এটা গল্প হলেও পারতো পর্ব -০৬

#এটা_গল্প_হলেও_পারতো
পর্ব—-০৬
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

চোখ মেলে নিজেকে বাড়ির বিছানার ওপরে দেখতে পায় আমান সাহেব।পাশে দাঁড়িয়ে তার মেয়ে রাত্রি কান্না করছে,আর স্ত্রী মনমরা ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ধীরে ধীরে আমান সাহেবের পূর্বের সকল ঘটনা মনে পড়তে লাগলো।সেই পুলিশের বাড়িতে যাওয়া,তাকে কোথাও খুঁজে না পাওয়া,হঠাৎ লাইট অফ হয়ে যাওয়া,তারপর কেউ পেছন থেকে এসে মাথার ওপরে আঘাত করা।সবটা চোখের সামনে পরিষ্কার হতে লাগলো আমান সাহেবের।কিন্তু এতকিছু ঘটার পরে সে নিজের বাড়িতে কিকরে এলো বুঝতে পারছে না।

—একি,আমি এখানে এলাম কিকরে….?
(অস্ফুট স্বরে নিজের স্ত্রীর প্রতি প্রশ্ন আমান সাহেবের)

—তোমাকে আমি কতোবার বলেছি,এইভাবে কারোর মুখের কথা বিশ্বাস করো না।শুনলে নাতো আমার কথা।আজ তোমার ভালোমন্দ কিছু হয়ে গেলে আমাদের কি হতো,

এই বলে ভদ্রমহিলা কান্না জুড়ে দিলেন।

—আচ্ছা,মানছি ভুল করেছি আমি।কিন্তু আমি বাড়িতে কিকরে এলাম সেটা তো বলো,

—বাবা,তুমি একদম কথা বলো না।ডাক্তার এমনিতেই বেশি চাপ নিতে বারণ করেছে তোমায়,

—-আমাকে কেউ আঘাত করে ফেলে দিয়েছিলো।এইটুকু মনে আছে আমার।এরপর কি ঘটেছে আমি কিছু জানি না।তোমরা দয়া করে বলবে আমি বাড়িতে কিকরে এলাম।এটা না জানতে পারলে আমি আরো বেশী মানসিক অশান্তিতে থাকবো,বুঝতে পারছো না কেন তোমরা?

—-মা,তোমাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছে….

রাত্রির কথা শুনে অবাক হয়ে গেলেন আমান সাহেব,

—কি,রাত্রির মা।তুমি আমাকে খুঁজে পেলে কিকরে?আর তুমি তো বাড়িতেই মানে এখানেই ছিলে তাহলে,

—আমি এরকম কিছু আন্দাজ করেছিলাম, তোমার সাথে হয়তো খারাপ কিছু ঘটবে,তাই লুকিয়ে তোমার পেছন পেছন ফলো করি।যখন তুমি ঐ বাড়িতে ঢুকেছো আমি আড়ালে লুকিয়ে ছিলাম।এরপর যখন দেখি তোমার ফিরতে দেরি হচ্ছে আমির সন্দেহ হয়।তারপর বাড়ির ভেতরে ঢুকি আমি,

—-তারপর….??

—এরপর দেখতে পাই ঘরের ভেতরে তুমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছো।আর ঠিক তখন কেউ আমার উপস্থিতি বুঝতে পেরেই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়….

—কে ছিলো সে,তুমি তাকে দেখতে বা চিনতে পেরেছো?

—না,এমনিতেই তখন ঘরে বেশ অন্ধকার ছিলো।কিন্তু তার ভেতরেও তোমাকে চিনতে ভুল হয়নি আমার,কিন্তু দূর্ভাগ্য ঐ লোকটার চেহারা দেখতে পাই নি আমি।এটাও জানি না সে কোথায় পালিয়ে গেছে,

—তুমি একবারের জন্য ওর মুখটা দেখতে পেলে ভালো হতো,আমিও জানতে পারতাম কে পেছন থেকে এইভাবে ছুড়ি মারার চেষ্টা করছে আমায়,

—তখন এতো কিছু মাথায় ছিলো না আমার, আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া উনি তোমার মারাত্মক কোনো ক্ষতি হতে দেন নি।

