শুরু করল। জিসানের এমন কান্ডে আমার সম্পূর্ন শরীর কেঁপে ওঠে। আজ আমার জন্মদিন এটা আমার মাথায়ই ছিল না। মনে পড়ে যায় এক বছর আগের কথা।
আদি আমার জন্মদিনে প্রতিবছর বিভিন্ন ভাবে সারপ্রাইজ দিয়েছে তবে এর আগের জন্মদিনের সারপ্রাইজটা বেশি স্পেশাল ছিল কারন “সেদিন আদি রাত ১২ টার পর ভূতের মতো আমার রুমে উপস্থিত হয় তারপর ৫ টাকার একটা কেকের উপর মোমবাতি বসিয়ে বার্ডে উইস করে। আমার জন্মদিন হলেও সম্পূর্ন কেকটা আদি একাই খেয়েছিল। হঠাৎ ওর পকেট থেকে একটা রিং বের করে আমার আঙুলে পরিয়ে দেয় রিংটা পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। পরেরদিন জানতে পারি রিং কেনার জন্য আন্টির থেকে টাকা চুরি করেছিল তার জন্য আঙ্কেল ওকে খুব বকুনি দিয়েছিল।”
আদি ছোটবেলা থেকে সবার আগেই আমায় উইস করতো ওতো এই দিনটির কথা কখনও ভুলত না তাহলে আজ কিভাবে ভুলে গেল..
~~ আজ আমার বার্ডে তুমি তা জানো কিভাবে আমি তো তোমায় কখনও বলিনি।
জিসান: কাল রাতে আমায় আদি কল করেছিল ও বলেছে।
~~ আদি??
জিসান আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসল অঃতপর সবার সামনে একটা রিং এগিয়ে বলল…
জিসান: উইল ইউ মেরি মি?
জিসানের বাড়িয়ে দেওয়া রিংটা দেখে আদির দেওয়া রিং এর দিকে তাকাই। আমি আজও আদির দেওয়া রিং পরে আছি।
আদি নিজে উইস না করে জিসানকে কেন বলল আমার জন্মদিনের কথা.. হঠাৎ মাথায় এলো কাল রাতের কথা। কাল আমি আদিকে বলেছিলাম ডিভোর্সের কথা তারপর আবার সকালে আদির উধাও হওয়া মানে আদি কোথাও চলে গেছে?
জিসান: আই লাভ ইউ হিমু। উইল ইউ মেরি মি?
আদি চলে গেল কেন, আমি কি ওকে চলে
বাধ্য করেছি, কেন করল এমন?
কোনো প্রশ্নের উত্তর পেলাম না। হয়তো আদি আমার জন্য চলে গেছে আজ অজান্তেই চোখের জল গাল বেয়ে পরছে। এই চোখের জলের কারনটাও বুঝতে পারছিলাম না শুধু মনে হচ্ছে আমার জীবন থেকে খুব গুরুত্বপূর্ন জিনিস হারিয়ে গেছে।
জিসান: হিমু কি হয়েছে, তুমি কাঁদছো কেন?
জিসানকে কোনো উত্তর না দিয়ে সবার সামনে থেকে দৌঁড়ে চলে আসি কারন এখন আমার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো বাসায় পৌঁছানো। আদিকে কল করলাম কিন্তু আদির ফোন বন্ধ বার বার আদিকে কল দেই কিন্তু প্রতিবার আমি ব্যর্থ হই। বাসায় পৌঁছেই আন্টিকে জিজ্ঞেস করায় আন্টি কাঁদছে।
আদির মা: সকাল থেকে আদিকে কলে পাওয়া যাচ্ছে না সব বন্ধুদের বাসায় খবর নেওয়া হয়েছে কিন্তু আদি কোথাও নেই।
~~ তাহলে আদি কোথায় যেতে পারে?