রাত্রি এইটুকু জানে যে ওর বাবার ক্ষতি করতে চেয়েছিলো কেউ,কিন্তু এর আগের কোনো ঘটনা জানা নেই ওর।বাবা মায়ের কথার অনেক কিছুই বুঝতে পারে না সে।আর কিকরেই বা বুঝবে!বাবা-মা ওর সামনে কিছু প্রকাশ করতে গেলে নিজেদেরই যে ফেঁসে যেতে হয়।
আমান সাহেব মাথায় আঘাত পাওয়াতে ডাক্তার তার মাথায় একটা ব্যান্ডেজ বেঁধে দিলো।আর সাথে কিছু মেডিসিন।রাত্রির মা তাকে সেবা শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তোলায় দিন রাত এক করে দিচ্ছি।কিন্তু কে জানে এসবই তার লোক দেখানো,এর পেছনে যে অন্য কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে সেটা সবারই অজানা।




রাত প্রায় এগারোটা,বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।এখন আর রাত্রিদের বাড়িতে আগের মতো প্রতি রাতে রুটিন করে ক্লাইন্ট আসে না।রাত্রির মা একে একে পেমেন্ট ফেরত দিচ্ছে সবাইকে।যদিও এই কাজের জন্য প্রচুর বেগ পেতে হয় তাকে।
হঠাৎ ভদ্রমহিলার ফোনটা বেজে উঠলো…পাশ ফিরে দেখে স্বামী অঘোরে ঘুমুচ্ছে।তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে বারান্দায় চলে গেলো সে।বারান্দায় কারো সাথে চুপি চুপি ফোনালাপ সেরে নিচে নেমে আসলো।তারপর বাড়ির মেইন দরজা খুলে চোরের মতো এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বাইরে চলে যায়,

—– কি ব্যাপার এত রাতে এভাবে চলে এলে কেন?
(রাত্রির মায়ের উদ্বিগ্ন স্বরে প্রশ্ন)

—- তো আর কি করবো,কাজটা তো করতে পারলে না তুমি,সবটা ঘেঁটে ঘ করে দিলে।

— আমি কি ইচ্ছে করে করেছি নাকি,তখন কি করে বুঝবো কেউ বাড়ির ভেতরে এসে পড়বে।

—-তোমার কি কাজটা আর একটু সাবধানে করা উচিত ছিল না?

—আমি সত্যি বুঝতে পারিনি শেষে এভাবে গন্ডগোল পেঁকে যাবে,

—–কত বড় সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে আজ হয়তো বুঝতে পারছ না তুমি,আমার তোমার ওপরে উল্টো রাগ হচ্ছে এখন।

—-দেখো এটা রাগারাগি করার সময় নয়,আজকে ওকে মারতে পারিনি তো কি হয়েছে সুযোগ আবারও আসবে!

— হ্যাঁ সেই আশাতেই থাকো,আমার মনে হয় না এমন সুযোগ আর কোনোদিন পাবো!

— ইচ্ছে করছে ওকে এখনি গিয়ে শেষ করে দেই,কিন্তু সেটা করার উপায় নেই…

—- হ্যাঁ বাড়ির ভেতরে বসে কিছুই করা যাবে না, এতে সন্দেহর তীর টা তোমার উপরেই তাক করবে সবাই,

—-আজকে হাতের কাছে পেয়েও কিছু করতে পারলাম না,এই অনুতাপ ওকে মারার পরে দূর হবে আমার।

—-আচ্ছা একটা কথা ওই লোকটা এখন কোথায় যে তোমায় তোমার স্বামীকে মারতে দেখে ফেলেছিল?

—আমি ওর একটা ভালো ব্যবস্থা করেছি. টেনশন করো না।

—-শোনো তুমি এখন চলে যাও।কেউ দেখে ফেললে কি হবে ভাবতে পেরেছো।

—-সেই কারণেই তো রাতের বেলায় দেখা করতে আসলাম,কেউ কিছু জানতে পারবে না।

—এখন যাও রাত্রির বাবা জেগে উঠতে পারে,আর হ্যাঁ,এরপর যা করার আরো সাবধানে করতে হবে আমাদের।এমনিতেই এই ঘটনার পরে ও আরো বেশী সতর্ক থাকবে।

—হুমম,আচ্ছা রাত্রির সেই লকেকটা কোথায়,যেটা ফেরত দিতে এসেছিলাম আমি।

—আছে আমার কাছেই আছে,

—সেদিন যে কি নাটকটাই না করেছিলে তুমি, আমার সেগুলো ভেবে হাসি পাচ্ছে।আমায় ঐভাবে বের করে দিলে বাড়ি থেকে,

—এগুলো করতে হয়,তুমি বুঝবে না এসব,এখন কেটে পড়ো তাড়াতাড়ি।

এরপর সেই বৃদ্ধ রাত্রির মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চুপি চুপি সরে পড়ল,রাতের অন্ধকারে কারো দৃষ্টিগোচর হলো না সেটা…..

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here