আদির মা: জানিনা হিমু আমার ছেলে কোথায় চলে গেল.. আদির বাবা আর তোমার বাবা আদিকে খোঁজার জন্য বিভিন্ন জায়গায় লোক পাঠিয়েছে কিন্তু এখনো আদিকে পাওয়া যায়নি।
আদি কোথায় যেতে পারে, এভাবেই কেন চলে গেল.. আমার সব ফ্রেন্ডদের কাছে কল করে আনিকা নামের মেয়েটির বাসার ঠিকানা খুঁজে পাই সেখানে গিয়ে আনিকাকে পেলেও আদিকে পেলাম না বরং আনিকা বলল তার নাকি আদির সঙ্গে কিছুদিন যাবৎ কথাই হয়নি। এর আগে আদির সঙ্গে আনিকার মেলামেশাটা নাকি আদির প্লান ছিল তবে এই প্লানের কারন আনিকার অজানা। আনিকার থেকে এমন উত্তর পেয়ে বাসায় ছুঁটে আসি কিন্তু এখনো আদির খোঁজ পাওয়া যায়নি। বাবা মা আমায় অনেক কিছু বলল কোনো উত্তর দিতে পারলাম না।
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত এলো কিন্তু আদি এখনও নিখোঁজ। আঙ্কেল আন্টি কেঁদেই যাচ্ছে আজ মনে হচ্ছে এসবের জন্য আমি দায়ী আমার জন্যই হয়তো আদি বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পরি তা নিজেই জানিনা।
সকালে কান্নার শব্দে আমার ঘুম ভাঙে নিচে নেমে দেখি আন্টি হাউমাউ করে কাঁদছে তার মানে এখনও আদির খোঁজ পাওয়া যায়নি তাই আন্টি এভাবে ভেঙে পরেছে।
খুব দ্রুত ফ্রেস হয়ে আদিকে খুঁজতে বেরিয়ে পরি আদির আমার পছন্দের স্থানে খুঁজতে চলে যাই। একের পর এক স্থানে গেলাম কিন্তু কোথাও পেলাম না। এদিকে জিসান বার বার কল করে যাচ্ছে কিন্তু সেদিকে একদমই আমার নজর নেই। আমার মন আজ শুধু আদির কথাই ভাবছে। আমাদের খুশির, খুনসুটির, অভিমানের মূহুর্তের কথা ভাবতে ভাবতে রাস্তা দিয়ে হাঁটছি এমন সময় আমার সামনে উপস্থিত হয় জিসান।
জিসান: হিমু তুমি এখানে? তোমায় কাল থেকে কল করেই যাচ্ছি কিন্তু কোনো রেসপন্স পাইনি কল রিসিভ করছিলে না কেন?
জিসানের কথা আমার কান পর্যন্ত পৌঁছালেও কোনো উত্তর দিতে পারছিলাম না শুধু চোখ দিয়ে অনবরত জল পরছে।
জিসান: হিমু তুমি এভাবে কাঁদছো কেন, বাসায় কিছু হয়েছে নাকি তোমায় কেউ কিছু বলেছে?
কি হলো কথা বলছো না কেন?
~~আদিকে পাওয়া যাচ্ছে না।
জিসান: কি বলছো এসব, কখন থেকে পাওয়া যাচ্ছে না?
~~ কাল থেকে।
জিসানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বাসায় চলে আসি এসে দেখি বাবা আর আদির বাবা দুজনে কথা বলছে। বাবাকে দেখতেই দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরি।
~~ বাবা প্লীজ আদিকে খুঁজে বের করো।
বাবা: এভাবে ভেঙে পরিস না আমরা ওকে খুঁজে বের করবই।
~~ আদিকে না দেখলে আমার খুব কষ্ট হয় ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না।
বাবা: টেনশন করিস না আমরা খুব শীঘ্রই আদিকে খুঁজে বের করব।
বাবা আর আঙ্কেল আবার বেরিয়ে পরল আদিকে খোঁজার উদ্দেশ্যে অঃতপর আমি রুমে চলে আসি।
কেন চলে গেলি আমাকে ছেড়ে.. আমি তোকে ছাড়া কিভাবে থাকব? তোর সঙ্গে কাঁটানো প্রতিটা মূহুর্ত আমার চোখের সামনে ভাসছে। এই হিমু আর কখনও তোকে কষ্ট দেবে না প্লীজ আদি আমার কাছে ফিরে আয় এভাবে আমার থেকে দূরে থাকিস না…
( আদি কি হিমুর থেকে সত্ত্যি চলে গেল নাকি ফিরে আসবে? অবশ্যই মতামত জানাবেন কারন আপনাদের মতামতের উপর ভিত্তি করে আদিকে বিদায় করা হবে অথবা ফিরিয়ে আনা হবে।
ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)
(গল্পটা কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন কারন আপনাদের মন্তব্যের জন্য আমরা লেখার উৎসাহ পাই। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)